তুমি আমার পর্ব-০৬

0
639

#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_6

সূর্য মামা ডুবা মাএ চারিদিকে আধার নেমে এসেছে। পাখিরা নিজনিজ ঘরে ফিরে গেছে। আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে চারিদিকে হালকা বাতাসও বইছে রাতে হয়তো তুমুল বৃষ্টি নামতে পারে তারেই আবাশ জানান দিছে প্রকৃতি। আকাশটা বারবার কেপে উঠছে তার সাথে হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোটাও পড়ছে।

নিশি বেলকনিতে বান্ডেজ করা পা নিয়ে চেয়ারে বসে আছে। বাতাসে অবাদ্ধ চুল গুলা উড়ছে, ছোট ছোট চুল গুলা নিশি বারবার কপাল থেকে বিরক্ত চেহারা নিয়ে কানে গুজে দিছে বাম হাত দিয়ে আর ডান হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোটা হাত নিয়ে উপভোগ করছে। মাঝে মাঝে ধমকা হাওয়া দেওয়ার জন্য বৃষ্টির কিছু ফোটা নিশির মুখশ্রীতে আছরে পড়ছে। আর অন্যদিকে রেহান সোফাতে বসে লেপটপ নিয়ে কাজে ব্যস্ত। রেহানের হঠাৎ করেই ফোন আসে ফোন পিক করে কথা কথা বলতে বলতে বেলকনির দরজার কাছে আসে। দরজার সামনে এসে দাড়াতেই রেহানের চোখ গুলা আটকে যায় নিশিকে এই অবস্থায় দেখে। রেহান ফোনটা কানের কাছ থকে আনমনেই সরিয়ে নিশির দিকে পালকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠছে।

হঠাৎ ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটার ডাকে রেহান ঘোর থেকে বের হয়ে আসে। ফোনটা আবার কানের কাছে নিয়ে বলে

–তকে পরে ফোন করছি।

রেহানের উপস্থিতি পেয়ে নিশি রেহানের দিকে ফিরে তাকায়। রেহানের অদ্ভুদ দৃষ্টি দেখে নিশির হাসোজ্জ্বল চেহারাটা মিলিয়ে যায়। নিশির দৃষ্টি নিচের দিকে আবদ্ধ করে নেয়। নিশির সকালের ঘটনা মনে পরতেই সারা শরীরের পশম দাড়িয়ে যায়। রেহানের কাছ থেকে প্রথম ভালোবাসা পরশ পেয়েছে নিশি আজ। নিশি কোনো দিন ভাবতেই পারে নি রেহান এমন একটা কান্ড ঘটাবে সাথে রেহানও হয়তো ভাবতে পারে নি ও আবেকের বশে এমনটা করে বসবে।

সকালে রেহান নিশিকে পুকুর থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর বাড়ির সবাই অনেক বকাবকি করে নিশি। এতক্ষন পুকুরে থাকার কারনে নিশির হাত পা সব ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তাই সবাই নিশিকে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হতে বলে সাথে রেহানকে। নিশির আগেই রেহান ফ্রেস হয়ে যায়। নিশি ফ্রেস হয়ে বের হতেই রেহানকে নিজের সামনে থেকে হচকিয়ে যায় কিছুটা। রেহান কিছু না বলেই নিশিকে কোলে তুলে একটা চেয়ারে বসিয়ে নিশির পা সেবলন দিয়ে পরিস্কার করতে শুরু করে। সেবলন দেওয়ার সাথে সাথে নিশি বলে উঠে

–আহ জ্বলছে তো।

রেহান একবার নিশির দিকে তাকিয়ে কাটা জায়াগাটাতে ফু দেওয়া শুরু করে। কাটা জায়গাতে ভালো করে ঔষধ লাগিয়ে বান্ডেজ করে দেয়। কিছুক্ষন পরেই নিশির মা ভাত এনে মেয়েকে নিজ হাত খাইয়ে দিয়ে যায়। নিশির খাওয়া শেষ হতেই রেহান নিশিকে এক গাদা ঔষধ খাইয়ে দেয়। নিশি উঠতে নিবে তখনেই রেহান আবার কোলে তুলে নেয়। নিশি রেহানের এমন আচরন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

নিশিকে রেহান বেডে শুইয়ে দিয়ে নিশির গায়ে চাদর টেনে দিয়ে হঠাৎ করেই নিশির কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয়। নিশি আবাক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু রেহান নিশিকে পাত্তা না দিয়েই বলে

–চুপচাপ ঘুমাও বেশি তেড়িবেড়ি করলে পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো।

রেহান কথাটা বলে হনহন করেই ঘর থেকে বের হয়ে যায়। নিশিও ঘুমাতে চেষ্টা করে কারন ওরও শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। পায়ের কাটা স্থানটা যন্ত্রনা করছে সাথে শরীরটা গরম গরম অনুভব করছে।

রেহানের ডাকে নিশির ধ্যান ভাঙ্গে আর অতিত থেকে ফিরে আসে।

–এভাবে এখানে বসে আছো কেন তুমি?

নিশি কিচ্ছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিশি নিশ্চুপ হয়ে আছে দেখে রেহান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে

–কি হলো কথা বলছো না কেন? এই ঠান্ডা আবহওয়াতে বসে থাকার মানে কি পরে জ্বর আসলে কি হবে। এমনেতেই জ্বর আসার আগেই ঔষুধ খাইয়ে আটকিয়েছি জ্বরকে। এখন আবার জ্বরকে আহবান জানাতে চাও নাকি।

নিশি নিচু স্বরে বলে উঠে
–ভালো লাগছিলো না তাই এখানে বসে আছি।

–ভালো লাগছিলো না বলে তুমি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা করবে। রুমে আসো চুপচাপ তোমার কিছু হলে মা আমাকে কথা শুনাবে আমি চাই না মা আমাকে তোমার জন্য কথা শুনাক। অবশ্য তুমি নিজের যা অবস্থা করেছো তার জন্য মা আমাকে কথা শুনাবেই আমার জানা মতে কালকে বাড়িতে গেলে।

রেহানের কথা শুনে নিশি মন খারাপ করে ফেলে। রেহানের নিশির প্রতি কেয়ার দেখে নিশি ভেবেছিলো হয়তো ওর জন্য রেহানের মনে কোনো জায়গা আছে। কিন্ত রেহান শুধু ওর মায়ের কথা চিন্তা করে নিশি কেয়ার করছে এটা ভেবেই নিশির মনটা ভেঙ্গে যায়।

নিশি কিছু না বলে উঠে দাড়ায়, নিশি খুড়েঁ খুড়েঁ হেটে রেহানের পাশ কাটিয়ে ঘরে ডুকতে যাবে তখনেই নিশি ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যতে নিবে সাথে সাথে রেহান নিশিকে ধরে ফেলে। রেহান নিশিকে পাজাকোলে তুলে‌ বেলকনি থেকে এনে বেডে বসিয়ে দিয়ে নিজেও গিয়ে সোফাতে বসে লেপটপে কাজ করতে থাকে। নিশি রেহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রেহান নিশির দিকে তাকাতেই দুজনের চোখে চোখ পড়ে যায়। নিশি সাথে সাথে অন্য দিকে ফিরে তাকায়। রেহান আয়াশ করে বসে নিশির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে

–তোমার কি পড়ালেখা নেই?

নিশি রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে

–মানে।
–মানে তুমি তো বসেই আছো তাহলে বই নিয়ে পড়তে বসো তাহলেই তো হয়।
–শুনুন আমার আপাতত এখন পড়ালেখা নেই।
–কেন নেই?
–কারন আমি পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছি।
–কিসের পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছো তুমি?
–এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি?
–কিহ? তুমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছো। [আবাক হয়ে]
–হে এতে এতো আবাক হওয়ার কি আছে?
–কিন্তু তোমাকে তো আমি পিচ্চি ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি….
–আমি মোটেও পিচ্চি না আমি অনেক বড়।
–তোমাকে দেখে তো মনে হয় পিচ্চিই।
–মানে আমাকে আপনার দেখে মনে হয় পিচ্চি। কেন দিক দিয়ে আমি পিচ্চি হুম?
–সব দিক দিয়েই পিচ্চি তুমি।
–হুম আমি তো পিচ্চি ওই রিয়া হলো বড় [বিরবির করে]
–কি বললে তুমি?
–কই কিছু না তো।
–কিন্তু আমি তো স্পষ্ট শুননাল তুমি রিয়া নাম উচ্চারন করলে। তুমি রিয়াকে কি করে চিনো?

নিশি ঢোক গিলে মনে মনে বলে

–এই রে সেড়েছে শুনে ফেলেছে। উফ নিশি তুই এতো ব্যাচাল কেন বল তো?
–কি হলো বলো? [অস্থির হয়ে]
–রিয়া… রিয়া হচ্ছে আমার একটা ফ্রেন্ডের নাম।
–তা হঠাৎ ওর নাম উঠলো কেন?
–ওই এমনেই আর।

রেহান ছোট ছোট চোখ নিশির দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি তো বেচারি ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে। রেহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশির মা ডেকে উঠে খাওয়ার জন্য। নিশি যেন হাফ ছেড়ে বাচে। নিশি তাড়াতাড়ি করে বেড থেকে নেমে বলে

–চলুন চলুন খেতে যাই মা ডাকছে।

নিশি দরজার সামনে আসতেই রেহান আবার ডেকে ওঠে নিশিকে। নিশি ভয়ে ভয়ে রেহানের দিকে তাকায় নিশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান নিশিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে।

–এভাবে চলো তোমাকে লুলার মতো যেতে হবে না পরে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
–কি আমি লুলা।
–নয়তো কি?
–এই আপনি নামন আমাকে আপনাকে কে বলছে আমাকে কোলে নেওয়ার জন্য আমি বলেছি। আপনি কোলে নেওয়াতে সবার সামনে কতটা লজ্জায় পড়তে হয় আমাকে জানেন। কিন্তু তা আপনি জানবেন কি করে আপনি তো একজন বেশরম মানুষ যতটুকু বুঝতে পেরেছি আমি এই কয় দিনে।
–চুপ একদম চুপ বেশি কথা বললে এমন আছর দিবো পরে কোমড় ভেঙ্গে বসে থাকবা। আর আমি বেশরম কিনা সেটা সময় হোক পরে বুঝবা।

রেহানের মুখে এমন কথা শুনে নিশির বুকটা ধক করে উঠে, লজ্জায় গালগুলা লাল আভায় পরিনত হচ্ছে। নিশি ঢোক গিলে গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে তাকায়। রেহানও মুচকি হেসে হাটা ধরে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে