#তুমি_হলেই_চলবে
#part_2..
writer: #Mahira_Megha
সকালে
সবাই ব্রেকফাস্ট করছে। আরিয়ান সোফায় বসে ফোন চাপছে।
আর্শঃ এই রুহি টা তো এখনো এলো না। কলেজে ভর্তি হতে যাবো তো। আমি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসি।
আবরারঃ খাওয়া ছেড়ে উঠতে হবে না। আরিয়ান যাও আরুকে ডেকে নিয়ে এসো।
আরিয়ান আবরারের মুখের ওপর কিছু বলতে পারলো না। মনে মনে হাজারো রাগ নিয়ে চলে গেলো আরুহীর রুমে। দরজা খোলা থাকার পর ও দরজায় টোকা দিলো। বাট আরুহীর যা ঘুম, দরজার শব্দ কেনো পুরো দরজা ওর ওপর পরলেও ঘুম ভাঙ্গবে না।
উপায় না পেয়ে আরিয়ান রুমে ঢুকে যায়।আরুহীকে অনেক বার ডাকা শর্তেও আরুহীর কোনো হেলদোল নেই। ঘুমের ঘোরের বলছে আর্শ বিরক্ত করিসনা ঘুমাতে দে। আরিয়ান এবার নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে এক গ্লাস পানি আরুহীর মুখের ওপর ছুড়ে মারে।
আরুহী ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে “আর্শের বাচ্চা “বলেই সামনে তাকায়। চোখে পানি থাকায় সব কিছু ঝাপসা দেখাচ্ছে, হাত দিয়ে পানি মুছে সামনে রাগে লাল হওয়া আরিয়ানকে দেখতে পায়।
আরিয়ান রাগি গলায় বলে ওঠে ” তুমি কি সুস্থ মানুষ নাকি মানসিক সমস্যা আছে? 10 টা বাজে আর এখনো ঘুম থেকে উঠোনি। আমাকে আসতে হলো এখানে। আমি কি করে বললে বুঝতে পারবে সবাই আমি মেয়েদের হেইট করি। আর তুমি তো আলাদা এক পিস। হা করে কি দেখছো?”
আরুহীর কানে কোনো কথায় পোঁছাই নি। আরুহী আরিয়ানকেই দেখছে। মনে মনে “ব্লাক টিশার্টে এত ভালো লাগছে কেনো তোমায় আরিয়ান ভাইয়া। উফফ মনে হচ্ছে চকোবার আইসক্রিম এখনি খেয়ে ফেলি। ”
আরিয়ান কি করবে বুঝতে না পেড়ে জগটা হাতে নিয়ে সব পানি আরুহীর ওপর ফেলে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
আরুহী মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে ” আরিয়ান ভাইয়া কাজ টা খুব ভালোই করলো এবার আমি একবারে গোসল করে নিচে যাবো। হাহাহা এত সুন্দর কেনো তুৃমি। তোমার রুপেই আমি মুগ্ধ।
আর্শ আরুহী কলেজ থেকে ফেরার পথে কয়েকটা ছেলে রাস্তা আটকায় ওদের। আরুহীর দিকে তাকিয়ে ” কি সাহস এই মেয়েটার আমায় মেরেছিলো আজ কি করবি মেরে দেখা আজ 10 জন আছি আমরা। ”
আরুহী একটা হাসি দিয়ে ভাব নিয়ে দাড়ায় ” তোদের মারা আমার বা হাতের খেলা। এমন মার মারবো সোজা হয়ে দাড়াতে পারবি না। ”
সবাই হাহা করে হাসছে আরুহীও ওদের সাথ মুখ ভ্যাঙ্গাতে লাগলো।
ছেলেগুলো হাসি থামিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে তাকালো।
আরুহীঃ আহা বেচারা ছেলেগুলো কত অবুঝ তাইনা। আর্শ আরুহীর দিকে তাকিয়ে হাসছে দুজন হাইফাই দিলো।
আরুহী পকেটে হাত গুজে ওলে বাবা লে আমার এলাকায় আমায় মারতে এসেছো তাইনা কথাটা এমন ভাবে বললো যেনো ছোট বাচ্চাদের বলছে।
এবার একটু স্টাইল নিয়ে বললো” পেছনে তাকা “।
পেছনে 20 জনের মতো ছেলে হাতে ব্যাট আর স্ট্যাম্প নিয়ে দাড়িয়ে আছে আরুহী একবার বললেই উদোম কেলাবে।
আরুহী স্টাইল করে ” এইটা আমার এলাকা। নতুন বলে ছেড়ে দিলাম আবার যদি লাগতে আসিস, ছমাসে হাসপাতাল থেকে বাড়ি যেতে পারবি না। ”
ছেলেগুলো ভয় পেয়ে চলে যায় ।
আরুহী সবার দিকে তাকিয়ে ” মাঠে দেখা হবে বিকেলে। ”
চল আর্শ বাড়ি যাওয়া যাক।
বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে ছাদে যেতেই আরিয়ানকে দেখতে পায় দোলনায় বসে কফি খাচ্ছে।
আরুহী ওখানেই স্ট্যাচু হয়ে দেখছে সবটা। মুগ্ধ নয়নে আরিয়ানে দিকে তাকাচ্ছে। আরিয়ান কফি মগ দোলনায় রেখে ছাদের রেলিংয়ের কাছে যায়।
আরুহী ওর চেহারা দেখতে না পেয়ে কোমরে হাত গুজে বলে ওঠে ” ভাইয়া ওখানে কেনো দাড়ালে আমি তো তোমায় দেখতেই পাচ্ছি না। ”
আরুহীর কথায় পেছনে ফিরে তাকায় আরিয়ান। আরুহীকে দেখতেই মুখটা নিমিষেই লাল হয়ে যায় আরিয়ানের।
আরিয়ান রাগি ফেসে আরুহীর সামনে এসে দাড়ায়। আরুহী নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে, এই লোকটাকে বিশ্বাস নেই কখন যে কি করে বসে।
তখনি ছাদে আসে আর্শ। আরিয়ান কিছু বলতে চেয়েও বললো না। ছাদ থেকে নেমে যায়।
আরিয়ানকে দেখে যদিও ভয় পেয়ে ছিলো আরুহী বাট ওর চলে যাওয়াতে মনের কোনে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে।
আর্শঃ কিরে স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছিস কেনো?
আরুহী কোনো কথা না বলে দোলনায় বসে। তারপর আর্শের দিকে তাকিয়ে ” তুই বল আর্শ আমি কি দেখতে খারাপ? ”
আর্শ মুগ্ধ নয়নে কিছুখন তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলে ” তুই তো আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর। আমার ফাস্ট লাভ। ”
আরুহীঃ ধুর তোকে কেনো বলছি আমি তো অনেক জোশ। বাট ওই মালটা কেনো এমন করছে আমার সাথে বলতো?
আরুহীর কথায় ঘোর কাটিয়ে আর্শ বলে ওঠে ” কার কথা বলছিস তুই? পাগল হলি নাকি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
আরুহীঃ আছে একজন তোকে বলা যাবে না।
-কি এমন কথা যে তুই আমায় বলতে পারবি না। রুহি আমি না তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড তুই আমাকেও বলবি না?
ভুলে গেলি আমাদের ডিল কেও কাউকে মিথ্যা বলবো না আর কেউ কারো কাছ থেকে কিছু লুকাবো না। ”
– হুমমমম তোর থেকে আমি লুকাতেও পারবো না।
চোখ বন্ধ করে 1 সেকেন্ডে বলে দিলো,” আর্শ আমি না একজন কে ভালোবাসি। ”
আর্শ দোলনা থেকে উঠে পাগলের মতো হাসছে, “তুই আর ভালোবাসা হাহাহাহা”।
আরুহী আর্শের দিকে তাকিয়ে ” এই একদম এই রকম করবি না। আই এম সিরিয়াস। ”
-তুই এই অব্দি কত জনের ওপর ক্রাশ খেয়েছিস বলতো?
আরুহী মুখ গোমরা করে ” বাট আর্শ ”
পুরো কথা টা শেষ করতে না দিয়ে আর্শ বলে উঠলো “কাউন্ট কর। আরে কর, হাতে কাউন্ট কর। আরে এতো গুলো তো আঙ্গুল ও নেয়। ”
আরুহী আর্শের দিকে তাকিয়ে ” এটা সবার থেকে আদালা। আমি ওকে ফিল করছি আর্শ। ওর সব কিছু আমার ভালোলাগে। আই ফিল ইন লাভ আর্শ। “আর ওগুলো তো শুধু ক্রাশ ছিলো। দেখে ভালো লেগে ছিলো তাই বলেছিলাম। কখনো ফিল করি নি।
-কয়দিন পর সব ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাবে।
-হেসে নে। আমি ও আরুহী। আমি লাইফে ফাস্ট টাইম কারো প্রেমে পড়েছি। তোকে দেখিয়ে দেবো ভালোবাসা কাকে বলে। কথাটা শেষ করে ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।
আর্শ হাসতে হাসতেই বললো” নাম কি ছেলেটার। রুহি নাম তো বলে যা। ”
আরুহী থেমে পেছনে ফিরে তাকায়, মুখে এক টুকরো হাসি এনে বলে উঠে ” যেদিন আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক হবে সেদিন বলবো। ” কথাটা শেষ করে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলো আরুহী।
আর্শঃ ” পাগল একটা। আবার বিয়ের কথা বলছে। হাহাহা এই পাগল টাকেই আমি সব থেকে বেশি ভালোবাসি। আচ্ছা নিজের ভালোবাসার মুখ থেকে অন্য কারো নাম শুনলে সবার তো কষ্ট হয় তাইনা? তাহলে আমার হাসি কেনো পাচ্ছে?
একটু ভেবে আর্শ বলে ওঠে “কারন আমার রুহি সবার থেকে আলাদা। কখন কি বলে নিজেও জানে না।”
আরিয়ানঃ আই হেইট গার্লস। আমি মেয়েদের সহ্য করতে পারি না। আমি ওই বেহায়া মেয়েটার থেকে যত দুরে থাকতে চায় তত ও আমার কাছে আসে। আমি কি করলে ও বুঝবে আমি শুধু ওকে না আমি কোনো মেয়েকেই সহ্য করতে পারিনা।
আরুহীঃ তুই বিশ্বাস না করলে না কর।বাট আমি জানি আমি সত্যি ভাইয়ার প্রেমে পড়েছি। আমি আগে কখনো এমন ফিল করিনি। ভাইয়ার সবটা মিলিয়ে আমার ওকে ভালো লাগে। যদিও আমার সাথে ভাইয়া সব সময় খারাপ বিহেভ করে। তবুও আমি ওর ওপর রাগ ই করতে পারি না। ওই ফেসটা দেখলেই আমি সব ভুলে যায়। জানি না এ কোন মায়ায় পড়েছি আমি। বাট হ্যাঁ এই অনুভতিটা সব থেকে সুন্দর।
চলবে…….
( ক্যারেক্টার গুলো নিয়ে কিছু কথা
আরুহী ক্যারেক্টার টা একটা নির্লজ্জ মেয়ে। যে পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলে আর মারামারি করে। মেয়েটা কোনো কাজ করার আগে বা কিছু বলার আগে কিছু ভাবে না। মনে যা আসে তাই বলে। ওর মধ্যে আছে প্রচুর বাচ্চামি। নিজের আবেগ লুকাতে পারে না।
আর্শ, যে আরুহীর সব বাচ্চামির সঙ্গি,আরুহীর বেষ্ট ফ্রেন্ড। ও সব সময় আরুহীর মুখে হাসি দেখতে চায়। আরুহী কে সব বিপদ থেকে আগলে রাখতে চায়।
আরিয়ান, যে খুব রাগি। মেয়েদের একদম সহ্য করতে পারে না।)
( অনেকের প্রশ্ন, একটা ছেলে সুন্দর বলেই প্রেমে পরে যেতে হবে? প্রথমত আরুহী ওর ওপর ক্রাশ খায় ফাস্ট টাইম দেখে। দ্যান কিছুদিন পর রিয়েলাইজ করে ইটস লাভ। আর লাইফে অনেক ছেলেদের সাথে দেখা হয় অনেকে দেখতে হিরোদের মতো বাট সবার ওপর ফিলিংস আসে না। কোনো নিদিষ্ট একজনের ওপর ই আকৃষ্ট হয়।
আরুহীর সাথে ও তাই হয়েছে আরিয়ানকে প্রথম দেখায় ওর অন্যরকম ফিলিংস হয়েছে যা আগে কখনো হয় নি।
আর লাভ এট ফাস্ট সাইড বলে ও তো কিছু আছে তাই না?)
আশা করছি সবার ভালো লাগবে। হ্যাপি রিডিং।