তুমি রঙিন প্রজাপতি পর্ব-১৭+১৮

0
907

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পর্বঃ১৭

মাএই ঘুম ভাডাঙলো ফাহাদের। রাতে ঘুম হয়নি যার ফলে মাথাটা বেশ ভার ভার লাগছে। তবুও আড়মোড়া ভেঙে উঠে গোল হয়ে বসলো।
পরক্ষণেই চোখ গেলো খালি বিচেয়াছনায়।রুমে কোথাও কেউ নেই। চারপাশে রোদে ভরে গেছে নিশ্চয়ই বেলা অনেকটা হয়েছে।নিজের বাটন ফোনটা বালিশের নিচ থেকে বের করে সময় দেখলো। অলরেডি দশটা বেজে গিয়েছে অথচ কেউ তাকে একটি বার ডাকলো না অবধি। প্রতিদিন পিচ্চি মেয়েটা ডাকে আজ একটি বার ডাকলো না। বাচ্চা মেয়েটার এতো অভিমান! শুধু অভিমান নাকি এই কয়দিনে হাঁপিয়ে গিয়েছে। আনমনে মৃদু হাসে ফাহাদ। পিচ্চিটা দেখলে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে বলতো, আপনি হাসতেও জানেন ফাহাদ? ভাবতেই ঠোঁটের হাসিটা আরো দীর্ঘ হলো। কে বললো ফাহাদ হাসে, এই যে ক্ষণে ক্ষণে হাসছে ছেলেটা।
আরো মিনিট পাঁচেক সময় বিছানায় বসে হুট করে উঠে দাঁড়ালো ফাহাদ। চেয়ার থেকে তাওয়াল টা গলায় পেঁচিয়ে হেলেদুলে ওয়াশরুম গেলো।
.
.
চাঁদনী এখনো রান্না ঘরে কাজ করছে। সকালে রান্না শেষ করে সবাইকে খাইয়ে এখন আবার ফারিহার জন্য টিফিন রেডি করছে। তার পরিক্ষা চলছে, পরিক্ষা শেষ করে ফিরতে বিকেল হয়ে যায়। মেয়েটা একদম বাহিরের খাবার খেতে পারে না। এজন্য বাসা থেকে খাবার নিয়ে যায়, সকালে খাবার সময় ভাবীর কাছে বায়না ধরেছে আজ জানি একটু নুডলস করে দেয় তাকে। সেটাই করছে চাঁদনী। কিন্তু কোনো কিছুতে মন বসছে না আজ, মনের সাথে জোর করেই আনমনে কাজ করছে। চোখটা জ্বালা করছে, বুকটা অজানা ব্যা’থা’য় পু’ড়’ছে মেয়েটার। এ কেমন অসহ্য অনুভূতি?
এরিমধ্যে খুশী মনে ফারিহা আসলো রান্না ঘরে, পিছন থেকে ক্ষীণ কন্ঠে ডাকলো,

“ভাবী…?”

এভাবে একবার, দুইবার কিন্তু ভাবী কথা বলছে না। ওই যে খু’ন্তি’টা নাড়ছে আর চারপাশে যেন হুঁশ নেই তার। ফারিহা এগিয়ে গেলো চাঁদনী’র কাঁধে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,

“আরে কি হয়েছে তোমার বলতো ভাবী? সেই কখন থেকে ডাকছি কথা বলছো না যে।”

আকস্মিক কারো ঝাঁকুনিতে লাফিয়ে উঠলো চাঁদনী। শব্দের অনুসরণ করে ঘুরে তাকালো ফারিহার দিকে। তার চোখে অশ্রু কণা গুলো চিকচিক করছে। এতক্ষণ কিছু একটা ভাবনায় এতোটা বিভোর ছিলো মেয়েটা যার ফলে ফারিহার কণ্ঠ কর্ণকুহরে পৌঁছাতে পারেনি। হুট করে ফারিহার আগমনে অস্বস্তিতে ফেলে দিলো চাঁদনী কে। আবারো দ্রুত উল্টো মুখ করে শাড়ী’র আঁচল দিয়ে চোখের পানিটুকু আড়াল করার চেষ্টা চালালো। কিন্তু পারলো না তার আগেই ফারিহা হাত ধরে ফেললো। নিজের দিকে ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে হয়েছে টা কি মেয়েটার? মেয়েটার চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে ফেঁপে একাকার, শ্যামলা মুখটা মলিন দেখাচ্ছে ভীষণ। একরাতের মধ্যে মেয়েটার একি হাল?
চাঁদনী’র বি’প’র্য’স্ত মুখটা দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো ফারিহা। ভোর থেকে কয়েকবার চাঁদনী’র সাথে কথা হলেও পড়ার চাপে এতকিছু খেয়াল করেনি সে। মাএই পড়াটা শেষ করে, মূলত সে একান্তই শুনতে এসেছিলো, গতকাল রাতে শাড়ী পড়া অবস্থায় তার ভাই কি বলেছে, কি হয়েছে তাদের মধ্যে এসব কিছু জানতে। কিন্তু একি হাল চাঁদনী’র, তার এতক্ষণের হাসি মুখটা চুপসে যায়। কপাল পড়লো সূক্ষ্ণ ভাজ। চাঁদনী’র মলিন গালটা দু’হাতে ছুঁয়ে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো ফারিহা,

“এ্যাই ভাবী.. এ্যাই কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেনো তুমি? আমায় বলো প্লিজ! ভাইয়া তোমায় কিছু বলেছে? কি বলেছে আমায় বলো?”

অসহা’য়’ত্ব মানুষগুলো যখন কারো একটু আদুরে কথা, কারো মমতাময়ী ছোঁয়া পায় তখন আর নিজ চাইলেও শক্ত খোলসে আঁটকে রাখতে পারে না। ফারিহার আদুরে ছোঁয়ায় সামনে থাকা মেয়েটির এতক্ষণে’র বুকের চাপা কষ্টটা যেন দলা পেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ভীষণ প্রয়োজন ছিলো এই মূহুর্ত একটা ভরসারত কাঁধ। নিজেকে শত চেয়েও আর সংযত রাখতে পারলো না চাঁদনী। হুহু করে কেঁদে, হামলে পড়লো ফারিহার বুকে। ফারিহা আগলো নিলো মেয়েটাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কাঁদতে না করলো না। মন খুলে কাঁদুক মেয়েটা! মাঝে মাঝে কাঁদলে বুকের চাপা কষ্টটা কিছুটা হলেও কমে।
মিনিট দশেক পড়েই কান্নার বেগ কমে এসেছে চাঁদনী’র। ফারিহা এবার কোমল কণ্ঠে শুধালো,

“কাঁদছো কেনো?”

চট করে মাথা তুলে তাকালো চাঁদনী, এতক্ষণের ম’রা কান্না করার কারণে নিজেই লজ্জা পেলো ভীষণ। ফারিহাকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো, হাত দিয়ে চোখের জলগুলো মুছতে মুছতে বললো,

“কই কাঁদছি না তো আপা।”

“বাড়ির কাউকে মিস করছো?”

“কই নাতো।”

“এই যে কাঁদলে, চোখের কোণে এখনো জল।”

ফারিহা’র কথায় এবার মলিন হেসে চাঁদনী বললো,”ভুল দেখছো ওটা বিশুদ্ধ ভালোবাসার ফল।”

বলেই ব্যস্ত হাতে টিফিন বক্সে নুডলস গুলো ভরে ফারিহা’র হাতে দিয়ে বললো,

“হয়ে গেছে আপা। তোমার নুডলস রেডি।”

ফারিহা বিস্মিত চোখে দেখছে সবটা, এই মেয়েকে যত দেখে তত অবাক হচ্ছে সে। এই মাএ না কি কান্নাটাই না কাঁদল মেয়েটা। অথচ এখন দেখে বুঝার উপায় নেই যে কেঁদেছে মেয়েটা। কি সুন্দর অবলীলায় হাসছে এখন! এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে এতোটা ধা’রা’লো ব্যক্তিসম্পূর্ণ কি করে হয়? ভেবে পায়না ফারিহা। পরক্ষণেই সে বিস্মিত কণ্ঠে বলেই উঠলো,

“তুমি অনেক শক্ত একটা মেয়ে ভাবী।”

“যারা ছোট বেলা থেকে মায়ের আহ্লাদ, ভালোবাসা থেকে ব”ঞ্চি’ত তারা একটু কেমনই যেন হয় আপা। এদের ছোট্ট থেকে হাজারটা আ’ঘা’ত, মন্দ কথা, হজম করতে হয়। এরা সবার থেকে আ’ঘা’ত পেতে পেতে এই মানুষগুলো অটোমেটিক শক্ত পোক্ত হয়ে উঠে। এরা যে বড্ড নিরুপয় থাকে। মা না থাকলে এদের চারপাশে ভালোবাসার মতো কেউ থাকে না আপা। কেউ না! এই যে দিনশেষে আমার আমিটা ছাড়া কেউ নেই আমার! ”

মায়ের কথা মনে পড়তেই আবারও চোখ দু’টো ছলছল করে উঠলো চাঁদনী’র। ফারিহার মায়া হলো, সে চাঁদনী’র কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“কে বলছে তোমার কেউ নেই ভাবী। আমি আছি, আমি তোমার বোন। তোমার অনেক কষ্ট তাই না? প্লিজ আমায় বলো, মনের মাঝে চেপে রেখো না। কাউকে বললে মন হালকা হয়ে যায়।”

“আমার কোনো কষ্ট নেই আপা। এগুলো পেতে পেতে এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমার শুধুই একটাই আক্ষেপ! আমি কেনো সবার থেকে অবহেলা পাই আপা বলতে পারো? আমি কি দেখতে এতটাই কুৎসিত আপা? আমায় একটু ভালোবাসা যায় না…। বিলাসবহুল জীবন যাপন কোনো কালেই চাইনি আমি। আমার ইচ্ছে খুব সীমিত, খুউব সাধারণ। এই যে সামান্য একটু চাওয়া!
এইটুকু কেনো আমার ভাগ্যে জোটে না। কেনো?কেনো আপা? আমায় কেনো সবাই এতো অবহেলা করে? ”

কথা গুলো বলতে বলতে এতক্ষণের জমানো জলটুকু চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো মেয়েটার। ফারিহা পানিটুকু হাতদিয়ে মুছে দিতে দিতে বললো,

“আ’ঘা’ত মানুষকে ভা’ঙে ঠিকই,তবে সে আ’ঘা’ত মানুষকে সঠিক পথ দেখায়!প্রত্যেকটা আ’ঘা’ত মানুষকে,নতুন কিছু শেখায় এবং শ’ক্ত করে! সো কেঁদে না চাঁদনী।”

থামলো সে লম্বা শ্বাস ছেড়ে আবারো বললো,

“শোনো? তুমি যত ঠ’কবে ততই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করবে তুমি।
যতবার ভা’ঙবে ঠিক ততবারই ভা’ঙা থেকে গড়তে শিখবে। যত অ’বহে’লা পাবে, তুমি নিজেকে সফলতার দুয়ারে ততটাই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। মন খারাপ করো না। ধৈর্য ধরো! আল্লাহর উপর সবসময় ভরসা রেখো। ইনশাআল্লাহ! তুমি তোমার চাওয়ার থেকেও এতো এতো পাবে যা তুমি কল্পনা ও করতে পারবে না।”

আরো মিনিট দশেক সময় চাঁদনী’র সাথে কথা বলে ফারিহা চলে গেলো নিজের রুমে। তার বের হবার টাইম হয়ে গিয়েছে। মেয়েটার পাশে চাইলেও আজ থাকা সম্ভব নয় তার। যাওয়ার আগে বারবার বলে গিয়েছে, সে যেন আর না কাঁদে, মন খারাপ করে যেন না থাকে।
.
.
ফাহাদ কতক্ষণ ধরে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। কাউকে দেখা যাচ্ছে না এখানে। এতোদিন সে উঠার সঙ্গে সঙ্গে খাবার নিয়ে আসে চাঁদনী না হয় মা। আজ আর কেউ নেই। সবার যত অ’ভি’মা’ন, অ’ভি’যো’গ তার সাথেই। একলা মানুষ ক’জনার মন র’ক্ষা করবে সে? তপ্ত শ্বাস ছাড়লো ফাহাদ। বোর হয়ে গেছে বসে থাকতে থকতে। আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে বিরক্তে হয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো ফাহাদ। চাঁদনী সকালের এঁটো থালাবাসন ধুচ্ছিলো। ফাহাদ হালকা কাশী দিয়ে চাঁদনী’র দৃষ্টি আকার্ষণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মেয়েটা তাকে দেখেও দেখছে না। সাত-পাঁচ না ভেবে গমগম কণ্ঠে বললো ফাহাদ,

“আমার কফিটা?”

“করা হয়নি। আপনি বসুন গিয়ে আমি নিয়ে আসছি।” ফাহাদে’র দিকে না তাকিয়েই যথেষ্ট গম্ভীর কণ্ঠে বললো চাঁদনী।

ফাহাদ বিস্মিত নয়নে কতক্ষণ মেয়েটাকে পরখ করে পুনরায় গিয়ে বসলো। আড় চোখে বারবার রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে নিলো চাঁদনী’কে। মেয়েটার মনে চলছেটা কি? হঠাৎ এতোটা চেঞ্জ।
কিছুক্ষণের মধ্যে চাঁদনী কফি নিয়ে আসলো, ফাহাদ নড়েচড়ে বসলো। চাঁদনী নিচের দিকে চোখ রেখে কফির মগটা টেবিলে রেখে চঞ্চল পায়ে জায়গা ত্যাগ করলো। এতোদিন মগটা খুব যত্ন করে প্রিয় মানুষটার হাতে দিলেও আজ আর দিলো না। ফাহাদ লক্ষ্য করলো মেয়েটা ভুলেও তার দিকে একটিবার তাকায়নি। ফাহাদে’র কেনো জানি খারাপ লাগছে এসবে। মেয়েটার হঠাৎ পরিবর্তন তার বক্ষে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। কেনো হচ্ছে? সে-তো চাইতো তার থেকে মেয়েটা দূরে থাকুক। তাহলে এসব কেনো মানতে পারছে না সে। আচ্ছা পিচ্চিটা কি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে তার আচরণে? বুক চিরে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে চাঁদনী’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ফাহাদ। আনমনেই সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

“কিভাবে আছি, কিভাবে বাঁচি
কেউ যদি জানতো!কত জল কত মেঘের দল,বুকে বাসা বেঁধে আছে,কত ভারি হয়ে ঝরে সেই মেঘ চোখ বেয়ে। কেউ যদি জানতো!এই পিছিয়ে থাকা জীবন, এই ভাঙা মন,কেনো এত নীরবতা,কেনো এই একলা থাকা কেউ যদি জানতো!
কেউ যদি জানতো
একটা মানুষ কতটা ব্যথা পেলে নিশ্চুপ হয়ে যায়
জীবন থেকে কতটা পিছিয়ে গেলে
জীবন থেকে কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয়। একবার….. শুধু একবার
যদি কেউ জানতো! আজ হাসতে ভুলে গেছি
না হাসলে না কি ঠোঁট ম’রে যায়,
এ মরে যাওয়া ঠোঁটের না বলতে পারা কথা
শুধু একবার যদি কেউ জানতো!
তবে এই যন্ত্রণায় একটু সান্ত্বনা পাওয়া যেতো। এই মন জানতো এই পৃথিবীতে কেউ একজন আছে
যে ভাঙা মনের কষ্ট বোঝে,যে ঝরে পড়া অশ্রুর কষ্ট বোঝে, বোঝে জীবন থেকে পিছিয়ে পড়ার কষ্ট!
তাহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যেতো। মৃত এই ঠোঁট আবার জীবন ফিরে পেয়ে হাসতে শিখে যেতো!
এই যে আমি একটা মানুষ
এই ভাঙা মন, এই পিছিয়ে পড়া জীবন নিয়ে
কিভাবে আছি, কিভাবে বাঁচি!
একবার….. শুধু একবার
কেউ যদি জানতো!”

মাথায় শত ভাবনা নিয়েই কফির মগে ছোট্ট একটি চুমুক দিলো। ছিঁহ কি বিশ্রী স্বাদ! মোটেও চিনি দেয়নি কফিতে। নিশ্চয়ই এটা ইচ্ছে করেই করছে, বাচ্চা মেয়েটা তাকে এই ভাবে শায়েস্তা করছে। কি অ”দ্ভু’ত ব্যাপার তাই না? ফাহাদে’র আজ এসবে রাগ লাগছে না বরং বিপরীতে মুচকি হাসলো। টু-শব্দটিও করলো না। মিনিটের মধ্যে ঢকঢক করে অ’খা’দ্য’টা পান করে নিলো।
এরিমধ্যে ফারিহা রেডি হয়ে ডাইনিং পেরিয়ে বের হচ্ছে। ফাহাদ বোনকে দেখে মৃদু হেসে বললো,

“বের হচ্ছিস টুকী (বোনকে আদর করে টুকী বলে ফাহাদ) ? চল আমি এগিয়ে দেই।”

“লাগবে না ভাইয়া।”

বলেই পাশকাটিয়ে চলে গেলো ফারিহা। আশ্চর্য! আজ হঠাৎ করে সবাই তাকে এভাবে ইগনোর করছে। মনে হচ্ছে এ বাসায় সে কেউ নয়।
ফাহাদ তবুও বোনের পিছু পিছু ছুটলো।
.
চাঁদনী সবে মাত্র হাতের কাজ শেষ করে বসলো। খিদেয় তার পেট চোঁ-চোঁ করছে। অজানা এক অভিমান পুষে সকালেও কিছু খায়নি সে, এখন না খেলেই নয়। তার তো এমন কেউ নেই যে তাকে ধরে-বেঁধে খাওয়াবে। পেটের ক্ষুধার কাছে ওসব রাগ-অভিমান হার মানে। চাঁদনী দ্রুত এক প্লেট ভাত নিয়ে খেতে বসলো। কয়েক লোকমা ভাত খেতেই হুট করে কোথাথেকে ফাহাদ আসলো। চাঁদনী’র চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

“আমিও খাইনি..।”

চাঁদনী চমকালো, লোকটার হয়েছেটা কি আজ? আজ নিজ থেকে যেচে এসে তার সাথে কথা বলছে। আর এতোদিন চাঁদনী’র কথায় কতটা না বিরক্ত হতো। হাসলো চাঁদনী, মানুষরা পারেও বটে! সস্তায় পায়ের কাছে কিছু পেয়ে বসলে মূল্য নেই তাদের কাছে, দূরত্ব বাড়ালেই কদর বাড়ে! চাঁদনী ও আর কারো কাছে সস্তা হবে না। কি দরকার অযথা মানুষটাকে বিরক্ত করার, যার কাছে তার কোনো মূল্যই নেই। থাক না লোকটা নিজের মতো করে।
.
.
আজ একটা দিন কেটে গিয়েছে চাঁদনী প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি একটা কথাও বলছে না ফাহাদে’র সাথে। যদিও ফাহাদ অনেক বার চেষ্টা করছে কথা বলার কিন্তু বারবার চাঁদনী এড়িয়ে চলছে।
সকাল নয়টা বাজে এখন। ফাহাদ নাস্তা করে রুমে এসে রেডি হচ্ছে বাহিরে বের হবার জন্য। তার ও ছুটি প্রায় শেষের দিকে।
ফাহাদ বাড়িতে আসলে প্রতিবারই একবার করে বাসার সবার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো মার্কেট থেকে কিনে দেয়। এবার বিভিন্ন ঝামেলার জন্য আগে যাওয়া হয়নি, তাই আজকেই যাবে।
রেডি হয়ে একে একে মা, ভাই-বোন, দাদীর থেকে জেনে নিয়েছে কার কি লাগবে। অতঃপর নিজের রুমে গেলো আবারও। চাঁদনী রুমে বসেই চুল আঁচড়াচ্ছিলো। কোমড় অবধি লম্বা চুলো গুলো সারা পিঠে ছড়িয়ে আছে, চুরুনী করার ফলে মৃদু নড়ে চুলের মাঝে ঢেউ ঢেউ পড়ছে। ইশ কি সুন্দর লাগছে! কোনো মেয়ের চুল এতো সুন্দর হয় জানা ছিলো না ফাহাদে’র। তার খুব ইচ্ছে করে ওই চুল গুলো একটু ছুঁয়ে দিতে। ফাহাদ ধীরপায়ে চাঁদনী’র কাছে এগিয়ে গেলো, নিজের ইচ্ছেটা দমিয়ে রেখে মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলো,

“মার্কেটে যাচ্ছি আমি। তোমার কিছু লাগবে?”

“নাহ।” বরাবরের মতোই গম্ভীর কণ্ঠে বললো চাঁদনী।

“কিচ্ছু লাগবে না একদম?”

“বললাম তো লাগবে না কিছু।”

ফাহাদ হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কৃষ্ণকলি মেয়েটার দিকে। মিনিট পাঁচেক ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো মহারানী যদি কিছু বলে। কিন্তু না মেয়ে’টা তাকে যথেষ্ট ইগ্নোর করছে। ফাহাদ আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলো। চাঁদনী খুব গোপনে সেদিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিলো প্রিয় পুরুষটি’কে।
.
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো কিন্তু ফাহাদ এখনো আসছে না। চাঁদনী’র কিচ্ছুটা চিন্তা হচ্ছে এবার। দুপুরের খাবার খেয়ে সুয়ে ছিলো একটু ঘুমানোর জন্য। কিন্তু ঘুম আসছে না তার, বিছনায় বসে আশপাশ করছে। এরিমধ্যে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে তার অধর কোণে হাসির রেখে ফুটলো, মনেমনে স্বস্তিরর নিঃশ্বাস ছাড়লো চাঁদনী। নিশ্চয়ই ফাহাদ এসেছে, দ্রুত উঠে মাথায় ওড়নাটা চেপে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। দরজা খুলতেই চমকে উঠলো চাঁদনী, ফাহাদে’র কপালে, শার্টে র’ক্তের দাগ। কিন্তু হাতে কতগুলো শপিং ব্যাগ।
চাঁদনী ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে গেলো ফাহাদে’র অতী নিকটে, তার মনের সমস্ত অভিমান, অভিযোগ দূর রেখে ফাহাদে’র কপাল ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“এই কি হয়েছে আপনার? ”

ফাহাদ কিছু বললো না, তার এক হাত বাড়িয়ে শপিং ব্যাগ গুলো নিতে বললো চোখের ইশারায়। চাঁদনী নিলো। দু’জনই এক সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করলো।
চাঁদনী’র মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এই র’ক্ত.. এই র’ক্ত কই থেকে আসলো? কি হয়েছে তার? অথচ কিছু বলছেও না ফাহাদ।
চাঁদনী’র চিন্তিতো মুখটা দেখে তার মনের অস্তিরতা অনুভব করছে ফাহাদ। কেনো জানি তার ভীষণ ভালো লাগছে এই চিন্তিতো মুখটা দেখে। মনে মনে খানিকটা হাসলো ফাহাদ।
অতঃপর চাঁদনী’র দিকে তাকিয়ে বললো,

#চলবে…..

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পর্বঃ১৮

এতো হাইপার হতে হবে না তোমাকে। আমার কিচ্ছু হয়নি। শুধু একটু….

“শুধু একটু কি?” বিচলিত কণ্ঠে বললো চাঁদনী।”

“আসলে তেমন কিছু না। হালকা একটু ব্যাথা পেয়েছি হাতে।”

“কি ভাবে কি হলো? আর আপনার গায়ে’ই বা এতো র’ক্ত কেনো?”

“আর বলো না। আসার পথে গাড়ি এ”ক্সি”ডে”ন্ট হয়েছিল। এক লোক গু’রু’ত’র আ’হত’ হয়েছে তাকে ধরতে গিয়ে তার শরীরে র’ক্ত লেগেছে। তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে যেতে এতো দেরী হলো।”

চাঁদনী স্বস্তি পেলো এতক্ষণে , ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। এতক্ষণ মনে হচ্ছিলো তার বুকে বিশাল এক পাথর চাপিয়ে রেখেছিলো কেউ। কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে ফাহাদ’কে পর্যবেক্ষণ করে জানতে চাইলো, লোকটা এখন ঠিক আছে কিনা?
ফাহাদ জানালো, হসপিটালে আছে তবে আগের তুলনায় সুস্থ দেখে এসেছে সে।
চাঁদনী আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না ফাহাদে’র জন্য খাবার রেডি করতে চলে গেলো।
ফাহাদও সব শপিং ব্যাগ গুলো একে একে বসার ঘরে চেয়ারের উপর রেখে দিলো।
ফাহাদ এসেছে কেউ টের পায়নি বোধহয়। বাকি সবাই রুমেই আছে এখন। হয়তো দুপুরে ভাত ঘুম ঘুমাচ্ছে তাই আর ডাকলো না ফাহাদ। নিজেও রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
রুমে এসে শার্টটা খুলতেই হুট করে কিছু একটা মনে পড়তেই তড়িঘড়ি পুনরায় বসার ঘরে আসলো। চেয়ারে থাকা জিনিসপত্রে’র মধ্য দিয়ে বেছে বেছে লালা রঙের একটা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে আবার ও চলে গেলো। যাওয়ার আগে অবশ্য রান্না ঘরে একবার উঁকি দিতে ভুললো না।
.
.
শেষ বিকেলে রুমে সুয়ে আছে চাঁদনী। সবাইকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে ফাহাদও রুমে আসলো মাএ। চাঁদনী টের পেয়ে আড় চোখে একবার তাকালো, লোকটাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। এখন নিশ্চয়ই একটু বিশ্রামের বড্ড প্রয়োজন তার, আর সে খাটে সুয়ে থাকলে তো আর লোকটা এখানে আসবে না। আবারও ক্লান্ত শরীরে চলে যাবে কোথাও। ফাহাদে’র কথা ভেবেই তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে চলে যেতে উদ্যত হলো চাঁদনী। অমনি পিছন থেকে পুরুষালী গমগমে কণ্ঠে ফাহাদ বলে উঠলো,

“এই মেয়ে? কই যাচ্ছো? এদিকে এসো তো একটু?”

চাঁদনী সহসায় চমকালো! পা জোড়া আপনা-আপনি থেমে যায় তার, পিছনে ঘুরে অবাক হয়ে তাকালো ছ’ন্ন’ছা’ড়া পুরুষটি’র পানে। চোখে- মুখে অজস্র কৌতূহল তার। এই লোকটা হঠাৎ ঘটা করে তার খোঁজ নিচ্ছে। আবার তার কাছে ডাকছে ঘটনা কি? এই স্বাভাবিক জিনিসটা বড্ড অস্বাভাবিক ঠেকছে তার ছোট্ট মস্তিষ্কে।
চাঁদনী’কে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্ত হয়ে পড়ে ফাহাদ। পরক্ষণেই
চাঁদনী এক-পা দু’পা করে এগিয়ে খানিক বিস্মিত কণ্ঠে শুধালো,

“জ্বি কিছু বললেন আপনি?”

ফাহাদ জবাবে কিছু বললো না। আলমারি খুলে চটজলদি সেই লালা শপিং ব্যাগটা বের করে চাঁদনী’র হাতে দিয়ে বললো,

“এটা তোমার জন্য।”

চাঁদনী হাতের ব্যাগটার দিকে একবার তাকিয়ে আগের ন্যায় বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

“কি এটা?”

ফাহাদ কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো এবার। এতো প্রশ্ন করার কি আছে? এমনিতেই মেয়েটার ভাবসাব, অমন অদ্ভুত দৃষ্টি তাকে বারংবার অপ্রস্তুত করে দিচ্ছে। এ চাহুনি চুম্বকের ন্যায় জাগিয়ে তুলে তার এতোদিনের দমিয়ে রাখা সুপ্ত অনুভূতি।
ফাহাদ শ্বাস নিলো লম্বা, নিজেকে সামলে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,

“হাতেই তো আছে খুলেই দেখো।”

চাঁদনী কিচ্ছু বললো না। ফাহাদে’র কথা মতো খাটের এক কোনায় বসে প্যাকেট খুলে দেখতে পেলো, শাড়ী’র মতো কিছু একটা। সে আর খুললো না আবারো প্যাক করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

“বলেছিলাম না আমার কিছু লাগবে না। শুধু শুধু কেনো আনলেন? এগুলোর’র কোনো প্রয়োজন নেই আমার।”

বলেই চাঁদনী ব্যাগ গুলো রেখে গটগট পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ফাহাদ সে দিকে মিনিট খানিক অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো।
সে ভেবেছিলো মেয়েটা নিশ্চয়ই ভীষণ খুশী হবে এগুলো দেখে। কিন্তু না তার ভাবনা ভুল! এ মেয়েতো ডিরেক্ট তাকে অপমান করলো। তার দেওয়া জিনিস এমন অবহেলায় রেখে দিলো এটা কি কম অপমান?
ফাহাদে’র রাগ লাগছে ভীষণ রাগ! কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। হঠাৎ যেন ভিতরে থাকা মস্তিষ্ক জাগ্রত হয়ে তাচ্ছিল্য করে বলছে, এমনটাই হবার ছিলো ফাহাদ! তুমি ও তো এতোদিন মেয়েটাকে কম অপমান করেনি। কি ভেবেছো তুমি? মেয়েদের বুঝি কোনো আত্ম সম্মান নেই।

ফাহাদ মলিন মুখে ধাপ করে চোখ বন্ধ করে সুয়ে পড়লো বিছানায়। হঠাৎ বালিশের পাশে থাকা চাঁদনী’র মোবাইলে’র টুংটাং মেসেজের শব্দে তাড়াক করে চোখ খুলে মোবাইলটা হাতে নিলো।
মোবাইলে কোনো লক নেই।
ওয়ালপেপারে নিজের ছবি জ্বলজ্বল করছে তা দেখে চমকে উঠলো ফাহাদ। এ ছবি তো তার ফেসবুক একাউন্টে ছিলো। তারমানে মেয়েটা তার আইডিটা ও চিনে নিয়েছে?
হুট করে মলিন মুখটায় কিঞ্চিৎ হাসির রেখে দেখা গেলো। অতঃপর কিছু একটা ভেবে খুব গোপনে মোবাইল নাম্বারটা নিজের ফোনে উঠিয়ে নিলো। কিন্তু বিপওি বাঁধলো কি নাম দিয়ে সেইভ করবে? কিছুক্ষণ গভীর ভাবে ভেবে মাথায় আসলো কৃষ্ণকলি নামটা। হ্যাঁ এই নামটাই বেস্ট মনে হলো। নিজের কাজ শেষে আর ঘাঁটল না ফোনটা যথাযথ জায়গায় রেখে দিলো ফাহাদ। কেননা বিনা অনুমতিতে কারো পার্সোনাল জিনিস না দেখাই ভালো।
এরপর নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিলো শুভ্র’কে। কিন্তু ছেলেটা কল তুলছে না। ইশশ! কত দিন কথা হয় না তাদের। বাড়িতে এসে আর কথা হয়নি ছেলেটার সাথে। এখন আবার ফোন তুলছে না। কপাট চিন্তিতো হয়ে আবার কল দিতেই রিসিভ হলো এবার। সাথেসাথে ওপাশ থেকে ঘুমঘুম কণ্ঠে ভেসে আসলো,

“কোন শা’লা’য়’রে? আমার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে দিলি…

“আমি তোর শা’লা নই আমি ফাহাদ।’ দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে বললো ফাহাদ।

ফাহাদে’র কণ্ঠ শুনেই ঘুমটুম উড়ে গেলো শুভ্রে’র।পরক্ষণেই বাচ্চাদের মতো অভিমানী কণ্ঠে বলে উঠলো,

“তুই.. তুই তো আমাকে ভুলেই গেছিস ফাহাদ!”

ফাহাদ মুচকি হাসে আহ্লাদী সুরে বললো, কি যে বলিস? তোকে কি ভাবে ভুলে যাই দোস্ত?

“সে তো দেখছিই। বাড়িতে গিয়ে একটা বার কল দিলি না আমায় আর না তোর নাম্বারটা আমায় দিয়েছিস। এজন্যই বিখ্যাত ব্যক্তিরা বলছেন, বিয়ে’র আগ পর্যন্ত বন্ধুরা বন্ধু’র থাকে বিয়ে করে বউ পেলেই সবাই সবাইকে ভুলে যায়। তুই ও গেছিস।”

দুই বন্ধু এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে। একজন অভিমান করছে তো একজন তা ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে । মাএই একটা কাজে রুমে এসেছে চাঁদনী। ফাহাদ কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে তা দেখে ভিতরে গেলো না চাঁদনী। ওপাশের কথা না শুনলেও ফাহাদে’র কথা শুনে বুঝলো কোনো বন্ধু’র সাথে কথা বলছে। এই গম্ভীর লোকটাও এভাবে কথা বলতে পারে ভাবা যায়?
দুই বন্ধু’র কথপোকথন দরজায় দাঁড়িয়ে নিরবে শুনছে চাঁদনী। না শুনছে না সে, সে বরং ফাহাদে’র হাসি মুখটার দিকে পলকবিহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো। মানুষটা হাসলে কত সুন্দর লাগে অথচ মানুষটা তার সামনে হাসে না কখনো।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ দরজায় চোখ যায় ফাহাদে’র যার ফলে দৃষ্টি বিনিময় হয়ে গেলো। চাঁদনী’কে দেখে পরক্ষণেই মুখে গম্ভীরতা ফুটে উঠে তার।
এভাবে ধরা পড়ে চাঁদনী বেশ লজ্জা পেলো। চোরের মতো মুখটা কাঁচুমাচু করে আমতা আমতা করছে। কি বলবে সে? কথাও খুঁজে পায় না এই মুহূর্তে।
যা দেখে হাসি পাচ্ছে ফাহাদে’র। কিন্তু ফাহাদ তো এখন ঘুণাক্ষরেও হাসবে না চাঁদনী’র সামনে। নিজের হাসিটা মুখের গম্ভীরতার ভাজে লুকিয়ে চাঁদনী’কে পাশ কাঁটিয়ে বাহিরে গেলো ফাহাদ।
যা দেখে হঠাৎ বুকটা ভারী হয়ে গেলো সপ্তদশী মেয়ে’টার। ছলছল চোখে প্রিয় পুরুষটি’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

“তুমি এতো কিছুর বাহানা করো, তবে আমায় পেতে কেন বাহানা করো না?
তুমি কতজন’কে ভালোবাসো, তবে আমায় কেন একটু ভালোবাসো না?
তুমি এতো কিছুর খোঁজ নেও, তবে আমার কেন খোঁজ নেও না?
তুমি এতো কিছুই বুঝো, তবে আমার রাগ অভীমান কেন বুঝো না?”
.
.
সন্ধ্যা থেকে চাঁদনী দাদী’র রুমে বসে আছে। দাদী এখন মোটামুটি সুস্থ্যই আছে। বৃদ্ধ মহিলা একজন সঙ্গী পেয়ে এটা সেটা রাজ্যের কথা বলছে চাঁদনী শুধু হ্যাঁ, হুহ করছে। ভিতরে ভিতরে বিকেল থেকে অজানা এক কারণে ভীষণ মন খারাপ তার। এসব কথা ভালোও লাগছে না আবার দাদী’কে উপেক্ষা করে চলেও যেতে পারছে না। কি এক মুসিবত! এরমধ্যে দাদী’র রুমে আসলো ফারিহা, মাহিম এদের সাথে মিম রয়েছে আজ।
চাঁদনী’কে এখানে দেখে মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নিলেও বাঁধা দিলো মাহিম। সে বায়না ধরেছে সবাই মিলে ফোনে লুডু খেলবে আজ। ফারিহাও বোনকে জোড় করে বসিয়ে দিলো।
এরপর খেলা শুরু করলো তবে চাঁদনী, মিম কেউ কারো সাথে কথা বলছে।
এদের খেলা দর্শক হিসেবে উপভোগ করতে লাগলো দাদী।

চলবে…..

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে