#তুমি নামক যন্ত্রনা
#লেখনীতেঃ হৃদিতা ইসলাম কথা
পর্বঃ ১০
— আমার এই শেষ যাত্রার শেষ ইচ্ছেটা পুরন কর বাবা!তোদের দুজনের কাছেই আমার অনুরোধ! আমি সবসময় চাইতাম আমার স্রোতের জন্য আমাদের কথাকেই রেখে দিতে।ওকে চোখের আড়াল করতে চাই না।ওকে স্রোতের সাথে বেধে রাখার জন্য হলেও এই বিয়েটা দরকার।
হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী মায়ের মুখে এমন কথা শুনে বেশ অনেকটাই চমকে যায় দুইভাই।তারা হয়তো ভাবে নি এমন একটা বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে মা এমন কিছু আবদার করে বসবে।
এইতো আজ সকালের ঘটনা,,,,,
স্রোত ভাইয়ার বিরহে ক্লান্ত মন কখন যে নোনাজলে ভাসতে ভাসতে চোখের পাতা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে বুঝতে পারিনি।তবে তিশা আপুর চিৎকারে ধরফরিয়ে উঠে বসি।হঠাত তার এমন আর্তনাত তাও আবার দিদুনের ঘর থেকে। যা মুহুর্তের মাঝেই সবকিছু স্থবির করে দিয়েছিল।আমি তৎক্ষনাৎ ছুটে যাই দিদুনের ঘরে।মা আর বড় আম্মু আমার আগেই ছুটে এসেছে।তারা দিদুনের এমন অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেছে।কি করবে বুঝতে পারছে না। অস্থির হয়ে উঠেছে।আম্মু বাবাকে কল করার চেষ্টা করছে।আমি দিদুনের কাছে ছুটে যাই। দিদুন বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস টেনে নিচ্ছে।মনে হচ্ছে তার শ্বাস যেন ফুরিডে আসছে। দম আটকে আসছে।অনেক ঘামতে শুরু করেছে।কিছুই বলতে পারছে না।হাপিয়ে উঠছে। এক পর্যায়ে দেখা গেল দিদুনের শ্বাস ছোট হয়ে আসছে আর চোখ বুজে আসছে। দিদুনের অবস্থায় সবাই কান্নায় ভেসে যাচ্ছে।দিশেহারা হডে দিদুনকে দুহাতে আগলে কান্না ভেজা কন্ঠে তাকে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করি,
— কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার দিদুন।কিছু বল দিদুন। কিছু হবে না তোমার। কিচ্ছু হবে না।
এরমাঝেই হন্তদন্ত হয়ে বাবা আর বড় আব্বু ছুটে আসে।তারা বাড়িতেই ফিরছিলো।আম্মুর ফোন পেয়ে দিশেহারা হয়ে যায়। দিকবেদিক না ভেবে বাবা এসেই দিদুন পাজোকোলে তুলে নেয়।হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয়।পিছন পিছন আমরা সবাই ছুটে আসি। কান্নায় ভেঙে পড়া অবস্থায় আমাকে দুহাতে আগলে রাখে তিশা আপু।তার চোখ ভরা অশ্রু। আম্মু আর বড় আম্মুর চোখের কোনে অশ্রুকনারা ভিড় করেছে।তারাও কেদেছে তবে নিরবে।শাশুড়ি মাকে তার দুই ছেলের বউ ভিষন ভালোবাসে।তিনি যেমন সন্তানের মত ভালোবেসেছেন স্নেহ করেছেন।পুত্রবধুরাও তাকে মায়ের স্থান দিয়েছে।শ্রদ্ধা সম্মান আর ভালোবাসায় ভরিয়ে রেখেছে।বড় আম্মু মাকে সামলে নিচ্ছেন সাথে নিজেকেও।দুজনেরই বাবা মা নেই।শ্বশুড় মশাইকে হারিয়েছেন।বিগত পনেরো বছর আগে।তাই শাশুড়ি মাকেই মায়ের স্থান দিয়েছেন। কষ্ট তো হবেই।বড় আব্বু আর বাবার অবস্থা আরও কাতর তবে হয়তো পুরুষ হওয়ার দরুন।তারা তাদের ভিতরের যন্ত্রনা প্রকাশ করতে পারছে না।আমরা মেয়েরা কেঁদে ভাসিয়ে মন হালকা করি।তারা তো তাও পারে না।দুজনের চোখের জল। বাবা দিদুনকে ভিষন ভালোবাসে। মায়ের এমন অবস্থা সহ্য করতে পারলেন।অবাধ্য অশ্রুকনার দুফোটা টুপ করে গাল বেয়ে গরিয়ে পড়লো।বড় আব্বু ছোট ভাইকে বুকে জরিয়ে ভরসা দিলেন।বড়রা এভাবেই ছোটদের আগলে রাখে।নিজেরা শক্ত থেকে ছোটদের মনে সাহস জোগায়।অথচ তাদের ভিতরেও ঠিক ততটাই কষ্টেরা ভিড় জমিয়ে রাখে।তারা শুধু একটা শক্ত আবরনে আবৃত থাকে। আমাদের বাড়িটি যেন আস্ত একটা স্বপ্ন পুরী।যেখানে সবাই ভিষন খুশি।তবে হঠাৎ করেই এই স্বপ্ন পুরীতে কান্নার রোল পড়ে গেল।বাড়ির সবচেয়ে বয়জেষ্ঠা মানুষটির এমন দুর্ঘটনায় সবাই ভেঙে পড়লো।
ডাক্তার ভিতরে চিকিৎসা করছেন। আমরা সবাই হসপিটালের কড়িডোরে অপেক্ষা করছি।প্রায় একঘন্টা পরে ডাক্তার বাইরে বেরিয়ে এলেন।চট্রগ্রামের একটি প্রাইভেট হসপিটালে এসেছি আমরা।হসপিটালের কার্ডিওলোজি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বরত ডক্টরকে দেখে ছুটে গেলেন বড় আব্বু, বাবা, আমি ও তিশাসহ বাকি সবাই।বড় আব্বু কাতর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
— মায়ের কি অবস্থা ডক্টর?
— মেসিভ হার্ট অ্যাটাক ছিল।অনেক বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ায় হঠাৎ করেই অ্যাটাক হয়।বয়সে হয়েছে উনার বুঝতে হবে।কোন বিষয়েই দুশ্চিন্তা করা তার জন্য ভালো লক্ষন নয়।এই বয়সে অস্থিরতা আর দুশ্চিন্তা প্রান ঝুঁকির কারন হতে পারে।যার ফলে হুট করেই তিনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। বাট সি ইজ ফাইন নাও। আপনাদের আরও বেশি যত্নশীল হতে হবে। তিনি যেন কোন বিষয়েই দুশ্চিন্তা না করে মাথায় রাখবেন।
— আমরা কি মায়ের সাথে দেখা করতে পারি ডক্টর?
আব্বু করুন চাহনিতে জিজ্ঞেস করলেন।
ডক্টর আব্বুর কাধে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বললেন,
— হ্যাঁ,অবশ্যই দেখা করবেন।তবে এখন নয়।এখান ওনার রেস্টের প্রয়োজন।ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে ঘুমোচ্ছে উনি।আপনারা পরে দেখা করে নিবেন।এখন
উনাকে বিরক্ত না করাই ভালো।
–আপনাকে ধন্যবাদ ডক্টর।
— প্লিজ ডোন্ট সে থ্যাংক্স! ইট’স মাই ডিউটি।
— উনার টেক কেয়ার করবেন।আপাতত দুদিন ওভজার্ভেশনে রাখার পর ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে।
ডক্টরের কথা শুনে সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।তবে দিদুনের হঠাৎ দুশ্চিন্তার কারন নিয়ে সবাই ভিষন চিন্তিত।ছেলেরা মাকে চেনে।সদা হাসি খুশি প্রানোচ্ছোল তাদের মা কিসের জন্য দুশ্চিন্তায় ভুগবেন।কোন কিছুর অভাব তো নেই।তাছাড়া এমন কোন দুশ্চিন্তার রেখা কখনো চোখেও পড়েনি। মাকে দেখে তো তাদের কখনো মনে হয়নি।
আমরা সবাই বাইরে অপেক্ষা করছি।প্রায় অনেকক্ষন হলো তবে দিদুনের কক্ষে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া গেল না।এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন স্রোত ভাই।তিনি এসেই বড় আব্বুকে জিজ্হেস করলেন দিদুনের অবস্থার কথা।বড় আব্বুকে তাকে সব কিছু বললে তিনি কিছুটা শান্ত হন।এতক্ষন ভিষন অস্থির লাগছিলো তাকে। প্রিয় মানুষটির সামান্য তম আঘাতে আমরা ভিষন অস্থির ও উত্তেজিত হয়ে পড়ি।আমি একপলক তাকে দেখলাম।মলিন মুখে এক ঝাক দাড়ি গজিয়েছ। ভিষন অবহেলায় তা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বড় হয়েছে।মাথা ভরা ঝাকড়া চুলগুলো উসকো খুসকো।জোখের নিচে কালচে দাগ।কেমন শুকিয়ে গেছেন তিনি।মনো হয় ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেন না।রাতের আধারে তার এমন করুন অবস্থা আমার দৃষ্টি এড়ালেও আজ এড়াতে পারলো না।তার এমন উদ্ভান্ত্র অবস্থা দেখে বুকের ভিতর কোথায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলাম।তবে ভিষন অভিমান আর মন খারাপের অন্ধকারে ডুবে গেল আমার মন।কারন তিনি একবার ও চোখ তুলে আমার দিকে তাকান নি।কষ্ট পেল আমার ছোট্ট মোলায়েম মনটা! ভিষন কষ্ট! বাধভাঙা কষ্ট!
.
স্রোত ভাইয়ার আসার কিছুক্ষনের মধ্যেই দিদুন জেগে উঠলেন।প্রথমে বড় আব্বু আর আব্বু ভিতরে গেলেন।দুজনের বেশি যাওয়ার অনুমতি নেই।ঠিক সেসময়ই অবাক করা এক আবদার করে বসলেন তাদের মা জননী। তবে মায়ের কথা ফেলে দেওয়ার ছেলে তারা নয়।মায়ের চাওয়া পুরন করতে পৃথিবী উলোটপালোট করতেও তারা দুবার ভাববে না। তাছাড়া মা যা চায় যা করে ভালোর জন্যই করে।এটা জানে তার দুই ছেলে।তাই মায়ের কথার অমত তারা করবে না। মা তো ভুল কিছু বলেনি।ফারদিন তো নিজেও চায় ওই চঞ্চলা মিষ্টি মেয়েটাকে নিজের কাছে রাখতে। সে তো লক্ষ করেছে,এই দুই বছরে স্নোতের মত ইন্ট্রোভার্ট ছেলেটাও কতটা বদলে গেছে।সদা গম্ভীর, একঘুয়ে, জেদি ছেলেটাও কেমন বদলে নিতে চাইছে নিজেকে।যদিও চুপচাপ স্বভাবের রাগী ছেলে তবুও বড়দের সম্মান আর শ্রদ্ধায় এতটুকু অবহেলা নেই তার।তার জেদ, রাগ, সবটাই কেমন যেন কৌশলে হাসিল করতে জানে সে।ইদানীং ছেলের আচরনে পরিবর্তন লক্ষ করছেন তিনি।কিছুমাস হলো তিনি পর্যবেক্ষন করছে, তার ছেলে আগের থেকেও নিজেকে একাকী রাখছে।প্রায়শই ঘর বন্দি হয়ে থাকছে।উদাসিন জীবন যাপন করছে।কাজে মন নেই।কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা ছেলেটিও আজকাল আর অফিসে যাচ্ছে না।বাবার কাজে সহায়তা করছে না।পড়ালেখায় মন দিচ্ছে না।বন্ধুদের সাথে আড্ডার পাহাড় জমাচ্ছে না।সদা প্রিয় বন্ধুদের থেকেও দুরত্ব বাড়িয়েছে।একা একা কোথায় থাকছে কেউ জানছে না।প্রশ্ন করলে উত্তর দিচ্ছে না।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া নেই।ছেলেকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না তার কাছে।সে আর তার স্ত্রী অনেক আগে থেকেই কথাকে ছেলের বউ করে ঘরে আনবে বলে ভেবে রেখেছে।মেেয়েটার বাচ্চামো স্বভাব মায়া মায়া দৃষ্টি সবটাই যে কারো মন কাড়তে সদাপ্রস্তুত।এমন একটা মিষ্টি মেয়েই পারবে তার এই হঠাৎ বদলে যাওয়া গম্ভীর ছেলেটাকে স্বাভাবিক করতে। বাবা ছেলের বাহ্যিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হলেও মনের দিকটা তার আড়ালেই রয়ে গেল।তবুও অজান্তেই ছেলের জন্য তার ভালোর জন্য সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন তিনি।এখানে আসা, সবার সাথে সময় কাটানো,কথা আর স্রোতের কাছাকাছি থাকা এবং ছোট ভাইকে নিজের মনের কথা বলবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছেন তিনি।তবে তার মা যে এমন কিছু ভেবেছেন কল্পানাতীত ছিল তার কাছে।
যাইহোক, মা যখন চায় তাই হবে।আপাতত ভাইয়ের সিদ্ধান্ত জানার পালা।
— আমার কোন আপত্তি নেই মা।বরং আমি নিজে ফারহানের সাথে ওদের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইছিলাম।স্রোতের জন্য কথা মামনির চেয়ে ভালো মেয়ে কোটিতে খুঁজলেও পাবো না আমি।
তবে এখন সবটাই ফারহানের সিদ্ধান্ত।কথা ওর মেয়ে। মেয়ের ভালো মন্দ বিচারের অধিকার ওর আছে।কেবল দায়িত্বের ভারে আমি চাই না ও কোন সিদ্ধান্ত নিক।
— এসব তুমি কি বলছো ভাইয়া। ও যেমন আমার মেয়ে তেমন তোমারও।আমি জানি তোমরা সবাই ওকে ঠিক কতোটা ভালোবাসো।তোমাদের থেকে বেশি ভালো ও আর কোথাও থাকতে পারে না।স্রোত আমার নিজরে ছেলে।ওর মত ছেলে হাজারটা খুঁজলেও পাবো না আমি।মা যখন চায় তোমার যখন ইচ্ছে তখন এই বিয়েতে আমার অমত নেই।
— তাহলে আজই ওদের বিয়ের ব্যবস্থা কর আর এখুনি।আমি কখন আছি কখন নেই জানি না।ওদের বিডেটা দেখে যেতে চাই।আমার পরিবারের এইটাই প্রথম বিয়ে। তোদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেখলে শান্তিতে মরতে পারবো।
–কিন্তু মা! এখনি এত তাড়াতাড়ি কি প্রয়োজন!তুমি আগে সুস্থ হও।আমরা বাড়ি যাই তারপর এসব নিয়ে আলোচনা হবে।ওরা তো আর কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে না।তাছাড়া ডাক্তার বলেছে দুদিন অভজার্ভেশনের পরে রিলিজ দিয়ে দিবে।ততদিন পর্যন্ত না হয় আমরা সব আয়োজন করবো।বাচ্চাদের সাথেও তো কথা বলতে হবে।ওরা কি চায় জানতে হবে।
মায়ের দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো স্রোতের বাবা।
— কথাকে নিয়ে চিন্তার কারন নেই ভাইয়া।ও আমাদের অমত হবে না।তবুও স্রোতের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে নিলে ভালো হয়।
মায়ের অন্যপাশে মাথার কাছে বসা অবস্থায় বললো বাবা।
— ওকে নিয়ে চিন্তা করিস না ভাই।আমি যা করবো ওর ভালোর জন্য। ও কখনো অমত করবে না আমি জানি।
— তাহলে তো হলোই! তোমরা সব ব্যবস্থা কর।আজ আর এখুনি ওদের রেজিস্ট্রে মেরেজ হবে।বাকি যা কিছু করতে চাও সেটা তোমরা পরে করবে আমার কোন সমস্যা নেই।
একটু কঠিন কন্ঠেই কথা গুলো বলার চেষ্টা করলেন দিদুন।দুভাই মায়ের জেদের কাছে হার মানল।ডাক্তারদের মতে তাকে এখন কিছুতেই উত্তেজিত করা যাবে না!আর না দুশ্চিন্তাগ্রস্থ! এমনিতেও ওরা পরিবারের লোক।কোন সমস্যা হবার কথা নয়।মা যখন রেজিস্ট্র মেরেজ করতে চাইছেন সেটা এই মুহূর্তে করতে কোন সমস্যা নেই।তাই তারা দুজনেই সিদ্ধান্ত নিল মায়ের কথা মতোই কাজ করবে।
অন্যদিকে তিশার ভাবনার বিষয় তার ভাব।একটা মাত্র ভাই যাকে সে ভিষন ভালোবাসে।ভাই তার প্রান।তাই ভাইযের মন বুঝতেও তেমন সময় লাগে না তিশার।প্রথমবার যখন কথা ওদের বাড়ি গিয়েছিল।তখন থেকেই পরিবর্তন লক্ষ করছে ও স্রোতের মাঝে।তারপর যখন স্রোত ওদের শপিং এর মাঝে নিজের করা শপিং গুলো চুপিসারে রেখেছিল।তখন ও শিউর হলো।ও নিজেই ভিষন খুশি এতে।তবে কিছুমাস ধরেই ভাইডের মাঝের আমুল পরিবর্তন চোখে পরলো ওর।ভাবলো হয়তো ওদের মাঝে কোন সমস্যা। বা এতদিনে হয়তো ওরা কোন সম্পর্কে জরিয়েছে।মাঝখানের কোন কিছুই তার জানা ছিল না।ওর ভাই যে নিজের অনুভূতি প্রকাশে অপটু তা মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো ওর।তবে কাল রাতের ছাদে স্রোতের কথোপকথন শুনে সম্ভিত হয়ে গেছিল ও।আড়ালেই ছিল! সবটা বোঝার চেষ্টা করছিলো!ওদের মাঝে আসতে চায়নি।সবটা স্রোতের থেকে শোনার পর ওর আর বুঝতে বাকি থাকে না।আসল কাহিনি কি! স্রোতের মনের অনুভুতিগুলো ওর কাছে স্পষ্ট হলেও কথার অনুভূতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। ভেবে দেখেনি ও আর না জিজ্ঞেস করেছে।তবে ভাইয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে কথা সবসময় ভাইকে এড়িয়ে চলে।কিন্তু কেন! কি এর কারন! তবে কি স্রোতের জন্য কথার মনে ভালোবাসার মত কোন অনুভূতি নেই! নাকি ওর জীবনে অন্য কেউ আছে! আচ্ছা ও কি অন্য কাউকে ভালোবাসে! বুকের ভিতর ভিষন ভয় অনুভব হলো।ভাইয়ের সব কথা শুনে এতটুকু বুঝতে পেরেছে।তার ভাই কথার পররতি কতোটা দুর্বল।সে আর আগের মতো নেই এখন সে কারো কাছে দায়বদ্ধ করেছে। নিজের মন মর্জি ভালোলাগা জেদকে হেয় করে ওই বাচ্চা মেয়েটার কাছে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।
এমন একজন কি সহজেই মেনে নিতে পারে প্রিয় মানুষটির অবহেলা।না পারে না! ভাইয়ের জন্য প্রচন্ড কষ্ট অনুভব হলো।সবকিছু শোনার পর আস্তে করেই নিজ ঘরে চলে গেল।ভাবনায় ডুবে গেল।
সবাই দেখা করলো দিদুনের সাথে।বেশ হাসি খুশি প্রনোচ্ছল মনে হচ্ছিলো তাকে।কাঙ্খিত কোন কিছু পেলে মানুষ যতটা খুশি হয় তার থেকেও বেশি খুশি।ভিষন কান্নাকাটির জন্য মাইগ্রেন নামক উপসর্গটি তীব্রভাবে হানা দিলে বাবা আমাকে বাড়িতে চলে যেতে বললেন।তাও আবার স্রোত ভাইয়ার সাথে।তবে তার মাঝে কোন ভাবাবেগ দেখা গেল না।এমনিতেও দিদুন সুস্থ তাই এত মানুষের ভিড় না করাই ভালো।তাই অগত্যা চলে আসতে হলো আমাকে স্রোত ভাইয়ার সাথে । তবে এখনো অবধি তিনি একবার ও আমাকে দেখেন নি।নিজ দায়িত্বে নিজ কাজে মনোনিবেশ করছেন।আশেপাশে কেউ আছে কি নেই সেই খেয়াল নেই।তারদিকে একমনে চেয়ে থেকে ভাবনায় ডুবে ছিলাম।গাড়ি চলতে শুরু করলে হঠাৎ ই ধাক্কা খেলাম।উনি বুঝতে পেরেই সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে বেরিয়ে এলেন।আমি শুধুই তার দিকে তাকিয়ে।বিনাবাক্যে কেবল আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে আবারো নিজ স্থানে গমন করলেন।গাড়ি স্টার্ট দিলেন আর সে স্থান প্রস্থান করলেন।
দুই ভাই মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে আলোচনা করলেন।তবে তা স্রোত আর কথাকে ছাড়া।ওরা চলে যাওয়ার পর।সবাই সিদ্ধান্তে বেশ খুশি।এমনকি তিশাও।তবে ওর মনে ভয় কাজ করছে।যদি কথা না মানে তাহলে কি হবে?
অনুভূতি প্রকাশে অপটু ছেলেটার আচার আচরনও কেমন অদ্ভুত ঠেকছে সবার কাছে।বন্ধুদের আড্ডার মধ্যমনি হয়েও কখনো কোথায় অতি উল্লাসীত দেখায়নি তাকে। সর্বদা মেপে মেপে কথা বলার মত অদ্ভুত স্বভাবের এক ভিষন পরিচিত মানুষটি যখন বদলাতে শুরু করে তখন তা সবার নজর একটু আধটু কাড়ে।স্রোতের কথার প্রতি এক্সট্রা কেয়ার সবার চোখেই পড়েছে।এমনকি কথার বাবা মায়ের।তারা কখনো দুই ভাইয়ের সন্তানদের মধ্যে পার্থক্য করেনি যার ফলে তাদের সুখে থাকার প্রাধান্য টাই বেশি তাদের কাছে।স্রোতের কথার প্রতি দুর্বলতা কথার মত বাচ্চামো মন না বুঝলেও বাকিরা বোঝে। তাই সবাই বিয়েতে একমত পোষন করলেন।
#চলবে….