তুমি আসবে বলে পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
2378

#গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৬ এবং অন্তিম পর্ব
বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে মা,খালামণি বাকি সবাই ব্যস্ত এই ব্যস্ততার মাঝেও মা এসে আমাকে ভাত খাইয়ে গেছে আসলে মেয়ে এখন অন্য ঘরে চলে যাবে তাই মায়ের একটু কষ্ট হচ্ছে।আবীর ভাই,বাবাও অনেকবার এসে আমাকে দেখে গেছে সায়মা আর রুপা আপু আমার হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে সময় বেশি নেই তাই তারা খুবই সিম্পলভাবে ডিজাইন করছেন।কাজল আমাদের পাশে বসে মোবাইল টিপছে তখনই প্রিয়া ভাবি এসে বললেন,
~ফিহা,হাতে মেহেদী দেওয়া শেষ হলে তোমাকে হলুদ লাগাতে হবে বুঝেছো তাই আমি এই শাড়িটা এনেছি।
আমি প্রিয়া ভাবির হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি হলুদ রঙ্গের শাড়ি আমি প্রিয়া ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম,
~হলুদ কী দিতেই হবে?
প্রিয়া ভাবি মুখ টিপে হেসে বললেন,
~বিয়ে যখন করছো হলুদ তো লাগাতেই হবে আর তোমাকে আর ফায়াজকে একই সাথে হলুদ দিবো আমরা।
একথা শুনে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। প্রিয়া ভাবি হেসে বললেন,
~এতো লজ্জা পেতে হবে না রুপা তাড়াতাড়ি করো।
রুপা আপু বললেন,
~জ্বী ভাবি হয়ে যাবে এখনই।
ভাবি চলে গেলো আমি পলকহীনভাবে আমার লেখা ফায়াজের নামের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মেহেদী শুকাতেই রুপা আপু আমাকে হলুদ শাড়িটি পরিয়ে দেয়।হালকা সাজগোজ করে আমাকে বাহিরে নিয়ে গেলো খালামণিদের হল রুম বড় হওয়ায় সেখানেই হলুদের আয়োজন করা হয়েছে ফায়াজ আগে থেকেই সেখানে বসে আছে আমি তার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।আমাকে ফায়াজের পাশে বসিয়ে দিলেন ভাবি আমি বসতেই ফায়াজ আলতো করে আমার হাতটা ধরে ফেললেন।আমি তার দিকে তাকাতে দেখি সে আমার হাত ধরে ফাহাদ আর সায়ন ভাইয়ের সাথে কথা বলছে।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে সে আরো শক্ত করে আমার হাতটা ধরে নিলেন।
এক এক করে সবাই হলুদ লাগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সবাই হই হুল্লোড়ে ব্যস্ত।প্রিয়া ভাবির মা মুখ কালো করে আমাকে হলুদ লাগিয়ে গেলেন হয়তো সে এখনও রাগ করে আছেন।তাসিফকে কোথাও দেখলাম না যাক সে আসেনি এই একটা ভালো কাজ হয়েছে।

হলুদ শেষ হয়ে গেলে আমি রুমে চলে আসি কার্বাড থেকে কাপড় নিয়ে পিছে ঘুরে দেখি ফায়াজ দাড়িয়ে আছে।আমি তাকে দেখে ভ্রুকুচকে বললাম,
~কী হয়েছে?আপনি এখানে?
সে কিছু না বলে ধীর পায়ে আমার কাছে আসতে লাগলেন আমি সেখানেই ঠাঁই দাড়িয়া রইলাম সে আমার একদম কাছে এসে পিছে রাখা হাতটা আমার সামনে আনলেন।তার হাতে হলুদের বাটি আমি তার দিকে তাকাতেই সে বললেন,
~আমার বউকে সবাই হলুদ লাগিয়েছে আমি কেন লাগাবো না?
আমি বললাম,
~আপনার আজাইরা কথা বন্ধ করুন তো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
বলেই যেই না আমি তার পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিবো তখনই সে আমার হাত টেনে ধরলেন আমি ফায়াজের দিকে তাকাতেই সে বাঁকা হেসে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে সারা মুখে তা লাগিয়ে দিলেন তার কাজে আমি রাগী চোখে ফায়াজের দিকে তাকাতেই সে তার গালের সাথে আমার গাল স্পর্শ করালেন তার কাজে আমি অবাক হয়ে তাকে মৃদ্যু ধাক্কা দিতেই সে একটু দূরে চলে গেলো
আমি বললাম,
~আপনি রুমে চলে যান ভাবীরা দেখলে অনেক মজা নিবে।
ফায়াজ হেসে বললেন,
~যাচ্ছি একটু পর তো দেখা হচ্ছেই।
ফায়াজ এতটুকু বলে চলে গেলো আমি তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ঝর্ণা ছেরে শাড়ি নিয়েই পানিতে ভিজতে লাগলাম একটুপর আমার বিয়ে জীবনের একটি নতুন ধাপে আমি পা রাখছি কেমন জানি ভালোলাগা কাজ করছে তার পাশাপাশি বাবা-মা,ভাইকে ছেড়ে থাকতে হবে এটা ভাবতেই কান্না চলে আসে।
ফায়াজ আর আমার জীবনটা যাতে সুন্দর হয় আমি যেন আমার সংসারটাকে আগলিয়ে রাখতে পারি।ফায়াজকে নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আগলিয়ে রাখতে পারি খালামণি,ভাই-ভাবিকে নিয়ে সুখের সংসার গড়তে পারি।
বিয়ের জন্য তৈরি হচ্ছি মায়ের বিয়ের শাড়িটা পড়িয়ে দিচ্ছে ভাবি। রুপা আপু আমার মেকআপ করে চলে গেছেন নিজে রেডি হতে।ভাবি আমাকে খুব সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলেন আমি আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম নাহ ভালোই লাগছে শাড়িটা একটু ভারি কিন্তু ঠিক আছে আমি ম্যানেজ করতে পারবো।আরফা এসে আমার পাশে বসে পরলো আমি তাকে দেখে বললাম,
~কীরে হলুদের পর তুই কোথায় ছিলি?
আরফা লজ্জা পেয়ে বললো,
~তোর দুলাভাই শপিং করতে নিয়ে গেছিলো দেখ শাড়িটা সুন্দর না?
আমি হেসে বললাম,
~অনেক সুন্দর।

আরফার সাথে বসে বসে কথা বলছি কারণ সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।রাত ৭.৩০ একটু পর হয়তো বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে আমি কথা বলছি তখনই খালামণি রুমে ডুকলো গয়নার বাক্স নিয়ে আমাকে দেখে সে বললেন,
~ফিহা,চটজলদি এগুলো পরে নে।
আমি বললাম,
~এগুলো আবার কেন?
খালামণি বললেন,
~বারে আমার ছেলের বউকে আমি খালি গলায় বরণ করবো নাকি?
বাধ্য হয়ে সবগুলো গহনা পরে নিলাম খালামণি খুশি হয়ে চলে গেলেন।প্রিয়া ভাবি আর আরফা আমাকে নিয়ে আসলেন বাহিরে কবুল পরানো হবে আমাকে একপাশে বসিয়েছে আর আমার একদম বরাবর বসেছে ফায়াজ।কাজী বিয়ে পরানো শুরু করলো ফায়াজকে কবুল বলতে বললে সে এক নিশ্বাসে কবুল বলে দিলো।সবাই ফায়াজের অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে উঠলেন তা দেখে ফায়াজ সবার দিকে কড়া নজরে তাকাতেই সবাই চুপ হয়ে গেলেন।
এখন আমার পালা আমি অনেকক্ষন সময় নিয়েই কবুল বললাম আমার দেরি করা দেখে ফায়াজের যে ধমক খেয়েছি তা বলার বাহিরে।
শেষমেষ আমাদের বিয়েটা হয়েই গেলো কোনো বাধা ছাড়া।ফায়াজ আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলেন তা দেখে আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম।
বিয়ের সব কার্যক্রম শেষ হতেই তাসিফ আমার সামনে এসে দাড়ায় তাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই কিন্তু প্রিয়া ভাবিকে দেখে আমি নিজেকে সামলে নেই।তাসিফ আমাকে বললেন,
~অভিনন্দন নতুন জীবনের জন্য সবসময় সুখী থাকো।
আমি অবাক হলাম তাসিফের কথা শুনে তাসিফ বললেন,
~ফিহা,ভালো মানুষকে লাগতেই পারে কিন্তু তার জন্য যে তাকে ধরে বেঁধে নিজের কাছে রাখতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই।
তাসিফের কথা শুনে মুচকি হেসে বললাম,
~প্রিয়া ভাবির সাথে সব মনোমালিন্য দূর করে নিন।আপনার বোন আপনাকে প্রচুর ভালোবাসে।
তাসিফ হেসে বললেন,
~অবশ্যই তা তো করবো।
তাসিফ চলে গেলো ভাবির কাছে।
আমার বিদায় তো হবে না কারণ আমি তো আমার শশুড় বাড়িতেই আছি তাই আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফায়াজের রুমে।ফায়াজের রুম গিয়ে দেখি পুরো রুম সুন্দর করে সাজানো ভাবি আমাকে বিছানার মাঝ বরাবর বসিয়ে চলে গেলেন।এতক্ষন সব ঠিক থাকলেও এখন অনেক ভয় করছে এই ভেবে যে এখন কী হবে?
তখনই দরজা ঠেলে ঘরে ডুকলো ফায়াজ খট করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো আমি ঘোমটা তুলতে তখনই সে আমাকে বললেন,
~ঘোমটা আমি তুলবো খবরদার তুই যদি তুলেছিস
আমি তার ধমক খেয়ে আমি চুপচাপ বসে রইলাম সে ধীর পায়ে আমার কাছে এসে বসলেন আমার ঘোমটা তুলে সে আমার থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উপরে তুলে বললেন,
~তোকে অনেক সুন্দর লাগছে একদম আমার বউ লাগছে।এই নাকফুলটা আরো বেশি সুন্দর লাগছে
বলেই নাকফুলে তার ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলেন তার এমন কাজে আমার পুরো শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো।আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম ফায়াজ আমার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে বললেন,
~ফিহা, আমার বুকে আসবি একটু।
তার কথা শুনে আমি চোখ খুলে ফেললাম তার কাতর কন্ঠ শুনে একমূর্হুত দেরি করিনি তার বুকে ঝাপটে পরলাম।ফায়াজ আমাকে তার বাহুডরে আবদ্ধ করে নিলেন আমি তার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
আজ থেকে আমার নতুন জীবন শুরু ফায়াজকে নিয়ে আমি এমন জগৎ গড়তে চাই যেখানে থাকবে ভালোবাসা,বিশ্বাস আর সুখ।আর থাকবে ফায়াজের পাগলামী এই লোকটা পাগলামী করা ছাড়বেনা আমি তা জানি।ভবিষ্যৎ কতো সুন্দর হবে তা আমি জানি না কিন্তু আমার বর্তমান ফায়াজের কারণে আর এই পরিবারের কারণে অনেক সুন্দর হবে।

________________৩বছরপর_______________
ফায়াজ হাসপাতালের ওটির সামনে দাড়িয়ে পায়চারি করছে। ভিতরে কী হচ্ছে তা সে জানতে পারছে না তার মনের ভিতর এক উথাল-পাতাল অবস্থা।ফায়াজের মা এসে তার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
~এতো চিন্তা করিস না ফিহা আর বাবু আল্লাহর রহমতে ঠিক থাকবে।
ফাহাদ আর প্রিয়া ফায়াজের পাশে এসে দাড়ালো সাথে তাদের ছোট পরি ফারিয়া মাত্র ১বছর বয়স তার চাচাকে দেখে সে হাত বারিয়ে দেয় ফায়াজও ফারিয়াকে কোলে নিয়ে বসে পরলো ফিহার পরিবারের সবাই আর ফায়াজের পরিবারের সবাই উপস্থিত হয়েছে। ফিহার বাবু হবে তাই সবাই হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছে রুপা আর তাসিফও এসেছে রুপার বিয়ে হয়েছে ৩মাস লাভ ম্যারেজই ছিল আর তাসিফের আংটি বদল হয়ে আছে ২মাস তার বিয়ে।ফায়াজ ফারিয়ার সাথে বসে কথা বলছে টেনশনটা একটু কমে যাবে তাহলে।একটুপর ডাক্তার বের হয়ে আসলেন ফায়াজ ডাক্তারকে দেখে বললো,
~ডাক্তার আমার ওয়াইফ?
ডাক্তার হেসে বললেন,
~মিস্টার ফায়াজ আপনার ওয়াইফ একদম ঠিক আছে আর আপনার টুইন বেবি একটা মেয়ে আরেকটা ছেলে।
ফায়াজ বেবিদের কথা শুনে আরো খুশি হয়ে গেলো
সবাই ফায়াজের খুশি দেখে আরো বেশি খুশি হয়ে যায়।

ফিহার জ্ঞান ফিরতেই তার পাশে দুটো বেবি দেখে খুশিতে কান্না করে দেয়।ফায়াজ তার পাশে বসে আছে সবাই এসে তাকে দেখতে বাবুদের দেখে ফায়াজের মা আর ফিহার মা খুশিতে গদগদ করছে।রুপাও বাবুদের অনেক আদর করলো ফারিয়া তো খুশিতে আটখানা বাবুদের দেখে।এক এক করে সবাই তাদের দেখে চলে গেলো।ফায়াজ আর ফিহা এখন একা বাবুদের সাথে ফিহা বললো,
~ফায়াজ,বাবুদের কী নাম রাখবে?
ফায়াজ বললো,
~ফারদিন, ফারহা।
ফিহা হেসে বললো,
~অনেক সুন্দর নাম একদম তোমার মতো।
ফায়াজ ফিহার হাত ধরে বললো,
~ধন্যবাদ আমাকে এতো সুন্দর উপহার দেওয়ার জন্য
ফিহা বললো,
~আপনাকেও ধন্যবাদ আমার খেয়াল রাখার জন্য।
ফায়াজ মেয়েকে ফিহারকোলে দিয়ে ছেলেকে তার কোলে নিলো তারপর বললো,
~তোদের জন্য আজ আমাদের #ভালোবাস_পরিপূর্ণতা পেলো।

সমাপ্ত

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে