তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব-২৭+২৮

0
1629

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৭
Tahrim Muntahana

কি রশিদ তোর তো খবরই নেই -আহিলের আব্বু

কবির ! তোর ও তো খবর নেই -রোহানির আব্বু

তা ছেলে তো বুডো হয়ে যাচ্ছে পাকা কথা বলতে কবে আসবো -আহিলের আব্বু

কবির খানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলো। কথা কি হলো আর সে কি বলছে। পরক্ষণেই ঠোঁটে দুষ্টু হাসি দেখে সবাই বুঝলো মজা করছে বন্ধুর সাথে। কিন্তু অপর প্রান্তের মানুষটা তো চুপসে গেছে সেটা আর কেউ না বুঝলেও হৃদান ওরা ঠিক বুঝতে পেরেছে। পরশের মুখে তো শয়তানি হাসি। হবু শশুড় কে জব্দ হতে দেখে বেশ মজা পাচ্ছে।

কিরে রশিদ কথা বলছিস না কেন? আচ্ছা তুই কি কোনো ভাবে মত পাল্টেছিস। দেখ তোকে আগেই বলে রাখছি আমার ছেলে কিন্তু তোর মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছে এখন পিছিয়ে গেলে চলবে না। কবে আসবো তাই বল -আহিলের আব্বু

আসলে -রোহানির আব্বু

কি আসলে আসলে করছিস অন্যসব কথা পরে হবে আগে বল আমার বউমা কে কবে নিয়ে আসবো -আহিলের আব্বু

রোহানির আব্বু পড়ে গেল ফ্যাসাদে। পাশে বসে আছে রোহানির আম্মু। সব কথায় শুনতে পারছে সে। রোহানির আব্বুর এভাবে চুপসে যাওয়া মুখ দেখে সে মুখ টিপে হাসছে। রোহানির আব্বুকে আর কিছু বলতে না দিয়েই নিজে ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো

আসসালামু আলাইকুম ভাইসাহেব

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ভাবি। কেমন আছেন বলুন

আলহামদুলিল্লাহ ভাইসাহেব আপনি কেমন আছে। আপা কেমন আছে

সবাই ভালো আছে ভাবি। আমার মা টা কেমন আছে

ভালো আছে। ভাই সাহেব আপনাকে আহিল কিছু বলে নি

না তো কি বলবে

আসলে হয়েছে কি আমরা তো নিজেরা বিয়ে ঠিক করে রেখেছি এখন মেয়ে অন্য একজন কে ভালোবাসে। শুনলাম আহিল বাবাও অন্য কাউকে ভালোবাসে। এখন কি করে বিয়ে হবে বলুন। জোর করে দিলেও তো সুখি হবে না। তাই বলছিলাম কি

কথা শেষ হওয়ার আগেই পিয়াস কবির খানের পাশে গিয়ে বসলো।

শাশুড়ি আম্মু আপনার হিটলার বর কে ফোন টা দিন তো

পরশের কথা শুনে রোহানির আম্মু সহ উপস্থিত সবাই ফিক করে হেসে দিলো আর রোহানির আব্বু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।

এই এই বেয়াদপ ছেলে তোমার সাহস তো কম না

শশুড় আব্বু এভাবে বলবেন না দিনশেষে আপনার মেয়েই কষ্ট পাবে

তোমার কাছে আমার মেয়েই বিয়ে দিবো না। দেখি কি হয়

আচ্ছা শশুড় আব্বু আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু কাল খবরের কাগজের ফন্ট পেইজে একটাই খবর দেখতে পারবেন

কি

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রশিদ হাসানের একমাত্র মেয়ে রোহানি হাসান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাওসার আনাফের একমাত্র ছেলে পিয়াস আনাফের সাথে পালিয়ে গেছে। জানা গেছে চার বছরের ভালোবাসার সম্পর্কে একমাত্র ভিলেন হয়ে দাড়িয়েছে মেয়ের বাবা স্বয়ং রশিদ হাসান। তার ভিলেন হওয়ার একমাত্র কারণ হলো ছেলের মানে পিয়াস আনাফের সততা। সততার কারণে পিয়াস আনাফ তার একমাত্র হবু শশুড় কে হিটলার বলায় রশিদ হাসান ক্ষেপে গিয়ে মেয়েকে রুমে আটকে রেখে টর্চার করছে।

হোয়াটটটটটটটট। আমি আমার মেয়েকে টর্চার করি

আরে শশুড় আব্বু এত হাইপার হচ্ছেন কেন। টর্চার বলতে কি শুধু শারীরিক আঘাত ই? আপনি যে আপনার মেয়েকে রুমে আটকে রাখবেন আমার কাছে আসতে দিবেন না এর থেকে মানসিক টর্চার আর কি আছে শশুড় আব্বুউউউউউ

তুমি আমার পিছে লাগছো? তোমার সাহস আছে বলতে গেলে। আমি তোমাকে মেনে নিলেও শুধু মেয়ের জন্য নিবো কারণ আমার মেয়ে আমার কলিজা। ওর কষ্ট আমি দেখতে পারি না তাই তোমাকে মেনে নিচ্ছি। আমার তোমাকে একদম পছন্দ না তাই শশুড় আব্বু শশুড় আব্বু বলবে না একদম

তাহলে কি বলে ডাকবো? নাম ধরে তো ডাকতে পারবো না তাহলে আব্বু বলে ডাকি শশুড় বাদ। ওকে আব্বুউউউউ

তোমাকে তো আমি…. আমার মেয়ের যদি কোনো কষ্ট হয় সেদিন আমার আসল রূপ দেখবে মনে রেখো

আপনার হিটলার রূপ তো আগেই দেখেছি, আব্বুউউ আর কোন রূপ দেখাবেন

তোমার সাথে কথা বলায় বেকার। কাল তোমার আব্বু আম্মু কে আসতে বলবে। এখন কবির কে ফোন দাও

ধমকে বলে উঠলো রশিদ হাসান। উপস্থিত সবাই বহুত কষ্টে হাসি আটকে রেখেছে। রাইসা মুখে কুশন দিয়ে রেখেছে। আর পারছে না হাসি আটকাতে। ওর অবস্থা দেখে সবার আরো হাসি পাচ্ছে।

আব্বুউউউ আমার মতো মাছুম ভোলা ভালা জামাই পাচ্ছেন সেটা আপনার দাদুর সৌভাগ্য তাও আমাকে বকছেন হুমম ভালো হবে না

বলেই কবির খান কে ফোন দিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। ওর ও খুব হাসি পাচ্ছে। কবির খান হাসি হাসি মুখ থেকে মুখটা স্বাভাবিক করে গলা পরিষ্কার করে ফোন নিলো

হ্যাঁ বল

তুই ও এতক্ষণ আমার সাথে মজা নিলি তাই। ওই বেয়াদপ টা তোকে শিখিয়ে দিয়েছে আমি বুঝতে পারছি। যাই হোক শুনলিই তো তোর ভাবি কি বললো। আর আগাতে পারবো না তাই আগেই বলে দিলাম।

আচ্ছা আচ্ছা এত রাগ করছিস কেন সরি যা। শুন বিয়ে তাহলে একসাথেই হবে। আহিলের বিয়েটাও ঠিক করে রাখবো কাল পরশুর মধ্যে।

আচ্ছা এখন রাখছি ভালো থাকিস। বেয়াদপটা মুড ই নষ্ট করে দিয়েছে

আর যাই বলিস সোনার টুকরা জামাই পাচ্ছিস। বেয়াদপ বেয়াদপ করছিস কেন

ওই কবির শোন না ওরা কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে

সবাই এবার একটু নড়েচড়ে বসলো। হৃদান ইশারা করে বললো যাতে স্বীকার না করে। কবির খান তাই করলো

না না কেউ শুনতে পাচ্ছে না তুই বলনা কি বলবি

আসলে কি জানিস আমারো না ছেলেটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে। আর আমি আমার মেয়ের পছন্দ কে ভরসা করি তার মধ্যে সেখানে হৃদিতা পরশ হৃদান সহ বাকি সবাই আছে। ওদের তো আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি। আর ছেলেটা ভালো আছে। আমি খোঁজ নিয়েছি

তাহলে তুই ওমন ব্যবহার করছিস কেন

আমাকে হিটলার বললো কেন তাই আমিও হিটলার গিরি করছি

হাহাহা তুই আর বদলালি না বন্ধু সেই আগের মতোই আছিস

পিয়াস কিছু বলতে যাবে তার আগেই পরশ ওর হাত চেপে ধরলো তাই আর কিছু বললো না। কানে কানে বলল

সে তোর সামনে এইভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়ছে করতে দে তুই তো জানিস তার মনে কি

কথাটি শুনে পিয়াস মাথা ঝাঁকালো মানে সে বুঝতে পেরেছে। রোহানির আব্বু ফোনটা রাখবে তার আগেই রাইসা আর হাসি আটকাতে পারলো না। আর একটু হলেই দম আটকে যেতো। তাই মুখ থেকে কুশন টা ফেলে দিয়ে হো হো করে জোরে হেসে দিলো ওর হাসি দেখে আর সবাই ও জোরে হেসে দিলো। রোহানির আব্বু ঠিক শুনলো হাসির শব্দ। বুঝতে পেরে বন্ধুকে মনে মনে কয়েকটা গালি দিয়ে তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দিয়ে একটু দম নিয়ে নিজেই হেসে দিলো। সাথে রোহানির আম্মু ও হেসে দিলো। এতক্ষণ দরজার আড়াল থেকে রোহানি এসব শুনছিলো লুকিয়ে। মেনে নিয়েছে শুনে খুশিতে রুমে গিয়ে কতক্ষণ উড়াধুড়া নাচ করে হাক ছেড়ে আম্মুকে বলে বেরিয়ে গেলো। অন্যদিকে সবাই হেসে কুটিকুটি অবস্থা

আর যাই বলো পিয়াস ভাইয়া ফাটিয়ে দিয়েছো। আমার তো বেশ মজা লেগেছে -রাইসা

আরে দেখতে হবে না ভাইটা কার -হৃদিতা

হইছে তোমার একার ভাই না আমারো -রিয়া

বেশ মজা পেয়েছি আমরা। তোমরা আসলেই খুব ভালো। আমার তো আজকের দিনটা সারাজীবন মনে থাকবে -আহিলের ভাবি

চিন্তা করবেন না ভাবি অরনি কে শুধু আসতে দিন এই বাড়িতে। সারাটা দিন সবাই কে মাতিয়ে রাখবে নিজের দুষ্টামি তে -সাগর

সত্যি? তাহলে তো ভালোই হলো আমার বউ একটা বাদরামি করার সঙ্গী পেলো আমাকে আর বলির পাঠা হতে হবে না -আহিলের ভাই

আহিলের ভাইয়ের কথায় সবাই আরেক দফা হেসে নিলো। আহিলের ভাবি তো রেগে বোম হয়ে তাকিয়ে আছে তা দেখে আহিলের ভাই শুকনো ঢোক গিলে মেকি হাসলো কিন্তু বউ য়ের রাগকে টলাতে পারলো না। এইভাবে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো ওরা। নাস্তাও করেছে হালকা সবার জোরাজুরিতে। এর মধ্যে ঠিক করে নিয়েছে কাল পিয়াস রা রোহানিদের বাড়িতে যাবে পাকা কথা বলতে আর তার পরদিন অরনিদের বাড়িতে যাবে আহিল রা। এইভাবে সব ঠিক করে ওরা বেরিয়ে পড়লো বাড়ি থেকে। আহিল আর আহিলের ভাই ওদের একটু এগিয়ে দিলো। মেইন গেইট পেরিয়ে আসতেই সামনে তাকাতেই ওরা অবাক হয়ে এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে…

চলবে…?

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৮
Tahrim Muntahana

রোহানি খান বাড়ির সামনে গাড়ির উপরে বসে সেলফি উঠছে বিভিন্ন পোজ নিয়ে। অন্যদিকে কোনো খেয়াল ই নেই। যখন হৃদিতাদের দেখতে পেলো খুশিতে দৌড়ে পিয়াসকে জড়িয়ে ধরে গালে শব্দ করে চুমু খেলো। সবাই আহম্মক হয়ে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে এখানে রোহানিকে দেখে আগেই অবাক হয়েছে পিয়াসকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটাই সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আর পিয়াস তো এখনো হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে মুখ হা করে। রোহানি অতিমাত্রায় খুশি হয়ে কাজ টা করে ফেললেও যখন বুঝতে পারলো সবার সামনে কি করে ফেলছে তখন লজ্জা পেয়ে দৌড়ে আবার গাড়ির কাছে চলে গেলো। এটা দেখে সবাই জোরে হেসে দিলো পিয়াস ও হালকা হেসে এগিয়ে গেলো।

হৃদান অরনিকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। হৃদান অরনির ফ্যামিলির সাথেও কথা বলে নিয়েছে। সব ঠিক ঠাক। একসাথে পাঁচটা বিয়ে হবে। হৃদান+হৃদিতা, রাইসা+পরশ, রোহানি+পিয়াস, অরনি+আহিল, রিয়া+সাগর এর। অনেক কাজ। একসপ্তাহ আগেই সবাই রিসোর্ট চলে যাবে। অনেক বড় একটা রিসোর্ট বুক করেছে। ওখানে যাওয়ার আর চারদিন অবশিষ্ট আছে। তাই সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। বিয়ের কার্ড সবাই মিলে একটাই ঠিক করেছে যেখানে পাঁচজনের নাম ই আছে। সবাই প্রায় আত্মীয়দের মধ্যেই বলে কাজটা খুব সহজ হয়েছে। পরশ নাশিন হৃদান সাগর পিয়াস খুব ব্যস্ত। বিয়ের জন্য প্রায় এক সপ্তাহের বেশী অফিসে যেতে পারবে না তাই কাজগুলো করে রাখছে। আহিলের বড়ভাই থাকায় তেমন কোনো প্রেশার যাচ্ছে না ওর উপর। সেই সুযোগে অরনির সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে। হৃদান ওরাও কম যায় না কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঠিক প্রেয়সীর খোঁজ খবর নিচ্ছে। হৃদিতা ওরা ভিষন ব্যস্ত। পড়াগুলো কমপ্লিট করে রাখছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিযোগীর অভাব নেই তাই নো রিস্ক।

মধ্যে কেটে গেছে দুইদিন। রাহিকে অনেক কষ্টে সোহান বুঝিয়েছে যে মেয়েটা ওর বোন হয়। নাথিং এলস। এক্ষেত্রে হৃদান ওরাও সাহায্য করেছে। রাহিও মেনে নিয়েছে কিন্তু মুখ ফুটে কেউ ভালোবাসার কথা বলে নি। এর মধ্যে সবাই একজোট হয়েছিলো। বিয়ে উপলক্ষ্যে কিছু কাজিনরা আগেই চলে এসেছে, সবাই মিলে পরিচিত হয়ে নিয়েছে। রাহিরও কাজিনরা এসেছে। তারমধ্যে রাহির এক কাজিন নাম কনিক ছেলেটা সবসময় রাহির সাথে চিপকে থাকতে চায়। যদিও ওরা বন্ধু। কনিকের গার্লফ্রেন্ড আছে কেউ জানেনা রাহি ছাড়া।

আজ সবাই মিলে শপিং করতে যাবে। আজকেই যাবতীয় সবকিছু কিনে নিবে। পাঁচটা বিয়ে অনেক কিছু কিনতে হবে। শহরের সবচেয়ে বড় শপিংমলে যাবে শপিং করতে এটা হৃদানের ইচ্ছা। কোনো কিছু কমতি রাখতে চায় না। বড়রা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে নিয়েছে তাই আজ ছোটরা যাবে। সবাই গেলেও সোহান আজ যেতে পারবে না। আধির সাহিল ও বিয়ের একটা কাজে গেছে।সোহানের অফিসে ইমপরটেন্ট মিটিং পড়ে গেছে তাই যেতে পারবে না। আর কেউ জোর ও করলো না। সবাই বিকেলের দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়লো রাতে ডিনার করে ফিরবে। অনেক শপিং করতে হবে আর অনেক মানুষ যাবে ওদের সাথে তাই হৃদান আগেই শপিংমলের ম্যানেজার কে বলে শপিংমলের ভিড় কমাতে বলেছে। তাই শপিংমলে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ শপিং করছে আর হৃদান ওরা। যে যার মতো শপিং করছে।

বিয়ের শাড়ি না লেহেঙ্গা নিবো। আমরা সবাই কিন্তু একরকম নিবো বিয়ের জন্য -রোহানি

তাহলে বলবো লেহেঙ্গা নাও -হৃদান

শাড়ি কেন নয় -অরনি

আমার পাখি শাড়ি সামলাতে পারে না -হৃদান

ওরে আল্লাহ কি কেয়ার -রোহানির এক কাজিন

পিচ্চিটা তো আমার প্রাণ ছোট আপু। ওর একটু কষ্ট ও আমার সহ্য হয়না -হৃদান

তোর মতো প্রেমিক পুরুষ কম ই আছে রে ভাই -পিয়াস

নিজে তো হতে পারলে না ডং -রোহানি

আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর কতটা ভালোবাসি সেটা তুমিও জানো সো আমার ভালোবাসায় আঙুল তুলবে না রোহু -পিয়াস

হুমম হইছে আসেন -রোহানি

রোহানি হালকা হেসে অন্যদিকে গেলো। হৃদিতা বিয়ের শপিং বাদ দিয়ে টেডিবিয়ার দেখছে। আর যেটা পছন্দ হচ্ছে নিয়ে নিচ্ছে। হৃদান হৃদিতার কাছে গেলো অনেক গুলো টেডি নিয়ে নিয়েছে বিয়ের শপিং ও বাকি আছে। অন্যদিকে রাহি শপিং করা শেষ। কনিক ছেলেটা রাহির সাথেই আছে সবসময় তা দেখে কাজিন গোষ্ঠীর অনেকেই কানাঘোষা করছে। কিন্তু তাতে ওদের কিছু যায় আসে নাকি। রাইসা একের পর একে জুয়েলারি দেখেই যাচ্ছে একটাও পছন্দ করতে পারছে না। পরশ বিরক্তিমার্কা মুখ বানিয়ে ওর পিছু পিছু যাচ্ছে। রেখে কোথাও যেতেও পারছে না যে ড্রামাকুইন কি জানে না দেখে কি শুরু করে। নাশিন অনেকক্ষণ ধরে আনহা কে মানানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পিচ্চু মানছেই না। আসলে কাজের চাপে কিছুদিন ওদের কথা হয়নি তাই নিয়ে অভিমান হয়েছে। রিয়াকে সাগর সবকিছু পছন্দ করে দিচ্ছে। বিয়ের লেহেঙ্গা জুয়েলারি সব হৃদান হৃদিতার পছন্দে কিনেছে কারণ ওদের পছন্দটাই বেস্ট হয়েছে। প্রায় সব কিনা শেষ কিছু বাকি আছে। তারমধ্যে হালকা কিছু নাস্তাও করে নিয়েছে। সোহানের মিটিং খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে তাই ও শপিং এ জয়েন হবে বলে এসেছে। কয়েকদিন ধরে বেচারার উপর অনেক প্রেশার গেছে। রাহি মানলেও সোহানের থেকে যথেষ্ঠ দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এর কারণ সোহান খুঁজে পায়নি তাই নিজেই একটু কাছে আশার চেষ্টা করে কিন্তু বেশী লাভ হয়না।

রাহি কনিক আর ওর কিছু কাজিন হৃদিতাদের সাথে কিছু নিয়ে আলোচনা করছে। রাহির মনটা খারাপ। হয়তো সোহানের জন্য। কথা বলার মাঝখানেই রাহির একটু মাথাব্যথা করছিলো বলে দূরে গিয়ে বসলো তার সাথে সাথে কনিক ও গেলো। বসে থাকতেই রাহি সোহানকে আসতে দেখলো। সাথে সাথে কনিকের হাত শক্ত করে ধরলো। কনিক তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। পরে রাহির ইশারায় সামনে তাকিয়ে দেখে সোহান আসছে তাই ও রাহির আরেকটু কাছে এসে বসলো। সোহান আগে দেখতে না পারলেও পরে ঠিক লক্ষ্য করলো। আপনাআপনি বুকে চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো। হয়তো ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর ব্যাথা। চোখ ছলছল করছে সোহানের। রাহি আড়চোখে ঠিক খেয়াল করছে। সোহান ফোন বের করে রাহিকে ফোন দিলো। রাহি এটাই চাইছিলো তাই কেটে দিলো তাড়াতাড়ি। চারবার এইভাবে কেটে দেওয়ার পর ধরলো।

হ্যালো রাহুপাখি কোথায় তুমি

শপিং এ এসেছি আপনি তো জানেন তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন

ওওহ হ্যাঁ তুমি একা আছো নাকি সাথে কেউ আছে

কেন তা দিয়ে আপনি কি করবেন

বলোই না একটু একা নাকি সাথে আছে কেউ

রাহি ইচ্ছা করেই একটু আমতা আমতা করে বললো ওর সাথে কেউ নেই সে একাই আছে। কিন্তু সোহান দিব্যি দেখছে ও কনিকের হাত ধরে বসে আছে। সোহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এমনিই কয়েকদিন ধরে ইগনোর করছে তারউপর এই ছেলেটার সাথে ডলাডলি করছে আবার মিথ্যেও বলছে। তাই রেগে এগোতে যাবে তার আগেই কেউ একজন ওর হাত ধরে আটকে দিলো আর ওখান থেকে দূরে নিয়ে গেলো।

কি হয়েছে এভাবে নিয়ে আসলি কেন? দেখ হৃদ তোর সাথে পরে কথা বলছি আগে আসছি আমি

কষ্ট হচ্ছে?

মানে…

মানে রোহানি আর কনিক কে দেখে কষ্ট হচ্ছে? হাত ধরেছে বলে বুকে চিন চিন ব্যাথা করছে? মিথ্যে বলেছে বলে রাগ হচ্ছে?

রাগ হবে না কেন ও মিথ্যে বললো কেন? এমনিই আমাকে কয়েকদিন ধরে ইগনোর করছে তারউপর ওই ছেলেটা সবসময় ওর সাথে চিপকে থাকে আবার হাত ধরে বসে আছে। আমার রাগ হওয়া কি স্বাভাবিক নয়

কেন? কেন তোর রাগ হবে

কারণ আমি ওকে ভালোবাসি। হ্যাঁ আমি রাহুপাখিকে ভালোবাসি

ওকে বলেছিস

না

তাহলে কোন দিক দিয়ে অধিকার খাটাবি? আর মিথ্যে বলছে বলে তোর রাগ হচ্ছে তুই যখন মিথ্যে বলেছিলি ওর রাগ হয়নি?

কি বলতে চাইছিস

তুই যখন তোর ওই সো কল্ড ফুফাতো বোনের সাথে হাত হাত রেখে হেসে হেসে কথা বলছিলি আর শপিং করছিলি তখন ওর খারাপ লাগেনি? ফোন দিলে ধরছিলি না তখন ওর কষ্ট হয়নি? ফোন ধরে মিথ্যে বলেছিলি তখন ওর বুকে ব্যাথা করেনি?

হৃদ তুই ও আমাকে ভুল বুঝলি? আমি মনে করেছিলাম আমার সাথে মেয়ে আছে শুনে রাহি রাগ করবে ভুল বুঝবে তাই

সত্য কোনোদিনও মিথ্যে হয়না সোহান। তোর সেদিন মিথ্যে বলা একদম ঠিক হয়নি। মানছি তোর বোন হয়। তুই তাকে বোনের চোখেই দেখিস কিন্তু সে তো তোকে ভাইয়ের চোখে দেখে না। হ্যাঁ সে তোকে সাইয়া বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আর একটা সম্পর্কে সর্বপ্রথম বিশ্বাস থাকাটা জরুরি। সেই বিশ্বাস এই যদি ফাটল ধরে তখন সম্পর্ক টিকে না সেখানে তোদের সম্পর্ক তো শুরুই হয়নি। তোর সত্য শুনে রাহি যদিও রাগ করতো সেই রাগ কিন্তু এতদিন থাকতো না। তোর প্রতি আরো বিশ্বাস বাড়তো কমতো না। আর তোর রাহিকে আরো চেনার বাকি আছে। রাহি ওরা ওই টিপিক্যাল মেয়েদের মতো করে নিজেদের তৈরী করেনি। সবসময় সত্যের উপর থেকে কাজ করে। আর আমার মনে হয়না ফুফাতো বোনের কথা বললে রাহি রাগ করতো।

কথাগুলো বলে হৃদান থামলো একটু থামলো। সোহান মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। সোহান বেশ অনুতপ্ত আগে থেকেই। এখন হৃদানের কথা শুনে আরো অনুতপ্ত হলো। হৃদান ওর মনের কথাটা বুঝতে পারলো তাই ফুস করে দম ছেড়ে আবার বলতে শুরু করলো

ওই ছেলেটা রাহির বেস্ট ফ্রেন্ড কাজিন গোষ্ঠীর মধ্যে ধরতে গেলে ভাইবোনের মতো। কনিকের গার্লফ্রেন্ড ও আছে। তোকে নিজের ভুলটা ধরিয়ে দিতে এসব করছে রাহি। এখন রাহিকে মানানো তোর উপর। যা রাগ ভাঙিয়ে মনের কথা বলে দে। আমি তোর সাথে আছি

হৃদানের কথা শুনে সোহানের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠলো। সোহানের হৃদানের সাথে খুশিতে হাগ করে তাড়াতাড়ি রাহির কাছে গেলো। হৃদান ও মুচকি হেসে পিছে ঘুরে দেখে হৃদিতা দাড়িয়ে আছে। ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হৃদান বুঝলো তার হৃদপরী সব শুনেছে। হৃদিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই হৃদান ইশারায় চুপ থাকতে বললো। হৃদিতা আর বললো না মুচকি হেসে হৃদানের সাথে যেতে লাগলো।

সোহান গিয়ে রাহির সামনে বসলো হাটু গেড়ে। রাহি এতক্ষণ একায় বসে ছিলো। সোহান কে এইভাবে বসতে দেখে রাহি সহ এখানের যারা যারা ছিলো সবাই অবাক হয়ে গেছে। রাহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সোহান ঝট করে রাহির হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে আকড়ে ধরলো। রাহির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এতগুলো মানুষ চেয়ে আছে দেখে তাড়াতাড়ি হাত সরাতে গেলেই সোহান আরো শক্ত করে আকড়ে ধরলো। রাহির বুক ধরফর করছে

আই এম সরি রাহুপাখি। আমি সত্যিই বুঝিনি ব্যাপার টা বিশ্বাস করো। আমি ভেবেছিলাম তুমি শুনে রাগ করবে তাই মিথ্যে বলেছিলাম। আর কোনো দিন এমন করবো। পরিস্থিতি যেমনি হোক সবসময় সত্য বলবো আর সব কথায় তোমাকে শেয়ার করবো। প্লিজ একটা সুযোগ দিবে। সারাজীবন আগলে রাখবো। একবার হাত টি ধরো আর কোনোদিন ছাড়বো না। খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। দিবে একটা সুযোগ

সোহানের কথা শুনে রাহি স্তব্দ হয়ে বসে আছে। মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে। চোখ থেকে দুয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো, সোহান খুশিতে রাহিকে জড়িয়ে ধরলো। চারদিকে হাততালির শব্দে ওদের ধ্যান ভাঙলো। ভিড় দেখে হৃদিতা ওরাও এসে এসব দেখে, সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

চলবে….?

(রিচেক হয়নি। ভুল হলে ক্ষমা করবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে