তুমি নামক যন্ত্রণা পর্ব-১৭(অন্তিম পর্ব)

0
1685

#তুমি নামক যন্ত্রণা
#লেখনীতেঃ হৃদিতা ইসলাম কথা
অন্তিম পর্ব

দীর্ঘ আটমাস পর।অনেক কিছু বদলে গেছে। সময় প্রবাহমান।নদীর স্রোতের মত প্রবাহিত সে।কারো জন্য থেমে থাকে না।সে তার নিজ গতিতেই চলে। যেন চোখের পলকেই অতিবাহিত হলো দীর্ঘ আটটি মাস। ভালোবাসার, ভালোলাগার মুহুর্তগুলো বুঝি এভাবেই কেটে যায়। এই আটমাসে স্বামী নামক মানুষটার ভালোবাসাগুলোই উপলব্ধি করেছি।তার প্রতিটা পাগলামি মেনে নিয়েছে।তার ভালোবাসায় ঘেরা মুহূর্তগুলোকে স্মৃতির পাতায় বন্দী করেছি।

বেলকনিতে রাখা চেয়ারটাতে বসে আনমনেই কথাগুলো ভেবে চলেছি আমি। এখন সময় বিকাল ৫ টা।খুব সুন্দর একটি সময়।মাথার উপর সাদা মেঘ পেজা তুলোর মত উড়ে বেড়াচ্ছে।রোদ প্রায় নেই বললেই চলে।পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে আপনমনে।মৃদু বাতাসে শীতলতার ছোয়া।ভালো লাগছে। সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ।মানুষের মন ভালো থাকলে সব কিছুই ভালো লাগে।আর আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন, খুশির দিন। প্রতিটি মেয়ের জীবনেই এই দিনটা আসে।সবাই নিশ্চয় এতটাই আনন্দিত হয় যখন সে জানতে পারে তার ভিতরেও একটা সত্তা বেড়ে উঠছে।তারই রক্তমাংসে খেয়ে একটু একটু করে নিজের অস্তিত্বের জানা দিচ্ছে।ভাবতেই চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।আমি নিজে এতটা খুশি উনি ঠিক কিভাবে রিয়েক্ট করবেন।কথাটা জানার পর আমি নিজেই বাকহারা হয়ে গেলাম।সেক্ষেত্রে উনার কথা কল্পনা করতে পারছি না।ঠিক কতটা খুশি হবেন উনি।
পেটের উপর আলতো হাত রেখে অনুভব করলাম আমার অনাগত সন্তানকে।মুচকি হেসে বললাম,

— তোর বাবাইকে আমরা সারপ্রাইজ দিব।বল তো কি করা যায় বেবি? কি এমন করবো যাতে সে অবাক হবে।হঠাৎ করে তোর আগমনের সুমধুর বার্তা শুনে।নিশ্চয় আনন্দে আত্মহারা হবে সে!

বিকালের এই স্নিগ্ধ মোহনীয় রুপ দর্শনের সাথে সাথেই পরিকল্পনা করলাম তাকে চমকে দেওয়ার।পুরো ঘর সুন্দর করে সাজালাম।আমাদের রুমটাকে একটা ছোট্টখাটো বেবি নার্সারী বানিয়ে ফেললাম।
তার আসার সময় হলে আমি বেলকনিতে চলে গেলাম।উনার ক্যান্ডেলের ডেকোরেশন ভিষন পছন্দ। তাই সেভাবেই করলাম সবটা।

অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে ঢুকতেই তিনি ডেকোরেশন দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।হঠাৎ এতকিছু বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি।বাড়িতে কেউ এবিষয়ে কিছুই জানে না।জানানো হয়নি কাউকে। আমি চাই এত বড় খুশির সংবাদ সবার আগে উনি জানুক।উনি আস্তেধীরে এগিয়ে আসছেন ঘরের ভিতর ভ্রু যুগল ঈষৎ কুচকানো।এত সাজানো দেখে চমকে গেছেন বেশ।পরপর তিনটে টেবিলে তিনটা চিরকুট সাথে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা সারপ্রাইজ। উনি ঘরে ঢুকেই প্রথম চিরকুটটা হাতে নিলেন।
তাতে লেখা”আপনার বহু আকাঙ্খিত উপহারটি খুব শ্রীঘ্রই পাবেন আপনি”
উনি হয়তো বুঝতে পারলেন না।কৌতূহল চোখে এদিক ওদিক তাকালেন।আমি জানি আমাকে খোঁজার প্রচেষ্টা।
উনি ঢাকনা সরাতেই এক জোড়া ছোট্ট জুতো দেখতে পেল।তখনও উনার মস্তিষ্ক আসল ব্যাপারটা ধরতে পারলো না।আর এ সবটাই বেলকনির আড়াল থেকে দেখে চলেছি আর মিটিমিটি করে হাসছি।উনি আবারো একটু এগিয়ে দ্বিতীয় চিরকুটটা হাতে নিলেন।সেখানে লেখা ” আপনার কথিত আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম দ্বিতীয় উপহারটি দিতে চলেছি আপনাকে”
উনি ঢাকনা সরাতেই সেখানে একটা কিউট কাপলের কোলে একটা ছোট্ট বেবিসহ কাচের সোপিচ।ওখানে ছোট্ট করে লেখা হ্যাপি ফ্যামিলি।উনার মুখভঙ্গি দেখে এখন কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তবে আমার মুখের হাসি সরেনি।এবার উনি তৃতীয় টেবিলের কাছে এসে পরতেই আমি চলে গেলাম রেলিং এর কাছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। উনি কিন রিয়েকশন দেবে সে কথা ভেবে উত্তেজনায় পাগল হয়ে যাচ্ছি।নিজেকে সামলে সামনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম।অপরদিকে উনি শেষ চিরকুট হাতে নিতেই বিস্মিত হয়ে দাড়িয়ে রইলেন,

সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ” ইউ আর গোয়িং টু বি ফাদার ভেরি সুন।”

স্রোতের চোখের কোনে জ্বল চিকচিক করছে।এত বড় সারপ্রাইজ এমন আচমকাই পাবে। ভাবনার বাহিরে ছিল স্রোতের।ও এবার শেষ ঢাকনাটা সরাতেই প্রেগন্যান্সি কিটটা পেল।সেখানে দুটো দাগ স্পষ্ট প্রমান হয়ে জলজল করছে।এবার আর চোখের পানি বাধ মানলো না খুশিতে আত্মহারা হয়ে একেবারে কেঁদেই দিল ও। মন মস্তিষ্ক শুধু একটা কথাই বিরাজমান।
“তুই বাবা হতে চলেছিস স্রোত! খুব শ্রীঘ্রই তুই বাবা হতে চলেছিস!তোর একান্ত নিজস্ব অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে কথার কোল জুড়ে।”

আনন্দে আপ্লূত হয়ে জলভরা চোখে বেলকনির দিকে চোখ দিল।দরজা খোলা দেখেই বুঝে গেছে।আমি এখানেই আছি।তিনি বড় বড় পা ফেলে বেলকনির দরজা অবধি ছুটে গেলেন।দরজায় পৌছে থেমে গেল তার পা।অস্থিরতায় বুদ আমি পেছনে ফিরলাম।তিনি আমার দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকালেন।তারপর পেটের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। একটু একটু করে এগিয়ে আমার সামনে এলেন।পেটের উপর আলতো হাতে স্পর্শ করলেন।তিনি আবেগপ্রবন হয়ে নিশ্বাস ছাড়লেন।যেন এতক্ষন তার নিশ্বাস আটকে ছিল।আঁখিতে এখনও জলকনা বিদ্যমান।আমার চোখের দিকে একপলক তাকিয়ে বসে পড়লেন হাটুমুড়ে।পেটের উপর আলতো করে চুমু খেলেন।তারপর পেটে মুখ গুজে রইলেন।আজও তার স্পর্শে প্রথম দিনের মত কেঁপে উঠলাম ।তার এমন পাগলামি আর উল্লাসিত মুখশ্রী আগে দেখেনি আমি।হয়তো তার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহারটাই আজ পেল সে।সে খুশি ধরে রাখতে পারছে না।উঠে দাড়িয়ে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বললেন,

— আজকে আমাকে তুমি ঠিক কতটা খুশির জোয়ারে ভাসিয়েছো তা বলে বোঝাতে পারবো না কথা।আমাদের দুজনের অংশ তোমার গর্ভে লালিত হচ্ছে। আমি বাবা হচ্ছি।বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। উত্তেজনায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার।

— আপনি খুশি হয়েছেন।

— আমি খুশির পরিমান যদি আমার জানা থাকত তবে অবশ্যই তোমাকে বলতাম।তবে আমি তা জানি না।আমার খুশি তো সীমাহীন।তাই তোমাকে বোঝাতে পারবো না।আমাদের ছোট্ট বেবি আসবে।সে আধো আধো স্বরে আমাকে বাবা বলে ডাকবে আর তোমাকে মাম্মাম।ভাবতে পারছে কথা।তার ছোট্ট ছোট্ট হাত।এই ঘরটাতে তার ছোট ছোট পায়ের বিচরন চলবে।সবাইকে মাতিয়ে রাখবে সে।আমাদের পরিবারের পূর্নতা এনে দিবে সে।

আমি হেসে তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললাম,

— খুব যত্ন করে আগলে রাখবো তাকে।পরম আদরে লালন করবো।

এভাবেই কাটলো অপার আনন্দের মিষ্টি মুহূর্তগুলো।
সকাল হতেও সারা বাড়িতে ছড়িয়ে গেল কথা।সবাই ভিষন খুশি।আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল।আবেগ প্রবন হলো সবাই।আমাদের একসাথে সুখী হতে দেখে।বাবা মায়ের কথা আর কি বলবো।বড় আব্বু বড় আম্মুকে বিয়ের পর থেকেই বাবা মা বলেই ডাকি।তাদের কড়া আদেশ বড় আব্বু বড় আম্মু বলা যাবে না।নয়তো কান মুলে দেবে।বাড়িতে ছোট্ট বেবি আসবে সে নিয়ে কত আয়োজন তাদের। মা তো ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য এখন থেকেই কেনাকাটা করছে।বলা তো যায় না কোন বেবি আসলো।বাবাও কম নয়।ও বাড়িতে খবর পৌছে গেল।সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে।খুশির খবর শুনে তিশা আপুও ছুটে এলো শ্বশুর বাড়ি থেকে।দুমাস হলো তার বিয়ের।দুমাস আগে জিজু আসাতে ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করেছে স্রোত।নীলা আর আহান ভাইয়ার বিয়ের কথা চলছে।তবে নীলা তাকে একদমই সহ্য করতে পারে না।কেমন হবে তাদের পরবর্তী জীবন। তাদের বিবাহিত জীবন কি পাবে প্রনয়ের স্বাদ।যা আমরা পেয়েছি।অন্যদিকে মৃদুল ভাই আর তন্নি চুটিয়ে প্রেম করছে।সবাই ভালো আছে ভিষন ভালো।আমার খুশির সংবাদ পেয়ে সবাই ছুটে এলো। সবাই একসাথে ভালো সময় কাটালাম।এখন থেকেই রান্নাঘরের ছায়া মাড়ানো নিষিদ্ধ হলো আমার।উনার যত্নও হাজার গুন বেড়ে গেল।আমাদের দিনগুলো সুখেই কাটছে।আর কি চাই? একটা মেয়ের জীবনে সব চাওয়া পাওয়ার থেকেও সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো খুব করে ভালোবাসতে আর যত্ন করে আগলে রাখতে পারবে এমন একজন মানুষ।এমন একজন স্বামী। মহান আল্লাহ আমার প্রতি সদয় হয়ে তা আমাকে দান করেছেন।আর কি চাই আমার।চাওয়া পাওয়ার সবটাই পেয়েছি।এতেই শুকরিয়া।আলহামদুলিল্লাহ। বাকি জীবনে এইভাবেই তার ভালোবাসার বন্ধনে বেধে থাকতে চাই।তার ভালোবাসা অনুভব করতে চাই ।

.
সময়ের স্নোতধারায় অতিবাহিত হলো আরও দুবছর।আমাদের একটা রাজপুত্রের মত ছেলে হয়েছে। স্রোত ভিষন ভালোবেসে নাম রেখেছে তানভীর আহমেদ কল্প। কল্প আসার পর এবাড়িতে রমরমা ভাব চলে এলো।সবাই তাকে নিয়ে মেতে থাকতো।ছেলের বাবার অভিযোগ ছেলে তার ভাগের আদর কেড়ে নিচ্ছে।তার আদর কম পড়ে যাচ্ছে। বাবুর আম্মু এখন আর তাকে ভালোবাসে না। কাছে আসে না।মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না।সময় দেয় না।আরো কত বাহানা।অথচ তিনি যে সারাক্ষণ ছেলেকে মাথায় করে রাখছে তার বেলা কিচ্ছু
না।তবে তার আদর নামক পানিসমেন্টের চুড়ান্ত প্রতিশোধ নিয়েছে আমি।খুব জ্বালিয়েছে এতদিন আমাকে।আমিও ছাড় দেয়নি।রাত বেরাতে বাইরে পাঠাতাম। দুর্লভ খাবারের আবদার করতাম।সে খানিক বিরক্ত হলেও প্রকাশ করত না।রাত দুটো তিনটে বাজে ঘুম থেকে উঠিয়ে বসিয়ে রাখতাম।ঘুম আসছে না গল্প করবো।তার কিছু বলার সাধ্য ছিল না। একেতো আমার ইনোসেন্ট ফেস উপরন্তু বাবা মায়ের কড়া নির্দেশ আমার মেয়ের যেন কোন কষ্ট না হয়।ইতোমধ্যে আব্বু আম্মুও কয়েকবার এসেছে।লং জার্নিতে অনুমতি ছিল না কারোরই।তাই অতি পরিচিত আর ভালোবাসার শহরটিতে যাওয়া হয়ে উঠেনি।

.
দেখতে দেখতে সময়গুলো কেটে গেছে।তবে প্রতিটি মুহুর্তে স্রোতের ভালোবাসা আমাকে নতুনত্যের ছোয়া দিয়েছে।কল্পের এখন একবছর চলছে।বেশ দুষ্টু সে।বাবার আদরের রাজপুত্র বাবা এলে একদম শান্ত।অথচ মাকে সারাদিন জ্বালাবে।আধো আধো স্বরে কথা বলে। আমাকে মাম,স্রোতকে অস্পষ্ট স্বরে বাবাই,আর বাবাকে দাদাই,মাকে এখনো ভালো করে ডাকতে শেখেনি।ওর মিষ্টি স্বরে সবার হৃদয় জুড়িয়ে যায়। ভালো করে হাটতে শেখেনি এখনো।সবার চোখের মনি।সবাই তাকে চোখে হারায়। আজ আমাদের রাজপুত্রের জন্মদিন ছিল।সারাদিন পার্টিতে সবাইকে এটেন্ড করে বেশ ক্লান্ত।তাই তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।তিশা আপুও প্রেগন্যান্ট। যা কালই আমরা জানতে পেরেছি। সবাই আনন্দিত এমন খুশির সংবাদে।দুটো সেলিব্রেশনই একসাথে হলো।নীলা আর আহান ভাইয়ার বিয়ে দেড়মাস চলছে।তাদের সম্পর্কও ভালোই চলছে।একে অপরকে ভালোবাসতে শিখে গেছে।চোখে হারায় দুজন – দুজনকে।

কল্পকে শুইয়ে দিয়ে বেলকনিতে এসে দাড়াতেই হু হু করে ছুটে আসা তীব্র বাতাসের ঝাপটা গায়ে লাগতেই শরীর হীম হয়ে এলো।ঠান্ডা বাতাসের দাপটে মৃদু কাপছি আমি।ঠিক সেসময়ই পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো আমার স্বামী মহাশয়। আমার ভালোবাসা।আমার প্রান।তার কাধে পেছন থেকেই মাথা হেলিয়ে দিলাম।আকাশে কালো মেঘ জমেছে।বাতাসের তীব্রতা জানান দিচ্ছে আজ ঝড় হবে।ঝুম বৃষ্টিতে মেতে উঠবে ধরনী।স্মৃতির পাতায় উঁকি দিতেই দেখা মিললো এমনই একটি মনোমুগ্ধকর রাতে একে অপরের কাছে আসা,একে অপরকে আপন করে পাওয়ার চিত্র ফুটে উঠলো।

ঠোঁট যুগলে মিহি হাসির চিহ্ন ফুটে উঠলো। উনি আমাকে সেভাবেই জরিয়ে রেখে আমার কানের কাছে এসে নেশাক্ত গলায় বললো,

— মনে পড়ে কথা। এমনই একটি রাত।এমনই এক বর্ষনময় রাতে আমরা দুজন – দুজনকে পেয়েছিলাম।আমার বৃষ্টিবিলাসীনির বৃষ্টি বিলাসের সেই স্নিগ্ধ রুপের
সম্মোহিত রুপে নেশাক্ত হয়েছিলাম।

–হু।মনে আছে। আজও বর্ষনের রাত।আর আজও আপনার বৃষ্টিবিলাসীনি তার প্রিয়তম মানুষটিকে নিয়ে বৃষ্টি বিলাসে মগ্ন হতে চায়।

— সো লেটস গো মেরি জান।অপেক্ষা কিসের! তোমার সাথে বৃষ্টি ভেজা মুহূর্ত উপলব্ধি করতে এই অধম সদা তৎপর।

উনার কথায় হেসে উঠলাম আমি।উনি হুট করেই কোলে তুলে নিলেন।অপ্রস্তুত ছিলাম আমি।হেসে গলা জড়িয়ে ধরতেই পা চালালেন উনি।গন্তব্যে পৌঁছাতেই উনি নামিয়ে দিলেন।দুহাত মেলে প্রানভরে নিশ্বাস নিচ্ছি।ঝড়ো হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া কেশ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, প্রেয়সীর মাতাল করা হাসি।আবহাওয়াটাই এত রোমান্টিক বলে বোঝানো যাবে না।সেই উচ্ছ্বাসিত,প্রনোচ্ছল চঞ্চলা অপরুপ নারীর দিকে মুগ্ধতা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো স্রোত।এই বাচ্চা মেয়েটিতে ভয়াবহভাবে আসক্ত সে।এই তীব্র আসক্তি থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই আর না ও চায়। শুধুমাত্র হৃৎস্পন্দনের থেমে যাওয়ায় এই আসক্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে।ঘোর লাগানো চোখে প্রিয়তমা স্ত্রীর চঞ্চলা রুপে সম্মোহীত হয়ে নিনির্মেষে পা বাড়ালো স্রোত।ততক্ষণে ঝুম বৃষ্টি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ছে।খুশিতে একপ্রকার নাচতে শুরু করে দিলাম আমি। মুগ্ধ হয়ে ঘোরের মাঝেই হাতে টান লাগালো স্রোত।একবারে তার বুকের মধ্যে খানে স্থান পেলাম।গুটিসুটি মেরে পরে রইলাম সেখানে।ইশশ! কি শান্তি! প্রিয় মানুষটির বুকে বুঝি এতই শান্তি অনুভব হয়! আমিও কি বোকার মত করে বলছি। পৃথিবীর সবথেকে প্রশান্তি তো তার বুকের মাঝে।এতগুলো দিন তো সেখানেই পার করলাম।তার বুকে মাথা না রাখলে ঘুম হয় না আমার।ছটফট করতে থাকি।বাড়িতে ফিরতে একটু দেরি হলে অস্থির হয়ে উঠি আমি।একেই ভালোবাসা বলে।আমার অবাধ্য অনুভূতিকে প্রশয়ের নামই ভালোবাসা।

উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে মোহময় কন্ঠে বললেন,

— বাতাসে আজ সুবাস পেয়ে
মন হয়েছে চঞ্চল
আসলে বুঝি আমার শহরে
থামিয়ে সব কোলাহল।
চলো না আজ হারিয়ে যায়
বৃষ্টিভেজা এই মুহূর্তে
আজ তোমাকে রাঙাই
আবারো আমার প্রেমের রঙে।

উনি আমার দুগার ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে প্রগাঢ় কন্ঠে বললেন,

— তুমি শুধু আমার।কেবলই আমার।আমি #তুমি_নামক_যন্ত্রণায় অনলে পুড়তে চাই।ঝলসে যেতে চাই। যেন তোমার ভালোবাসার গভীরতম স্পর্শে সে ক্ষত সেরে উঠার সুযোগ পায়।তোমার ভালোবাসা পাবার তরে বারবার #তুমি_নামক_যন্ত্রণায়! তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হতে চাই।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে