তুমি ছিলে বলেই পর্ব-০৪

0
348

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ৪
#দিশা_মনি

নিপুণ দীপ্রকে সাথে নিয়ে অনাথ আশ্রমে প্রবেশ করে। নিপুণকে আসতে দেখেই কয়েকজন বাচ্চা ছুটে চলে আসে। নিপুণ হাটু গেড়ে তাদের সামনে বসে পড়ে। বাচ্চাগুলো খুশি হয়ে বলে,
“তুমি এসেছ ভালো আন্টি? আমরা সবাই তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

নিপুণ মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলে,
“ওহ তাই বুঝি? আচ্ছা, এই নাও তোমাদের সকলের জন্য চকলেট আর খেলনা এসেছি।”

মুহুর্তেই সবার মুখের হাসি আর চওড়া হয়। এই এতিম বাচ্চাগুলোকে এভাবে খুশি হতে দেখে নিপুণের মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। দীপ্র নিপুণের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই মেয়েটাকে যতো দেখে ততোই অবাক হয় সে। মাঝে মাঝে দীপ্রর মনে হয় তার জীবনের সবথেকে বড় স্বার্থকতা এটাই যে সে নিপুণের মতো একজন মেয়েকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চলেছে।

★★★
অনুপমের সাথে রাজশাহী শহরের অন্যতম একটি সুন্দর পার্কে ঘুরতে এসেছে স্নেহা। দুজনে একসাথে পাশাপাশি হেটে চলেছে৷ হঠাৎ করেই অনুপম বলে ওঠে,
“তোমাকে একটা কথা বললে রাগ করবে না তো?”

“কি কথা?”

“আচ্ছা, কি হবে যদি আজ আমরা বিয়ে করে নেই?”

স্নেহা ভীষণ অবাক হয়ে যায়৷ অনুপম যে এমন কথা বলবে সেটা তার কল্পনাতেও ছিল না। স্নেহার বিস্মিত মুখ দেখে অনুপম ফিক করে হেসে দেয়৷ অতঃপর বেশ ভাব নিয়ে বলে,
“আমি তো এমনি মজা করছিলাম। এত দ্রুত বিয়ে করার ইচ্ছা আমার নেই।”

স্নেহা একটু ভেবে বলে,
“আমি ভাবছি এইবার সেকেন্ড ইয়ারের এক্সাম শেষ হলেই আব্বুকে তোমার কথা বলব।”

“এত তাড়াহুড়ো কেন?”

“আসলে আমার এভাবে আর প্রেম করতে ভালো লাগছে না অনুপম। তোমাকে একজন জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাই।”

অনুপম তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুপচাপ হেটে চললো। হঠাৎ করে অনুপমের ফোন বেজে উঠল৷ অনুপম ফোনটা রিসিভ করে একটু দূরে সরে গেল। স্নেহা সেই স্থানে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর অনুপম ফিরল। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন কারণে ভীষণ রেগে গেছে৷ স্নেহা এই বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করতে যাবে তার পূর্বেই অনুপম বলে,
“আমার খুব জরুরি একটা কাজ পড়ে গেছে স্নেহা৷ আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।”

স্নেহা বললো,
“ঠিক আছে৷ চলো তাহলে। ”

এরমধ্যে আবার অনুপমের ফোনে কল আসে। অনুপম ফোনটা রিসিভ করেই বলে,
“আপনাদের আর কতবার বলব আমাকে আর ক’টা দিন সময় দিন? ১৫ লাখ টাকা তো মুখের কথা নয় তাইনা? এত টাকা একসাথে কোথায় পাবো আমি?”

বলেই ফোনটা কে’টে দেয় অনুপম। স্নেহা এবার আর থাকতে না পেরে অনুপমকে প্রশ্ন করেই ফেলে,
“তুমি কার সাথে কথা বলছিলে অনুপম? আর টাকার কথা কি যেন বলছিলে?”

“সেরকম কিছু নয়।”

“তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছ তাইনা? আমার থেকে কিছু লুকিও না অনুপম। তোমার জন্য তো আমার চিন্তা হয়।”

“আসলে স্নেহা তুমি তো জানো আমি নতুন একটা বিজনেস শুরু করেছি। সেইজন্যই একটা ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়েছিলাম। সেখান থেকেই টাকা ফেরত চাইছে। বুঝতে পারছি না কি করব।”

“বড় কোন সমস্যা হতে পারে কি?”

“বিজনেসে আমি তেমন প্রফিট করতে পারিনি। এই মাসের এক তারিখের মধ্যে টাকা শোধ করে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমি এখনো তা পারিনি৷ এমন চলতে থাকলে ওরা আমার নামে কেইস করতে পারে!”

স্নেহার চোখেমুখে উদ্বিগ্নতা ফুটে ওঠে। অনুপম স্নেহার এই অবস্থা দেখে বলে,
“তুমি চিন্তা করো না আমি সব সামলে নেব।”

“হুম।”

“তুমি কি কিছু খাবে?”

“না৷ লাগবে না।”

“এটা বললে তো শুনব না। তোমাকে ঘুরতে নিয়ে এসে তো খালি পেটে ফেরত পাঠাতে পারব না। তুমি এখানে একটু দাঁড়াও, আমি তোমার জন্য কিছু নিয়ে আসছি।”

এই বলে স্নেহাকে ওখানে রেখে অনুপম চলে যায়। স্নেহা একাই দাঁড়িয়ে থাকে।

“স্নেহা তুমি!”

হঠাৎ চেনা একটি কন্ঠস্বর কানে আসতেই পেছনে ফিরে তাকায় স্নেহা। নিপুণকে এখানে দেখে বেশ অবাক হয়। সাথে দীপ্রকে দেখে বিব্রত বোধ করে। দীপ্রও বোধহয় স্নেহাকে দেখে খুশি হয়নি। যা তার চোখ মুখের অভিব্যক্তির দ্বারা ফুটে উঠেছে৷ নিপুণকে নিয়ে ঘুরতে এসে স্নেহাকে এখানে দেখাটা তার কাছে উটকো ঝামেলাই হয়তোবা মনে হচ্ছে।

নিপুণ স্নেহার কাছে গিয়ে বলে,
“তুমি একা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছ?”

“আমি..না মানে…”

“বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছ বুঝি?”

“হ্যাঁ…আপনারাও মনে হয় ঘুরতেই এসেছেন?”

“ঠিক ধরেছ। আমি দীপের সাথে এখানে একটু ঘুরতে এসেছি।”

দীপ্র নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি একটু ঐদিকে যাচ্ছি। তোমার কথা বলা হয়ে গেলে তুমিও চলে এসো।”

স্নেহা বেশ ভালোই বুঝল দীপ্র তাকে পছন্দ করে না জন্যই তার সামনে থাকতে চাইছে না। ব্যাপারটায় যদিও স্নেহার কিছু যায় আসে না। কারণ গতকালের ঘটনার পর তার দীপ্র বা তার পরিবারকে নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। সে নিজেও তাদের এড়িয়ে যেতে চায়। তবে চাইলেও নিপুণকে এড়িয়ে যেতে পারছে না সে। কারণ মেয়েটার ব্যবহার তাকে মুগ্ধ করে।

নিপুণ স্নেহার সাথে বেশ হাসিমুখেই কথা বলতে থাকে৷ একসময় সে বলে,
“দীপ্র বা ওর পরিবারের ব্যবহারে তুমি কিছু মনে করোনা। আমাদের বিয়েতে কিন্তু তোমায় দেখতে চাই।”

স্নেহা স্পষ্টভাবেই বলে,
“দুঃখিত আপু। কিন্তু আপনার এই কথাটা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ ওখানে বাজেভাবে অপমানিত হওয়ার পরও যদি আমি আবার আপনাদের বিয়ে খেতে যাই তাহলে আমার আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগবে। এতটাও আত্মসম্মানহীন নই আমি।”

নিপুণ স্নেহার কাঁধ চাপড়ে বলে,
“তোমার এই সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান জানাই। তোমার যায়গায় আমি থাকলেও এই একই সিদ্ধান্ত নিতাম।”

আরো কিছু কথাবার্তা বলার পর নিপুণ বলে,
“আচ্ছা, তুমি তাহলে থাকো। আমি আসছি।”

নিপুণ চলে যেতে যাবে এমন সময় অনুপম বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে সেখানে চলে আসে। অতঃপর প্যাকেটটি স্নেহার হাতে তুলে দিয়ে বলে,
“এই নাও স্নেহা। এটা তোমার জন্য।”

নিপুণ অনুপমের দিকে ভালো ভাবে খেয়াল করে। অনুপমকে আপাদমস্তক পরখ করে নেয় সে। অনুপমকে কেন জানি তার ভীষণ চেনা চেনা লাগছে। এদিকে অনুপমও নিপুণের দিকে খেয়াল করে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।

নিপুণ স্নেহাকে শুধায়,
“উনি কে?”

“ও আমার বন্ধু।”

“শুধুই বন্ধু নাকি আরো বেশি কিছু?”

স্নেহা কোন উত্তর দিলো না। সামান্য হাসল শুধু। তাতেই নিপুণের যা বোঝার বোঝা হয়ে গেল। নিপুণ অনুপমের কাছাকাছি এগিয়ে গিয়ে বলল,
“হ্যালো, আমি এডভোকেট নিপুণ খান। আপনাকে কেন জানি আমার খুব চেনা চেনা লাগছে। আমরা কি পূর্ব পরিচিত?”

অনুপম যে নিপুণের প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছে সেটা তার চোখমুখের ছাপ দেখেই স্পষ্ট৷ তবে সে মুখে বলল,
“আমি অনুপম শিকদার। আমার হাউজিং বিজনেস আছে। বিজনেসের কাজে অনেকবারই কোর্টে যেতে হয়েছে। তখনই হয়তোবা দেখেছেন। তাছাড়া রাজশাহী তো খুব বড় একটা শহর নয়। অন্য কোন যায়গাতেও হয়তো দেখা হতে পারে!”

নিপুণের অনুপমের কথা কতটা কি বিশ্বাস হলো সেটা বোঝা গেল না৷ তবুও সে এ নিয়ে আর কথা বাড়ালো না। অনুপম আর স্নেহাকে বিদায় জানিয়ে সে প্রস্থান করল। হাঁটতে হাঁটতে অনুপমের কথাই ভাবতে থাকে। কেন জানি তার মনে হচ্ছে এই লোকটাকে আগে কোথাও দেখছে। খুব কাছ থেকেই হয়তো দেখেছে তাই বোধহয় এত চেনা চেনা লাগছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে