#তুমি_নামাক_অক্সিজেন
#পর্ব_৯
Tahrim Muntahana
কি হ্যান্ডসাম লাগছে রে। কে এই ছেলেটা। জীবনে প্রথম কাউকে প্রথম দেখায় মনে ধরেছে। উনি আমার জন্যই ফিক্সড হয়ে গেছে
আহির বোন সামান্তার কথা শুনে উপরে তাকাতেই ঝটকা খেল
আরে উনি তো হৃদান চৌধুরী লন্ডন বিজনেস টাইকুন
ভাইয়া একে আমার চাই চাই। প্লিজ
কি সব বলছিস অন্য কেউ হলে তাও কথা ছিলো হৃদান চৌধুরীর সামনে যাওয়ার সাহস আমার নেই
তুই না গেলি আমিই যাচ্ছি। আমাকে দেখলেই পছন্দ করবে আই এম সিয়র
এতক্ষন দুই ভাইবোনের কথা হৃদিতা শুনছিলো কারণ সে পাশেই ছিলো। কথা গুলো শুনে রাগে ফুসফুস করছে। মন চাচ্ছে মেয়েটার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে। কিছু একটা ভেবে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সব মেয়েই হা করে তাকিয়ে আছে। তা দেখে হৃদিতা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। এতক্ষন রাইসা রোহানী রাহি অরনী পিয়ানি সোহা একটু দূর থেকে হৃদিতাকেই দেখছিলো। হৃদিতা কি করবে সেটা দেখার জন্যই বসে আছে। বড়রাও একপাশে তাদের মতো কথা বলছে।
হঠাৎ হৃদিতা দৌড়ে গিয়ে হৃদানকে জাপটে ধরল। সবাই তো অবাক হয়েছেই হৃদান তো রীতিমতো মতো শকড। কি হলো এইটা। মানুষ চিনতে সমস্যা হয়নি আবার সবার সামনে এইভাবে ধরাতেও সমস্যা হয়নি সমস্যা হলো হৃদিতা যে ওকে নিজ ইচ্ছায় সবার সামনে জড়িয়ে ধরেছে সেটা মানতে পারছে না। আহিরের বোন তো রেগে এগোতে যাবে আহীর হাত ধরে আটকায়
আজকে প্রথম এসেছিস এই বাড়ি সিনক্রিয়েট করিস না আগে দেখ কি হয়
হৃদান এখন স্বাভাবিক হয়ে নিজেও হৃদিতা জড়িয়ে ধরে উপরে তুলে ফেলে। হৃদিতাও খুশিতে খিল খিল করে হেসে উঠে। সব মেয়েকে জব্দ করতে পেরে খুব খুশি লাগছে। এখন হৃদিতা তো রীতিমতো এক্টিং শুরু করেছে
হৃদরাজ দেখোতো আমাকে কেন লাগছে
অপূর্ব অতুলনীয় পরীর চেয়েও বেশী সুন্দর অপ্সরী আমার হৃদপরী
হৃদান ঘোরের মধ্যেই বলে উঠল। হৃদিতা বেশ লজ্জা পাচ্ছে তবুও মেয়েদের দেখাতে হবে না। আর হৃদানের তো চারপাশের খেয়াল ই নেই সে তার হৃদপরীর পাগলামিতে মেতে আছে। ওদের বাড়ির সবাই মিটমিটয়ে হাসছে দেখে। বড়রাও দেখছে। হিয়াও খেয়াল করেছে কিন্তু এখন কিছু করার নেই যা করতে হবে পরে। এখন করলে হীতে বিপরীত হবে তাই চুপ করে আছে। যেচে যেচে অপমান হওয়ার কোনো দরকার নেই।
তোমাকেও একদম রাজপূত্রের মতো লাগছে হিরো একদম গুলুমুলু কিউট পিউট মিউট লাগছে
হৃদান মুচকি হেসে হৃদিতার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। হৃদিতা লাজ লজ্জা ভুলে হৃদানের গালে টুক করে একটা কিস করে বসল। হৃদান তো বিস্ময়ে গালে হাত দিয়ে হা করে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে আছে। The great Ridan chowdhury এর এমন বিস্ময় দশা দেখে ওর বন্ধুরা খুব মজা পাচ্ছে। জীবনে প্রথম ওরা হৃদান কে বেহায়ার মতো একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখছে মেয়ের পাগলামিতে নিজেও পাগলামি করছে এসব দেখে খুব মজা পাচ্ছে। বাড়ির বড় রাও লজ্জা ভুলে ওদের ভালোবাসার মুহূর্ত উপভোগ করছে।
আচ্ছা হৃদরাজ তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাইনা
তোমার সন্দেহ আছে হৃদপরী। খুব ভালোবাসি তোমায়
সন্দেহ আছে তো কারণ তুমি আমাকে প্রপোজ ও করলে না তাহলে বুঝবো কেমনে তুমি আমাকে সত্যিই সত্যিই ভালোবাসো
প্রপোজ করলেই ভালোবাসা প্রমাণ হয় নাকি
তা না কিন্তু তুমি এখন আমাকে প্রপোজ করবে নাহলে আমি খুব রাগ করবো
বাচ্চাদের মতো করে বলল হৃদিতার। হৃদিতার বাচ্চামো দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো হৃদান তারপর হঠাৎ করেই হৃদান হৃদিতার সামনে হাটু গেরে বসে পড়ল। হৃদিতা শুধু চেয়েই আছে তার হৃদরাজের দিকে। ও আসলেই বুঝতে পারেনি হৃদান তাই করবে। মেয়েগুলোকে জব্দ করার জন্য ও চুপটি করে রইল। দুই হাতে লেহেঙ্গার দুই সাইড উঁচু করে ধরে আছে।
প্রপোজ কিভাবে করতে হয় আমি জানি না হৃদপরী। তুমি সামনে থাকলে আমার খুব ইচ্ছে করে মনের মধ্যে তোমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন গুলো সাজিয়েছি সব বলতে কিন্তু তোমাকে দেখলেই না সব আওল ঝাওল হয়ে যায়। সাজাতে পারি না কথাগুলো শুধু তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে। The great business men ridan chowdhury শুধু তার হৃদপরীর সামনে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। আমি তোমার এই মায়াবী বাচ্চা বাচ্চা মুখের মায়ায় অনেক আগেই পড়ে গেছি। তোমার ওই হাসিতে ডুবে যাই আমি। তোমার ওই মিষ্টি কন্ঠে যখন হৃদরাজ বলে ডাকো তখন শুধু মনে হয় এই নামটাই শুধু শুনি। তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি সেটা বলতে পারবো না। আমার ভালোবাসার গভীরতা মাপা যাবে না। তোমাকে শুধু ভালোবাসতেই ইচ্ছে করে। সারাক্ষন তোমাকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে যেন কেউ না নিয়ে যায়। অবশ্যই কেউ তা পারবেও না। হৃদরাজের থেকে তার হৃদপরীকে আলাদা করা এত সহজ না। আমি তুমি নামক অক্সিজেন এ অনেক আগে থেকেই বাঁচতে শিখেছি হৃদপরী। যার জন্য এখন তুমি নামক অক্সিজেন ছাড়া নিশ্বাস নেওয়াটাই মৃত্যর সমান। সারাজীবন থাকবে তো আমার #তুমি_নামক_অক্সিজেন হয়ে।
হৃদান এক দৃষ্টিতে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে হাত এগিয়ে দিল। হৃদিতাও সেইম। খুশিতে কান্না করে দিয়েছে।সবাই চেয়ে আছে। বাড়ির বড়দের মুখেও হাসি চোখ ছলছল করছে। তৃপ্তি ভরে দেখছে সবাই। মেয়েগুলো তো হাসফাস করছে ইশশ হৃদান চৌধুরী যে কাউকে এত ভালোবাসে জানা থাকলে ক্রাশ খেত না। আহির আর সামান্তাও চেয়ে আছে। এক মুহূর্তের জন্য ভালোলাগা সব ভ্যালুলেস হয়ে গেছে। ওদের ভালোবাসার কাছে ওদের ভালোলাগা কিছুই না। হৃদিতা নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে হৃদানের হাতের উপর রাখলো। হৃদান উঠে দাড়ালো। হৃদিতা ঝাপটে ধরল হৃদানকে। হৃদানের মুখে তৃপ্তির হাসি লেগেই আছে। ও আজ সফল ওর হৃদপরীও ওকে ভালোবাসে এখন শুধু ফরমালিটি করে নিজের কাছে আনা বাকি।
হ্যাঁ আমিও তুমি নামক অক্সিজেন এর সাথে বাঁচতে চাই। ভালোবাসি আমিও খুব ভালোবাসি
সবাই চারপাশ থেকে হাত তালি দিয়ে উঠল সেই হাত তালিতে ওদের ধ্যান ভাঙলো। হৃদান তো এতক্ষনে টের পেল যে সবাই আছে এখানে। হৃদিতাও একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলো। যখন সামনে তাকালো তখন মেয়েগুলোকে দেখে ওর মনে হলো কিসের জন্য এমন করছে। তখন
সবাই দেখতে পাচ্ছো এই মানুষটা একান্তই আমার। তাই একদম কেউ নজর দিবে না। চোখ তুলে ফেলবো যে আমার হৃদরাজের দিকে নজর দিবে। শেওলা গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে ভুতের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো বলে রাখলাম। আমার হৃদরাজ থেকে দূরে থাকবে
হাত উুঁচিয়ে কথা গুলো বলল মেয়েগুলোকে উদ্দেশ্য করে। মেয়েগুলোও হৃদিতার পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। হৃদান এতক্ষনে বুঝতে পারল হঠাৎ করে হৃদিতার এমন করার কারণ।ঠোঁট কামড়ে হাসল। মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলো আজকের দিনটাকে আর মেয়েগুলোকে। ওদের জন্যই আজ হৃদিতা সবার সামনে এমন পাগলামি করেছে না হলে জানতেই পারতো না। হৃদিতার কান্ডে রোহানিরা এবার জোরে হো হো করে হেসে দিল। হঠাৎ রাইসার কি হলো মন খারাপ হয়ে গেল সামনে এগিয়ে গেল
আমাকে কেউ ভালোবাসে না। আল্লাহ গো এমন জীবন রেখে কি করবো কেউ ভালোবাসে না
রাইসার কথা শুনে পরশ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রাইসা যে ড্রামা করছে ঠিক বুঝতে পারছে। হঠাৎ একটি ছেলে এসে বলল
আমি ভালোবাসবো তোমাকে রাজি আছো তুমি
শুনেই পরশের রাগ উঠে গেল তাড়িতাড়ি ছেলের সামনে গিয়ে রাইসার হাত ধরল। ছেলেটির ভ্রু কুচকে ফেলল বুঝে গেছে এও বুকিং
ইটস মাই মাইন ব্রো দূরে থাকো। আমার ফিয়ন্স আমার ভালোবাসা। আমার বউ আমার অক্সিজেন
পরশের কথা শুনে সবাই মুখটিপে হাসছে। হৃদিতারা তো খুব মজা পাচ্ছে। এখন যে রাইসা কি করবে তা ধরতে পেরেই ওরা আরেকদফা হেসে নিলো। পরশের কথা শুনে রাইসা ডুলে পরশের উপর পড়ে গেল। তা দেখে পরশ বিচলিত হয়ে গেল বড়রাও সামনে এগোতে যাবে রোহানি ওরা থামিয়ে আশ্বস্থ করল যে কিছুই হয়নি দেখতে থাকো। পরশ রাইসার গালে হাত দিয়ে ডাকছে। হার্টবিট খুব দ্রুত চলছে মনের মধ্যে ভয় ডুকে গেছে। এখনি কেঁদে দিবে অবস্থা তাই আর টেনসন না বাড়িয়ে রাইসা ফট করে চোখ খুলল। হঠাৎ ই জোরে চিল্লিয়ে উঠল
ইয়েয়েয়েয়েয়েয়েয়ে শাশুড়ি মমের পোলা আমাকে প্রপোজ করেছে আমাকে ভালোবাসে বলছে। হায় আল্লাহ এত সুখ সুখ লাগে কেন, আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে
বলেই লাফাতে শুরু করল। ওর কান্ড দেখে সবাই হেসে কুটিকুটি অবস্থা হৃদিতা হৃদান কে ধরে হেসেই যাচ্ছে। পরশ রাইসার কান্ড দেখে মাথা চুলকে হালকা হাসলো। পাইছে একখান বউ পুরাই ড্রামা কুইন। এইভাবেই হেসে খেলে নাচে গানে মেহেন্দির অনুষ্ঠানটি শেষ হলো। বরের বাড়ি সবাই খুব আনন্দ পেয়েছে এখানে এসে। প্রশংসা করতে করতে হাপিয়ে গেছে। সবাই আর দেরী না করে ডিনার করে ঘুমিয়ে গেল কালকে কত কাজ আছে। কালকেই তো মেইন কাজ বিয়ে।
চলবে….?
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১০
Tahrim Muntahana
যথারীতি সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে। রিয়া অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটু বাগানে গিয়েছে হাটাহাটি করার জন্য। বাগানের একসাইড দাড়িয়ে সকালের মিষ্টি বাতাস টি উপভোগ করছিল তখন ই মনে হলো ওর পাশে কেউ এসে দাড়ালো। নাকে খুব সুন্দর একটা পারফিউমের গন্ধ এলো সাথে সাথে মনে পড়ে গেল এই পারফিউম টা তো সেই অজানা মানুষটার যে তার অক্সিজেন হতে চেয়েছে।
আপনি আপনি সে সে সেই….
জি আপনি ঠিক ধরেছেন আমিই সেই ব্যাক্তি। কিন্তু তোমার উপর আমার খুব অভিযোগ রয়েছে। কালকের মেহেন্দিতে আসলে না কেন। তোমাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিলো। কিন্তু তুমি তো তুমিই তোমার কাছে কিছু কুটনি মহিলার কথা প্রায়োরিটি বেশী কাছের মানুষের আনন্দ না।
আপনি ভুল ভাবছেন। কালকে আমার মাথা ব্যাথা করল তাই নিচে যায়নি
একদম মিথ্যে বলবে না। আমি তোমাকে হয়ত কয়েকদিন থেকে চিনি কিন্তু যতটুকু চিনেছে ততটুকুই একদম সিয়র ভাবে বলছি আমার কথাটাই ঠিক।
না মানে
আমি স্ট্যাট কার্ট কথা বলতে বেশী পছন্দ করি আর মনের কথা মনের মধ্যে চাপিয়ে রাখতে পারিনা। কোনো দিন কোনো মেয়েকে ভালো লাগেনি। বলা ভালো এসব নিয়ে কখনো ভাবিনি কিন্তু তোমাকে যেদিন প্রথম দেখলাম এয়ারপোর্ট সেদিনই মনের মধ্যে কিছু অনুভব করতে পেরেছিলাম সেদিন পাত্তা না দিলেও তোমাকে এর পর থেকে লক্ষ্য করতাম। তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগত মনে হয় সারাজীবন এইভাবেই দেখে যাই। তবুও মানতে পারিনি কিন্তু সেদিন যখন হিয়া তোমাকে অপমান করছিলো তোমার কান্নারত মুখটা দেখে মনের মধ্যে তীব্র ব্যাথা অনুভব করেছিলাম। প্রচন্ড রাগ হয়েছিলো সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়েছিলো তারপরেই বুঝেছিলাম আই ফল ইন লাভ। হ্যাঁ তোমার ওই মুখের মায়ায় পড়ে গেছি আমি। সে মায়া থেকে চাই না উঠতে। সারাজীবন সেই মায়ায় পড়ে তোমাকে ভালোবাসতে চাই। তোমার ‘তুমি নামক অক্সিজেন’ হতে চাই। দিবে সেই সুযোগ কথা দিচ্ছি কোনো দিন এই হাত ছাড়বো না
রিয়া থমকে গেছে কথা গুলো শুনে কেউ যে এই কয়েকদিনে ওকে এতটা ভালোবাসতে পারে ও ভাবতেই পারেনি। কথা গুলো যে মন থেকে হৃদয়ের সুপ্ত অনুভূতি থেকে বলছে সেটি রিয়া বুঝতেই পারছে। না চাইতেও রিয়ার মুখে হাসি ফুটল পরক্ষনেই ওর অসুস্থতা, চোখে দেখতে পারে না এসব মনে হতেই মুখটা কালো আঁধারে ঢেকে গেল। মুখটা শক্ত করল।
এটি কোনো দিন ও সম্ভব না মি। আমি এরকম কোনো কিছুই চাইনা। তাই আমার থেকে দূরে থাকবেন
চলে যেতে ধরলেই ছেলেটা রিয়ার হাত ধরে হ্যাচকা টানে বুকে ফেলে দেই। রিয়া হতভাগ হয়ে গেছে। রিয়াও যে ছেলেটার কথার মায়ায় পড়ে গেছে।
কেন সম্ভব না বলো। আমি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম, ইস্টাব্লিস। নিজের বড় বিজনেস আছে। জিবনে কতগুলো মেয়ের অফার পেয়েছি জানো তাহলে আমাকে রিজেক্ট কেন করছ
আপনি সেই মেয়েগুলোর মধ্যেই একজন কে বেছে নিন তাই হবে। আমি আপনার যোগ্য না কারণ আমি চোখে দেখতে পায় না। এটা আপনার খনিকের ভালোলাগা। সমাজে আমাকে কিভাবে পরিচয় করিয়ে দিবেন বলুন। যখন আপনার বন্ধুরা প্রতিবেশীরা বলবে আপনার ওয়াইফ একজন অন্ধ তখন আস্তে আস্তে আপনারাও তিক্ততা জমে যাবে। মানুষের সামনে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে লজ্জা করবে।তখন আমার কষ্টটা একটু বেশিই হবে এখনকার থেকে। তাই বলছি দূরে থাকুন
তুমি আমার ভালোবাসা কে এভাবে অপমান করতে পারো না রিয়ুপাখি। আমার ভালোবাসার উপর তোমার সন্দেহ থাকতে পারে কিন্তু আমার যথেষ্ট ভরসা আছে। মানুষের কথায় আমার কোনো যায় আসে না। আর না কেউ আমার রিয়ুপাখিকে কোনো কথা শুনাতে পারবে। তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও আমার
আচ্ছা এসব না হয় বাদ দিলাম আপনার পরিবার বাবা মা তারা কেন একজন অন্ধকে ছেলের বউ করবে
সাট আপ রিয়া। আবার অন্ধ বলছ কেন। আমার পরিবার যথেষ্ঠ ভালো আর আমার বাবা মার কথা না হয় নাই বললাম। এখন যদি শুনে এখনি তোমাকে ছেলের বউ করে নিয়ে যাবে। আচ্ছা তুমি এমন করছো তো তুমি দেখো আমি কি করি। কয়েকদিন পর থেকে শুধু তোমার উপর আমার অধিকার বেশি থাকবে। জাস্ট এন্ড ওয়াচ
বলেই ছেলেটি ধপাধপ পা ফেলে চলে গেল রিয়া হতভম্ব হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তারপর কিছু একটা ভেবে তাচ্ছিল্য হেসে সেও পা বাড়ালো ঘরের দিকে। অন্যদিকে হৃদিতা দেরী করে ঘুমানোর জন্য এখনো ঘুমোচ্ছে। হৃদান আগেই উঠে তার হৃদপরীকে দেখতে চলে এসেছে। আস্থে আস্তে ডেকে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলো। সবাই উঠে গেছে। সবাই খুব মজা করছে কিন্তু রিয়া মনমরা হয়েই বসে আছে। কিছু ভালো লাগছে না ওর তাও মুখে জোর পূর্বক হাসি ফুটিয়ে সবার সাথে আলোর রুমে বসে আছে। ওরা সবাই আলো কে এটা ওটা বলে লজ্জা দিচ্ছিলো তখন বাইরে সরগোল শুনে সবাই ড্রয়িং রুমে গেল। ড্রয়িং রুমে পা রেখেই সামনে তাকাতেই হৃদিতা রোহানি রাহি রাইসার মুখ একদম পাল্টে গেল। যে কেউ দেখলেই ভয় পেয়ে যাবে। বিশেষ করে হৃদিতা নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। মনে হচ্ছে এখনি গিয়ে খুন করে ফেলি। হঠাৎ ওদের রাগি মুখ দেখে হৃদান ভরকে গেছে। তেমন কিছুই তো হয়নি তাহলে এমন রেগে আছে কেন ভাবতেই তীক্ষ্ম চোখে পরখ করে দেখল ওরা সবাই একজনের দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে। হৃদান বুঝতে পারল যে কিছু তো একটা আছে। ড্রয়িং রুমে একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটি হিয়ার বোন সিয়া। একবছর আগে এব্রুড গিয়েছিলো একটা কারণে কাউকে না বলে। আজকে এসেছে। সিয়া হিয়া এতক্ষনে হৃদিতাদের লক্ষ্য করল। ওদের রাগী ফেস দেখে ওরা কিছুটা ভরকে গেলেও নিজেদের সামলে নিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে তুলল। তা বুঝতে পেরে হৃদিতার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। হৃদিতার দেখাদেখি ওরাও বাঁকা হেসে হিয়া আর সিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। তার আগে হৃদিতা আনহা কে দিয়ে রিয়াকে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওদের কাছে আসতে দেখে হিয়া আর সিয়ার জান যায় যায় অবস্থা। হৃদিতাদের এগিয়ে যেতে দেখে বড়রাও চুপ হয়ে গেল।
আরে আরে ন্যাশনাল বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন দেখছি এই বাড়িতে -হৃদিতা
আপনার পদধূলি পড়ে তো এই বাড়ি ধন্য হয়ে গেল -রাইসা
তা এই বাড়িতে কি -রোহানি
আমার ছোট মেয়ে সিয়া। তোমরা ওর সাথে এভাবে কথা বলছ কেন -নিশি
তা একবছর কই ছিলেন চ্যাম্পিয়ন মেম। আরে আরে আমাদের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন মেম এসেছে তোরা এখন প্রেস কল করিস নি। সাহিল তাড়াতাড়ি কল দে -রাহি
রাহির কথা শুনে হিয়া সিয়া ভয় পেয়ে গেল। যেটার ভয় পাচ্ছিল সেটাই হলো। বাড়ির আর সবাই কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে।
এ এ এখন প্রেসসস ডাকলে কেকেকেমন হবে বিয়ে তো আজকে -সিয়া
বিয়ে তো রাতে চ্যাম্পিয়ন মেম এখন যথেষ্ট সময় আছে -আধির
তোরা কি শুরু করেছিস মেয়েটা মাত্র আসলো -হৃদান
হৃদরাজ এইভাবে মেয়েটা বলো না বলো বাস্কেটবল ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন মেম -হৃদিতা
হৃদিপাখি থাক না এসব -পরশ
নো নেভার আজকে আমিও ইন্টারভিউ দিবো একসাথে দুই চ্যাম্পিয়ন। কি বলো সিয়া -হৃদিতা
হৃদি এসে গেছে সো স্টার্ট -আধির
ইয়া মম পাপা মামুনি বাবাই তোমরা সবাই বসো এখানেই দেখো ইন্টারভিউ। রাহি যা রিয়ুকে নিয়ে আয় -হৃদিতা
মেম আমরা আপনার ইন্টারভিউ য়ের জন্য কত অপেক্ষা করেছি কোনো দিন রাজি হন নি আজকে হঠাৎ রাজি হলেন তাও এই সময়
আমি সবসময় আমার মর্জি মতোই চলি। আপনারা শুধু আমাকেই দেখছেন নাকি এখানে যে আরো একটা চ্যাম্পিয়ন সেলিব্রেটি আছে তাকে চোখে পড়ছে না
ইনি কে
হাহাহাহাহা -রোহানি
বাস্কেটবল ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নকে চিনেন না খুব মজা পেলাম -রাইসা
সিয়া খুব অপমানিত হলো। তখনি রাহি আর আনহা রিয়াকে নিয়ে নিচে নামল। মিডিয়ার লোকজন ওকে দেখেই চিনে ফেলল। একটি মেয়ে বলে উঠল
রিয়া মেম আপনি কবে আসলেন দেশে। এখন কেমন আছেন আপনি
ইনি তো সুপার খেলোয়াড। চ্যাম্পিয়ন যেই হোক না কেন বাস্কেটবলের খেলোয়াড বলতে আমরা রিয়া মেম কেই চিনি।
মেম আপনি তো আর খেলতে পারবেন না খুব খারাপ লাগলো আমাদের
রিয়ার একদিক থেকে অনেকটাই ভালো লাগছে যে ওকে সবাই মনে রেখেছে কিন্তু আর খেলতে পারবে না ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। তা দেখে হৃদিতার রাগ হলো। গম্ভির কণ্ঠে বলে উঠল
উনি যে আর খেলতে পারবে না সেটা শুধু আপনি না সবাই জানে তাই নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন মনে করছি না আমি। আর আপনি উনার ইন্টারভিউ না নতুন চ্যাম্পিয়ন সিয়া খানের ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন। সো এই কাজটাই করুন হাররি আপ
মেয়েটার মুখ ছোট হয়ে গেল কাচুমাচু করে বসে রইল।
একমিনিট আমি প্রশ্ন করি আপনারা নোট করে রাখুন দেখি চ্যাম্পিয়ন মেম আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে কিনা
হৃদিতার কথা শুনে সিয়া হিয়া আর নিশি খুব ভয় পেয়ে গেছে কেউ কিছু বলতেও পারছে না বাড়ির সবাই আছে।
আচ্ছা চ্যাম্পিয়ন মেম এতদিন কোথায় ছিলেন
ল ল লন্ডনে
বারে খেলার মাঠ কাঁপিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন এখন হৃদিতা চৌধুরীর প্রশ্ন শুনেই হাটু কেঁপে উঠল?
তুমি কি বলতে চাইছ তুমি একটু বেশীই বাড়াবাড়ি করছ
আওয়াজ নিচে। হৃদিতা চৌধুরীর সামনে কেউ উচু গলায় কথা বলে না। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরপরই দেখছি লন্ডনে চলে গেলেন। কেন কি এমন হলো যার জন্য খেলার পরপরই ছুট লাগালেন।
এমনি দরকার ছিলো গিয়েছি এতে কারো কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে
আপনার কি মনে হয় রিয়া চৌধুরী থাকলে আপনি আদও চ্যাম্পিয়ন হতে পারতেন
চ্যাম্পিয়ন অলওয়েস চ্যাম্পিয়ন ই হয়
হাহাহাহা। হোয়াট এ জোকস -রাহি
আচ্ছা শুনুন আপনারা ইতিমধ্যেই শুনেছেন নিশ্চয়ই যে আমি এইবার দৌড়ের পাশাপাশি বাস্কেটবল ও খেলবো। এন্ড আই সয়ার চ্যাম্পিয়ন সব সময়ই চ্যাম্পিয়ন ই হয় না? ইয়েস চ্যাম্পিয়ন এইবার রিয়া চৌধুরীই হবে
মানে রিয়া মেম আবার খেলবেন
আপনারা কবে থেকে রিয়া চৌধুরী আর হৃদিতা চৌধুরীকে আলাদা ভাবতে শিখলেন
দেখা যাবে কে চ্যাম্পিয়ন হয়। শুনো সবাইকে দিয়ে সব হয় তাই বলছি আমার সাথে লাগতে এসো না হেরে যাবে -সিয়া
পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তোরে। আর সবাই অগ্রিম একটা খবর দিয়ে রাখছি বাস্কেটবল খেলার দিনই একটা ধামাক্কা হবে। আর আমার ধামাক্কা মানে বুঝতেই পারছেন সো এখন আসতে পারেন। সিয়া খান ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। হৃদরাজ কাম উইথ মি
হৃদিতা চলে গেল ওইখান থেকে যাওয়ার পরই হৃদানও চলল ওর পিছে পিছে। হিয়া আর নিশি সিয়াকে নিয়ে উপরে চলে গেছে। বাড়ির সবাই চুপ করে আছে। কিছু তো একটা আছে বুঝতে পারছে না, না হলে সামান্য কারণে হৃদিতা রাহি রাইসা রোহানী আধির সাহিল এতটা ডেস্পারেট হয় না। ওদের এইভাবে দেখে পরশ আর নাশিন সবাই কে উপরে পাঠিয়ে দিলো। আর বাকিরা কাজে লেগে গেলো।
হৃদরাজ আমাকে সাহায্য করবেন
হৃদপরী এভাবে বলছ কেন তুমি বলো আমাকে কি করতে হবে পৃথিবীর যে কোনো কিছুই হোক না কেন করব আমি তবুও তুমি ফ্যাকাশে করে রেখনা মুখটা
আমি চাই রিয়ু আবার দেখুক
হ্যাঁ দেখবে তো আমরা ওর চোখের অপরেশন করবো
না শুধু চোখের না আমি চাই রিয়ু আবার বাস্কেটফল খেলোক। ওইবার তো সম্ভব না এর পরের বার থেকে খেলবে
চোখে দেখতে পেলেই তো খেলতে পারবে আর তো কোনো সমস্যা দেখছি না
শুধু চোখে দেখতে পেলেই হবে না ওর হার্ট প্রতিস্থাপন না করা পযর্ন্ত ও ভারী কিছুই করতে পারবে না
কিহহহ কি বলছ এসব
হ্যাঁ মম পাপা ছোট আব্বু ছোট আম্মু ওরা কেউ এই বিষয়ে জানে শুধু আমরা কয়েকজন জানি।
হার্ট প্রতিস্থাপন অনেক জটিল বিষয় আগে তো মেচিং হার্ট লাগবে। কিন্তু হার্ট পাওয়া তো খুব কঠিন
হৃদরাজ প্লিজ তুমি একটা ব্যবস্থা করো। আমি আমার রিয়ুকে আবার আগের মতো হাসিখুশি দেখতে চাই
আচ্ছা আমি আজ থেকেই খোঁজা শুরু করছি চলো রেডি হতে হবে এখন সবাই এসে পড়বে। আর মন খারাপ করে থেকোনো হৃদপরী। আমার খুব কষ্ট হয়।
হৃদানের কথা শুনে হৃদিতা না চাইতেও মলিন হাসল। পুরে পার্লারের মেয়েরা এসে গেছে। আলোকে রিদিমা চৌধুরী খাইয়ে দিয়ে রেডি হতে বলে চলে গেছে। সবাই এখন রেডি হতে ব্যস্ত। আজকে আলোকে লাল শাড়ি পড়ানো হয়েছে তাই ওরাও সবাই লাল লেহেঙ্গা পড়েছে। যার যার জুটির সাথে ম্যাচিং করে তারাও পাঞ্জাবী পড়েছে। রিদিমা চৌধুরী আহনাফ চৌধুরী আলোর কাছে এসে অনেক ক্ষন কান্না করে গেছে বড় মেয়ে বলে কথা। অনেক হাসি মজার মধ্যে দিয়ে বিয়ে হয়ে গেল। এখন মেয়ে বিদায়ের পালা। সবার মুখে নেমে এসেছে অন্ধকার। আনহা হৃদিতা তো সেই বিয়ে হওয়া থেকে শুরু করে কান্না করছে। আলো ও ওদের কে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছে আলো তো গাড়িতে উঠবেই না। শেষমেষ নিয়ন সবার মধ্যেই কোলে তোলে গাড়িতে বসিয়ে দেই। কান্নার মাঝেও সবাই হেসে ফেলে। হৃদিতার মন খারাপ বলে হৃদান ওকে নিয়ে লং ড্রাইভে গেছে। আর নাশিন আনহা কে নিয়ে ছাদে চলে গেল। মেয়েটা এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।
আনুপরী প্লিজ এখন আবাদত কান্না বন্ধ করো। অনেক তো কাঁদলে
আনহা কোনো কথায় বলছে না। নাশিনের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলা করলো।
তুমি যেভাবে কান্না করছ আলোর বিয়ের জন্য। তোমার বিয়ে হলে তো এর চেয়ে বেশী কান্না করে আমার বাসর রাতটা মাটি করে দিবে। নো ওয়ে আনুপরী আমার বাসর নিয়ে কত ইচ্ছে। ইশশ বউকে আদর করবো। কত দিনের ভালোবাসা সব পুষিয়ে নিবো। এখন তো দেখছি বউয়ের কান্নার জন্য বাসর ই করতে পারবো না
আকস্মিক এমন কথায় আনহা কান্না ভুলে নাশিনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে লোকটা এমন কথাও বলতে পারে। আমি তো জানতাম লোকটা শুধু আমার উপর রাগারাগি করতে পারে। আনহার তাকিয়ে থাকা দেখে নাশিন দুষ্টু হেসে ঠোট চোখা করে চুমু দেখালেই আনহা লজ্জা পেয়ে দৌড়ে নিচে চলে যায়। গিয়ে বিছিনায় চিতপটাত হয়ে শুয়ে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। ইশশ বুকের ভিতর কেমন ডুল বাজছে। আনহার এভাবে চলে যাওয়া দেখে নাশিন হো হো করে হেসে দেয়। যাক তাও পিচ্চিটার কান্না থামাতে পেরেছে। নাশিন জানে এখন তার হৃদয়ের রানী এখন শুয়ে শুয়ে ব্লাশিং হবে। নিজেও নিচে চলে যায় খুব দখল গিয়েছে ঘুমানো দরকার। হৃদান হৃদিতাও অনেক রাত করে ফিরে ঘুমিয়ে গেছে।
চলবে….?