#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ২৫
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া
মেহতাব একমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে । সৌরভ , রৌফ , সিয়াম বুঝতে পারছে না হঠাৎ মেহতাব কাউকে না বলে লন্ডনের উদ্দেশ্যে কেনো রওনা হয়েছে । অজানা ভয় তাদের গ্রাস করেছে । অন্যদিকে সামির বুঝতে পারছে মেহতাবের এহেন আচরণের কারণ কিন্তু ভয়ে সে চুপ হয়ে আছে । মেহতাব গাড়ির মিরোর গ্লাস দিয়ে সকলের ভয়ার্ত মুখ দেখে স্মিত হাসলো । নিরবতা ভেঙে শুধালো ,
“কে করেছে এই কাজ”?
কেউ কিছু বুঝতে পারলো না সামির ছাড়া । মেহতাব আবার শুধালো ,
“আমাদের ড্রিংকসে আ্যলকোহল আসলো কিভাবে? আই নিড এন্সার হারি আপ”
সৌরভ বলে উঠলো ,
“দোস্ত আমার ভালোবাসার কসম আমি কিছুই জানি না এই বিষয়ে”
রৌফ বলে উঠলো ,
“দোস্ত আমার পাঁচ বংশের কসম আমি কিছুই জানি না এই বিষয়ে আমার কোনো হাত নাই”
সিয়াম বলে উঠলো ,
“আমার বাবার তৈরি এতিমখানার কসম আমিও জানি না । মনে হয় রৌফ করছে জলজ্যান্ত প্রমান ওর দুটো হাত”
সবাই সিরিয়াস ভাবে সিয়ামের দিকে তাকালো । সিয়াম ইতস্তত হেসে চুপ হয়ে গেলো । সবার কথা শেষে সামিরকে কিছু বলতে না দেখে সবাই সামিরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ।সামির ইতস্তত করে মুখ ফুটে বলে উঠলো ,
“যাহা বলিব সত্য বলিব সত্য ছাড়া কিছু বলবো না । দোস্ত মাফ কইরা দে । এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে আশা করি নাই । আসলে আমি কালকে এলকোহল মিশ্রিত ড্রিঙ্কস এর মধ্যে টিনার কথা মতো নেশার ট্যাবলেট মেশানোর বদলে টিনার ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছি । আই ছোয়্যার তোদের মধ্যে কিছু হয় নাই । আমরা যখন নিচে এসেছিলাম স্টাফকে নিয়ে তখন অলরেডি তোরা ঘুমাচ্ছিলি । আর টিনা মেঘের শাড়ি চেঞ্জ করে দিয়েছে কমফোর্টেবল এর জন্য । তোরা সাক্ষী আমি যদি মিথ্যে বলে থাকি আমার জীবনেও বিয়ে হবে না”
সামিরের কথা শেষ হতেই মেহতাব তপ্ত শ্বাস ফেলে গাড়িতে জোড়ে ব্রেক কষলো । সবাই পড়তে পড়তে বেচেঁ গেলো । মেহতাব বলে উঠলো ,
“আমাদের মধ্যে কিছু হয়ছে কী হয় নি এই নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই । মেঘ আমায় ভুল বুঝুক আই কান্ট একসেপ্ট দিস । বাই চান্স ও যদি ভুল বুঝে তোকে আমি বিক্রি করে দিবো সামির গড প্রমিস । গাড়ি থেকে নাম তোরা”
সবাই ভদ্র বাচ্চাদের মতো নেমে পড়লো । মেহতাব বলে উঠলো ,
“শুরু কর”
সবাই জানে মেহতাব তাদেরকে দিয়ে কী করাতে চাইছে । সৌরভ আশেপাশে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ,
“দোস্ত এইটা তো পার্ক মান সম্মান সমুদ্রে মিশা যাইবো । অন্য কোনো শাস্তি… আর এমনিতেও সামিরের সব দোষ আমরা কিছু করছি নাকি”?
মেহতাব শয়তানি হাসি দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে যাবে । সবাই কান ধরে উঠবস করতে শুরু করলো । মেহতাব ছোট একটা হাঁসি দিয়ে কাউন্ট করতে শুরু করলো । শাস্তি শেষে সবাই কোমরে হাত দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো । রৌফ বলে উঠলো ,
“আমি মেঘের কাছে বিচার দিমু”
“মনে হয় ডোস টা কম পড়েছে । আরেকবার হয়ে যাক কি বলিস”? (মেহতাব)
রৌফ সবার দিকে আঙুল তাক করে বলে উঠলো ,
“এই কে কইলি মেঘের কাছে বিচার দিবি । হেরে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওই কূলে পাঠাইয়া দিমু”
মেহতাব স্মিত হেসে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো ।
.
.
মেঘ রুমের বারান্দার দোলনার উপরে মুখ গোমড়া করে বসে আছে । এক তার কালকে রাতের কোনো ঘটনাই মনে নেই , দুই মেহতাব তাকে না বলে কয়ে সামান্য একটা বিদায় না জানিয়ে আচমকা চলে গেছে । টেবিলে লেম্পের পাশে রেখে গেছে ১ হাজার টাকার ৮ টা নোট আর একটা ক্রেডিট কার্ড । সঙ্গে চিরকুট স্পষ্ট লেখা ।
“আমি লান্ডান ফিরে যাচ্ছি একটা আর্জেন্ট কাজ এসে পড়েছে । গিয়েই মিটিং এর ব্যাবস্থা করতে হবে । আর তোমার যদি কোনো জিনিসের দরকার পড়ে কন্টাক্ট মি ওকে । আমায় বলতে প্রবলেম হলে সমস্যা নেই আমি আম্মুকে বলে দিবো । টেক কেয়ার”
ব্যাস এই কথা ভাবতে ভাবতে মেঘ এক ধ্যাঁনে দোলনায় বসে আছে । তার মনে বিষণ্ণতার মেঘ ছেয়ে গেছে । সকালে নাস্তার টেবিলেও যায় নি । কারো পায়ের শব্দ পেতেই মেঘ সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো । অহনা , শাম্মী , সিমরান আর মিথিলা এসেছে । অহনার হাতে খাবারের প্লেট । মেঘকে মনমরা দেখে অহনা বলে উঠলো ,
“কী হয়েছে তোর? নাস্তা করতে আসলি না কেনো ? মেহতাব আর সৌরভদেরও দেখতে পেলাম না”
মেঘ ওই চিরকুট কার্ড আর টাকা অহনার দিকে এগিয়ে দিলো । অহনা চিরকুট টা হাতে নিলো তার ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো । বলে উঠলো ,
“কী এগুলো”?
“ভাবী চিরকুটে কিছু লেখা আছে”
অহনা চিরকুট আওয়াজ করে পড়লো । মেঘের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ,
“কী এমন আর্জেন্ট কাজ পড়েছে ? যে ও আমাদের কাউকে বিশেষ করে তোকে কিছু না বলে লন্ডনে চলে গেলো”
মেঘের মেহতাবের কথা আবার মনে পড়তেই চোখ ছলছল করে উঠলো ,
“শেষ কথা তো দূর দু চোখ ভরে দেখতেও পেলো না । বলতে পারলো না তার ভালোবাসার কথা গোপনেই রয়ে গেলো”
.
.
সকাল গড়িয়ে বিকেল । সবাই ব্যাগ প্যাক করে নিয়েছে । আজই রওনা দিবে । মিথিলা , শাম্মী , সিমরান আর সৌম এখান থেকে বাসায় যেতে চেয়েছিল । অহনা , মেঘের জোরাজোরিতে একদিন থেকে যাবে তারা । সৌম , মেহসান ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করছে মেহতাব বা সৌরভদের আপডেট স্ট্যাটাস দেখার জন্য । টিনা এখান থেকে এয়ারপোর্টে গিয়ে লন্ডনে যাবে কোম্পানিতে জয়েন করতে আর মেহতাবকে বলে তার ভালো কাজের ক্রেডিট নিয়েই ছাড়বে সামিরকে একা ভোগ করতে দিবে না কিছুতেই না । সবাই টিনাকে আর কয়দিন থাকতে বলেছে সে শোনেনি । আহতাব সব ব্যাগ, সুইটকেস গাড়িতে তুলে সবাইকে ডাকতে এসেছে । সবাইকে এভাবে মনমরা দেখে শুধালো ,
“বধূ , শালীকা আর আমার ভাই-বোনেরা তোমরা এতো মন খারাপ কেনো করছো । মেহতাবরা আবার আসলে আমার তরফ থেকে ককটেল পার্টির অ্যারেঞ্জ করবো । সবাই খুশি তো” ?
সবার মুখে আহতাবের কথা শুনে একটু হাসি ফিরলো । অহনা মেঘকে সামলে নিয়েছে । আহতাবের কথা মতো সবাই গাড়িতে উঠে পড়লো ।
#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ২৬
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া
বাড়িতে পিনপতন নিরবতা । সবাই যার যার রুমে ঘুমাচ্ছে । সবাই জার্নি করে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে । মেঘ ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে । এমনিতেও রুমে গেলে তার মন খারাপ থাকবে ঘুম আসবে না । টিভি দেখলে একটুর জন্য হলেও মানুষটিকে ভুলতে পারবে । হঠাৎ কেউ তার পাশে এসে বসলে মেঘ চমকিয়ে উঠলো । পাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখতে পেলো অরিন বেগম । অরিন বেগম তার মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলেন ,
“মন খারাপ মা তোর”?
“না , মা তেমন কিছুই নয়”
অরিন বেগম স্মিত হাসলেন আর বলে উঠলেন ,
“মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ নয়”
মেঘ জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো । তখনি মিনহাজ সাহেব রুমে থেকে এসে মেঘকে বসে থাকতে দেখে পাশে এসে বসলেন । বলে উঠলেন ,
“মা , তুমি এখনও জেগে আছ কেনো ? শরীর খারাপ করবে ঘুমোতে যাও । আর কালকে তোমাকে আর অহনাকে আমি স্কুলের শিক্ষকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব । তোমাদের কোনো সমস্যা হবে না”
মেঘ ভাবতে পারেনি এতো সহজে পরিবারের সকলে ব্যাপারটা মেনে নিবে । সে মুচকি হেসে বলে উঠলো ,
“ধন্যবাদ বাবা”
“ধন্যবাদের কী আছে মা । তুমি নিজে থেকে কিছু করতে চাইছ সেটা তো ভালো কথা , শুনে অনেক ভালো লাগলো । মেহতাব আমায় বলে দিয়েছে বারবার করে যাতে তোমাদের আমি চাকরী করার অনুমতি দিয়ে দিই । আমিও না করি নি । কিন্তু ও কাউকে না বলে চলে যাবে । সেটা আমি আশা করি নি আমি বিয়ের আগে ওকে কথা দিয়েছিলাম ওর কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করবো না”
“আপনি কেনো অপমানিত বোধ করছেন বাবা । উনি আমার খেয়াল ঠিকঠাকমতো রাখছেন । আর উনি তো জরুরি কাজের জন্য গিয়েছেন বাবা । আর আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নরমাল । আমাদের বিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হয়নি তাই বলে উনি কখনো কোনো খারাপ কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেননি বা এমন কোনো বিহেভ করেননি যাতে আমি কষ্ট পাই”
“তাহলেই ভালো আমার ও চাই তোমরা ভালো থাকো মা”
মিনহাজ চৌধুরী আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই সবাই একসাথে ড্রয়িং রুমে এসে বসে পড়লো । অহনা রান্না ঘরে চলে গেলো সবার জন্য হালকা কিছু খাবার তৈরি করতে । মেঘ ও সাহায্য করতে রান্না ঘরে চলে গেল । সবাই গল্প করতে করতে কিছু কথা বলে নিলো । মেঘ আর অহনা সবাইকে চা আর হালকা কিছু খেতে দিলো । তারাও পাশে বসে পড়লো । মিনহাজ সাহেব অল্প হেসে বলে উঠলো ,
“মেহতাব হঠাৎ চলে যাওয়াতে তোমাদের মুখ গম্ভীর করে রেখেছো নাকি”?
সবাই মনমরা হয়ে আছে সবার মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মিনহাজ চৌধুরী আবার বলে উঠলেন ,
“চলো একটা রোমান্টিক মুভি দেখি । তোমাদের বয়সে বউ কে নিয়ে কতো ঘুরেছি সিনেমা দেখেছি। আর তোমরা তো আমার নখের গুনও পাও নিই । সবাই মায়ের মতো রসকষহীন হয়েছো”
সবাই মুচকি হেসে উঠলেন । মেহসান বলে উঠলো ,
“আম্মু এতো আনরোমান্টিক ছিলো নাকি”
অরিন বেগমের দৃষ্টির কাছে মেহসান ঝলসে গেলো । অরিন বেগম কেশে নিচু কণ্ঠে বলে উঠলেন ,
অরিন : তোমার কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই । বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে ।
আস্তে বললেও কারো কান এড়ায় নি অরিন বেগমের কথা । সবাই দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে হাসি থামানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সবাই এভাবে অনেক কথা বিনিময় করে রুমে চলে গেলো ।
শাম্মী , সিমরান , মিথিলা আর অহনা মেঘের কাছে শুতে চেয়েছিল । মেঘ একান্ত সময় কাটাটে চায় বলে তারা কেউ আর বিরক্ত করেনি ।
মেঘ রুমে ঢুকে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে পড়লো । অনেকদিন পর ফোন অন করলো । মেহতাব হয়তো কল দিতে পারে এই ভেবে । ফোন অন করে সে বিছানার পাশে রাখলো ।যাতে কল দিলে শুনতে পায় সে । ক্লান্ত হওয়ায় দু চোখের পাতা বন্ধ করতেই নিজের অজান্তে সে ঘুমিয়ে পড়লো ।
.
.
মেহতাব কোম্পানিতে এসে পড়েছে । প্রাইভেট প্লেনে এসেছে তাই সময় লাগেনি বেশি । হাতে ফোন নিয়ে মেঘের কথা ভাবছে সে । ফোন করবে কি করবে না । এই ভেবে ফোন করলো । একটা নয় ২০ টার ও বেশি । তার এখন বেশ অভিমান হয়েছে আর রাগ ও । রাগ ঝাড়তে সে তার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হ্যারিকে ডেকে পাঠায় । হ্যারি রুমে প্রবেশ করে । ছেলেটার বয়স বেশি না ১৬ কি ১৭ হবে । গাঁয়ের রঙ মাত্রাতিরিক্ত ফর্সা । হ্যারিকে বলে উঠলো ,
“সৌরভ, সামির ,সিয়াম আর রৌফ কে ডেকে পাঠাও । হারি আপ”
মেহতাবের কথামতো হ্যারি চলে যায় ওদের কেবিনে ওদের ডাকতে । কেবিন রুমে ঢুকেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব না করে বলে ওঠে ,
“এই অনেক গুলো ঝামেলা তোমাদের বস ডাকছে”
সবাই এক জনের উপর অন্যজন ঘুমাচ্ছিলো । কারো কথা কর্ণকুহুর অব্দি পৌঁছাতেই পিটপিট করে তাকালো । হ্যারিকে দেখে ভূত দেখার মতো ভয় পেলো । শুধাল ,
“দোস্ত এই গিরগিটি এখানে কী করছে?”
হ্যারি বাংলা খুব ভালো অনুবাদ করতে পারে আর বলতেও পারে । তাই তার বুঝতে অসুবিধা হয় নি । শয়তানি হাসি হেসে বলে উঠলো ,
“তোমরা চার জন আমার আগামী ১০০ জন্মের শত্রু । তোমাদের যতবার পুনর্জন্ম হবে আমার তত বার হবে । বস আমাকে অনুরোধ করেছে তাই থেকে গেলাম নয়তো তোমাদের মতো গাধা, গরু, মোরগ, ছাগলের সাথে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই এই হ্যারির”
হ্যারিকে আপাদত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে রৌফ বলে উঠলো,
“কী হয়েছে মেহতাব ডাকতাছে কেন”?
“চল দেইখা আসি”(সৌরভ)
যেইভাবা সেই কাজ কেউ কোনো কথা না বাড়িয়ে কাঁচা ঘুম থেকে উঠে মেহতাবের অফিস রুমে চলে গেল সবাই । হ্যারি দুর থেকে মিটিমিটি হাসছে । তাদের আজ খবর আছে হ্যারি ভালো করেই বুঝতে পারছে । সবাই নিজেদের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে সিয়াম শুধাল ,
“কিছু বলবি দোস্ত”?
মেহতাব বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে পাশের কাঁচের জানালার দিকে এগিয়ে পর্দা সরিয়ে দিলো । এতক্ষন অন্ধকার থাকলেও পর্দা সরানোর কারণে মেহতাবের কেবিনে আবছা আবছা আলোর প্রবেশ ঘটেছে । সে যে সাংঘাতিক রেগে আছে তা একটু হলেও সবাই আঁচ করতে পেরেছে । মেহতাব হ্যারিকে ইশারায় কিছু বললো । হ্যারি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে কোথায় একটা চলে গেলো । সবার অবস্থা বেশ খারাপ । তারা অনবরত শুঁকনো ঢোক গিলছে । সামিরের জন্য তাদের কতো ঝড় পোহাতে হবে । হঠাৎ রুমে কারো প্রবেশ ঘটলো । দুইজন পালোয়ান বেশবহুল আধুনিক কোট আর প্যান্ট পরিধান করা । হঠাৎ দুইজন মিলে তাদের চার জনকে তুলে নিলো । যেনো তারা তাদের দুইজনের কাছে পুঁটি মাছ । ঠান্ডা কিছু অনুভব করতেই পিটপিট করে তাকালো তারা । নিজেদের সুইমিং পুলে দেখে চমকে গেলো । তাও আবার হাফ প্যান্ট পরে গার্ডরা সব প্যান্ট শার্ট খুলে নিয়েছে । এমনিতেই শীতের মৌসুম তার উপর শিরশিরে বাতাস বহমান । বাংলাদেশের চাইতেও ১০ গুন বেশি ঠান্ডা এখানে । মুহূর্তেই থরথর করে কাঁপতে লাগলো তারা । সবাই সামিরের দিকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকালো । সামির জানে সে এখন গনপিটুনি খাবে । মুহূর্তেই সৌরভ , সামির , রৌফ তাকে পানিতে চুবাতে শুরু করলো ।
সবাই M.C (মেহতাব চৌধুরী) কোম্পানির নিচের ক্যাফে বসে আছে । সবার অবস্থা বেহাল । সামির তো ৪ টা জ্যাকেট সঙ্গে চাদর জড়িয়ে গরম গরম কফি নিয়ে বসে আছে । সৌরভ , রৌফ , সিয়ামের ও একই অবস্থা । হঠাৎ কারো আগমন ঘটে । অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। লাইট অন করতে ভুলে গেছে সবাই । আবছা আবছা আলোয় অবয়ব টা দেখতে পেলো তারা । এ আর কেউ না টিনা । টিনা এসে তাদের সাথে বসে পড়লো । সামিরের কফি টা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলে রেখে বলে উঠলো ,
“কেমন আছো তোমরা ? আমি আজ থেকে এই M.C কোম্পানিতে জব করবো । আর আমার ভালো কাজের ক্রেডিট নিয়ে আমার প্রমোশন হয়ে যাবে । আই এম এ লাকি গার্ল যার প্রথম দিনেই প্রমোশন হবে । উহ হু”
সবাই বেশ বুঝতে পারছে টিনা কোন কাজের কথা বলছে । সবাই কষ্টের মধ্যে থেকেও মুখে হাসি ফুটলো টিনার কথা শুনে । সামির বলতে যাবে সবাই ওর মুখ চেপে ধরেছে । রৌফ হেসে বলে উঠলো ,
“হ্যাঁ তোমার প্রমোশন নেওয়া উচিত । সামিরকে প্রমোশন দিতে চাইছিলো মেহতাব । সামির তোমার নামে সব ক্রেডিট দিয়ে দিয়েছে । যাও মেহতাব তোমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে”
“তাহলে যাই কী বলো তোমরা?”
টিনাকে এতো উৎফুল্ল দেখে সবাই মিটিমিটি হাসলো । নিজেদের স্বাভাবিক করে মাথা নেড়ে সম্মতি প্রদান করলো । টিনা নিজের সুইটকেস নিয়ে হাসতে হাসতে উপরে চলে গেলো । সবাই টিনার ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভেবে একটু নড়েচড়ে বসলো । সবাই টিনাকে দেখার জন্য সুইমিং পুলে চলে গেলো । কিছুক্ষণ পর টিনাকে গার্ডরা এনে পুলে ফেলে দিলো । যেই জামা কাপড় পড়ে ছিলো সেই জামা কাপড় পড়ে আছে সে। সৌরভ আর বাকিরা উল্লাসে এগিয়ে গেলো পুলের দিকে । টিনা বলে উঠলো ,
“হোয়াট ইজ দিস”?
রৌফ কাঁপা কাঁপা বসে যাওয়া গলায় বললো ,
“দিস ইস ঠান্ডা শাস্তি ”
“আর তোমার প্রমোশন” (সৌরভ)
.
.
ভোর হয়েছে পাখিদের আনাগোনা । ঘরের মধ্যে জানালা ভেদ করে সূর্যের আলো মেঘের মুখের উপর পড়তেই । সে পিটপিট করে চোখ মেলল । নিঃশব্দে বিরক্তি প্রকাশ করলো । ঘুম থেকে উঠে অ্যালার্ম বন্ধ করে নামাজ আদায় করার জন্য ওজু করতে চলে গেলো । ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ আদায় করে নিচে চলে গেলো নাস্তার ব্যবস্থা করতে । অহনা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলো মেঘকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখে বলে উঠলো ,
“তোর ঘুম ভেঙেছে । আয় নাস্তা করে নিবি”
মেঘ অহনাকে সাহায্য করতে নিলে । অহনা জোর করে বোনকে চেয়ারে বসিয়ে দেয় । আর পরোটার কিছু অংশ মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে ওঠে ,
“মেহতাবের সাথে কথা হয়েছে”?
অহনার কথা কান অব্দি পৌঁছাতে দেরী । টেবিল ছেড়ে উঠতে দেরী হয়নি মেঘের । সিঁড়ি দিয়ে হন্তদন্ত করে উঠে রুমে প্রবেশ করলো । ফোন বিছানায় পরে থাকতে দেখেই হাতে নেয় সে । হাতে নিয়ে সে থমকে যায় । এক দুই টা না ৫২ টা কল । মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় শুইয়ে পড়ে ।
#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ২৭
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া
মেঘ বিছানায় শুয়ে আছে মুখে বিষণ্ণতার ছাপ । একটা কল ও শুনতে পেলো না । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে পড়লো । আপাদত এইসব ভাবলে চলবে না । চাকরির প্রথম দিন পরিপাটি হয়ে যেতে হবে । সুইটকেস খুলে জামা কাপড় গুলো গুছিয়ে রাখতে লাগলো । হঠাৎ চোখ গেলো একটা প্যাকেট এর উপর । যার উপর স্পষ্ট তার নাম লেখা । সে অবাক ভঙ্গিতে প্যাকেট টা খুলতে লাগলো । একটা হালকা গোলাপি রঙের থ্রিপিস সুন্দর কাঁচ করা । বেশ সুন্দর তার উপর একটা সিল করে লাগানো মিসেস এম.ছি । মেঘ অজান্তেই মুচকি হাসলো । থ্রিপিস নিয়ে আয়নার সামনে ধরলো । শূধালও,
মেঘ : বেশ সুন্দর লাগছে । ওনার চয়েজ বেশ ভালো বলতে হবে ।
হঠাৎ দরজায় টোকার শব্দ পেতেই পিছনে ফিরে তাকাতেই অহনাকে দেখতে পেলো । অহনা উদ্বিগ্ন হয়ে মেঘের কাছে এসে বিছানায় বসে পড়লো । মেঘের কপালে ভাঁজ পড়লো । মেঘ অহনার পাশে বসে বলে উঠলো ,
মেঘ : কি হয়েছে আপু?
অহনা মনমরা হয়ে বলে উঠলো ,
অহনা : আমি বেবি কনসিভ করেছি ।
অহনার কথা টা শুনে মেঘ কি করবে দিশা হারিয়ে ফেললো । কিন্তু অহনা কে এমন বিধ্বস্ত দেখে বলে উঠলো ,
মেঘ : এটা তো খুশির খবর মুখটা এমন করে রাখার কী হলো ? আমাদের ঘরে একটা পুচকো সোনা আসবে । আলতো আলতো হাতে আমায় ছুঁয়ে দিবে । আমায় খালামণি বলে ডাকবে । কত মজা হবে !
অহনা : আমার চাকরির কী হবে ?
এবার মেঘ কী বলবে বুঝে পায় না । সত্যিই তো অহনা চাকরি সামলাবে না বাচ্চা ঘর সামলাবে । কিছু একটা ভেবে মেঘ বলে ওঠে ,
মেঘ : তুই চিন্তা করিস না তেমন কিছুই হবে না । আমরা দুই জা মিলে দেখবো । কেমন ?
অহনার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে মেঘ আবার বলে ওঠে ,
মেঘ : এবার তো হাসো অহির মাম্মাম ।
মেঘের কথা শুনে এবার অহনার মুখে একটু হাসির রেশ ফুটে ।
____________
মেহতাব চেয়ারে হেলান দিয়ে সবেমাত্র দু চোখের পাতা এক করেছিলো । কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে উঠে পড়ে । সবাই এসে সামনের রকিং চেয়ারে এসে বসে পড়ে । মেহতাব ওদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা পরোক করে বলে ওঠে ,
“তোদের একটা কাজ দিবো করতে পারবি ? সামির বাদে”
সামিরের উৎফুল্ল মন টা নিমিষেই কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলে ওঠে,
“দোস্ত আমার পাপের ঘরা খালি হইবো কখন?”
“যখন তুই কোনো কথা এমনকি মুখ দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারণ করবি না তখন । আর কাজ টা হলো”
মেহতাব বলার আগ মুহূর্তে সৌরভ বলে ওঠে ,
“কী করতে হইবো দোস্ত দেখ আমরা এক পায়ে খাড়া”(সৌরভ)
সবাই চেয়ার থেকে উঠে এক পায়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে । হ্যারি (এসিস্ট্যান্ট) মেহতাবের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে ।
“আজ থেকে তোদের কোনো টাফ কাজ করতে হবে না । আমি ম্যানেজ করতে পারবো । তোরা শুধু মেঘের ফিলিংস কী আমার জন্য সেটা জানিয়ে দিবি ব্যাস । যদি মেঘের আমার প্রতি কোনো ফিলিংস থাকে তাহলে তোদের মাফ করার বিষয় টা আমি দেখবো, না থাকলে তোদের সুইমিং পুলের কথা মনে আছে আশা করি । জানি এই কথাটা আনপ্রফেশনাল বাট মানুষ ভালোবাসলে সব কিছু করতে পারে”
সবাই এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল কিন্তু শেষের কথাটার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না । সিয়াম সামিরকে চিমটি মারলো যে তারা সপ্ন দেখছে নাকি । সামির ব্যাথায় মুখ দিয়ে শব্দ করবে মেহতাবের দেওয়া শর্তের কাছে হার মানতে হলো ।
সবাই যার যার কাজে চলে গেলো । মেহতাব ফোন হাতে নিয়ে মেঘকে আবার ফোন করবে কিনা এইভেবে ফোন করেই দিলো ।
____________
মেঘ রেডি হয়ে নিয়েছে । হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় ফোনের দিকে দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলো মেহতাবের নামটা জ্বলজ্বল করছে । কোনো কিছু না ভেবে ঠাস করে ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো । রিসিভ করার সাথে সাথে মেহতাব বলে উঠলো ,
মেহতাব : আর ইউ ওকে ?
মেঘ : হুমম ।
মেহতাব : ফোন ধরো নি কেনো ?
মেঘ : আব…আসলে শুনতে পাই নি ।
মেহতাব : ওকে ঠিকাছে আজকেই কী জয়ন করবে ?
মেঘ : হুমম একটু পর বের হবো ।
মেহতাব : বাবা রাজি হয়েছে ?
মেঘ : হুমম , আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর মতো ভাষা নেই আমার ।
মেহতাব : ভালোবাসলেই হবে ।
শেষের কথাটা বলে মেহতাব ফোন কেটে দিলো । মেহতাব আস্তে বলায় মেঘ শুনতেও পায়নি । তখনি মিনহাজ চৌধুরী নিচ থেকে মেঘ আর অহনাকে ডাক দিলেন । মেঘ ব্যাগ নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো ।
___________
বেশ অনেকদিন কেটে গেছে মেহতাবদের যাওয়ার পর । সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত । মিথিলারা পড়াশোনা নিয়ে বিজি , সৌরভ বাকি সবাই তাদের চাকরি , মেহতাব আর আহতাব এর অফিস । মেঘও দুই দিক ভালো করে সামলে নিয়েছে । অহনার ডেলিভারির ডেটও প্রায় সন্নিকটে তাই সে চাকরি থেকে কয়দিন স্থগিত নিয়েছে । আর মৌমিতা বেগমের কাছেই থাকবে এই কয়দিন । সব ঠিক আছে শুধু মেঘ আর মেহতাবের কথা বলার সময় কমে গেছে । মেহতাব সময়ের অভাবে খুব বেশি কথা বলতে পারে না । মেহতাব অনেক ব্যস্ত থাকায় মেঘও বেশি ফোন করে না । শুধু খবর নেওয়া হয় এই আর কী ।
___________
মেঘ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেহসানের জন্য মেহসানের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে তাই একসাথে যাবে তারা । পিছনে কেউ মেঘের নাম নিতে সে পিছনে ঘুরে তাকায় । একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।
“আপনি কী এখানে জব করেন?”
“জ্বি আপনাকে চিনতে পারলাম না”
“আমি নতুন জয়েন হয়েছি আমি আরাব”
“ওহ আমি মেঘ , মেহনুর মেঘ”
মেহসান তার বন্ধুদের নিয়ে গেট পেরোতেই মেঘের সাথে কাউকে কথা বলতে দেখে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে । কলার উচিয়ে বলে ওঠে ,
“এই যে মিস্টার অচেনা , ইনি মিসেস মেহতাব চৌধুরী দূরে থাকবেন এনার থেকে । নাহলে মেহসান নামক ঝড়ের কবলে পড়তে হবে”
মেঘ কোনমতে মেহসানের মুখ চেপে ধরে । ওকে ওখান থেকে নিয়ে চলে এসেছে নাহলে আজ মেহসান লোকটাকে কথা দিয়ে আধমরা করে ফেলতো । মেহসান মুখ গোমড়া করে রেখেছে । মেঘ মুচকি হেসে বলে ওঠে ,
“কী খাবে তুমি?”
যেই মেহসান খাবারের কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় । সে আজ এই কথা শুনে ও মুখ ফিরিয়ে রেখেছে । মেঘ একটা আইস্ক্রিমের স্টল থেকে দুইটা আইসক্রিম নিয়ে মেহসানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠে ,
“হয়েছে । মেহসান নামক লক্ষ্মী ছেলের মুখ এমন গম্ভীর থাকলে বেমানান লাগে । ভাবী আর কোনো অচেনা লোকের সাথে কথা বলবে না প্রমিজ”
এবার মেহসান ঘাড় ঘুরিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ,
“পাক্কা প্রমিজ”
“হুম , এবার চলো”
_____________
বাড়িতে মেঘ আর মেহসান ছাড়া কেউ নেই । মিনহাজ চৌধুরী আর আহতাব কাজ সূত্রে বাইরে গেছেন । অরিন বেগম আর মেহসানের দাদী গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন । মেঘের উপর সব দায়িত্ত্ব ভার সে সামলে ও নিয়েছে । মেঘ খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে । মেহসান কে খেতে ডাকতেই মেহসান ফোন হাতে নিয়ে টেবিলে বসে পরে । সে ভিডিও কলে হুল্লোড় পার্টির সাথেই কথা বলছে । মেঘের দিকে ক্যামেরা ঘোরাতেই সৌরভ তার ল্যাপটপ মেহতাবের সামনে রাখে মেহতাব কিছু ফাইল দেখছিল ল্যাপটপে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই তার বধূরুপি মেঘকে দেখে থমকে যায় । মেঘ বাটিতে তরকারি বেড়ে রাখছিল । শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে একদম পাক্কা গৃহিণী লাগছে তাকে । সবার দৃষ্টি মেহতাবের দিকে । মেহতাব বেশ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তাকে । ছোট ছোট চুলগুলো মেঘের চোখের সামনে এসে তাকে জ্বালাতন করছে মেহতাবের ইচ্ছে তো করছে ল্যাপটপের ভিতর হাত ঢুকিয়ে ঠিক করে দিতে ।
অন্যদিকে মেঘ মেহসানকে ফোন ধরে থাকতে দেখে বলে উঠে ,
“অনেক কাজ করেছেন , এসে পড়ুন”
মেহতাব ভাবে মেঘ তাকে ফিরে আসতে বলছে । পরক্ষণেই মেহসান ক্যামেরা ঘুরিয়ে নেয় । মেহতাব ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ফাইল টেবিলের উপর রেখে দেয় । চোখের নিচে হাত দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে । সামির বলে ওঠে ,
“দোস্ত আর কতো দিন । ভালো একটা দিন দেখে মেঘকে প্রপোজ করে দে কেচ্চা খতম ।
“কেচ্চা কী?(রৌফ)
“তোর বাচ্চার নাম মূর্খ ।
মেহতাব স্মিত হেসে বলে ওঠে,
“নোট ব্যাড ।
সৌরভ খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে ওঠে ,
“আমাগো আর ঠান্ডা শাস্তির কবলে পড়তে হইবো না । আজকে
আমি মিষ্টি বিলীন করিবো সবার পানে । ঠান্ডা শাস্তির কসম এবারের সংগ্রাম ,
সবাই একসাথে বলে ওঠে ,
“মেঘ আর মেহতাবের ভালোবাসার সংগ্রাম”
সৌরভ আবার বলে ওঠে ,
“এবারের সংগ্রাম”
“মিহির আসার সংগ্রাম”
মেহতাব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে ওঠে ,
“মিহি কে?”
“তোর মাইয়া দোস্ত ২০৫০ সাল এসে পড়েছে , অর্থাৎ তোর প্রজন্ম আসার পার্ফেক্ট টাইমিং” (সিয়াম)
মেহতাব স্মিত হেসে বলে ওঠে ,
“বডিগার্ড”
সবাই পালাই পালাই করে তাড়াতাড়ি কেবিন ত্যাগ করে ।
মেহতাব আনমনে মুচকি হেসে বলে ওঠে ,
“মিহির মাম্মাম নোট ব্যাড”
চলবে।