তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব-১৯+২০

0
1722

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৯
Tahrim Muntahana

এখন সকাল ৮ বাজে। বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে। হৃদিতারা মাত্রই নাস্তা সেরে ড্রয়িং রুমে বসেছে। একটু পর রওনা হবে। বড়রা খেলা শুরু হওয়ার আগেই চলে যাবে ছোটরা এখন যাবে। বড়দের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বেড়িয়ে গেল ওরা। আধা ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেল। প্রিন্সিপাল স্যার খুব টেনশনে আছে। কোনো ভুল যাতে না হয় খেয়াল রাখছে। হৃদিতা প্রথমে গিয়ে আগে সবকিছু চেইক করে নিলো। নাহ আজকে সব কিছু ঠিক আছে।
সবার সাথে কথা বলতে বলতে এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে। আর আধা ঘন্টা আছে খেলা শুরুর। নাশিন খেলার ট্রিকস গুলো আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলো। আগে ছেলেদের খেলা তারপর মেয়েদের। ছেলেরা তৈরী হচ্ছে একটু পরেই ডাক পড়বে।

দশটা বাজতে পাঁচ মিনিট থাকতেই হুশিয়ার আসলো মাঠে যাওয়ার।যথারীতি খেলা শুরু হয়ে গেল। আধির সাহিল দুজন বেশ হ্যান্ডেল করছে নিজেদের দল কে। বিরতি দিয়েছে অথচ কেউ রান দিতে পারেনি। নাশিন এবার আধির আর সাহিল কে নতুন একটা ট্রিকস শিখিয়ে দিলো। ট্রিকস অনুসারেই আধির দুইটা আর সাহিল একটা আর অন্য একজন একটি মোট চারটা রান দিয়ে বিজয়ী ঘোষিত হলো। এবার ট্রান মেয়েদের। মধ্যে আধাঘন্টা রেড়ি হওয়ার সময়।

হৃদিতাদের জন্য বরাদ্দ কৃত রুমে সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে আর হৃদিতা সারা রুম পাইচারি করছে। একজন খেলোয়াড় এখনো এসে পৌছায়নি। টিম মিল না হলে খেলতে পারবে না ওরা। আর তেমন কোনো স্টুডেন্ট ও নেই যে সাধারণত খেলার মাঠে আবাদত দাড়িয়ে থাকতে পারবে। রাইসা ওরা অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে কেউ তুলছে না। এবার ওদের ডাক পড়লো। এখানে শুধু খেলোয়াড় রা ছিলো আর সাথে রিয়া আলো আনহা সোহা অরনি পিয়ানি। ওদের ও টেনশন হচ্ছে। না জানি হৃদিতা কখন রেগে যায় আর হুংকার দিয়ে উঠে। কিন্তু হৃদিতা বেশ শান্ত হয়ে বসলো। ভাবছে কিছু। হৃদিতা সব খেলোয়াড় কে মাঠে পাঠিয়ে দিলো। আর ও ফোন দিলো ডিসি কে

আসসালামু আলাইকুম স্যার হৃদিতা চৌধুরী বলছিলাম

বলো মামুনি আমি চিনতে পেরেছি তোমাকে

স্যার আমার দলের একজন মিসিং

হোয়াটটট কি বলছো এসব এখন খেলা শুরু হবে আর এখন তুমি বলছো একজন মিসিং

আমি বেশ বুঝতে পারছি মিসিং এর কারণ। ওসব পরের কথা। এখন কথা হচ্ছে আমরা ওই একজন ছাড়াই খেলবো

এটা সম্ভব না আমি নিয়মের বাইরে যেতে পারবো না। মামুনি তুমি জানো আমি আমার দায়িত্বে কখনো হেরফের করিনা। দল মিল হলে এসো না হয় খেলা কেন্সেল করতে হবে

নো খেলা কেন্সেল করা যাবে না আমরা আসছি। বাই স্যার

কল কেটে দিয়ে হৃদিতা কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলো। অন্যদিকে সিয়া চিল মুডে আছে। ও জানে একটু পর ঘোষণা হবে বিপক্ষ দল হার মেনে নিয়েছে তাই আনন্দে আছে। আসলে একজন খেলোয়াড মিসিং হওয়ার কারণ হলো সিয়া। আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে অথচ বিরোধি দলের পাঁচ জন আসছে না। তাই সবার মধ্যে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। সিয়ার মুখ থেকে তো হাসি সরছেই সে যেন ঘোষণার আগেই বিজয়ী হাসি হাসছে। হৃদানদের ও এবার টেনশন হতে শুরু করলো। একসময় থাকতে না পেরে উঠে ওদের ওখানে যাবার জন্য। সামনে তাকাতেই ওদের চোখ কপালে উঠার উপক্রম। সিয়ার হাসিটা মিলিয়ে গিয়ে মুখটা কালো হয়ে আসলো। কি করতে চেয়েছিলো কি হলো।

হৃদিতা রিয়া রাইসা রোহানি রাহি আসছে। জার্সি আর ট্রাউজার পড়ে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রিয়াকে এখানে কেউ আশা করেনি। সবাই জানতো রিয়া আর কখনো খেলতে পারবে না। রিপোর্টার রা তো নতুন চমক পেয়ে গেল। বাড়ির সবাই তাড়াতাড়ি ওদের ওখানে গেল।

এসব কি রিয়ু পাখি। তুমি এই পোশাকে কেন -সাগর

হৃদপরী কি হচ্ছে এসব -হৃদান

আমাদের দলের একজন মিসিং তাই রিয়ু খেলবে -হৃদিতা

হোয়াটটটট কি বলছো হৃদিরানী তুমি বুঝতে পারছো -নাশিন

রিয়ু এখন অনেকটা সুস্থ হলেও খেলার উপযোগি হয়নি। অসুস্থ হয়ে যাবে -নাশিন

অসম্ভব রিয়ুপাখি খেলবে না। আমি কিছুতেই মানতে পারবো না -সাগর

তোরা কি করছিস তোদের খেয়াল আছে। হৃদি মা আমার রিয়ু তো অসুস্থ -পরশী চৌধুরী

আর ডাক্তার বলেছে ও একবছরের মধ্যে কোনো দৌড়াদৌড়ি করতে পারবে না – হৃদান

ভুল বলেছে কারণ ডাক্তার কে আমিই বলছি এটা বলতে -হৃদিতা

মানে -নিশি চৌধুরী

ছোটআম্মু রিয়ু এখন খেলতে পারবে। কিন্তু ওর শরীরের স্কিলের উপর এটা নির্ভর করবে যে ও এখন পারবে কিনা। আমি চাইনি কোনো রিস্ক নিতে তাই ডাক্তার কে বলেছি এটা বলতে যাতে রিয়ু খেলার কথা না বলে -হৃদিতা

আর আমিই এখন চাই খেলতে। ওরা যে খেলা আমার জিবনে খেলেছে তার প্রতিশোধ এইভাবেই নিতে চাই। আমি হৃদিরানী আর ডাক্তারের কথা শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু বলিনি কারণ আমি জানি হৃদিরানী আমার খারাপ হোক কখনোই চাইবে না। তাই ওর সিদ্ধান্ত কে আমি সম্মান করি। এখন আমাকে খেলতে হবে। আর আমার স্কিল সম্পর্কে তোমাদের ধারণা আছেই -রিয়া

তাই বলে -সাগর

প্লিজ সাগর আর না করোনা। আমিও চাই নিজেকে প্রমাণ করতে -রিয়া

আচ্ছা যাও তোমরা। আমাদের সবার দোয়া এবং ভালোবাসা তোমাদের উপর আছে। তোমরা পারবে আমি জানি -পরশ

হুম পারতে যে হবেই তোমাদের -নাশিন

আমার বউমা হয়ে হারলে কিন্তু হবে না। আমার বউমা চ্যাম্পিয়ন -সাগরের বাবা

আর আমার মেয়েগুলো খুব শক্তিশালী তাই তাদের হারানো এত সহজ না -রিদিমা চৌধুরী

সবার কাছে দোয়া নিয়ে ওরা খেলার মাঠে উপস্থিত হলো। সিয়া যে প্রচন্ড শকে আছে তার ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সবার মধ্যেই উত্তেজনা কাজ করছে। আজকে যে এত বড় একটা সারপ্রাইজ পাবে কেউ ভাবেই নি। হৃদিতা ওরা মাঠে লাইনে দাড়িয়েই সিয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। সিয়া বুঝে গেছে যে আজকে হার নিশ্চিত।

যথারীতি খেলা শুরু হলো। সিয়ারা হৃদিতাদের কাছ থেকে বল নিতেই পারছে না। বিরতির আগেই চারটা গোল হয়ে গেছে। সবাই তো শুধু হৃদিতা রিয়াকে রাইসা রাহি রোহানি চিয়ার্স আপ করছে। এখন বিরতি দিয়েছে। হৃদিতা রিয়া রাইসা রাহি রোহানি গেল সিয়া দের ওখানে

হাই মিস সিয়া -রিয়া

কেমন লাগছে -হৃদিতা

আর বলিস না মন চাচ্ছে কোথাও লুকিয়ে থাকি -রাহি

ইসস হায় আমার তো মনটা ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে। পরশ মেরী জান প্লিজ কাম। মেরী বাঁচালো -রাইসা

ওইযে ড্রামাকুইনের ড্রামা শুরু হয়ে গেছে -পরশ

হাহাহা যায় বলিস না কেন পরশ এরা পারেও বটে -সোহান

ইশশ আমার বউটা কি খেলল আমি মনে হলো চান্দে বসে আছি -সাগর

আমার বউটাকে দেখছিস মনে হচ্ছে বাঘেনি। না জানি কবে আমাকেই খেয়ে ফেলে। ইশশ কবে যে বিয়ে করবো কবে যে বাসর করবো -হৃদান

হৃদানের কথা শুনে পিয়াস সাগর সোহান পরশ নাশিন এমন ভাবে তাকালো হৃদান থতমত খেয়ে গেল। তারপর মেকি হাসি দিয়ে পরশের কাঁধে হাত রাখলো।

আরে ভাই ওমন করে চাচ্ছিস কেন। বয়স তো কম হলো না এখনো বিয়েই করতে পারলাম না বাবা ডাক শুনবো কবে -হৃদান

ভাইয়া আর বেশী দেরী নেই কয়েকদিন পরেই হয়ে যাবে -নাশিন

ইশশ এই কয়েকদিনটা আর যেতে চায় না -পিয়াস

আরে তোমাদের সবার দেখছি বিয়ের খুব তাড়া। মধ্যে আমি নামক মাছুম বাচ্চার সামনে এমন কথা বললে আমার বুঝি ইচ্ছে করে না -নাশিন

কি ইচ্ছে করে নাশিন ভাইয়া -আনহা

আবব তেমন কিছু না। তুই পিচ্চি পিচ্চির মতো থাক বড়দের কথার মাঝখানে আসছিস কেন -নাশিন

এই এই আমি পিচ্চি তোমাকে কে বলল। আমি এইটিন প্লাস সো বুঝে কথা বলবে -আনহা

তো পিচ্চি বড় হইছিস? -নাশিন

বড় হইনি তুমি জানো ঠিক বয়সে বিয়ে হলে এখন দুই বাচ্চার মা হয়ে যেতাম আর বলছে আমি বড় হয়নি -আনহা

আনহার কথা শুনে বসাই চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে। আনহা তো রেগে কি বলছে বুঝতেই পারছে না। নাশিন তো হতভম্ব হয়ে গেছে কি বলে এই পিচ্চি

তা তোমার বিয়ের ঠিক বয়স কত ছিলো শালিকা -নিয়ন

কেন ক্লাস নাইন। তোমরা জানো ক্লাস নাইনে আমার সাথে পড়া কয়েকজনের বিয়ে হয়ে গেছে এখন ওরা তিন তিনটা বাচ্চার মা আর আমি? হায় কি কপাল এখনো পাপা মমের চোখেই পড়লাম না -আনহা

বোনের মনে যে এসব চলছে হৃদান তো তাজ্জব হয়ে গেছে। নিজেই বিয়ে করলাম না তার পিচ্চি বোন বলে দুই বাচ্চার মা হয়ে যেতো। পরক্ষনেই আনহার দিকে তাকিয়ে দেখে ও মুখ চেপে হাসছে। হৃদান তখন বুঝলো ওদের বোকা বানাচ্ছে এই মেয়ে। আলো তো সেই কখন থেকে হেসেই যাচ্ছে ও আগে থেকেই জানে ওর বোন কেমন। নাশিন এখনো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে কল্পনা করছে ওদের বিয়ে হয়ে দুইটা বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা দুইটাকে ওর কোলে দিয়ে আনহা চকলেট খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। বাচ্চা করে দিয়েছে পটি আনহাকে বলতেই গর্জে উঠে জারি দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো তারপর নিজেই পরিষ্কার করতে লাগলো। নাহ আর ভাবতে পারছে খকখক করে কেঁশে উঠলো নাশিন। সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এই সুযোগে আনহা নিজেও চলে গেল হৃদিতাদের ওখানে।

হাই ওয়ান ইয়ার এক্স চ্যাম্পিয়ন আপু। কেমন আছো এখন -আনহা

আনহা এভাবে বলিস না সত্যি বড্ড কষ্টের বিষয়টা -আলো

আলোপু আর বইলো না আমার যে এত কষ্ট লাগছে মনে চাচ্ছে শুধু জামাই মানে মেরী জান পরশের কুলে বসে কতক্ষন কান্না করি -রাইসা

হায় কি কপাল। একবার লড়াই ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হয়ে কি গুমর টাই না দেখালো কিন্তু এখন -রোহানি

মুখ সামলে কথা বলো তোমরা, ভালো হবে না বলে দিচ্ছি -সিয়া

আর বলিস না মিস সিয়া যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে আমাদের আটকানোর। কত কষ্ট করে একজন কে কিড়ন্যাপিং করে আটকে রাখলো কিন্তু থামাতে পারলো না -রাহি

মা মা মানে -সিয়া

মিসেসসসস খানননন আপনার মেয়ে মা মা করছে তাড়াতাড়ি আসুন -হৃদিতা

হৃদিতারা উঠে চলে আসলো। সিয়া রেগে গিয়ে নিজের কোচের কাছে গেল। গিয়ে দেখলো কোচ মুখ ভার করে বসে আছে। সিয়া তো রেগে ফোস ফোস করছে। কোচ কিছুক্ষন ভেবে সিয়াকে একটা ট্রিকস শিখিয়ে দিলো। ট্রিকসের পরিণতি ভেবেই সিয়া বাঁকা হেসে চলে গেল খেলার মাঠে কোচ ও গেল পিছু পিছু। বিরতি শেষ শুরু হবে পরের রাউন্ড।

চলবে….?

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২০
Tahrim Muntahana

মাঠের মধ্যে সিয়া পা ধরে বসে আছে। আর সবাই ওকে ঘিরে রেখেছে। উৎসুক জনতা কেউ কেউ সিটি বাজাচ্ছে, কেউ কেউ চিৎকার করে হৃদিতা দের বাহুবা দিচ্ছি, কেউ কেউ চিয়ার্স আপ করছে। এসব দেখে সিয়া রেগে মাঠের মধ্যে পা ধরে বসে আছে আর চোখের পানি ফেলছে। ব্যাথা তো কম পায়নি। এবারও নিজের ফাঁদে নিজে পড়েছে।

ফ্লাসবেক

বিরতি শেষ হলে পুনরায় সব খেলোয়াড় একত্র হয়েছে। খেলা শুরু হয়েছে তখনি সিয়া তার কোচের শেখানো পথ থেকে যখনি রিয়াকে লেং মারতে যাবে রিয়া বল নিয়ে লাফ দিয়ে দূরে চলে গেলো আর হৃদিতা না দেখার ভান করে সিয়াকে লেং মেরে ফেলে দিলো।

ওহ সরি সরি আমি দেখেনি। বাট আপনি পরে যেতে নিচ্ছিলেন কেন মিস সিয়া -হৃদিতা

হ্যাঁ কাউকে বুঝি লেং মারতে চেয়েছিলেন -রাহি

কিন্তু শেষমেষ নিজের করা ফাঁদে নিজেই পড়লেন -রোহানি

হাহ আফসোস -রাইসা

তুমি আমাকে ইচ্ছে করে ফেলে দিছো আমি এখনি কোচকে বলবো -সিয়া

রিয়েলি তো বলে কি আপনি আপনার কোচ কেও ফাঁসাতে চাইছেন নাকি -রিয়া

মানে -সিয়া

মানে বুঝতে পারছেন না। নিজে তো রিয়ু কে লেং মারতে গিয়েছিলেন তো পারলেন না। কি করে পারবেন বলেন এত সহজ নাকি -হৃদিতা

বর্তমানে সিয়া কিছু বলতে যাবে য়ার আগেই সিয়ার কোচ বরফ নিয়ে আসলো। কিছুক্ষন বরফ ঘসে বেরিয়ে গেল মাথা নিচু করে। সিয়া ও কষ্ট করে উঠে দাড়ালো। আবার খেলা শুরু হলো। সিয়ারা একটা রান ও করতে পারে নি। অথচ হৃদিতারা ৮ অলরেডি করে ফেলছে। করবেই বা না কেন পাঁচজন এক্সপার্ট যেখানে সেখানে আরো করা উচিত ছিলো। হৃদিতারা তো সিয়াকে বিভিন্ন ভাবে লেইক পুল করছে। সিয়া আর সহ্য করতে পারছে না এত অপমান। খেলা শেষ না হলে যেতেও পারছে না।
__________________________

এরা পাঁচজন তো দেখি আমাদের ও হার মানাবে -সোহান

কার আন্ডারে প্রেকটিস করেছে দেখতে হবে না -নাশিন ভাব নিয়ে বলল

সাথে আমি না থাকলে পারতি তুই -হৃদান

হয়ছে সবারই কষ্টের ফল আজ পাবে -পরশ

হুমম আমার বউটাতো তো একবছর কম কষ্ট করেনি। আমি তো ভাবতেই পারছি না আমার বউ আজ এত ভালো খেলবে। সত্যি আমার খুব গর্ব হচ্ছে -সাগর

যায় বলিস না কেন তোরা আমার বউমা না হলে এইবার এত ভালো খেলতে পারতো না হাহাহা -সাগরের বাবা

হুমম ওরা পাঁচজন কেউ কারো থেকে কম না। যে এক্সপার্ট সেও ওদের ধরতে পারবে না কে ভালো খেলে -সাগর

বাট আমি ধরতে পারবো এক্সপার্ট না হয়েই -হৃদান

হৃদানের কথা শুনে পরশ মুচকি হাসলো পরশ ও বেশ ধরতে পেরেছে। তাই হৃদানের দিকে চেয়ে আছে ওর সাথে মিলে কিনা দেখবে

বলতো শুনি আমি কিন্তু ধরতে পারিনি -সোহান

ফাস্ট হৃদপরী। কারণ হৃদপরী ছয়টা মাস প্রাণপণ প্রেকটিস করেছে আর রিয়ুর টিকস তো আছেই। ওসব টিকস কিন্তু আয়ত্ব করা খুব কঠিন। আর ও যেহেতু দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন তাই ও সবার আগে গোল দিচ্ছে। হৃদপরীর স্কিল দৌড়ের গতি রিয়ুর টিকস প্রত্যেকটা স্টেপ অনুসারে হৃদপরী ফাস্ট। তারপর রিয়ু। রিয়ু আগে থেকেই চ্যাম্পিয়ন আর ওর টিকস গুলোও আছে কিন্তু একবছর প্রেকটিস না করার কারণে ও একটু পিছিয়ে আছে তাও তা দেখার মতো না। আর রাইসা রাহি রোহানি ওরা তিনজন এক সমান। ইউনিক ট্রিকস বাদে ওরা পারফেক্ট আছে -হৃদান

হৃদানের বর্ণনা শুনে পরশ মুচকি হাসলো। ঠিক ওর সাথে মিলে গেছে। আর সবাই হা করে আছে। ওরা এসব ভাবেই নি।

হা বন্ধ করো মশা ঢুকবে -নাশিন

হাহাহা -সাগর

খেলা তো প্রায় শেষে দিকে ১১ টা গোল আর চারটা করতে পারলেই সুপার হবে -সোহান

আর দশ মিনিট আছে করতে পারবে বলে মনে হয়না -সাগর

আচ্ছা হৃদিপাখি ডাক দিয়ে বল কথাটা ঠিক ১৫ টা করে দেখিয়ে দিবে -পরশ

সাগর সোহান তাই করলো। হৃদিতারা শুনে মুচকি হাসলো। হেসেই ওরা পজিশন নিয়ে দাড়ালো। ভেবেছিলো আর গোল দিবে না কিন্তু ওরা যেহেতু বলেছে দিতেই হয়। রাইসা আর রিয়ু দাড়িয়ে আছে গোলের থেকে একটু দূরে। হৃদিতার কাছে বল। ঝড়ের গতিতে বলটা রাইসার কাছে দিতেই রাইসা গোলে ফেলে দিলো। এইভাবে সময়ের আগে পাঁচটা গোল হয়ে গেছে। যেখানে চেয়েছিলো মোট ১৫ টা সেখানে ১৬ টা হয়েছে।

খেলা শেষ হতে ওরা পাঁচ জন একসাথে গ্রুপ হাগ করে লাফালাফি শুরু করে দিলো। হৃদান ওরা দৌড়ে ভিতরে চলে গেল। হৃদান গিয়ে হৃদিতাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো। পরশ রাইসাকে জড়িয়ে ধরলো। সাগর রিয়ুকে আগে বসালো। অনেক স্ট্রেস গেছে। সোহান রাহিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো। রাহি মুচকি হেসে পানি নিয়ে আগে মুখে পানির ছিটা দিলো। তারপর পানি খেয়ে পানির বোতল টা ফিরিয়ে দিলো। সামনে তাকিয়ে এদের জুটির ভালোবাসার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। সোহান তা লক্ষ্য করে রাহিকেও জড়িয়ে ধরলো। রাহি এটাই চাইছিলো। মুচকি হেসে সোহানের বুকে মুখ গুজলো। রোহানি ওর মা বাবার সাথে বসে আছে। দূর থেকে পিয়াস ওর কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। রোহানির ও ইচ্ছে করছে কিন্তু ওর বাবা ওকে ছাড়ছেই না। তাই কিছু সময় অসহায় চোখে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। পিয়াস ওইভাবেই দাড়িয়ে তার প্রেয়সীকে দেখতে ব্যস্ত।

সিয়া ওদের শুধু কেন অল দর্শকদের কাউকে যেতে না করেছে হৃদিয়া। এখন খেলার মাঠেই ইন্টারভিউ হবে। রাহি রোহানি রাইসা রিয়া হৃদিতা আধির সাহিল আরো বেশ কয়েকজন বসে আছে পিছে কয়েকজন দাড়িয়ে আছে। সামনে রিপোর্টার রা। পাশে কয়েকদল পুলিশ। তার পাশেই সিয়া হিয়া আর ওদের কোচ দল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হৃদানরা হৃদিতার দের একটু দূরেই দাড়িয়ে থেকে ওদের দেখছে। বাড়ির সবাই চলে যেতে চেয়েছিলো ওরাই না করেছে। এখন যে রহস্য খুলবে।

একটা একটা করে প্রশ্ন করবেন উত্তর দিবো একসাথে প্রশ্ন করবেন না আগেই বলে রাখছি। আজ আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর যাবো -হৃদিতা

মেম আপনাদের এখন কেমন লাগছে জয়ী হয়ে -রির্পোটার

আজব কথা বললেন ভাই। জয় নিয়ে কার না আনন্দ হয়। তাও আবার এত গোলে -রোহানি

রোহানির কথা শুনে রিপোর্টার টি থতমত খেয়ে গেল। হৃদান ওরা হেসে দিলো। এরা আরেও বটে।

রিয়া মেম আমরা শুনেছিলাম আপনি আর খেলতে পারবেন কিন্তু আজ খেললেন কেমনে -রির্পোটার

তাহলে কি অাগের খবরটা মিথ্যে ছিলো -আরেক রিপোর্টার

না মিথ্যে না। একটা কারণে আমি চোখে দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলি। শুধু এটা জানেন না আপনার ওই এক্সিডেন্টের জন্য আমার হার্ট ড্যামেজ হওয়ার সম্ভবনা থাকবে যদি আমি পুনরায় খেলি। তাই হার্ট ট্রান্সফার না হলে খেলতে পারতাম না। ছয়মাস আগে চোখের পাশাপাশি হার্টের ও অপারেশন হয়েছে তাই খেলতে পারছি। আর আজ ও খেলতাম না কিন্তু আমাদের দলের একটা খেলোয়াড মিসিং তাই বাধ্য হয়ে খেলায় নামতে হলো। আর যায় হোক চিটিংবাজ দের সাথে হারতে তো পারি না -রিয়া

চিটিংবাজ বলতে কেউ কি ইচ্ছে করে করেছে এমন -রির্পোটার

ইয়েস ওইযে দেখুন মিসিং হওয়া খেলোয়াড। মাথায় পায়ে ব্যান্ডেজ। ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো। যাতে আমরা না খেলতে পারি আর অন্যদল অনায়েসেই কোনো প্রকার খেলা ছাড়াই বিজয়ী হোক -রাহি

আপনরা কাদের সন্দেহ করছেন – রিপোর্টার

এই যে আপনাদের একটাই দোষ বড্ড প্রশ্ন করেন। রিপোর্টার হয়েছেন কেমনে বলুনতো। কেন বুঝতে পারছেন না অন্যদল বলতে কি বুঝিয়েছে-আধির

যা যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন পুরস্কার নিতে হবে তো -সাহিল

মেম আমরা শুনেছিলাম রিয়া মেমের উপর ওইবার ন্যাশনালের আগে হামলা হয়েছিল এটা কি সঠিক -রির্পোটার

হ্যাঁ সঠিক -হৃদিতা

কে করেছে জানতে পেরেছেন -রির্পোটার

হ্যাঁ অফিসার নিয়ে আসুন -হৃদিতার

কয়েকটা ছেলেকে নিয়ে আসলো। ওদের কে দেখে সিয়া আর হিয়া থরথর করে কাঁপছে। তা দেখে ওরা বাঁকা হাসলো। ওরা দুজন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। পালানোর রাস্তা খুঁজছে। যখনি দৌড় দিতে যাবে তখনি

মিস সিয়া হিয়া ভয় পেয়ে গেলেন বুঝি -হৃদিতা

চমকে দাড়িয়ে গেল ওরা। শেষ রক্ষা হলো না।

ভ ভ ভয় পাবো কেন -সিয়া

পালাচ্ছেন কেন আর তোতলাচ্ছেন ই বা কেন -রিয়া

পালাবো কেন হ্যাঁ কি বলবে বলো -হিয়া

কিছু বলবো না শুধু দেখাবো। অফিসার নিয়ে আসুন এদের দুইটাকে -হৃদিতা

আজকে স্বাদ মিটিয়ে দিবো -রাইসা

মা মা মানে কি বলছো তোমরা কি করেছি -সিয়া

আহারে বেচারি ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে পারে না। হেই তোরা ওদের কিছু বলিস না দেখছিস না কেমন ভয় পাচ্ছে -রাহি

পানি খাবেন মিস সিয়া নাকি কোল্ড ড্রিংকস আনাবো -আধির

বিয়ারের ব্যবস্থা করি। পার্টিও হবে -রোহানি

এই এতো কথা রাখ তো এই দুটোকে এখানে আসতে বল। আমার শরীর কিন্তু রাগে জ্বলে যাচ্ছে -সাহিল

রিলেক্স সাহি। অফিসার আনুন ওদের -হৃদিতা

ওরা দুজন তো ভয়ে কাঁপছে। আজকে যে ওরা শেষ সেটা অলরেডি বুঝে গেছে। ওরা আসার সাথে সাথে হৃদিতা যা করলো তা দেখে সবার চোখ কপালে উঠার উপক্রম…

চলবে….?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে