তুমি ছিলে বলেই ২ পর্ব-০৭

0
119

#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ৭
#দিশা_মনি

চৌধুরী বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অনুপম ও প্রেরণার বিয়ে। বিয়ের পর তাদের বিদায় অনুষ্ঠিত হয়। বিদায়ের সময় খোদেজা চৌধুরী অনেক কান্নাকাটি করেন। তবে তিনি অনেক খুশিও হন কারণ তার মেয়ে অনেক সুখী হতে চলেছে।

এদিকে দীপ্র ও নিপুণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নিপুণ এখনো কিছু বলতে পারছে না। তার মনে দীপ্রর জন্য অনুভূতি ছিল কিন্তু দীপ্রর মনেও যে একই রকম অনুভূতি ছিল সেটা সে কল্পনাও করতে পারে নি। দীপ্র নিপুণের কিছুটা কাছে এসে বলে,
“এভাবে কি দেখছিস আমার দিকে? আমার দিকে একদম তাকাবি না।”

“এত নিষ্ঠুর কেন তুমি দীপ্র ভাইয়া?”

“নিষ্ঠুর আমি নই নিষ্ঠুর তুই। খুব তো ডেং ডেং করে বিয়ের আসরে বসে পড়েছিলি। তোর বিয়েটা হয়ে গেলে আমার কি হতো ভাবতে পারছিস?”

নিপুণ নিজের পক্ষে বলে,
“আমি কি করতাম দীপ্র ভাইয়া? বড় আব্বু এমন ভাবে বলল যে…”

“তুই আর কিছু বলিস না। এসব কিছুর শোধ আমি সুদে আসলে তুলব।”

নিপুণ চুপ হয়ে যায়। তার এবার খুব খারাপ লাগতে শুরু করে। এদিকে প্রেরণাকে বিদায় দিয়ে আলতাফ চৌধুরী এগিয়ে আসেন তাদের দিকে। এসেই তিনি দীপ্রকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
“তুই তো আজ আমায় চমকে দিলি দীপ্র।”

“আসলে আব্বু..”

“তুই চুপ কর। আমি নিপুণ মায়ের সাথে কথা বলতে চাই। নিপুণ মা, তোমার কি দীপ্রকে পছন্দ? দীপ্রকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে?”

নিপুণ থতমত খেয়ে যায়। কিভাবে কি বলবে বুঝতে পারছিল না।

“কি হলো মা বলো?”

নিপুণ মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। দীপ্রর মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। আলতাফ চৌধুরী মৃদু হেসে বলেন,
“বাহ, বেশ ভালো তো। মিয়া, বিবি রাজি তো কেয়া কারে গি কাজি? আমি খুব শীঘ্রই তোমাদের চার হাত এক করার ব্যবস্থা করছি।”

আলতাফ চৌধুরীর এই কথা তাদেরকে অনেক খুশি করে দেয়। আলতাফ চৌধুরী দীপ্র ও নিপুণ দুজনকেই নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে রাহেলা চৌধুরীকে বলে,
“ওদেরকে এক সাথে সুন্দর লাগছে না?”

রাহেলা চৌধুরী সম্মতি দেন। আলতাফ চৌধুরী বলেন,
“আমার ছেলেকে নিজের মেয়ের স্বামী হিসেবে মানতে তোমার কি কোন অসুবিধা আছে?”

“না, অসুবিধা থাকবে কেন? দীপ্রকে মেয়ের জামাই হিসেবে পাওয়া তো আমার সৌভাগ্য।”

“বেশ, তাহলে তো সব সমস্যা মিটেই গেল। আজ আমি এখানে ঘোষণা করছি আর এক সপ্তাহ পরেই ওদের এনগেজমেন্ট হবে।”

✨✨
সালমা বেগম হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন দিশার দিকে। এদিকে রাজ্জাক মন্ডল রেগে গিয়ে সোহাগকে বলেন,
“এটা কি করলে তুমি? আমি তোমার মায়ের সাথে এত বছর সংসার করেছি অথচ কোনদিন তার গায়ে ফুলের টোকা পর্যন্ত দেই নি। আর তুমি বিয়ে হতে না হতেই নিজের মা-বাবার সামনে নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তুললে।”

দিশা বলে ওঠে,
“আপনাদের এত ভালোমানুষি দেখাতে হবে না। এসব আমার ডায়জাস্ট হচ্ছে না। আমি সব বুঝতে পারছি। আপনারাই সবাই মিলে আপনাদের ছেলেকে আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। বড়লোকের মেয়ে বলে কথা। কি ভেবেছিলেন আমাকে দিয়ে আমার বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবেন? তাহলে শুনে রাখুন সেটা হচ্ছে না। আমার বাবা আমাকে ত্যাজ্য করেছে। তার কোন কিছুর সিকি ভাগ আমি পাবো না। তাই আপনাদের সব ষড়যন্ত্র বিফলে গেল।”

সোহাগ বলে,
“তুমি ভুল ভাবছ দিশা। আমি বা আমার মা-বাবা কেউ লোভী নই। আর তোমার বাবার সম্পত্তিরও আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের যা আছে আমরা তাই নিয়ে খুশি।”

“নাটক।”

“তুমি যাই বলো আর তাই বলো এখন তোমায় আমাদের সাথেই থাকতে হবে। তাই নিজের ভালো চাইলে আমার মা-বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাদের বাড়িতে চলো।”

“সরি মাই ফুট।”

বলেই দিশা সোহাগের বাড়িতে ঢুকে যায়। তারপর সালমা বেগমকে বলে,
“আমাকে এই বাড়ির সবথেকে সুন্দর রুমটা দেখিয়ে দিন তো। আর আমার জন্য রাতে ভালো কোন খাবারের ব্যবস্থা করুন। এখানে এমনিতেও আমি বেশিদিন থাকব না। এখন ঠ্যাকায় পড়ে আছি। আপনার ছেলেকে জেলের ভাত খাইয়ে তারপর আমি এখান থেকে বিদায় নেবো।”

দিশার কথায় সালমা বেগম ও রাজ্জাক মন্ডল দুজনেই ভয় পেয়ে যায়। এদিকে সোহাগ বাকা হেসে বলে,
“তুমি কিছুই জানো না দিশা। ঐ স্নেহা নামের মেয়েটা যে তোমার পরিবার আর তোমার কি হাল করবে সেটা সময় এলেই বুঝবে।”

✨✨
দীপ্র আজ সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছে। আজ অফিসে অনেক জরুরি একটা মিটিং আছে। আলতাফ চৌধুরীও তাকে তাড়া দিচ্ছে। ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাইনিং টেবিলে বসার পর সে তার মাকে দেখতে না পেয়ে রাহেলা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করে,
“মা কোথায় চাচি?”

রাহেলা চৌধুরী কিছু বলার আগেই খোদেজা চৌধুরী পান চিবোতে চিবোতে বলেন,
“তোর মা যে সেই কাল ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করেছে তারপর আর খোলে নি।”

“এ কথা আমায় আগে বলো নি কেন?”

দীপ্র দ্রুত উঠে যায় তার মায়ের রুমের সামনে। সে অনেক ডাকে কিন্তু দিলারা চৌধুরী তার ডাকে কোন সাড়া দেয় না। অনেকক্ষণ পর বলেন,
“তুই যা দীপ্র। আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমায় একা থাকতে দে। প্লিজ যা এখান থেকে।”

দীপ্রর মিটিং এ দেরি হচ্ছিল। তাই সেও আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। যাওয়ার পথে রাহেলা চৌধুরী তাকে আটকে বলে,
“এভাবে না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস? কিছু খেয়ে যা।”

“আমার খিদে নেই।”

বলেই দীপ্র চলে যায়। দীপ্র যাওয়ার পর রাহেলা চৌধুরী রেগে গিয়ে খোদেজা চৌধুরীকে বলেন,
“কি দরকার ছিল দীপ্রকে এসব বলার? ছেলেটা এখন না খেয়েই অফিসে চলে গেল।”

“কেন বলবো না? তোমার শুধু দীপ্রকে নিয়েই যত চিন্তা। আর বড় ভাবি যে না খেয়ে আছে সে ব্যাপারে তো একটি বারও ভাবছ না।”

“ভাবিকে আমি ঠিকই বুঝিয়ে খাওয়াতাম। ছেলেটা অফিসে গেল। ও যা কাজপাগল মনে হয়না আর সারাদিন কিছু খাবে।”

এরমধ্যে নিপুণ সেখানে এসে বলে,
“কি হয়েছে আম্মু?”

“দেখ না, দীপ্র কিছু না খেয়েই অফিসে চলে গেল।”

“ও এই ব্যাপার। আচ্ছা, তুমি একটা কাজ করো খাবারগুলো টিফিন বক্সে করে আমাকে দাও। আমি গিয়ে দীপ্র ভাইয়ার অফিসে খাবার গুলো দিয়ে আসব।”

“আচ্ছা তুই দাড়া আমি দিচ্ছি।'”

খোদেজা চৌধুরী বিড়বিড় করে বলেন,
“এদের মা-মেয়ের ঢং দেখে আর বাঁচি না।”

✨✨✨
স্নেহা আজ চৌধুরী এন্টারপ্রাইজে এসেছে দীপ্রর পিএর জব পাওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতে। সে চুপচাপ বসে আছে অন্যান্য আরো অনেক ব্যক্তির সাথে। আশপাশটা ভালো ভাবে নজর বুলিয়ে দেখছে সে।

“এই তাহলে সেই চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। যাকে নিয়ে চৌধুরীদের এত স্বপ্ন, এত অহংকার।”

এরমধ্যে একজন এসে বলে,
“ইন্টারভিউ একটু দেরিতে শুরু হবে। আজ স্যারের একটা ইম্পোট্যান্ট মিটিং আছে।”

সবাই হতাশ হয়ে যায়। স্নেহার আর বসে থাকতে ভালো লাগছিল না। তাই সে চারপাশটা ঘুরে দেখার জন্য উঠে দাঁড়ায়। কিছুটা সামনের দিকে যেতে থাকে। এমন সময় দীপ্রও তাড়াহুড়ো করে অফিসে ঢুকছিল। হঠাৎ করেই দীপ্রর সাথে স্নেহার ধাক্কা লেগে যায় এবং স্নেহা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিল এমন সময় দীপ্র স্নেহাকে ধরে ফেলে। স্নেহা দীপ্রর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। দীপ্রও অদ্ভুতভাবে দেখতে থাকে পুরুষের বেশভূষায় থাকা এই মেয়েটিকে। তার চেহারার সাথে কারো যেন প্রচণ্ড মিল খুঁজে পাচ্ছিল। এমন সময় নিপুণও দীপ্রর জন্য খাবার নিয়ে ছুটে আসে। সে তো প্রথম দেখায় ভেবেছিল দীপ্র কোন ছেলেকে ধরে আছে কিন্তু একটু এগিয়ে গিয়ে যখন বুঝতে পারে এটা কোন ছেলে নয় মে তখন তার চোয়াল শক্ত হয়। রেগে গিয়ে সে টিফিনের বাক্সটা আছাড় দেয়। দীপ্র সজাগ হয়ে স্নেহাকে সোজা করে দাড় করিয়ে নিপুণের দিকে তাকায়। নিপুণ তাদের দিকে রাগী চোখে তাকায়। তার চোখ থেকে যেন অশ্রুরা গড়িয়ে পড়ার জন্য অপেক্ষা করছিল।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে