#তুমি_এলে_তাই
#পর্ব:১০
#লেখিকা:ইশরাত_জাহান_অধরা
“কলেজ ছুটির সময় আপনাকে আমার জন্য ওয়েট করা লাগবে না।”
চৈতির কথা শুনে শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেন?কোথাও যাবেন?”
“আসলে আম্মুর ফ্রেন্ডের ছেলের সাথে দেখা করতে হবে।তাই কলেজ শেষে সরাসরি অই রেস্টুরেন্টে চলে যাব।”
“অহ, আচ্ছা ঠিক আছে।বেস্ট অফ লাক!”
“বেস্ট অফ লাক বললেন কেন?”
“আপনাকে ছেলে দেখতে আসবে তো বেস্ট অফ লাক বলব না?”
চৈতি কিছু না বলে চুপ করে রইল।
“আমি চাই অনেক ভালো একটা ছেলের সাথে আপনার বিয়ে হোক!যাতে আপনি সুখী থাকেন।আপনাকে যেন মানুষের কাছ থেকে কথা শুনতে না হয়।”
শুভ্রের কথা শুনে চৈতি অবাক হয়ে শুভ্রের দিকে তাকালো।পরক্ষনেই ভাবলো তার ভালোর কথা চিন্তা করে বলেই তো এসব বলল।
“আচ্ছা,তবে আসি।বাসায় এসে বলবেন কিন্তু ছেলেকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা!”
চৈতি উপর নিচ মাথা নাড়ালো।
শুভ্র হেসে নিজের গাড়িতে ওঠে চলে গেল।
চৈতি শুভ্রের যাবার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ক্লাসে চলে গেল।গিয়ে আরশির কাছে বসতেই আরশি বলল,
“কিরে?তোর মুখ এমন কালো হয়ে আছে কেন?কিছু কি হয়েছে?”
“নাহ তো!”
“সত্যি করে বল।আমি জানি তুই মিথ্যা বলছিস।”
“আজকে এক ছেলের সাথে দেখা করতে হবে।ছেলেটা আম্মুর বান্ধবীর ছেলে।উনি আমার সম্পর্কে সবকিছু জেনেশুনেই দেখা করতে চেয়েছে।”
“তাহলে তো ভালোই হলো।এবার মনে হয় তোর বিয়েটা হয়েই যাবে।”
“কিন্তু,আমার তো খুশি হবার কথা!আমি কেন যেন খুশি হতে পারছি না।বারবার মনে হচ্ছে ছেলে যাতে আমাকে মানা করে দেয়।এতদিন তো ভাবতাম যার তার সাথে আমার বিয়ে হলেই হয়।কিন্তু এখন কেন মন থেকে খুশি হতে পারছিনা?”
“শুভ্র ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছিস?”
আরশির কথা শুনে চমকে আরশির দিকে তাকিয়ে বলল,
“উনাকে কেন আমি ভালোবাসব?কিসব যাতা বলছিস?”
“তাহলে তোর হাত কাঁপছে কেন?”
“কই হাত কাঁপছে?এসব ফালতু কথা একদম বলবিনা।”
কিছুক্ষন থেমে আবার বলল,
“উনি আমাকে বলেছেন ছেলের যাতে আমাকে পছন্দ হয়।উনাকে ভালোবেসে ফেললেই বা কি হবে?উনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।জাস্ট মানবতার খাতিরে সাহায্য করে এসেছেন।”
“হ্যা মানছি।শুভ্র ভাইয়ের মন ভালো। উনি সবাইকেই সাহায্য করার চেষ্টা করেন।কিন্তু উনার চোখে আমি তোর জন্য চিন্তা,ভালোবাসা দেখেছি!আমার দেখা তো আর ভুল হতে পারে না।”
“ভুলই দেখেছিস তুই।আচ্ছা একটু চুপ থাক!ভালো লাগছেনা কিছু।”
“হুম।”
ছুটির পর,
“আমার কথাটা একটু ভেবেচিন্তে দেখিস।শুভ্র ভাই তোকে নিশ্চয়ই ভালোবাসে।কোন মেয়ের প্রতি আমি ওকে এতটা যত্নশীল হতে দেখেনি।যতোটা তোর প্রতি শুভ্রভাইকে হতে আমি দেখেছি।”
“তোর কাছে কিছু টাকা হবে?আসলে আসার সময় টাকার ব্যাগটা আনতে ভুলে গিয়েছি।”
আরশি নিজের ব্যাগ থেকে ১০০০ টাকার নোট নিয়ে চৈতির দিকে এগিয়ে দিল।
“এত টাকা লাগবে না।১০০ টাকা হলেই হবে।রেস্টুরেন্ট বেশি একটা দুরে না। ”
“কত রকম বিপদ থাকতে পারে না?প্রয়োজন হলে তো কাজে লাগাতে পারবি।তোর কাছে টাকাটা রাখ।পরে দিয়ে দিস।”
“কিন্তু….”
“আমার কাছে ভাংতি টাকা নাই।নিলে নে নাহলে যাই আমি।”
“আচ্ছা দে।কালকেই তোকে ফেরত দিয়ে দিব।চিন্তা করিস না।”
“এক যুগ পরে দিলেও কোন সমস্যা নাই আমার।তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে।আর নিজের মনের বিরুদ্ধে কিছু করিস না।নিজের মনের কথা শুনবি।নাহলে আজকে হোক বা কয়েক বছর পর ঠিক পস্তাবি।মনে হবে কেন আগে কাজটা করলাম না।পরে যাতে আফশোস না করিস।দেখিস!”
চৈতি আরশির যাবার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা সিএনজি নিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা হলো।
রেস্টুরেন্টের ভিতর যেতেই একটা ছেলে এসে বলল,
“আপনি চৈতি?”
কথা বুঝতে পেরে চৈতি মাথা নাড়ালো।
ছেলেটা একটা টেবিলের দিকে ইশারা দিয়ে বলল,
“অইযে ওখানে চলুন।”
চৈতি সিটে বসতেই ছেলেটা বলল,
“কিছু অর্ডার করব?কি খাবেন বলুন?”
চৈতি খাতায় লিখে বলল,
“আমি কিছু খাব না।”
ছেলেটা হেসে বলল,
“তা বললে হয় নাকি?প্রথম দেখা।খালি মুখে কিভাবে যেতে দেই।এক কাপ কফি অর্ডার করি?”
“কফি খেতে পারি না।তিতা লাগে।”
“তাহলে জুস?”
“হুম।”
ওয়েটারকে ডেকে জুস আর কফি অর্ডার দিয়ে বলল,
“আমার নাম নিলয়।নিশ্চয়ই শুনেছেন?”
“জ্বি।”
“আপনার সম্পর্কে সব জানি।আপনাকে পছন্দও হয়েছে।শান্ত স্বভাবের মেয়ে আপনি।কিন্তু….”
“কিন্তু?”
“দেখুন আপনার সাথে চলতে আমার অনেক অসুবিধে হবে।যেহেতু আপনি শুনতে পাননা সেহেতু কোন একটা কাজের সময় আপনাকে অন্য রুম থেকে ডাকা যাবে না যে আমার এটা লাগবে।আবার সবসময় তো হাতের লেখা পড়ে কথা বুঝা সম্ভব না।তাতেও আমার কোন অসুবিধা নেই। আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন যে আমি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করি।মাস শেষে যে টাকা পাই তা অনেক কম।দুজনের চলতে কষ্ট হবে।তার উপর কয় মাস পর যদি আমাদের বাচ্চা হয় তাহলে তারও ভরণপোষণের জন্য টাকা লাগবে।”
“আপনি এসব কেন বলছেন?”
“কিছু মনে করবেন না,আপনার মা যদি বেশি না কয়েক লাখ টাকা দিত তাহলে একটা বিজনেস শুরু করতে পারতাম এতে আপনিও সুখী হতেন।”
“আপনি কি যৌতুক চাচ্ছেন?”
“না না,যৌতুক কেন চাইব?এটা তো আমি শুধু একা ভোগ করব না তাই না?আপনি আমাদের বাচ্চার ভালোর জন্যই চাচ্ছি. এটাকে কি যৌতুক বলে?”
“আপনি ইনডাইরেক্টলি যৌতুকের কথাই বলছেন।দেখুন আমি কাওকে যৌতুক দিয়ে বিয়ে করব না।”
“ভেবে দেখুন আমাকে বিয়ে না করলে আপনি সারাজীবন কুমারীই থেকে যাবেন।কেউ আপনাকে বিয়ে করবে না।এর চেয়ে কয়েক টাকা খরচ করে যদি আপনার বিয়েটা হয় তাহলে অসুবিধাটা কোথায়?”
“সেটা নিয়ে আপনার কোন চিন্তা করতে হবে না।আমি দরকার হলে সারাজীবন কুমারীই থাকব তবুও আপনার মতো মানুষকে আমি যৌতুক দেয়ে কোনদিন বিয়ে করব না।”
“যা বলছেন সব ভেবে বলছেন তো?
” অবশ্যই।”
“পরে আবার পস্তাবেন না কিন্তু!”
“প্রশ্নই আসে না।”
“আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।”
“এতক্ষন যে আপনি আমাকে অপমান করলেন আমার শারীরিক ক্রুটি নিয়ে! ”
“ওটাকে কি অপমান বলে নাকি?আমি যা সত্যি তাই বলেছি।আপনার মতো মেয়েকে কে বিয়ে করবে?তাও আপনার সাত জনমের ভাগ্য যে আমার মতো একটা ছেলে যৌতুকের বিনিময়ে হলেও আপনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। আজকাল দেখছি সত্যি কথা বললেও দোষ।”
“দয়া করে আপনি আসতে পারেন।আর যাওয়ার সময় আপনার কফির বিল দিয়ে যাবেন।আপনার কফির বিল আমি দিতে পারব না।”
“ফাজিল কোথাকার!”
বিড়বিড় করতে বিল দিয়ে রেস্টরেন্ট থেকে নেমে গেল।চৈতি হালকা হেসে জুস খাওয়াতে মন দিৱ।এখন একটু শান্তি লাগছে।জুস খেতে খেতে খেতেই হঠাত নাকে ধোয়ার গন্ধ পেল।এখানে ধোয়া আসল কোথা থেকে ভেবে পেল না সে।আশে পাশে তাকাতেই দেখল পুরো রেস্টুরেন্ট খালি যেটা একটু আগেও ভরাট ছিল।ধোয়ার পরিমান আস্তে আস্তে বাড়ছে।চৈতির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।ও এখনো বুঝতে পারছে না রেস্টুরেন্টে হঠাত করে কি হলো?রেস্টুরেন্টে কি আগুন লেগেছে?কেও ওকে ডাকলো না কেন?কিছুক্ষন পর পর কাশি আসছে। তার সাথে শ্বাসকষ্ট তো রয়েছেই।না ওকে এখান থেকে বের হতে হবে।ভেবেই চেয়ার থেকে উঠে একটু হাঁটতেই……
#চলবে…..