#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২১ (বোনাস পর্ব)
#মেহরিন_রিম
নিজের ঘরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পায়চারি করছে ইশা। তার মুখভঙ্গি দেখে যে কেউ স্পষ্টভাবে বুঝে যাবে যে সে কোনো বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছে।
ঘড়িতে এখন সকাল নয়টা বাজে। ইশা ঘুম থেকে উঠেছে আরো এক ঘণ্টা আগে। গতকাল রাতে সেই আননোন নাম্বার থেকে যে ফোন করেছিল তার কণ্ঠস্বর ইশার কাছে বেশ পরিচিত মনে হয়েছে,রাতে ঘুমের ঘোরে থাকায় তা খুব বেশি লক্ষ্য না করলেও সকালে উঠেই বিষয়টা নিয়ে ভাবছে ইশা। আবার লোকটার কথাও বেশ অদ্ভুত লেগেছে ইশার কাছে,নিজে কল দিয়ে কিনা বলছে আমিই কল দিয়েছি! নাহ,এত চিন্তা মাথায় থাকলে তার পেটের ভাত হজম হবেনা।
ধাপ করে গিয়ে বিছানায় বসে পরে ইশা। নম্বরটা আরো কয়েকটা পড়ে নেয়,এতক্ষনে তার নম্বরটা প্রায় মুখস্তই হয়ে গেছে। ইশা নিশ্চিত সে এই নম্বর আগে কখনো দেখেনি, অবশেষে উক্ত নম্বরে সে আবারো কল করলো।
আদৃত এখানে এক বিশেষ মিটিং এ এসেছে, তবে অপর পক্ষের লোকেরা বিভিন্ন কারণে লেইট করছে। ফাইনাল ডিসিশন হয়েছে আজ বিকেলে মিটিং হবে।
আদৃত এমনিতে রোজ সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। কাল রাতে যেহেতু অনেক দেড়িতে ঘুমিয়েছে তাই আজ একটু দেড়িতেই ঘুম থেকে উঠবে সে। এতক্ষনে তার ঘুম বেশ হালকা হয়ে এসেছে, ফোনকলের আওয়াজে ঘুমটা পুরোপুরিই ভেঙে যায় তার। উঠে বসে পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে ইশার কল, এইরে!মেয়েটা কিছু বুঝে গেলোনা তো? আদৃত ফোনটা রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো। হাফ ছেড়ে বাঁচলো আদৃত, ইশা যদি জেনে যায় কলটা ও করেছিল তাহলে হাজারটা প্রশ্ন করবে যার উত্তর আদৃত নিজেও ঠিককরে জানে না।
তবে ইশার মাথায় যখন একবার চিন্তা ঢুকেছে তখন সে লোকটা কে তা জেনেই ছাড়বে। একবার রিসিভ হয়নি তো কি হয়েছে? আবারো একই নম্বরে কল করলো ইশা।
আদৃত কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়ার আগেই আবারো ফোনটা বেজে ওঠে। এখন আর কিছুই করার নেই আদৃত এর,বাধ্য হয়ে ফোনটা রিসিভ করলো সে।
_হ্যালো..
_আপনি সেই লোকটা না যে আমাকে রাতে কল করেছিলেন?
আদৃত কিছু না জানার ভান ধরে বলল,
_হুয়াট? কি বলছেন এসব?
_দেখুন ইয়ার্কি করবেন না। আপনার কণ্ঠস্বর টা আমার ভীষণ চেনা চেনা লাগছে,আপনি কে বলুন তো?
_ও আপনি সেই রাতের মেয়েটা? এক্স্যাক্টলি,আমারো আপনার কণ্ঠ খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। আপনি কে সেটা আগে বলুন।
_আমি কে মানে? আমি ইশা,আপনিই তো কল করলেন আমায়।
_ওওও….তুমি! এই মেয়ে তুমি আমার নম্বর পেলে কোথায়? আর মাঝরাতে কল দিয়ে আমায় বিরক্ত করছিলে কেন?
ইশা এতক্ষনে বুঝতে পারে এটা আদৃত। তবে তার কথাবার্তা কিছুই ইশার মাথায় ঢুকছে না।
_কি আবোলতাবোল বলছেন আপনি? আমি আপনার নম্বর পাবো কোথায়? আমি তো তখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলাম।
_আচ্ছা,তাহলে তুমি বলতে চাইছো আমি তোমাকে কল করেছি! আরে তুমি ই তো প্রথম এ কল করলে তাই আমি কলব্যাক করলাম। আমি তোমায় ঐ রাতের বেলা কেন কল করতে যাবো শুনি?
ইশাও চিন্তা করে,আসলেই তো,উনি আমায় খামোখা কল করতে যাবেন কেন?
_এই মেয়ে,চুপ করে আছো কেন?
_হ্যা! না মানে আমার নআ মাথাটা ঘুরছে,আপনার কোন কথাই তো বুঝতে পারছি না। আপনি ই বা আমায় কল করবেন কেন? কিন্তু বিশ্বাস করুন,আমি সত্যিই আপনাকে কল করিনি।
_হুম বুঝলাম।
_কি বুঝলেন?
_তুমি তো বললে তুমি তখন ঘুমোচ্ছিলে। এখন বিষয়টা হয়তোবা এমন হয়েছে যে,তুমি ঘুমের মধ্যে কোনো স্বপ্ন দেখতে দেখতে সেই স্বপ্নের মাঝেই এই নম্বরে কল করেছিলে। আর আনফরচুনেটলি নম্বরটা আমার হয়ে যায়।
ইশা মাথায় কিছুই ঢুকলো না। সে অবাক হয়ে বললো,
_কিন্তু আমার তো এমন কিছু মনে নেই।
_লিসেন,আমরা অনেক সময় ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি কিন্তু ঘুম ভাঙার পর স্বপ্নের কিছুই আমাদের মনে থাকেনা। তোমার ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনই হয়েছে।
_কিন্তু আমিতো…
_আমি খুবই বিজি এখন সো তোমার সাথে ফালতু কথা বলার টাইম আমার নেই। আর হ্যা, যেহেতু তুমি ঘুমের মধ্যে আমায় কল দিয়েছিলে তাই আমার ঘুম ভাঙিয়ে আমায় ডিস্টার্ব করার পরও তোমাকে মাফ করে দিলাম। সরি বলতে হবেনা।
_আরে আরে,আমি সরি কেনই বা বলবো!.. যাহ কেটে দিলো ফোনটা!
আদৃতের কথাগুলো সব মাথার উপর দিয়ে গেছে ইশার। ওর কথাই মেনে নেবে কিনা এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। কল হিস্টোরি চেক করে দেখার বুদ্ধিতা আর তার মাথায় সেই সময় এলোনা।
ফোনটা বিছানার উপর ফেলে নিয়ে বললো,
_আমার স্মৃতিশক্তি কি এতই লোপ পেলো সে স্বপ্নের বিন্ধুমাত্র কিছু আমার মনে নেই, স্ট্রেঞ্জ! উনি কি আমাকে বোকা বানাচ্ছেন? অবশ্য আমাকে বোকা বানিয়ে ওনার কি লাভ! ওনার কথাই বোধ হয় ঠিক তাহলে।
_একা একা বিড়বিড় করে কি বলছিস তুই?
ইশার ঘরে ঢুকে কথাটা বললো ফাইজা। ইশা উঠে দাড়িয়ে ফাইজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আচ্ছা আপু স্বপ্নের কথা আমাদের কিছুই মনে থাকবেনা এমনটা হতে পারে?
_হুম,আমি ই তো অনেক সময় রাতে কি স্বপ্ন দেখেছি সকালে উঠে মনে থাকে না।
_ওওওও…. (কিছুটা টেনে বলল কথাটা)
_তোর এই অদ্ভুত প্রশ্ন ছাড়তো। খুশির খবর শোন।
_কি খুশির খবর?
_অনেকদিন দূড়ে কোথাও যাওয়া হয়না,তাই ছোট আব্বু বলেছে এবার দূড়ে কোথাও ঘুড়তে যাবে।
_কোথায়?
_সিলেট, দুপুরে লাঞ্চ করেই বের হবো আমরা।
মাথায় থাকা সব চিন্তা এক নিমিষে দূড়ে সরে গেলো ইশার। খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
_সত্ত্যিইইইই! ইশ আমি কতদিন ধরে সিলেট যাওয়ার কথা ভাবছিলাম।
_হ্যা রে বাবা সত্যি। এখন না লাফিয়ে ব্যাগ গোছানো শুরু করে দে।
_হ্যা হ্যা অবশ্যই।
আদৃতের কথা একপ্রকার ভুলেই গেলো ইশা। মনের আনন্দে প্যাকিং শুরু করে দিলো সে।
___
শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে নিজের চুল মুছতে লাগলো আদৃত। ইশার কথা ভেবে এখনো হাসি পাচ্ছে তার, কি বোকা মেয়ে! আদৃত বললো আর সে বিশ্বাস করে নিলো।
ফোনকলের আওয়াজে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে বিছানার দিকে তাকায় আদৃত। স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নম্বরটা দেখেই মুখমণ্ডল জুড়ে বিরক্তি ফুটে ওঠে আদৃতের।
বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই অপর পাশে থাকা লোকটি বলে ওঠে,
_সরি স্যার,ডিসটার্ব করলাম আসলে একটা প্রবলেম হয়ে গিয়েছে স্যার।
_আবার কি প্রবলেম?
_আসলে আমাদের স্যার সকাল থেকে পাঁচ মিনিট পরপর টয়লেট থেকে কামিং এন্ড গোইং। বুঝতেই তো পারছেন স্যার,এখন এর মধ্যে মিটিং টা কি করে করবেন বলুন।
_দুদিন ধরে মিটিং এর ডেট পিছিয়ে চলেছেন আপনারা।
_খুবই দুঃখিত স্যার,কিন্তু আমার হাতে তো কিছুই নেই।
আদৃত বিরক্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
_মিটিং কবে দিতে পারবেন?
_এইতো স্যার একটু সুস্থ হলেই, কাল বা পরশুর মধ্যেই।
_ওকে
বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে দিলো আদৃত। এই মিটিং এর জন্য চারটা দিন নষ্ট করেছে,মিটিং না করেই চলে গেলে সম্পূর্ন টাইম টাই লস।
পূর্ণও সেই সময় রুমে প্রবেশ করলো। আদৃতকে এভাবে দেখে বলল,
_কি হয়েছে,রেগে আছিস কেন এত?
_আরো দু দিন….
#চলবে
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২২
#মেহরিন_রিম
_ইশা আমরা তিনদিন এর জন্য যাচ্ছি,তিন মাসের জন্য নয়!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক ড্রেস গায়ে ধরে দেখছে আর ব্যাগ ভর্তি করছে ইশা। ফাইজা ঘড়ে ঢুকে বিস্ফোরিত চোখে কিছুক্ষন বিছানায় পড়ে থাকা ব্যাগগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলো,ইশা তখনো আলমারি থেকে আরো জামা বের করতে ব্যাস্ত।
ফাইজার ডাকে ইশা একবার তার দিকে তাকালো। তারপর বিছানায় ব্যাগগুলোর দিকে তাকালো, দুটো ব্যাগ ভর্তি তার একার ড্রেস। ছোট ছোট চোখে ফাইজার দিকে তাকালো, হাত উঠিয়ে মাথা চুলকে বললো,
_মাত্র দুটো ব্যাগ ই তো আপু,এটুকু তো নেওয়াই যায়।
ফাইজার হাত অটোমেটিকালি মাথায় চলে গেলো। আরো একবার ব্যাগ দুটোর দিকে তাকালো। তারপর তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে জামাগুলো বের করতে করতে বললো,
_ভাগ্য ভালো তোর ছোট আম্মু আসেনি রুমে,নাহলে সেই লেভেল এর বকুনি খেতে হতো তোকে। অর্ধেক জামাকাপড় বের করে রাখবি এখান থেকে এক্ষুনি।
ইশা বেড এ বসে ঠোট উল্টে বললো,
_কিন্তু আমার তো একটাও রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না। আমিতো জানি না তাইনা ওখানে গিয়ে কোনটা পড়তে ইচ্ছে করবে। আবার ইনভাইরনমেন্ট এর সাথে ম্যাচ করে তো ড্রেস পড়তে হবে। ও আপু,আম্মুকে একটু সামলে নাওনা।
_একদম অহেতুক আবদার করবিনা ইশা। এর একটা ব্যাগ নিলেই তোকে ছোট আম্মু বকবে,আমি সেটা সামলে নেবো কিন্তু দুটো কোনোভাবেই সম্ভব না।
অত:পর মন খারাপ করে অর্ধেক জামাকাপড় বের করে রাখলো ইশা। কোথাও ঘুড়তে গেলেই তার এই এক ঝামেলা,কোনটা রেখে কোন ড্রেস নিবে সেটাই ঠিক করতে পারেনা।
তবুও খুব বেশি মন খারাপ করলোনা ইশা, ঘুরতে যে যাচ্ছে এটাই অনেক। ফাইজাও ইশার অবস্থা দেখে মুচকি হাসল। তখন ই খাটের উপরে রাখা ফাইজার ফোনটা বেজে উঠলো। ইশা সেদিকে তাকাতেই দেখলো ফায়াজ ভিডিও কল করেছে। ফায়াজ হলো ফাইজার একমাত্র বড় ভাই।
ফাইজা কলটা রিসিভ করার আগেই ইশা খপ করে ফোনটা নিয়ে কলটা রিসিভ করলো। ঠোঁটে চওড়া হাসি টেনে বলল,
_কেমন আছো ভাইয়া? তুমিতো আমাকে একদম ভুলেই গেছো,কোনো কথাই বলোনা আমার সঙ্গে।
অপর পাশ থেকে ফায়াজ স্মিত হেসে বলল,
_সরি রে,প্রচুর ব্যাস্ত থাকি তো এইজন্য কথাই বলা হয়না।
_তুমি জানো আমরা না আজ সিলেট যাচ্ছি, আমি যে এত্ত এক্সাইটেড বলে বোঝাতে পারবো না।
আরো একঝাক গল্প জুড়ে বসলো ইশা। ফাইজাও পাশে বসে কথা বলছে। ইশা সব ভাইবোনেদের মধ্যে ছোট হওয়ায় সবার কাছেই সে খুব আদরের, ফায়াজের অতি আদরের ছোটবোন সে। তাই তার সাথে ইশার ভাবটাও বেশি, ফায়াজ দু বছর আগে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে যায় তারপর একটা জব পেয়ে যাওয়ায় সেখানেই সেটেল হওয়ার প্ল্যান করছে।
বেশ কিছুক্ষন গল্প করার পর ফায়াজ ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
_ইশা একটু ফাইজার কাছে দে তো, ওর সাথে কিছু কথা আছে।
ইশা ফাইজার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিতেই ফাইজা ফোনটা হাতে দিয়ে একবার ফায়াজ এর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সে ওকে অন্য ঘরে যেতে বলছে। ফাইজা ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
_ইশা তুই তাড়াতাড়ি প্যাকিং শেষ কর,আমিও দেখি ঘড়ে গিয়ে আর কিছু নেওয়া বাকি আছে কিনা।
ইশা মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই ফাইজা নিজের ঘরে এসে দড়জা আটকে দিলো। ফায়াজ সঙ্গে সঙ্গে বললো,
_আম্মা নাকি তোকে বেশ কদিন ধরে বাড়িতে যেতে বলছে, তুই নাকি যাচ্ছিস না। কেন?
ফাইজা গিয়ে খাটে বসে চুপ করে রইলো। ফায়াজ আবারো বললো,
_কি হলো ফাইজা? আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তো তোকে।
_তুমি তো সবটাই জানো ভাইয়া,তারপর ও জিজ্ঞেস করছো কেন?
_হ্যা জানি, তারপর ও বলছি আম্মা নেক্সট টাইম বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে আর না করবি না। ঠিক আছে?
ফাইজা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ফায়াজ আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোনে একটা কল আসায় বলে,
_পড়ে কথা বলছি আমি।
ফোনটা কেটে দিলো ফায়াজ। ফাইজা মুখ গোমড়া করে বিছানার উপর রাখলো ফোনটা। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো কিছুক্ষণ। মনে মনে আওড়ালো,
_তুমি সবটা এখনো জানোনা ভাইয়া। আমিও চাইনা জানাতে, সবটা জানতে পারলে যে তুমি আর দেশেই ফিরতে চাইবে না তা আমার ভালো করেই জানা আছে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফাইজা। নিজের ভিতরে যে কত কথা জমা করে রেখেছে তা কেবল সেই জানে। ইশার সাথে চাইলেও সে সবকথা শেয়ার করতে পারেনা। আর যাকে সব কথা নির্দ্বিধায় বলতে চেয়েছিল সে তো…
বন্ধ চোখজোড়া থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। দড়জায় করাঘাতের আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো ফাইজা। এক ঝটকায় উঠে বসে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে গিয়ে দড়জা খুলতেই ইশা হুরমুরিয়ে ঘরে ঢুকে ফাইজার হাত ধরে বলে,
_আমার পক্ষে সম্ভব না আপু,একটা ড্রেস ও বাদ দিতে পারতেছিনা। তুমি এসে হেল্প করোতো আমায়।
কথাটা বলেই ফাইজার হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো ইশা। অত:পর ফাইজা তার সঙ্গে গিয়ে ব্যাগ গোছাতে সাহায্য করতে লাগলো।
___
সায়ান এর জোরাজুরিতে রিসোর্ট থেকে বেড়িয়ে সিলেটের বিখ্যাত সাত রঙের চা খেতে এসেছে আদৃত,পূর্ণ এবং সায়ান। এই চা আদৃত আগেও খেয়েছে,তার কাছে তেমন স্পেশাল লাগেনি আবার খুব বেশি খারাপ ও লাগেনি। সায়ানের ভীষণ ভালো লেগেছে কিন্তু পূর্ণর মোটেই ভালো লাগেনি।
আদৃতের এসব দিকে খুব বেশি নজর নেই, সে তো মিটিং শেষ করে এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে। হঠাৎ ই যেন ভীষণভাবে দেখতে ইচ্ছে করছে ইশাকে, তার এই অবাধ্য ইচ্ছেগুলো ক্রমশই বেড়ে চলেছে। চেষ্টা করেও তাদের আটকে রাখতে ব্যার্থ আদৃত।
চা পছন্দ না হলেও আজকের আকাশটা দেখে বেশ ভালো লাগছে পূর্ণর। সেদিনের কেনা বইটা সে এখনো সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে,কয়েকবার উল্টেপাল্টে দেখেছিল। তবে পড়াটা আর হয়ে ওঠেনি,ইচ্ছে করেই পড়েনি। ইচ্ছে ছিল বইটা ফাইজাকে দিয়ে দেবে,তবে ফাইজা তা কখনই গ্রহণ করবে না। কোন কারণ ছাড়াই তাই বইটা নিজের সঙ্গে রেখেছে পূর্ন, এইতো গতকাল রাতেই বইটার দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষন। মনের মাঝে সুপ্ত বাসনা জাগে বইটা ফাইজাকে পড়ে শোনানোর। নিজের উপর হাসি পায় পূর্ণর,এমন সময় তার জীবনে আর কখনই আসবে না। সেই রাস্তা সে নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে।
কিছুক্ষন পরই আবার রিসোর্ট এ ফিরে এলো আদৃতেরা। রিসোর্ট এ ফিরতেই একজন লোক আদৃতের সামনে এসে স্মিত হেসে তার দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বললো,
_হ্যালো মিস্টার আদৃত। আমি আহনাফ,এই রিসোর্ট টা আমারই। আপনি যে এখানে এসেছেন সেটা আমি আজকেই জানতে পারলাম।
আদৃত ও হালকা হেসে হাত মেলালো তার সাথে। আহনাফ এবার বললো,
_আপনার কাছে একটা রিকুয়েস্ট ছিলো। আসলে আজ আমার ওয়াইফ এর বার্থডে,আর ও আপনার গানের অনেক বড় ফ্যান। রাতে একটা পার্টির আয়োজন করেছি আমি ওর জন্য, আপনি যদি এসে গান গাইতেন তাহলে খুবই খুশি হতাম।
লোকটার মুখের উপর আপত্তি জানাতে পারলোনা আদৃত। বললো যে ও ট্রাই করবে আসার জন্য। পরবর্তীতে আহনাফ আরো জোর করায় আসার জন্য সম্মতি জানায় আদৃত
___
দুপুরে লাঞ্চ শেষ করেই সিলেট এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরেছিল ইশারা। বাড়ির গাড়িতে করেই এসেছে তাই রিসোর্টে এসে পৌঁছোতে রাত নয়টা বেজে গেছে। পুরো রাস্তা ইশা ঘুমিয়ে এসেছে আর ফাইজা বই পড়ে তাই তাদের মধ্যে এতটা জার্নি করার কোনো ক্লান্তি নেই।
আগে থেকে রুম বুক করাই ছিল,তাই রিসোর্ট এ এসে চাবিটা নিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো তারা। ইশা আর ফাইজার রুমটা রুকসানা আর জহির সাহেব এর রুমের থেকে কিছুটা দূরে। তাই জহির সাহেব ইশা আর ফাইজাকে রুমে দিয়ে এসে তারপর নিজেদের রুমে গেলেন। রাত হয়ে যাওয়ায় আজ আর কোথাও বেরোবেনা তারা।
রাত ১০ টা বাজে। বেশ কিছুক্ষন ধরে বেডের উপর আসন দিয়ে বসে দাঁত দিয়ে আঙুল কাটছে ইশা। ফাইজা ফোন স্ক্রোল করার মাঝেই তার দিকে নজর রাখছিল। ইশা হুট করেই ফাইজার পাশে এসে বললো,
_এই আপু তোমার বোর লাগছেনা? ঘুরতে এসে এভাবে বসে থাকলে চলে বলো?
_তো? কি করবো? দেখ এই রাতের বেলা অহেতুক বায়না ধরবিনা ইশা।
_আরে তুমি শোনোনা আমার কথা। আমি না আসার সময় শুনেছিলাম আজকে এই রিসোর্ট এর মালিক এর ওয়াইফ এর বার্থডে পার্টি আছে। আর সেখানে রিসোর্ট এর সবাই ইনভাইটেড। চলোনা আমরাও একটু ঘুরে আসি সেখান থেকে।
_ছোট আব্বুকে না জানিয়ে আমি জেতে পারবোনা বাবা।
_বাবাই তো এতক্ষনে ঘুমিয়েও পড়েছে,তাকে এখন আর জাগানোর কি দরকার বলোতো।
_কিন্তু..
_সোনা আপু,চলোনা প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
ফাইজা কিছুক্ষন ভাবলো,তারও রুমে থাকতে ইচ্ছে করছেনা এখন। ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_এই ড্রেস এই যাবি?
ইশা বুঝতে পারলো ফাইজা রাজি হয়ে গেছে। ফাইজার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো,
_ইউ আর দা বেস্ট..
#চলবে
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৩
#মেহরিন_রিম
বার্থডে পার্টিতে এসে ইশার বেশ মজাই লাগছিলো, তবে সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হয়নি। স্টেজ এ আদৃত কে উঠতে দেখেই সব আনন্দ ফুস করে উড়ে চলে গেলো। এখানেও আদৃত! চোখমুখ কুঁচকে ফেলে ইশা,লোকটা তার পিছুই ছাড়ছে না। আদৃত এখনো ইশাকে খেয়াল করেনি। তার কোনো উপায় ও নেই,স্টেজ এর সামনে আসতেই অনেক মানুষ তার সঙ্গে সেলফি তুলতে ভির জমিয়েছে। আদৃত ও বাধ্য হয়ে হাসিমুখে ছবি তুলছে তাদের সঙ্গে।
ইশা কিছুক্ষন সরু চোখে ভিড় এর দিকে তাকিয়ে রইলো। এত লোকের মধ্যে সেও যদি গিয়ে একটা সেলফি তুলে নেহ তাহলে নিশ্চই আদৃত খেয়াল ও করবে না। দু তিন মিনিট দাঁড়িয়ে চিন্তা করলো ইশা। অত:পর ছোট ছোট পায়ে এগোতে যাবে তখন ই ফাইজা বললো,
_এই কোথায় যাচ্ছিস?
_দেখছো না কত লোকজন! এর মধ্যে আমিও গিয়ে একটা সেলফি তুলে আসি,এমন সুযোগ আর পাবো বলো?
ফাইজা বারণ করলো না। ইশা চোরের মতো গিয়ে পাশ থেকে সেলফি তুলতে যাবে তখনি অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে মাথায় ধাক্কা খেলে মেয়েটা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
_সরি সরি..
_ইটস ওকে।
আশেপাশের আওয়াজ এর মাঝেও পরিচিত কণ্ঠ এসে ঠিকই পৌঁছালো শ্রবণদ্বারে। কণ্ঠ অনুসরণ করে পাশে তাকাতেই কালো রঙের ফ্লোর টাচ গাউন পরিহিত ইশাকে দেখতে পায়। প্রথমে বিষয়টা বিশ্বাস হলোনা আদৃতের, অন্যদিকে তাকিয়ে আবারো ইশার দিকে তাকালো সে। না সে সত্যিই দেখছে। পাশ থেকে আরো দু তিনটে মেয়ে বলছে, “ভাইয়া এদিকে তাকান প্লিজ”(ফোনের ক্যামেরার দিকে)।
আদৃত তখনো ইশার দিকেই তাকিয়ে ছিল, নিজের চোখকেই এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা সে। ইশা এখানে? কিন্তু কি করে?
ইশা মেয়েটাকে ইটস ওকে বলে মাথায় হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে আদৃত এর দিকে তাকাতেই দেখে সেও তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাস, সেলফি তো দূড়ের কথা আবারো আদৃতের সামনে পড়তে হলো এটা ভেবেই ইশার কষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিয়ে সাধারণভাবেই অন্যদিকে চলে যেতে গেলো ইশা,যেন আদৃত কে সে দেখেই নি।
এখনো বিষ্ময় থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছেনা আদৃত, ইশাও কি এই রিসোর্ট এই আছে? কবে থেকে? এই কদিনে তো দেখেনি একবারো,আর সকালের কথা শুনেও তো মনে হলো সে নিজের বাড়িতে।
ফাইজা একটু আশেপাশে তাকিয়ে ডেকোরেশন দেখছিল।অনেক মানুষই এসেছে এখানে।
_এক্সকিউজ মি।
পিছন থেকে কারোর গলা শুনে কিছুটা পাশে সরে গিয়ে উক্ত ব্যাক্তির দিকে তাকালো ফাইজা। আবার,আবারো সেই ব্যাক্তিকেই দেখতে পেলো যার থেকে ফাইজা দূড়ে থাকতে চাইছে।
অনেক মানুষ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকায় পূর্ণ ভিতরে যাওয়ার যায়গা পাচ্ছিল না, তাই ফাইজার পিছনে এসে তাকে একটু সরে দাঁড়াতে বলে। তবে রংবেরঙের লাইটিং এর কারণে পিছন থেকে দেখে চিনতে পারেনি ফাইজাকে। পূর্ণ ও বেশ অবাক হলো,ফাইজাকে দেখে বুঝতে পারলো সেও পূর্ণকে এখানে আশা করেনি। পূর্ণ কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_তুমি এখানে?
উত্তর দিলোনা ফাইজা। বরং নিজের দৃষ্টি নামিয়ে কিছুটা দূড়ে সরে গিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। কথা বাড়ালো না পূর্ণ। স্টেজ এর পাশে তাকাতেই দেখলো সায়ান হাতের ইশারায় ডাকছে তাকে। পূর্ণ আরো একবার তাকালো ফাইজার দিকে, অত:পর পা বাড়িয়ে সামনে দিকে চলে গেলো।
ভাগ্যের উপর ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে ফাইজা, কেন বারংবার পূর্ণ তার সামনে এসে পড়ছে? সিলেট এ এসেও এত মানুষেফ মাঝে তার সেই পূর্ণর সামনেই পড়তে হলো! মনে তো হচ্ছে তারাও এই রিসোর্ট এই উঠেছে। বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে নিলো ফাইজা, যদি তেমনটা হয় তাহলে তো আবারো পূর্ণর সামনে পরতে হতে পারে।
চোখ খুলে একটু পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো পূর্ন আর সায়ান স্টেজ এর একপাশে দাঁড়িয়ে গিটার নিয়ে কিছু একটা ঠিক করছে। আচ্ছা পূর্ণ কি গান গাইবে? পূর্ণকে খুব বেশি গান গাইতে দেখেনি ফাইজা। নিজেদের নবীন বরণে সিনিয়ররা জোড় করে পূর্নকে দিকে গান গাইয়েছিল, আর দু একবার ক্যাম্পাসে পূর্ণর গান শুনেছিল,সেটাও বন্ধুদের জোরাজোরিতে।
ফাইজার মাথায় চিন্তা এসেছিল এখান থেকে চলে যাওয়ার। তবে এখন কেন যেন আর যেতে ইচ্ছে করছেনা, যদি পূর্ণ গান গায়?
ফাইজাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশা সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলে,
_আপু,কি দেখছো?
ফাইজার চিন্তাভঙ্গ হতেই নিজেকে স্বাভাবিক বোঝানোর চেষ্টা করে ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_হ্যা আমার আবার কি হবে? তুই বল,সেলফি তুলতে পারলি?
_আর সেলফি, উনি তো আগেই আমাকে দেখে ফেললেন। ওনার সামনে গেলে আবারো দুটো কথা শোনাবেন হয়তো। থাক বাবা,দরকার নেই আমার সেলফি তোলার। আচ্ছা চলোনা রুমে চলে যাই,আর থাকতে হবেনা এখানে।
আদৃত বেশিক্ষণ ইশার দিকে নজর রাখতে পারেনি। আহনাফ এসে তাকে স্টেজ এ যেতে বলায় তাকে পূর্ণ এবং সায়ান এর সাথে স্টেজ এ উঠতে হয়। মূলত সায়ান গিটার বাজাবে,পূর্ণ এবং আদৃত গান গাইবে।
ফাইজা ইশার কথা শুনে স্টেজ এর তাকিয়ে পূর্নকে সেখানে দেখতে পায়,বুঝতে পারে পূর্ণও আদৃতের সঙ্গে গান গাইবে।
_কি দেখছো আপু? যাবে এখান থেকে?
_না মানে এলাম যখন এত তাড়াতাড়ি চলে যাবো? মনে তো হচ্ছে গানবাজনা ও হবে এখানে।
ইশা কিছুটা ভেবেচিন্তে বললো,
_তা অবশ্য ঠিক বলেছো। লোকটা যেমন ই হোক গানটা উনি ভালোই গায়।
_ত তাহলে বরং আমরা গান শুনে তারপর ই যাই?
_ঠিক আচ্ছে,তুমি থাকলে আমিও আছি।
___
ফাইজা থাকবে বললেও খুব বেশি সময় থাকেনি সেখানে। দশমিনিট পড়েই ইশাকে নিয়ে চলে এসেছিল রুম এ। পূর্ণর ভাবনা থেকে বেড় হতে চেয়েছিল,ভেবেছিল এখানে এসে অন্তত পূর্ণকে কিছুটা ভুলে থাকতে পারবে। সেখানে ঠিক বিপরীত বিষয় ঘটছে।
আদৃত গান গাওয়ার সময় ইশাকে খেয়াল করেছিল। তবে কিছুক্ষন পড়েই তাকে বেড়িয়ে যেতে দেখে আদৃত ও গানটা শেষ করে পূর্নকে বাকিটা সামলে নিতে বলে বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে। ওদের ফলো করতে করতে দেখতে পায় আদৃতদের ঠিক পাশের রুমটাতেই যাচ্ছে। কিন্তু আদৃতের স্পষ্ট মনে আছে গতকাল এই রুমে সে অন্য লোক দেখেছিল,তার মানে ওরা আজকেই এসেছে।
ইশা,ফাইজা রুমে চলে যেতেই আদৃত কিছুক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত কিনা দুটো মেয়েকে ফলো করলো সে!
ইশা আর ফাইজা রুমে এসেছে অনেক্ষন আগে। তবে ইশার এখনো ঘুম আসছে না, ছয় ঘন্টা গাড়িতে বসে ঘুমিয়েছে,এখন আর ঘুম কি করে আসবে। আর ফাইজা, তার ঘুমতো সেই কখনই উড়ে গেছে। ফাইজা গিয়ে ব্যালকনি তে একটা চেয়ারে বসে আছে। ইশা এতক্ষন ফোন ঘাটলেও এখলন আর ভালো লাগছে না,ফাইজাও কেমন চুপচাপ বসে রয়েছে। ইশা তাই ফোনটা রেখে বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনি তে চলে গেলো,ফাইজার পাশেই আরেকটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
ফাইজা এবার ইশার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,
_কি হয়েছে? ঘুম আসছে না এখনো?
ইশা মাথা নাড়লো অর্থাৎ তার ঘুম আসছে না।
পূর্ণ কিছুক্ষন আগে ব্যালকনিতে এসেছিল ফোন এ কথা বলতে। তখনই তার নজর যায় পাশের ব্যালকনির দিকে। ফাইজা তখন ব্যালকনির গ্রিল এ মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। পূর্ণ সামনে থেকে না দেখলেও পিছন থেকে দেখে ঠিকই বুঝতে পারলো এটা ফাইজা। ফোনে কথা বলা শেষে ব্যালকনির দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ন দৃষ্টি ফাইজার উপর নিমজ্জিত রাখলো।
ফাইজা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে কিছুটা নড়েচড়ে বসলো। শান্ত কণ্ঠে ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
_ইশা, তোর নিরবের কথা ভেবে মন খারাপ হয় এখনো?
ফাইজার এমন প্রশ্নে ইশা কিছুটা অবাক হলো।
_ওতো আমাকে কখনো ভালোই বাসেনি,তাই আমিও ভেবেছি ওর জন্য মন খারাপ করবো না।
ফাইজা স্মিত হাসলো,দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আপনমনেই বললো,
_সবাই যদি তেমনটা করতে পারতো, কি ভালোই না হতো। তাই না?
_কিছু বললে আপু?
_উম হু..। ছাড় তো, চল তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি।
ইশা ফাইজার কথায় রুমে চলে গেলো। ফাইজাও উঠে দাঁড়িয়ে রুমে আসতে যাবে তখনি তার চোখ পরে পাশে ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে থাকা পূর্ণর দিকে। ফাইজাকে আচমকা এভাবে তাকাতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে পূর্ণ। আশেপাশে তাকিয়ে ফোনটা কানে ধরে কারোর সঙ্গে কথা বলছে এমন বোঝায়। ফাইজা কিছুটা অবাক হয়, পুর্ন কি এতক্ষন তার দিকে তাকিয়ে ছিল? ইশার ডাকে ব্যালকনি থেকে রুমে চলে এলো ফাইজা। মনে মনে ভাবলো,
_হয়তো ফোনেই কথা বলছিল,আমি শুধুশুধুই ভাবছি এত।
ফাইজা চলে যেতেই হাফ ছেড়ে বাচলো পূর্ণ। পিছনে ঘুরে রুমে যেতে নেবে তখনই দেখতে পায় আদৃত তার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পুর্ন কিছু না বলেই আদৃত এর পাশ থেকে রুমে চলে এলো।
আদৃত কিছুক্ষন পাশের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,
_নাহ, এবার অন্তত ফাইজাকে সবটা জানানো দরকার।
#চলবে