তুমি আসবে বলে পর্ব-১৪+১৫

0
1571

#গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৪
ফায়াজ ভাই রুম থেকে বের হয়ে গেছেন অনেকক্ষন আমি বারান্দায় দাড়িয়ে সেই বিশাল আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে আছি।আকাশের উড়ন্ত পাখি গুলোকে দেখে অনেক ভালো লাগছে আজকাল সবই ভালো লাগে এটার কারণ হয়তো ফায়াজ ভাই।তার কথা ভাবলেই লজ্জা,ভালোলাগা দুটোই কাজ করে কেমন জানি একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয় উফফ এই লোকটা না জাদু জানে কী ভাবে যে এই মানুষটি আমার জীবনে এক বিশেষ জায়গা দখল করে নিয়েছে।আমি বারান্দা থেকে বের হয়ে আনমনে সিড়ি বেয়ে নামতে যাবো তখনই আমার কানে প্রিয়া ভাবির গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম অনেক উচ্চস্বরেই সে কথা বলছে আমি তার রুমের সামনে গিয়ে দেখি সে মোবাইল কানে দিয়ে কাকে যেন বলছে,
~বুঝার চেষ্টা করো যা হচ্ছে ভালো হচ্ছে আর ফায়াজের জীবন নষ্ট আমি করতে পারবো না।
এতটুকু শুনে আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো ফায়াজের জীবন নষ্ট মানে কে প্রিয়া ভাবিকে এই নোংরা কাজ করতে বলছে আমি গভীর ভাবে তার কথা শোনার চেষ্টা করছি প্রিয়া ভাবি বলছে,
~প্লিজ তাসিফ ভাই এসব বলো না ফিহা তোমাকে ভালোবাসে না আর শোন আমার বাসায় তুমি আসবে না।
বলেই সে খট করে ফোন রেখে দিলো আমি স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছি তাসিফ এমন ভাবতে কীভাবে পারলো?আমার ধ্যান ভাঙ্গলো প্রিয়া ভাবির কান্নার আওয়াজে সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি রুমের ভিতরে ঢুকতেই তার চোখ আমার উপরে পরলো প্রিয়া ভাবি আমাকে দেখে তার আঁচল দিয়ে চোখ মুছে হাসিহাসি মুখ করে বললেন,
~ফিহা, কিছু লাগবে তোমার?
বলেই তার ওয়ারড্রবের ড্রয়ার খুলে কাপড় ভাজ করে রাখলেন।আমি তার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
~ভাবি কী হয়েছে বলবে?
প্রিয়া ভাবি আর থাকতে পারলেন না আমার জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলেন আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
~আমার জন্য তোমাকে এসব সহ্য করতে হচ্ছে।
প্রিয়া ভাবি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
~কিছুই হয়নি একটা মানুষ যখন জেনে শুনে জেদ করে তাকে কিছু দিয়েই বোঝানো যায় না।
আমি কিছু না বলে তার দিকে তাকিয়ে আছি প্রিয়া ভাবি আমার হাত ধরে বললেন,
~ওসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না বুঝদার মানুষ যেসময় অবুঝ হয়ে যায় তখন তাকে বুঝানো কষ্টকর হয়ে যায়।
আমি বললাম,
~ভাবি কান্না করবে না কোনো ধরনের কথা থাকলে আমার সাথে শেয়ার করবে।
প্রিয়া ভাবি হেসে বললেন,
~অবশ্যই করবো after all you are my one and only দেবরের বউ।
আমি বললাম,
~এক কথা কতবার বলো।
বলেই তার রুম থেকে বের হয়ে আসলাম পিছনে প্রিয়া ভাবির হাসির আওয়াজ আসছে।

রাতটা আমি কোনোভাবে পার করলাম সকাল থেকেই খালামণি আর প্রিয়া ভাবি ব্যস্ত নানান ধরনের কাজ করছে মায়েরা আসবে তার উপর প্রিয়া ভাবির বাড়ির মানুষও আসবে। তাদের সাথে সাথে আমিও কাজ করছি হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো আমি দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলেই দেখি রুপা আপু দাড়িয়ে আছে।তাকে দেখে আমি অবাক হলাম পাশাপাশি ভয়ও পেলাম রুপা আপু আমাকে দেখে বাঁকা হেসে বললো,
~কী ভয় পেলে নাকি ফিহা?
আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,
~ভয় পাওয়ার কী আছে?তুমি তো এই বাড়িরই একজন সদস্য।
রুপা আপু আমার পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে পরলেন আমি দরজা লাগিয়ে একপাশে দাড়িয়ে পরলাম খালামণি রুপা আপুকে দেখে বললেন,
~রুপা,তুই?
রুপা আপু বললো,
~ফাহাদ ভাই বললো ফায়াজ ভাই আর ফিহার বিয়ের তারিখ ঠিক করবে তাই চলে আসলাম।
রুপা আপুর কথা শুনে খালামণি হেসে বললেন,
~ভালো করেছিস।
তখনই ফায়াজ ভাই তার রুম থেকে আমার নাম ধরে ডাকলেন আর বললেন,
~ফিহা এক কাপ চা তাড়াতাড়ি আমার রুমে নিয়ে আসতো।মাথাটা বড্ড ধরেছে
আমি তার কথা শুনে রান্নাঘরে চলে আসলাম চায়ের পানি চরিয়ে ভাবির সাথে টুকটাক কথা বলতে শুরু করলাম।
চা তৈরি করে ফায়াজ ভাইয়ের রুমের দরজায় টোকা দিলাম সাথে সাথেই সে বলে উঠলো
~চলে আয় ভিতরে।
আমি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই সামনে চোখ পরলো আর আমি যা দেখলাম তাতে আমার চোখ ছানাবড়া।
ফায়াজ ভাই আইরন করা সাদা শার্ট ইন করে পরেছেন সঙ্গে কালো প্যান্ট হাতে কালো ঘড়ি গলায় টাই। তাকে দেখে আমি পুরো হা হয়ে গেছি।

আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফায়াজ ভাই বললেন,
~হা হয়ে আছিস কেন?
আমি বললাম,
~কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~ফর্মাল গেটাপে তো আর জগিং করতে যাচ্ছি না চাকরিতে যাচ্ছি।
আমি আরেকদফা অবাক হয়ে বললাম,
~চাকরি?
ফায়াজ ভাই আয়না থেকে আমার দিকে ঘুরে চায়ের কাপটা নিয়ে বললেন,
~আজকে জয়েনিং লেটার দিবে কালকে থেকে কাজ শুরু আজ থেকেই করতাম কিন্তু
এতটুকু বলে আমার দিকে ঝুঁকে কানে ফিসফিস করে বললেন,
~তুই আজ চলে যাবি তোকে জ্বালাতে পারবো না তাই আজ বাসায় থেকে তোকে জ্বালাবো।
এ কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম,
~বজ্জাত, শয়তান।
ফায়াজ ভাই হেসে বললেন,
~তাতো আমি জানি নতুন কিছু বল।
আমি বললাম,
~খালামণি জানে আপনার চাকরির কথা।
ফায়াজ ভাই আমার গালে হাত রেখে বললেন,
~জানে।
আমি বললাম,
~তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন আমি অপেক্ষা করবো।
ফায়াজ ভাই মুচকি হেসে বললেন,
~চলে আসবো।
ফায়াজ ভাই সবার থেকে দোয়া নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলেন রুপা আপুকে দেখে তিনি কোনো রিয়েক্ট করে নি না করেছে রুপা আপু।তারা দুজনই স্বাভাবিক ছিল ফায়াজ ভাই যাওয়ার সময় সবার অগোচরে আমার হাতে চকলেট দিয়ে বললেন,
~একটা তোর আরেকটা ভাবির।
বলেই সে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মায়েদের জন্য অপেক্ষা করছি কখন যে তারা আসবে আর এই সুখবরটা তাদের দিবো তাই ভাবছি। রুপা আপু আমার রুমে এসে আমার পাশে বসে বললো,
~ফিহা, আমি ওইদিন তোমাকে যা বলেছি তার জন্য সরি আসলে মাথা ঠিক ছিল না।
আমি বললাম,
~বুঝতে পেরেছি।
রুপা আপু বললেন,
~ফায়াজ ভাই আর তোমার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো।
আমি বললাম,
~ধন্যবাদ।
তখনই খালামণি এসে বললেন,
~ফিহা তোর মা এসে পরেছে।
খালামণির কথা শুনে খুশি হয়ে গেলাম।মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম

মায়েরা এসেছে অনেকক্ষন মা-বাবা দুজনই আমার সিদ্ধান্ত শুনে খুশি হয়েছেন।আবীর ভাইও খুশি হয়েছেন খালামণি সবাইকে চাকরির খবর দিতেই সবাই আরো খুশি হয়ে গেলো।আবীর ভাই আমার কাছে এসে বললেন,
~তুই খুশিতো আমি খুশি।
আমি কিছু না বলে ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম।
সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর ফায়াজ ভাইয়ের অপেক্ষা করছে।আমিও তার অপেক্ষা করছি তখনই ভাবি এসে বললেন,
~ফিহা চলো শাড়ি পরবে।
আমি বললাম,
~শাড়ি কেন পরবো?
ভাবি বললেন,
~এই বোকা আজ বিয়ের তারিখ ঠিক হবে তুমি বউ তাই শাড়ি পরবে।
বলেই ভাবি আমার হাত ধরে নিয়ে আসলেন রুমে আমার হাতে শাড়ি দিয়ে বললেন,
~এটা পরবে?
আমি বললাম,
~না।আমার কাছে শাড়ি আছে
বলেই ব্যাগ থেকে ফায়াজ ভাইয়ের দেওয়া শাড়িটা বের করলাম ভাবি বললেন,
~অনেক সুন্দর শাড়িটা।
শাড়িটা পরে নিলাম আজ সে আসলে অনেক বড় সারপ্রাইজ পাবে তার দেওয়া শাড়িটা যে পরেছি সে কতোটা খুশি হবে।
শাড়ি পরে বসেই আছি কিন্তু তার আসার নাম নেই বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে ফোনে ট্রাই করেও পাচ্ছিনা ফাহাদ আর আবীর ভাইও চেষ্টা করছে।খালামণি তো বার বার আল্লাহকে মনে করছে।আমার মনটাও কু ডাকছে অনেক চিন্তা হচ্ছে তাহলে কী ফায়াজ ভাই কোনো সমস্যায় পরলেন এটা ভাবতেই আমি সব ঝাপসা দেখতে লাগলাম একসময় ঢলে পরে গেলাম ফ্লোরে।

চলবে

#গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৫
ফায়াজ বৃষ্টিতে ভিজে একাকার তার ঠোঁটের কোণ দিয়ে রক্ত ভের হচ্ছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে সে।অফিস থেকে ফেরার পথে হেঁটে হেঁটে ফুলের দোকান খুজছিল সে প্রিয়তমার জন্য বেলীফুল কিনতে চেয়েছিল ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেলো তাজা তাজা বেলীফুল নিয়ে হাতে নিয়ে সে রিক্সায় চড়ে বসলো।রিক্সা চলছিল কিন্তু বৃষ্টির কারণে একটু কষ্ট হচ্ছিল হঠাৎ পিছন থেকে সিএনজি এসে জোড়ে রিক্সাটাকে ধাক্কা দেয় যার ফলে ফায়াজ রিক্সা থেকে পরে যায়।রিক্সাচালকও অনেকটা ব্যাথা পায় আশেপাশে খুব কম মানুষ ছিল বৃষ্টির জন্য যে কয়জন ছিল তারা দৌড়ে এসে তাদের কে নিচ থেকে ওঠায়। সিএনজি চালকও তাদের কাছে আসে ফায়াজ সবাইকে অনুরোধ করে রিক্সাটা ঠিক করে দিতে।ফায়াজ পায়ে অনেক জোড়েই ব্যাথাটা পেয়েছে সে রিক্সাচালককে কিছু টাকা দিয়ে বললো,
~আপনি এ টাকা গুলো রাখেন দরকার পরবে।
রিক্সাচালক নিতে চাইছিল না ফায়াজ জোর করে দিয়ে দিলো।সিএনজি চালক ফায়াজকে বললো,
~ভাই আপনি আমার গাড়িতে বহেন আমি আফনারে বাইত পৌছায়া দেই।
ফায়াজ বললো,
~কোনো দরকার নেই বাসার সামনে এসে পরেছি।
হাতের বেলীফুলের প্যাকেটটা সে শক্ত করে ধরে রেখেছিল তাই পরেনি ফায়াজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করলো।
প্রায় অনেকক্ষন পর সে বাসার সামনে চলে আসলো।রাত হয়েগেছে ফিহা আর বাকি সবাই চিন্তা করছে ফোনটাও বন্ধ হয়ে গেছে।ফায়াজ বাসার ভিতরে ঢুকে দেখলো ফাহাদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ফায়াজ আস্তে আস্তে তার কাছে যেতেই ফাহাদ মুখ তুলে তাকালো ফায়াজকে দেখে চোখ বড় বড় করে বললো,
~ফায়াজ তুই কোথায় ছিলি?জানিস আমরা সবাই কতো চিন্তিত ছিলাম ফিহা তো অজ্ঞান হয়ে গেছে তোর টেনশনে।
ফায়াজ ফিহার অবস্থার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো ফাহাদকে কিছু না বলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফিহার রুমের
দিকে চলে গেলো ফিহার রুমের ভিতর ঢুকে দেখলো
সবাই দাড়িয়ে আছে বিছানার দিকে তাকাতেই আতকে উঠে ফিহা বিছানায় শুয়ে আছে তার চোখ দুটো বন্ধ।
ফায়াজের মা ফায়াজকে দেখে তার কাছে গিয়ে বললেন,
~ফায়াজ,তোর ঠোট কীভাবে কেটেছে? আর
কপালের চুল গুলো সরিয়ে কপালের কেটে যাওয়া অংশ দেখে ফায়াজের মা আতকে উঠলো।

ফায়াজ মায়ের কথার জবাব না দিয়ে ফিহার কাছে চলে গেলো।ফায়াজের মা ছেলের পিছন পিছন চলে আসলো
ফায়াজ ফিহার মুখের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে ফায়াজের মা বললেন,
~ফায়াজ তোর চিন্তায় মেয়েটার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।
ফায়াজ কিছু বলছে না আবীর বললো,
~ফায়াজ তোমার এ অবস্থা কীভাবে হলো?
ফায়াজ ফিহার দিকে নজর রেখেই বললো,
~বাসায় আসার সময় ছোট এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে।
রুপা বললো,
~ফায়াজ ভাই তোমার অবস্থা খারাপ আগে তোমার চিকিৎসা করাতে হবে।
রুপার কথায় কোনো ভাবান্তর নেই ফায়াজের সে তার হাতে থাকা প্যাকেট থেকে একটা লেটার বের করে আবীরের দিকে দিয়ে বললো,
~আমার জয়েনিং লেটার।
আবীর সেটা নিয়ে খুলে দেখলো আবীর বললো,
~ অভিনন্দন তোকে।
হঠাৎ ফিহা চোখ পিটপিট করে খুলতে লাগলো
আমি চোখ আস্তে করে খুলে দেখি ফায়াজ ভাই বসে আছে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই দাড়িয়ে আছে।আমি উঠে বসে পরলাম ফায়াজ ভাইয়ের কপালে ক্ষত চিহ্ন দেখে আমি অস্থির হয়ে বললাম,
~কী হয়েছে তোমার?ব্যাথা কীভাবে পেলে?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~কিছু হয়নি আমার তুই কোনো প্রেসার নিবি না।
আমি ফ্রেশ হয়ে তোর কাছে আসছি
বলেই সে রুমের বাহিরে চলে গেলে।
আমরা সবাই সোফার রুমে বসে আছি ফায়াজ ভাই আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে ফায়াজ ভাই নিরবতা ভেঙ্গে বললেন,
~আমি কালই ফিহাকে বিয়ে করতে চাই।
ফায়াজ ভাইয়ের কথায় সবাই অবাক মা ফায়াজ ভাইকে বললেন,
~ফায়াজ কী বলছো?কালকেই বিয়ে কীভাবে হবে।
বাবা বললেন,
~ফায়াজ,বিয়ে কোনো ছেলেখেলা না
মা আর বাবার কথায় ফায়াজ ভাই বললেন,
~কাল যদি বিয়ে না হয় তাহলে আমি ফিহাকে নিয়ে চলে যাবো।
বলেই সে তার রুমে চলে গেলেন হঠাৎ তার কী হলো?
খালামণি বললেন,
~ফায়াজ যেটা চাইছে সেটাই হবে।এতে কারো আপত্তি থাকলে বলতে পারেন বিয়ে এখন হবে অনুষ্ঠান পরেও করা যাবে।
সবাই কথায় ব্যস্ত হয়ে পরলো আমি ধীর পায়ে ফায়াজ ভাইয়ের নাহ আজ থেকে শুধু ফায়াজ বলবো।ফায়াজের রুমে চলে আসলাম দরজা ঠেলে রুমের ভিতর যেতেই দেখি ফায়াজ গুটিশুটি মেরে বিছানায় শুয়ে আছে।

আমি তার পাশে বসে পরলাম সে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে আমার কোলে মাথা রাখলেন আমি তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।ফায়াজ বললেন,
~তোকে এখানেই রেখে দিবো।কালই আমাদের বিয়ে হবে
আমি বললাম,
~আপনি যেটা চান সেটাই হবে।আমিও আপনাকে ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না ফায়াজ
ফায়াজ আমার মুখে ভাই শব্দ না শুনে আমার মুখের দিকে তাকালেন আমি তার দিকে তাকিয়ে লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিলাম।সে পুনোরায় আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন
সবাই রাজি হয়েছে তাই কালই আমাদের কাবিন করে রাখা হবে আমি রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আগামীকালের কথা ভাবছি কী হবে কালকে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হবে তো নাকি কোনো প্রবলেম হবে।
সব জেনো ঠিকঠাকভাবে হয়ে যায় এটিই দোয়া রইলো হঠাৎ আমার ঘরের দরজায় টোকা পরলো আমি বললাম ভিতরে আসতে দরজা ঠেলে রুমে ডুকে পরলো মা আমি মাকে দেখে বললাম,
~কী হয়েছে?
মা বললো,
~ফায়াজের ফুপি আর চাচারা কালকেই চলে আসবে রাতে তোর আর ফায়াজের বিয়ে।
আমি বললাম,
~যাক সবাই তাহলে আসছে।
মা বললো,
~ফিহা,তুই কালকে আমার বিয়ের বেনারসিটা পরিস তোকে দেখতে অনেক মিষ্টি লাগবে
আমি বললাম,
~ঠিক আছে।
খালামণি চলে আসার পর আমরা অনেকক্ষন আড্ডা মেরে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালটা যাতে সুন্দর হয় আমার আর ফায়াজের বিয়েটা যাতে বিনা কোনো সমস্যায় সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
সকালটা কী নিয়ে আসবে তা কেউ জানে না দুজন ভালোবাসার মানুষ কী এক হতে পারবে নাকি কোনো ঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করে দিবে যাই হবে পরিবর্তন নিয়ে আসবে অনেকের জীবনে।

সকালে আমার মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাস পরতেই আমি চোখ খুলে দেখি ফায়াজ আমার উপর ঝুঁকে আছে।আমি তাকে দেখে অবাক হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি মা আর খালামণি নেই। ফায়াজ আমার গালে গাল ঘেষে বললেন,
~Good morning.
আমি হতবাক হয়ে বললাম,
~আপনি এই রুমে?
ফায়াজ বললেন,
~আমার বউয়ের রুমে আসতে কারো পারমিশন লাগবে নাকি?
আমি বললাম,
~ভাবি দেখলে অনেক পঁচাবে প্লিজ বের হন।
ফায়াজ উঠে আমার পাশে শুয়ে পরলেন আর বললেন,
~কিছু হবে না।
আমি এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,
~প্লিজ চলে যান।
ফায়াজ ভাই উঠে বসে আমার গালে তার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলেন তারপর কপালে আমার কানে ফিসফিস করে বললেন,
~এটার শাস্তি রাতের জন্য রেখে দিলাম।
এতটুকু বলে সে রুম থেকে চলে গেলো আমি ভয়ে একটা ঢোক গিললাম।
সকাল থেকেই সবাই আসা শুরু করেছেন ফায়াজের ফুফুরা আমাকে অনেক দোয়া করলেন রুপা আপুও স্বাভাবিক আছে। সব ঠিকঠাক আছে আমি নাস্তা করে সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি তখনই দরজার দিকে আমার চোখ গেলো আমার বেস্টু আরিফা দাড়িয়ে আছে পাশে তার হাসবেন্ড। আমি দৌড়ে গিয়ে আরিফাকে জড়িয়ে ধরলাম সেও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
~তুই এখানে?
আরিফা বললো,
~তুই না বললে কী হয়েছে?আমার দুলাভাই তো বলেছে।
তখনই ফায়াজ পিছন থেকে বললেন,
~তোমরা এতো কম সময়ে এসে পরবে এটা জানতাম না।
আমি পিছন ফায়জকে দেখলাম এ মানুষটা আমার কতো খেয়াল রাখে আমার খুশির জন্য কতো কিছু করে। আসলেই আমি অনেক ভাগ্যবতী তার মতো একটা জীবনসঙ্গী পেতে যাচ্ছি।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে