তুমি ছিলে বলেই ২ পর্ব-০১

0
610

#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ১
#দিশা_মনি

১.
“ছেঁড়া শাড়ি পড়ে এত বড় অনুষ্ঠানে এসেছিস কেন? তোর কি কোন ভালো শাড়ি নেই?!”

সিংহের মতো গর্জন করে কথাটুকু বলল দীপ্র চৌধুরী। দীপ্রর হুংকারে কেপে উঠল নিপুণ। আমতাআমতা করে বলল,
“আসলে আমি বুঝতে পারি নি যে… ”

নিপুণ নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে পারল না৷ তার পূর্বেই দীপ্র পুনরায় হুংকার দিয়ে বলল,
“নিজের ভালো চাইলে এক্ষুনি এই শাড়িটা পালটে আয়। নাহলে কিন্ত…”

নিপুণ ঘাবড়ে গেল। ইতস্তত বোধ করতে লাগল মেয়েটা। মিনমিন স্বরে বলল,
“আসলে আমার কাছে আর কোন শাড়ি নেই ভাইয়া। তুমি তো জানো আমি শাড়ি পড়ি না। আজ দিশার এনগেজমেন্ট জন্য প্রথম পড়লাম তাই..”

“তাহলে একটা কাজ কর। আম্মুর রুমে যা। গিয়ে আম্মুর থেকে একটা ভালো শাড়ি নিয়ে পড়। এখানে থেকে আর লোক হাসাস না।”

“ঠিক আছে, তুমি চিন্তা করো না। আমি শাড়িটা বদলে আসছি।”

বলেই নিপুণ গুটিগুটি পায়ে চলে যেতে লাগল। দীপ্রর থেকে দূরে এসেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে৷ ছোটবেলা থেকেই দীপ্রকে ভয় পায় নিপুণ। ভয় পাওয়ার কারণও আছে বৈকি৷ দীপ্র রেগে গেলে সাংঘাতিক হয়ে ওঠে। আর সেই রাগের মাত্রাও ভয়াবহ হয়৷ নিপুণ আর দীপ্র চাচাতো ভাইবোন। নিপুণের থেকে পাঁচ বছরের বড় দীপ্র। নিপুণ একেবারে সহজ সরল একটা মেয়ে। বাবা-মায়ের খুব আদুরে। তার এই পৃথিবীতে কাউকে নিয়ে তেমন ভয় নেই কিন্তু দীপ্রকে যমের মতো ভয় পায় সে। নিপুণ আর কিছু ভাবতে পারল না। নিজেই নিজেকে দোষ দিয়ে বললো,
“আমার এই শাড়ি পড়তে চাওয়াই উচিৎ হয়নি। তার থেকে ভালো রোজকার মতো সালোয়ার পড়তাম।”

নিপুণ যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত ছিল তখনই তার মা রাহেলা চৌধুরী তার সামনে আসে। নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে, “আরে, এদিকে কোথায় যাচ্ছিস? দিশার এনগেজমেন্ট তো শুরু হয়ে যাবে একটু পর।”

“আম্মু, আসলে আমার শাড়ি ছিড়ে গেছে। আমাকে নতুন শাড়ি পড়তে হবে।”

রাহেলা চৌধুরী নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“ধুর। এসব শাড়ি-টাড়ি পড়তে গেছিস কেন তুই? যদি সামলাতেই না পারিস? যা গিয়ে সেলোয়ার পড়ে নে।”

“আম্মু, আজ তো সবাই শাড়ি পড়েছে তাই.. ”

“সবাই পড়েছে কারণ ওরা সামলাতে পারে। আচ্ছা, তুই যদি শাড়ি পড়তে চাস তাহলে আমার সাথে আয়। আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।”

রাহেলা চৌধুরীের কথা শুনে নিপুণ চুপচাপ তার পেছনে যেতে থাকে। নিপুণকে নিজের একটা শাড়ি পড়িয়ে দেন রাহেলা চৌধুরী। তারপর আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলেন,
“মাশাল্লাহ, আমার মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে! দেখতে হবে না মেয়েটা কার? কারো নজর না লাগুক।”

নিপুণ সামান্য লজ্জা পেলো।


নিজের বোনের এনগেজমেন্ট উপলক্ষ্যে সব আয়োজন করে নিয়েছে দীপ্র। কোন কিছুর কোন কমতি রাখে নি। এরইমধ্যে দীপ্রর মা দিলারা চৌধুরী এসে উপস্থিত হলেন নিজের ছেলের সামনে। তাকে শুধালেন,
“কিরে দীপ্র? সব এরেঞ্জমেন্ট কমপ্লিট তো?”

“জ্বি, আম্মু। তুমি কোন চিন্তা করো না। সব একদম ঠিকঠাক।”

“হ্যাঁ, সেটাই। কোন কিছুর যেন কোন কমতি না থাকে। লোকে যেন বুঝতে পারে চৌধুরী বাড়ির মেয়ের এনগেজমেন্ট হচ্ছে। আমার একমাত্র মেয়ের এনগেজমেন্টে আমি কোন খামতি রাখতে চাই না।”

দীপ্র মাথা দুলালো সামান্য।

এদিকে দিশা তার বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে ব্যস্ত। দিশার এক বান্ধবী তাকে প্রশ্ন করে,
“কিরে দিশা? তোর সাথে কার বিয়ে ঠিক হয়েছে বললি নাতো? সে কি খুব বড়লোক নাকি?”

দিশা বললো,
“আমার বয়ফ্রেন্ডের থেকে অনেক বড়লোক। এটা নিয়েই আমি খুশি।”

“কিন্তু যদি হ্যান্ডসাম না হয়?”

“আমার বয়ফ্রেন্ডের থেকেও হ্যান্ডসাম। আমি ছবি দেখেছি। তাই তো এই বিয়েতে মত দিয়েছি।”

“নাম কি রে তোর বরের আর কি করে সে?”

“অনুপম খান। খান গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর মালিক।”


রাস্তায় ছুটে চলেছে কয়েকটা বাইক। মূলত আজ এখানে একটা বাইক রেসের আয়োজন করা হয়েছে। শুরু থেকেই সামনে ছিল গত পাঁচ বারের বাইক রেসের চ্যাম্পিয়ন সোহাগ ইসলাম। সে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল যে আজ আবারো সে ষষ্ঠবারের মতো এই রেসে জয়লাভ করবে। গন্তব্যের খুব কাছে পৌঁছে গেছিল সে। আর সামান্য দূরত্বই ছিল কিন্তু তখনই দ্রুতবেগে আরেকটি বাইক এসে তাকে টপকে যায়। বাইকটি একদম ঝড়ের বেগে আসে। সোহাগ বুঝতেই পারে না কখন সে পিছনে পড়ে গেল৷ অবশেষে সোহাগের থেকে বিজয়ের ট্রফি ছিনিয়ে নিলো অন্য কেউ। সোহাগ বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাইক থেকে নেমে নিজের হেলমেট খুলল। তার আত্মসম্মানে খুব লাগলো ঘটনাটা। সোহাগের বন্ধুরা এগিয়ে এলো তার দিকে। সোহাগের উদ্দ্যেশে বললো,”এটা কে রে? তোকে এভাবে হারিয়ে দিলো?”

সোহাগ বললো,”জানি না। চল তো গিয়ে দেখি।”

সোহাগ এগিয়ে গেলো সম্মুখে। গিয়ে দাঁড়ালো নতুন চ্যাম্পিয়নের সামনে। ততক্ষণে সে হাতে ট্রফি তুলে নিয়েছে। সোহাগ তার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
“অভিনন্দন ভাই। তুমি আমার দীর্ঘ দিনের রেকর্ড ভেঙে দিলে।”

মাথা থেকে হেমলেটটা নামিয়ে নিলো সে। সামান্য হেসে বললো,”ভাই নই আমি আপু।”

সোহাগ হতবাক হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত কিনা একটা মেয়ে তাকে হারিয়ে দিলো। সে ভালো করে পরখ করে দেখতে লাগল মেয়েটাকে। স্বাভাবিক নারীসুলভ নয় এই মেয়েটি। মাথায় ঘন লম্বা চুলের বদলে ছেলেদের মতো ছেটে ফেলা ছোট চুল, পরণে প্যান্ট, শার্ট, চেহারাতেও নেই নারীসুলভ কোমলতা।

সোহাগ কঠিন গলায় বললো,”কে তুমি?”

মেয়েটি বললো,”আমার নাম স্নেহা। এটুকুই আমার পরিচয়। এর বেশি কিছু নয়।”

বলেই সে সামনের দিকে যেতে লাগলো। সোহাগের এক বন্ধু তাকে নিয়ে মজা করে বললো,”শেষ পর্যন্ত একটা মেয়ে তোকে হারিয়ে দিলো সোহাগ?”

সোহাগ বলল,”ব্যাপারটা দেখতে হবে।”

এদিকে স্নেহা যেতে যেতে ভাবতে লাগল,
“এখান থেকেই আমার জয়যাত্রা শুরু হলো। মা, তুমি চিন্তা করো না। তোমার সাথে হওয়া সব অন্যায়ের প্রতিশোধ আমি নেবোই। খুব শীঘ্রই আমি রাজশাহীতে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে চৌধুরীদের উপর আমার প্রতিশোধ নেওয়া শুরু হবে। ওদের সব কৃতকর্মের শাস্তি আমি ওদের দেবো। ওদের সব সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেব।”

স্নেহা সামনে এগিয়ে চলছিল। তার পেছন পেছন সোহাগও আসছিল। স্নেহা বুঝতে পারে কেউ তাকে ফলো করছে তাই সে সজাগ হয়ে যায়। এরমধ্যে হঠাৎ কিছু ছেলে তার সম্মুখে এসে বিশ্রীভাবে হেসে বলে,
“এই ভালোয় ভালোয় তোর কাছে যা যা আছে দিয়ে দে নয়তো..”

“নয়তো কি করবি?”

“এর তো তেজ কম নয়। এই চল এর তেজ বের করে দেই।”

বলে যেই না স্নেহার দিকে হাত বাড়াতে যাবে ওমনি স্নেহা লোকটার মেইন পয়েন্ট বরাবর লা*থি মা**রে। এরপর সকলের সাথে লড়াই করতে থাকে। সোহাগও এসে তাকে সাহায্য করতে থাকে। দুজনে মিলে গুন্ডাদের মজা বুঝিয়ে দেয়। গুন্ডাগুলো ভয় পেয়ে বাপ বাপ বলে পালায়। ওরা চলে যেতেই সোহাগ স্নেহাকে বলে,
“তুমি তো দেখছি বাইকিং এর মতো ভালো ফাইটিংও পারো।”

স্নেহা বলে,
“আমি এভাবেই নিজেকে গড়ে তুলেছি। সবদিক দিয়ে নিজেকে একদম পারদর্শী বানিয়েছি। ছোটবেলায় আমার মা আমাকে বলতেন নরম মাটি পেলে মানুষ সহজেই আঘাত করার সাহস দেখায়, তাই তো আমি নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলেছি। যাইহোক, ধন্যবাদ আপনাকে।”

বলেই স্নেহা সামনের দিকে এগোয়। সাগর পিছন থেকে স্নেহার উদ্দ্যেশ্যে দিয়ে বলে,
“আমাদের আবার দেখা হবে।”

স্নেহা পিছন ফিরে তাকায়। সামান্য হেসে বলে,
“আমিও তাই চাই।”

[আসসালামু আলাইকুম আমার পাঠকগণ ❤️ এটা সিজন ২ হলেও ১ম সিজনের সাথে গল্পের কোন মিল নেই। তাই যারা প্রথম সিজন পড়েন নি তারাও পড়তে পারবেন। অবশেষে আমি আবার ফিরে এলাম আপনাদের কাছে একদম নতুন গল্প নিয়ে। আশা করি, আপনারা আমায় ভোলেন নি। অনেকদিন পর গল্প লিখলাম জানি না কেমন হয়েছে। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। মন্তব্য করে জানা কেমন লাগল। ]

#চলবে

তুমি ছিলে বলেই সিজন ০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে