#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_১১
সন্ধ্যার সময় রিসিপশন পার্টি।এজন্য আগেই খানস প্যালেস কনভেনশন হল বুকিং করা হয়েছে।দুপুর থেকেই সকলে ভীষণ ব্যস্ত।মি.শফিক,মি.সালাম মি.মুজাফফরকে নিয়ে কনভেনশন হলে চলে গেছেন ওখানকার সবকিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কী না তদারকি করতে।বাকিরা বাসায়ই আছে।
সারাকে ও অন্যান্যদেরকে সাজাতে পার্লার থেকে দুজন মেয়ে এসেছে।তাই ওরা সবাই সাজতে ব্যস্ত।প্রিয়তা তার মা ফুফুদেরকে শাড়ি পড়ায় হেল্প করছে।বিকাল হয়ে গেছে প্রায়,কিছুক্ষণ পর ধরণীর বুকে সন্ধ্যা নেমে আসবে।তাই সবার মধ্যেই তাড়াহুড়ো বিদ্যমান।
সৌরভ গত রাতে তার মাকে প্রিয়তার কথা বলার মতো কোনো স্কোপই পায় নি।বাসা ভর্তি মেহমান,এত হইচইপূর্ণ পরিবেশে এরকম গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা সম্ভবই নয়।মিসেস মিনা তো একমুহূর্তের জন্যও একা ছিলেন না।সাথে আরও অনেকে ছিলো।তাই আর জানাতে পারে নি সে।
প্রিয়তা সবাইকে তৈরি হতে টুকটাক সাহায্য করে নিজেও তৈরি হতে রুমে চলে এলো।ফুলহাতা লম্বা প্রচুর ঘের দেয়া একটা ডার্ক পার্পল কালারের একটা গাউন পরিধান করলো প্রিয়তা।সাথে সেইম কালারের বড় একটা ওড়না দিয়ে মার্জিতভাবে হিজাব বেঁধে হালকা সেজে নিলো।প্রয়োজনীয় কিছু অর্নামেন্টস পড়ে সে পুরোপুরি রূপে তৈরী হয়ে গেল।
সন্ধ্যার কিছু মুহূর্ত আগে,
মুসকান কী একটা প্রয়োজনে কনভেনশন হলে আগেই চলে গেছে।ওর সাথে আকিলও গেছে।তাই যাবার আগে মুসকান সৌরভকে অনুরোধ করে বলে গেছে যে প্রিয়তাকে যেন সে তার সাথে করে নিয়ে আসে।সৌরভও তাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।সে নিয়ে যাবে প্রিয়তাকে সাথে করে।
একে একে সবাই সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।প্রিয়তা হাসিমুখে সৌরভের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সৌরভ বাইকের সামনে পোজ নিয়ে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রিয়তাকে লক্ষ্য করছে।আশেপাশে যারা আছে তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।প্রিয়তা আর সৌরভের দিকে কারও নজর নেই।
সৌরভ:-বাইকে ওঠে বসো।
এই বলে সৌরভ বাইকে ওঠে ইগনিশনে চাবি ঢুকালো।প্রিয়তা একমুহূর্ত দেরি না করে ওঠে বসলো।তারপর দু’হাতে ঝাপটে ধরলো সৌরভকে।সৌরভ চমকে পিছন ফিরে তাকালো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা বিনিময়ে একটা চমৎকার হাসি উপহার দিলো।সৌরভ কিছুটা থতমত খেয়ে বললো;
সৌরভ:-এ,এভাবে ধরেছো কেন?সুন্দর ভাবে ধরে বসো।
প্রিয়তা:-ওমা,আমি তো সুন্দর ভাবেই ধরেছি।আর কীভাবে ধরে বসে মানুষ শুনি তো?
সৌরভ:-ন,নাহ।ঠিক আছে।
সৌরভ বাইক স্টার্ট দিয়ে গেটের বাইরে বেরিয়ে এলো।বাইক চলছে তার আপন গতিতে।প্রিয়তা সৌরভের পিঠে মাথা এলিয়ে দিলো।সৌরভের শরীর বেয়ে যেন হীম শীতল স্রোত বয়ে গেল।এক অন্যরকম অনুভূতি কানাকানি করে গেল তার মন জুড়ে।
আজকের সন্ধ্যাটা যেন একান্ত তাদের জন্যই এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।দুজনের মনেই টিমটিমে অনুভূতির সঞ্চার ঘটেছে।
প্রিয়তা:-হালাল ভাবেই আপনাকে পেতে চাই সৌরজগত।প্লিজ রাজী হয়ে যান,একদম আপনার মনের মতো হয়ে দেখাবো কথা দিচ্ছি।
সৌরভ:-অল্প কদিনে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে না।তোমার আবেগকে সরিয়ে বাস্তবে ফিরে আসো।
প্রিয়তা:-দেখুন আমি অন্যান্য মেয়েদের মতো পেটের ভেতর কিছু লুকিয়ে চুরিয়ে রাখতে পারি না।আমি যা বলি সোজাসাপ্টা বলি,এখনও সেটাই বলছি।আমি আপনাকে পছন্দ করি।পছন্দটা সাংঘাতিক লেভেলের।আপনাকে আমার প্রথম দেখাতেই অনেক ভালো লেগেছে।যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট।আমিও কিন্তু কিছুটা আপনার মতো,লাইক বিয়ের পর হালাল রিলেশনে বিশ্বাসী।তাই তো এত জোর জবরদস্তি করছি।নয়তো আগে চুটিয়ে দুয়েক বছর প্রেম পিরিতি করতাম,তারপর বিয়ের কথা চিন্তা করতাম।এবং আমি বাস্তবেই আছি,মোটেও আবেগের ওপর ভাসছি না।
সৌরভ:-হুম তা তো বুঝতেই পারছি।তবে তুমি নাহয় আমাকে পছন্দ করো,বাট আমি তোমায় পছন্দ করি কখনো বলেছি কী?
প্রিয়তা:-না বললে নাই,আপনার কথায় পাত্তা দিচ্ছেটা কে?এই প্রথম একটা ছেলেকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে অন্তরটা জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে গেল,তার হাসি দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়,অকারণে তার দিকে তাকাতে মন চায়।এটা যে আমার প্রেমে পড়ার লক্ষন তা আমি ঢের বুঝতে পেরেছি।জীবনের প্রথম অনুভূতি!কী করে হাতছাড়া করি বলুন তো?আপনাকে আমার চাই মানে চাই।যেকোনো মূল্যে!আপনি না চাইলেও হবে।
সৌরভ হাসছে মিটিমিটি তবে প্রিয়তা সেটা দেখতে পাচ্ছে না।সৌরভ আবারও গম্ভীর কন্ঠে বললো;
সৌরভ:-কিন্তু আমি তো অন্য কাউকে পছন্দ করি।তবে তোমাকে কী করে বিয়ে করবো বলো?
প্রিয়তা:-পছন্দ করেন,,ভালো তো আর বাসেন না।আমি জানি আপনি চির সিঙ্গেল।আপনার জীবনে এমন কেউ নেই।শুধু জুইকে বিয়ে করবেন না বলে এমনটা বলেছেন।আর যদি থাকেও তাতে আমার কিছু যায় আসে না।কারণ আমিই সেই প্রথম নারী যে আপনাকে ছুঁয়েছি।এবং আপনিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ।তো বিয়ে কিন্তু আপনাকেই করবো।এবং বিয়ের পর আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে ওসব সো কলড পছন্দ-টছন্দ জানালা দিয়ে পালাবে।
সৌরভ হাসতে চাইলেও পারছে না,নিজেকে তো গম্ভীর প্রমাণ করতে হবে।
সৌরভ:-তুমি এখনো যথেষ্ট ছোট।এসব চিন্তা ভাবনা করার বয়স তোমার এখনও হয় নি।
প্রিয়তা:-আরে রাখেন তো,খালি ছোট ছোট করে যাচ্ছেন।সঠিক সময়ে বিয়ে হলে আমি এখন দুই বাচ্চার মা থাকতাম।
সৌরভ হতভম্ব প্রিয়তার বলা কথা শুনে।এত এডভান্স চিন্তা কেমনে করে আল্লাহ জানেন!এত ফ্রি হয়ে কথা বলছে যেন সৌরভের সাথে তার অনেকগুলো বছরের সম্পর্ক।সৌরভ আর কিছু বললো না সারা রাস্তা প্রিয়তা একাই বকবক করে গেল।প্রায় মিনিট সাতেক পর পৌঁছে গেলো ওরা গন্তব্যে।
সৌরভ একপাশে বাইক পার্ক করে প্রিয়তার সাথে হাঁটা ধরলো।প্রিয়তা সবার আড়ালে সৌরভকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেল।সৌরভ বাইরে কয়েকজন ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে আসছে।প্রিয়তার ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়া দেখে মনটায় অজানা এক শিরশিরে অনুভূতি করে ওঠলো তার।মেয়েটা সৌরভের জন্য পাগল হয়ে গেছে বোধকরি।
সেন্টারের ভেতর প্রিয়তা জারার সাথে গল্প করে করে হাঁটছে।কিন্তু মনটা তো পড়ে রয়েছে তার সৌরভের নিকট।কিছুক্ষণ পর মিসেস প্রমির ডাক শুনে প্রিয়তা সেদিকে গেল।মিসেস প্রমি দুজন মহিলার সাথে প্রিয়তার পরিচয় করিয়ে দিলেন।মহিলা১ প্রিয়তার থুতনি ধরে প্রশংসার স্বরে বললেন;
~আরে বাহ,আপনার মেয়ে দেখছি কিউটের ডিব্বা ভাবী।
জবাবে মিসেস প্রমি হাসলেন।প্রিয়তাও লাজুক হাসলো।কেউ তার প্রশংসা করলে ভীষণ লজ্জা লাগে।মহিলা২ বললেন;
~আপনার মেয়েটাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।ইচ্ছে করছে এখনই আমার ছেলের জন্য আপনার মেয়েকে নিয়ে যাই।
এই কথাটা শুনে প্রিয়তার মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল।মিসেস প্রমি একটু বিব্রত কন্ঠে মার্জিতভাবে জবাব দিলেন;
মিসেস প্রমি:-আসলে আমিও চাইছিলাম মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে।কিন্তু ওর ভাই,মানে আমার বড় ছেলে মুসকান ওসবে সাফসাফ নিষেধ করে দিয়েছে।সে তার বোনকে পড়ালেখা করিয়ে আগে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তারপর বিয়ের বিষয় চিন্তা করে দেখবে।
প্রিয়তা আর শোনার প্রয়োজন অনুভব করছে না।তাই সে ওনাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে অন্যদিকে চলে এলো।
অনুষ্ঠান সুন্দর মতোই হচ্ছে।পরিবারের সবাই মিলে আবির আর সারার সাথে গ্রুপ ফটো তুলছে।সৌরভ স্টেজে ওঠার সময় আরচোখে একবার প্রিয়তার দিকে তাকালো।প্রিয়তা তো আগে থেকেই ড্যাবড্যাব করে তার পানে তাকিয়ে আছে।
হলরুমে সফট ভাবে সাউন্ড বক্সে গান বাজছে যা প্রকাশ করছে সৌরভ ও প্রিয়তার মনের অপ্রকাশিত অনুভূতি।
মেরি আখোকি দোয়া হ্যায়
চেহরা তেরা
আব দেখে বিন তুঝে
না গুজারা হু মেরা!
মে সাস্ বি লু তুঝে চাহে বিনা
আব হোগানা ইয়ে হামসে।
কে তোরা তোরা পেয়ার হুয়া তুমছে
কে তোরা তোরা পেয়ার হুয়া তুমছে
কে জিয়াদা বি হগা তুমহিছে
কে তোরা তোরা পেয়ার হুয়া তুমছে।
ভালোয় ভালোয় অনুষ্ঠানটা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।এখন রাত প্রায় দশটা বাজে।সবাই বিদায় নিয়ে যে যার মতো চলে যেতে লাগলো।প্রিয়তার হাত ধরে রেখেছে মুসকান।দু ভাই বোন একসাথে যাবে তাই।সৌরভদের ফুপুর পরিবার ও প্রিয়তার পরিবার বাদে বাকিরা ওনাদের বাসায় চলে গেছেন।একটু পর ওরাও সবাই রওনা দিলো সৌরভদের বাসার উদ্দেশ্যে।আবির আর সারা দুজন আলাদা কারে করে যাচ্ছে।ওরা দুজন কালকে বিকেলে সারাদের বাসায় যাবে নিয়ম অনুযায়ী,যাকে সিলেটের সবাই বলে ফিরা যাত্রা।
বাসায় পৌঁছে গেলো ওরা।আজকে কাজিনরা সবাই মিলে ছাদে বসে অনেকক্ষণ ধরে গল্প গুজব করলো ও আড্ডা দিলো।প্রিয়তা তো মুসকানের ভয়ে বেশি সৌরভের দিকে তাকাতে পারলো না।সৌরভ এমনিতেও বেশি তাকায় না প্রিয়তার দিকে।সে চায় বিয়ের পর যা হবে সব হালাল ভাবে হোক।হোক না সেটা মন ভরে দেখা,চোখের তৃষ্ণা মেটানো।সেটাও হালাল ভাবে অধিকারস্বরুপ তারপর হবে।
🖤
যথারীতি রাত গিয়ে নতুন ভোরের সূচনা ঘটলো।নতুন একটা সকাল এলো ধরনীর বুকে।শীতের সকালের এমন আরামদায়ক পরিবেশে সবাই কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কেউ কেউ আবার হাঁটতে বেরিয়েছে,কেউ আবার রবের ইবাদাতে ব্যস্ত।আজকে সৌরভ নামাজ পড়ে হাঁটতে বেরিয়েছে লেনে।পরণে তার হুডি ও ফোর কোয়ার্টার টাওজার।মুখে মাস্ক।কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ইসলামিক মোটিভেশনাল স্পিচ শুনছে আর চারিদিকে তাকিয়ে হাঁটছে।পরিবেশটা খুব বেশিই সুন্দর।রোদ ওঠে নি এখনও।কিন্তু আকাশ পরিষ্কার।অনেক ভালো লাগছে হাঁটতে।
প্রিয়তা আর জারাও আজকে হাঁটতে গিয়েছে লেনে।প্রিয়তা জানতো না পথিমধ্যে সৌরভকে দেখতে পাবে সে।খুশিতে তার দুচোখের তারা নেচে উঠে সৌরভকে দেখে।সৌরভও প্রিয়তাকে খেয়াল করেছে।প্রিয়তা জারার হাত ধরে হেঁটে সৌরভের কাছে আসলো।সৌরভ হুডির পকেটে দুহাত ভরে রেখেছে।
জারা:-আরে ভাইয়া আপনিও দেখি আমাদের মতো হাটতে বেরিয়েছেন?
সৌরভ:-হুম,,শীতের সকালে লেনে হাঁটতে অনেক ভালো লাগে।
প্রিয়তা কিছু না বলেই সৌরভকে একমনে দেখে যাচ্ছে।যত দেখে ততই যেন দেখার তৃষ্ণা বেড়ে যায়।এ তৃষ্ণা যে কখনোই মিটবে না।জারার কথায় ধ্যানভঙ্গ হলো প্রিয়তার।
জারা:-তাহলে ভাইয়া দেখা হয়েছে যখন তখন চলেন একসাথেই হাঁটি।
সৌরভ:-আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রিয়তা মাঝখানে,প্রিয়তার একপাশে সৌরভ অন্যপাশে জারা,তিনজনেই গল্প করে করে হেঁটে যাচ্ছে।প্রিয়তা নিশ্চুপ,জারা বকবক করতেই আছে আর সৌরভ প্রতিত্তোরে হু হা করছে।
প্রায় ঘন্টাখানেক হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরলো ওরা।সৌরভ বাসায় এসেই গেল গোসল করতে।প্রিয়তা ডাইনিংএ চেয়ার টেনে বসে নাস্তা করতে লাগলো।ওর সাথে জারাও ছিলো।
আজকে প্রিয়তা তার বাসায় চলে যাবে পরিবারের সাথে।সে সারা’দের বাসায় ডলি ও তানিয়াদের সাথে যেতে চাইছিলো।কিন্তু মুসকান বারণ করেছে কারণ সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা।এখন বেশি ঘুরাঘুরিতে থাকলে পড়ালেখাতে মারাত্মক ক্ষতি হবে।ফলে কী আর করা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাসায় যেতে হবে।
সবাই যখন নিচে কথা বলায় ব্যস্ত ঠিক তখন প্রিয়তা পা টিপে টিপে লুকিয়ে চুরিয়ে সৌরভের রুমে ঢুকলো।সৌরভ তখন ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলো।প্রিয়তাকে রুমে ঢুকতে দেখে খানিকটা অবাক হলো সে।কপালে ভাঁজ পড়লো।প্রিয়তার এখানে আসার কারণ বুঝতে পারলো না সৌরভ।
প্রিয়তা আলতো পায়ে হেঁটে সৌরভের সামনে এসে দাঁড়ালো।সৌরভ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল;
সৌরভ:-তুমি হঠাৎ এখানে?কী মনে করে?
প্রিয়তা:-কেন আসতে পারি না বুঝি?
সৌরভ:-না তা বলি নি।বাট আমার কাছে কী দরকার থাকতে পারে তোমার?
প্রিয়তা:-অনেক দরকার আপনাকে আমার।মনের কারিগরিতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে,তা সারাতে তো একজন মনের ইন্জিনিয়ার দরকার।এবং সেটা হলেন একমাত্র আপনি।
সৌরভ:-বাচ্চা মেয়ে পড়ালেখার নামে নাই,অথচ সারাদিন এসব মাথায় ঘুরে তাই না।এসব বললেও তো আমি পটবো না।
প্রিয়তা:-একটু পটে যান না।কী ক্ষতি হবে পটলে?আপনাকে পটাতে পটাতে দেখা যাবে আমারই বিয়ে হয়ে গেছে।জানেন কালকে এক মহিলা তার ছেলের জন্য আমাকে পছন্দ করেছে।যতটুকু বুঝলাম আম্মুও মনে মনে রাজি।এখন বাসায় নিয়ে গিয়ে আব্বু আর ভাইয়াকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে আম্মু।বাসায় আসার পর আম্মু বললো ছেলে নাকি ভীষণ ভালো,সুন্দর সাথে ডক্টরও ব্লা ব্লা।এখন আমি কী করবো বলেন।আমি আপনাকে চাই।অন্য কাউকে না।সুন্দর দিয়ে আমি খাট্টা খাবো নাকি!আপনার ধারেকাছেও আসবে না কিউটনেসের দিক দিয়ে।
একনাগাড়ে বলা প্রিয়তার কথাগুলো শুনে সৌরভ পুরো গম্ভীর হয়ে গেছে।যদিও তার চেহারার রিয়াকশন দেখে বোঝার কুদরত নেই তার মনে আসলে কী চলছে।প্রিয়তা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে।প্রিয়তা আবারও বললো;
প্রিয়তা:-দেখুন আপনার ভার্জিনিটিতে আমি হাত দিয়েছি,আপনাকে টাচ্ করে আমার ভার্জিনিটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।এমতাবস্থায় আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।আমি যেহেতু জীবনের প্রথম আপনাকেই স্পর্শ করেছি তাই আমার আপনাকেই চাই।প্লিজ রাজী হয়ে যান।আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমার আব্বু আম্মু চোখ বন্ধ করে রাজী হয়ে যাবে।আমার ভাইয়াও নাকচ করবে না,আপনি এমন একটা ছেলে যাকে সবাই ভীষণ সম্মান করে সাথে ভালোও বাসে।প্লিজ রাজি হয়ে যান।
সৌরভ:-নিচে যাও প্রিয়।তোমার ভাই আমার রুমে তোমাকে দেখলে তুমিই বকা খাবা।
প্রিয়তা আকুতি মিনতি করে তারপর রাগত স্বরে গজগজ করতে লাগলো;
প্রিয়তা:-এমন করছেন কেন?মেয়ে হয়েও বেহায়ার মতো আপনাকে প্রস্তাব দিচ্ছি,এজন্য কী পায়া ভারী হয়ে গেছে আপনার?এত কীসের দেমাগ দেখাচ্ছেন?বুঝতে পেরেছি,আমি তো তেমন ফর্সা নয় ওই মেয়েটা কী যেন নাম হ্যা জেসিকার মতো!এত স্টাইলিশও নই।এজন্যই তো রিজেক্ট করছেন তাই না?ঠিক আছে থাকুন আপনি।মনের মতো সুন্দরী ও ভালো মেয়েকে বিয়ে করুন।জাহান্নামে যান।আমি আর কোনো মিনতি করবো না।গুডবাই ফরেবার।ভালো থাকুন মনের মতো মেয়েকে বিয়ে করে।আমাকে আর দেখতে হবে না।আমি ওই ডক্টর ছেলেটাকেই বিয়ে করবো।
রাগে লাল হয়ে রুম থেকে প্রায় ঘুর্ণিঝড়ের মতো তান্ডব চালিয়ে বেরিয়ে গেলো প্রিয়তা।সৌরভ মুচকি হাসতে গিয়েও হাসলো না।প্রিয়তা আজ বড্ড রেগেছে।তবে আশা করা যায় রাগটা বেশিদিন স্থায়ী হবে না।ওই ডক্টর ছেলেটা বিয়ের প্রস্তাব রাখার আগেই সে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলবে।আর মাত্র কিছুদিন সবর করতে হবে,তারপর তার প্রিয়তমাকে মনের খাঁচায় বন্দী করে রাখবে সে।এসব ভেবেই আনমনে হেসে ল্যাপটপে মনোনিবেশ করলো সৌরভ।
🖤
প্রিয়তা নিজের কাপড় চোপড় সব গুছিয়ে নিয়েছে।একটু পর বাসায় চলে যাবে ওরা।প্রিয়তার রাগ এখনো কমে নি।তখন থেকেই রাগে ফুলে ফেঁপে বসে আছে সে।
কিছুক্ষণ পর মুসকানের ডাক শোনা গেল।প্রিয়তাকে নিচে আসতে বলছে সে।প্রিয়তা বোরকা পড়ে তৈরি হয়েই আছে।ডাক পড়তেই নিচে চলে আসে সে তার ব্যাগ নিয়ে।
আবিররাও তৈরি হয়ে একদম নিচে নেমে এসেছে।ওদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে।আবিররা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো।একটু পর মুসকানরাও বিদায় নিলো বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।সৌরভ নিচেই ছিলো।সে চুপচাপ প্রিয়তার কার্যকলাপ লক্ষ্য করছে।প্রিয়তা রাগের চোটে একবারও সৌরভের দিকে তাকালো না।সৌরভ সবাইকে হাসিমুখে বিদায় জানালো।প্রিয়তা একদম চুপচাপ।
মুসকানের সাথে বাইকে ওঠে বসলো প্রিয়তা।ওদের বাবা মি.মুজাফফরেরও বাইক আছে।ওনার পিছনে মিসেস প্রমি বসেছেন।মিসেস শিলা প্রিয়তার কপালে চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন তাকে ভালো করে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে।প্রিয়তা মাথা নেড়ে সায় জানালো।
শেষবারের মতো সৌরভের দিকে একবার তাকালো প্রিয়তা।এই তাকানোতে জমে রয়েছে একরাশ অভিমান।রওনা দিলো ওরা বাসার উদ্দেশ্যে।দেখতে দেখতে একসময় বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে গেল।দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়লো প্রিয়তা।আজ বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।এতদিন সৌরভকে দেখে দেখে বদঅভ্যেস হয়ে গেছে।এখন থেকে চোখের দেখাটাও দেখতে পারবে না।ভাবতেই বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে প্রিয়তা।
চলবে…