তুমি আমার পর্ব-০৭

0
635

#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_7

রাত বারটা চারদিকে ধমকা হাওয়া বইছে। তারেই হাওয়া হুড়মুড়িয়ে জানলা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করছে। বাতাসের কারনে জানলার পর্দা গুলা উড়ছে। কিছুক্ষন পরপর বিদ্যুৎ চমকাছে। হয়তো মুষলধারে বৃষ্টি নামতে পারে। এটা সেটাই হলো ভারী বর্ষন শুরু হয়ে গেছে। কাজরত রেহান উঠে গিয়ে জানলা গুলা লাগিয়ে দিয়েছে। জানলা লাগিয়ে দিয়ে নিজের জায়গায় ফিরার সময় রেহানের চোখ যায় নিশির দিকে,, ঘুমন্ত নিশিকে ভালো করে রেহান পর্যবেক্ষন করছে। আলোমেলো চুল মুখের উপর পড়ে আছে। রেহানের কাছে নিশিকে খুব আবেদনময়ী লাগছে। তবে রেহানের হাসি পায় নিশি হা করে ঘুমিয়ে থাকার জন্য।

রেহান আস্তে আস্তে করে নিশির দিকে এগিয়ে গিয়ে নিশির থুতনি ধরে নিশির হা হয়ে থাকা মুখটা বন্ধ করে। তার সাথে নিশির মুখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলা মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে চলে আসবে সাথে সাথে কারেন্ট চলে যায়। সারা ঘর নিরব শুধু দুজন মানুষের নিশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে। রেহান অন্ধকার ঘরে খুব কষ্ট করেই নিজের সেল ফোনটা খুজে বের করে। ঠিক এমন সময় পরে এক ব্রজপাত, বাজের শব্দ শুনে নিশি ধড়ফরিয়ে উঠে বসে। যতটা না বাজ্রপাতের শব্দে নিশি ভয় পেয়েছে তার চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছে অন্ধকার রুমে রেহানকে দেখে। রেহান নিজের মুখের সামনে ফোনের লাইট ধরে থাকার কারনে নিশি ভয় পেয়ে দেয় এক চিৎকার। রেহান তাড়াতাড়ি করে নিজের মুখের সামনে থেকে লাইট সরিয়ে বলে

–নিশি আমি আমি রেহান।

–আপনি, আপনি এমন ভাবে ছিলেন কেন? আর রুম অন্ধকার কেন লাইট জ্বালান।

–কারেন্ট চলে গেছে তাই ফোনের লাইট অন করেছি আর তখনেই তুমি উঠে পড় ঘুম থেকে।

আবার পরে বজ্রপাত। নিশি নিজের দু কান চেপে চিৎকার করে উঠে

–ও মা গো।

রেহান নিশিকে বলে

–তুমি এবার ঘুমাও আমার কাজ আছে।

বলেই রেহান সোফাতে বসে লেপটপে কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু নিশির মনে হয় এখন আর ঘুমে ধরবে না। বাইরে মুষুধারে বৃষ্টি পড়ছে সাথে আবারও বড় বড় ব্রজপাতও পড়ছে। নিশি পা দুটো ভাজ করে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে কানে হাত দিয়ে বিরবির করে দোয়া পড়ছে। নিশি ভীষন ভয় এই ব্রজপাত জিনিসটা। নিশির বিরবির করা শব্দ শুনে রেহান চোখ তুলে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে।

–কি হলো ঘুমাচ্ছো না কেন? আর এমন বিরবির করে কি বলছো?

–কি করে ঘুমাবো বাজ পড়াতে ভয় করছে তাই তো বিরবির করে দোয়া পড়ছি।

— এত বড় মেয়ে এখন বাজে ভয় পায়। ঘুমাও চুপচাপ আর আমাকে একটু শান্তিতে কাজ করতে দাও।

নিশি ঢোক গিলে রেহানকে বলে

–আপনাকে একটা কথা বলবো।

–হুম বলো [কাজ করতে করতে]

–আপনি বেডে এসে কাজ করুন না। তাহলে আমি আর ভয় পাবো না। আসলে বৃষ্টি হলে মা আমার পাশে থাকতো আর মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম।

নিশির কথা শুনে রেহান নিশির দিকে তাকিয়ে বলে

–এখন কি তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চাও নাকি।

–না না আমি কেন আপনাকে জড়িয়ে ধরতে যাবো।

–তাহলে।

–আপনি প্লিজ আমার পাশে এসে বসুন না প্লিজ। [অসহায় কন্ঠে]

রেহানের ভীষন হাসি পাচ্ছে নিশির এমন বেহাল অবস্থা দেখে। সাথে রেহানের এই ইচ্ছাটাও জাগছে নিশির ভর্য়াত চেহারাটা দেখার। রেহান লেপটপ বন্ধ করে সোফা থেকে উঠে বসে নিশির দিকে লাইট ফিরায়। নিশি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিয়ে বলে।

–আরে আরে কি করছেন কি আপনি? আমার মুখের উপর লাইট ধরেছেন কেন?

রেহান সাথে সাথে লাইটটা সরিয়ে নেয় নিশির মুখের সামনে থেকে। আর চুপচাপ নিশির পাশে এসে আধ শুয়া হয়ে শুয়ে পড়ে বলে

–এবার ঘুমাও চুপচাপ।

নিশিও আর কিছু না বলে শুয়ে পড়ে কিন্তু রেহান পাশে থাকা সত্বেও বেচারি নিশির ভয় পাশে। ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে। আর বাইরে পরিবেশ তান্ডব চালাচ্ছে এক প্রকার জোরে হাওয়া বইছে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, সাথে বৃষ্টি আর সাথে তো ব্রজপাত আছেই। নিশি আবার চোখ মেলে তাকিয়ে রেহানকে বলে

–আমি কি আপনার একটা হাত ধরতে পারি।

রেহান নিশির দিকে আবাক হয়ে তাকিয়ে বলে

–মানে।

–মানে হলো আমি শুধু আপনার হাতটাই ধরবো আর কিছু ধরবো না প্রমিজ।

–কেন তুমি কি আমার অন্য কিছু ধরতে চাও না নাকি। [বাকা হেসে]

–দেখুন আমি না মজা করার মুডে নেই। আমি তো শুধু হাতটা ধরতে চেয়েছি এর জন্য আপনি এমন করছেন কেন? লাগবে আপনার হাত যান।

–আচ্ছা ঠিক আছে নাও ধরো।

রেহান নিশির দিকে বা হাতটা বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে রেহানের হাতটা ঝাপ্টে ধরে। নিশি রেহানের হাতটা ধরার সাথে সাথে রেহান অনুভব করে নিশির হাত প্রচন্ড ঠান্ডা। রেহান তড়িৎ গতিতে নিশির দিকে ফিরে বলে।

–নিশি তুমি ঠিক আছো?

–হে আমি ঠিক আছি।

–তাহলে তোমার হাত এতো ঠান্ডা কেন?

নিশি কিচ্ছু বলেছে না দেখে রেহান নরম স্বরে বলে উঠে

–বেশি ভয় করছে।

রেহানের নরম স্বরে কথা‌ শুনে নিশি ডুকরে কেদে উঠে। নিশি যে কেন কান্না করছে সেটা নিশিও জানে না। রেহান নিশির কান্না দেখে পুরা বেক্কাল হয়ে যায়। চিন্তিত স্বরে শোধালো

–কি হয়েছে নিশি শরীর খারাপ লাগছে।

নিশি অনবরত কেদেঁই যাচ্ছেই। রেহান কিছুই বুঝতে পারছে না নিশি কেন কান্না করছে জিঙ্গেস করছে কিন্তু নিশি কোনো কথাই বলছে না। নিশি কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গেছে। রেহানও আর কিছু না ভেবেই নিশিকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে

–স্টোপ নিশি এভাবে কান্না করছো কেন কি হয়েছে বলো আমাকে? না বললে বুঝবো কি করে কি সমস্যা?

নিশি কিছুই বলছে না দেখে এবার রেহান নিজের কাছ থেকে নিশির দু বাহ ধরে সরাতে যাবে সাথে সাথে নিশি রেহানকে ঝাপ্টে ধরে বলে উঠে

–প্লিজ যাবেন না আপনি আমার একা থাকতে ভয় করে।

নিশির কথাটা শুনার সাথে সাথে রেহানের হাত দুটো ধমকে যায়। আর নিশিকে নিয়ে এভাবেই আধ শুয়া হয়ে শুয়ে থাকে। নিশির কান্নার গতিতো কমেছে কিন্তু রেহানরে‌ হৃদয়ের গতিটা বেড়ে গেছে বাইরের পরিবেশটার মতো। মেয়েলি গন্ধ রেহানের নাকে আসছে কেমন জানি মাতাল করার মতো। রেহান নিজেকে অনেক কষ্ট করে সংযত রাখছে। কারন দিন শেষে রেহানও একজন পুরুষ আর সেই পুরুষকে আকর্ষন করবেই একটা নারী এটাই স্বাভাবিক। সে নারী যদি থাকে নিজের বুকের উপর একেবারে লেপ্টে তাহলে তো কথাই নেই। রেহানের শ্বাসপ্রশ্বাস ভারি হয়ে আসছে আর সাথে এটা ভাবছে নিশিরও কি একেই অবস্থা আমার মতো। রেহানের ভাবনার মাঝে নিশি বলে উঠে

–আপনি কি স্প্রে ইউজ করেন।

নিশির কথা শুনে রেহানের ভ্রু জোড়া কুচকে উঠে।

–মানে।

–মানে আপনার শরীর থেকে খুব সুন্দর একটা ঘ্রান আসছে।

–সে তো তোমার শরীর থেকেও আসছে।[বিরবির করে]

–কিহ?

–কিছু না চুপচাপ ঘুমাও।

–আপনি কি আমার উপর রেখে আছেন আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য।

–হে রেগে আছি এবার সরো আমার থেকে।

–না না সরবো না আমি ভয় পাই।

–না সরলে ঘুমাও চুপচাপ।

নিশি চুপ হয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। নিশি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে রেহান নিশিকে নিজের কাছ সরিয়ে নিশির জায়গাতে শুয়েই দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে। তবে রেহানের চোখ আজ ঘুম নেই এক ধ্যানে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আস্তে আস্তে রেহানের চোখেও তন্দ্রা নেমে আসে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে