#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_5
রাতের ডিনার করে ড্রয়িং রুমে বসে নিশি কাজিনদের সাথে আড্ডা দেওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নিশি বাড়িতে এসে রেহানের সাথে একবারও কথা বলে নি আভিমান করে। রেহানও কিচ্ছু বলে নি নিশিকে। নিশি আড্ডা দিতে ব্যস্ত আর অন্য দিকে রেহান বেলকনিতে দাড়িয়ে দুর আকাশের চাদটা দেখতে ব্যস্ত। কেন জানি রেহানের আজকে নিজেকে বড্ড উদাসীন লাগছে। বার বার অতিতের কিছু স্মৃতি চোখের পাতার ভেসে উঠছে। রেহান চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে কয়েক বার শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমের কাছে আসে তখনেই রেহানের কানে ভেসে আসে কিছু কথা।
–কিরে নিশি রেহান ভাইয়া বাসর রাতে তকে কি গিফট দিলো রে? তা আমাদেরকেও একটু বল শুনি[ওলি]
–তুই কপাল করে রেহান ভাইয়াকে স্বামী হিসেবে পেয়েছিস বুঝলি। ভাইয়া কত সুন্দর দেখতে একে বারের সিনেমার হিরোদের মতো[নীরা]
ওলি আবারও বলে উঠে
–আচ্ছা ভাইয়া কি এই বিয়েটা মেনে নিয়েছে।
নিশি কিচ্ছু বলছে না শুধু শুনেই যাচ্ছে এক মনে। নিশিকে ছুয়ে দিয়ে ওলি আবার বলে উঠে
–কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি?
–তরা আড্ডা দে আমি আসছি।
–আরে কই যাচ্ছিস এখন তুই এই রাতবিরাতে?
–একটু উঠানে যাচ্ছি মুক্ত বাতাস নিতে।
নিশি ঘর থেকে বের হয়ে উঠানে চলে যায়। রেহানও আবার ঘরে ফিরে যায়। উঠানে এসেই নিশি শব্দহীন ভাবে কান্না শুরু করে দেয়। যেই কান্না কেউ শুনতে পারছে না। কিন্তু রেহান জানলা দিয়ে নিশির কান্না দেখছে। নিশির কান্না রেহানকে কেমন অস্থির করে তুলছে ওর কারনে আজ নিশির এই অবস্থা। রেহানের সাথে যদি নিশির বিয়ে না হত তাহলে হয়তো নিশির জীবনটা অন্য রকম হতো। রেহান মনে মনে বলে উঠে
–সরি নিশি আই এম রিয়েলি সরি। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাকে আমার স্ত্রীর মার্যাদা দিবো।
______
প্রায় এক ঘন্টা পর নিশি নিজের রুমে আসে। রুমে এসে দেখে রেহান ঘুমিয়ে আছে। নিশি দরজাটা বন্ধ করে রেহানের সামনে গিয়ে দাড়ায়, নিশির খুব ইচ্ছে করছে রেহানের কালো চুল গুলা ছুয়ে দিতে। যা ভাবা তাই করা নিশি রেহানের কপালের চুল আলতো হাতে কপাল থেকে সরিয়ে দেয়। নিশি রেহানের কাছ থেকে চলে আসবে তখনেই রেহান নিশির হাত ধরে ফেলে আর অস্পষ্ট স্বরে বিরবির করে বলতে থাকে
–রিয়া প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ রিয়া।
নিশি রেহানের কথা শুনার জন্য রেহানের মুখের কাছে মাথা এগিয়ে। রেহান বারবার এক কথাই বলে যাচ্ছে
–রিয়া প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ রিয়া।
রেহানের মুখে রিয়া নামটা শুনে নিশি চমকে যায়। মনে মনে নিশি বলে উঠে।
–কে এই রিয়া? আর ওনি ছেড়ে না যাওয়ার কথা বলছেন কেন?
নিশি খুব কষ্টে রেহানের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রেহানের পাশে এসে শুয়ে পড়ে। কিন্তু নিশির চোখে আজ আর তন্দ্রা হয়তো নামবে না রেহানের কথা শুনে। নিশি মনে মনে ভেবেই যাচ্ছে
–কে রিয়া? রিয়া কি ওনার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু ছেড়ে না যাওয়ার কথা বলছেন কেন? তার মানে ওনার গার্লফ্রেন্ড কি ওনাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিছুই বুঝতে পারছি না ওনার কি কোনো অতিত আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে জানতে হবে আমাকে। কিন্তু ওনি তো আমাকে কোনো দিন বলবে না তাহলে কি করে জানবো।
_____
সকালে সূর্যের আলো পড়তেই রেহান জেগে যায়। উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে নিশি নেই। গভীর রাতে যখন রেহান সজাগ হয় তখন নিশিকে পাশে থেকে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। রেহান ভেবেছিলো নিশি হয়তো আজকে রাতে রেহানের সাথে থাকবে না। রেহান ঘর থেকে বের হয়ে নিশিকে সারাবাড়ি খুজে কিন্তু কোথাও না পেয়ে বাধ্য হয়ে নিশির মা জবা বেগমকে জিঙ্গাস করে
–মামি নিশি কোথায়? ওকে দেখছি নাতো।
পাশ থেকে নিশির নানু বলে উঠে
–নাত জামাই দেখি আমার নাতনিকে চোখে হারাছে। আর জবাকে এখনও মামি বলছো কেন? মা বলে ডাকবে এখন থেকে, আগে মামি ছিলো এখন তো তোমার শাশুরি মা হোন।
জবা বেগম মাকে থামিয়ে বলে
–আহ! মা তুমি চুপ করবে। রেহান বাবা নিশি পুকুরে গেছে গোসল করতে আসলে ওর একটা বাজে অভ্যাস আছে সকালে পুকুরে গোসল করা। কয়েকদিন যবত তো পুকুরে গোসল করতে পারে নি বিয়ের জন্য। তাই আজ সকাল হতে না হতেই পুকুরে দৌড়ে চলে গেছে। অনেক বার বারন করেছি আমি,, না যেতে পুকুরে কিন্তু মেয়েটা কথাই শুনে না। তুমি বসো আমি ওকে ডেকে নিয়ে আসি।
রেহান তড়িৎ গতিতে বলে উঠে
–না না আপনাকে যেতে হবে না আমি যাচ্ছি। পুকুরটা কোথায় সেটা বললেই হবে।
–ওই তো বাড়ির ডান পাশেই।
–আচ্ছা।
_____
রেহান পুকুরের সামনে দাড়িয়ে নিশিকে দেখে যাচ্ছে আর নিশি আপন মনে পানির নিচে দাড়িয়ে আছে। রেহান যে দাড়িয়ে আছে সেদিকে নিশির খেয়ালেই নেই। নিশি দু হাত দিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিছে, ভেজা চুল গুলা পানিতে মেলে দিছি, সাতারচ্ছে আপন মনে। নিশি এবার পুকুর থেকে উঠে পা ডুবিয়ে বসে আছে পুকুরের সিড়িতে। নিশির শরীরের কালো শাড়িটা লেপ্টে আছে, ভিজে যাওয়ার কারনে নিশির শরীরের ভাজ গুলা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আর অন্য দিকে নিশির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রেহান। নিশির এমন অবস্থা দেখে রেহানের হার্টবিটটা একটু বেশি গতিতেই চলছে। রেহান ঢোক গিলে নিজের শুকনো ঠোট গুলা জিহ্বা দিয়ে ভিজেয়ে অন্য দিকে ফিরে তাকায়। অন্য দিকে ফিরতেই রেহানের চোখ যায় একটা ছেলের দিকে যে আপতত নিশির দিকে তাকিয়ে আছে। রেহানের ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। এক বার নিশির দিকে আর একবার ছেলেটির দিকে তাকায়। রেহানের এবার খুব রাগ উঠছে নিশির উপরে এভাবে পুকুরে গোসল করার জন্য। রাগে নাক ফুলে উঠেছে রেহান নিজেকে সামলে নিশিকে জোরে ডাক দেয়
–নিশি পুকুর থেকে উঠো এসো।
নিশি রেহানকে দেখে বলে উঠে
–একি আপনি এখানে??
–হে আমি এখানে। এবার পুকুর থেকে উঠে আসো।
–কেন আসবো?
–আরে বেশিক্ষন পানিতে থাকলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।
–লাগবে না ও আমার অভ্যাস আছে।
–নিশি তোমাকে আমি উঠে আাসতে বলছি[ধমকে]
–এই আপনি এতো আমাকে ধমকান কেন বলুন তো? আমি যা করি তাতেই আপনার এত সমস্যা কেন হুম?
–নিশি লাস্ট বারের মতো বলছি উঠে আসবো।
–পারবো না আপনি যান তো বিরক্ত করবেন না।
এবার রেহান রেগে গিয়ে নিশির কাছে গিয়ে নিশির হাত ধরে দাড় করায় আর দাতে দাতে চেপে বলে
–চলো।
–না আমি যাবো না বলেছি তো একবার।
–নিশি কথা শুনো আমার।
–শুনবো না আপনার কথা ছাড়ুন আমাকে।
রেহান নিশি টেনে নিয়ে যাবে ঠিক এই সময় নিশি রেহানকে টান মারে আর সাথে সাথে নিশি স্লিপ খায় আর দুজনে এক সাথে ধপাস করে পুকুরে পড়ে যায়। বেচারির নিশির নাকে মুখে পানি ডুকে পারাতে কাশতে কাশতে শেষ। রেহান নিশির অবস্থা দেখে নিশির উনমুক্ত কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বলে।
–নিশি তুমি ঠিক আছো।
–আপনার জন্য নাকে মুখে পানি ডুকে গেছে আমার।
–আমি কি করলাম তুমিই তো আমাকে টান মারলে আর তোমার সাথে আমিও পড়ে গেলাম এই পুকুরের।
–ছাড়ুন আমাকে।
–যদি না ছাড়ি।
রেহানের কথা শুনে নিশি রেহানের দিকে তাকায়। নিশির চোখ গুলা লাল হয়ে আছে, সূর্যের আলো পড়াতে নিশির মুখটা লাল টকটকে হয়ে আছে। দুটো ভেজা শরীর একে ওপরের সাথে লেপ্টে আছে একেবারে। নিশির মুখের সামনে পড়া থাকা ভেজা চুল গুলা রেহান আলতো হাত সরিয়ে দিয়ে বলে
–এভাবে আর কোনো দিন যদি পুকুরে গোসল করেছো তাহলে তোমার খবর আছে বলে দিলাম।
রেহান এই কথাটা বলেই নিশিকে ছেড়ে দিয়ে পুকুর থেকে উঠে পড়ে। কিন্তু নিশি এখনও পানিতে রয়ে গেছে দেখে রেহান বলে উঠে।
–কি হলো উঠছো না কেন? নাকি সারাদিন পানির নিচেই থাকতে চাও।
নিশি কিচ্ছু না বলে চুপচাপ উঠে আসে পানি থেকে। কিন্তু যখনেই মাটিতে পা রাখতে যাবে তখনেই ব্যাথায় আর্তনাত করে উঠে নিশি। নিশির আর্তনাত শুনে রেহান সাথে সাথে বলে উঠে
–কি হয়েছে নিশি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো নাকি দেখি।
রেহান নিশির পা তুলে দেখে অনেকটা জায়গা কেটে গেছে আর রক্তও বের হচ্ছে।
রেহান নিশির দিকে তাকিয়ে বলে।
–পা কাটলো কি করে?
–মনে হয় পুকুরে স্লিপ কেটে পরার সময় কেটে গেছে।
–একটু কেয়ারফুল থাকতে পারো না তুমি।
–আপনার জন্যই তো এমন হয়েছে। আপনি না আসলে,, না আমি পুকুরে এমন ভাবে পারতাম আর না আপনি পড়তেন।
–হয়েছে তোমার কথা বলা এবার চলো। হাটতে পারবে তো নাকি।
–না পারলেও বা কি আমাকে তো কষ্ট করেই হেটে যেতে হবে। যা হয়েছে সব আপনার জন্য হয়েছে।
নিশি কথাটা বলতে না বলতেই নিজেকে শূন্য আবিষ্কার করে। রেহান নিশি পাজাকোলে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা ধরে। দুটো ভেজা শরীরের নিমিশেই আবার এক হয়ে গেলো। রেহানের হার্টবিটের কম্পন স্পষ্ট শুনতে পারছে নিশি। নিশি আবাক হয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে ও তো ভাবতেই পারে নি রেহান ওকে এভাবে কোলে তুলে নিবে। নিশির এভাবে তাকানো দেখে রেহান বলে উঠে।
–কি হলো এভাবে আমাকে তাকিয়ে দেখার কি আছে? তুমি হাটতে পারবে না বলে এভাবে কোলে নিয়েছি।
নিশি মুচকি হেসে রেহানের বুকে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। হয়তো নিশি এমন সুযোগ বারবার পাবে না রেহানের বুকে মাথা রাখার তাই নিশি সুযোগের সৎ ব্যবহার করলো।
#চলবে