তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৩০+৩১

0
445

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩০
#মেহরিন_রিম
আজ দুদিন পড়ে কলেজ এ এসেছে মোহনা। এই দুদিনে সায়ান তাকে কত শত বার কল করেছে তার হিসেব নেই, কিন্তু একটা কল ও রিসিভ করেনি মোহনা। মোটা হওয়ার কারণে জীবনে অনেকের থেকে অনেক কথা শুনেছে সে, ছোট বেলায় কষ্ট পেলেও বড় হওয়ার পর আর এগুলো নিয়ে ভাবে নি,কারোর কথা কানেও নেয়নি। কিন্তু সায়ান তাকে নিয়ে এভাবে হাসছিলো,বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা মোহনা। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজের ওজন কমাবে, ফিট হয়ে দেখিয়ে দেবে সায়ান কে। এই লক্ষ্যে গত দুদিনে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করেনি, বাবা মা জিজ্ঞেস করলেও তাদের কোনো উত্তর দেয়নি।

কলেজে আসার ইচ্ছে না থাকলেও ইশা তাকে জোড় করে নিয়ে এসেছে। তবে মোহনা মনে মনে ভেবেই রেখেছে, সায়ান কোনোভাবে তার সামনে চলে এলে সে স্পষ্ট জানিয়ে দেবে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না রাখতে। সে থাকুক তার জিড়ো ফিগার এর মেয়েদের নিয়ে।

আজ এক পিরিয়ড আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়ায় সবাই মাঠে এসে আড্ডা দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ ক্লাসরুম এ বসে পড়ছে। ইশা আর মোহনার ব্যাচ থাকায় তাড়াও মাঠেই ঘোরাফেরা করছে, কিছুক্ষন পরে এখান থেকেই পড়তে চলে যাবে। ইশা তার অভ্যাস অনুযায়ী বকবক করছে, তবে মোহনা কলেজে আসার পড় থেকে প্রয়োজন ব্যাতীত একটা কথাও বলেনি। অন্যসময় ব্যাগে করে চিপস, চকলেট নিয়ে আসে,আর আজকে একবার পানিও খেতে দেখলোনা মোহনা কে। ইশা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে,কিন্তু মোহনা কোনো উত্তর ই দেয়নি।

একেতো গতকাল রাতে না খাওয়ার মতো করেই সামান্য কিছু খেয়েছিল,তার উপর সকালেও কিছু না খেয়ে কলেজে আসায় প্রচুর দূর্বল লাগছে মোহনার। শরীরে কোনো বল পাচ্ছে না,হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে যেতেই পাশে থাকা গাছে হাত রেখে নিজেকে সামলে নেয় মোহনা। ইশা দ্রুত তাকে গাছের নিচে বসিয়ে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বেড় করে তার দিকে এগিয়ে দেয়। মোহনা কাপাকাপা হাতে পানিটা নিয়ে খেতেই ইশা বেশ রেগে গিয়ে বলে,
_মেহু তুই যদি এখন না বলিস কি হয়েছে তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।

মোহনা পানির বোতলটা ইশার দিকে এগিয়ে দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো।

_মেহু এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।

_আমি কি খুব বেশি মোটা ইশা?

ছলছল চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে মোহনা। ইশা অবাক হয়ে যায় কথাটা শুনে। সে সবসময় মোহনাকে মোটা বলে খ্যাপায়, আর মোহনা রেগে যায় তাতে। তবে ইশা কখনো এই নিয়ে আফসোস করতে দেখেনি মোহনাকে। বরং নিজেই সবসময় বলে, “আমি তোদের সবার চেয়ে বেশি কিউট”। সেই মেয়ের মুখে এমন কথা আশা করেনি ইশা। নরম সুরে বলে,
_মেহু, কেউ কিছু বলেছে তোকে?

মোহনা এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা। ইশাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
_আমি মোটা বলে কি আমাকে একটুও ভালোবাসা যায়না ইশা?

ইশা মোহনাকে ছাড়িয়ে সামনে এনে বলে,
_কিসব বলছিস তুই? ওয়েট,সায়ান ভাইয়া কিছু বলেছে?

_আমিতো নিজে থেকে কারোর কাছে ভালোবাসা চাইনি ইশা, তাহলে কেন…
কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো মোহনার। ফোঁপাতে ফোঁপাতেই ইশার কাছে বললো সেদিনের কথা। ইশার এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো,তাই সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
_তুইতো ভুল ও ভাবতে পারিস তাইনা? হয়তো উনি অন্য কিছু নিয়ে হাসছিলেন!

_আমি কিচ্ছু ভুল ভাবিনি ইশা। উনি এতদিন ধরে শুধু আমার ইমোশন নিয়ে খেলছিলেন। আচ্ছা আমি কি দোষ করেছি বলতো, আমিতো যেচে ওনার সাথে কথাও বলতে যাইনি।

ইশা চুপ করে রইলো,সায়ান কে সে যথেষ্ট ভালো মনে করেছিল। কিন্তু মোহনার কথার সঙ্গে তো তার কিছুই মিলছে না।

মোহনা নিজের চোখের জল মুছে বললো,
_তুইতো জানিস ইশা, আমি ডায়েট করার কতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়না,বরং আরো অসুস্থ হয়ে পরি। আমিতো ইচ্ছে করে মোটা হতে চাইনা, হরমোনাল প্রবলেম এর কারণে না চাইতেও মোটা হয়ে যাই। আব্বু আম্মু জোড় করে খাওয়ায় যেন সুস্থ থাকতে পারি,আর আমি কি মোটা বলে কোনো কাজ করতে পারিনা বল? আমিতো সবই করতে পারি, তবুও কেন মানুষ আমাকে অন্যভাবে দেখে? বলতে পারিস আমি কি করবো? কি করলে আর অন্যদের কাছে হাসির পাত্র হতে হবেনা আমায়?

_মেহু আমার এখনো মনে হচ্ছে তুই ভুল ভাবছিস।

_হাহ,ভুল তো আমি এতদিন ভেবে এসেছি। তবে এখন আমি ঠিকটা বুঝতে পারছি। তুই দেখিস ইশা, যে করেই হোক আমি স্লিম হবো,তারপর আর উনি আমায় নিয়ে হাসতে পারবে না।

_পাগল হয়ে গেছিস তুই? এবার আমি বুঝতে পারছি, নিশ্চই দুদিনে খাওয়া দাওয়া করিসনি তাই মাথা ঘুড়ে যাচ্ছে। তুইতো এমন মেয়ে না মেহু, কারোর জন্য নিজেকে চেঞ্জ করার কোনো প্রয়োজন নেই। এসব আজেবাজে চিন্তা করলে কিন্তু আমি আন্টিকে সবকিছু বলে দেবো। এখন চল,ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খাবি আগে।

_আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা ইশা।

_কোনো কথা নয়,চল আমার সাথে।

মোহনা আর কিছু না বলে ইশার সাথে ক্যান্টিনে চলে গেলো, আর কিছুক্ষন না খেয়ে থাকলে সত্যি সত্যি ই সেন্সলেস হয়ে যাবে।

_____
_আসবো?

আদৃত অফিসে নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। কারোর গলার আওয়াজ শুনে দড়জার দিকে তাকাতেই পূর্ণকে দেখে মৃদু হেসে বললো,
_আয়,জিজ্ঞেস করছিস কেন?

পূর্ণ ভিতরে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। আদৃত ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,
_কোথায় ছিলি তুই? ফোন ধরিস না,কোনো খোজ নাই। কোথায় যে উধাও হয়ে যাস তুই সেটাই বুঝতে পারিনা।

পূর্ণ ও হাসলো এবার। পানিটা খেয়ে বললো,
_দুদিনে ফিরতে পেরেছি এটাই অনেক। আর বলিস না, আম্মা কয়েকদিন ধরে এত চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য। একদম কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে, কিছু বলেই বোঝাতে পারতেছি না।

_ভালো তো,বিয়ে করে নিলেই পারিস। তাহলে আন্টিও খুশি হয়ে যাবে।

_হাহ, আমার যে লাইফ। কোনো মেয়ে আমার সাথে থাকবে বলে তুই মনে করিস?

_থাকতো,তবে তুই নিজেই রাখিস নি।

_একটা সত্যি কথা বল তো।

_হুম।

_ফাইজা কে কিছু বলেছিস তুই?

অবাক হওয়ার মতো কথা হলেও আদৃত একটুও অবাক হলোনা। বরং চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বললো,
_বলেছি,তো?

_আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম। কাজটা তুই ঠিক করিস নি আদি।

_আমি যা করি ভেবে চিন্তেই করি,অন্তত তোর থেকে ভালো বুঝতে পারি।

_ওহ রিয়েলি, তাহলে এটাও স্বিকার কর ইশা নামের মেয়েটাকে তুই ভালোবাসিস।

নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো আদৃত। পূর্ণ ও তাহলে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের শেষে আদৃত ও নিজের মনকে বুঝতে সক্ষম হয়েছে। ইশা আশেপাশে থাকলে তার ভালো লাগে,ইচ্ছে করে সবসময় তাকে নিজের সামনে বসিয়ে রেখে তার বকবক শুনতে। তার কাজল চোখের মায়ায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বারংবার, এই সবকিছুর কারণ আবিষ্কার করতে পেরেছে আদৃত। দেড়িতে হলেও মেনে নিয়েছে নিজের অনুভূতিকে।

_তাহলে? আমি বিয়ে করি না করি,তোর বিয়ে খেতে পারছি বল।

আদৃতের হাসি আরো প্রশস্ত হতে দেখে পূর্ণ বললো,
_হাসছিস কেন? তুই যে মেয়েটাকে ভালোবাসিস,বলেছিস ওকে?

_ঐটুকু মেয়েকে আমি প্রপোজ করবো? নো ওয়ে..

_তাহলে,কি করবি?

আদৃত টেবিলে থাকা পেপারমেট টা ঘুরিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠেই বললো,
_জানিনা। যেভাবে চলছে সব সেভাবেই চলুক,ক্ষতি কি?

পূর্ণ মনেমনে হাসলো। আদৃতকে ভালোবাসা প্রকাশ করতে বলছে। যেখানে কিনা সে নিজেই নিজের ভালোবাসার কথা কখনো মুখ ফুটে বলতে পারলো না,হয়তো কখনো পারবেও না। এমনটা হয়তো তার ভাগ্যেই লেখা ছিলো।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩১
#মেহরিন_রিম
ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁইছুঁই। রুমের সব লাইট নিভিয়ে বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু মেইল চেক করছে আদৃত। ফোনটা তার হাতে নাগালের বাহিরে ছিলো তার উপর ভাইব্রেশন এ। প্রথমবার কল আসায় সে টের পায়নি, দ্বিতীয়বার ফোন ভাইব্রেট হওয়ায় বিরক্তিসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ফোনের দিকে তাকায় আদৃত। ফোনটা উল্টো থাকায় আরো বিরক্ত হয়, বাধ্য হয়ে ল্যাপটপ টা পাশে রেখে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিতেই বিরক্তি কেটে গিয়ে বিষ্ময় থেকে যায় মুখে। অন্য হাত দিয়ে চোখ ডলে আবারো স্ক্রিনের দিকে তাকায়। সে ঠিকই দেখছে, স্ক্রিনে ইশার নামটা স্পষ্ট। নম্বরটা অনেক আগেই সেইভ করা ছিলো। কিন্তু ইশা এত রাতে কল করছে!

এর ভাবনার মাঝে ফোনটাই রিসিভ করা হলোনা,তার আগেই কেটে গেলো। মুখ থেকে বিরক্তিসূচক ‘চ’ উচ্চারণ করে আদৃত বললো,
_কেটে গেলো কলটা! কিন্তু ও এত রাতে আমাকে কল করবে কেন?

আদৃত কলব্যাক করবে কিনা ভাবতে ভাবতেই আবারো কল এলো ইশার নম্বর থেকে। এবার আর দেড়ি করলো না আদৃত,সঙ্গে সঙ্গে কলটা রিসিভ করলো।

এই নিয়ে তিনবার কল দিলো ইশা। আগের দুবার রিং হতে হতে কল কেটে যাওয়ায় ইশা এবার কল নিয়ে নিজে নিজে বলছিল,
_এবার যদি কল না রিসিভ করেছেন তো..

_কি করবে?

আদৃতের কণ্ঠ পেয়ে কথা থেমে যায় ইশার। ফোনটা সামনে এনে দেখে ১০ সেকেন্ড আগেই কলটা রিসিভ হয়েছে। ইশা চোখ খিঁচে বন্ধ করে জীভে কামড় দিলো। ফোনটা কানে ধরে বললো,
_আসলে আগেও দুবার কল দিয়েছিলাম তো তাই..

_আমার নম্বর কোথায় পেলে তুমি?

_ওমা, আপনি এত ভুলোমনা! নিজেই তো সেদিন কল দিয়েছিলেন।

_আমি..

_আপনি দিয়েছেন নাকি আমি ঘুমের মধ্যে দিয়েছি সেই বিচার করতে কল দেইনি আমি। অনেক বড় দরকারে কল করেছি। নাহলে..

_এত কথা না বাড়িয়ে কি বলবে বলো।

_আপনি আমাকে সায়ান ভাইয়ার নম্বরটা দিন তো।

আদৃত কপাল কুঁচকে অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
_ওর নম্বর দিয়ে তুমি কি করবে?

_এতকিছু আপনাকে বলতে পারবো না, আগে আমাকে নম্বরটা দিন।

_কিন্তু…

_দিন না প্লিজ,অনেক বেশি দরকার।

ইশার আকুতির স্বরে আর কথা বাড়াতে পারলোনা আদৃত। সায়ান এর নম্বরটা দিতেই ইশা খুশিতে থ্যাংক ইউ বলে কলটা কেটে দিলো।

আদৃত আর কিছু বলার সুযোগ ই পেলোনা। আদৃত এখনো বুঝতে পারছেনা ইশা সায়ান এর নম্বর দিয়ে কি করবে। একবার ভাবলো সায়ান কে কল করে জিজ্ঞেস করবে, পড়ে কিছু একটা ভেবে আর কল করলোনা। বিছানায় বসে ল্যাপটপে আরো কিছু কাজ করে ঘুমিয়ে পড়লো।

______
ইশা বলেছে আজকে সে কলেজে যাবেনা। মোহনা ঘুম থেকে উঠে অনেকবার জোড় করলেও রাজি হয়নি সে, বলেছে প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা তাই যেতে পারবে না কলেজে। মোহনার যেতে ইচ্ছে করছিল না কলেজে তবে আগেও দুদিন যায়নি তাই আজ না গিয়ে উপায়ও নেই। তাই বাধ্য হয়ে একা একাই কলেজে যাচ্ছে মোহনা।

সোমবারে তাদের এলাকায় সকল দোকান বন্ধ থাকায় রাস্তা বেশ ফাকাই থাকে। কলেজ খুব একটা দূড়ে নয়,তাই রিক্সায় না উঠে হেটেই কলেজে যাচ্ছে সে। মুখ গোমড়া করে হাটতে হাটতেই দেখতে পায় সায়ান রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে তাকাতেই মনটা আরো বিগড়ে যায় মোহনার,নিচের দিকে তাকিয়ে ব্যাগটা খামচে ধরে হাঁটা শুরু করে সে। খুব বেশিদূর এগোতে পারেনি। মোহনার দিকে চোখ পড়তেই সায়ান তার সামনে এসে দাঁড়ায়, কপাল তার ইষৎ ভাজ স্পষ্ট। গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোহনার দিকে। মোহনার টলমলে চোখে নিচের দিকদি তাকিয়ে ছিলো,নিজের ইমোশন মোটেই দেখাতে চায়না সে।
নিচের দিকে তাকিয়েই পাশ কেটে চলে যেতে নিলে সায়ান আবারো তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মোহনা এবার তার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে,
_সমস্যা কি? পথ আটকাচ্ছেন কেন?

_প্রশ্নটা তো আমার করা উচিৎ,তোমার সমস্যা কি?

_দেখুন ভালোয় ভালোয় বলছি সরে যান,আমি কিন্তু চিৎকার করবো।

_ওহ রিয়েলি! করো চিৎকার,কে নিষেধ করেছে। তবে এখানে যদি আমি তোমার ছবিগুলো পোস্টার করে লাগিয়ে রাখি তাহলে কেমন হবে?

মোহনার রাগটা আরো বেড়ে যায়। খানিকটা উঁচু গলায় বলে,
_যা খুশি করুন আপনি। ঐ একটাই তো হাতিয়ার পেয়েছেন, আর তা দিয়েই আমার সঙ্গে মজা করছিলেন আপনি। আমি কিছুতে ভয় পাইনা এখন।

সায়ান চোখমুখ শক্ত করে একবার মোহনার দিকে তাকায়। তারপর বাইকে উঠতে উঠতে কড়া গলায় বলে,
_বাইকে বসো।

_মানে? আমি আপনার বাইকে কেনো উঠতে যাবো?

_দেখো মোহনা,রাগ বাড়িও না আমার। নাহলে কিন্তু..

_ভয় দেখাচ্ছেন আমায়? বললাম না আমি আপনাকে ভয় পাইনা। আর আমাকে যে বাইকে উঠতে বলছেন, আমার মতো মোটা মেয়েকে নিয়ে আপনি বাইক চালাতে পারবেন?

সায়ান এবার রাগী চোখে মোহনার দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে,
_আর একটা কথা বললে কিন্তু কোলে তুলে বাইকে বসাবো। লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি,নিজে থেকে উঠে বসো।

মোহনা সায়ানকে এর আগে কখনো এত রাগ করতে দেখেনি। মন মনে অভিমানের পাল্লা আরো ভারি হলো, কোথায় মোহনা রাগ করে থাকবে সেখানে কিনা সায়ান নিজেই রেগে যাচ্ছে। তবে অভিমান এর চেয়ে ভয়টা বেশি হওয়ায় আর কিছু বলতে পারলোনা মোহনা। মুখ ফুলিয়ে বাইকে উঠে বসলো। সায়ান ও কিছু না বলেই বাইক স্টার্ট দিলো।

_____
কলেজ থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে একটা পার্কে বসে আছে মোহনা। সায়ান তার সোজাসুজি একটা বেঞ্চে বুকে হাত গুঁজে বসে আছে।
মোহনা এতক্ষন নিজের কান্না আটকে রাখলেও এখন আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলোনা। সায়ানের দিকে একনজর তাকিয়ে আবারো নিজের দিকে নজর রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

_কিছু হলেই তো ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে শুরু করে দাও। সেখানে এতো রাগ কোথা থেকে পাও তুমি?

সায়ানের কথায় কোনো উত্তর দিলোনা মোহনা। নিচের দিকে তাকিয়েই বললে,
_এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন আমাকে? আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাইনা,যেতে দিন আমায়।

সায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
_তিনতিনে তিন হাজারের বেশি মেসেজ করেছি, কত শত বার কল করেছি তার কোনো হিসেব নেই। আর তুমি কিনা তখন থেকে যাই যাই করছো।

মোহনা সায়ান এর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আহত কণ্ঠে বললো,
_কেন করেছেন কল? আমি বলেছি? আমার মতো মোটা মেয়েকে…

_কি তখন থেকে মোটা মোটা করে চলেছো? আমি কিছু বলেছি তোমাকে?

মোহনা তাচ্ছিল্যের সুলভ হেসে পাশে তাকিয়ে বললো,
_সামনে না বললেও আড়ালে তো ঠিকই বলে বেড়ান।

সায়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মোহনার সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো,
_তুমি না বুঝে..

_আর কি বোঝার বাকি আছে আমার? সেদিন আপনি..

_সেদিনের কথা সবটা শুনলে তুমি এমনটা করতে না মোহনা।
মোহনা অবাক হয়ে তাকায় সায়ান এর দিকে। সায়ান তার দিকে তাকিয়ে সেদিনের কথা বলতে লাগলো।

___
_হাসছিস কেন তুই?

পূর্ণর কথায় সায়ান হাসি থামিয়ে দিয়ে বলে,
_ব্যাপারটা আমিও অনেক ভেবেছি বুঝলি। যেখানে আমি সবসময় স্লিম মেয়ে পছন্দ করতাম সেখানে মোহনার প্রতি কি করে এতটা মায়া জন্মে গেলো বুঝতেই পারলাম না।

_যাক তাহলে তুইও প্রেমে পড়েই গেলি।

সায়ান হেসে বলে,
_আসলেই,বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি মেয়েটাকে। এবার শুধু সুযোগ বুঝে বলে দিতে পারলেই হয়।

___
_আর তুমি সবটা না শুনেই চলে গিয়েছিলে।

মোহনা হা করে সায়ান এর কথা শুনছিলো। পরক্ষণেই ঐ মেয়েটির কথা মনে পড়তেই আমতা আমতা করে বললো,
_আ আর ঐ মেয়েটাকে নিয়ে যে বলছিলেন,কত সুন্দরি সে।

সায়ান মোহনার হাতে হাত রেখে বলে,
_ওটা তো এমনিতেই বলেছিলাম। আসলে তো আমি এই হাতির বাচ্চাকেই ভালোবাসি।

এবার হাতির বাচ্চা বলায় রাগ হলোনা মোহনার। বরং সায়ান এর মুখে সরাসরি ভালোবাসার কথা শুনে কিছুটা লজ্জা পেলো সে। সায়ান হাতটা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হতাশার সুরে বলে,
_আর আপনি কিনা কতকিছু ভেবে বসে আছেন। ভাগ্যেস আমি এমন একটা শালী পেয়েছি।

মোহনা অবাক হয়ে বললো,
_ইশা আপনাকে বলেছে এগুলো?

_আজ্ঞে হ্যা,নাহলে তো জানতেই পারতাম না কিছু।

ফাইজা নিজের মাথায় গাট্টা মেরে অসহায় দৃষ্টিতে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে রইলো। সায়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
_হয়েছে আর এমন স্যাড লুক দিতে হবেনা। সকালে কিছু খাওয়া হয়েছে নাকি এখনো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন?

মোহনা নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো অর্থাৎ কিছু খায়নি সে। সায়ান হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
_ফার্স্ট ক্লাস শেষ হতে এখনো ২০ মিনিট বাকি। সেকেন্ড ক্লাস করতে চাইলে জলদি কিছু খেয়ে কলেজে যাবে। এখন আর একটা কথা বললে কিন্তু..

আর কিছু বলতে হলোনা সায়ান কে। মোহনা তার আগেই উঠে দাঁড়িয়ে সায়ান এর পাশে এসে দাঁড়ায়। দুহাত দিয়ে চোখ মুছে মেকি হেসে বলে,
_চলুন..

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে