তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৩৯+৪০+৪১+৪২

0
482

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩৯ (বোনাস পর্ব) (প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য উন্মুক্ত)
#মেহরিন_রিম
অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটলো। উভয় পক্ষের সম্পতিতে কবুল বলার মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা। ফাইজা হয়তো একসময় ভাবতেই পারেনি এই দিন তার জীবনে আসবে। তবে ঐযে, তার ভাগ্যে হয়তো পূর্ণর নামটা অনেক আগে থেকেই লেখা ছিল। তাই তাদের পরিণতি টাও হয়েছে ততটাই সুন্দর।

পূর্ণর সঙ্গে তার বোন আসতে চেয়েছিল,তবে ছোট বাচ্চা থাকায় তার পক্ষে আসাটা সম্ভব হয়নি। আর পূর্ণ নতুন জামাই হিসেবে একা শশুর বাড়িতে থাকতেও ইতস্তত বোধ করছিল, তাই আদৃত আর সায়ান কেও থাকতে বলেছে। সায়ান আগে থেকেই রাজি ছিল কারণ ফাইজার বিয়ে উপলক্ষে মোহনাও এ বাড়িতেই আছে। তবে আদৃত কিছুটা আপত্তি জানিয়েছিল,পরবর্তীতে রুকসানা জোড় করায় আর কিছু বলতে পারেনি।

শালা শালিদের আবদার মিটিয়ে অবশেষে ঘরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় পূর্ণ। ঘড়ে ঢুকেই বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পূর্ণ। এরপর দড়জা লক করে বিছানার দিকে তাকায়। ঘরটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। বিছানার উপর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ আকা আর তার মধ্যে (F+P) লেখা। তার ঠিক পিছনেই হাটু ভাজ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে ফাইজা। মুখের উপর নাক অবধি লম্বা ঘোমটা টানা।
পূর্ণ স্মিত হেসে এগিয়ে যায়, ফাইজা সামনে বসে বলে,
_বিয়ে করলে যে এত ঝামেলা পোহাতে হয় সেটা জানলে ঠিকই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।

ঘোমটার আড়াল থেকেও ফাইজার হাসিমাখা মুখখানা সামান্য দেখা গেল। পূর্ন মুচকি হেসে তার ঘোমটা মাথার উপর তুলে দিতেই ফাইজাও ধীরে ধীরে তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। ঠিম তখনি পূর্ণ বলে ওঠে,
_আরে,তাকালে কেন?

ফাইজা অবাক হয়ে বললো,
_তো,কি হয়েছে?

_তুমি আবার নিচের দিকে তাকিয়ে থাকো।

ফাইজা কিছু না বলে আবারো আগের মতো নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। পূর্ণ এবার ধীরেধীরে তার থুতনি টে হাত দিয়ে মুখটা উপরে তুলে বললো,
_মাশাল্লাহ…এইযে এবার ঠিক আছে।

ফাইজা এবারো ফিক করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
_শুধু মাশাল্লাহ বললে চলবে না, নতুন বউয়ের মুখ দেখলে কিছু উপহার দিতে হয়।

_পুরো আমিটাই তো তোমার উপহার। যেকোনো ভাবে ইউজ করতে পারো আমাকে,আই ডোন্ট মাইন্ড।

_পূর্ন.. এসব বললে চলবে না,আমার উপহার দাও।

_আচ্ছা চোখ বন্ধ করে হাত পাতো।

ফাইজা পূর্ণর কথামতো চোখ বন্ধ করে হাত পাতলো। পূর্ণ বিছানা থেকে উঠে কিছু একটা এনে তার হাতে দিয়ে চোখ খুলতে বললো। ফাইজা হাসিমুখে চোখ খুললেও উপহার টি দেখে তার হাসি মিলিয়ে গেলো। চমকিত চোখে পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বললো,
_বই!

_হ্যা বই..আগের বইটা তো পড়েছিলাম ই। তাই এই নতুন বইটা,ভীষণ ইন্টারেস্টিং। আমি দু পেজ পড়েছিলাম, তারপর রেখে দিয়েছি। ভাবলাম বিয়ের দিন রাতে একসাথে পড়বো,ভালো হবেনা বলো?

ফাইজা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো,
_মানে আমরা সারারাত জেগে বই পড়বো?

_হ্যা,কোনো সমস্যা আছে?

ফাইজা দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় পূর্ণর দিকে। তারপর পূর্ণদ হাতটা টেনে বইটা ঠাস করে হাতের উপর রেখে বলে,
_নাহ কোনো সমস্যা নেই। তুমি পড়ো বই,আমার ঘুম পেয়েছে। আমি ঘুমোবো..

_আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমোও,এমনিতেও সারাদিন এ অনেক ধকল গেছে তোমার উপর দিয়ে।

ফাইজা এবার আরো বেশি অবাক হয়ে যায় তার সঙ্গে রেগেও যায়। ফাইজা চোখ সরিয়ে নেয় পূর্ণর থেকে। মাথায় থাকা ওড়নাটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে নেমে দাঁড়ায়। আবারো পূর্ণর দিকে তাকায়,তবে তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই। ফাইজা কটমট চোখে তার দিকে তাকিয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে গিয়ে টুলটা টেনে বসে পড়ে।
পূর্ণ এতক্ষন ঠোট কামড়ে নিজের হাসি আটকে রেখে ফাইজার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এখন তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়বে। হাতে থাকা চুড়িগুলো টেনে টেনে খুলছে আর ড্রেসিং টেবিল এর উপর ছুড়ে ফেলছে। গলার হারটা নিয়েও টানাটানি করছে তবে খুলতে পারছে না।

পূর্ণ এবার বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ফাইজার দিকে। ফাইজা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকায় পূর্ণর অবস্থান লক্ষ্য করেনি।
ফাইজা এখনো হারটা নিয়ে টানাটানি করছে। পূর্ণ মুচকি হেসে ওর হাতটা সরিয়ে দেয়। ফাইজা চোখ তুলে তাকায় আয়নার দিকে। পূর্ণর ঠোঁটের কোণে হাসি স্পষ্ট, ফাইজা ছোটছোট চোখে তাকিয়ে থাকে আয়নার দিকে। পূর্ণ সেকেন্ডের মধ্যেই হারটা খুলে এনে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দেয়। স্থির কণ্ঠে বলে,
_ম্যাডামের আমার উপর রাগ হয়েছে বুঝি?

_র রাগ হতে যাবে কেন?

পূর্ন নিজের চোখে থাকা চশমাটা খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দেয়। এরপর ফাইজার দু’কাধে হাত রেখে আয়নার দিকে তাকায়। দুজনেই এখন দুজনকে আয়নায় দেখতে পাচ্ছে। পূর্ণ বাকা হেসে বলে,
_চশমা পড়লে নাকি আমাকে ভীষণ ভদ্র ভদ্র লাগে, তাই ভেবেছি চশমা পরে সবসময় নিজের ভদ্র রুপটাই প্রকাশ করবো। তবে তোমার বোধ হয় আমার ভদ্র রুপটা পছন্দ হচ্ছে না।
কিছুটা ঝুকে আসে পূর্ণ। ধীরেধীরে ফাইজার খোপায় থাকা ক্লিপগুলো খুলতে শুরু করে,কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্লিপগুলো খুলেও ফেলে। এরপর আয়নার দিকে তাকিয়ে খোপাটা এক টানে খুলে ফেলে। কোমড় অবধি চুলগুলো ছড়িয়ে পরে,কিছুটা চুল সামনেও এসে পড়ে। পূর্ন সম্পূর্ন চুল একপাশে সরিয়ে ফাইজার ঘাড়ে মুখ ডোবায়,চোখ বন্ধ করে নেয় ফাইজা। পূর্ণ এবার ফাইজার কাণের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
_আমার অভদ্র রুপটা দেখতে চান ম্যাডাম।

ফাইজা আমতা আমতা করে বলে,
_আ আমি ব বলেছি কিছু?

_না বললে এখন বলো।

এক ঝটকায় পূর্ণকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় ফাইজা। অন্য দিকে ঘুড়ে বলে,
_বই পড়বে না তুমি?

পূর্ণ শব্দ করে হেসে ফাইজার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফাইজার গলা জড়িয়ে তাকে কিছুটা কাছে টেনে নিয়ে বলে,
_বই পড়া ছাড়াও অনেক ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে, সেগুলো আগে কমপ্লিট করা উচিৎ?

এবার আর কথা বলতে পারলো না ফাইজা। পূর্ণ দিকে তাকাতেও পারলো না,তাই নিজের আশ্রয় খুজে নিলো পূর্ণর বুকে। মুচকি হাসে পূর্ন, অত:পর তার প্রেয়সী কে জড়িয়ে নেয় নিজের সঙ্গে। আজ রাতটা নাহয় তাদের নামেই হোক।

____
সোফায় সারিবদ্ধভাবে বসে আছে আদৃত,সায়ান, ফায়াজ। আর তার অপর পাশেই বসে আছে ইশা আর মোহনা। ঝামেলা হয়েছে এখানেই, ছেলেরা তিনজন আর মেয়েরা দুজন। ছেলেদের দলে একজন বেশি হয়ে যাচ্ছে।

ফায়াজ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
_তোরা খেল,আমি বরং ঘুমোতে যাই হ্যা।

ইশা দোড়ে গিয়ে ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে বলে,
_না না না,আজকে তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না। সেই তো ভাবির সাথেই কথা বলতে যাবে। একদিন কথা না বললে কিছু হবে,এসো এখানে।

_কিন্তু মেম্বার তো মিলছে না।

_কোনো সমস্যা নেই,তুমি থাকবে নিরপেক্ষ দলে। আর নাহলে ছেলেদের দলেই থাকো। আমরা মেয়েরা দুজন ই যথেষ্ট। তাইনা মেহু?

মোহনা উচ্চস্বরে বলে,
_ইয়েস ইয়েস।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৪০
#মেহরিন_রিম
_বসলাম তো। এবার বল কি খেলবি?
ইশা টি টেবিল থেকে অনেকগুলো চিরকুট হাতে নিয়ে বললো,
_এইযে এগুলোর মধ্যে একেকটা টাস্ক লেখা আছে। যার ভাগ্যে যেটা পড়বে তাকে সেটাই করতে হবে।

আদৃত বিরক্ত হয়ে বলে,
_এসব বাচ্চাদের খেলায় আমি নেই।

ইশা ভেংচি কেটে ভাব দেখিয়ে বলে,
_কেউ আগে থেকেই পালিয়ে যেতে চাইলে সমস্যা নেই।

_ওহ হ্যালো,আমি পালিয়ে যাচ্ছি না ওকে। ঠিক আছে খেলবো আমিও।

মোহনা এবার বলে ওঠে,
_ঠিক আছে ফার্স্ট এ ফায়াজ ভাইয়া। বড় থেকেই শুরু হোক।

ফায়াজ একটা চিরকুট তুললো। ইশা সেটা নিয়ে জোড়ে জোড়ে পড়লো,
_এখানে লেখা আছে সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াও। ভাইয়া, এবার আমাদের আইসক্রিম খাওয়াতে হবে। হি হি..

_এটা কিন্তু ঠিক নয়।

মোহনা বললো,
_কেন ঠিক নয় হ্যা? লেখা আছে যখন খাওয়াতেই হবে।

_আচ্ছা বাবা কালকে খাওয়াবো। এখন আমি বাইরে যেতে পারবো না।

সবাই রাজি হলো। এবার চিরকুট ওঠাবে ইশা। ইশা চোখ বন্ধ করে একটা চিরকুট তুললো। আদৃত সেটা ওর হাত থেকে নিয়ে পড়তে লাগলো,
_ড্যান্স করতে হবে।

ইশা খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো,
_এটাতো আমার জন্য কোনো ব্যাপার ই না।

মোহনা হতাশ হয়ে বললো,
_তুই এত সহজ টা পেয়ে গেলি।

আদৃত ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_সিঙ্গেল নয় ডুয়েট ড্যান্স।

সায়ান পাশ থেকে বলে ওঠে,
_ওমা ইশা, এবার তোমার পার্টনার কে হবে?

ইশা মুচকি হেসে বললো,
_এক মিনিট ওয়েট করো।

কথাটা বলেই ইশা ওর ঘড়ে গিয়ে ওর সাইজের একটা টেডি নিয়ে এসে বললো,
_এইযে আমার টিংটিং..আমার পার্টনার।

সবাই একসঙ্গে বললো,
_এটা!

_হ্যা..তোমরা শুধু দেখতে থাকো।
কথাটা বলে ইশা টেডিটা সোফার উপর রেখে ওড়না কোমড়ে বেধে নাচার জন্য উদ্যত হলো। ফোন হাতে নিয়ে
“আমি যে তোমার,শুধু যে তোমার” গানটা চালিয়ে দিয়ে টেডির সঙ্গে নাচতে লাগলো।

সবাই ওর নাচ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। টেডিকে পার্টনার বানিয়ে এত সুন্দর করে কি করে নাচছে ইশা!
ইশার নাচ শেষে সবাই হাততালি দিলো। সায়ান অবাক হয়ে বললো,
_তুমি কি আগে থেকে প্রাকটিস করে এসেছিলে নাকি?

ফায়াজ হাসতে হাসতে বলে,
_ও তো ঘরে বসে এই কাজই করে।

_ভাইয়া…

সবাই হাসতে লাগলো এবার। ইশা সোফায় বসে চিরকুটগুলো আদৃত এর দিকে এগিয়ে দিলো। আদৃত এবার একটা হাতে নিয়ে নিজে থেকে ইশার দিকে দিলো। ইশা সেটা হাতে নিয়ে পড়ে,
_প্রেমিক/প্রেমিকাকে কিভাবে প্রপোজ করেছো বা করবে?

সায়ান বেশ উৎসাহিত হয়ে বলে,
_একদম পারফেক্ট। আদি অ্যাকটিং করে দেখা এবার।

আদৃত ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
_আমি কখনো কাউকে প্রপোজ করিনি আর করবো ও না।

ইশা অবাক হয়ে বলে,
_কেন?

আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলে,
_কারণ আমি যাকে ভালোবাসি তাকে সরাসরি বিয়ে করবো। সো, এই টাস্ক বাদ।

সায়ান আফসোস এর সুরে বলে,
_বাদ দাও ইশা,ওকে দিয়ে এসব হবেনা।

ইশাসহ উপস্থিত সবাই হাসতে শুরু করে। আদৃত একদৃষ্টিতে ইশার সেই মনভোলানো হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। পরক্ষণেই আদৃতের ঠোঁটে থাকা হাসিটা মিলিয়ে যায়। ইশার ঠোঁটের এই হাসিটাও হয়তো আর খুব বেশি সময় থাকবে না, কাল সকালে যা হবে তারপর হয়তো এই হাসিটা দীর্ঘসময় ধরে তার মুখে দেখা যাবে না। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আদৃত, ইশার কষ্ট হলেও সত্যিটা তাকে জানতে হবে।

_____
সকলে একসাথে সকালে নাস্তা শেষ করেছে। ছেলেরা সকলে সোফায় বসে আছে আর মেয়েরা কেউ কেউ রান্নাঘরে আর কেউ কেউ ডাইনিং টেবিলে বসে গল্প করছে।
পূর্ণ একনজর আদৃতের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করে। আদৃত ও তাতে হ্যা সূচক জবাব দেয়। পূর্ণ এবার উঠে দাঁড়িয়ে রান্নাঘর এর দিকে এগিয়ে বলে,
_আম্মু,কাকি একটু ড্রইং রুমে আসবেন প্লিজ। ইশা,ফাইজা তোমরাও এসো।

পূর্ণর সঙ্গে সবাই ড্রইং রুমে এসে দাঁড়ালো। জাফর,জহির আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রুকসানা পূর্ণর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো,
_কি হয়েছে পূর্ণ? সবাইকে এক যায়গায় জড়ো করলে যে? কিছু বলবে?

_জি কাকি,ফাইজা তুমি এদিকে এসো।

ফাইজা এসে পূর্ণর পাশে দাঁড়ায়। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় পূর্ণর দিকে তবে সে তাকায়নি। পূর্ণ আদৃতের দিকে তাকাতেই আদৃত উঠে দাঁড়িয়ে কাউকে কল করে বলে,
_নিয়ে এসো ওকে।

সবাই অবাক হয়ে ওদের কাজ দেখছে। দু মিনিটের মধ্যেই আদৃতদের বয়সী একটা ছেলে আরেকটা ছেলের ঘাড় ধরে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। পূর্ণ ওকে সামনে এনে বলে,
_ও হচ্ছে রিয়াজ, এখন পর্যন্ত পাঁচবার জেল খেটে বেড়িয়েছে।

ছেলেটা ফাহমিদার দিকে একনজর তাকায়। ফাহমিদা কাপাকাপা গলায় পূর্ণর উদ্দেশ্যে বলে,
_ও ও এখানে কি করছে?

_কেন আম্মু,চেনেন নাকি ওকে?

ইশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিল। তা দেখে আদৃত বলে,
_ইশা,তুমি চেনো ওকে?

_বোধ হয় রাস্তায় অনেকবার দেখেছি।

পূর্ন এবার ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে,
_দেখার ই কথা,এতদিন ধরে ফলো করছে তোমায়।

জহির আতঙ্কিত হয়ে বলে,
_ফলো করছে মানে? ও ইশাকে কেন ফলো করবে?

_নিজে থেকে নয়,কারোর কথায়। (আদৃত)

জাফর এবার ওদের মাঝে বলে,
_তোমরা কি বলছো একটু স্পষ্টভাবে বলবে?

_সেটা হয়তোবা অন্য কেউ ভালো বলতে পারবে। (পূর্ণ)

সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফাহমিদা আতঙ্কিত স্বরে বলে ওঠে,
_আমি চিনিনা ওকে,চিনিনা।

পূর্ণ বাঁকা হেসে বলে,
_আমি কি বলেছি আপনি ওকে চেনেন?

উপস্থিত কারোর মাথায় এইসব কিছুই ঢুকছে না। রিয়াজ নামের ছেলেটা পূর্ণ কাছে গিয়ে হাত জোড় করে বলতে থাকে,
_আমি কিছু করিনি স্যার, এই (মাহমিদা) মহিলা আমাকে যা করতে বলেছে আমি তাই করছিলাম শুধু।

_কি করতে বলেছে উনি তোমায়? (আদৃত)

_উনি বলেছে এই মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে কোথাও গুম করে ফেলতে যেন কেউ খুজে না পায়। তাই জন্যই তো ও কোথায় কোথায় যায় সেগুলো ফলো করেছি।

সকলে বিস্ফোরিত চোখে ফাহমিদার দিকে তাকায়। ফাহমিদা মাথা নিচু করে নিজের নজর লুকোনোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। রুকসানা চোখ বড়বড় করে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ভাবী ও কি বলছে এসব?

পূর্ণ এবার কিছুটা কড়া গলায় বলে,
_আপনি কি সবটা বলবেন আম্মু নাকি আমি বলবো?

ফাহমিদা কটমট চোখে পূর্ণর দিকে তাকায়,তবে কোনো উত্তর দেয়না। পুর্ণ এবার বলে,
_বেশ উনি যখন বলবেন ই না তখন আমিই বলছি। ওনার ইচ্ছে ছিলো ফায়াজ ভাইয়ার সঙ্গে ইশার বিয়ে দেবেন, ফলে কাকার সব সম্পত্তি দিনশেষে ফায়াজ এর ই হয়ে যাবে। কিন্তু ওনার পরিকল্পনা সফল হয়নি, যার ফলে ওনার মাথায় চিন্তা ঢুকে যায়। কাকার যেহেতু কোনো ছেলে নেই,তাই তার সম্পত্তির কিছু ভাগ ফায়াজের এমনিতেই পাওয়ার কথা। কিন্তু ওনার তাতে চলবেনা ওনার চাই সবটা। তাই উনি ইশাকেই সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেন।

ফাহমিদা পূর্ণর কথা মাঝে বলে ওঠে,
_হ্যা হ্যা বেশ করেছি। একটা বাইরের মেয়ে কেনো সবকিছু পেয়ে যাবে?

ইশা বড়বড় চোখে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ব বাইরের মেয়ে মানে?

_হ্যা বাইরের মেয়ে। ইশা তো আমাদের পরিবার এর ই কেউ নয়। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে ও, আর ও কিনা এত সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে?

রুকসানা আতঙ্কিত চোখে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ভ ভাবী আপনি কিসব আজেবাজে কথা বলছেন? ভ ভাইয়া আপনি ভাবিকে নিয়ে যান এখান থেকে।

_সত্যি কথা তো আমি বলবোই। নিজের কখনো সন্তান হবেনা বলেই তো রাস্তা থেকে এই মেয়েকে তুলে এনেছিলে।

_ভাইয়া আপনি দয়া করে ভাবীকে এখান থেকে নিয়ে যান…আমি আপনার পায়ে পরছি।

জাফর কড়া চোখে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে তাকে নিয়ে ঘড়ে চলে যায়।
আদৃত এতক্ষন কেবলই ইশার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এত বড় একটা সত্যি কি ও সহ্য করতে পারবে? আদৃত চোখ সরিয়ে নেয়,ইশার দিকে এই মুহূর্তে তাকিয়ে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।

ইশা রুকসানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে,
_আম্মু,কাকি এগুলো কি বলে গেলো?

রুকসানা ইশার গায়ে হাত বুলিয়ে বলে,
_ওসব কথায় কান দিসনা মা। ত তুই আমার মেয়ে, আমার মেয়ে তুই।

ইশা রুকসানার হাতটা নিজের মাথার উপর রেখে বলে,
_সত্যিটা বলো আম্মু। আমি কি তোমাদের মেয়ে নই?

রুকসানা এবার মুখ চেপে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। ইশার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। তবে তার চোখে একফোঁটা ও পানি নেই। ফাইজা নিজেও এতক্ষনে কাঁদতে শুরু করেছে। পূর্ণ তাকে চোখের ইশারায় কিছু বোঝাতেই সে ইশার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
_এসব কথা মনে রাখিস না বোন। তুই ছোট আম্মু আর ছোট আব্বুর ই মেয়ে।

ইশা ফাইজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পাথর এর ন্যায় জহির সাহেব এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

_বাবাই, আমার আসল বাবা মা কে?

জহির সাহেব নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন। ইশা এবার কিছুটা উচ্চস্বরে বলো,
_বলছো না কেন? বলো আমার আসল বাবা মা কে?

রুকসানা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলে,
_আমরা জানিনা মা। আমরা শুধু এইটুকুই জানি তুই আমাদের মেয়ে।

চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পরে ইশার। তার নিজের বাবা মা কে তা সে জানেনা। এতবছর ধরে যাদের নিজের বাবা মা বলে জেনে এসেছে তারা ওর নিজের মা বাবা নয়। বিষয়টা মেনে নেওয়া কি খুব সহজ?
কয়েক সেকেন্ড সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ইশা। এরপর ছুটে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। ফাইজা ওকে আটকাতে গেলে আদৃত বাধা দিয়ে বলে,
_যেওনা ফাইজা, ইশার এখন কিছুক্ষন একা থাকা প্রয়োজন।

পূর্ণ এই বিষয়টা আগে থেকে জানতো না। তবে আদৃত কে দেখে মনে হলো সে এসব আগে থেকেই জানে, কিন্তু কি করে?

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৪১+৪২
#মেহরিন_রিম
সকাল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। আলোর আভা কমে গিয়ে ক্রমশ অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ। তবে ইশার মনে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে আরো অনেক্ষন আগে। সেইযে সকাল বেলা ঘরে ঢুকেছে, এখন পর্যন্ত সবাই শত চেষ্টা করেও তাকে বের করতে পারেনি। রুকসানা এতক্ষন ধরে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পরছেন। জাফর আর ফাহমিদা আরো আগেই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন, ফায়াজ তাদের বের করে দিয়েছে বললেই চলে। বাবা মায়ের কার্যকলাপে লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে। রুকসানা আর জহির এর সামনে যাওয়ার সাহসটুকুও পাচ্ছে না।

সকলের চেষ্টাই বৃথা যাচ্ছে। সবাই অনেককিছু বলে ইশাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে শুধু আদৃত বাদে। সেও এতকিছুর মাঝে নিরবতা পালন করছে। সোফায় বসে গম্ভীর ভঙ্গিতে কিছু ভেবে চলেছে। পূর্ণ এসে তার কাধে হাত রাখতেই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে পিছনে তাকায় সে।
পূর্ণ আদৃত এর পাশে বসে বলে,
_আই থিংক,তোর এবার ইশাকে সত্যিটা জানানো উচিৎ। এতটা যখন জেনেই গেছে তাহলে বাকিটাও জানুক।

আদৃত চুপ করে রইলো। পূর্ণ আবারো তার কাধে হাত রেখে বললো,
_যা আদি।

আদৃত এবার একনজর পূর্ণর দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পা বাড়ালো ইশার ঘরের দিকে।
সেখানে রুকসানা,ফাইজা বারবার দড়জায় ধাক্কা দিচ্ছেন, তবে ইশা কোনো কথাই বলছে না। মাঝখানে শুধু একবার বলেছিল,
_তোমরা চলে যাও এখান থেকে।

আদৃত এর পিছনে পূর্ণ ও এসেছিল। পূর্ণ ফাইজাকে চোখের ইশারা করতেই সে রুকসানা কে নিয়ে কিছুটা পাশে সরে যায়।
আদৃত দড়জার সামনে গিয়ে হালকা টোকা দিয়ে বলে,
_ইশা, আমার তোমাকে কিছু বলার আছে। দড়জাটা খোলো প্লিজ।

দড়জা খুললো না ইশা। আদৃত এবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
_ইশা, তুমি তোমার মায়ের কাছে যেতে চাও?

ইশা এতক্ষন দড়জার পাশেই হাটুতে মুখ গুজে বসেছিল। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে এখন। তবে আদৃত এর শেষ কথাটা শুনতেই মাথার টনক নড়ে ওঠে তার। দ্রুতগতিতে উঠে দাঁড়িয়ে দড়জা খুলে দেয় সে।
আদৃত জানতো ইশা এবার দড়জা খুলবেই,তবে ইশার দিকে তাকাতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে তার। এতটা বিদ্ধস্ত অবস্থায় কখনো ইশাকে দেখতে হবে এটা কল্পনাও করে নি সে।
ইশাকে দড়জা খুলতে দেখেই রুকসানা তার কাছে যেতে চাইলে পূর্ণ তাকে আটকে দেয়। মাথা নাড়িয়ে বোঝায় এখন ওর কাছে যাবেন না।
ইশা আদৃত এর দিকে তাকিয়ে এলোমেলোভাবে বলে,
_আপনি জানেন আমার মা কে? নিয়ে চলুন না আমাকে তার কাছে। আমি শুধু একবার দেখবো তাকে।

আদৃত চোখ সড়িয়ে নেয় ইশার থেকে। ক্ষীণ স্বরে বলে,
_সত্যি তুমি দেখতে চাও।

_হ্যা চাই।

_বেশ তাহলে চলো আমার সাথে।

কথাটা বলে আদৃত ইশার হাত ধরে ওকে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। ইশা কিচ্ছু বলছে না,শুধু আদৃত এর সঙ্গে হেটে চলেছে। যেন কোনো ঘোরের মধ্যে আছে সে।
আদৃত ইশাকে গাড়িতে উঠতে বললে সে তাৎক্ষণিক গাড়িতে উঠে বসে। আদৃত ও এবার ড্রাইভিং সিট এ বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আকাশ এখন পুড়োপুড়িই অন্ধকারাচ্ছন্ন। চাঁদের খুব সামান্য অংশই দৃশ্যমান।

দুজনের মধ্যে কোনো কথা নেই। আদৃত নির্বাক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, আর ইশা উৎকণ্ঠা মনে অপেক্ষা করছে তার মাকে দেখার জন্য।
খুব বেশি সময় চললো না গাড়ি, পাঁচমিনিট পরেই গাড়ি এসে থামলো সেই আশ্রমের সামনে। ইশার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আদৃত এর দিকে। তার চোখের চাহনিতে এই প্রশ্ন স্পষ্ট,”আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন?”

আদৃত গাড়ি থেকে নেমে ইশাকেও নামতে বললো। ইশা অবাক চোখে আদৃতের দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। আদৃত এবার বেশ শক্ত করে ইশার হাত ধরলো।
এরপর যেদিকে নিয়ে গেলো তা ইশার জন্য একদমই অপরিকল্পিত ছিল। আশ্রমের পাশেই ছোট একটি কবরস্থান। মূলত এই আশ্রমে থেকে যারা মারা যায়,যাদের পরিবার বলে কিছু নেই তাদের এখানে কবর দেওয়া হয়।

এই যায়গায় ইশা আগেও একবার এসেছে,সেদিনও আদৃত তার সঙ্গেই ছিল।
গত দু মাস আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন আয়শা। এটা জানতে পারার পরই ইশা আদৃত এর সঙ্গে এসেছিল এখানে, আয়শাকে ভীষণ আপন মনে হতো ইশার। তাকে হারিয়ে মনে হয়েছিল যেন নিজের খুব আপনজনকে হারিয়েছে, কে জানতো তার ধারণা আসলেই সত্যি হবে?

আজও সেই একই কবরের সামনে এনে দাঁড়ালো আদৃত। এবার মুখ খুললো ইশা। আদৃতের দিকে তাকিয়ে কাপাকাপা গলায় বললো,
_আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? আপনি তো বললেন আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন।

_…

_চুপ করে আছেন কেন? নিয়ে চলুন না আমার মায়ের কাছে।

আদৃত চোখ তুলে ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_যার কাছে আসতে চেয়েছিলে তার কাছেই নিয়ে এসেছি তোমায়।

ইশা বিস্ফোরিত চোখে আদৃত এর দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই আয়শার কবরের দিকে তাকালো। কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হ্রাস পেতেই সেই জায়গায় বসে পড়লো ইশা। আদৃত এখনো নির্বাক। বেশ কয়েক মিনিট এভাবেই অতিবাহিত হলো। এবার আদৃত দীর্ঘশ্বাস ছেড়েই বলতে লাগলো,
_আন্টি যখন হসপিটালে এডমিট ছিলেন তখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। আমি খবর পেয়েই ছুটে যাই সেখানে,আর তখন ই তিনি আমায় সব সত্যিটা জানান।
___
আদৃত আয়শার বেড এর পাশে একটা চেয়ারে বসে ছিল। আয়শা সেই মুহূর্তে বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলেন তার হাতে আর বেশি সময় নেই। আদৃত এর হাত ধরে তিনি বলতে শুরু করেন,
_এই কথাগুলো আমি কাউকে জানতে দেইনি বাবা, আজ তোমায় বলছি। আমার মতো খারাপ মা বোধহয় পৃথিবীতে দুটো নেই, যেই পাপ কাজ আমি করেছি তার জন্য হয়তো ওপারে আমাকে অনেক শাস্তিও পেতে হবে। তবে বিশ্বাস করো,আমি আমার সন্তানের ভালোর জন্যই এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমার স্বামী যখন আমাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়, তখন ছুটে গিয়েছিলাম বাপের বাড়িতে। সেখানেও ঠাই হয়নি আমার, দুরদুর করে তাড়িয়ে দেয় আমায়। রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে শুরু করি,তার কয়েকদিন এর মধ্যেই বুঝতে পারি আমার মধ্যে আরো একটা প্রাণ আছে। নিজের জন্য না হলেও সেই ছোট্ট প্রাণ এর জন্য যে আমায় বাঁচতেই হতো। ভিক্ষা করে তা সম্ভব ছিলোনা, মানুষের বাড়িতে কাজ করতে শুরু করি। তবে সময় পেরোনোর সাথে সাথে তাও আমার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবারো সেই রাস্তায় বসে ভিক্ষা করতে হয়, আর এভাবেই কেটে যায় নয় মাস। আমার কোলজুড়ে আসে এক ফুটফুটে মেয়ে। কেউ দেখলে বুঝবেই না এ যে এক রাস্তার ভিখারির মেয়ে। নিজে খাওয়া দাওয়া না করতে পারায় মেয়ে আমার বুকের দুধ পেতোনা, ওকে যে বাহিরের দুধ কিনে খাওয়াবো তাও সম্ভব ছিলোনা। খিদের জন্য মেয়ে আমার সারাদিন কাঁদত,ওর এই কান্না আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব ছিলোনা। এরই মধ্যে একদিন খোজ পাই এক দম্পতীর, আমার পাশেই দাঁড়িয়ে এক লোকের কাছে বলছিল তারা বাচ্চা দত্তক নিতে চায়। লোভ সামলাতে পারিনি আমি, আমার মেয়ে একটা ভালো পরিবার পাবে। সুখের কোনো কমতি থাকবে না তার। তবে আমি তাদের নিজের পরিচয় জানাতে চাইনি,আমি চাইনি আমার মেয়ে আমাকে কখনো খুজে পাক। সেই আপু রোজ এক জায়গা থেকে বাড়ি ফিরতেন, আমি একদিন ওনাকে দেখতে পেয়ে রাস্তার পাশে আমার মেয়েকে রেখে দূড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। যখন আমি ওকে রেখে আসছিলাম,মেয়েটা আমার চিৎকার করে কাঁদছিল। বুকে পাথর চেপে আমি লুকিয়ে ছিলাম সেদিন। আমার পরিকল্পনাই সত্যি হলো, আপু আমার মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলেন। হয়তো অনেক খোজ করেছেন আমার,কিন্তু পাননি। অবশেষে মেয়েটাকে তিনি নিজের কাছেই রেখে দিলেন, তিনিও মা হতে পারলেন আর আমার মেয়েটাও একটা সুন্দর জীবন পেলো।

আদৃত এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে আয়শার কথা শুনছিল। তবে আয়শা এসব কথা তাকে কেন বলছেন সেটা বুঝতে পারছিল না। আয়শা কিছুক্ষন থেমে রইলেন, এরপর আদৃত এর দিকে তাকিয়ে বললেন,
_ইশা যেদিন দ্বিতীয়বার আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল সেদিন ওর বাম পায়ের জোড়া আঙুল দেখে বুক কেপে ওঠে আমার। মনের সন্দেহ থেকে ওর ডান হাতের কব্জির কিছুটা উপরে থাকা জন্ম দাগের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠি আমি। তবুও আমার মনে সন্দেহ ছিল, তবে সেই সন্দেহও কেটে যায় যেদিন ও ওর মাকে নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে।

আদৃত অবাক হয়ে বলে,
_আপনি বলতে চাইছেন..

_হ্যা বাবা। ইশার জন্মদাত্রী মা আমি, আমার নাড়িছেঁড়া ধন ও। তোমায় এই কথাটা জানিয়ে রাখলাম। তবে আমি জীবিত থাকা অবস্থায় এটা ইশাকে জানতে দিওনা। আমার মৃত্যুর পরে যদি ও কখনো সত্যিটা জানতে পেরে নিজের মায়ের খোজ করে,তবে ওকে জানিও সবটা। ওকে বলো, পারলে যেন এই মাকে ক্ষমা করে দেয়।

____
চোখ বন্ধ করে নেয় ইশা। মুহূর্তেই যেন তার মনের মাঝে তীব্র রাগ ভর করে। উঠে দাড়িয়ে আদৃতের সামনে যায়। ওর শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
_আপনি আমায় কথাগুলো আগে জানাননি কেন?

_আন্টি নিষেধ করেছিল..

_ওনার কথা কেন শুনবেন আপনি? কেন?

হঠাৎ করেই মুখের রাগী আভা কেটে গেলো ইশার। করুণ স্বরে বললো,
_কেন বললেন না আদৃত? আমিতো একবার নিজের মা কে ‘মা’ বলে ডাকতে পারতাম। তাকে জড়িয়ে ধরতে পারতাম। আপনি ভুল করলেন,অনেক বড় ভুল।

ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো ইশা। এই চোখের জলের সঙ্গে যদি কষ্টগুলো ও জীবন থেকে চলে যেত!
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আদৃত, ইশার দিকে এগিয়ে এসে আলতো হাতে তাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সঙ্গে। আদৃতের বুকে মাথা রেখে আরো জোড়ে কেঁদে ওঠে ইশা। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
_কেন বললেন না আমাকে,কেন..

চোখ বন্ধ করে নেয় আদৃত। মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা যেদিন নিজের মায়ের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিল সে। আজ তো ইশার পাশে আদৃত আছে, কিন্তু সেদিন তো আদৃতের পাশে কেউ ছিলোনা। আচ্ছা, ইশার কষ্টটা কি আদৃতের চেয়েও বেশি?

বেশ কিছুক্ষন সময় কেটে যায়। ইশার কান্নার রেশ ও কমে আসে কিছুটা। আদৃত ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
_ইশা,বাসায় যেতে হবে এবার।

আদৃত ইশাকে আলগা ভাবেই ধরেছিল। তাই ইশা খুব সহজেই তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারে। এরপর আয়শার কবরের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলে,
_আর কিছুক্ষন থাকি?

ইশার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় আদৃত। থাকুক আরো কিছুক্ষন,তাতে যদি ইশার কষ্ট কিছুটা কমে।

____
রুকসানা কে আয়শার ব্যাপারে সব কথা পূর্ণ ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। সবাই এখন ড্রইং রুম এ বসে ইশার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে।
কলিং বেল এর আওয়াজ পেয়ে ফাইজা ছুটে গিয়ে দড়জা খুলে দেয়। আদৃত ওকে চোখের ইশারায় বলে ইশাকে ভিতরে নিয়ে যেতে। অতিরিক্ত কান্নাকাটির ফলে চোখমুখ ফুলে গেছে ইশার। ফাইজা ওকে নিয়ে এসে সোফায় বসাতেই রুকসানা ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। ইশার আর এখন কান্না পাচ্ছেনা, প্রায় এক ঘন্টা টানা কান্না করেছিল তাই হয়তো এমন হচ্ছে। রুকসানা নিজের চোখ মুছে বলেন,
_ইশা মা, তুই সেই সকাল থেকে কিছু খাসনি। এবার অন্তত কিছু খেয়ে নে,শরীর খারাপ করবে তো।

_আমার খিদে নেই।

ইশা সোফা থেকে উঠে ধীর পায়ে নিজের ঘরে চলে যায়। রুকসানা এবার জহির এর সামনে গিয়ে বলেন,
_ইশা আমাকে আম্মু বলে ডাকছেনা কেন? তুমি একটু ওকে গিয়ে বলোনা আমাকে আম্মু বলে ডাকতে।

কথাটা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রুকসানা। আদৃত এবার নিরবতা ভেঙে বলে,
_আঙ্কেল আপনি আন্টি কে নিয়ে ঘড়ে যান। আর ফাইজা তুমি ইশাকে গিয়ে কিছু খাইয়ে দেও,না খেতে চাইলে জোড় করে খাওয়াও।

কথাটা বলে গেস্ট রুমের দিকে চলে যায় আদৃত,কালকেও সায়ান আর ও এই রুমেই ছিল।

_____
_আসতে পারি?

আদৃত এর কথায় ফাইজা এসে ইশাকে জোড় করে সামান্য কিছু খাইয়ে দিয়েছিল। তারপর অনেকটা সময় পেড়িয়ে গেছে। এখন ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁইছুঁই। ইশা নিজের বিছানায় হাটুতে মুখ গুজে বসে ছিল,দড়জাটা লাগানো হয়নি। দড়জায় নক পেয়ে ইশা চোখ তুলে তাকিয়ে আদৃতকে দেখতে পায়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
_আসুন।

আদৃত ভিতরে এসে বিছানার একপাশে বসে পড়ে। ইশা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
_এত রাতে আমার ঘরে? কিছু বলবেন?

আদৃত তাকায় ইশার দিকে। স্মিত হেসে বলে,
_তোমাকে একটা ছেলের স্টোরি বলবো। শুনবে?

ইশা বেশ উৎসাহ নিয়ে মাথা নাড়ে। আদৃত বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে,
_চার বছরের একটা ছেলে, সারাদিন মায়ের পিছনে ঘুরে বেড়াতো। সবাই বলতো একদম মায়ের নেওটা। নিজের আপন বলতে ছেলেটা শুধু নিজের মাকেই ভাবতো। কারণ বাবার আদর সে পায়নি বললেই চলে। এমন না যে বাবা দূড়ে থাকতেন। বাবা খুব কাছেই ছিলেন, একই বাড়িতে থাকতেন। তবে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে। ছেলেটা একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে তার বাবাও তাকে আদর করা শুরু করে,এর কারণও আছে বটে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। ফলে সারাজীবন যেই স্ত্রী কে অবহেলা করেছেন, অত্যাচার করেছেন তার প্রতি খুব ভালোবাসা বেড়ে যায়। তবে ঐযে, ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দা লাস্ট ইম্প্রেশন। সেই ছেলেটার ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল, বাবা আদর করতে চাইলেও তার কাছে যেতোনা ছেলেটা। তার জন্য তার মা ই যথেষ্ট ছিল। আর আল্লাহ ছেলেটার কাছ থেকে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকেই কেড়ে নিলো।

ইশা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো আদৃতের কথা। আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
_ছেলেটা কে জানতে চাও?

ইশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। আদৃত কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
_ছেলেটা বর্তমানে তোমার সামনে বসে আছে।

ইশা অবাক চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে আদৃত এর দিকে। এরপর নরম সুরে জিজ্ঞেস করে,
_কি হয়েছিল আন্টির?

_ক্যান্সার, চেষ্টা করা হয়েছিল বাঁচানোর তবে সম্ভব হয়নি।

আদৃত আর ইশা দুজনেই চুপ করে থাকে কিছুক্ষন। এরপর আদৃত নিজে থেকেই বলে,
_তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমি সেদিন কলেজ এর প্রোগ্রামে কাকে দেখে অমন রিয়েক্ট করেছিলাম?

_হ্যা।

_বাবার দ্বিতীয় ওয়াইফ। শুনেছিলাম তিনি আবার বিয়ে করেছেন,হয়তো তার মেয়েকে নিয়েই এসেছিল।

আবারো নিরবতা ভর করে দুজনের মাঝে। কিছুক্ষন পর আদৃত মৃদু হেসে বলে,
_তোমাকে এতকিছু কেন বলছি জানো?

ইশা মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দেয়।

_বাস্তবতা উপলব্ধি করানোর জন্য। এই মোমেন্ট এ হয়তো তোমার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে দুঃখী। তবে বাস্তবে তেমনটা নয়, তোমার চেয়ে অনেক দুঃখী মানুষ এই পৃথিবীতে আছে। অনেকের মা বাবা নেই। আবার অনেকের থেকেও নেই,যেমন আমি। একটা কথা বলো তো, আঙ্কেল আন্টির ব্যাবহার এ তোমার কখনো এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়েছে তুমি তাদের মেয়ে নও?

_নাহ..

_ইশা,ওনারা তোমার নিজের মা বাবা নয়। তবুও তুমি ওনাদের থেকে যে ভালোবাসা টা পেয়েছো আমিতো আমার নিজের বাবার থেকেও তা পাইনি। তুমি তো অনেক ভাগ্যবতী যে এমন একটা পরিবার পেয়েছো।

ইশা চুপ করে রইলো। আদৃত আবারো বলে,
_একটা কথা মাথায় রেখো, তুমি হচ্ছো এই বাড়ির মেইন এনার্জি। তুমি হাসিখুশি থাকলে সবাই ভালো থাকে, একবার আন্টির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেছো তার কি অবস্থা হয়েছে? তুমি জেনে শুনে তাদের এতটা কষ্ট দেবে?

ইশা মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দেয়।

_তাহলে জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করো। যারা তোমার আশেপাশে আছে তাদের নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করো।… রাত হয়েছে,ঘুমিয়ে পরো এখন। গুড নাইট।

_____
সবার সকালের ব্রেকফাস্ট করা শেষ, তবে ইশা আসেনি। ফাইজা একবার ঘরে গিয়ে দেখেছিল ও ঘুমোচ্ছে তাই আর ডাকেনি। রুকসানার সঙ্গে হাতেহাতে কাজ করে দিচ্ছে ফাইজা। আর আদৃত,পূর্ণ জহির এর সঙ্গে সোফায় বসে আছে। ফায়াজ ও ওদের সঙ্গেই ছিলো। আদৃত চুপচাপ বসে কিছু নিয়ে চিন্তা করছে, আদতেও কি ওর বলা কথাগুলো কাজে দেবে?

আরো পাঁচমিনিট যেতেই ইশা চোখ ডলতে ডলতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে তার চিরচেনা ভঙ্গিতে বললো,
_আম্মু খিদে পেয়েছে,খেতে দাও কিছু।

রুকসানা ফাইজা সহ উপস্থিত সকলে চমকিত চোখে ইশার দিকে তাকালো। রুকসানা মুখ চেপে ধরে নিজের কান্না নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন, ইশাকে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেই ইশা বেশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
_আদর করার অনেক সময় পাবে আম্মু,পালিয়ে যাচ্ছিনা আমি। এখন আমায় খেতে দাও।

রুকসানা চোখ মুছে ইশার জন্য খাবার আনতে গেলেন। ফাইজা অবাক হয়ে ইশার পাশে এসে বলে,
_কি ব্যাপার বলতো ইশা, হুট করে তুই স্বাভাবিক কি করে হয়ে গেলি?

ইশা ঘাড় ঘুড়িয়ে সোফায় বসে থাকা আদৃত এর দিকে তাকায়। আদৃত ও তখন তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ইশা সামান্য হেসে বলে,
_জানিনা। শুধু বুঝতে পারলাম, আই শুড ইনজয় মাই লাইফ ইন এনি সিচুয়েশন।

সকলের নজর এড়িয়ে মুচকি হাসে আদৃত। ফায়াজ সোফা থেকে উঠে এসে ইশার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
_আম্মুর কাজের জন্য আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি বোন, পারলে ক্ষমা করে দিস।

ইশা কিছুটা ভাবনা চিন্তা করে বলে,
_উমমম,একটা শর্তে।

_কি শর্ত?

_জলদি আমার জন্য ভাবী নিয়ে আসো। আই ওয়ান্ট অনেক মানুষের ভালোবাসা।

সকলে এবার একসঙ্গে হেসে দেয়। ফায়াজ ইশার মাথায় গাট্টা মেরে ওকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
_পাগলি একটা, আচ্ছা নিয়ে আসবো। খুশি এবার?

_অ..নে…ক..

ফাইজা মুখ ফুলিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
_আ হা হা হা… আমিতো মনে হয় বানের জলে ভেসে এসেছি!

ফায়াজ ওর দিকে আরেক হাত বাড়িয়ে বলে,
_আচ্ছা তুইও আয়..

ফায়াজ এবার অন্য হাতে ফাইজা কে জড়িয়ে ধরে। ভাই-বোনেদের এমন ভালোবাসা দেখে সকলের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। তা দেখে ইশার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে, আদৃত সত্যিই বলেছিল। ইশাই এই বাড়ির এনার্জি, ও ভালো থাকলেই বাড়ির সকলে ভালো থাকে, থাকবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে