তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ২৬

0
1301

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-২৬

‘ তোমার কি মনে হয় আফরিন? আমাদের কি এখন অপারেশন টা করা উচিত নাকি আপাতত যতদিন উনাকে ওষুধ দিয়ে ঠিক রাখা যায় অতদিন ওষুধ দিবো, পরে নাহয় অবস্থা বেগতিক দেখা দিলে অপারেশন করবো? ‘ প্রশ্নটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিলেন ডক্টর ফারহান।

আমি খানিকটা ভাবুক ভঙ্গিতে বললাম,
আফরিন: আমার মনে হয় স্যার এখন যখন উনি সুস্থ আছেন তখন হাতে সুযোগ আর সময় দুটো থাকতে থাকতেই উনার অপারেশন করা উচিত। পরে যদি অবস্থা বেগতিক হয় তখন হয়তো অপারেশন সাকসেসফুল করতে পারবো না আমরা কারণ ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

আমার কথা শুনে ডক্টর ফারহান প্রচ্ছন্ন হেসে বললেন,
ফারহান: আই এম ইমপ্রেসড….তোমার মতামত আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ তুমি আমার আন্ডারে ট্রেনিং নিচ্ছো আর ভবিষ্যতে কোনোদিন তুমি কোন সিদ্ধান্ত ভুল নিলে সেটা আমার ব্যর্থতা হবে। যাই হোক তোমার কথা শুনে বুঝলাম এজ এ টিচার আমি ব্যর্থ নই।

ডক্টর ফারহানের কথা শুনে আমি প্রচ্ছন্ন হেসে অন্যদিকে তাকালাম।কিন্তু আমার চোখ জোড়া ডক্টর ফারহানের কেবিনে থাকা জানালায় পড়তেই আমার দৃষ্টি বদলে গেলো।আমার দৃষ্টিতে আড়ষ্টতা ভর করলো কারণ ডক্টর ফারহানের কেবিনে থাকা জানালার ওইপারে আরাফাত আমার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আছেন।

‘ আজ তো কোনো অপারেশন নেই আর আজ তো তোমাদের কোনো ক্লাসও নেই তাই তুমি আজ বাড়ি চলে যাও আফরিন।কাল যখন ক্লাস হবে তখন আমার অপারেশন, তখন নাহয় এসো। ‘ কথাগুলো বলে আফরিনের দিকে ফিরে তাকাল ফারহান।কিন্তু আফরিনের দৃষ্টি অন্যদিকে দেখে আফরিনের দৃষ্টি অনুসরণ করে ফারহানও জানালার দিকে তাকালো।কিন্তু না সেখানে কেউ নেই।

জানালার দিকে দৃষ্টি দিয়ে আফরিন কাকে দেখছে প্রশ্নটা মাথায় এলো ফারহানের কারণ সেখানে তো কেউ নেই। আফরিন এখনো সেইদিকে তাকিয়ে আছে আফরিনের উদ্দেশ্যে একটু জোরে বললো ‘ এনি প্রবলেম আফরিন? ‘।

ডক্টর ফারহানের গলা শুনে আমি চমকে উঠে উনার দিকে তাকালাম।বুঝতে পারলাম আমাকে অন্যমনস্ক দেখে কিছু একটা বলেছেন যেটা আমি শুনতে পাইনি তাই এবার একটু জোড়ে বলেছেন যাতে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন উনার দিকে।আমি অপ্রস্তুত হেসে বললাম,
আফরিন: নো প্রবলেম স্যার…আপনি কিছু বলছিলেন?
ফারহান বুঝতে পারলো আফরিন বলতে চাইছে না তাই আর আফরিন কে জোর করলো না কারণ জোর করে কারোর পার্সোনাল স্পেসে ঢোকার অভ্যাস নেই ফারহানের।

ফারহান: আমি বলছিলাম যে আজ তো আর অপারেশন না, অপারেশন কাল আর আজ তোমাদের ক্লাসও নেই তাই তুমি এখন বাড়ি ফিরে যাও। কাল যখন ক্লাস করতে আসবে তখন সময়মত চলে এসো।
আফরিন: ঠিকাছে তাহলে আজ আসি স্যার বলে আমি স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম স্যারের কেবিন থেকে।হসপিটালের স্টোর রুম পার করে আসছিলাম তখনই কেউ একজন আমায় হেচকা টানে স্টোর রুমে টেনে নিলো।

আমি ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।মানুষটা আমায় দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে রেখেছে।আমি তাকে না দেখেও বুঝতে পারছি মানুষটা কে কারণ তার নিশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পরছে।আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।চোখ খুলতেই চোখের সামনে ধরা পড়লো আরাফাতের রক্তিম মুখখানা।তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট আর এই রাগের কারণও আমি।আমি তখন ডক্টর ফারহানের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিলাম যেটা আরাফাতের মনঃপুত হয়নি। সে আমার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে আমার গাল দুটো চেপে বললো,
আরাফাত: মনে হচ্ছে সাহসটা অনেক বেড়ে গেছে তাই এত বার বারণ করা সত্ত্বেও ওই ফারহানের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিলে সুইটহার্ট।তোমার বুঝি ভয় নেই তোমার ডাক্তার সাহেব কে হারানোর?

আরাফাতের কথায় আমি ঘাবড়ে গেলাম কারণ আমি কিছুতেই চাইনা উনি ডাক্তার সাহেবের গায়ে একটা আঁচড়ও কাটেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে বললাম,
আফরিন: প্লিজ আরাফাত এমন করবেন না।আপনি প্লিজ ডাক্তার সাহেব কে কিছু করবেন না।আপনি যা বলছেন আমি তো তাই করছি বলুন।তারপরও আপনি এসব কেন করছেন? আর কয়দিন পরই তো আপনি আমাকে লন্ডন নিয়ে যাবেন তখন তো আমি চাইলেও আর এসব করতে পারবো না।আপনি আমায় এভাবে কষ্ট না দিয়ে প্লিজ আমাকে নিয়ে যান।আমি ডাক্তার সাহেবের চোখে আমার জন্য ঘৃণা দেখতে পারবো না।প্লিজ আমায় নিয়ে যান।

আমার কথা শুনে আমার গাল ছেড়ে দিয়ে নিঃশব্দে হেসে দাতে দাত চেপে বললেন,
আরাফাত: নো নো নো বেবি…তুমি সহ্য না করতে পারলে তো আমার কিছু করার নেই কারণ তোমার ডাক্তার সাহেব কে বাঁচাতে হলে যে তোমাকে সহ্য করতে হবে।আমি চাইনা যে জিনিসটা আমার তার প্রতি কারোর মনে একটুও দুর্বলতা থাকুক তাই তো এই ব্যবস্থা।তোমাকে যে তোমার ডাক্তার সাহেবের মনে তোমার জন্য ঘৃণা তৈরি করতে হবে।

আমি নিঃশব্দে কাদঁছি।আমার জন্য যে ডাক্তার সাহেবের চোখে আমার প্রতি ঘৃণা দেখা সবচেয়ে কঠিন কাজ। যাকে ভালোবাসি, যার জন্য এতকিছু করছি তার চোখেই ঘৃণা দেখতে হবে নিজের জন্য, কথাটা শুনতে যতটা সহজ হজম করতে ঠিক ততটাই কঠিন।

‘ ওয়েল কান্নাকাটি বন্ধ, আজ আমরা লং ড্রাইভে যাবো।তোমাকে তো তোমার ডাক্তার সাহেবের মনে ঘৃণা তৈরি করতে হবে তোমার জন্য যাতে ও নিজে তোমায় ওর জীবন থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় আর এটার প্রথম স্টেপ হলো ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া। আর হ্যাঁ বাইরে গেলে হাসিমুখে যাবে যেন আমার সঙ্গে তুমি অনেক খুশি কারণ তাহরীম তোমার উপর সন্দেহ করে লোক ঠিকও করতে পারে।’ আমার দিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক হেসে কথাগুলো বললেন আরাফাত।

উনার কথা শুনা ছাড়া আমার কাছে কোনো উপায় নেই কারণ উনার কথা শুনলেই একমাত্র আমি ডাক্তার সাহেব কে বাঁচাতে পারব নাহলে উনাকে বাঁচানোর যে আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই।অগত্যা আরাফাতের কথা মত হাসি মুখে উনার সঙ্গে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলাম।আজ ক্লাস না থাকায় উনি ছুটি নিয়েছেন।আমি উনার পিছন পিছন গিয়ে উনার গাড়িতে উনার পাশে বসলাম।উনি গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে এলেন হসপিটাল থেকে।

আফরিন আর আরাফাতের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই সেখানে থাকা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো আকাশ। ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ওর আফরিন ভাবী এই ভাবে ওর বস থুক্কু ওর তাহরীম ভাইকে ঠকাচ্ছে।ভাইয়া জানলে তো ভেঙে পড়বে কিন্তু ভাইয়া যে বললো ভাবীর উপর নজর রেখে ভাবী কোথায় যায় সেটা তাকে জানাতে। মিথ্যা কথা বললে ভাই ধরে ফেলবে তাই জানাতে হবে কিন্তু এর ফল যে কি হবে সেটা একমাত্র আল্লাহই জানেন।পকেট থেকে ফোন করে তাহরীমকে ফোন করলো আকাশ।

আফরিন বেরিয়ে যেতেই বাড়ি চলে এসেছিল তাহরীম কারণ ঘুমন্ত আফরিন কে দেখলে কালকে রাতের ঘটনা ভুলতে পারলেও আফরিন জেগে গেলে ওকে দেখেই নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারাতো তাই মায়ের কাছে এক প্রকার মিথ্যা বলেই বেরিয়ে গেছিলো। আফরিন বেরিয়ে যেতেই যখন ও বাড়ি ঢুকলো তখন মাকে প্ল্যান ক্যান্সেল হয়ে গেছে বলে ঘরে চলে এলো।

বারান্দায় বেতের সোফায় বসে বসে কাল রাতের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে ভাবছিল তাহরীম কিন্তু তখনই ওর ফোন বেজে উঠলো।ভাবনার মাঝে ডিস্টার্ব করার কারণে কলদাতার উপর রাগ উঠলো। নিমরাজি মুখে কল রিসিভ করলো কিন্তু কল রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে ভেসে আসা কথায় স্তব্ধ হয়ে গেলো তাহরীম।

আকাশ: বস ভাবী আপনার আগের হসপিটালেরই এক ডাক্তারের সঙ্গে গাড়ি করে কোথাও একটা গেছে।দেখে মনে হচ্ছে দুজনে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে কারণ ভাবী আর ওই ডাক্তার দুজনের মুখেই হাসি ছিল।বস আপনি বললে এখনই দুজন কে হাতেনাতে ধরে ওই ডাক্তার কে আমাদের কাল কুঠুরি নিয়ে যাবো।

আকাশের কথা শুনে তাহরীমের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলেও দাতে দাত চেপে নিজের রাগ সংবরণ করে নিরস কণ্ঠে গম্ভীর গলায় বললো,
তাহরীম: আমার আর আফরিনের বিয়ের ছবিগুলো সোসিয়াল মিডিয়ায় কে লিক করেছিল তার জন্ম বৃত্তান্ত চাই আমার আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আকাশ।যদি বের করতে না পারো তাহলে তার শাস্তি পাওয়ার জন্য রেডি থাকো।
তাহরীমের কাছ থেকে এখন এই কথা শুনবে সেটা আশা করেনি আকাশ। তাহরীমের কথায় হতভম্ব হয়ে আকাশ বললো,
আকাশ: কিন্তু বস ভাবী…
তাহরীম: যেটা বলছি সেটা করো আকাশ।এই ব্যাপারে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না বলেই মুখের উপর কল কেটে দিলো তাহরীম।

তাহরীমের কথাগুলো এখনও হজম করতে পারছে না আকাশ। ও আসলেই এক্সপেক্ট করেনি যে তাহরীম এমন একটা পরিস্থিতি তে আগের কাহিনী টেনে আনবে।কিন্তু কথা হজম না হলেও কিছু করার নেই কারণ বস যখন অর্ডার করেছে তখন সেই অর্ডার পালন করতে বাধ্য ও।

বিকেলে বারান্দায় বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে তাহরীম।সেদিন যেই আফরিনের কথায় সিগারেট খাওয়া ছেড়েছিল আজ সেই আফরিনের জন্যই আবার সিগারেট খেতে হচ্ছে।একসময় আফরিনহীনা এই সিগারেটই ওকে শান্তি দিত।আগে কখনোই সিগারেট খেত না তাহরীম কিন্তু প্রথমবার সিগারেট হাতে তুলেছিল আফরিনের জন্য। তাও সেই পাঁচ বছর আগে। অতীতের স্মৃতি মনে পড়লেই মনটা বিষিয়ে উঠে।

‘ আমাদের বিয়েটা কবে হবে বলতো আকাশ? আমার না আর তোমাকে ছাড়া থাকতে ইচ্ছা করছে না।তোমাকে খুব মিস করি আমি। ‘ নিরাশ মুখে ফোনের ওপার থেকে বলল নিহা।

‘ যখন তোমার তাহরীম ভাইয়ের সাংসারিক ঝামেলা শেষ হবে আর তার মন চাইবে আমাদের বিয়ে দিতে তখন । ‘ মোবাইল কানে নিয়ে চুলায় ডাল জাল দিতে দিতে ফোনের এপার থেকে বলল আকাশ।

‘ ভাইয়া যখন চাইবে মানে তো অনেক দেরি।ভাইয়া বলেছে যতদিন না পড়ালেখা করে চাকরি করছি অতদিন বিয়ে দিবে না। ‘ আবারও বললো নিহা।

‘ তাহলে আর কি তোমার পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে….এই এই নিহা বস মানে তাহরীম ভাই ফোন করছেন।আমাকে ফোনটা রাখতে হবে। পরে নাহয় কথা বলবো। ‘ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো আকাশ।

‘ ঠিকাছে রাতে ঘুমনোর আগে দিয়ে ফোন দিও।রাখছি… বায়… ‘ বলে নিহা ফোন কেটে দিলো।

নিহা ফোন কাটতেই আকাশ তাহরীমের ফোন রিসিভ করলো কিন্তু ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় তাহরীম চিল্লিয়ে উঠলো,
তাহরীম: ফোন কোথায় থাকে? ফোন দিলে পাইনা কেন?ফোন যদি নাই ধরার হয় তাহলে রেখেছো কেন?

তাহরীনের রাগান্বিত গলা শুনে আকাশের কলিজা শুকিয়ে এলো। আমতা আমতা করে বলল,
আকাশ: ভাই নিহা ফোন করেছিলো।ওর মুখের উপর তো ফোনটা কাটতে পারিনা তাই ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফোন রেখে আপনার ফোন ধরতে সময় লাগলো।
এবার আকাশের কথা শুনে তাহরীম কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলো তারপর বাঁকা হেসে বললো,
তাহরীম: কিডন্যাপ দেট ম্যান…
তাহরীমের কথা শুনে আকাশ গোলগোল চোখে বললো,
আকাশ: অ্যা…
তাহরীম: অ্যা না হ্যা…ওই ডক্টর কে কিডন্যাপ করে আমাদের কাল কুঠুরি তে নিয়ে এসো।আগামী এক ঘন্টার মধ্যে আমি যেন ওর কিডন্যাপ হওয়ার নিউজ পাই।

আকাশ: কিন্তু স্যার…আর বলতে পারলো না আকাশ তার আগেই তাহরীম ফোন কেটে দিলো।ফোন এক হতে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে মাথা চাপড়ে বললো এই জামাই বউ আমায় মেরে ফেলবে। একেতো দুই বছর ধরে আমার বিয়ে আটকে আছে আর এরা এখানে আজ এই তো কাল সেই করে বেড়াচ্ছে। ও আল্লাহ আমায় তুলে…কিন্তু এবারও পুরো কথা শেষ করতে পারলো না আকাশ কারণ ওর নাকে হঠাৎ পোড়া গন্ধ এলো।সাথে সাথে ওর চোখ গেলো চুলার দিকে। এইরে ডাল পুড়ে গেছে।এখন এই পোড়া ডালের দিকে তাকিয়ে আকাশ রাগে দুঃখে জোরে চিৎকার করে বললো ‘ তাহরীম মেহমাদ ‘।

আকাশের সঙ্গে কথা শেষে তাহরীম বারান্দা থেকে বেরিয়ে ঘরে ঢুকলো।ঘরে ঢুকেই ওর চোখ পড়ল বাথরুমের দিকে।বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে তারমানে আফরিন চলে এসেছে।কিন্তু কখন এলো আফরিন? আফরিন সব শুনে নেয়নি তো?

মাত্র গোসল সেরে বের হলাম।বাইরের জামা কাপড় খুলে শাড়ি পড়াতে অনেকটা আরাম লাগছে এখন।উফফ সারাদিন বাইরে বাইরে থেকে তো আমার অবস্থায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে।সারাদিন এত দৌড়াদৌড়ি করতে হয় যে পাগুলো ফুলে টসটসা হয়ে গেছে।পায়ের ব্যাথায় দাড়িয়েও থাকতে পারছি না।কোনমতে গোসলটা শুধু করলাম।এখন যদি পাকে একটু রেস্ট না দেই তাহলে পায়ে ফোসকা পড়বে।

আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। উফফ সারাদিন পর বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই এখন শান্তি লাগছে।মনে হচ্ছে এখনই চোখে এসে ভর করবে শান্তির ঘুম।হঠাৎ পায়ে কারোর শীতল স্পর্শ অনুভব করতেই লাফিয়ে উঠলাম।আমি বড় বড় চোখ করে ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছি কারণ উনি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই আমার পা টিপে দিচ্ছেন।

‘ একি আপনি আমার পায়ে ধরেছেন কেন ডাক্তার সাহেব? আপনার কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে? আমার পা থেকে হাত সরান। ‘ উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম আমি।

‘ মাথা নষ্ট হওয়ার কি আছে? আমার বউয়ের পা ব্যাথা করছে তাই আমি টিপে দিচ্ছি তাতে তোমার কি? বউ আমার,বউয়ের পাও আমার তাই পা টিপে দিলে তোমার তো কিছু যায় আসে না। ‘ নির্বিঘ্ন কণ্ঠে বললেন ডাক্তার সাহেব।

আমি উনার কথা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি কিঞ্চিৎ কুচকে বললাম,
আফরিন: আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন।মেরি বিল্লি মুঝে মিয়াও…
তাহরীম: অবশ্যই আমি তো তোমারই বর এখন তুমি আমাকে ভালোবেসে তোমার সুশির মত ট্রিট করতেই পারো।
আফরিন: মোটেই না।আপনাকে কেন সুশির মত ট্রিট করবো? কোথায় সুশি আর কোথায় আপনি? এখন সরুন তো।আমি একটু ঘুমোবো।
তাহরীম: তো ঘুমাও নিষেধ করেছে কে?

উনার কথা শুনে বুঝলাম আমি এখন কিছু বললেও লাভ নেই কারণ কথায় কথা বাড়ে। তারচেয়ে বরং চুপচাপ কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেই তাহলে যদি একটু ফ্রেশ লাগে। যেই ভাবা সেই কাজ।আমি সাথে সাথে শুয়ে পড়লাম আর ডাক্তার সাহেব আমার পায়ের পা টিপে দিতে লাগলেন।

আফরিনের পা টিপে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই আফরিন ঘুমিয়ে পরে তাই তাহরীম পকেট থেকে ফোন বের করে।ফোনের স্ক্রিন অন করতেই তাহরীনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে কারণ স্ক্রিনে পরিষ্কার জ্বলজ্বল করছে আকাশের একাউন্ট থেকে আসা ম্যাসেজ। ম্যাসেজে লিখা ‘ কিডন্যাপিং ডান বস ‘। তাহরীম মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো।

এখন বিকাল বেলা তাই সকলেই ঘুমোচ্ছে।এখন বের হলেও কেউ দেখবে না আর হাজার প্রশ্নের উত্তরও দিতে হবে তাই এখন বের হওয়াই ভালো হবে।তাই তাহরীম আর দেরি না করে সোজা বেরিয়ে পড়লো রেডি হয়ে।কাল কুঠুরি তে পৌঁছতে তাহরীমের আধা ঘন্টা সময় লাগলো সেখানে পৌঁছেই ও গাড়ি থেকে বেরিয়ে বড় বাংলোর দিকে এগিয়ে গেলো। বাংলোটা বেশ পুরনো আর এটা ওর দাদাভাইয়ের দেওয়া। ও যখন ছোট ছিল তখনই ওর দাদাভাই ওর নামে এই বাংলো লিখে দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন এই বাংলোর উপর একমাত্র তাহরীমের অধিকার আছে।তারপর থেকেই এই বাংলোতে কেউ থাকে তবে হ্যা মাঝে মাঝে তাহরীম আসে এখানে আর এই বাড়িটাই ওর কাল কুঠুরি।

কাল কুঠুরি তে ঢুকে বড় হলঘরের দিকে এগিয়ে গেলো কিন্তু ওখানে গিয়ে যা দেখলো তারপর তাহরীমের চোখ কোটির ছেরে বেরিয়ে আসছে। তাহরীমের ঠিক করা সব লোককে আরাফাত মেরে মাটিতে শুইয়ে রেখেছে একমাত্র আকাশ বাদে। আরাফাত পায়ের উপর পা তুলে একটা চেয়ারে বসে আছে যেই চেয়ারে ওর হাত পা বাঁধা অবস্থায় পরে থাকার কথা আর ওর পাশেই আকাশ গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে আছে।

তাহরীম ওর দৃষ্টি আরাফাতের উপর থেকে সরিয়ে আকাশের উপর নিক্ষেপ করলো।আকাশ ওকে দেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। এখানে কি টর্নেডো বয়ে গেছে? এখানে হচ্ছে টা কি সেটাই বুঝতে পারছে না তাহরীম।আকাশের দৃষ্টি অনুসরণ করে আরাফাতও তাহরীমের দিকে তাকালো। তাহরীমকে দেখে আরাফাত চমৎকার এক সুন্দর হাসি দিয়ে কৌতুক জড়ানো কন্ঠে বলল,
আরাফাত: আরে আসুন আসুন শালা বাবু আসুন।কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আপনার কাছে পৌঁছানোর জন্য কত কাহিনী করলাম অবশেষে কিনা আপনার দেখা পেলাম।

আরাফাতের কথা তাহরীমের মাথায় একেবারেই ঢুকলো না। ও আরাফাতের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে গম্ভীর গলায় আরাফাতের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
তাহরীম: আমার লোকদের কেন মেরেছেন?
এতক্ষণ আরাফাত মজা করলেও এবার সিরিয়াস হয়ে বললো,
আরাফাত: আপনার লোকেরা যে আমায় কিডন্যাপ করতে আসবে সেটা আমার জানা ছিলো তাই প্রস্তুতও ছিলাম কিন্তু ওরা এসেই আমায় কিছু না বলে জোর করে তুলে নিয়ে এলো তাই মেরেছি।

তাহরীম: কিডন্যাপ করলে তো জোর করেই তুলে নিয়ে আসবে।আপনাকে কি বলে আনবে নাকি যাতে আপনি পালিয়ে যান।
আরাফাত: উহু এটা তো কিডন্যাপিং নয়।আমি ইচ্ছা করেই আপনার লোকেদের দ্বারা কিডন্যাপ হয়েছি।আপনি আমাকে আনেন নী বরং আমি এসেছি।
এবার আরাফাতের কথায় তাহরীম যেন আকাশ থেকে পড়লো। আরাফাত ও কিডন্যাপ করাতে আসেনি বরং নিজের ইচ্ছায় এসেছে তারমানে এর পিছনে নিশ্চই আরাফাতের কোনো উদ্দেশ্য আছে।
তাহরীম: মানে?
আরাফাত: মানে তো আস্তে আস্তে জানবেন। বাই দ্যা ওয়ে এটা জিজ্ঞেস করবেন না আপনার সব লোককে মেরেছি কিন্তু আকাশ কে কেন মারিনি?

আরাফাতের কথা শুনে তাহরীম ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি কিঞ্চিৎ কুচকে বললো,
তাহরীম: তুমি কি করে জানলে ওর নাম আকাশ আর সবাই কে মারলে কিন্তু ওকে মারলে না কেন?
আরাফাত: এবার আপনি আসল পয়েন্টে এসেছেন।আমি শুধু ওর কেন আপনার চৌদ্দগুষ্টির নাম জানি।আর আকাশ কে মারিনি কারণ ও তো আপনার বোনেরই হবু বর তাইনা?
এবার যেন তাহরীম আরও অবাক হলো।আরাফাত এত কিছু কি করে জানে? ও কোনো স্পাই নয়তো। তাহরীম বললো,
তাহরীম: আপনি এতকিছু কি করে জানেন?
আরাফাত: আমি জানবো নাতো আর কে জানবে?আফটার অল আপনি তো আমার হবু স্ত্রীয়ের সৎ খালাতো ভাই ।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে