তুমি আমার পর্ব-০৪

0
653

#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_4

গাড়িতে বসে নিশি ব্যস্ত শহরটা দেখে যাচ্ছে। কেউ কাজের তাড়ায় ছুটছে, কেউ বা চায়ের স্টলে বসে গল্প করছে, ছোট ছোট বাচ্চার বই খাতা নিয়ে বিদ্যালয়ে ছুটছে। হঠাৎ করে নিশির চোখ যায় এক দম্পত্তির উপর একে অন্যের হাত ধরে কি সুন্দর করে রাস্তা পার হচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে নিশির ঠোটে হাসি ফোটে। এই সুন্দর দৃশ্যটা দেখে নিশির মনে ইচ্ছে জাগছে রেহানের হাত ধরে হাটার। কিন্তু রেহান তো ওকে এখনও মেনেই নেই। এটা ভাবতেই নিশির ফুরফুরে মনটা খারাপ হয়ে গেলো আবার।

রেহান গেছে প্রায় অনেকক্ষন হয়ে গেছে এখনও ফিরছে। তাই নিশি গাড়ির দরজার কাচটা সম্পূর্ন ভাবে খুলে মুখটা বাহিরের দিকে বের করে নেয়। হঠাৎ করেই নিশির চোখে পড়ে একটা ফুলের দোকান। সারা দোকানে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ভরা। নিশির বেলি ফুল খুব পছন্দ যখনেই ও শাড়ি পড়তো তখনেই খোপায় বেলি ফুলের মালা দিতো। কিন্তু এখন কি করে দিবে সে, বেলি ফুলের মালা কে এনে দিবে তাকে। নিশি চোখ মুখ অন্ধকার করে সোজা হয়ে বসে ফুল গুলার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে। কখন যে রেহান নিশির পাশে এসে বসেছে নিশি টেরিয়ে পায় নি। রেহান নিশির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মনে মনে বলে

–এ আবার কোন দুনিয়াতে চলে গেলো। আমি যে ওর পাশে এসে বসেছি ওর খেয়ালেই নেই।

রেহান নিশির দিকে ভালো করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে নিশির দৃষ্টি আসলে কোথায়? আর কি এমন চিন্তা করছে। রেহান বুঝতে পারে যে নিশির ফুলের দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে। রেহান আস্তে করে নিশির গাড়ের কাছে মুখ নিয়ে বলে

–চাই বুঝি বেলি ফুলের মালা।

রেহানের কন্ঠস্বর শুনে নিশি চমকে উঠে পাশে ফিরে রেহানকে দেখে বলে

–আপনি? আপনি কখন এলেন?
–এসেছি এক সময়।
–এতক্ষন লাগে আসতে আপনার?
–হুমম আমার লাগে।
–আচ্ছা এবার চলুন তাড়াতাড়ি নাকি এই গাড়িতে বসেই সময় কাটাবো।
–আমি তোমাকে কিছু জিঙ্গেস করেছিলাম।
–কি জিঙ্গেস করেছিলেন?
–কিছু না তুমি বসো আমি আসছি।
–আরে আবার আপনি কোথায় যাচ্ছে? আরে এই লোক এত লেইট করে আসলো আর এখন আবার কোথায় চলে গেলো? ধুর ভালো লাগে না।

নিশি বাহিরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখে রেহান ওই ফুলের দোকানে যাচ্ছে।

–আরে ওনি আবার ফুলের দোকানে কেন যাচ্ছেন?

রেহান পাচটা বেলি ফুলের মালা কিনে এনে গাড়িতে এসে বসে। নিশির হাতে বেলি ফুলের মালা গুলা দিয়ে বলে

–নাও!
–আমাকে কেন এগুলা দিলেন? [আবাক হয়ে]
–কেন তোমার চাই না বুঝি?
–না চাই! কিন্তু আপনি বুঝলেন কি করে যে আমার বেলি ফুলের মালা চাই এখন।
–যেভাবে ফুল গুলার দিকে তাকিয়েছিলে তুমি, যে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে।
–কিন্তু এতগুলা আনলেন কেন? এত গুলা দিয়ে আমি কি করবো?
–রেখে দাও ভবিষতে কাজে লাগবে।

নিশি দুইটা মালা হাতে নিয়ে লুকিং গ্লাসে রেখে দিয়ে বলো।

–এই যে কাজে লেগে গেলো আর ধন্যবাদ।

রেহান মুচকি হাসি দেয়। কিন্তু কিছু না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করে। নিশি তো মহা খুশি বেলি ফুলের মালা পেয়ে। একটা মালা নিয়ে খোাপায় দিতে যাবে তখনেই গাড়িটা ঝাকি দিয়ে উঠে। বেচারি নিশির খোপা খুলে যায়। নিশি রেহানের দিকে অসহায় দৃষ্টি তাকিয়ে বলে

–একটু গাড়িটা এক সাইডে থামাবেন প্লিজ।
–কেন?
–একটু থামান না প্লিজ।
–ওকে।

রেহান কিছুক্ষন ড্রাইভ করে একটা ফাকা জায়গা দেখে গাড়িটা থামায়। রেহান গাড়ি থামিয়ে নিশির দিকে নজর দেয়। নিশির রেশমি ঘন কালো চুল গুলা আবার হাত প্যাচ খোপা করে, খোপাতে কাটি দিয়ে দেয় যাতে না খুলে যায়। রেহান মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে নিশির দিকে ভালোই লাগছে নিশির এই রুপ রেহানের কাছে। নিশি এবার একটা বেলি ফুলের মালা নিয়ে খোপায় বাধার চেষ্টা করছে কিন্তু ভালো করে পারছে না তার জন্য নিশির ভ্রু জোড়ে কুচকে রেখেছে। নিশির মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করছে রেহান তাই নিজেই বলে বলে উঠে

–আমাকে দাও আমি বেধে দিছি মালাটা।

নিশি আবাক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে
–আপনি বেধে দিবেন।
–হুম দাও।

নিশিও বাধ্য মেয়ের মতো রেহানে দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসে। রেহান মালা নিয়ে নিশির খোপায় লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নিশি চোখ বন্ধ করে রেখছে। খোপাতে মালা লাগানোর জন্য বার বার রেহানের হাত নিশির গাড় স্পর্শ করছে আর তাতে নিশির ভেতরে তুলপাড় হতে শুরু করেছ। হঠাৎ করেই রেহানের কন্ঠ ভেসে আসে।

–ক্লিপ আছে তোমার কাছ?
–হুমম।

নিশি ব্যাগ থেকে ক্লিপ বের করে রেহানকে দেয়। রেহান ক্লিপটা দিয়ে ভালো করে খোপাতে বেলি ফুলের মালাটা লাগিয়ে দেয়। রেহান নিশির কাছ থেকে চলে
আসার সময় রেহানের নজর পরে নিশির সাদা ধবধবে খোলা পিঠে,, যার এক সাইডে একটা কালো কুচকুচে তিলটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। রেহানের খুব ইচ্ছে করছে নিশির তিলটাকে ছুয়ে দিতে। যেই ভাবা সেই কাজ রেহান নিশির তিলটা ছুতে যাবে ঠিক সেই সময়েই নিশি ঘুড়ে বসে। রেহানও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে পরক্ষনে নিজেকে স্বাভাবিক করে স্টেয়ারিং এর উপর হাত রাখে আর জোর একটা শ্বাস নেয়। নিশি হাত দিয়ে খোপাটা দেখে নেয় ভালো ভাবে মালাটা লাগানো হয়েছে কিনা। মালাটা খুব সুন্দর করে লাগানোর জন্য নিশি আবাক হয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে

–আপনি এত সুন্দর করে কিভাবে মালাটা লাগিয়ে দিলেন। এর আগে কি কাউকে কোনো দিনে মালা পড়িয়ে দিয়েছিলেন।

এই কথাটা শুনার সাথে সাথে রেহানকে ছোয়াল শক্ত হয়ে যায়। নাকের ফাটা ফুলে উঠে। রেহানের কোনো জবাব না পেয়ে নিশি আবারও বলে উঠে

–কি হলো বলছেন না??

রেহান এবার নিশির দিকে ফিরে তাকায়। নিশি রেহানের চোখের দিকে তাকাতেই আতংকে উঠে। কারন রেহানের চোখ জোড়ো লাল হয়ে আছে। রেহান দাতে দাত চেপে বলে উঠে

–এত কথা বলো কেন তুমি? চুপচাপ থাকতে পারো না। নাকি কথা না বললে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না কোনটা?
–আমি কোথায় এত কথা বললাম আমি তো জাস্ট আপনাকে জিঙ্গেস করলাম আপনি কি কাউকে কোন দিন খোাপয় মা…
–নিশি তোামকে আমি চুপ থাকতে বলেছি কথা কানে যায় না[ধমকের সুরে] চুপচাপ বসে থাকো আর একটা কথা বললে তোমাকে গাড়ি থেকে বের করে দিবো।

নিশির ফুরফুরে মনটা নিমিষেই খারাপ করে দিলো রেহান। নিশি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকে আর অন্য দিকে রেহান গাড়ি স্ট্রার্ট করে ড্রাইভ করতে থাকে। কেউ কোনো কথা বলছে না, গাড়িতে নিরবতা পালন হচ্ছে। নিশি মাথাটা সিটে হেলান দিয়ে রেখেছে। কখন যে নিশির চোখটা লেগে যায় ও টেরেই পায় নি।

অনেকক্ষন গাড়ি ড্রাইভ করার পর নিদির্ষ্ট স্থানে এসে গাড়ি পৌছায়। রেহান নিশির দিকে ফিরে ডাকতে যাবে তখনেই দেখে নিশি ঘুমিয়ে আছে। রেহান মুচকি একটা হাসি দিয়ে নিশির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। নিশির কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলা আলতো হাতে কানে গুজে দিয়ে নিশিকে স্পট ভয়েসে ডাকে।

–নিশি! উঠো চলে এসেছি আমরা। নিশি এই নিশি

রেহানের ডাক নিশির কানে পৌছাছে না দেখে রেহান আলতো করে নিশির দু গালে চড় দেয়।

–নিশি উঠো।

নিশি চোখ খুলতেই রেহানকে দেকে তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে বসে।

–গাড়ি থেকে নামো চলে এসেছি আমরা।

নিশি আগে গাড়ি থেকে নামে। রেহান গাড়িটা পার্ক করে গাড়ি থেকে বের হয়। নিশি মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে আর রেহানের অপেক্ষা করছে। রেহান নিশির দিকে তাকিয়ে দেখে নিশির শাড়ির আচলটা নিচে পড়ে আছে আর যার নিশির ধবধবে সাদা পিঠটা দেখা যাচ্ছে স্পষ্টভাবে। রেহানের ভ্রুদ্বয় কুচকে এলো নিশিকে এমন অবস্থায় দেখে আর ভিরভির করে বলে উঠে।

–এই মেয়ে এমন ব্লাইজ পড়েছে কেন যেই ব্লাইজ পড়লে পিঠ দেখা যায়। কেন কমনসেন্স নেই এই মেয়ের মাথায়।

রেহান নিশির কাছে গিয়ে নিশির শাড়ির আচলটা তুলে নিশির কাধ বরাবর ভালো করে মেলে দেয় যাতে করে পিঠটা না দেখা যায়। রেহানের এমন কাজে নিশি আবাক হয়ে রেহানের দিকে তাকতেই রেহান বলে উঠে

–ভেতরে চলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে