#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ৩
#দিশা_মনি
স্নেহা আজ সকাল সকাল বাসা থেকে বেরিয়েছে। শেফালি বেগম তাকে দেখেও কিছু বললেন না। মেয়েটা যখন তার কোন কথা শুনবেই না তখন বলে আর কি হবে?
স্নেহার পরণে একটা কালো হুডি। বাইরে এসে কাউকে একটা কল লাগালো স্নেহা। ফোনটা রিসিভ হতেই প্রশ্ন করল,
“ছেলেটা কোথায় এখন?”
“নিউমার্কেটের সামনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।”
“ঠিক আছে। ওর দিকে নজর রাখো। আমি যাচ্ছি।”
স্নেহা নিউমার্কেটের দিকে রওনা দেয়৷ যেতে যেতে ভাবে,
“কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। চৌধুরীদের সর্বনাশের আর বেশি দেরি নেই।”
✨
নিউমার্কেটে পৌঁছে সোহাগের মুখোমুখি দাঁড়ালো স্নেহা। সে মাস্ক পড়ে থাকায় সোহাগ তাকে চিনতে পারল না। বলল,
“কে আপনি?”
স্নেহা মাস্ক খুলে বলে,
“আমায় চিনতে পেরেছেন? নাকি ভুলে গেছেন?”
সোহাগ স্নেহাকে দেখে অবাক হয়ে বললো,
“আরে! আপনি। আপনাকে কিভাবে ভুলবো? আমি তো ভাবতেও পারিনি আপনার সাথে আমার আবার দেখা হবে।”
“দেখাটা হবারই ছিল।”
“ওহ। তো কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ, আপনার সাথে খুব গোপন কথা আছে। একটু সাইডে আসবেন?”
সোহাগ তার বন্ধুদের অপেক্ষা করতে বলে স্নেহার সাথে একটা রেস্টুরেন্টে যায়৷ তারপর বলে,
“এখন বলুন কি বলবেন।”
স্নেহা বলল,
“দিশা চৌধুরীকে চেনেন আপনি?”
দিশার নামটা শুনতেই সোহাগের মাথা গরম হয়ে গেল। সে বলে উঠলো,
“ঐ মেয়েটার নামও নেবেন না আমার সামনে। ও একটা প্রতারক।”
“আই নো। আমি সবকিছুই জানি। মেয়েটা আপনাকে খুব বাজেভাবে ঠকিয়েছে।”
“আপনি এত কিছু জানলেন কিভাবে?”
“সেটা বড় কথা নয়। আমি আপনার সাথে একটা প্রয়োজনেই কথা বলতে এসেছি।”
“প্রয়োজন! কিসের প্রয়োজন?”
“আপনি চান না দিশা চৌধুরীর উপর প্রতিশোধ নিতে?”
“হ্যাঁ, চাই তো৷ কিন্তু আপনি এ ব্যাপারে কি করবেন?”
“আমি দিশা চৌধুরীর উপর প্রতিশোধ নিতে আপনাকে সাহায্য করব।”
“কিন্তু এতে আপনার লাভ কি?”
“লাভ আছে জন্যই তো আমি আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছি। কি লাভ সেটা আপনার না জানলেও চলবে৷ আপনি শুধু বলুন আমার সাথে হাত মিলিয়ে ঐ দিশা চৌধুরীর উপর প্রতিশোধ নেবেন কিনা?”
“হ্যাঁ, নেব আমি প্রতিশোধ।”
“ঠিক আছে। তৈরি হয়ে নিন। দু একদিনের মধ্যেই আমরা রাজশাহী যাচ্ছি। এই নিন, এখানে আমার ফোন নম্বর আছে। আমি তাহলে আজ চলি।”
বলেই চলে গেলো স্নেহা। সোহাগ স্নেহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো,
“মেয়েটা অদ্ভুত! কিন্তু তাতে আমার কি? আমি তো এখন শুধু চাই ঐ দিশার উপর প্রতিশোধ নিতে। ও আমায় ঠকিয়েছে। আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করে এখন অন্য কাউকে বিয়ে করে নিচ্ছে। আমাকে ঠকিয়ে ও সুখে থাকবে এটা আমি কিছুতেই মানব না।”
✨✨✨
চৌধুরী বাড়িতে ইতিমধ্যেই উৎসবের আমেজ নেমেছে। আর মাত্র দুদিন পরেই দিশার বিয়ে। তাই আয়োজনের কোন ত্রুটি রাখতে চায় না চৌধুরীরা৷ হাজার হাজার গেস্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিয়ে উপলক্ষে চলছে এলাহি আয়োজন।
এসব কিছুর মাঝে মন ভালো নেই নিপুণের। কারণ বেশ কিছুদিন থেকেই সে অসুস্থ। বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে। নিপুণের মামাতো-ফুফাতো বোনেরাও এসেছে। তাদের সাথে মজা করতে না পারার জন্যই নিপুণের মনটা এত খারাপ। সে উদাস মনে যখন নিজের রুমে বসে ছিল ঠিক সেই সময় আগমন ঘটে দীপ্রর। দীপ্র এসে নিপুণকে জিজ্ঞেস করে,
“এখন তোর শরীর কেমন আছে?”
“আছি, মোটামুটি। তুমি হঠাৎ এলে যে?”
“তুই কেমন আছিস সেটা দেখতে এলাম।”
দীপ্রর তার প্রতি এত কেয়ার দেখে নিপুণের অনেক ভালো লাগল। সে আনন্দিত হয়ে মনে মনে বলল,
“তুমি যদি এভাবেই আমার কেয়ার করো তাহলে আমি একবার না বারবার এমন অসুস্থ হতে রাজি আছি।”
দীপ্র এগিয়ে আসে। নিপুণের মাথায় হাত দিয়ে জ্বর পর্যবেক্ষণ করে বলে,
“তুই বেশি বেশি রেস্ট নে। তোর রেস্টের প্রয়োজন। আর হ্যাঁ, ওষুধ খাবি নিয়মিত। কোন অনিয়ম কিন্তু আমি বরদাস্ত করব না।”
“জ্বি, আচ্ছা।”
“হুম। আচ্ছা থাক। আমি যাচ্ছি। নিজের খেয়াল রাখিস।”
দীপ্র চলে যাবার পর নিপুণ বললো,
“তুমি কি কখনো আমার ভালোবাসা বুঝতে পারবা দীপ্র ভাইয়া? নাকি এই অনুভূতি আমার একান্ত আপন থেকে যাবে চিরকাল?”
✨✨
নিপুণ তার কয়েকজন কাজিনের সাথে নিচে নামলো। আজ দিশার গায়ে হলুদ। তাই সবার সাথে সেও আনন্দে মেতে উঠলো। এদিকে নিপুণকে নিচে দেখে রেগে গেল দীপ্র। তার সামনে এসে বললো,
“তুই না অসুস্থ? এই অবস্থায় নিচে এসেছিস কেন? যা নিজের ঘরে গিয়ে রেস্ট নে।”
“ভাইয়া..”
“চুপ। আর একটা কথা বলবি না। তোর কোন কথা আমি শুনতে চাই না। যা বলছি।”
দীপ্রর কথায় নিপুণ মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে গেলো। সে যাবার পর দিশা এসে বললো,
“ভাইয়া। তুমি শুধু শুধুই ওকে এভাবে বলবে। বেচারির আনন্দ করাই হলো না।”
“অসুস্থ শরীর নিয়ে কোন আনন্দ চলবে না। ওর নিজের প্রতি কোন খেয়ালই থাকে না। কি যে হবে এই মেয়ের!”
দিশা চুপিচুপি দীপ্রর কানে বলে,
“কি আর হবে? তুমি আছ না ওর খেয়াল রাখার জন্য? তুমিই ওর খেয়াল রাখবে।”
দীপ্র দিশাকে চোখ রাঙায়। দিশা দাত কেলিয়ে হাসতে থাকে।
✨✨✨
ঢাকা থেকে রাজশাহী গামী একটি বাসে রয়েছে সোহাগ ও স্নেহা। স্নেহা ভাবতে থাকে আজ এখানে আসার জন্য তার খালার সাথে কত কাটাকাটি হয়েছে। তিনি তো স্নেহাকে আসতে দিতে রাজিই ছিল না। অনেক বুঝিয়ে তারপর স্নেহা এসেছে। এদিকে সোহাগ যার চোখ এখন প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ। সে শুধু অপেক্ষা করছে রাজশাহী পৌঁছানোর। তারপরই দিশার উপর সে উপযুক্ত প্রতিশোধ নেবে। মেয়েটা তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। সব সুদে আসলে ফেরত দিতে হবে।
✨✨
দিশার বিয়ে উপলক্ষে আজ চৌধুরী বাড়িতে নাচ গানের আসর বসেছে। নিপুণও সেখানে উপস্থিত হয়েছে তবে দর্শক হিসেবে। নিপুণের খুব ইচ্ছা ছিল দিশার বিয়েতে সে অনেক নাচবে। নিপুণ অনেক ভালো নাচতে পারে। কিন্তু অসুস্থতাই তার কাল হলো। এখন চুপচাপ অন্যের নাচ দেখতে হচ্ছে। নিপুণ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এরইমধ্যে নিপুণের নজর যায় দীপ্রর মামাতো বোন নেহার দিকে। নেহা দীপ্রর দিকে কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে। এই নেহা মেয়েটাকে নিপুণ একদম সহ্যই করতে পারে না। সবসময় সে দীপ্রর সাথে চিপকে থাকার চেষ্টা করে। এরমধ্যে হঠাৎ করে নেহা এসে দীপ্রর হাত ধরে বলে,
“ভাইয়া এসো আমরা ডান্স করি।”
যদিও দীপ্রর কোন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু নেহা দীপ্রকে একপ্রকার টেনে নিয়ে যায়। দুজনে নাচতে থাকে একটি রোম্যান্টিক গানে। যা নিপুণের একদম সহ্য হয়না। রাগী সে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। তারপর দ্রুত উঠে চলে যায়। নিপুণকে যেতে দেখে দীপ্রও তার পিছনে আসে। নিজের রুমে এসে ডুকরে কাঁদতে থাকে নিপুণ। দীপ্র রুমের সামনে এসে বলে,
“এভাবে কাঁদছিস কেন তুই?”
নিপুণ কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
“এখানে কেন এলে তুমি?! যাই নাচো। এখানে তোমার কি? ঐ নেহার সাথে নাচতে তো খুব ভালো লাগছিল।”
“তুই এমন করে কেন বলছিস? আমি তো নেহার সাথে নাচতে চাইনি..ঐ তো জোর করে..আর যদি নাচিও তাতে তোর সমস্যা কি?”
নিপুণ বলে,
“তুমি বোঝো না আমার সমস্যা কোথায়? এত অবুঝ কেন তুমি?”
দীপ্র রুমে ঢুকে নিপুণের চোখের অশ্রু মুছিয়ে দিয়ে বলে,
“আমি সব বুঝি।”
নিপুণ অনিমেষ তাকিয়ে থাকে দীপ্রর দিকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨