#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ৮
#দিশা_মনি
স্নেহা আর দীপ্রকে কাছাকাছি দেখে নিপুণ খুব কষ্ট পেয়ে ছুটে বেরিয়ে যেতে নেয়। দীপ্র যার তার পেছন পেছন। স্নেহা পুরো ব্যাপারটা বেশ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। সে কিছুটা উপলব্ধি করতে পারে ঠিক কি হয়েছে। এই মেয়েটাকে চেনে সে। চৌধুরী বাড়িতে থাকা তার শুভাকাঙ্ক্ষী এই মেয়ের ছবি দিয়েছিল তাকে। স্নেহা বিড়বিড় করে বলে,
‘এই নাহলে নিপুণ চৌধুরী। আব্বাস চৌধুরী আর রাহেলা চৌধুরীর মেয়ে। তোমাকে তো আমি সবথেকে বেশি কাঁদাবো মেয়ে। এই তো সবে তোমার কান্নার শুরু। তোমার ভালোবাসার যা কিছু আছে সবই আমি তোমার থেকে কেড়ে নেব যেভাবে তোমার মা কেড়ে নিয়েছিল আমার মায়ের থেকে।’
একথা বলেই সে অতীতে ডুব দেয়। মনে করে নিজের মায়ের মুখটা।
এদিকে দীপ্র নিপুণকে আটকানোর জন্য তার পিছন পিছন যেতে থাকে। একসময় নিপুণকে আটকে ফেলে। নিপুণ জেদ দেখিয়ে বলতে থাকে,
‘আমাকে আটকিও না। আমাকে যেতে দাও। তুমি যাও ঐ মেয়েটাকে নিয়ে থাকো।’
দীপ্র নিপুণকে আরো শক্ত করে ধরে। নিপুণকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
‘আগে আমার সব কথা শোন তুই তারপর যেখানে যাওয়ার যাস।’
‘কি বলবে তুমি? তোমার কি কিছু বলার মুখ আছে? কিভাবে পারলে তুমি ঐ মেয়েটার এত কাছে আসতে?’
‘নিপুণ, বিলিভ মি। ঐ মেয়েটাকে আমি চিনি না। তাড়াহুড়ো করে অফিসে ঢোকার সময় হঠাৎ করে ওর সাথে ধাক্কা লেগে গেল আর…’
নিপুণ দীপ্রর কথা শুনে নিজের ভুলটা বুঝতে পারে। তারপর নিজের কান ধরে বলে,
‘সরি। আসলে আমি তোমাকে নিয়ে অনেক বেশি পজেসিভ হয়ে গেছিলাম। আর তাই…’
দীপ্র নিপুণের অনেক কাছে এসে বলে,
‘কোন ব্যাপার না। আই লাইক ইউর দিস পজেসিভনেস।’
নিপুণ লাজুক হাসে। অতঃপর ভেবে বলে,
‘ইস, আমি কি একটা গড়বড় করে দিলাম। মা তোমার জন্য খাবার পাঠিয়েছিল আর আমি সেই খাবার ফেলে দিলাম। এবার তুমি কি খাবে?’
‘কোন ব্যাপার না। আমি ক্যান্টিনে খেয়ে নেব।’
‘সত্যি বলছ তো?’
‘হুম।’
‘তাহলে আমাকে ছুয়ে প্রমিস করো যে তুমি ক্যান্টিনে খেয়ে নেবে। তাহলে আমি নিশ্চিন্তে বাড়িতে ফিরতে পারব।’
দীপ্র নিপুণের হাতটা ধরে বলে,
‘আচ্ছা, তোকে ছুয়ে প্রমিস করলাম।’
‘ঠিক আছে। তুমি খেয়ে নিও। আমি যাচ্ছি। আমাকে আবার এখান থেকে আদালতে যেতে হবে।’
‘আদালতে কেন?’
‘আরে তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছিলাম, আমাকে আগামী কিছুদিন একটি ল ফার্মে একজন লইয়্যারের থেকে বেসিক ট্রেনিং নিতে হবে। তারপরই তো আমি একজন পরিপূর্ণ উকিল হতে পারব। যার মাধ্যমে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।’
‘আচ্ছা যা। সাবধানে যাস কিন্তু।’
নিপুণ দীপ্রর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। দূরে দাঁড়িয়ে এই সব দৃশ্য দেখছিল স্নেহা। সে এসব দেখে বলে,
‘তোমাকে আমি কিছুতেই এত সুখী থাকতে দেব না নিপুণ। তোমার মায়ের জন্য আমার মা সুখী হতে পারে নি। এবার তোমার সব সুখ কেড়ে নিয়ে আমি আমার মায়ের সাথে হওয়া সকল অন্যায়ের বদলা নেবোই।’
✨✨✨
দীপ্র মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে এসে বিশ্রাম নেয়। তারপর সে নিজের কোম্পানির নতুন ম্যানেজারকে ডেকে পাঠায়। তার ম্যানেজার এলে সে তাকে জিজ্ঞেস করে,
“আমার নতুন পিএর জন্য যে ইন্টারভিউ ডেকেছিলাম তার ব্যবস্থা করেছ?”
দীপ্রর ম্যানেজার বলে,
“হ্যাঁ, আপনার বাবা তো ইন্টারভিউ নিয়েছেন। আর উনি আপনার জন্য নতুন পিএও সিলেক্ট করে দিয়েছেন।”
“আব্বু ইন্টারভিউ নিয়েছে? আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি আমার নতুন পিএকে কাজগুলো বুঝিয়ে দিও। আর ওকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার কেবিনে আসতে বলো।”
“জ্বি, স্যার।”
দীপ্র নিজের কাজ গুলো মনযোগ দিয়ে করতে লাগল। আগামী কিছুদিন তার অনেক ব্যস্ত সিডিউল। এক সপ্তাহ পর তার এনগেজমেন্ট। তার আগে অনেক কাজ করতে হবে। কোম্পানির অনেক বড় বড় ডিল আছে, অনেক মিটিং আছে। দীপ্র তখন কাজে ব্যস্ত ছিল এমন সময় স্নেহা এসে তার দরজায় নক করে বলে,
‘মে আই কাম ইন স্যার?’
‘ইয়েস কাম।’
‘আমি আপনার নতুন পিএ। আমার নাম স্নেহা চৌ..না মানে স্নেহা ইসলাম।’
‘ম্যানেজারের কাছ থেকে নিজের কাজগুলো বুঝিয়ে নিয়েছ তো?’
‘জ্বি, স্যার।’
‘গুড।’
দীপ্র তখনও স্নেহার দিকে তাকায় নি। নিজের কাজ করতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ করে স্নেহার দিকে চোখ যেতেই সে অবাক হয়ে যায়। তার মনে পড়ে যায় এই মেয়ের সাথেই তো তখন তার ধাক্কা লেগেছিল।
দীপ্র অবাক স্বরে বলে,
‘তুমি এখানে? তুমি সেই মেয়েটা না যার সাথে সকালে আমার ধাক্কা লেগেছিল?’
‘জ্বি, স্যার। আসলে..’
‘আমি কিছু শুনতে চাইনা। এই জবটা তোমাএ হবে না।’
‘স্যার প্লিজ।’
‘নো মোর ওয়ার্ডস।’
আসলে দীপ্র ভাবে নিপুণ যদি জানতে পারে যে স্নেহাই এই চাকরিটা পেয়েছে তাহলে সে অন্য কিছু ভাবতে পারে। এইজন্যই সে স্নেহাকে চাকরিটা দিতে চাইছিল না। কিন্তু স্নেহাও তো কম যায়না। সে দীপ্রর একেবারে পায়ের কাছে এসে বসে পড়ে। কান্নারত গলায় বলে,
‘স্যার, প্লিজ আমায় একটা সুযোগ দিন।’
দীপ্র বলে,
‘আরে ছাড়ো আমায়। এটা কি করছ তুমি?’
‘স্যার, এই চাকরিটার আমার অনেক দরকার। আমার বাবা অনেক অসুস্থ, আমার ঘরে দুটো ছোট ছোট ভাইবোন আছে। আমি ছাড়া আমার পরিবারকে দেখার মতো কেউ নেই। প্লিজ আমায় জব থেকে ছাড়িয়ে দেবেন না। ‘
স্নেহার জন্য দীপ্রর মায়া লাগতে থাকে। সে ভাবে,
‘মেয়েটা তো নিজের যোগ্যতাতেই চাকরি পেয়েছে। এখন ওকে এভাবে ছাড়িয়ে দিলে সেটা অন্যায় হবে। আর নিপুণ তো আমার অফিসে সেরকম আসেও না। তাই ও কিভাবে জানবে আমার পিএ কে?’
তাই দীপ্র স্নেহাকে বলে,
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। তোমায় আমি ছাড়িয়ে দেব না। তুমি প্লিজ আমার পায়ের কাছ থেকে সরো।’
স্নেহা উঠে দাঁড়ায়। তার মুখে বিজয়ীর হাসি। স্নেহা হাসিটা বজায় রেখেই বলে,
‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার। আমার এই চাকরিটার অনেক দরকার ছিল।’
আর মনে মনে বলে,
‘আমি তাহলে ঠিকই শুনেছিলাম। এই দীপ্র চৌধুরী তাহলে সত্যিই খুব ভালো মনের মানুষ। তাই তো আমার বানোয়াট কথা শুনে রাজি হয়ে গেলেন। এইভাবে ধীরে ধীরে আমি নিজের সব প্ল্যান এক্সিকিউড করব।’
✨✨
দু-তিনটা দিন এভাবেই অতিবাহিত হতে লাগল। স্নেহার কাজে দীপ্র বেশ খুশি। কারণ সে তার দায়িত্ব খুব ভালো ভাবেই পালন করে। আজ দীপ্র বেশ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরল কারণ আজ সে নিপুণকে কথা দিয়েছে সে নিপুণকে নিয়ে এনগেজমেন্টের শপিং করতে যাবে। স্নেহা দীপ্রকে বেরিয়ে যেতে দেখে বলে,
‘স্যার, আজ এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছেন যে?’
‘আসলে আজ আমার কিছু জরুরি কাজ আছে। তুমি এদিকটা একটু সামলে নিও।’
‘আচ্ছা।’
দীপ্র চলে যাবার পর স্নেহা বাকা হেসে বললো,
‘চৌধুরী পরিবারে আবার উৎসবের আমেজ লেগেছে। কোন ব্যাপার না। গতবারের মতো এবারের উৎসবেও একটা বাওড়া হবে।’
~~~~~~
নিপুণকে নিয়ে শপিং করতে থাকে দীপ্র। নিপুণের সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করতে থাকে। নিপুণের পছন্দমতো ড্রেস থেকে শুরু করে সবকিছু কিনে দেয়। এমনকি নিজের পাঞ্জাবিও কেনে নিপুণের পছন্দমতো। অতঃপর তারা দুজনে রেস্টুরেন্টে যায় খেতে। সেখানে নিপুণ দীপ্রকে বলে,
‘তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?’
‘হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি যে?’
‘আমি কখনো ভাবতে পারিনি জানো যে তুমি আমায় ভালোবাসো। সবসময় তোমার রাগ, জেদ দেখে আমি ভেবেছিলাম তুমি আমায় পছন্দ করো না। কিন্তু আমার ভাবনা যে একদম ভুল।’
একটু থেমে,
‘আচ্ছা আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা সবসময় এমন থাকবে তো? কখনো এই ভালোবাসায় ভাটা পড়বে না তো?’
‘কখনো না।’
‘আমার না ইদানীং খুব ভয় হয় দীপ্র। এত ভালোবাসা আমার কপালে সইবে তো? আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলব না তো?’
‘তুই এত চিন্তা করিস না নিপুণ। মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই আমাদের আলাদা করতে পারবে না।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨