তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব-২১+২২

0
1663

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২১
Tahrim Muntahana

হাতে হাতকড়া সহ সবার মাঝে সিয়া আর হিয়া দাড়িয়ে আছে। সবাই ঘৃণ্য চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপরেও তাদের মধ্যে কোনো অনুতাপের লেশ মাত্র নেই যা আছে শুধু ভয়। কিছুক্ষন আগেই সবার সামনে লোকগুলো স্বীকার করেছে তারা সিয়া আর হিয়ার কথায় রিয়ার অপর এট্যাক করেছিলো। আর সিএম স্বীকার করেছে যে হিয়ার কথায় কালকে মাঠে কারচুপি করেছিলো। হৃদিতাদের উপর যে হামলা হয়েছিলো তা প্রমাণ সহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সবাই এক প্রকার ক্ষেপে আছে। এতকিছু হওয়ার পরও হিয়া হৃদিতার দিকে রেগে তেড়ে আসতে নিলো

তোকে আমি শেষ করে ফেলবো। আনন্দ হচ্ছে খুব তাইনা -হিয়া

এতক্ষন পরশ খুব কষ্টে নিজের রাগ কন্ট্রলে রেখেছিলো। তার কলিজার বোনটা একটা বছর কত কষ্ট করেছে শুধু মাত্র এদের জন্য। আর নিজের রাগ কে আয়ত্তে রাখতে পারলো না। ঠাসসস করে চড় বসিয়ে দিলো। কাজ টা এত তাড়াতাড়ি হয়েছে সবাই একপ্রকার চমকে গেছে। দাবাং মার্কা হাতে চড় খেয়ে হিয়া মাটিয়ে পড়ে গেল ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হিয়ার অবস্থা দেখে সিয়ার আর কিছু বলার সাহস হলো না।

অফিসার এদের নিয়ে যান আর কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। সারাজিবন যেন জেলেই পঁচে মরে -হৃদান

এতক্ষন আখি খান এসব দেখছিলো আর চোখের পানি ফেলছিলো। সিয়ার ব্যাপারটা সে জানে না কিন্তু হিয়ার ব্যাপারটা তো সে জানে। দুই মেয়ের অবস্থা দেখে সে এগিয়ে গেল তার ভাইয়ের দিকে

ভাইয়া প্লিজ ক্ষমা করে দিতে বলনা। ওরা তো এখন খুব ছোট ভুল করে ফেলেছে। তুই কিছু একটা কর ভাইয়া। আমার দুইটা মেয়ে ছাড়া যে আর কেউ নাই -আখি খান

আমি কিছু করতে পারবো না আখি। তোর মেয়েদের তুই মানুষ ই করতে পারিস নি। আমার কাছে হৃদিতা রিয়া সবার আগে সেটা তুই ভালো করেই জানিস। তাও তুই জানা সত্যেও ওদের আরো উসকিয়ে দিয়েছিস না করিস নি। এখন আমাকে বলছিস কেন। আগে এই দিনটার কথা মনে ছিলো না যে আসবে একদিন। আমি কিছুই করতে পারবো না -আহনাফ চৌধুরী

আখি খান এবার নিরাশ হলেন ভাইয়ের বউয়ের কাছে যাবে সে তো আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন শুধু আশা ভাইপো। দৌড়ে গেল ভাইপোর কাছে

হৃদান বাবা তুই কিছু কর না। তোর তো বোন হয় ওরা। আর ওরা ছাড়া আমি কি নিয়ে থাকবো। এবারের মতো ক্ষমা করে দেনা। আমরা অনেক দূরে চলে যাবো তোদের সামনে আর কখনো আসবো না -আখি খান

বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন হৃদান এইবার অসহায় চোখে হৃদিতার দিকে তাকালো। সে তার ফুপিকে বড্ড ভালোবাসে। ফুপির জন্য হলেও যদি ছেড়ে দিতো তাই ভাবছে হৃদান। আর ওর তো বোন হয়। মায়া তো একটু হবেই। কিন্তু এখানে তো ওর হাত নেই যা করার হৃদিতা করবে। হৃদিতা হৃদানের চোখের ভাষা বুঝে স্ট্যাট দাড়িয়ে গেল

আমার কাছে রিয়ু কি সেটা আপনাকে বলে দিতে হবে না মি হৃদান চৌধুরী। একটা বছর এদের জন্য আমার রিয়ু কতটা কষ্ট পেয়েছে। চোখে না দেখার মর্ম বুঝেন? বুঝবেন কি করে চোখের জ্যোতি তো হারান নি। প্রিয় মানুষের থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা তো বুঝবেন তাইনা। আর গেল পছন্দের জিনিস খেলতে না পারার কষ্ট। বুঝবেন? বাস্কেটবল তো রিয়ুর আত্নার সাথে মিশে আছে আর এদের জন্য যখন শুনলো সে আর বাস্কেটবল ই খেলতে পারবে না। তখন কি আদোও বাঁচতে ইচ্ছে করতো? বলুন আমাকে। একটা বছর বেঁচে থেকেও মরার মতোই মনে হতো। শুধু রিয়ু না পরিবারের প্রত্যেকটা ব্যাক্তি কষ্ট পেতো। আমরা চার ভাইবোন কখনো নিজেদের আলাদা দেখিনি জানেন। দুইভাইয়ের কলিজা ছিলাম আমরা দুজন। আর আমাদের তো তিন বাবা তিন মা ছিলো। ওদের সবসময় কাছে লাগতো আমাদের। হঠাৎ করে যখন এক বাবা মা ভাই বোন দূরে চলে যায় তখন মনের মধ্যে কতটা চাপ পড়ে আপনি হয়তো বুঝবেন। আমার ভাইয়ু জানেন প্রত্যেক রাতে রিয়ু আর নাশু ভাইয়ার ছবি দেখে ঘুমোতে যেতো। ছেলেদের তো কষ্ট মানুষকে দেখাতে নেই তাই রাতে কষ্টগুলো ঝড়ে পড়তো। আমার পাপা কি করতো জানেন সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকতো। যে ছোট ভাইকে ছাড়া আমার পাপা এক দন্ডও শান্তি পেতো সেই পাপা তার প্রাণের ভাইকে ছাড়া এক বছর থেকেছে। যে চার কলিজার মুখ না দেখে অফিসে যেতো না সেই পাপা এক বছর এরকম করেই যায়। আর মমের কথা না হয় বাদই দিলাম। সে তো প্রতি নামাজে ডুকরে ডুকরে কাঁদে আর দোয়া করে। যে নাশু ভাইয়া সব সময় অগোছালো ছিলো ভাইয়ু গুছিয়ে রাখতো তাকে সেও একবছরে কতটা গুছিয়ে গেছে দেখছেন। ছোট আব্বু ছোট আম্মু কথা তো জানি না কিন্তু তাদের চোখের পানি দেখলেই বুঝতে পারবেন তারা কতটা ভালো ছিলো। পিছে দেখছেন পাঁচজন দাড়িয়ে আছে। হিয়া আর সিয়ার প্রতি ওদের এত রাগ কেন বলতে পারবেন? ওদের তো কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে? ডিরেক্টলি ওদের ক্ষতি না করলেও না ইনডিরেক্টলি ওদের খুব ক্ষতি করেছে। আমাদের আড্ডা টা সমসময় অসম্পূর্ণ হয়ে থাকতো। তারজন্য ঠিক মতো আড্ডা দিতে পারিনি। আমাদের আড্ডা জায়গায় তো সেদিন ই লাস্ট গিয়েছিলাম রিয়ু চলে যাওয়ার আগে। আর আপনার দুইবোনের কথা না হয় নাই বললাম। আলো আপু আনহা তারা তো কয়েকদিন থম মেরেই বসে ছিলো। এখন আমার কথা বলি। এই দেখেন যে রিয়ু আর নাশু ভাইয়াকে ছাড়া খেতাম না, দুপুরে ভাইয়ু আমাদের তিনজনকে খাইয়ে দিতো সেখানে আমাকে একাই খেতে হতো। বাড়িতে থাকতে পারতাম না। শুধু মনে হতো এই যেন রিয়ু আমাকে হৃদিরানী বলে ডাকছে, এই যেন নাশু ভাইয়া আমাকে আদর করতে আসছে, এই যেন ছোট আম্মু রিয়ুর নামে নালিশ করতে আসছে – এই যেন ছোট আব্বু একবক্স আইসক্রিম এনে দাড়িয়ে আছে আমার জন্য। একটা বছর আমার উপর দিয়ে কি গেছে জানেন। একদিক থেকে দৌড়ের জন্য প্রেকটিস অপর দিকে রিয়ুর স্বপ্ন পূরণ করার জন্য বাস্কেটবল প্রেকটিস আবার পড়াশুনা। হাপিয়ে গেছি আমি। কোনো কোনো দিন শরীর চলতো না টেনে নিয়ে যেতাম। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেই নি। দিন শেষে একটু হলেও হেসেছি। এখন বলুন তো কার কষ্টটা বড়। কার কষ্টের শাস্তি আগে দিবো। পারবেন এতগুলো মানুষের একবছরের কষ্টটা মুছে দিতে। আমার রিয়ু চোখে দেখতে না পেয়ে যে অন্ধকারের মধ্যে একটা বছর থেকেছে এদের দুইজন কেউ ঠিক একটা বছর এরকম অন্ধকারের মধ্যেই রাখবো। তারপর অন্য জেলে আটকে রাখবো। এখন আপনি যদি আপনার সো কল্ড ফুপিকে ভালোবেসে এদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন বা বুঝাতে চান তাহলে করতে পারেন ছেড়ে দিবো তাদের। কিন্তু আমার আর আপনার পথ সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাবে। এখন এস ইউর উইশ মি হৃদান চৌধুরী

কথা গুলো বলে এবার একটা বড় ধম নিলো হৃদিতা। হৃদিতার শেষের কথাটি শুনে হৃদানের বুকটা ধক করে উঠলো। সেতো হৃদপরীকে ছাড়া কল্পনায় করতে পারে না নিজেকে। আর বাড়ির বাকি সবাই তো কেঁদেই যাচ্ছে। তারা ভাবেনি তাদের গতিবিধির উপর হৃদিতা এইভাবে লক্ষ্য করেছে। পরশের বুকে মুখ গুজে রিয়া কাঁদছে। আর নাশিন একটু দূরে দাড়িয়ে চোখে পানি ফেলছে। শুধু বাড়ির সবাই না হৃদিতার সামনে মাউথ পিস থাকায় সবাই শুনতে পেয়েছে কথাগুলো। সবার চোখেই পানি এমনকি রিপোর্টার দেরও। এদের পরিবারের ভালোবাসা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিবার কয়জন পায়? যেখানে আপন ছেলে বাবা মা কে দেখে না সেখানে এদের ভালোবাসা সত্যি দেখার মতো।

হৃদান এতসব ভাবেনি সত্যি। আসলেই এতোজন মানুষ একটা বছর কত কষ্ট পেয়েছে। তার হৃদপরী কত কষ্ট পেয়েছে ভাবতেই মাথা নিচু করে ফেললো। ফুপির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিলো হৃদিতা যেভাবে বলেছে সেভাবেই কাজ করতে। সিয়া আর হিয়াকে নিয়ে পুলিশ চলে যাওয়ার পর হৃদান হৃদিতার কাছে গেল

হৃদপরী প্লিজ তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না। আমি তোমাকে ছাড়া আর বাঁচতে পারবো না। অনেকগুলো বছর কম কষ্ট পাইনি আর চাইনা। বড্ড ব্যাথা করে বুকে। তোমাকে ছাড়া কল্পনা করা দায়। তুমি নামক অক্সিজেনের সাথে যে পুরোপুরি মিশে গেছি সেই অনেকগুলো বছর আগেই। এতদিন কিছুটা বেঁচেছিলাম তোমায় পাবার আশায় সেই আশাটা ভেঙে দিওনা বাঁচতে পারবো না। আমার ভুল হয়েছে হৃদপরী প্লিজ

হৃদান হৃদিতার সামনে হাটু গেড়ে বসে কথাগুলো বলল। কথাশুনে হৃদিতার চোখ দিয়ে কয়েকফুটা পানি গড়িয়ে পড়লো কিছু না বলে হৃদান উঠিয়ে ওর বুকে মুখ গুজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এতক্ষন খুব কষ্টে কান্না আটকে রেখেছিলো এখন একটু আদরে সব বেরিয়ে আসলো। হৃদান কাঁদতে না করলো না। কাঁদুক আজকে এর পর আর কাঁদবে না।

সবাই ইমোশনাল হয়ে গেছে বিদায় এবার সাগর আর সোহান একটু নড়েচড়ে দাড়ালো। পরিস্তিতি স্বাভাবিক করতে গলা খাঁকারি দিলো।

বাবা তোমার বউতো ভুলেই গেছে তার অবলা হতভাগা একটা বর আছে। তা সারাক্ষণ কি ভাইয়ের বুকেই থাকলে চলবে বরটাকেও তো দেখতে হবে -সাগর

তুই যে আমার সন্তান সেটা তুই প্রত্যেক কাজে প্রমাণ করে দিস। আই এম প্রাউড অফ ইউ মাই সান। রিয়েলি -সাগরের বাবা

ওদের কথা বলার ধরণ দেখে সবাই এবার স্বাভাবিক হলো। রিয়া এবার সাগরের কথা শুনে লজ্জা পেলো। ইশশ লজ্জা শরম বলতে নেই। বড়দের সামনে কি বলে।

ওই যে শুরু হলো বাবা ছেলের ড্রামা। যেমন বাপ তেমন ছেলে -সাগরের মা

তা কে যেন বলে ছেলে নাকি তার মতো হয়েছে -সাগরের বাবা

সাগরের বাবার কথা শুনে সাগরের মা থতমত খেয়ে গেল সবাই একসাথে হেসে দিলো। এবার রাইসা গিয়ে রিয়া কে সাগরে পাশে দাড় করিয়ে নিজে গেল পরশী আর হৃদয় চৌধুরীর কাছে।

শাশুড়ি মম শশুড় পাপা -রাইসা

রাইসা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলল। পরশের মাথায় হাত। বেশ বুজতে পারছে ওর ইজ্জতের ফালুদা করবে এখন। কি আর করার। রাইসার কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো। রাইসা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়েই এদিক ওদিক দুলছে।

এমন করছিস কেন তুই। আর শাশুড়ি শশুড় বলছিস কাকে -রাইসার মা

হেই পেয়ে গেছিইইইইই -রাইসা

রাইসার চিৎকার শুনে সবাই অবাক হলো কি পেয়েছে কিছুই বুঝলো না। রাইসার মা দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে। এত বড় মেয়ে এখনো ডং গেলো না। মনে হয় ছোটই আছে

কি পেয়েছিস -রাইসার মা

ভিলেননননন -রাইসা

মানে -রাইসার বাবা

এইযে আমি শাশুড়ি মম আর শশুড় পাপা বলছি বলে আমার মম ক্ষেপে গেলো তাই ভিলেনন পাইলাম। আমি তো মুভিতে কত দেখি -রাইসা

একটা ঠাঁটিয়ে চড় দিবো বাঁদর মেয়ে কোথাকার -রাইসার মা

রাইসার মার বকা শুনে রাইসা এবার ঠোঁট উল্টে কান্নার ভান ধরলো। মেয়ের কান্না রাইসার বাবা মুটেও সহ্য করতে পারে না

এই একদম আমার মেয়েকে বকবে না -রাইসার বাবা

তো কি করবো কিসব বলছে -রাইসার মা

আরে মম তুমি চুপ থাকো তো। আমাকে কথা বলতে দাও। শাশুড়ি মম শশুড় পাপা দেখো তো আমি বড় হইছি না -রাইসা

মানে -পরশী

আরে আমার বয়স কত বলো তো -রাইসা

হৃদি আর তোর তো সেইম বয়স -হৃদয়

তোমার ছেলের বয়স কত -রাইসা

৩০ হবে হয়তো -হৃদয়

তাহলে তোমার ছেলের কি বিয়ের বয়স হয়নি। এখনো ঘরে বসিয়ে রাখছো কেন বলোতো। বুড়ো বয়সে কে বিয়ে করবে শুনি। এখন হয়তো আমি আছি তাই যত তাড়াতাড়ি পারো বিয়ে করাও কয়দিন পরে দেখা যাবে মেয়ে খুঁজে পাবে না। আর আমার ঠিক সময় বিয়ে এখন ঘরে তিন চারটা বাচ্চা থাকতো। তোমরা চোখেই দেখোনা আমাকে -রাইসা

কথা গুলো বলেই ন্যাকা কান্নার ভান ধরলো পরশ তো পারেনা এখান থেকে চলে যায়। মেয়েটার লাজ লজ্জা বলতে কিছুই নাই। বড়রা সবাই তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হৃদিতারা সবার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হো হো করে হেসে দিলো তা দেখে রাইসাও হাসতে লাগলো। এরপর বড়রাও হেসে দিলো।

ঠিকি বলেছিস এবার আমার ঘরে একটা মিষ্টি বউ দরকার -পরশী

তাহলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করো আমার পাপা মম কিন্তু এখানেই আছে -রাইসা

এবার হৃদয় চৌধুরী এসে রাইসার কান টেনে ধরলো আর রাইসা লাফাতে লাগলো।

বেশী পাঁকা হয়ে গেছো তাই না -হৃদয়

আহ উহ শশুড় পাপা কান ছিড়ে যাবে তো।পরে কিন্তু সবাই বলবে হৃদয় চৌধুরীর ছেলের বউ কান কাটা তখন শুনতে ভালো লাগবে তাই বলছি ছাড়ো না -রাইসা

রাইসার কথা শোনে সবার মাঝেই হাসির রুল পড়ে গেল। সবাই চলে গেছে কিছু ক্ষন আগেই। রিপোর্টার রা রয়ে গেছে।

কয়েকদিনের মধ্যে আপনাদের খবর পাঠানো হবে চলে আসবেন নতুন খবর পাবেন -হৃদান

আর আজকে ঘটানা গুলো যেন সব পত্রিকায় ফন্ট পেইজে থাকে আমি সব গুলো চেইক করবো -পরশ

ওকে ওকে স্যার -রির্পোটার

রিপোর্টার রা চলে গেলে ওরাও বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। সবাই এক বাড়িতেই যাবে। সেলিব্রেশন পার্টি হবে কাল। আজকে বড়রা মিলে সিদ্ধান্ত নিবে বিয়ের সম্পর্কে।

সন্ধার দিকে সবাই ড্রয়িং রুমে এসে উপস্থিত হয়েছে হালকা নাস্তার জন্য। আলোচনা করবে সবাই মিলে। হঠাৎ হৃদান এসে যা বললো তাতে হৃদিতার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম পারেনা মাটির নিচে ঢুকে যায়……..

চলবে….?

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২২
Tahrim Muntahana

আমি আগেই বলে রাখছি এবার আমার বিয়েটা না দিলে আমি নিজেই বিয়ে করে ফেলবো। বয়স তো কম হলো না এখন বিয়ে না করলে কবে করবো?আর তোমাদের ও তো দাদা দাদী নানা নানী ডাক শুনতে ইচ্ছে করে নাকি। তা তোমাদের সেইদিকে খেয়াল ই নেই। আমার আগেই আমার ছোট বোনের বিয়ে দিয়ে দিলে অথচ আমাকে তোমাদের চোখেই পড়ে না। কবে হৃদপরী কে পাবো বলোতো। আর অপেক্ষা করতে পারবো না

গড়গড় করে বলে দিয়ে হৃদান সবার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সবাই ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। হৃদান ভ্রু কুচকে তাকালো। এই ছেলের যে লাজ লজ্জা একদম ই নেই বুঝে গেছে তারা। এবার সবাই হো হো করে হেসে দিলো। হৃদিতা নিচের দিকে তাকিয়ে পা দিয়ে ফ্লোর গুতাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
এবার সবাই একটু সিরিয়াস ভাবে বসলো।

আমার ছেলেটা কেউ তো বিয়ে করাবো ভাইসাহেব মেয়ে দেখেন -পিয়াসের আম্মু

পিয়াসের আম্মুর কথা শুনে পিয়াস খকখক করে কেঁশে উঠে তা দেখে রোহানি কটমট চোখে তাকায়। চোখের ভাষায় বলে দিচ্ছে, আজকে যদি আমাদের সম্পর্কের কথাটা না বলছো তোমার খবর খারাপ কইরা দিমু। পিয়াস ঠিক বুঝতে পেরে অসহায় চোখে তাকালো কিন্তু কোনো লাভ হলো না পরিবর্তে আরো রেগে তাকালো। এবার পিয়াস শুকনো ঢুক গিলে হৃদিতার দিকে তাকালো। হৃদিতা ভাইয়ের অবস্থা ভালোয় বুঝতে পারছে। কিন্তু সবার সামনে এইভাবে বলা যাবে না আর বড় রা কথা বলছে তাই ওরা ছোটরা সবাই উপরে চলে গেল।

আচ্ছা শুনো তোমরা এখন বড়রা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাও কবে বিয়ে হবে কার কার হবে। আমি আসি -হৃদান

হৃদান ও চলে গেল হৃদানের দেখাদেখি ওর বন্ধুরাও চলে গেল। বড়রা আবার কথা বলা শুরু করলো

আমাদের রোহানির বিয়েটাও এখন দিতে হচ্ছে -রোহানির আব্বু

কবে ঠিক করলি বিয়ে -হৃদয় চৌধুরী

তিন বছর হলো আমার এক বন্ধু রোহানিকে দেখে পছন্দ করে। অনেক অনুরোধ করে ছেলেও ভালো আর পরিবারো ভালো তাই আর না করিনি -রোহানির আব্বু

এটা ঠিক করিস নি রোহানিরো পছন্দ আছে ও তো জানেই না এই বিষয়ে -আহনাফ চৌধুরী

রোহানির কোনো পছন্দ থাকলে আমাদের বলতো -রোহানির আব্বু

ছেলে মেয়ে রা বড় হয়েছে এইভাবে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না -হৃদয় চৌধুরী

আচ্ছা আমি বাড়ি গিয়ে কথা বলবো ওর সাথে।এখন ঠিক কর কবে বিয়ে হবে -রোহানির আব্বু

কালকে তো একটা পার্টি আছে। কয়েকদিন পর করতে হবে -পরশী

সাগর রিয়া হৃদান হৃদিতা পরশ রাইসা রোহানি আর আহিলের বিয়েটা একসাথেই হোক তাহলে -রোহানির আম্মু

হ্যাঁ তাহলে একটা কমিউনিটি সেন্টার বুক করতে হবে -সাগরের আব্বু

আচ্ছা তাহলে পরের সপ্তাহ মানে ২০ তারিখ বিয়ে হোক। মধ্যে আরো আলোচনা করে নেওয়া যাবে -রাইসার আব্বু

সবাই মিলে বিয়ের আলোচনা করে কি কি হবে কিভাবে হবে। পরের দিন বড় করে একটা পার্টি আয়োজন করা হয়। সেখানে আগেই বিয়ের ঘোষণা দেই নি। পরে দিবে সিদ্ধান্ত। পার্টির দিন ই সবাই যে যার বাড়ি চলে যায়। কয়েকদিন পর বিয়ে কত কাজ করতে হবে। রোহানি রাতে শুয়ে শুয়ে পিয়াসের সাথে ফোনে কথা বলছিলো। তখন ওর মা আসে তড়িঘড়ি করে ফোন না কেটেই উল্টো করে রেখে দেই।

রোহানি তোকে ছাড়ায় আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি

কি আম্মু

তোর বিয়ে

হোয়াটটটটট

হুমম তোর বাবার বন্ধুর ছেলে আহিলের সাথে।অনেক ভালো দেখতে পরিবার ভালো আর্থিক অবস্থা ভালো তাই আর না করিনি তিন বছর আগেই ঠিক করে রেখেছে

কথা গুলো শুনে পিয়াস হতভাগ হয়ে বসে আছে। ও সব শুনতে পেরেছে অপর পাশ থেকে হাঁসফাঁস করছে।

তাহলে এখন আমাকে জানাতে এসেছো কেন। একবারে বিয়ের দিন কবুল বলার আগেই গিয়ে বিয়ের আসরে বসিয়ে দিতে। তাহলে আরো ভালো হতো

এইভাবে কথা বলছিস কেন

আম্মু আমার রাগ উঠিও না আমার রুম থেকে যাও। আমার রাগ সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে

মেয়ের রাগের কথা শুনেই রোহানির আম্মু চলে গেছে। না জানি রাগের মাথায় কি না কি করে। মা চলে যাওয়ার পর রোহানি একটু বসে থেকে ফোন হাতে নিয়ে চমকে উঠে। ও তো জানেই না পিয়াস ফোনে ছিলো। কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে হ্যালো বলতেই পরশ খট করে ফোনটা কেটে দেয়। রোহানি তাড়াতাড়ি উঠে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। হৃদিতার সাথে ইমিডিয়েটলি দেখা করতে হবে। হৃদিতারদের বাড়ি গিয়েই দৌড়ে হৃদিতার রুমে চলে যায়। হৃদিতা বসে বসে হৃদানের সাথে কথা বলছিলো। রোহানি দৌড়ে গিয়ে বিছানায় বসে হাঁপাতে থাকে।

কি হয়েছে রোহা। তুই এত রাতে আমাদের বাড়ি

হৃদি আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে

হোয়াটটটট কার সাথে কবে কখন

আব্বুর বন্ধুর ছেলের সাথে আজকে তিন বছর আগে ঠিক করে রেখেছে। আমি কিন্তু পিয়াস কে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। পিয়াস ও রাগ করে ফোন তুলছে না

তুই আগে শান্ত হয়ে বস। তোর বিয়ে আমার ভাইয়ার সাথেই হবে। ডোন্ট পিনিক

কিভাবে তুই জানিস আব্বু যা বলে তাই করে

হৃদপরী হৃদপরী কি হয়েছে

হৃদরাজ রোহার বিয়ে ঠিক করেছে ওর বাবা এখন কি হবে। আমাদের কিছু একটা করতে হবে।১৫ দিন পর বিয়ে বেশী দেরী নেই

আচ্ছা দেখা করো সকালে আমি প্লেন ভেবে রাখছি

হৃদভাইয়া তুমি প্লিজ পিয়াসের সাথে কথা বলো। না জানি কি করছে, আমার ফোন তুলছে না। আম্মুর কথা গুলো শুনে নিয়েছে

বনু আমি পিয়াসকে দেখছি টেনশন করো না আর এখন বাসায় যাওয়ার দরকার নেই হৃদপরীর সাথেই ঘুমিয়ে পড়ো। বাই বনু বাই হৃদপরী। আই লাভ ইউ

হুমমম

ফোন কেটে দিয়েই হৃদান পিয়াসের কাছে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ে আর হৃদিতা অনেক বুঝিয়ে রোহানি ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে নিজেও ঘুমিয়ে গেল। যা হবে কাল দেখা যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মেয়ের রুমে গিয়ে দেখে মেয়ে ঘরে নেই। সারাবাড়ি খুঁজেও যখন রোহানিকে পেল না তখন একেরপর এক ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন তুলছে না। টেনশনে থাকতে না পেরে হৃদিতা কে ফোন দিলো। রোহানির বাবাও বাসায় নেই সকালে হাটতে গেছে ফোন নিয়ে যায়নি।

হ্যালো হৃদিতা মা রোহানি গেছে তোর ওইখানে

হ্যাঁ রোহানি আমার সাথেই আছে আর তোমাদের সাথে কথা বলার কোনো মুড নেই আমার রাখছি

বলেই রেখে দিলো। একটু নিশ্চিন্ত হয়ে বসে ভাবতে লাগলো। কাজ কি ঠিক হয়েছে কিনা। হৃদিতা রোহানি রিয়া পরশ নাশিন ভোর সকালে ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে গেছে। পড়নে জগিং ড্রেস। সকল কে এড্রেস পাঠিয়ে দিয়েছে ঠিক সময়ে চলে আসবে।

ওরা সবাই বসে আছে একটা জগিং স্পটে। সবাই বলতে হৃদিতা রোহানি রাহি রাইসা আনহা অরনি সোহা পিয়ানি সাহিল আধির পরশ নাশিন হৃদান সাগর সোহান পিয়াস। হৃদানের দিকে সবাই চেয়ে আছে। প্লেন বলবে। কালকে রাতে পিয়াসকে বুঝিয়ে মানিয়েছে হৃদান।

আরে বলছিস না কেন কি করবি -সাগর

বেশী কিন্তু সময় নেই যা করার দুই তিন দিনের মধ্যেই করতে হবে -পিয়াস

আচ্ছা তোর প্লেন কি বল -সোহা

কোনো প্লেন করতে হবে না কয়েক টা ঘা দিলেই বিয়ে করার শখ মিটে যাবে -রাহি

হিহিহিহি -আনহা

হিহিহি ওই চুপ যা -নাশিন

নাশিনের ব্যাঙ্গ কথায় আনহা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। লোকটা শুধু বকে একটুও ভালোবাসে না।

ছেলে আহিল খান। এত সহজ হবে না বিষয়টা -হৃদিতা

খবর নিয়ে শুনেছি মি আহিল রোহানিকে দেখে নি আর বিয়ের ব্যাপারে জানেই না -পরশ

ওহহহ সুপার তাহলে তো আরো ভালো হলো। এখন ছেলেকে গিয়ে রোহানি বলবে সে পিয়াস ভাইয়াকে ভালোবাসে তাহলেই বিয়ে ভেঙে যাবে -রাইসা

আজ্ঞে না যদি মি আহিল রোহানির বাবা কে বলে দেয় তখন কি হবে -সোহান

আমি বলি কি রোহানি ওর বাবাকে বললেই তো হয় যে ও পিয়াসকে ভালোবাসে -পিয়ানি

তোমরা ওর বাবাক চেন না পুরা হিটলার -আধির

আধির কথা শুনে রোহানি কটমট চোখে তাকালো। আধির ভয় পাওয়ার ভান ধরে হেসে দিলো।

যদি শুনে ভালোবাসে তাহলে আজীবন সিংগেল ই থাকা লাগবে -সাহিল

আমি একটা প্লেন করেছি -হৃদান

তাড়াতাড়ি বলো -রাইশা

এখন বাজে ৬:৪৫ ঠিক ১৫ মিনিট পর মি আহিল খান জগিং করতে আসবে তখনই আমাদের কাজটি করতে হবে -হৃদান

আহিল খানের ছবি আছে -রিয়া

হুমম দেখো -হৃদিতা

হৃদিতার ফোনে আহিলের একটা ছবি, সাদা একটা টিশার্ট পড়ে স্টাইল করে দাড়িয়ে আছে। অরনি অনেকক্ষন ধরে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে।

এইইই আমি ক্রাশ খাইছি। আল্লাহ রে আল্লাহ -অরনি

হোয়াটটটটটট -পিয়ানি

তুই খাইছিস ক্রাশ -সোহা

ক্রাশ না প্রেমে পড়ে গেছি। পারলে বিয়ে করে ফেলবো -অরনি

কি কস এইগুলা -সোহান

সত্যি বলছিস নাকি মিথ্যে বলছিস -পিয়াস

সত্যি আসলে প্রেমে পড়েছি কিনা জানি না ভালো লেগেছে খুব -অরনি

তাহলে তো হলোই। আচ্ছা আমি যেভাবে বলবো সেভাবে করবি -হৃদান

হৃদান ওর প্লেনটা বলার সাথে সাথেই সাগর সোহান আধির সাহিল চিৎকার করে উঠে।

অসম্ভব আমি মার খেতে পারবো না পাবলিকের -সাগর

বেশী না গনধোলায় দিবে সবাই -সোহান

আমি এখনো খুব ছোট তোমরা এইভাবে আমাকে বলির পাঠা বানিও না -সাহিল

আমি আরো নাদান বাচ্চা আর আমাকে কি গুন্ডার মতো দেখতে লাগে নাকি -আধির

চুপপপপ -হৃদান

হৃদান বেবি সোনা মোনা ময়না শালিক পাখি আমি এক পায়ে রাজী আসি -অরনি

ওই তুই কিন্তু আবার বেশী বাড়াবাড়ি করবি না -সোহা

আরে না বেশী করবো কেন। তোরা শুধু দেখবি অরনি কা খেল -অরনি

হইছে সময় হলো ওইযে আসছে। যা তুই -হৃদান

অরনির আর যাওয়ার নাম নেই একধ্যানে চেয়েই আছে তো চেয়েই আছে।

আরে অরনি আপু পরে অনেক সময় পাবে দেখার। নাও গো -হৃদিতা

অরনি ও সাথে সাথে দিলো দৌড়। হৃদান সাগরদের ইশারা করতেই ওরাও চলল দুঃখি দুঃখি মুখে নিজেদের কাজ করতে।

চলবে….?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে