#তুমি আমার (পর্ব ১২)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহান সকালে ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিচে আসতেই খেয়াল করলো ওর মা কেমন যেনো রাগি চোখে তাকাচ্ছে ওর দিকে। রেহান ওর মাকে বললো
– মা কি হয়েছে এভাবে তাকাচ্ছো কেনো! আমি কি কোনো অপরাধ করেছি??
মিথিলা পাশে থেকে বলে উঠলো
– হুম ভাইয়া অনেক বড় অপরাধ করেছো তুমি। মুখ চেপে হেসে।
– মানে! কি করেছি আমি, ও মা বলো না কি অপরাধ আমার??
ওর মা রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
– খবরদার মা বলবি না আমাকে,হ্যা রে মায়ের কাছে তো সব বলতি তাহলে এটা কেনো বললি না? তোর বড়মা রাফসান বউমা ওদেরকে তো ঠিকি বলেছিস।
– কি বলিনি তোমাকে? বড়মা তুমি বলোতো কি হয়েছে?
রাফসান খাবার খেতে খেতে বললো
– কি আর হবে তুই যে আমার বউয়ের পাল্লা ভাড়ি করতে চাইছিস এ কথা মাকে বলে দিয়েছি।
রেহান এবার বুঝতে পারলো আসল কথাটা কি রাফসানের দিকে তাকিয়ে বললো
– সত্যিই তোর পেটে কথা মজে না ঠিক এই কারনে তোকে আমি জানাতে চাইনি।
– যাহ বাবা সব দোষ এখন আমার হলো! আরে বড়মা আর তোর ভাবি তো আগে বলেছে মাকে।
রেহান সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো মিট মিট করে হাসছে সবাই আর ওর মা মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে আছে। রেহান ওর মায়ের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললো
– মা রাগ করো না প্লিজ আমি তো তোমাকে বলতাম একটু সময় নিচ্ছিলাম।
– হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না।
রেহান ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো
– ও মা রাগটা কি কমলো তোমার?
– না আমার রাগ কমেনি। আগে মেয়েটাকে দেখাবি যদি আমার পছন্দ হয় তাহলেই আমার রাগ কমবে।
– ঠিকআছে দেখাবো আমি কালই ওকে নিয়ে আসবো। আর আমি সিওর তোমার পছন্দ হবেই আমার মেঘপরীকে।
.
🌿
.
পরেন দিন মেঘাকে রেহান ওদের বাড়িতে নিয়ে এলো মেঘা আসতে চায়নি একরকম জোর করেই নিয়ে এসেছে। রেহান মেঘাকে নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে কলিংবেল চাপলো। মেঘার খুব নার্ভাস লাগছে ঘামতে শুরু করেছে ওড়নাটা মাথায় টেনে ঘামটা মুছে নিলো,রেহান ওর দিকে তাকিয়ে বললো
– মেঘা এত নার্ভাস হচ্ছো কেনো তুমি! আমার বাড়ির সবাই খুব ভালো আমার মা তো আরো ভালো দেখবে মা তোমাকে খুব পছন্দ করবে।
তখনি একটি মেয়ে এসে দরজা খুলে দিলো,রেহান ওর মাথায় চাটি মেরে বললো
– এত সময় লাগে দরজা খুলতে? নিশ্চই ফোনের মাঝে ডুবে ছিলি।
– উফ ভাইয়া ভাবির সামনে এভাবে কেনো বলছো!
মেঘা অবাক হয়ে তাকালো মেয়েটি ওকে ভাবি বললো!!
রেহান হেসে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো
– মেঘা ও আমার বোন রাইসা বড়মাকে তো চেনোই ওনার মেয়ে।
মেঘা রাইসার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো। রাইসা মেঘাকে নিয়ে বাড়ির মধ্য ঢুকলো,তারপর জোরে জোরে ডাকতে লাগলো
– মা ছোটমা ভাবি কই তোমরা দেখো কে এসেছে।
রেহানের বড়মা আর মিথিলা রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো। মেঘা বড়মাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। বড়মা ওকে উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো
– কেমন আছো মা?
– ভালোআছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন?
– আমিও ভালো আছি। শোনো আমাকে এখন থেকে বড়মা বলবে আন্টি নয় কেমন।
– হুম।
মিথিলা এসে মেঘাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বললো
– ছবিতে যতটা সুন্দর লেগেছিলো তোমাকে তার চাইতে বেশি সুন্দর তুমি। ভাইয়া তোমার চয়েজ আছে আমার মনের মতো জ্বাকে খুজে এনেছো।
মেঘা বুঝতে পারলো এটা রেহানের ভাবি,রেহান সোফায় বসে ফোন টিপছিলো মিথিলার কথায় চোখ তুলে তাকিয়ে বললো
– মনের মতো জ্বা পেয়েছো বলেকি ওকে এখনো দাড় করিয়ে রেখেছো!
রাইসা হেসে বললো
– কেনো ভাইয়া তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝি??
– তোর এতো জানতে হবে না দাঁত কেলিয়ে না হেসে যা মাকে ডেকে নিয়ে আয়।
– যাচ্ছি হুহ। মুখ বাকা করে বললো।
রেহানের বড়মা মেঘাকে বসালো মিথিলা তো গল্প জুরে দিয়েছে মেঘার সাথে। মেঘা মনে মনে ভাবছে…….সবাইকে তো ভালোই মনে হচ্ছে কিন্তু ভয় হচ্ছে রেহানের মা কি বলবে।
.
🌿
.
রেহানের মা সিড়ি দিয়ে নামার সময় চোখ পড়লো মেঘার দিকে,মাথায় ওড়না দেওয়া গুটিশুটি মেরে সোফায় বসে আছে। উনি এসে দাড়াতেই মিথিলা আস্তে করে বললো
– মেঘা মা এসেছে।
মেঘা মুখ তুলে তাকিয়ে উঠে দাড়িয়ে হালকা হেসে রেহানের মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। রেহানের মা মেঘার বাহু ধরে দাড় করিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
এদিকে রেহান নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে ওর খুব চিন্তা হচ্ছে না জানি মা কি বলবে এখন।
মেঘা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে রেহানের মা কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মুখে হাসি ফুটিয়ে মেঘার থুতনি ধরে মুখ তুলে বললো
– মাশাআল্লাহ, আমার খুব পছন্দ হয়েছে তোমাকে।
রেহান খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো
– মা সত্যিই মেঘাকে ভালো লেগেছে তোমার!!
– হুম খুব ভালো লেগেছে। এমন পুতুলের মতো মেয়েকে কোথায় পেলি তুই! কি মায়া ভরা চোখ দুটো। তোমার বাড়িতে কে কে আছে??
– জ্বি বাবা আর ছোট ভাই আছে।
– আর তোমার মা??
মেঘা রেহানের মায়ের দিকে তাকালো চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছে। রেহান মেঘার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো
– ওর মা নেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
রেহানের মা মেঘাকে একহাতে জড়িয়ে বললো
– আমি দুক্ষিত মা তুমি কষ্ট পেয়েছো তাইনা?
– আন্টি এভাবে কেনো বলছেন সত্যিটা তো মেনে নিতেই হবে।
– উহুম আমাকে মা বলে ডাকবি তুই আজ থেকে আমি তোর মা। বলে ওর কপালে চুমু খেলো। হ্যা রে তুই করে বললাম কিছু মনে করিস নি তো??
মেঘার চোখ থেকে পানি পড়ছে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো
– মা বলতে বলেছেন আর তুই করে বলতে পারবেন না আমি কিছু মনে করি নি।
– আমাকে মা বলে ডাকবি আর তুমি করে বলবি ঠিকআছে।
– আচ্ছা মা।
রেহানের মা মেঘাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
.
🌿
.
একটা লেকের পাড়ে রেহান মেঘা পাশাপাশি হাটছে। মেঘার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে রেহান।
– মেঘা আমার বাড়ির সবাইকে কেমন লেগেছে তোমার??
– অনেক বেশি ভালো লেগেছে সবাইকে,তবে অবাক হয়েছি আপনার মাকে দেখে কতো সহজে আমাকে আপন করে নিলো!
– মা এমনি যাকে পছন্দ হয় পারলে তাকে কলিজাতে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে আর যাকে পছন্দ করেনা তার মুখও আর দ্বিতীয়বার দেখতে চায় না।
– যদি আমাকে পছন্দ না করতো আপনি কি করতেন??
রেহান দাড়িয়ে পড়লো মেঘার দিকে তাকিয়ে ওর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
– আমি যেমন আমার মাকে শ্রদ্ধা করি ভালোবাসি তেমনি তোমার দিক থেকেও তোমাকে আমি ভালোবাসি তোমাদের কাউকে ছাড়া আমার চলবে না,তাই যেভাবেই হোক মাকে আমি রাজি করতাম। তবে আমার বিশ্বাস ছিলো তোমাকে দেখে মায়ের পছন্দ হবেই।
– হুম,আচ্ছা আপনার বাবা ভাইয়াকে তো দেখলাম না?
– আজ সকালে অফিসের কাজে বাবা আর ভাইয়া শহরের বাইরে গিয়েছে।
– রাফিন কোথায় থাকে এখন?
– আমাদের বাড়িতেই থাকে অলটাইম রুমে সময় কাটায় কোনো কাজ থাকলে বের হয়। ওকে দেখলে খুব কষ্ট হয় আমার।
– তাহলে এক কাজ করুন আমাকে ওনার কাছে দিয়ে দিন ওনার আর কষ্ট থাকবে না। হেসে বললো মেঘা।
রেহান চোখ গরম করে তাকালো মেঘার দিকে
– আরে এভাবে তাকান কেনো আমি তো মজা করে বললাম।
রেহান মেঘার হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো,মেঘা কেঁপে উঠলো মুহুর্তেই। মেঘা রেহানের বুকের সাথে মিশে আছে রেহানের গরম নিশ্বাস পড়ছে মেঘার চোখে মুখে। মেঘা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
– এ এটা পাববলিক পপ্রেস ছাড়ুন আমায়।
রেহান মেঘার মুখে হাত দিয়ে বললো
– এদিকে কেউ তাকিয়ে নেই। শোনো মেঘা খুব ভালোবাসি তোমাকে,আমাকে কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবে না”””তুমি আমার””” শুধুই আমার বুঝেছো তুমি??
মেঘা মাথা নাড়িয়ে বললো
– হুম বুঝেছি। এখন তো ছাড়ুন।
রেহান মেঘার কপালে পরম আবেশে চুমু দিয়ে ছেড়ে দিলো। মেঘা জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো
– আপনার সাথে বাইরে পাবলিক প্রেসে কোথাও আর ঘুরতে যাবো না।
রেহান দুষ্টু হেসে বললো
– তাহলে কি আমার সাথে নিরিবিলি জায়গাতে ঘুরতে চাও যেখানে কেউ থাকবে না।
মেঘা রাগি চোখে তাকালো আর রেহান জোরে হেসে উঠলো তার মেঘপরীর রাগি চেহারা দেখে।
ওদের এই খুনশুটি ভালোবাসা ময় দৃশ্য দূর থেকে রাফিন দেখছিলো চোখের পানি মুছে মৃদু হেসে বললো
…….আল্লাহর কাছে দোয়া করি তোমাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাক।
·
·
·
চলবে…………………..