গল্প:-#তুমি চাইলে যেতে পারো (পর্ব:-১৯+২০)
লিখা:- AL Mohammad Sourav
।
তুমি যা করার করে নিও আমি সিমিকে তোমার কাছে আর ক্ষমা চাইতে দিবো না। তোমার মত অহংকারী মেয়ে আমার জীবনে কম দেখেছি। আমি সিমিকে কখনো ডির্ভোস দিবো না আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি তুমি যা করার করে নিও এই বলে আল সিমিকে খোঁজতে চলে গেছে আর এদিকে কোহিনুর রাগে আগুন হয়ে ওর বাবাকে ফোন করে বলেছে আল আর ওর স্ত্রী মিলে আমাকে আজকেও অপমানিত করেছে। তুমি ওকে এর উচিত জবাব দিয়ে দিবে তানা হলে আমি কিন্তু খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিবো এই বলে কান্না করে দিয়েছে আর ঐদিকে আল সিমিকে খোঁজতে খোঁজতে গাড়িটার কাছে গেছে। নাহ সিমি তো গাড়ির কাছে আসেনি সিমি গেলো কোথায় গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করেছে।
আল:- আচ্ছা আমার সাথে যে কিছুকক্ষণ আগে একটা মেয়ে ফর্সা লম্বা আর নেবিব্লু চুড়িদার পড়ে ভেতরে গেছে সেই মেয়েটাকে বেরিয়ে যেতে দেখছেন?
দারোয়ান:- কত মেয়ে তো গেছে আর ডুকছে ঠিক বলতে পারছি না।
আল:- মেয়েটি কিছুকক্ষণ আগেই তো আমার হাত ধরে আমার সাথে ভেতরে গেছে আর অল্প কিছুকক্ষণ আগেই বেরিয়েছে। তখন দারোযান বলে দেয় সরি স্যার আমি দেখিনি। আল কিছুটা রাগ করে আবার ভেতরে গেছে সব জায়গা তন্নতন্ন করে খোঁজে যখন কোথাও পাচ্ছে না। তখনি মনে হলো সিমি কি বাড়িতে চলে গেছে একবার ফোন করবো! নাহ থাক বাড়ির সবাই অযথা টেনশন করবে আর পড়ে সিমিকে ফালতু কথা শুনাবে তাহলে কি ওর মায়ের কাছে গেছে? সিমি যাবে কোথায় ওর যাওয়ার যায়গা তিনটা একটা আমাদের বাড়ি দ্বীতীয় ওর বাড়ি আর তৃতীয় ওর বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি। নাহ এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না বলে যখনি বেরিয়ে আসতেছিলাম তখনি চেয়ে দেখি সিমি হেসে হেসে কথা বলছে অন্য এক ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে এমন অবস্থা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে আমি দ্রুত সিমির কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে ঐখান থেকে নিয়ে আসতেছি।
সিমি:- আরে কি হলো এমন ভাবে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো? আগে তো আমার কথাটা শুনবেন? আল কোনো কথা না শুনেই সিমিকে টেনে কিছুটা দূরে নিয়ে এসে বলে।
আল:- তুমি জানো আমি তোমাকে খোঁজতেছি! আর তুমি গিয়ে ঐ খানে ছেলেটার সাথে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছো?
সিমি:- মানে আমি কোন ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছি?
আল:- দেখো আমি নিজের চোখে দেখেছি তুমি ছেলেটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছো। তখনি সিমি কিছুটা চুপচাপ থেকে আলের হাত ধরে আবার সেখানে নিয়ে গিয়ে বলে।
সিমি:- মুন এই হচ্ছে আমার হাজবেন্ড আল ইসলাম আর তোর বরটা এখানে ছিলো সেইটা কোথায় গেছে?
মুন:- বাহ তোর বর তো অনেক সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ।
সিমি:- আমার বরের প্রশংসা তোর করতে হবে না তোর বর এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো আমি যখন তোর সাথে কথা বলতে ছিলাম। সে এখন কোথায় গেছে? তখনি মুনের বর এসেছে আর তখনি সিমি বলে এই হচ্ছে আমার বান্ধবী মুন আর এই ছেলেটা হচ্ছে মুনের বর তাইনা মুন?
মুন:- হ্যা তাই তখনি আল সিমিকে বলে।
আল:- সরি আমি বুঝতে পারিনি এখন চলো বাড়িতে যাবো।
সিমি:- আপনি এমন অনেক কিছু বুঝতে পারেন না তখনি আল রাগি চোখে তাকায় আর সিমি বলে মুন তাহলে আমরা যাই তোর সাথে পড়ে দেখা হবে এখন আসি বলেই সিমি নিজে নিজে হাটা দিয়েছে আর আল ওর পিছু পিছু হাটতেছে সিমি নিচে এসে সি এন জি ডাক দিতেছে তখনি আল বলে।
আল:- এই তুমি সি এন জি ডাক দিয়েছো কেনো?
সিমি:- আমি আর আপনার বাড়িতে যাবো না।
আল:- আমার বাড়ি মানে? তুমি না সবকিছু লিখে নিয়েছো? সেইটা তো তোমার বাড়ি।
সিমি:- ঐটা তো এমনি এমনি বলেছিলাম এসব কাগজের কোনো দাম নেই। আমি এখন থেকে আমার মায়ের সাথে থাকবো বলে গিয়ে সি এন জিতে উঠতে যাবে তখনি আল সিমির হাতটা টেনে ধরে বলে।
আল:- এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে তুমি চলো আমার সাথে। তানা হলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম।
সিমি:- কি করবেন আমাকে ডির্ভোস দিবেন দেন এখন আমার আর কোনো কষ্ট নেই আজ আমি নির্দোষ বলেই সি এন জিতে এক পা দিয়েছে তখনি আল সিমিকে জোঁড় করে কোলে নিয়েছে সিমি চেঁচাচ্ছে তখনি আশে পাশে মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। সবাই যখন খুব খিপ্ত তখনি আল বলে।
আল:- দেখুন ও আমার স্ত্রী রাগ করেছে তাই জোঁড় করে কোলে নিয়েছি। আমার স্ত্রীকে কোলে নেওয়ার অধীকার টুকু আমার আছে তাই না। তখনি কিছু লোক বলে স্বামী স্ত্রী সেটা বাড়িতে ঝগড়া করবেন কিন্তু তাই বলে রাস্থায় এমন ছিঃ আজকাল ছেলে মেয়েদের লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে ফেলছে। তখনি আল সিমিকে নিয়ে গাড়িতে এনে বসিয়ে দিয়েছে। সিমি গাড়িতে বসে নেমে যেতে চাইছে তখনি আল গাড়ির দরজা লক করে দিয়েছে।
সিমি:- দেখুন আমি আপনার সাথে আর যাবো না আমি চলে যাবো আপনার থেকে।
আল:- যখন যাওয়ার ছিলো তখনি যাওনি আর এখন আমি থেকে যেতে বলছি তুমি চলে যাবে যাওয়াচ্ছি তোমাকে বলেই আল গাড়ি চালাতে আরম্ভ করেছে।
সিমি:- এবার কিন্তু আপনি নিজে থেকে আমাকে জোঁড় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন থেকে আমার যা ইচ্ছে হবে আমি তাই করবো এরপর যদি আমাকে যেতে বলেন তাহলে আপনার মাথাটা ফা`টিয়ে দিবো বলে দিলাম।
আল:- তোমার শরীর এত শক্তি আছে?
সিমি:- আপনার থেকে বেশি শক্তি আমার।
আল:- সেইটাও দেখতে পারছি সমস্থ শরীরের ওজন পঞ্চাশ কেজি হবে কি না সন্দেহ আছে।
সিমি:- ওজন দিয়ে কি করবেন? আমার শরীরে অনেক শক্তি আমি পাঁচ কেজি একা উঠাতে পারি। আল বুঝতে পারছে আজকে ওর চাপাই জোঁড় বেড়ে গেছে যার ফলে আল একদম চুপচাপ হয়ে গেছে তখনি সিমি বলে কি হলো এখন চুপচাপ হয়ে আছেন কেনো?
আল:- দেখো এমনিতেই অনেক টেনশনে আছি তার উপর তোমার প্যাড়া এত কিছু নিতে অনেক কষ্ট হয়ছে দয়া করে এখন একটু চুপকরে গাড়িতে বসে থাকো এমনিতেই আমার মাথাটা ব্যথা করছে।
সিমি:- ব্যাথা করুক তাতে আমার কি? আমি কি নিজে থেকে এসেছি? আপনি জোঁড় করে আনছেন এখন একটু কথা শুনতে হবে। আর তাছাড়া এমনিতেই আমি কম কথা বলতে পারি না এই কয়দিন নিজেকে অনেক কষ্ট করে কনট্রোল করেছি এখন আর পারবো না। আল বুঝতে পারছে এখন কথা বলে বেকার সময় নষ্ট করে যার ফলে সে সিমির কথায় কোনো কান না দিয়ে নিজের মত করে ড্রাইভিং করছে আর সিমি বক বক করতেছে সিমির বক বকে আলের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে গাড়িটা থামিয়ে সিমিকে বলে।
আল:- আচ্ছা তোমার সমস্যা কোথায়? কেনো এমন করছো?
সিমি:- আমার সমস্যা হবে কেনো সমস্যা তো হবে আপনার বক বক করে আপনার মাথাটা একদম নষ্ট করে দিবো। আমার চুপচাপ থাকতে একদম ভালো লাগে না আমি একটু বেশি কথা বলি যখন জোঁড় করে গাড়িতে উঠিয়েছেন তখন কি চিন্তা করার দরকার ছিলো না পড়ে কি হবে? তখনি আল সোজা সিমির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট গুজে দিয়েছে সিমি একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। সিমি কিছু বুঝতে পারছে না তার সাথে কি হয়ছে আল এবার শান্তিতে গাড়ি চালাতে আরম্ভ করেছে। সারাটা রাস্থা সিমি কোনো কথা বলেনি আল বার বার আর চোখে ওর দিকে তাকিয়েছে শুধু জিম মে`ড়ে বসে আছে। ঘন্টা খানেকের মধ্যে বাড়িতে এসেছে।
আল:- গাড়ি থেকে নামো তখন সিমি গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে গেছে আল গাড়িটা রেখে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে তখনি ওর বাবা বলে।
বাবা:- আল কবির সাহেব আমাদের সাথে সকল প্রকার চুক্তি বাতিল করেছে কেনো? তুই নাকী কবির সাহেবের মেয়েকে অপমান করেছিস? আল কিছুই বলেনি সিমি দাঁড়িয়ে আছে আল চলে গেছে উপরে।
ঝিনুক:- বাবা দেখছো আল কিছু না বলেই চলে গেছে।
ভাবি:- বাবা আপনার বড় ছেলে বলেছে কবির সাহেব যদি তার সমস্থ চুক্তি বাতিল করে দেয় তাহলে বর্তমানে আমাদের পথে বসতে হবে।
বাবা:- হ্যা আরিফ ঠিকই বলেছে। আমাদের সব টাকা কবির সাহেবের অর্ডারের জন্য খরচ করে দিয়েছি এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়ছে। এখন ওনি নাকী তার চুক্তি বাতিল করতে চায়ছে আর ওনার অর্ডারও বাতিল করে দিতে চায়ছে।
ভাবি:- আলের সাথে তো সিমিও ছিলো আর ওরা দুজনে মিলেই কবির সাহেবের মেয়ে কোহিনুরকে অপমানিত করেছে।
মা:- কি সিমি তুমিও ছিলে? কিন্তু কেনো তোমরা এমনটা করতে গেলে?
সিমি:- আমি কিছুই করিনি সব করেছে ঐ মেয়েটি ওনি বলে আমি আপনার ছেলেকে ডির্ভোস দিতাম তাঁর জন্যই আমি অপমান করেছি।
ঝিনুক:- একদম কামের কাম করেছো তোমার জন্য আজ আমাদের পরিবারের সবাইকে রাস্থায় নামতে হবে। সব দোষ তোমার তুমি কেনো কোহিনুরকে অপমানিত করতে গেলে। সিমি কিছু না বলে সোজা রুমে চলে গেছে। রুমে গিয়ে দেখে আল মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তখনি সিমি বলে।
সিমি:- একটা কথা বলবো? আল কিছুই বলতেছে না একদম চুপচাপ হয়ে আছে তখনি সিমি বলে। আচ্ছা কোহিনুর ওনার বাবার সাথে কি আপনাদের ব্যবসায়ীক কোনো চুক্তি হয়ছে নাকী ওনি কোনো পন্য নেওয়ার জন্য চুক্তি করেছে।
আল:- সিমি প্লিজ একটু একা থাকতে দাও আমাকে চিন্তা করতে দাও।
সিমি:- আমাকে বলেন আমি আপনাকে সাহায্য করবো।
আল:- দেখো সবসময় দুষ্টমি ভালো লাগে না।
সিমি:- একবার তো বলেন। তখনি আল ধমকের সরে বলে।
আল:- কি বলবো? আর বললে তুমি সমাধান করে দিতে পারবে? সিমি চুপচাপ হয়ে আছে তখন আল মাথাটা ঠান্ডা করে বলে। কবির সাহেব মানে কোহিনুরের বাবা আমি জানতাম না কোহিনুরের বাবা যে কবির সাহেব তাহলে তো জীবনে দেখা করতে যেতাম না।
সিমি:- এখন সমস্যাটা বলেন কেনো ওনি চুক্তি বাতিল করে দিতে চায়ছে আর চুক্তি বাতিল করলে কি সমস্যা হবে সেইটা বলেন?
আল:- কবির সাহেব আমাদের থেকে বড় ব্যবসায়ী ওনি একটা প্রোডাক্ট আমাদের বলেছে বানিয়ে দিতে ওনি সেই প্রোডাক্ট আমাদের থেকে একা কিনে নিবে। তবে শর্ত ছিলো আমি চাইলেও সেই প্রোডাক্ট বাহিরে বিক্রি করতে পারবো না। যদিও ওনি ২৫% টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছে তবে এখন যদি ওনি চুক্তি বাতিল করে তাহলে এই প্রোডাক্ট কি করবো সেই চিন্তা করতেছি।
সিমি:- এক কাজ করুন কবির সাহেব যতগুলা প্রোডাক্ট অর্ডার করেছে সবগুলি বানিয়ে ফেলুন। আর ওনাকে বলে দিন নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে প্রোডাক্ট না নিলে আপনি অন্য কোথাও বিক্রি করে দিবেন।
আল:- ওনি যে প্রোডাক্ট দিয়েছে সেটা ওনি ছাড়া কেউ মার্কেটে বিক্রি করতে পারবে না। আর তাছাড়া প্রোডাক্টের গুণগত মান খুব ভালো এত দাম দিয়ে কেউ ক্রয় করতে চাইবে না।
সিমি:- আপনাকে আমি বলি শুনুন। আপনি ওনার দেওয়া সব অর্ডার তৈরি করে ওনাকে খবর দিন ওনি যেনো প্রোডাক্ট নেই যদি ওনি রাজি না হয় তাহলে তো আর ওনাকে টাকা ফেরত দিতে হবে না। কিন্তু আপনারা যদি প্রোডাক্ট সময় মত তৈরি না রাখেন তখন যদি ওনি প্রোডাক্ট চায় তখন দিবেন কিভাবে? তখন কিন্তু ওনাকে ওনার অগ্রিম টাকাটা দিতে হবে তার চাইতে ভালো আপনারা প্রোডাক্ট রেডি রাখুন ওনি না নিলে কিছু কম রেট ধরে মার্কেটে অন্য কাওকে বিক্রি করে দিবেন। আর যদি ওনি নেয় তাহালে তো কোনো ঝামেলা নেই। সিমির কথাটা আলের কাছে খুব ভালো লাগছে আল ফ্রেশ হয়ে নিচে গেছে তখন আরিফ বলে।
আরিফ:- আল কবির সাহেব বলেছে ওনি কোনো প্রোডাক্ট নিবে না। এখন এত গুলি পন্য আমরা কি করবো? মার্কেটে বর্তমানে এই রেডে এই মাল গুলা চলবে না।
আল:- আমরা আগে কবির সাহেবের দেওয়া সব অর্ডার তৈরি করি এরপর না হয় বাকী চিন্তা করবো।
আরিফ:- আল ওনি তো নিবে না আর যদি সব তৈরি করি তাহলে আমাদের একদম আরও অনেক লছ হবে।
আল:- সেটা পড়ে বু্ঝা যাবে এখন আমরা সব প্রোডাক্ট তৈরি করবো এইটা ফাইনাল বলে খাবার টেবিলে বসেছে। আল খেয়ে চলে গেছে তখন ওর বাবা বলে।
বাবা:- আলের মাথাটা কি সত্যি সত্যি চলে গেছে?
আরিফ:- আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে? ওনারা নিজেরা কিছু কথা বলে যার যার রুমে চলে গেছে। পরের দিন খুব সকালে আল অফিসে গেছে। আর সবাইকে উৎসাহ প্রদান করছে আল খুব কাজের প্রতি মনোযোগ দিয়েছে সিমির সাথে কিছুদিন তেমন একটা কথা হয়না আবার ঝগড়া হয় না। দুই সাপ্তাহ হয়ে গেছে আল সব পন্য রেডি করে কবির সাহেবকে খবর দিয়েছে যে ওনি আগামীকাল চাইলে পন্য নিতে পারবে যদি পন্য না নেই তাহলে দুইদিন পড়ে অন্য কোথাও বিক্রি করে দিবে। এদিকে আল অন্য একটা কম্পানির সাথে কথা বলে রাখছে ওনারা অগ্রিম টাকা দিতে চায়ছে কিন্তু আল কোনো অগ্রিম টাকা নেয়নি। কবির সাহেব নিজের লছ হবে এসব কিছু চিন্তা করে ওনি প্রোডাক্ট গুলি নিয়ে গেছে আর আলকে বলেছে সত্যি তোমার বুদ্ধি আছে আমি তোমার সাথে আগামীতে আরও ভালো প্রোডাক্ট তৈরির জন্য অর্ডার করবো। যা হয়ছে সব ভুলে যাও আমার মেয়ের বিয়ে আমি ঠিক করে নিয়েছি তুমিও সবকিছু ভুলে যাও। আল ওনার কথা শুনে রাজি হয়ছে তবে মনে মনে একটা প্ল্যান করে নিয়েছে। আলের কম্পানির সবাই অনেক খুশি আল ব্যাংকের ঋন পরিশোধ করে দিয়েছে ওর বাড়ির সবাই অনেক খুশি। আল আজ সিমির জন্য একটা নেকলেস কিনেছে ওর অনেকদিনের সখ সিমিকে একটা দামী নেকলেস দিবে। আল বাড়িতে এসে লুকিয়ে নেকলেসটা ওর ড্রয়ারে তালা মে`ড়ে রেখেছে। রাতে সবাই এক সাথে বসে গল্প করছে তখনি আলের বাবা বলে।
বাবা:- আল আমি বলি এই খুশিতে বাড়িতে একটা অনুষ্টান করি তোর আর সিমির বিয়েটা হয়েছে এইটা সবাইকে জানিয়ে দেয় তখনি ভাবি বলে উঠে।
ভাবি:- বাবা সামনে তো ১২ তারিখ আসছে আর সেদিন তো সিমির বাবা মায়ের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেবার কথা তাইনা?
ঝিনুক:- হ্যা বাবা ভাবি তো ঠিকই বলেছে। এক সাথে দুইটা কাজ হয়ে যাবে সিমির বাড়ির সবার সাথে আমাদের সবার আলাপ হয়ে যাবে।
বাবা:- তা মন্দ নয় কিন্তু মা সিমি তোমার কি কোনো আপত্তি আছে? সিমি কিছুটা নিরব হয়ে আছে তখনি ঝিনুক বলে।
ঝিনুক:- আপত্তি থাকবে কেনো? ওনাদের আমরা দাওয়াত করবো ওনারা আসলে সবার সাথে পরিচয়টা হয়ে যাবে। তবে ওনারে সিমির বাবা মা তো? তখনি আল বলে।
আল:- আপু ওনারা সিমির মা বাবা হলেই কি আর না হলেই কি? সিমি আমার স্ত্রী এইটা তো মিথ্যা নয়? আলের এমন কথা শুনে সবাই থ হয়ে গেছে সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে তখনি আল আবার বলে সিমিকে আজ থেকে কেউ কোনো রকম ছোট করে কথাবার্তা বলবে না সিমি আমার স্ত্রী আনোর মা এইটা ওর সবচেয়ে বড় পরিচয়। তাও যদি ওর পরিবারের সবার সাথে দেখা করার ইচ্ছে হয় তাহলে ওনারা সবাই আসবে।
ঝিনুক:- তোর বৌ তোর পরিচয়ে রাখবি এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই কিন্তু সমাজের মানুষের কথা তো আমরা বন্ধ করতে পারবো না।
ভাবি:- আল সাহানাকেও এমন মাথায় তুলেছিলে বিনিময়ে তোমাকে ধোকা দিয়ে চলে গেলো আর ঠিক তেমন ভাবে সিমিকেও মাথায় তুলতেছো?
আল:- সেটা আমি বুঝে চিন্তে বলেছি।
দাদী:- আচ্ছা এত কথা কিসের বড় বৌ? সিমির পরিবারের সবার সাথে আলাপ করাবে আল বলেছে আর দুইদিন পরে অনুষ্টান হলে তখন সবকিছুই দেখতে পারবে এখন এত ফাও কথা বাদ দাও। রাত অনেক হয়ছে এখন সবাই সবার ঘরে যাও বলে ওনি চলে গেছে। তারপর এক এক করে সবাই যার যার ঘরে গেছে। আল ঘরে এসে খাটের উপরে শুয়েছে সিমি আনোকে নিয়ে এসেছে।
সিমি:- আপনি যে এত বড় মুখ করে বলে আসছেন আমার পরিবারর সবাইকে ওদের সাথে পরিচয় করাবেন। আপনি কি জানেন না বাবা কিছুতেই মাকে আসতে দিবে না আর নিজেও আসবে না।
আল:- সেটা আমি বুঝবো তুমি ঘুমাও। সিমি আর কোনো কথা বলেনি চুপচাপ আনোকে নিয়ে শুয়ে পড়েছে। তবে সিমি সারাটা রাত ছটফট করে কাটিয়েছে কি করে ওর বাবা মাকে এই বাড়িতে আনবে সেইটার জন্য। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আল রুমে নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১২টা বাজে। সিমি হাত মুখ ধুয়ে নিচে গেছে।
মা:- সিমি আজ বাদে কাল অনুষ্টান এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠলে হবে? আনোকে তুমি মায়ের কাছে দিয়ে রাখো আর বাড়ির কাজে একটু সময় দাও।
সিমি:- ঠিক আছে তবে আমি একটু বেরুবো আমার একটা জুরুরী কাজ আছে সেইটা আগে শেষ করে আসি।
মা:- ঠিক আছে যাও। তখনি সিমি বেরিয়ে গেছে আজকের সারাটা দিন সিমি বাহিরে কাটিয়ে সন্ধায় বাড়িতে এসেছে তখনি আল জিজ্ঞেস করে।
আল:- সিমি তুমি কোথায় গেছিলে? সারাদিন কোথায় ছিলে?
সিমি:- মায়ের কাছে গেছিলাম মা তো রাজি হয়ছে তবে বাবা বলেছে মা যদি আসে তাহলে যেনো আর কোনোদিন সেই বাড়িতে ফিরে না যায়। তারজন্য আমি মাকে বলেছি আসতে হবে না।
আল:- ওনারা আসবে তুমি এসব কিছু নিয়ে চিন্তা করোনা দরকার হলে আমি নিজে গিয়ে নিয়ে আসবো। সিমি তাও মন খারাপ করে বসে আছে আল সিমিকে বুঝিয়েছে মন খারাপ না করতে সিমি কিছুটা নিজেকে শান্ত করেছে। ইদানিং আল সিমিকে কিছুটা ভালোবাসতে শুরু করেছে সিমির প্রতি মাঁয়া জন্মাতে আরম্ভ করেছে।
দেখতে দেখতে অনুষ্টান দিনক্ষণ সময় এসে গেছে। অল্প কিছুকক্ষণের মধ্যে অনুষ্টানের কার্জক্রম শুরুহবে। সিমি বার বার আলকে জিজ্ঞেস করছে ওর বাবা মা পরিবারের সবাই আসবে তো? আল সিমিকে শান্তনা দিচ্ছে ওরা আসবে। মেহমানরা সবাই এসে উপস্থীত হয়েছে আলের বাবা মা সবাইকে ওদের সাফল্যর কথা বলতেছে। সিমির অনেক টেনশন হচ্ছে এদিকে আল তাঁর সব বন্ধুদের সাথে গল্প করছে। সিমি নিজেকে খুব অসহায় মনে করছে এমন সময় আলের ভাবি তার কিছু বান্ধবী নিয়ে এসে সিমিকে বলে।
ভাবি:- কি সিমি সব মেহমানরা চলে এসেছে তোমার বাবা মা কোথায়? আচ্ছা সত্যি করে বলতো তোমার জন্মের পরিচয় আছে নাকী নেই? তখনি সিমি কান্না করতে করতে এখান থেকে কিছুটা দূরে চলে গেছে। এদিকে আল অনেকক্ষণ ধরে সিমিকে দেখতে না পেয়ে খোঁজতে আরম্ভ করছে কিছুটা বাগানের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে সিমি একা একা দাঁড়িয়ে আছে তখনি আল গিয়ে কোনো সারা শব্দ না করেই সিমিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। সিমি ভয় পেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে ভালো করে না দেখেই ঠাস করে থাপ্পড় মে`ড়ে দেয়। থাপ্পড় দেবার পড়ে ভালো করে চেয়ে দেখে আল গালে হাত দিয়ে সিমির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। আর আশে পাশে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক আর ওর ভাবি দাঁড়িয়ে আছে। সিমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আল এখান থেকে চলে যাচ্ছে। সিমি বুঝতে পারছে একটা বড় ভুল করে ফেলছে আল কোনো কিছু না ভেবেই এখান থেকে রেগে চলে যাচ্ছে আর সিমি ওর পিছু পিছু যাচ্ছে আর বলছে।
সিমি:- সরি আমি দেখিনি আমাকে ক্ষমা করে দিন এসব বলে আলের পিছু পিছু যাচ্ছে। আল তার হাটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে তখনি সিমি দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়েছে আর তখনি আল সিমিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সোজা ছাদের দিকে হাটা দিয়েছে আর সিমি ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে হাতে আর পায়ে ব্যথা পেয়েছে তাও নিজেকে কিছুটা ঠিক করে আলের পিছু যেতেছে তখনি পিছন থেকে কেউ ওর হাত ধরেছে সিমি তাকিয়ে দেখে আলের বড় বোন ঝিনুক হাত ধরে রাখছে আর তখনি বলে।
ঝিনুক:- সিমি কোথায় যাচ্ছো আলের রাগ ভাংগানোর জন্য? ওর রাগ ভাংগাতে হবে না এসো আমার সাথে বলেই সিমিকে টেনে নিয়ে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাহির দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে।
।
চলবে…
গল্প:-#তুমি_চাইলে_যেতে_পারো (পর্ব:-২০)
লিখা:- AL Mohammad Sourav
।
সিমিকে একটা ঘরের ভেতরে রেখে বাহির দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে ঝিনুক চলে গেছে। সিমি দরজায় ঠক ঠক করছে কেউ শুনছেনা সিমি ডাকছে ভিতর থেকে আপু প্লিজ দরজাটা খুলে দিন কিন্তু ঝিনুক খুলছে না আর এখান থেকে কোথাও সরে যাচ্ছে না ঠিক দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে যাতে করে কেউ দরজাটা খুলে না দেয়। ঐদিকে আল ছাদের গিয়ে একদম ব্যাঞ্চের উপরে বসে একটা ম’দে’র বোতল নিয়ে খেতে আরম্ভ করে নিজে নিজেই বলছে। আমি আর কোনো দিন কাওকে বিশ্বাস করবো কাওকে ভালোবাসবো না সবাই একি রকম। সবাই সবার স্বার্থের জন্য সবকিছু করে। সিমিকে অন্তঃত নিজের মত করে ভালোবাসতে চায়ছিলাম কিন্তু সিমিও অন্য সবার মত। বার বার ঘুরেফিরে সিমির দেওয়া থাপ্পড়টার কথা মনে করছে আর সব আজে বাজে চিন্তা করে একটু একটু করে ড্রিংক করছে। আর এদিকে আলের বাবা মা সিমি আর আলকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ওনারা মতে মতে খোঁজতেছে কিছুকক্ষণের মধ্যে অনুষ্টানে ওদের দুজনকে পরিচয় করিয়ে দিবে ওরা স্বামী স্ত্রী। কোথাও খোঁজে না পেয়ে ঝিনুককে জিজ্ঞেস করেছে।
মা:- ঝিনুক আল আর সিমিকে কোথাও দেখেছিস?
ঝিনুক:- দেখেছি ওরা দুজনে গেইট দিয়ে বাহিরে গেছে আমার মনে হয় সিমির মা বাবাকে আনতে ওরা দুজনে গেছে ঠিক তখনি চেয়ে দেখে দরজা দিয়ে সিমির মা বাবা ওর বড় বোন শেলি আর ওর জামাই এসেছে। ওনাদের দেখে তখনি আরিফ এগিয়ে এসে বলে
আরিফ:- আরে জহির সাহেব আপনারা এসেছেন যাক ভালো করেছেন। তখনি আরিফের কানের কাছে গিয়ে ওনার স্ত্রী বলে।
ভাবি:- আরিফ এনাদের তো ঠিক চিনতে পারলাম না?
আরিফ:- তুমি ওনাদের চিনবে না ওনারা হচ্ছে সিমির মা বাবা বোন আর বোন জামাই এনারাই সিমির পরিবারের সবাই। তখনি আলের মা সিমির মায়ের কাছে গিয়ে বলে।
মা:- বেইয়ান সাহেবা এতদিনে মন চায়ছে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আসতে?
সিমির মা:- সত্যি বলতে মন তো চায় তো কিন্তু মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করেই আসা হয়নি। আমাদের না জানিয়ে মেয়ে নিজে নিজে এমন ভাবে আপনাদের ছেলের সাথে বিয়ে করে চলে এসেছে নিজেদের তো একটা মানসম্মান আছে? সবকিছু চিন্তা ভাবনা করেই আর আসতে পরিনি।
মা:- কি যে বলেন বেয়াইন সাহেবা আপনার মেয়ে হলো এই বাড়ির লক্ষী যেদিন থেকে এই বাড়িতে এসেছে সেদিন থেকে এই বাড়ির সবার জীবনে সুখ শান্তি ফিরে এসেছে।
সিমির মা:- যাক বেইয়ান সাহেবা আপনার মুখে আমার মেয়ের প্রশংসা শুনে খুব ভালো লাগছে। তখনি আলের দাদী এসেছে আর ওনি বলে।
দাদী:- বৌমা যা প্রশংসা করেছে তা একদম কম হয়ছে আপনার মেয়ের জন্য আজ আমাদের বকে যাওয়া নাতীটা ঠিকঠাক হয়েছে আমরা আপনাদের কাছে ঋণী হয়ে থাকবো সারাটা জীবন।
শেলি:- আমার বোনটা এতটা পরিবর্তন করে দিয়েছে যাক শুনে খুশি হলাম যে ও সবার মনে জায়গা করে নিতে পারছে আমরা তো মনে করেছি ও যেই বাড়িতে বৌ হয়ে যাবে সেই বাড়ি থেকে হাজার হাজার বিচার নালিশ আসবে আমাদের কাছে।
সিমির মা:- তা আমার মেয়েটা কোথায়?(এর মাঝে ঝিনুক কিছুটা চিন্তা করে তাঁড়াতাড়ি করে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে এখান থেকে দ্রুত সরে গেছে। দরজার খুলার শব্দ শুনে সিমি ঘর থেকে বেরিয়েছে তখনি চেয়ে দেখে ওর মা বাবা বড় বোন আর বোন জামাই সিমি ওর মায়ের কাছে এসেছে তখন ওর বোন বলে)
শেলি:- আরে সিমি কেমন আছি তুই?
সিমি:- হ্যা খুব ভালো আছি।
সিমির মা:- সিমি তোর শ্বশুর বাড়ির সবাই তো তোর খুব সুন্দর গুণগান গায়ছে। যাক আমরা এখন একটু শান্তি পাবো। সবার সাথে সুন্দর ভাবে মিলে মিশে থাকবি কথাটা মনে থাকে যেনো। ওনারা সবাই যেনো সবসময় এমন ভাবে তোর গুণগান করতে থাকে।
সিমি:- সত্যি বলতে এনারা সবাই খুব ভালো তাই আমাকে এতটা ভালোবাসে। তখনি সবাই হেসে দিয়েছে সবাই সবার সাথে কথা বলছে তা দেখে সিমি অনেক খুশি হয়েছে যাক এখন থেকে আর নিজেকে জন্ম পরিচয়হীন বলতে পারবে না কেউ। সবার সাথে কিছু আলাপ সালাপ করেছে তখনি সিমির মা বলে।
সিমির মা:- আচ্ছা এখানে তো সবাই আছে বাবা আল কোথায়? তখনি সিমির আলের কথা মনে পড়ছে আর সিমি বলে।
সিমি:- মা আপু তোমরা সবাই গল্প করো আমি গিয়ে ওনাকে নিয়ে আসি এই কথা বলে সিমি খুব দ্রুত ছাদের দিকে যেতে লাগলো যখনি ছাদের কাছে গেছে তখনি চেয়ে দেখে আল নিজে নিজে বলছে)
আল:- সবকিছু আমি আগের মত করে দিবো সিমিকে জীবন থেকে একদম মুছে ফেলবো এসব বলতে বলতে ছাদের কনিরাই চলে যাচ্ছে আর তখনি সিমি আলের কাছে গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে টেনে ছাদের মাঝখানে নিয়ে আসে। আল তাকিয়ে দেখে সিমি তখনি হেসে বলে আরে মিস সিমি রহমান যে তা কেনো এসেছো তুমি আমি ছাদ থেকে লাফ দিবো তাতে তোমার কি?
সিমি:- কি আপনি ছাদ থেকে লাফ দিবেন আর আমার কিছু হবে না মানে আমার সবকিছু হবে। যদি আপনার কোনো কিছু হয় তাহলে সবার আগে আমি ছুটে যাবো এইটা আপনি সবসময় মনে রাখবেন।
আল:- আমার কিছু হলে তুমি সবার আগে ছুটে আসবে হাসালে তুমি একটু হেসে নেই বলেই জোঁড়ে জোঁড়ে পাগলের মত হেসে বলে তাঁর জন্যই তুমি আজ আমার সাথে এমনটা করেছো সত্যি বলতে আমি ম’রে গেলে তো তুমি খুশি হবে আর তুমি তোমার মত করে সবকিছু করতে পারবে।
সিমি:- ছিঃ আপনি এমনটা ভাবতে পারলেন কি করে আপনি ম’রে গেলে আমি খুশি হবো? আপনার কিছু হলে আমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবো। আর কি বলছেন আপনি ম’রে গেলে আমি আমার মত করে সবকিছু করতে পারবো? আর আমি যদি কিছু করি তাহলে আপনি বেচে থাকলেই করতে পারবো। আপনার থেকে যদি চলে যেতাম তাহলে সেই কবেই চলে যেতাম।
আল:- তাহলে যাচ্ছো না কেনো পরে আছো কেনো এই বাড়িতে? (সিমি কিছুটা ঘুরে গিয়ে বলে)
সিমি:- কেনো যাচ্ছি না কারণ আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি খুব ভালোবাসি। আমি আপনার কাছ থেকে দূরে গেলে মনে হয় আমার দম বন্ধ হয়ে গেছে বড্ড বেশি ভালোবাসি আপনাকে। তখনি সিমি তাকিয়ে দেখে আল ব্যাঞ্চের উপরে শুয়ে পড়েছে। সিমি আলের পাশে গেছে আর আল আস্তে আস্তে বলছে আমি সত্যি বলছি সিমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে জীবনে কখনো ঠকাবো না। তুমি চাইলে আমি সবকিছু ছেড়ে দিবো। আলের নে’শা একটু বেশি হয়ে গেছে যার কারণে নে’শা’র মাঝে এসব বলছে। আলের কথা গুলি সিমি শুনে একদম অবাক হয়ে গেছে তারমানে ওনি আমাকে এতটা ভালোবাসে! কিন্তু সবসময় আমার সাথে এত ঝগড়া করে কেনো? সিমি আলের মাথাটা ওর কোলের উপরে রাখছে ওর চুল গুলো এ্যালোমেলো করছে। আলের কপালে সিমি তার ঠোঁটের আলতু ছোঁয়া দিয়েছে। এই প্রথম কাওকে চুমু খেয়েছে সিমির কাছে খুব ভালো লাগছে এইটা ভেবে যে ও কাওকে চুমু দিয়েছে কিন্তু সে বলতে পারবে না যে আমি তাকে চুমু দিয়েছি। সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে খুব মাঁয়া ভরা একটা চেহারা ভিতরে শুধু হাজার প্যাচে ভরা। তখনি কেউ একজনের হাটার শব্দ পেয়েছে সিমি তাকিয়ে দেখে লতা এসেছে।
লতা:- ভাবি আপনারা এখানে আর সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে সবাই খোঁজ করছে। তাঁড়াতাড়ি নিচে আসেন বাড়ির সবাই বসে আছে অনুষ্টান আরম্ভ করার জন্য।
সিমি:- লতা তুমি গিয়ে খুব দ্রুত লেবুর সরবত বা টক জাতীয় কোনো সরবত নিয়ে আসো। তোমার ভাইয়া আজকে আবার ড্রিংক করেছে। তুমি বাড়িতে আপাদত কাওকে কিছু বলো না কেমন লতা হ্যা বলে খুব দ্রুত চলে গেছে এদিকে সিমি আবার আলের চুল গুলো টানছে আল কিছুটা ঘুরে শুয়েছে ঠিক তখনি সিমির পেটে আলের ঠোঁটের ছোঁয়া লেগেছে সিমি কেমন করে উঠেছে। জীবনের প্রথম কোনো মানুষের এমন ছোঁয়া পেয়েছে সিমির কাছে কেমন একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করেছে। এর মধ্য লতা লেবুর সরবত নিয়ে এসেছে।
লতা:- ভাবি নেন ভাইয়াকে খায়িয়ে দেন খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
সিমি:- হ্যা দাও। আলকে সিমি গাল টেনে আর ওর ঠোঁট গুলি টেনে সজাগ করেছে। আলকে অনেক কষ্টে লেবুর সরবতটা খায়িয়েছে।
লতা:- ভাবি কিছুকক্ষণ পর ভাইয়াকে নিয়ে আসুন আমি নিচে গিয়ে খালুকে বলছি ওনি সবাইকে ম্যানেজ করে নিবে।
সিমি:- ঠিক আছে যাও। লতা চলে গেছে সিমির কাদের উপর মাথা রেখে বসে আছে আল। সিমির আজ খুব ভালো লাগছে আর মনে মনে ভাবছে যদি এমন ভাবে বাকী জীবনটা কেটে যেতো তাহলেই ভালো ছিলো। তবে আজ থেকে আপনি যতই রাগ করেন আর কাজ হবে না আমি তো যেনেই গেছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন আজ থেকে দেখবেন আপনাকে আমি কি ভাবে ঝালাতন করি। এসব ভাবছে মনে মনে তখনি আল কিছুটা স্বাবাভিক হয়েছে। আল চেয়ে দেখে সিমির কাঁদের উপরে মাথা রেখে আছে। সাথে সাথে মাথাটা সরিয়ে নিয়ে বলে।
আল:- তুমি এখানে কেনো এসেছো?
সিমি:- মানে?
আল:- তুমি আমাকে থাপ্পড় দিয়ে এখন এখানে এসেছো কোন সাহোসে? সিমি বুঝতে পারছে শুধু থাপ্পড়ের কথাটা মনে আছে বাকী সবকিছু ভুলে গেছে। যাক ভুলে গেলেই ভালো হয়ছে। তখন আল আবার বলে তুমি এখানে এসেছো কেনো?
সিমি:- আমি তো সেই কখন থেকেই এখানে আছি। আচ্ছা আমরা এসব নিয়ে পড়ে আলোচনা করবো এখন তাঁড়াতাড়ি নিচে চলেন সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আল কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়েছে। মাথাটা জিম জিম করছে তাও সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে তখনি পড়ে যেতেছিলো তখনি সিমি ওকে জড়িয়ে ধরেছে পেছন থেকে তখনি আল নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে।
আল:- আমাকে ধরতে হবে না তুমি যাও তুমি এখন এসব কেনো করছো আমি সব জানি তবে তুমি চিন্তা করোনা আমি সবকিছু থেকে তোমাকে মুক্ত করে দিবো বলেই সিঁড়িতে পা দিয়েছে তখন আবার পড়ে যাচ্ছে এবারও সিমি ধরেছে আর এবারও আল ওকে সরিয়ে দিতে চায়ছে তখনি সিমি বলে।
সিমি:- আমি আপনাকে ধরে রাখবো যদি শক্তি থাকে তাহলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিন। এখন আলের যেই অবস্থা নিজেকে ঠিক রাখতে কষ্ট হচ্ছে তাহলে সিমির সাথে শক্তি দেখাবে কখন? আল কিছু বলেনি সিমি ওকে জড়িয়ে ধরেই নামতেছে। সিমির কাছে প্রতিটা সময় খুব ভালো লাগছে আর আল সিমির দিকে তাকিয়ে আছে দুজনে ছাদের উপর থেকে নেমে এসেছে তখনি চেয়ে দেখে আলের বোন ঝিনুক দাঁড়িয়ে আছে। ঝিনুককে দেখে সিমি আলকে ছেড়ে দিয়েছে আল আস্তে অাস্তে সামনের দিকে চলে গেছে সিমি যেতেছে তখনি ঝিনুক ওর হাত ধরে বলে।
ঝিনুক:- আমি কিছুতেই তোকে আলের সঙ্গে থাকতে দিবো না। আমি যেনে গেছি তুই এতদিন কোথায় ছিলি? তুই এতদিন তোর বয়ফ্রেন্ড শাওনের বাড়িতে ছিলি তাইনা?
সিমি:- আপু আমাকে যেতে দিন আল ঠিক নেই সামনে সিঁড়ি আছে নামতে গিয়ে পড়ে যেতে পারে।
ঝিনুক:- পড়লে সামন্য ব্যথা পাবে ঔষধ খাওয়াবো ডাক্তার দেখাবো ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু তুই যদি সাহানার মত আলকে ধোকা দিস তখন আল আবার নিজেকে নষ্ট করে ফেলবে। আজ তুই নিজেই আলের মনে তোর জন্য ঘৃণা জন্ম করে দিয়েছিস। আর সেই সুযোগটা আমি কাজে লাগাতে চাই।
সিমি:- আপু আপনি ভুল বুঝতেছেন আমাকে। আমি আলকে অনেক ভালোবাসি নিজের জীবনের চাইতেও বেশি।
ঝিনুক:- এখন তোর বয়ফ্রেন্ডে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তাই কত রকম কথাবার্তা বলবি তখনি সিমি জোঁড়ে ঝাড়া মে’ড়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ঠাস করে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ঝিনুকের গালে আর বলে।
সিমি:- আপনি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সম্পর্কে এমন বাজে কথা কি করে বলতে পারলেন?
ঝিনুক:- আমাকে থাপ্পড় দিয়েছিস আজ তোর খবর আছে আমি সবকিছু আজ প্রকাশ করে দিবো। আমিও দেখবো তুই কি করে আজকের পর এই বাড়িতে থাকিস এই বলে ঝিনুক চলে গেছে আর সিমি দৌড়ে আলের কাছে গেছে। আল এখন আগের থেকে কিছুটা স্বাবাভিক আছে। আল চেয়ে দেখে সিমি খুব টেনশন করছে তাও কিছু বলেনি আল যেখানে যাচ্ছে সিমিও সেখানে যাচ্ছে তখনি আলের বাবা এসে বলে।
বাবা:- আল সব মেহমানরা চলে এসেছে আর সিমির বাড়ির সবাই এসেছে তুই সিমিকে নিয়ে সবার সামনে যা বাকী কথা আমি বলতেছি।
মা:- হ্যা আল এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে সবাই অনেক বিরক্ত হয়ে গেছে। সবাইকে তো তাদের বাড়িতে যেতে হবে নাকী?
আল:- হ্যা যচ্ছি বলে সিমির হাতটা ধরে সামনে এগিয়ে যেতেছে তখনি ঝিনুক পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে।
ঝিনুক:- আল দাঁড়া আগে আমার কিছু কথা শুন তারপর স্টেজে যা তোরা।
মা:- ঝিনুক আবার কিসের কথা?
ঝিনুক:- তোমরা সবাই আমার কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনো। বাড়ির সবাই ঝিনুকের কাছে গেছে তখনি ঝিনুক বলে। সিমি যে মাঝে কিছুদিন আমাদের বাড়িতে ছিলোনা সেই কিছুদিন সিমি কোথায় ছিলো এইটা কি তোমরা জানতে পারছো?
দাদী:- ঝিনুক তুই সেই কথাটা নিয়ে কেনো পড়ে আছিস?
ঝিনুক:- সেই কথাটা নিয়ে পড়ে আছি কারণ সিমি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ওদের বাড়িতে ছিলো। আজ আমাকে একজন অচেনা লোক ফোন করে সব বলেছে। তখন সবাই অবাক হয়ে গেছে আর চুপচাপ হয়ে তাকিয়ে আছে সিমির দিকে তবে আল সিমির হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রাখছে তখনি আলের দাদী বলে।
দাদী:- ঝিনুক এই কথাটা আমি জানি আল আমাকে বলেছে শুধু আমি না তোর মাও জানে। আমরা শাওনের বাড়িতে গেছিলাম আর শাওনের মা বাবার সাথে কথা বলেছিলাম ওনারা সবটা খুলে বলেছে। তুই তোর মাকে যতটা প্রবিত্র মনে করিস ঠিক ততটাই প্রবিত্র সিমি।
মা:- ঝিনুক তোর দাদী যা বলেছে তা ঠিক বলেছে সিমি খুব ভালো মেয়ে সে আলকে খুব ভালোবাসে আমি নিজে সিমির সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি এতে করে যা পেয়েছি সবকিছু ভালো পেয়েছি।
আল:- আপু আমি নিজে যেহেতু ওকে মেনে নিয়েছি তাহলে তোর সমস্যা কোথায়? সিমি শাওনের বাড়িতে যতদিন ছিলো ততদিন সিমি শাওনের কাছ থেকে দূরে ছিলো আর তাছাড়া আমি কি অবিবাহিত ছেলে? আমি কি ভার্জিন আমার দিকে তাকিয়ে তারপর সিমির দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলা দরকার? আলের কথা শুনে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে সিমির চোখে অশ্রু জমে গেছে।
বাবা:- আচ্ছা অনেক হয়ছে এখন এসব বাদ দে। যা সিমিকে নিয়ে স্টেজে যা। আল সিমির হাত ধরে উপরে গেছে আর ওর বাবা সবার সাথে সিমিকে আলের স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সিমিকে শেলি জড়িয়ে ধরেছে আলকে তার বন্ধুদের সাথে চলে গেছে। এরপর যখনি সিমির বাবা মায়ের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তখন সিমির বাবা মানে জহির সাহেব বলে।
জহির সাহেব:- বেয়াই সাহেব আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিন আমি আমার মেয়ের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই।
বাবা:- হ্যা নিশ্চয় বলে মাইক্রোফোন হাতে দিয়েছে। জহির সাহেব মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে।
জহির সাহেব:- আমি সিমি রহমানের বাবা নয় আপনারা এতক্ষণে যা শুনেছেন সবটা মিথ্যা সত্যি শুনেছেন। আমি সিমি রহমানকে আলের কাছে টাকার বিনিয়মে বিক্রি করে দিয়েছিলাম। যদিও আল ইসলামিক নয়মে সিমিকে বিয়ে করেছে সেখানে আমি নিজেই উপস্থীত ছিলাম তখনি সবাই নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা করতে আরম্ভ করেছে আর সিমি সহ সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আল রেগে মেগে আগুন হয়ে ওনার দিকে যাচ্ছে তখনি ওনি আবার বলতে থাকে ওনার কথা শুনে সবাই এবার আরও অবাক হয়ে যায়। সিমি শেলি ওর মা আলের পরিবারের সবাই একদম নিরব হয়ে গেছে আল সিমির দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে তখনি এক পা দুই পা করে সিমির দিকে আসছে ঠিক তখনি জহির সাহেব বলে।
।
চলবে…