তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব-২৯ এবং শেষ পর্ব

0
1999

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#অন্তিম_পর্ব
Tahrim Muntahana

চারদিন হলো বিয়ে উপলক্ষ্যে সবাই রিসোর্টে চলে এসেছে। পুরো দমে রিসোর্ট সাজানোর কাজ চলছে। রিসোর্টের এক বিল্ডিং এ মেয়েরা আরেক বিল্ডিং এ ছেলেরা আরেক বিল্ডিং এ বয়োজেষ্ঠরা আরেক বিল্ডিং এ আত্মীয় দের জন্য রাখা হয়েছে। সব গোজগাজ করে নিয়েছে এসেই। এরমধ্যে কয়েকজায়গায় ঘুরাঘুরি ও শেষ। আজ দুপুরে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে আর সন্ধ্যায় মেহেন্দি। স্টেজ সাজানো শেষ। সবাই রেড়ি হয়ে বসে আছে এখন শুধু কনেদের আসার পালা।
কথা বলার মাঝখানেই হঠাৎ করে বরেরা উঠে নিজেদের রুমের দিকে হাটা দিলো।
রুমে এসেই একজনকে ফোন দিয়ে কথা বলি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

হৃদিতা রা সবাই সবুজের বাসন্তি পাড়ের শাড়ি পড়ে গায়ে ফুলের গহনা পড়ে বসে ছিলো। রাহি আর আরিয়া সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে নিজেরাও বের হয়ে গেছে।হৃদিতারা কিছু না বুঝে বের হতে যাবে তখনি বেলকনি তে কয়েকটা পায়ের শব্দ শুনে থেমে গেলো। উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই। একে একে রুমে প্রবেশ করলো হৃদান পিয়াস পরশ সাগর আহিল। ওদের রুমে দেখে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। নিজেদের প্রেয়সীদের এমন রিয়েকশন দেখে বাঁকা হেসে এগিয়ে গেলো। সাথে সাগর একটা থালায় হলুদ নিয়ে এসেছে সেটাও বের করে যার যার প্রেয়সীকে হলুদ লাগালো। হৃদানের তো হার্টবিট মিস হয়ে গেছে হৃদিতাকে এই সাজে দেখে। বেশীক্ষণ দেরী না করে আবার চলে আসলো।
___________

হাসি মজার মধ্যে দিয়ে হলুদ মেহেন্দি সব শেষ হয়েছে। আজ বিয়ে সবাই ছুটোছুটি করছে কাজের জন্য। অনেক প্রতিক্ষার পর এই সময়টা আসলো। কারো বারো বছরের অপেক্ষা, কারো চার বছরের অপেক্ষা, কারো সাত বছরের অপেক্ষা আবার কারো কিছুসময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেই সময় টা আসলো। হৃদান তো পার্লারের মেয়েদের একপ্রকার থ্রেট দিয়েছে তার হৃদপরীকে যেন ন্যাচারাল ভাবে সাজায় কোনো প্রকার মেইকাপের প্রলেপ যেন না থাকে। অন্যদিকে রাইসা রোহানি অরনি সেজেই যাচ্ছে তো সেজেই যাচ্ছে। রিয়া সাজ কমপ্লিট করি সেলফি উঠছে। ওদের কথা হলো বিয়ে তো একবার ই করবো মজা না হলে হবে। নিজেদের বিয়েতে নিজেরাই মজা করবো।

সবার সাজ কমপ্লিট হলে বড়রা ছোটদের পাঠিয়ে দিলো কনে আর বরদের দের আনার জন্য। কবুলের আগে কেউ কারো মুখ দেখতে পারবে না। মাঝখানে বড় সাদা একটা পর্দা টানানো। কনেদের দেখে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ বরেররাও কম যায় না। মেইড ফর ইচ আদার।
কাজি আসলো বিয়ে পড়ানোর জন্য। আগে পরশের বিয়ে পড়ানো হবে কিন্তু বাঁধ সাধলো হৃদান। নাহ আগে ওর বিয়ে পড়াতে হবে। সবার থেকে ও বেশী অপেক্ষা করেছে এই দিন টার জন্য তাই সবার আগে কবুল শব্দটা সে বলবে। হৃদানের বাচ্চাতের মতো জেদ করা দেখে চারদিকে হাসির রোল পড়ে গেলো। হৃদানের পাগলামি দেখে হৃদিতাও হাসছে আবার লজ্জাও পাচ্ছে। হৃদান হৃদিতারই বিয়ে আগে হবে ঠিক হলো। কাজি একবার কবুল বলতে বলছে হৃদান একসাথে তিনবার ই বলে দিছে, হৃদিতাও কম যায় না একটু থেমে নিজেও গড়গড় করে বলে দিয়েছে। এইভাবে সবাই খুব তাড়াতাড়ি কবুল বলায় সবাই বুঝে গেছে এরা কত বিয়ে পাগল। হবেই না কেন কতদিনের প্রতিক্ষা। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর মাঝখানের পর্দাটা সরিয়ে দিলো। সরিয়ে দিতেই বরেদের মুখ তো হা হয়ে গেলো। কোনো দিকে ধ্যান নেই দেখেই যাচ্ছে তো দেখেই যাচ্ছে। কনেরাও ক্রাশ খেয়ে গেছে নিজেদের বরদের দেখে। বিয়েতে ছবি না উঠলে কি চলে। লজ্জাসরম ভুলে একেরপর এক পোজ নিয়ে ছবি উঠছে জুটিগুলো। ওদের দেখে মনেই হচ্ছে না পরিবার ছেড়ে চলে যাবে। ওদের কথা হলো বিদায়ের সময় তো কান্না করবেই এখন মন খারাপ করে কি লাভ। এনজয় করতে হবে তো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই কাজিন গোষ্ঠীরা কনেদের যার যার বরাদ্দকৃত বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসে। দুয়েকজন করে সবার ঘরের সামনেই দাড়িয়ে ছিলো টাকার জন্য। বরেরা দেড়ী না করে সাথে সাথেই দিয়ে বাসর ঘরে ঢুকে ঠাসসস করে দরজা বন্দ করে দিয়েছে। আজ অনেকদিনের অপেক্ষার পর নিজের প্রেয়সী কে আপন করে পেয়ে হয়তো কেউ ভালোবাসা সিক্ত হচ্ছে কেউ হয়তো জোসনা বিলাস করছে আবার কেউ হয়তো হাত হাত রেখে নানা গল্পে মেতে উঠেছে।
_________________

রিসোর্টেই রিসেপশন হয়ে গেছে। এখন প্রায় রাত নয়টা বাজে। আজকে কনেরা বিদায় নিবে। কনেদের সবার মুখ কালো হয়ে আছে। বিশেষ করে হৃদিতা। পরশ যে নিজে বিয়ে করেছে তার কোনো লক্ষণ ই নেই বোনের জন্য কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে একটা করে ফেলেছে নাশিন ও তেমন। ঠিক যাওয়ার আধাঘন্টা আগে থেকেই হৃদিতা আর রিয়া পরশ আর নাশিনকে জড়িয়ে ধরে আছে, ছাড়ছেই না। কান্না পাচ্ছে কিন্তুু হৃদানের চোখ রাঙানিতে কাঁদতেও পাচ্ছে না। হটাৎ হৃদান সবার মাঝেই হৃদিতার জন্য এক গ্লাস শরবত নিয়ে আসলো। তা দেখে সবাই মন খারাপের মাঝেও হেসে দিলো।

হৃদপরী সেই কখন খেয়েছো এখন এই শরবত টুকু খাও ভালো লাগবে

না আমি খাবো না। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না

আমি তোমার কথা শুনতে চাইনি আমি অর্ডার করছি তোমাকে

প্লিজ

হৃদান রেগে তাকাতেই হৃদিতা ঠাসস করে গ্লাসটা নিয়ে এক চুমুকে খেয়ে নিলো। হৃদান মুচকি হেসে গ্লাসটা সারভেন্টের কাছে দিয়ে দিলো। খাওয়ার পর হৃদিতা ওর পাপা মমের কাছে যাবে তার আগেই পরশের বুকের উপর ডুলে পড়লো। উপস্থিত সবাই ভয় পেয়ে গেছে হঠাৎ কি হলো। কিন্তু হৃদানের কোনো ভাবান্তর নেই। পরশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই হৃদান টুক করে হৃদিতাকে কুলে তুলে নিলো

চিন্তার কিছু নেই হৃদপরী এখন ঘুমাচ্ছে -হৃদান

মানে -পরশ

মানে তোর বোনের চোখের পানি আমার সহ্য হয়না। এতক্ষণ কান্না করতে চাইছিলো কিন্তু আমার জন্য পারেনি। এখন দেখলাম কন্ট্রোল করা যাবে না তাই একটা স্লিপিং পিল খাইয়ে দিয়েছি আবাদত তিনঘন্টার আগে ঘুম ভাঙবে না। মামুনি বাবাই তোমাদের মেয়ে নিয়েগেলাম। কালকেই চলে আসবো শশুড় বাড়ি। চিন্তা করো না আসি

হৃদানের কথা শুনে সবাই তাজ্জব হয়ে গেছে কি বলে এই ছেলে। এত বউ পাগল কেউ দেখে নি। হৃদানের দেখাদেখি সব বরেরাই নিজেদের প্রেয়সী কুলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো। সবাই আর কান্না করবে কি দেখেই যাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। সব গাড়ি ছেড়ে দিলো একে একে। সবাই চলছে নতুন গন্তব্যে। এখন থেকে সব জুটি তাদের তুমি নামক অক্সিজেনে মিশে যাবে। প্রতিজ্ঞা বদ্ধ যে।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে