তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ৭

0
1672

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-৭

নিচে নেমে সবাইকেই ড্রয়িং রুমে দেখলাম।মা,বাবা, তাহসান ভাইয়া, রিমা ভাবী, নিহা আর আকাশ ভাইয়াও আছে।আকাশ ভাই কে দেখে আমার ভ্রুখানি কুচকে এলো।উনি এখানে কি করছেন তাও আবার টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে? উনাকে সবসময় ফরমাল লুকে ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে দেখেছি।সবাই কে দেখলাম কিন্তু ডাক্তার সাহেব কে তো দেখতে পেলাম না।হয়তো বাইরে গেছেন।

সবাই একসঙ্গে বসে লুডু খেলছে।দেখে যা মনে হলো মা বাবা এক টিম আর তাহসান ভাই রিমা ভাবী এক টিম। নিহা মা বাবাকে ইন্সপায়ার করছে আর আকাশ ভাইয়া ভাইয়া ভাবী কে করছে। হঠাৎ নিহার চোখ পড়ল আমার দিকে।আমায় দেখে লাফিয়ে উঠে বললো,
নিহা: নতুন ভাবী তুমি এসেছ? আসো তুমিও খেলা দেখবে।এরপর আমরা খেলবো।
আফরীন: না থাক তোমরা দেখো….

নিহা আমার না শুনে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে বললো,
নিহা: আসো না ভাবী প্লিজ।একবার একবার প্লিজ….
অগত্যা আমি রাজি হয়ে গেলাম।আমি গিয়ে মায়ের কাছে বসলাম।আমায় দেখে তাহসান ভাইয়া বললেন,
তাহসান:এটা তো ঠিক না আফরীন।তুমি মা বাবার কাছে গিয়ে বসেছো।মা বাবার দল ভারী হয়ে গেছে।এখন আমাদের দলে তো একজন কম।তুমি এমনটা করতে কি করে পারলে?
আফরীন: সমস্যা কি আপনার দলে আরেকজন কে ডেকে নিন।
তাহসান: কিন্তু আরেকজন তো বলতে বলতেই তাহসান ভাইয়ের চোখ গেলো সদ্য সদর দরজা দিয়ে ঢোকা ডাক্তার সাহেবের দিকে।তাহসান ভাইয়ার মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠল।

আমার মুখোমুখি মুখ গোমড়া করে বসে আছেন ডাক্তার সাহেব।উনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমার দিকে।হয়তো আমার উপর রেগে আছেন আর রেগে থাকবেন নাইবা কেন?আমার কথার সূত্র ধরেই তো তাহসান ভাই উনাকে বাধ্য করলেন ভাইয়ার দলে যোগ দিতে।উনার ঘাড় ধরে বলেছেন উনার দলে ঢুকতে নাহলে উনার যত সিক্রেট আছে সব বলে দিবেন।আর তাহসান ভাইয়ের কথা শুনে উপায় না পেয়ে ডাক্তার সাহেব রাজি হয়ে যান।উনি এটা খুব ভালো করেই বুঝেছেন আমার কথায় তাহসান ভাই উনাকে দলে নিয়েছেন কারণ উনি দরজা দিয়ে ঢোকার সময় শুনেছেন।

খেলায় টানটান উত্তেজনা।এই মনে হচ্ছে মা বাবা জিতবে তো এই মনে হচ্ছে ভাইয়া ভাবী জিতবে।কিছুই বোঝা যাচ্ছে না কে জিততে চলেছে।তবে এতকিছুর মাঝ দিয়ে আমার ডাক্তার সাহেবের মধ্যে চোখ দিয়ে ইসারার খেলা চলছে।একবার আমি চোখ দিয়ে ইসারা করছি যে মা বাবা জিতবে আরেকবার উনি ইসারা করছেন যে ভাইয়া ভাবী জিতবে কারণ এই খেলাটা আমরা পার্সোনালি নিয়েছি।ভাইয়া ভাবী জিতলে উনি জিতে যাবেন আর মা বাবা জিতলে আমি জিতে যাবো।উনি রীতিমত ইসারায় আমাকে কোণঠাসা করার ইঙ্গিত করছেন।তবে আমিও কম না।আমি উনাকে এমন একটা ইসারা করলাম যে উনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আর তাহসান ভাইয়া পাশ থেকে কাশতে লাগলো।

ডাক্তার সাহেব আমার দিকে গরম চোখে তাকালেন কিন্তু আমি সেটা পাত্তা দিলাম না কারন উনার রাগারাগি আমি কোনোকালেই তেমন ভয় পেতাম না।আসলে তাহসান ভাইয়ের কাশাকাশি আর ডাক্তার সাহেবের অগ্নির দৃষ্টির কারণ হলাম আমি।আমি ডাক্তার সাহেব কে ইশারায় ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিয়েছি।আমি শুধু চেয়েছিলাম ডাক্তার সাহেব কে ভরকে দিতে কিন্তু সেটা যে তাহসান ভাই দেখে ফেলবে সেটা জানা ছিলনা।

অবশেষে ভাইয়া ভাবিই জিতে গেলো।এবার শর্ত অনুযায়ী যেহেতু ভাইয়া ভাবী জিতেছে তাই ভাইয়া ভাবীর টিমের একজন কে খেলতে হবে আর সেই আগে দান চালবে।ঠিক হলো আমি আর ডাক্তার সাহেব খেলবো।এবার শুরু হবে আমাদের সম্মুখ যুদ্ধ।আমি তো ডাক্তার সাহেব কে হারিয়েই ছাড়বো।এই খেলার মধ্যে দিয়ে উনার উপর আমার প্রতিশোধ তুলবো😏

গুটি নির্বাচন হলো।আমি মেরুন আর ডাক্তার সাহেব ব্ল্যাক।মা বললেন এবার,
মা: হুম খেলায় যেই জিতুক না কেন আমি যেদিন যেটা চাইবো সেটা দুজনকেই দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমি কোনো দ্বিমত শুনবো না।
মায়ের কথা আমরা দুজনেই মেনে নিলাম।

শুরু হলো খেলা।প্রথম দান ডাক্তার সাহেব চাললেন।প্রথম দানেই সিক্স।তাহসান ভাইয়া তো আনন্দে লাফিয়ে উঠলো।ডাক্তার সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলেন।এই দিকে উনি প্রথম বারেই সিক্সার মেরে দিয়েছেন দেখে আমি রাগে ফুষছি।উনি আরেক দান মেরে পাঁচ ঘড় এগিয়ে গেলেন।এভাবেই খেলা চলতে লাগলো।উনি মেরেই যাচ্ছেন কিন্তু আমার সিক্স উঠছে না। আগাতে আগাতে উনি আমার পরে চলে গেছেন।আমার পরের ঘরেই উনার গুটি।উনার গুটি পেকে গেছে।এবার আবার দান চাললাম আর এবার সৌভাগ্য বশত আমার সিক্স উঠেছে।সাথে সাথে আমি লাফিয়ে উঠে নাচতে নাচতে লাগলাম।সবাই গোগ্রাসে আমার নাচ গিলছে।এমন নাচ হয়তো ওরা জীবনে দেখেনি।

‘ এত না নেচে চুপচাপ বস।সবে একটা সিক্স উঠেছে, এখনো ঘর আগাওনি।আমার একটা গুটি অলরেডি পেকে গেছে। ‘ বললেন ডাক্তার সাহেব।

ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে আমি কটমট দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে।তারপর ধপ করে বসে পড়লাম আর আরেকটা দান চাললাম।আর এবার লাকিলি আমার এক আসলো।আমি ডাক্তার সাহেবের দিকে বাঁকা হেসে তাকালাম আর উনি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন। ক্রমশ উনার চেহারার ভাবভঙ্গি বদলে গেলো।উনি ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকালেন।আমি মনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে আমার গুটি উঠিয়ে নিলাম আর ডাক্তার সাহেবের গুটির দিকে এগিয়ে গেলাম সেটা কাটতে।

এহেন মুহূর্তে ডাক্তার সাহেব বোর্ড উল্টে দিলাম। আমি আর নিহা এই বলে চিৎকার করে উঠলাম।আমাদের দুজনের অতর্কিত চিৎকারে ডাক্তার সাহেব ঘাবড়ে গেলেন।আকাশ ভাইয়া লাফিয়ে দূরে সরে গেছেন।মা বাবা আর ভাইয়া ভাবী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি ডাক্তার সাহেবের দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম,
আফরীন: এই আপনি হেরে যাওয়ার ভয়ে বোর্ড উল্টে দিলেন কেন?

আমায় তেরে আসতে দেখতে ডাক্তার সাহেব খানিক পিছিয়ে গেলেন আর আমতা আমতা করে বললেন,
তাহরীম: হেরে যাওয়ার ভয়ে উল্টে দেইনি বরং তোমাকে হেরে যাওয়া থেকে বাঁচাতেই উল্টে দিয়েছি।
উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম,
আফরীন: হোয়াট?
তাহরীম: হ্যাঁ এখন তুমি আর গুটি কাটলেও খেলা শেষে তো আমিই জিততাম তাই বোর্ড উল্টে দিয়েছি। পরে হেরে গেলে কান্নাকাটি করবে আর তোমার কান্নাকাটি দেখে তো বাড়ীর লোক আমাকেই ধরবে।
আমি উনার কথা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললাম,
আফরিন: তাই? আপনি আমার কথা এত চিন্তা করেন ডাক্তার সাহেব আমি তো জানতামই না।আমি কান্নাকাটি করবো না হেরে গেলে।আমার এখনো মনে আছে কোন গুটি কোথায় ছিল।চলুন এবার খেলি।

এবার ডাক্তার সাহেব বুকে হাত রেখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আরও দু পা পিছিয়ে গেলেন আর বললেন,
তাহরীম: ভুলেও না।আমি খেলবো না লুডু তোমার সাথে।
মা: কি হলো এখন না করছিস কেন? আফরীন তো বলেই দিলো ও কান্নাকাটি করবে না।
তাহরীম: বললাম তো খেলবো না লুডু।মা তুমি আমার মা হয়ে আফরীন এঁর হয়ে কথা বলছো কেন?
মা: আমি তোদের দুজনেরই মা।না খেললে তোকে অ্যাকসেপ্ট করতে হবে যে তুই হেরে গেছিস।
তাহরীম: কখনও না। তাহরীম মেহমাদ হারতে পারে না।
মা: তাহলে লুডু খেল আফরিন এর সঙ্গে।
তাহরীম: মা প্লিজ আমি খেলবো না।
মা: তাহলে তুই রাজি তো অ্যাকসেপ্ট করতে যে তুই হেরে গেছিস?
তাহরীম:….
মা: কি হলো কথা বল।
তাহরীম: আমি রাজি….
মা: তাহলে বল…..
তাহরীম: তুমি আমার মা না আফরীন এঁর মা তাই নিজের ছেলের সঙ্গে এরকম অন্যায় করছো।
মা: এত নাটক না করে আসল কথা বল নাহলে ছোটবেলার মত ঝাড়ুর বারি দিবো।তখন ভালো লাগবে এত বড় হয়েও বউয়ের সামনে মার খেতে?

মায়ের কথা শুনে ডাক্তার সাহেব মায়ের দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকালেন আর আমি এবং নীহা হাসতে হাসতে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছি।মনে হচ্ছে হাসতে হাসতে মরেই যাবো।

আমাদের হাসতে দেখে ডাক্তার সাহেব কড়া চোখে তাকালেন।আমরা দমে গেলাম।কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে ডাক্তার সাহেব বললেন,
তাহরীম: আমি হেরে গেছি… আফরিনের কাছে। আফরীন জিতে গেছে খেলায়।
সাথে সাথে আমি আর নিহা লাফিয়ে উঠে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম।আমাদের আনন্দে ভাবীও যোগ দিলেন।তাহসান ভাইয়া ডাক্তার সাহেবের কাধে হাত রেখে উদাস ভঙ্গিতে বললেন,
তাহসান: ভাই তুই তো আমাদের নামই ডুবিয়ে দিলি বউয়ের কাছে হেরে গিয়ে।
ডাক্তার সাহেব ধাক্কা দিয়ে ভাইয়ার হাত সরিয়ে দিলেন।এবার মা বললেন,
মা: হয়েছে অনেক হাসি মজা এবার খেতে চলো। রাত হয়েছে খেয়ে ঘুমোতে হবে।
মায়ের কথায় আমরা সবাই খেতে বসলাম।খেতে খেতে রিমা ভাবী বললেন,
রিমা: একমাত্র আমাদের আফরিন বলেই সম্ভব নাহলে তাহরীম কে এভাবে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানোর সাধ্য কারোর নাই।
ভাবীর কথায় আমি আর নিহা মিটিমিটি হাসলাম কিন্তু ডাক্তার সাহেবের সেদিকে মন নেই।উনি মোবাইলে কিছু একটা দেখতে ব্যস্ত।
‘ খাওয়ার সময় ফোন না দেখে একবারে খেয়ে দেখো তাহরীম।খাওয়ার সময় ফোন দেখা কোন ধরনের বাজে অভ্যাস? ‘

মায়ের কথায় ডাক্তার সাহেব কিছু বললেন না।ফোন রেখে খাওয়ায় মন দিলেন। খাওয়া শেষে মা বললেন আমায় ঘরে চলে যেতে, উনি ভাবী আর নিহা মিলে সবটা সামলে নিবেন।
আমি মায়ের কথা মত ঘরে চলে এলাম।ঘরে এসে দেখলাম ডাক্তার সাহেব বিছানার এক কোনায় বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছেন।উনার চোখে সেই সরু ফ্রেমের চশমা।

এতক্ষণ খেলার মধ্যে সবটা ভুলে থাকলেও আবার সবকিছু আমায় ঘিরে ধরলো।মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো।মন ভারাক্রান্ত হয়ে এলো।অলস ভঙ্গিতে জামা কাপড় বদলে নিলাম।জামা কাপড় বদলে লং শার্ট আর ডিভাইডার পড়লাম।গলায় ওড়না পরে ঘরে পায়চারি করতে লাগলাম।মনটা উসখুস করছে।ডাক্তার সাহেবের পাশে গিয়ে ঘুমোতেও মন চাচ্ছে আবার যেতেও ইচ্ছা করছে না।

‘ এত পায়চারি না করে শুয়ে পড়লেই তো পরো।শুধু শুধু পুরো ঘরময় পায়চারি করে নিজের নরম পিচ্ছি পা গুলোকে কষ্ট কেন দিচ্ছ ‘ আমায় পায়চারি করতে দেখে ল্যাপটপেই দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রেখে আমার দিকে কথাগুলো ছুড়ে দিলেন ডাক্তার সাহেব।

উনার কথায় আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালাম না।উনার এই কথাগুলোই আমায় উনার প্রতি বারবার দুর্বল করে দেয়।এই কথাগুলোর প্রেমেই বারবার পড়ি।ওই মায়াবী চোখেই ঘায়েল হই।উনার চোখের দিকে তাকালে পুরো দিনদুনিয়া সব ভুলে যাই তাই উনার চোখের দিকেও তাকাবো না আর কথাও শুনবো না উনার।

কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর ধপ করে শুয়ে পড়লাম বিছানায়।ডাক্তার সাহেব আমায় এভাবে শুতে দেখে এক পলক আমার দিকে তাকালেন অতঃপর নিজের কাজে মন দিলেন। আমি আমার বালিশে ঠিক হয়ে শুলাম কিন্তু শুয়ার পরও বারবার এপাশ ওপাশ করছি।বাধ্য হয়ে আবার ধপ করে উঠে বসলাম।ডাক্তার সাহেব আবার আরেক নজর আমার দিকে তাকালেন তারপর বললেন
‘ ঘুম না আসলে আমায় বলো। রাতটা নষ্ট না করে ইউটিলাইজ করতে পারি। ইউ নো আমি কি বলতে চাচ্ছি? ‘

উনার অসভ্য মার্কা কথা বুঝতে আমার এক মিনিটেরও কম সময় লাগলো।উনার দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম কিন্তু উনি আমায় বিশেষ পাত্তা দিলেন না।উনার দিকে এগিয়ে গেলাম।আমায় হঠাৎ এগিয়ে যেতে দেখে ভরকে গেলেন উনি।উনার দুই পায়ের নিচ থেকে কোলবালিশ কেড়ে নিয়ে সেটা আমার দুই পায়ের মাঝে দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।

আফরীন এর এহেন কাজে হতভম্ব হতে গেছে তাহরীম।আফরীন কে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে কি ভেবেছিল আর কি হলো। শেষে কিনা এই পিচ্ছি ওর থেকে ওর কোলবালিশ কেড়ে নিলো।ওর কোলবালিশ তো ফেরত নিতেই হবে এট এনি কস্ট।

হঠাৎ নিজের উপর প্রচন্ড ভার অনুভব করতেই ঝট করে চোখ খুলে ফেললাম।চোখ খুলে নিজেকে ডাক্তার সাহেবের বাহুডোরে আবদ্ধ পেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন।উনার এক হাত আমার পেটের উপর আর এক পা আমার পায়ের উপর।উনার মত এত বড় একজন মানুষের ভার কি আমার মত পিচ্ছি মেয়ে নিতে পারবে।

উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাতপা ছুড়াছুড়ি শুরু করলাম।
‘ বেশি নড়াচড়া করলে এই শীতের মধ্যে মাথায় তুলে আছার মারবো ব্যালকনি দিয়ে।অনেক সহ্য করেছি তোমার নখরা।বড্ড বেয়াদব হয়ে গেছো তুমি আফরিন। ‘

সাথে সাথে সাথে চুপসে গেলাম উনার কথা শুনে।ডাক্তার সাহেব আমায় বেয়াদব বললেন।নিজে যে পাগল সেটা স্বীকার করেনা। আস্ত একটা খারুস।অতঃপর বাধ্য হয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিদ্রার রাজ্যে পারি দিলাম।

দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের আরও চারদিন কেটে গেলো।আজ আমাদের বিয়ের সপ্তম দিন মানে বিয়ের এক সপ্তাহ। কি যেন বলে… হ্যাঁ সেভেন ডে ম্যারেজ এনিভার্সেরি।
কিন্তু আমাকেই দেখো, চারদিন ধরে বাড়িতেই পড়ে আছি।ডাক্তার সাহেব অনেক চেষ্টা করেও আমায় কলেজে নিতে পারলেন না। শেষে বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিলেন।আজ একদিন হলো উনি আমার সঙ্গে কথা বলেন না কিন্তু তাতে আমার কি?আমি তো আছি আমার খেয়ালাতে।

বিগত কয়েক দিনে শাশুড়ি মা আর আমার সম্পর্কও অনেকটা এগিয়েছে।মা এখন তুমি থেকে তুই তে নেমে এসেছেন।আমায় এখন আমার নিজের মায়ের মতই বকাঝকা আর শাসন করেন।মায়ের কথা শুনলেই আম্মুর কথা মনে পড়ে। আম্মুর কতই না সপ্ন ছিল আমায় লাল টুকটুকে রাজপুত্তুর এর সঙ্গে বিয়ে দিবে। হীরের মত শাশুড়ি মা পাবো আমি আর আম্মু দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবটা দেখবে।নিজ হাতে আমায় বিয়ে দিতে চেয়েছিল আম্মু কিন্তু সেই সাধটা অপূর্ণই রয়ে গেছে।

আম্মু আমায় ছেরে চলে গেছে ঠিকই কিন্তু এক অজানা কারণে আজও তাকে ঘৃণা করে উঠতে পারিনি। আজও বিশ্বাস হয় না যে আম্মু আমায় ছেড়ে,বাবা কে ছেড়ে পরপুরুষের কাছে চলে গেছে। ফিরোজা বেগমের কাছ থেকে সেই ছোটো থেকে শুনে এসেছি আম্মু আমাদের ছেড়ে অন্য লোকের কাছে চলে গেছে কিন্তু কোনোদিন বিশ্বাসই করতে পারলাম না।তার কারণও আমার জানা নেই।

কত চেষ্টা করেছি আম্মুকে খুঁজে বের করার কিন্তু পেলাম না। আম্মুটা আমার আদৌ বেচেঁ আছে তো। আজও কানে বাজে তার বলা সেই কথা গুলো ‘ মানুষ ভালবাসার কাঙাল আর তার মাঝেই আছে হাজার রং। যে যেটা চায় সে সেটা পাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। ‘

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে