তুমি আমার পর্ব-০৩

0
715

#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_3

সকাল সকাল নিশি ব্রেকফাস্ট করে সব কিছু গুজিয়ে নেয় একটু পরেই ওরা রাওনা দেবে নিশির বাড়ির উদ্দেশ্যে।
নিশি রুমেই শাড়ি চেইন্জ করছে কারন রেহান অনেক আগেই রেডি হয়ে নিচে চলে গেছে তাই নিশি আর ওয়াশরুমে না গিয়ে রুমে শাড়ি পড়ছে। নিশি শাড়ির কুচিটা ঠিক করে পেটে গুজতে যাবে আর ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ করেই দরজা খুলে রেহান ঘরে প্রবেশ করে। রেহানকে দেখে নিশি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে যার কারনে হাত থেকে শাড়িটা নিচে পড়ে যায়। রেহান তো বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে নিশির দিকে আর এদিকে নিশি রেহানকে দেখে দিলো এক চিৎকার। রেহান তাড়াতাড়ি গিয়ে নিশির মুখ চেপে ধরে বলে

–আস্তে আস্তে এভাবে চিৎকার করছো কেন? মানুষজন শুনলে কি ভাববে।

নিশি রেহানের হাতটা নিজের মুখ থেকে সরিয়ে উল্টো দিকে ফিরে শাড়িটা নিচ থেকে তুলে ভালো করে গায়ে জড়িয়ে বলে।

–আপনার কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই এভাবে ধুম করে রুমে চলে আসলেন। আর আসলেনেই যখন নক করে আসা দরকার ছিলো নাকি।

রেহান আবাক হয়ে বলে
–আমার রুমে আমি আসবো তার জন্য নক করে আসতে যাবো কেন?

–আপনার রুম তো সেটা আমি জানি। কিন্তু এখন এই রুমে একটা মেয়ে থাকে তাই আপনার উচিত ছিলো নক করে আসার। এখন যদি নক করে আসতে আপনি তাহলে এমন বিচ্ছির একটা পরিস্থিতি পরতে হতো না আমাকে।

রেহান নিশির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে উল্টো দিকে ফিরে বলে
–সরি সরি আসলে আমি বুঝতে পারে নি যে তুমি এই অবস্থায় থাকবে আর ওয়াশরুম রেখে তুমি এখানে কেন চেইন্জ করছো?

–ওয়াশরুমে চেইন্জ করলে অসুবিধা হয় তাই রুমে করছিলাম আর কে জানতো আপনি ধুম করে এভাবে চলে আসবেন। আপনি তো চলে গিয়েছিলেন নিচে তাহলে আবার ফিরে এলেন কেন??

–আসলে গাড়ির চাবিটা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। আর তুমি সব দোষ আমার উপর দিচ্ছো কেন? যদি তুমি দরজাটা বন্ধ করে চেইন্জ করতে তাহলে তো আর আমি এভাবে ধুম করে আসতে পারতাম না আর না আমি তোমার কিছু দেখতে পারতাম। তাই এটা সর্ম্পূন তোমার দোষ আর তোমার দোষে এমনটা হয়েছে।

রেহান আর কিছু না বলেই গাড়ির চাবিটা নিয়ে রুমে থেকে বের যায়। আর নিশি সে তো বেক্কেলের মতো কিছু ক্ষন দাঁড়িয়ে দেখে চিৎকার করে উঠে।

–আমার সব শেষ।

_____

নিশি অনেকটা সময় নিয়েই রেডি হয়ে নিচে নামাল‌ো। নিশির খুব লজ্জা লাগছে রেহানের সামনে পড়তে। নিশি সদর দরজার সামনে আসতেই দেখে রেহান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। নিশি নাক ফুলিয়ে রেহানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে।

–চলুন।
–এতক্ষন লাগল তোমার সাঝতে। বসে বসে থাকতে থাকতে আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে।
–কিন্তু আপনি তো দাঁড়িয়ে আছেন।
–এতক্ষন বসেই ছিলাম তুমি আসছো না দেখে গাড়ি থেকে নেমে আসলাম। কি এত সাঝলে যে চল্লিশ মিনিট পার করে দিলে।

রেহান নিশির নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চোখ বুলায়। মেরুন কালারের শাড়ি পড়েছে নিশি হালকা সেঝেছে তাতেই নিশিকে মাশআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। কোমড় পর্যন্ত ঘন রেশমি কালো চুল গুলা হাত প্যাচ খোপা করেছে, খোপা কাঠি দিয়ে আটকানো যাতে খুলে না যায়। ছোট ছোট চুল গুলা খোপা থেকে বের হয়ে আছে।রেহানের খুব ইচ্ছে করছে নিশির কপাল থেকে ছোট চুল গুলা সরিয়ে দিতে। রেহানের এমন ভাবে তাকানো দেখে নিশি তো লজ্জায় নিচ দিকে তাকিয়ে আছে। আর কিছুক্ষন আগের ঘটনাটা নিশির মাথায় বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। রেহান মুচকি হেসে বলে।

–চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে আর লজ্জা পেতে হবে না।

রেহান এই কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে বসলো। নিশি মনে মনে বলে উঠে

–লুচ্চাই বেডা লজ্জা পেতে হবে না বলে তো আবার লজ্জা দিয়ে ফেলিস।

রেহান গাড়ির দরজা খুলে বলে
–কি হলো উঠো??
–উঠছি।

নিশি গাড়ির পিছনের দরজা খুলতে যাবে তখনেই রেহান বলে উঠে

–আরে তুমি গাড়ির পিছনের দরজা খুলছো কেন? আমি সামনের দরজা যে খুলে দিলাম বসার জন্য তা কি তুমি দেখ নি।
–আমি পিছনে বসবো।
–আমি কি তোমার ড্রাইভার লাগি যে তুমি পিছনে বসবে আর আমি গাড়ি চালাবো।
–আমি কখন বললাম আপনি আমার ড্রাইভার। আপনি তো আমার স্বামী।
–তাহলে সামনে এসে বসো।
–কিন্তু।
–তুমি কি সামনে এসে বসবে এত ভাব না ধরে[ধমকের সুরে]
–বসছি‌ বসছি এভাবে বলার কি আছে আজব।

নিশি গাল ফুলিয়ে চুপচাপ গাড়িতে এসে বসে। রেহান মুচকি মুচকি হাসছে আর গাড়ি ড্রাইভ করছে। নিশি আড় চোখে বার বার রেহানকে দেখছে। রেহানের মুচকি হাসা দেখে মনে মনে বলে

–এই লোক এভাবে হাসছে কেন? নিশ্চয়ই সকালের লজ্জাজনক ঘটনাটা মনে করে হাসছে।

নিশি আবারও রেহানের দিকে আড় চোখে তাকায়। নিশির আড় চোখে তাকানো এবার রেহান ধরে ফেলে বলে

–এভাবে আড় চোখে আমার দিকে তাকানোর কি আছে বুঝলাম না।

নিশি রেহানের কথা শুনে ততমত খেয়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক করে নজর গাড়ির বাহিরে দিয়ে বলে

–আপনার দিকে আমি কোন দঃখে তাকাতে যাবো আজব।
–যেই দুঃখেই তাকাও না কেন? আমি কিন্তু স্পষ্ট দেখলাম তুমি কেমন আড় চোখে তাকিয়ে আমাকে দেখছিলে।
–তাহলে আপনি কেন এভাবে মুচকি মুচকি হাসছিলেন বলেন?
–কখন হাসলাম আমি?
–আমি আড় চোখে তাকিয়ে দেখেছি আপনি মুচকি মুচকি হাসছিলেন।
–ও তার মানে তুমি শিকার করছো যে তুমি আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে। আড় চোখে না তাকিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখো আমাকে আমি কিন্তু আবার মাইন্ড করবো না। আড় চোখে তাকালে তো চোখ ব্যাথা করবে তোমার। তার পর আমাকে টাকা গুনতে হবে তোমার চোখ ঠিক করার জন্য।

–ইচ্ছে করে এমন করছে আমার সাথে এই বদ লোক। দাড়া দেখাচ্ছি মজা [মনে মনে]

নিশি রেহানের দিকে ফিরে বলে
–ঠিক আছে আর আড় চোখে আপনার দিকে তাকাবো না এবার ভালো করেই তাকাবো একে বারে সামনাসামনি।

নিশি রেহানের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এবার রেহানের কেমন জানি অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। এভাবে যদি কেউ কারোর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে তাহলে অস্বস্তি ফিল হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই রেহান নিশিকে বলে।

–নিশি অন্যদিকে তাকাও আমার ড্রাইভ করতে প্রবলেম হচ্ছে।
–বারে আপনিই তো বললেন আপনার দিকে ভালো করে তাকিয়ে থাকতে।
–তাকিয়ে থাকতে বলেছি বলে কি এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি।
–হে আমি এভাবেই তাকিয়ে থাকবো আপনি চুপচাপ গাড়ি ড্রাইভ করুন।
–নিশি ভালো হচ্ছে না কিন্তু পরে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে কিন্তু তোমার দোষ।
–গাড়ি আপনি চালাচ্ছে দুর্ঘটনা ঘটলে আপনার দোষ হবে। আর দুর্ঘটনা হবে কেন আপনি মনযোগ দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করলে দুর্ঘটনা হওয়ার কথা না।

নিশি কথাটা বলার সাথে সাথে রেহান জোরে গাড়ি ব্রেক করে। নিশির তো প্রান যায় যায় অবস্থা।

–আরে আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি এভাবে কেউ গাড়ি থামায় যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে।
–কিছু হয় নি তো।

এই কথাটা বলেই রেহান গাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ে। নিশি মনে মনে ভাবে
–এই রে বেশি বেশি করে ফেলেছি। যদি গাড়ি থেকে বের করে দেয় আমাকে তখন কি হবে।

নিশি চিৎকার করে বলে

–কি হলো গাড়ি থেকে বের হলেন কেন? আমি আর আপনাকে বিরক্ত করবো না প্রমিজ।

রেহান মুচকি হেসে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে

–তুমি বসো আমি ফল আর মিষ্টি কিনে নিয়ে আসি।
–ও আচ্ছা এর জন্য গাড়ি থেকে নেমেছেন।
–কেন তুমি কি ভেবেছিলে?
–কিছু না আপনি যান।
–গাড়িতে বসে থাকো আমি যাবো আর আসবো।
–আচ্ছা।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে