#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-১৯
ডাইনিং টেবিলে সবাই খেতে বসেছি।সুশি কে একটা বাটিতে মসলা ছাড়া মাছ ভাজা আর ভাত মেখে দিয়েছি।সবাই খাওয়া শুরু করলাম।আজ ব্রেকফাস্ট এ লেপটা খিচুড়ি করেছে ভাবী। লেপটা খিচুড়ি নাকি ডাক্তার সাহেব আর তাহসান ভাইয়ের খুব পছন্দ।আমার আবার লেপটা খিচুড়ি পছন্দ না,আমি ভুনা খিচুড়ি খেতে পছন্দ করি।কিন্তু এখন তো কিছু করার নেই।শশুর বাড়ি থাকি তাই সবই খেতে হবে।সবাই খাওয়া শুরু করতেই খানিক আকুপাকু করে আমিও খাবারে হাত দিলাম।
‘ আফরিন দাড়া।তোকে লেপটা খিচুড়ি খেতে হবে না। তোর জন্য অন্য ব্যবস্থা আছে। ‘ রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে কথাগুলো বললো মা।
আমি মায়ের কথা শুনে ভ্রু কুচকে ফেললাম।সকলেই অধির আগ্রহে মা কিসের জন্য গেছে দেখার জন্য তাকিয়ে আছে রান্নাঘরের দিকে।কিছুক্ষণ পর মা ফিরে এলো হাতে একটা মাঝারি সাইজের কড়াই নিয়ে।আমি মায়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি মা কি করতে চাইছে।মা আমার সামনে থেকে লেপটা খিচুড়ির প্লেট টা সরিয়ে নতুন প্লেটে ওই কড়াই থেকে ভুনা খিচুড়ি নিল।মা আমার জন্য ভুনা খিচুড়ি করেছে দেখে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।আমার কোন খিচুড়ি পছন্দ সেটা তো এই বাড়ির কেউই জানেনা,এমন কি ডাক্তার সাহেবও না।তাহলে মা কি করে জানল?
মা আমার সামনে খিচুড়ির প্লেট রেখে আমার প্লেটে মুরগি মাংস দিয়ে আমায় খেতে ইসারা করলো।আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
আফরিন: আমার যে ভুনা খিচুড়ি পছন্দ,লেপটা খিচুড়ি পছন্দ নয় সেটা তোমাকে কে বললো?
মা: আর কে বলবে তাহরীম ছাড়া? তাহরীম বলেছে।
মায়ের কথা শুনে আমি দমে গেলাম খানিক কারণ এখন সবার সামনে কোনো প্রশ্ন করতে চাচ্ছি না।সবার সামনে প্রশ্ন করলে ব্যাপারটা দৃষ্টি কটু দেখায়।
অগত্যা আমি খাওয়ায় মন দিলাম।খাওয়ার মাঝেই বাবা বললো,
বাবা: আফরীন তুমি যখন যাচ্ছই তখন তাহরীমকেও নিয়ে যাও কারণ তাহরীম তো আজ ছুটিতেই আছে।বউ একা বাইরে যাবে আর ও ঘরে একা পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবে সেটা ভালো দেখায় না।তাই ওকে নিয়ে যাও।
বাবার কথা শুনে আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকালাম।উনি আমায় ইসারায় আশ্বস্ত করতেই আমি বাবার দিকে তাকিয়ে আলতো মাথা নেড়ে সায় দিলাম তারপর আবার খাওয়ায় মন দিলাম।
খাওয়া শেষে আমি,সুশি আর ডাক্তার সাহেব বেরিয়ে পড়লাম।সুশি আমার কোলে বসে আছে।ডাক্তার সাহেব এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়েই গাড়ির কাছে যাচ্ছিলেন কিন্তু তখনই আমি ডাক্তার সাহেবের হাতটা ধরে ফেললাম।ডাক্তার সাহেব আমার দিকে প্রশ্ন বিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন।আমি উনাকে বললাম,
আফরিন: আজ আপনি,আমি আর সুশি গাড়িতে না গিয়ে বাসে করে যাই?
তাহরীম: গাড়ি থাকতে বাসে কেন যাবো? তাছাড়া বাসে অনেক জার্মস আর ধুলোবালি থাকে।সুশি আর তোমার প্রবলেম হতে পারে।
আফরিন: প্লিজ ডাক্তার সাহেব চলুন না। একদিনই তো।আজকেই লাস্ট এরপর আর কোনোদিন যাইতে চাইবো না।প্লিজ চলুন… লাস্ট বার।
তাহরীম: ফাইন চলুন বেগম সাহেবা।আপনি এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে করে আমাকে দিয়ে যে এভাবে কার্য সিদ্ধি করেন না, কোনদিন যে আপনার চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক করবো আল্লাহ জানে।
আফরিন: তওবা তওবা ডাক্তার সাহেব, এসব কি বলছেন।মাথা ঠিক আছে তো?
তাহরীম: হয়েছে হয়েছে আর নাটক না করে হাঁটুন।রিক্সা না নিলে বাস স্ট্যান্ড অব্দি কি হেঁটে যাবো?
আফরিন: আপনি রিক্সা না নিলে আমি উঠবো কিসে।আপনি রিক্সা নিন তাহলেই তো উঠতে পারবো।
তাহরীম: আপনি সোজা ভাবে কথা বলতে পারেন না তাইনা? সবসময় তেরা ভাবে উত্তর দেওয়া চাই আপনার তাইনা?
ডাক্তার সাহেবের কথায় আর কথা বাড়ালাম না।উনি আমাদের রেখে একটু এগিয়ে গেলেন রিক্সা খুজতে।মিনিট দুয়েক পর ফিরে এসে বললেন,
তাহরীম: চলুন রিক্সা পেয়ে গেছি।
আমি ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে আলতো মাথা নেড়ে উনাকে অনুসরণ করলাম।তারপর আমরা রিক্সায় উঠে বসলাম।রিক্সা এগিয়ে যেতে লাগলো চার পায়ে।
‘ আপনার কোনটা পছন্দ? রিক্সা না গাড়ি? ‘ বললাম আমি।
তাহরীম: হুম গাড়ী…. গাড়িতে তো সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে তাহলে গাড়ি ছেড়ে রিক্সা কেন পছন্দ করবো?
আফরিন:গাড়িতে সব তো আছে,শুধু নেই মুক্ত বাতাস যেটা আপনি রিক্সা ছাড়া আর কোনো ট্রান্সপোর্ট এ পাবেন না।একদিন সময় করে রিক্সায় চরে পুরো ঢাকা শহরটা ঘুরবেন,তাহলে দেখবেন এই বাতাসে আপনার হৃদয়টা জুড়িয়ে যাচ্ছে কথাগুলো বলেই সামনের দিকে চোখ দিলাম।সম্ভব হলে রিক্সায় করেই সবটা ঘুরতাম কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না।
দেখতে দেখতে কুড়ি মিনিটের মাথায় আমরা বাস স্ট্যান্ড চলে এলাম।আমরা রিক্সা থেকে নেমে রিক্সার টাকা মিটিয়ে দিয়ে একে অপরের হাত ধরে রাস্তা পার হলাম।রাস্তা পার হয়ে দুই মিনিট দাড়াতেই নিউ মার্কেট যাওয়ার বাস পেয়ে গেলাম।সাথে সাথে ডাক্তার সাহেব হাত দেখিয়ে বাস দাড় করালেন।বাস দাড়ালে আমি আর ডাক্তার সাহেব বাসে উঠলাম। বাসে বিড়াল নিয়ে উঠাতে অনেকেই আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে। ব্যপারটা ডাক্তার সাহেবও দেখলেন কিন্তু কিছু বললেন না।
আমরা নিজেদের সিটে বসলাম।ডাক্তার সাহেব আমায় ভিতরে জানালার কাছে বসতে দিলেন।উনি আমার পাশে বসতে নিলেই একটা লোক উনাকে ডিঙিয়ে আমার পাশে বসার চেষ্টা করছিলেন।ডাক্তার সাহেব কিছু বলবেন তার আগেই আমি বললাম,
আফরিন: এক্সকিউজ মি উনি আমার হাসব্যান্ড। কাইন্ডলি আপনি অন্য কোথাও এডজাস্ট করে নিন।
আমার কথা শুনে লোকটা খানিক অপ্রস্তুত হলো আর ডাক্তার সাহেব আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন।লোকটা তারপর সরে গেলো আর ডাক্তার সাহেব আমার পাশে বসলেন।উনি আমার পাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন যেন কিছু বলতে চান।ইতিমধ্যে সুশি আমার কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি ডাক্তার সাহেবের কাধে আলতো করে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলাম । আসলে আমি সময়টা উপভোগ করতে চাইছি।
আফরিন কে ওর কাধে মাথা রাখতে দেখে তাহরীম অবাক হলো। ও বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। এমনিতেই কাল থেকে আফরিনের কাজে প্রচন্ড রকমের শকড হচ্ছে।তার উপর দিয়ে এখন আবার ওর কাধে মাথা রেখেছে তাতে যেন ওর হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে গেছে। তাহরীম উপায়ন্তর না পেয়ে পকেট থেকে ইয়ারফোন বের করে মোবাইলে কানেক্ট করে গান শুনতে লাগলো।
আমি আবার প্রচন্ড ঘুম কাতুরে।ডাক্তার সাহেবের কাধে মাথা রাখতেই ঘুমিয়ে গেলাম কিন্তু আমার ঘুম ব্যাঘাত ঘটলো কারণ দশ মিনিট যেতে না যেতেই বাস তার গন্তব্যে হাজির।অতঃপর আমাদের নেমে যেতে হলো।ডাক্তার সাহেব নেমে আমার হাত ধরে রাস্তা পার হলেন।তারপর আমরা নিউ মার্কেটে চলে এলাম। সেখান থেকে বিভিন্ন দরকারি জিনিসসহ বাড়ির সবার জন্য শপিং করলাম।আসলে নিউ মার্কেটে আসার আসল কারণ হলো একটু শপিং করা। মা,আমার আর ভাবীর জন্য তিনটা একই ধরনের মেরুন রঙের শাড়ী কিনলাম।ভাইয়া, ডাক্তার সাহেব ও বাবার জন্য পাঞ্জাবি পাজামা আর নিহার জন্য কুর্তি লেগিংস।এসব কেনাকাটার আসল কারণ হচ্ছে আর কিছুদিন পরেই আমাদের বিয়ের একমাস হবে আর সবাই ঠিক করেছে এবার আমাদের বিয়ের এক মাস হলে একটা খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করবে আর সেদিন সবাই নতুন নতুন জামা পড়বো।
প্রথমে আমাদের বিয়ের এক মাস উপলক্ষে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছিলাম।কিন্তু পরে জানলাম যে তাহসান ভাই আর রিমা ভাবীর বিয়ের একমাস পরও অনুষ্ঠান হয়েছিল আবার বাবা মায়ের বিয়ের একমাস পরও হয়েছিল। এই নিয়ম নাকি ডাক্তার সাহেবের পূর্ব পুরুষেরা করেছিল আর সেই থেকে এই নিয়ম পালন করা হচ্ছে।
‘ এবার আমরা কি করবো? মানে আপনার কি কোনো প্ল্যান আছে? ‘ বললেন ডাক্তার সাহেব।
আফরিন: হুম এখন সবে সকাল সাড়ে দশটা বাজে তাই এখন যদি আর্যাল আর আফরার বাড়ি গিয়ে ওদের বাবা কে মানাতে পারি তাহলেই প্রবলেম সট আউট হয়ে যাবে।
তাহরীম: তাহলে আমাদের এখন ওদের বাড়ি যেতে হবে তাইতো? তোমার কাছে কি ওদের অ্যাড্রেস আছে?
আফরিন: হুম কাল নিয়ে নিয়েছি…
তাহরীম: তাহলে চলো…
দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ নাজমা বেগম স্বামীকে তাড়া দিয়ে বললেন,
নাজমা:আরে করছো টা কি? গিয়ে একটু দরজা তো খুলতে পারো।সারাদিন শুয়ে বসে থাকো আর আমাকে খাটাও।আর ভালো লাগে না এই ঝামেলা ।
তারপর আরও অনেক কথা বলতে বলতে নাজমা বেগম গিয়ে দরজাটা খুললেন।
নাজমা অ্যান্টি দরজা খুলতেই আমি আর ডাক্তার সাহেব উনাকে আসসালামু আলাইকুম বললাম। অ্যান্টি আমায় চিনেন না বলে আমাদের দুজন কে দেখে একটু হকচকিয়ে গেলেন। অ্যান্টি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন,
নাজমা: জি কোনো ভাবে হেল্প করতে পারি?
আফরিন: জী অ্যান্টি আমি আফরিন, আর্যালের…
নাজমা: তুমি আফরিন, আর্যালের বান্ধবী তাইনা?
আফরিন: হ্যাঁ হ্যাঁ অ্যান্টি আমি আফরিন।
নাজমা: কিন্তু ও…বলে ডাক্তার সাহেব কে ইসারা করলেন অ্যান্টি।আমি আলতো হেসে বললাম,
আফরিন: ও উনি আমার হাসব্যান্ড ডক্টর তাহরীম মেহমাদ…
নাজমা: আর্যালেরই তো টিচার শুনলাম।
আফরিন: জি অ্যান্টি।
নাজমা: কিন্তু বাবা তোমরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিতরে এসো।ভিতরে ঢুকে সোফায় বস।
আন্টির সঙ্গে কথা আছে বলেই আমরা আর কেউ আপত্তি করলাম না।ঘরে ঢুকে বসার ঘরের সোফায় বসলাম। আর্যালের বাবা ফরহাদ আঙ্কেল সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন।আমাদের দেখে আন্টির দিকে তাকালে অ্যান্টি বললেন,
নাজমা: ও আফরিন আর্যালের বান্ধবী আর ও তাহরীম আফরিনের হাসব্যান্ড।
ফরহাদ: ও আচ্ছা, তুমি তাহলে আফরিন। আর্যাল তো তোমার কথা সারাদিনই বলে।শুনলাম কয়েকদিন আগে তোমাদের ঝগড়া হয়েছে।
আংকেলের কথা শুনে ডাক্তার সাহেব আমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালেন আর আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম।আঙ্কেল কিভাবে জানলো, আর্যাল বলেছে নাকি?
ফরহাদ: আরে কিছু মনে করোনা।আমাকে আর্যাল বলেনি। ও ফারার সাথে বলছিলো তখনই আমি শুনে ফেললাম।
আমি এবার সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আর বললাম,
আফরিন: হ্যাঁ আঙ্কেল আসলে ঐ যেরকম বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া হয় তাই।
ফরহাদ: আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু বাবারা আর্যাল যে বাড়ি নেই।ওর সঙ্গে দেখা করতে হলে তোমাদের অপেক্ষা করতে হবে।তোমরা বরং দুপুরের খাবারটা খেয়ে যাও।
আফরিন: না না আংকেল তার দরকার পড়বে না।আমাদের প্রয়োজনটা আপনাদের সঙ্গে। মানে আপনাদের সাথে কথা ছিলো।
নাজমা: কি কথা আফরিন?
আফরিন: অ্যান্টি আপনি বসুন না, আংকেলের পাশে বসুন।আপনাদের দুজনের সঙ্গেই কথা আছে।আমার কথা শুনে অ্যান্টি আংকেলের পাশে বসলেন।এবার আমি বললাম,
আফরিন: অ্যান্টি ধরুন আপনি আঙ্কেল কে ভালোবাসেন আর আঙ্কেল আপনাকে ভালোবাসেন।এখন আপনারা একজন আরেকজন কে খুব ভালোবাসেন কিন্তু আপনাদের পরিবার আপনাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে না।আপনাদের ভালোবাসা এতটাই গভীর যে আপনারা একজন আরেকজন কে ছাড়া থাকতে পারবেন না।আপনাদের পরিবার একটা ভুলের কারণে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা করে আপনাদের এক হতে দিচ্ছে না তাহলে আপনারা কি করবেন?
আমাদের কথায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলেন আঙ্কেল অ্যান্টি।দুজন একজন আরেকজনের দিকে খানিক দৃষ্টি বিনিময় করে বললেন,
ফরহাদ: দেখো বাবা আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কেউ এত আপত্তি দেখায়নি তবুও দেখালে আমরা একজন আরেকজনের হাতে হাত রেখে দূরে কোথাও চলে যেতাম।যেখানে কেউ আমাদের খুঁজে পেত না,আমরা শান্তিতে সংসার করতাম।আমার মতে দুজন মানুষ একজন আরেকজন কে ভালোবাসলে যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের একসঙ্গে থাকা উচিত।আর রইলো কথা বাবা মায়ের তাহলে বিয়ের পর এক সময় না এক সময় বাবা মা ঠিকই মেনে নিত।
এবার ডাক্তার সাহেব বললেন,
তাহরীম: ঠিক বলেছেন আপনি।আপনাদের বাবা মা একসময় না একসময় ঠিক আপনাদের মেনে নিত কিন্তু সেই মেনে নেওয়াতে কি শান্তি আর ভালবাসা থাকতো? কারণ আপনাদের বাবা মায়ের মাঝে তো শত্রুতা আছে।এক্ষেত্রে আপনারা কি করতেন? বাবা মায়ের কষ্টের কারণ হয়ে আদৌ থাকতে পারতেন তো? বাবা মা আপনাদের উপর অসন্তুষ্ট, মেনে নিতে পারতেন তো?
ডাক্তার সাহেবের কথায় এবার নাজমা অ্যান্টি বললেন,
নাজমা: অবশ্যই পারতাম না তবুও চেষ্টা করতাম তাদের মাঝে এত ঝামেলার আসল কারণ খুঁজে তাদের ঝামেলা মিটিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটানোর।
আফরিন: সেটাই তো আপনার ছেলের করা উচিত।কিন্তু সে তো ভয়েই করতে পারছে না। আপনাদের আর আফরার বাবা মায়ের মাঝে ঝামেলা মিটিয়ে একে অন্যকে আগলে নিতে পারছে না।
এবার আমার কথা শুনে আঙ্কেল আর অ্যান্টি যেন একটা শক পেলেন।আঙ্কেল অবাক হয়ে বললেন,
ফরহাদ: মানে?
তাহরীম: দেখুন আঙ্কেল আমি সোজাসাপ্টা কথা বলা পছন্দ করি তাই সরাসরি বলছি।আফরা আর আর্যাল একে অপরকে ভালবাসে আঙ্কেল কিন্তু নিজের বাবা মায়ের কথা ভেবে একজন আরেকজন কে কাছে টেনে নিতে পারছে না।আপনি তো বললেন আপনারা পালিয়ে যেতেন কিন্তু ওরা সেটাও পারছে না। পারবেও বা কি করে? আপনাদের অনেক ভালোবাসে ওরা।আপনাদের কথা ভেবেই নিজেদের ভালোবাসা কে বলিদান করছে।আপনি কি চান একজন বাবা হয়ে সন্তানের দুঃখের কারণ হতে… কথাগুলো বলেই ডাক্তার সাহেব আংকেলের দিকে তাকালেন।
আমরা দেখলাম আংকেলের চোখ ভিজে এসেছে। আন্টিও নিঃশব্দে কাদছেন।অ্যান্টি মুখে আঁচল চাপা দিয়ে উঠে গেলেন। আংকেল চোখের পানি মুছে বললেন,
ফরহাদ: তো কি করবো তুমিই বলো বাবা? রাহাত( আফরার বাবা ) কি করে পারলো ৩০ বছর আগে আমার বোনটা কে বিয়ের পিঁড়িতে একলা রেখে ফাতেমা( আফরার মা ) কে বিয়ে করতে? বিয়ে যদি নাই করার হতো তাহলে আগে কেন আপত্তি করলো না?কেন বিয়ের দিন আমার বোন কে একা করে চলে গেলো?
রাহাত বোন কে একা করে চলে যাওয়ার পর সেদিন বোনের বিয়ে হয় তার কলেজের এক টিচারের সঙ্গে। রাহাত সেদিন আমার বোন কে ঠুকরে চলে গেলেও আমার বোনের কপাল পোড়া ছিলনা।সে এখন তার স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার করছে কিন্তু আমি!!আমার বিয়ে হয়েছিল বোনের বিয়ের এক বছর পর।বিয়ের পর জানতে পারি নাজমা রাহাতের বউ ফাতেমার বোন।
অনেক চেষ্টা করেছিলাম নাজমা কে ছেড়ে চলে যেতে।ফাতেমা আর রাহাতের প্রতিশোধ ওর উপর নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম না। শেষে বাধ্য হয়ে যখন দেশ ছাড়তে চাইলাম তখন নাজমার ভালোবাসায় বাঁধা পড়ে গেলাম।নাজমা কে ভালোবাসলে কি হয়েছে, আজও আমি বিয়ের দিন আমার বোনের হওয়া অপমানের কথা ভুলিনি।
তাহরীম: যার জন্য এতকিছু করলেন সেই তো সুখে আছে তাহলে আর কি চাই? হয়তো রাহাত আঙ্কেল আপনার বোনের ভাগ্যেই লিখা ছিলেন না তাই এভাবে আঙ্কেল সবটা ছেড়ে চলে গেছিলেন।আঙ্কেল আমরা না চাইতেও তকদির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।আমাদের তকদিরে যা থাকবে তাই হবে।হয়তো আপনার বোনের তকদীরে রাহাত আঙ্কেল ছিলেন না তাই উনার সঙ্গে বিয়ে হয়নি।আপনি শত চেষ্টা করেও পারবেন না তকদির বদলাতে তাহলে এই শত্রুতার কি কোনো মূল্য আছে?
~ চলবে ইনশাল্লাহ্