তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে ২ পর্ব-০৮

0
1352

#তুমি_নামক_সপ্তর্ষি_মন্ডলের_প্রেমে💖
#দ্বিতীয়_খন্ড [ কার্টেসিসহও কপি করা নিষেধ ]
৮.( The Final Mystery-4 )

বাড়ি এসে ঘরে আসতেই আনসারীর মাথায় বাজ পড়লো। বাড়ির দরজা হাট করে খোলা আর বাড়ির ভিতরে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখানে ডাকাতি বা চুরি হয়েছে কিন্তু চুরি যদি হয়ে থাকে তাহলে ফিরোজা কোথায়? ওর আবার কিছু হলো নাতো?ফিরোজার কথা মাথায় আসতেই আনসারী নিজের চিন্তাধারার উপরই বেজায় অবাক হলো। ওই হাফ শিক্ষিত মেয়েটার কথা ও কবে থেকে ভাবতে শুরু করলো? সারাজীবন তো মেয়েটিকে এতই কষ্ট দিয়ে এসেছে যেন মেয়েটাও ওকে ঘৃণা করে আর ওর মনেও মেয়েটার প্রতি কোনো অনুভূতি না আসে কিন্তু এতকিছু করার পরও কি ও নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ? শেষে ওর আত্মশক্তির কাছে কি ওর অনুভূতি হেরে গেলো? এটা কি তাহলে এত বছর একসঙ্গে থাকার ফল?

নাহ অন্য কারোর প্রতি অনুভূতি জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আনসারীর মন শুধুমাত্র তুবাকেই ভালোবেসে এসেছে আর ভবিষ্যতেও তুবাকেই বাসবে।তবে এখন ফিরোজার কোনো বিপদ হলো কিনা সেটা তো দেখতে হবে কারণ যত যাই হোক ফিরোজা তো ওর স্ত্রী।আনসারী দৌড়ে গেলো ওদের ঘরের দিকে কিন্তু সেখানে গিয়ে ফিরোজা কে পেলো না।অবশেষে পুরো বাড়িতে চক্কর লাগালো কিন্তু পেলো না।চিন্তায় আনসারীর বিপি বেড়ে যাওয়ার অবকাশ।আনসারী ধপ করে বসে পড়লো সোফায়।হাতগুলো দিয়ে মুখটা আড়াল করে নিল।ভাবতে লাগলো তাহলে কি চোর চুরি করতে এসে ফিরোজা কে নিয়ে গেছে? কোনো ক্ষতি করবে নাতো ফিরোজার? না কিছু একটা হওয়ার আগে পুলিশ কমপ্লেইন করতে হবে। এখনই থানায় যেতে হবে।

থানায় যাওয়ার কথা ভাবতেই আনসারী উঠে দাড়ালো।বাড়ি লক করে বেরিয়ে পড়লো থানার উদ্দেশ্যে।রিক্সা ধরে উঠে বসলো আর রিক্সাওয়ালা কে বললো যেন থানায় নিয়ে যায়।রিক্সা চলতে শুরু করলেই আনসারীর কাছে ফোন এলো থানা অফিসারের কাছ থেকে।আনসারী ফোন তুলতেই ওই পাশ থেকে থানা অফিসার বললেন,
অফিসার: আপনাকে এখনই থানায় আসতে হবে মিস্টার আনসারি?
আনসারি: হ্যাঁ আমি থানার উদ্দেশ্যেই রওনা দিয়েছি।
থানা অফিসার আনসারীর কথা শুনে অবাক হয়ে বললেন,
অফিসার: মানে? আমি তো সবে আপনাকে ফোন দিয়েছি তাহলে আপনি কি করে জানলেন যে আপনার থানায় আসতে হবে?
আনসারি: সেটা নাহয় থানায় এসেই বলবো।আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি অফিসার,আমি কাছাকাছিই আছি…।
অফিসার: আচ্ছা তাহলে আসুন বলে অফিসার ফোন রেখে দিলেন।

আনসারি ফোন কান থেকে নামিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। ওর বড্ড চিন্তা হচ্ছে ফিরোজা কে নিয়ে।ফিরোজার কি কোনো বিপদ হয়েছে নাকি ফিরোজা ওর কোনো আত্মীয়ের বাড়ি গেছে? কিন্তু ওর তো কোথাও যাওয়ার কথা না কারণ আনসারী যতটুকু জানে ফিরোজা অনাথ মেয়ে ছিলো।তাহলে ফিরোজা কোথায় যেতে পারে?

আনসারীর চিন্তা ভাবনার মাঝেই রিক্সা এসে থানার বাইরে থামে।আনসারী রিক্সা থেকে নেমে রিকশাওয়ালা কে ভাড়া দিয়ে দৌড়ে থানায় ঢুকে।থানায় ঢুকেই থানা অফিসারের কাছে চলে যায়।থানা অফিসার কে কিছু বলবে তার আগেই থানা অফিসার বলেন,
অফিসার: আমাদের আপনার সাথে কথা আছে।
আনসারি: আমারও আপনার সঙ্গে কথা আছে অফিসার।আমাকে হেল্প করুন অফিসার।আমি সকালে কাজে গিয়েছিলাম আমার স্ত্রীকে বাড়ি রেখে কিন্তু বাড়ি এসে দেখি বাড়ির দরজা খোলা।আমার স্ত্রী বাড়ি নেই,সব গয়নাগাটি থেকে শুরু করে সব দামী জিনিষও মিসিং।অফিসার প্লিজ একটা FIR করুন। আই ওয়ান্ট মাই ওয়াইফ সেফ।

‘ আপনার ফুল ফ্যামিলিই কমপ্লিকেটেড।আপনার জামাই তার বউরে মেরে ফেলে এরপর আপনি বাবা হয়ে নিজের মেয়ের খুনিকে পুলিশে ধরিয়ে দেন।এরপর আবার আপনার মেয়ের হাসব্যান্ড মানে আপনার মেয়ের খুনি পালিয়ে যায়।এখন আবার আপনার উপস্থিতিতে আপনার স্ত্রীও পালিয়ে গেছে।আপনার পরিবারে কি সবাই আস্ত ক্রিমিনাল আর ভিকটিম। ‘ আনসারীর কথায় এক রকম বিরক্ত হয়ে বিরক্তি মাখা সুরে বললেন থানা অফিসার।

অফিসারের কথা শুনে আনসারীর রাগ উঠলো।অফিসারের দিকে তাকিয়ে গরম চোখে বললো,
আনসারি: আমার স্ত্রী পালিয়ে যায়নি। ও মিসিং, আমি তো বলছি আমার বাড়িতে চুরি হয়েছে।তাই আমার সন্দেহ যারা চুরি করতে এসেছিল তারা হয়তো আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে।আপনি কথা না বাড়িয়ে FIR করুণ আর আমার স্ত্রীকে খুঁজে বের করুন।

‘ চাইলেই তো FIR লঞ্জ করা যায়না।আর আপনার করা কমপ্লেইন তো এমনিতেও লঞ্জ হবে না। ‘ অফিসার আনসারীর দিকে তাকিয়ে বললেন।

আনসারি অফিসারের কথা শুনে সাত আসমান থেকে পড়লো। ওর কমপ্লেইন লঞ্জ হবে না মানে? কেন হবে না? না হওয়ার কারণ কি?
আনসারি অফিসার কে প্রশ্ন করলো ‘ কেন হবে না? না হওয়ার কারণ কি? ‘

‘ যেই লোকের বিরুদ্ধে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স আর এ্যাটেমপ্ট টু মার্ডারের চার্জ আছে তার কথার উপর ভিত্তি করে আমরা কোনো অ্যাকশন নিতে পারিনা। গড নোজ এমনও হতে পারে আপনি নিজেই হয়তো ওয়াইফ কে গুম করে মিথ্যা নাটক করছেন যেন কেউ আপনার উপর সন্দেহ না করে। ‘ অফিসার বললো কথাগুলো আনসারি কে।

আনসারীর মাথায় তো বাজ পড়লো অফিসারের কথা শুনে।ওর বিরুদ্ধে এ্যাটেমপ্ট টু মার্ডার আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর কেস করা হয়েছে মানে? কে করেছে ওর বিরুদ্ধে FIR আর অফিসার এসব কি বলছে? আনসারি নিজেই ফিরোজা কে গুম করে মিথ্যা নাটক করছে মানে? কেউ নিজের স্ত্রীকে কেন গুম করবে?

‘ এসব আপনি কি বলছেন অফিসার? আমার বিরুদ্ধে এ্যাটেমপ্ট টু মার্ডার আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর চার্জ আছে মানে? কে করেছে FIR? আর আমি কেন ওয়াইফ কে গুম করে নাটক করবো ? এসব কেস কি আদৌ ভ্যালিড? ‘ আনসারী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অফিসার কে।

‘ হুম আপনার ওয়াইফ মিসেস ফিরোজা ইয়াসমিন করেছে আপনার বিরুদ্ধে FIR আর আপনার মত একটা কাপুরুষ চাইলেই নিজের স্ত্রীকে গুম করতে পারে কারণ যে তার মেয়ের জামাই কে মেয়েকে মারার মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারে সে সব কিছুই করতে পারে।তাছাড়া আপনি তো বছর পাঁচেক আগে ডক্টর তাহরীম মেহমাদ মানে আপনার মেয়ের জামাইকে মারতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার জায়গায় আপনার মেয়েরই অ্যাকসিডেন্ট হয়ে গেছিলো তাইনা? এরপরও আপনি বলছেন এই কেসগুলো ভ্যালিড নয়? ‘ আনসারীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলছেন অফিসার।

অফিসারের মুখে পুরনো কাসুন্দি শুনে আনসারী স্তম্ভিত। ও বুঝতে পারছে ওর পুরনো অতীত আস্তে আস্তে ওর বর্তমানের দিকে ধেয়ে আসছে কারণ জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে সবারই পাপের ফল পেতে হয়।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে সেই ফল পেতে হবে জানা ছিলনা। আর ফিরোজা ওর নামে কেস করেছে মানে? তবে কি ফিরোজা অবশেষে ঘুড়ে দাড়িয়েছে আর এই অফিসার এত বছর পুরোনো লুকোনো সত্যি কি করে জানল?

‘ আপনি কি করে জানলেন? ‘ অফিসারের উদ্দেশ্যে বললো আনসারী।ঘটনার আকস্মিকতায় শুধু এতটুকুই বেরিয়েছে ওর মুখ থেকে।আর কিছু বলতে পারলো না।

‘ আমরা বলেছি!! ‘

পরিচিত কণ্ঠ পেয়ে আনসারী চমকে পিছনে ফিরলো। থানার দরজায় দাড়িয়ে আছে আফরিন, তাহরীম আর ফিরোজা। তিনজনই একসঙ্গে দাড়ানো। আফরিন বেচেঁ আছে দেখে আনসারীর মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।তাহলে আফরিন বেচেঁ আছে আর ওই হেল্প করেছে তাহরীমকে জেল থেকে পালাতে আর ওদের সাথে এখন তাহলে ফিরোজাও যুক্ত হয়েছে।

ওদের তিনজন কে একসঙ্গে দেখে আনসারীর বুঝতে বাকি রইলো না ওর কাল এসে দাঁড়িয়েছে ওর সামনে।এখন তবে সব রহস্যের সমাধান হতে চলেছে।সময় তাহলে এসে গেছে সব পুরনো রহস্যের সমাধান করার।কিন্তু আনসারী পারবে তো নিজের করা সব পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে? আল্লাহ তাকে সেই সুযোগ দিবে তো?

‘ সো অফিসার ফিরোজা বেগম তো মিস্টার আনসারীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েই দিয়েছেন আর আমিও প্রমাণ দিয়ে দিয়েছি কিভাবে মিস্টার আনসারী আমার হাসব্যান্ড কে মারতে চেয়েছেন সেই প্রথম দিন থেকে।এখন নাহয় উনার এসবের পিছনে কারণ কি সেগুলো উনার মুখ থেকেই শুনবো আর আমার বাবা কে সেটাও নাহয় উনিই বলবেন। ‘ চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে শান্ত ভঙ্গিতে মিস্টার আনসারীর মুখোমুখি বসে আছি।উনি আমার মুখোমুখি সম্পূর্ণ নিরস মুখে বসে আছেন।এই এক মানুষকে যতবার দেখি ততবার অবাক হই।এত বড় বড় অপরাধ করেছেন তবুও উনার মুখে অপরাধের শাস্তি পাওয়ার ভয় কিংবা অনুতাপের রেশ মাত্র নেই।একটা মানুষ এতটা হৃদয় অনুভূতিহীন কি করে হতে পারে?

আমার মুখোমুখি দুজন কনস্টেবল অফিসারের জিম্মায় বসে আছেন মিস্টার আনসারী।উনাকে এভাবে প্রটেকশন দেওয়ার আসল কারণ হলো উনি যেন পালাতে না পারেন।মিষ্টার আনসারী এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন,

সালটা আজ থেকে আরও ২৯ বছর আগে মানে ১৯৯৩ সালের দিকে।আমি, ফাহিম আর তুবা ছিলাম জিগরি দোস্ত।আমরা তিনজনেই তখন কলেজে মাস্টার্স পড়তাম। আমরা এতটাই ভালো বন্ধু ছিলাম যে তিনজনের একজনের আরেকজন কে ছাড়া চলত না।আমরা নিজেদের পড়ালেখাসহ সবটা সামলে একে অপরকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করতাম।

আমরা তিনজন একজন আরেকজনের বন্ধু হলেও আমাদের মনে ছিলো অন্যকিছু। তুবা আর ফাহিম একজন আরেকজন কে ভালোবাসতো আর আমি শুধু তুবা কে ভালবাসতাম। তুবা আমার ওয়ান সাইডেড লাভ অ্যান্ড মাই লাস্ট লাভ টিল মাই ডেথ।আমি যেদিন তুবা কে আমার ভালোবাসার কথা জানাই তখন ও আমায় সোজাসাপ্টা ভাবে না করে দেয় কারণ ও ফাহিম কে ভালোবাসতো।আমি ওর রিজেকশন মানতে না পারলেও তখনই কোনো স্টেপ নেই না।

তুবার বাড়িতে আমার মা বাবাকে দিয়ে গোপনে বিয়ের সম্বন্ধ পাঠাই আর মা বাবা বিয়ে পাকা করে আসে।কিন্তু এইদিকে এই খবর তুবা পেয়ে গেছে যে ওর বাবা মা ওর অজান্তে ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে একজনের সঙ্গে আবার অন্যদিকে ফাহিমের মা বাবা বলতে কেউ নেই।তুবা কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না কিন্তু হঠাৎ ওর মনে হলো এই পরিস্থিতিতে ফাহিমের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয় হবে।আর ওর চিন্তা ধারাই ও ফাইনাল করলো,ফাহিম কে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে পালিয়ে যেতে রাজি করালো কারণ ফাহিম এভাবে পালিয়ে যেতে চাইছিলো না।

দুজনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিল আর গায়েব হয়ে গেলো।এভাবেই দুই বছর কেটে যায়।আমি তুবা কে দেশের প্রত্যেকটা কোনায় কোনায় খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।তবে অবশেষে তুবার খোঁজ পাই যখন ও অলরেডি এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা।সত্যি বলতে ও প্রেগনেন্ট জানার পরে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।ইচ্ছে করছিল নিজেকেই গলা টিপে মেরে ফেলি কিন্তু পারিনি কারণ তুবাকে না পেয়ে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না। তাই আমি দ্বিতীয়বারের মত আবারও প্ল্যান সাজাই আর এবার আমার খেলার গুটি করি তুবাকে।

তুবাকে ফাহিমের নামে ব্ল্যাকমেইল করি যে ও যদি ফাহিম কে ডিভোর্স দিয়ে আমায় বিয়ে না করে তাহলে ফাহিম কে মেরে ফেলবো।আমার এই রূপ দেখে তুবা ঘাবড়ে যায় আর ভয়ে ভয়ে রাজি হয়ে যায় অবশ্য এর জন্য অনেক অনেক ভয় দেখাতে হয়েছে ওকে কারণ ও আমার কথা মানতেই রাজি না। তুবা আমার কথা মতো ফাহিম কে ডিভোর্স দিয়ে আমার সঙ্গে চলে আসে।

আমার আবার তুবার সঙ্গে সঙ্গে ফাহিমের সম্পত্তির উপরও লোভ ছিল যেগুলো ফাহিমের দাদু ফাহিম ছোটো থাকাকালীনই ফাহিমের অনাগত শিশু সন্তান পাবে বলে ঠিক করেছিলেন।আমি মূলত এমন ভাবেই প্লান্টাকে সাজিয়েছিলাম যেন সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙ্গে।তাই আমি তুবা কে বিয়ে করে অনেক দূরে চলে আসি যেখানে আমাদের কেউ চিনবে না।আমি চেয়েছিলাম তুবা কে বিয়ে করে ফাহিমের সম্পত্তি যা ফাহিমের অনাগত সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই দখল করে নিবো কিন্তু আমার কল্পনায় জল ঢেলে দিলো ফাহিমের মৃত দাদা ।উনি মরার আগে উইল করেছিলেন যে ফাহিমের সব সম্পত্তি নাকি ওর সন্তানের আঠারো বছর না হওয়ার আগে কারোর হাতে যাবে না।

আমি তাই তোর আঠারো বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবো ভেবেছিলাম যাতে তোর সম্পত্তি আমি পেতে পারি।কিন্তু এর মাঝেই ঘটে গেলো আরেক বিপদ।তুবা,যাকে পাওয়ার জন্য এত কিছু করলাম,জীবনের শেষ দিন অব্দি তাকে পেতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে তো হারিয়ে গেলো। তুবার জন্য আমি কি করিনি বলতে পারিস?ওকে ভালোবেসে আমি আমার বন্ধুকে ঠকিয়েছি কিন্তু ওই আমাকে ঠকিয়ে চলে গেলো।আমি জানি ও ফাহিমের কাছে যায়নি কারণ ফাহিমের উপর এত বছর আমি প্রতি নিয়ত নজর রেখেছি।তবে তুবা কোথায় সেটা আমি আজও জানতে পারিনি… এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন মিস্টার আনসারী।আমি আর ডাক্তার সাহেব হতভম্ব হয়ে গেছি।মিষ্টার আনসারী ফাহিম বলতে কাকে বুঝাতে চাইছেন?

‘ ফাহিম মানে? আফরিন এর বাবার নাম ফাহিম? পুরো নাম কি? ‘ বিস্ময় সুরে বললেন ডাক্তার সাহেব।

‘ ফাহিম…ফাহিম মির্জা…. ‘ অপ্রতিভ গলায় বললেন মিস্টার আনসারী।

নিজের বাবার নামটা শোনা মাত্র আমার ভূমন্ডল কেপে উঠলো।মানুষ টা আর কেউ নয় বরং ডক্টর ফারহানেরই মামা মির্জা আঙ্কেল যিনি কিছুদিন আগেই আমাদের কলেজে জয়েন করেছেন । রোজ মানুষটা কে আমি আমার চোখের সামনে দেখি অথচ এই মানুষটাই আমার বাবা সেটা কোনোদিন বুঝতেও পারিনি।মানুষটার এত কাছে থেকেও বুঝতে পারিনি সে আমার জন্মদাতা পিতা। হায় দুনিয়া! এই দুনিয়ায় আমরা যা খালি চোখে দেখি তা কখনোই সত্যি হয়না আর যা দেখিনা তাই সত্যি হয়।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

শব্দসংখ্যা:১৮০০

মিফতা তিমু…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে