#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৫ (বোনাস পর্ব)
#মেহরিন_রিম
_আমি না গেলে হয়না ইশা?
আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল বাধছিল ইশা। তখন ই পিছন থেকে ফাইজা এসে তাকে এই প্রশ্ন করে। চুলে বেণী করা শেষ হলে ইশা ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুমি না গেলে আম্মুকে মানাতে ঝামেলা হয়ে যাবেতো আপু। কেন তোমার কোনো কাজ আছে?
_হ্যা রে একটু বই কিনতে যেতাম আরকি। আচ্ছা একটা কাজ করা যায়তো। মোহনা যখন যাবেই তাহলে তুই ওর সাথে ফিরে আসিস। আমরা একসাথে বের হবো তাহলে আর ছোট আম্মু কিছু বলবে না।
ইশা এসে ফাইজার গালদুটো টেনে দিয়ে হাসিমুখে বললো,
_উফ,এইজন্য তোমাকে আমি এত্ত ভালোবাসি জানোতো আপু। এত ভালো ভালো আইডিয়া তোমার মাথায় কি করে আসে বলতো।
_হয়েছে আর পাম দিতে হবেনা। কিন্তু দেখিস বোন, বেশি দেড়ি করিস না কিন্তু। তাহলে আবার ছোট আম্মু চিন্তা করতে পারে।
_আরে তুমি এসব নিয়ে ভেবোনা তো,আমি তাড়াতাড়ি ই চলে আসবো। এখন তুমি জলদি রেডি হয়ে এসো তো।
_জাস্ট পাঁচ মিনিট।
ফাইজা বেড়িয়ে যেতেই ইশা খাটে বসে পা নাড়াতে নাড়াতে ভাবতে লাগলো,
_কি এমন সারপ্রাইজ দেবে নিরব ভাইয়া? আবার বিদেশ টিদেশ চলে যাচ্ছে নাতো? না না, তাহলে তো তুই মিঙ্গেল হওয়ার আগেই সিঙ্গেল হয়ে যাবি ইশা! আচ্ছা আমিতো এমনিতেও সিঙ্গেল,যাই হোক সেটা বড় কথা নয়।
_ইশা আমি রেডি, নিচে আয়।
ফাইজার ডাকে ইশা উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে গিয়ে নিজের বেণী টা সামনে এসে কিছুক্ষন দেখলো। তারপর উচ্চস্বর এ “আসছি” বলে নিচে চলে গেলো।
ইশা নিচে আসতেই রুকসানা নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে বললেন,
_কিরে কোথাও যাচ্ছিস তোরা?
ইশা ফাইজার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
_হ্যা আম্মু,ঐ নিরব ভাইয়া বলেছে আমাদের ট্রিট দেবে তাই যাচ্ছি। ফাইজা আপুও যাচ্ছে আমার সাথে,আর মোহনাও যাবে।
রুকসানা বেগম আপত্তি করলেন না। সোফায় বসে বললেন,
_ঠিক আছে যা। আবার বেশি কিছু খেতে যাসনা। রাতে কাচ্চি রান্না করবো, বাহিরের খাবার খেয়ে গ্যাস্ট্রিক বাড়িয়ে আসলে কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই।
_ঠিক আছে,ঠিক আছে।
_এই দাঁড়া,গাড়ি নিয়ে যা তোরা।
ইশা আর ফাইজা একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর ইশা আপত্তি জানিয়ে বলল,
_না না আম্মু, এর সুন্দর বিকেলে গাড়ি নিয়ে বের হবো কেন? আমরা হেটেই যাবো আর নাহলে রিক্সার করে চলে যাবো।
_হ্যা ছোট আম্মু,আর গাড়ি নিয়ে যেতে হবেনা।
_ঠিক আছে তোদের ইচ্ছে।
ইশা আর ফাইজা একই সাথে বাইরে বেরিয়ে মোহনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। মোহনা এসে পৌঁছানোর পর ফাইজা বই কেনার উদ্দেশ্যে চলে গেল, অন্যদিকে ইশা আর মোহনা গেলো কলেজের উদ্দেশ্যে।
_ইশা,আমার না একটু ডাউট হচ্ছে।
ইশা ভ্রু কুঁচকে মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কিসের ডাউট?
_নিরব ভাইয়াকে অনেকদিন ধরে দেখছি ফোনের মধ্যে ডুবে থাকতে,কেন তুই খেয়াল করিসনি।
_হ্যা করেছি তো?
_তো মানে? তুই কিছু আন্দাজ করতে পারছিস না?
ইশা যে একদমই কিছু আন্দাজ করেনি তা নয়। তবে নেগেটিভ চিন্তা থেকে দূড়ে থাকতে মোহনাকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল,
_দেখ আমার আন্দাজ কখনো সঠিক হয়নি তাই আমি কিছু আন্দাজ করতেও যাবোনা। আর তুই এত নেগেটিভ ভাবছিস কেন বলতো, বি পজিটিভ ইয়ার..
_হ্যা তুমি থাকো তোমার চিন্তা নিয়ে।
ইশা ভেঙচি কেটে সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলো। মোহনার কথায় পাত্তা না দিলেও ইশা নিজেই অনেকটা আন্দাজ করতে পারছে নিরবের সারপ্রাইজ এর ব্যাপারে। সেসব ভাবলে এখনই মনটা খারাপ হয়ে যাবে তাই আর মাথা ঘামাতে চাইলো না ইশা। গেলেই বুঝতে পারবে কি সারপ্রাইজ নিরব এর।
___
বই পড়ার নেশাটা ফাইজার অনেক আগে থেকেই। মূলত পূর্নর থেকেই এই অভ্যাস আয়ত্ত করেছে সে। ভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকেই দেখতো পূর্ন যখন ই বসে থাকে কোথাও তখন ই তার হাতে একটা বই থাকবেই। বিশেষ করে গোয়েন্দা বিষয়ক থ্রিলার বই তার বেশ পছন্দ ছিল। ফাইজাও সেই থেকে বই পড়ার ভালোই অভ্যাস তৈরি করেছে, বিশেষ পূর্নকে ভোলার জন্য বই পড়াটা তার কাছে মেডিসিন এর মতো।
বুক শপ এ এসে অনেক খোজার পর নিজের কাঙ্ক্ষিত বইটি খুজে পেলো ফাইজা। তবে যখন ই বইটা নিতে যাবে তখনি পাশ থেকে আরো একটি হাত এসে পড়ে একই বই এর উপর। পাশ ফিরে তাকাতেই থমকে যায় ফাইজা।
পূর্ন ও এই বইয়ের উদ্দেশ্যেই এসেছিল এখানে। ফাইজা কে দেখে ও নিজেও বেশ অবাক হয়ে যায়। নিজেদের অজান্তেই একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে দুজন।
বেশ কিছুটা সময় পেড়িয়ে গেলো এভাবেই। হঠাৎ পাশ থেকে কারোর আওয়াযে ধ্যান ভাঙলো দুজনের।
_আপু,ভাইয়া আপনারা কেউকি বইটা নিবেন? নাহলে আমি এটা নিতাম আরকি।
চমকে ওঠে দুজন, ঝড়ের বেগে হাত সরিয়ে কিছুটা দূড়ে সরে যায় ফাইজা। পূর্নও বইয়ের উপর থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়। তাদের দুজনের থেকে উত্তর না পেয়ে তৃতীয় ব্যাক্তিটি ই বইটি নিয়ে যায়।
____
অফিস থেকে বেড়িয়ে পাশের একটা কফিশপে বসে কফি খাচ্ছিল আদৃত,মাথার মধ্যে তার এখনো ইশার চিন্তাই ঘুড়ে বেরাচ্ছে। বিল দেওয়ার জন্য সামনে থাকা লোকটিকে ডাকতে যাবে তখনি আদৃতের চোখ যায় অপর পাশের একটা টেবিলের দিকে। খেয়াল করে দেখে বুঝতে পারে সেখানে নিরব একটা মেয়েকে নিয়ে বসে আছে,বেশ হেসে হেসে কথা বলছে তারা। তাদের দেখে যে কেউ বলবে যে তারা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড। আদৃত এই নিয়ে ভাবতে চাইলো না। বিলটা দিয়ে বেড়িয়ে যাবে তখনি তাদের কিছু কথা কানে আসে আদৃতের। বুঝতে পারে নিরব এখন মেয়েটাকে নিয়ে কলেজে যাবে বন্ধুদের সাথে আলাপ করাতে।
আদৃত বেড়িয়ে এলো কফিশপ থেকে। কেন যেন মনে হলো ইশাও সেখানে আসবে। কিছু একটা ভেবে বাইক নিয়ে কলেজের দিকে গেলো আদৃত।
তার কিছুক্ষন এর মধ্যেই নিরব ও সেই মেয়েটিকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় কফিশপ থেকে।
___
কলেজে এসে বেশ কিছুক্ষন ধরে নিরব এর জন্য অপেক্ষা করছে ইশা,মোহনা সহ নিরবের আরো দু তিনজন বন্ধু।
তাদের কথা শুনে এতক্ষনে ইশা বেশ ভালোই আন্দাজ করতে পারছে যে তার নেগেটিভ ভাবনাটা সত্যি হলেও হয়ে যেতে পারে। ইশা বেশ মনমরা হয়ে বসে আছে আর মোহনা তাকে বিভিন্ন কথা বলে তার মন ভালো করার চেষ্টা করে চলেছে।
যেই ভাবনা নিয়ে ভয় পাচ্ছিল সেটাই সত্যি হলো। একটা মেয়ের হাত ধরে কলেজে ঢুকলো নিরব। মেয়েটাকে আগেও দেখেছে ইশা। পাশের কলেজেই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ে মেয়েটা। নিরব সবার নিকট মেয়েটাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিলো নিরব। সবাই ট্রিট দেওয়ার জন্য নিরব কে জোড় করতেই নিরব বলে উঠলো,
_আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে খাওয়াবো। এই ইশা? কি হয়েছে তোর,চুপ করে আছিস যে?
মোহনা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ইশার মনের অবস্থাটা। ইশা অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে বললো,
_কই না তো, আচ্ছা আম্মু না আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলছে। আমার ট্রিটটা নাহয় অন্যদিন নিয়ে নেবো কেমন।
কথাটা বলে ইশা সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে মোহনাও তার সঙ্গে চলে এলো সেখান থেকে। অন্যদিকে এতক্ষন ধরে সবটাই দূর থেকে দেখছিলো আদৃত। ইশা কলেজ থেকে বেড়িয়ে যেতেই আদৃত ও বেড়িয়ে আসে কলেজ থেকে।
#চলবে
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৬
#মেহরিন_রিম
পূর্ন তাকিয়ে দেখলো বইটার আরো একটা কপি আছে সেখানে। ফাইজা চলে যেতে নিলেই সে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,
_তুমি নিয়ে যাও বইটা, আমি অন্য সময় এসে নেবো নাহয়।
ফাইজা থমথমে গলায় বলল,
_দ দরকার নেই,আপনি নিয়ে যান।
পূর্ন ফাইজা সামনে এসে বইটা ওর হাতে দিয়ে বলে,
_তুমি না নিলেও এটা আমি এখন নেবোনা। তাই বলছি নিয়ে যাও।
ফাইজা পূর্নর হাতে আবার বইটা দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
_বললাম তো আমার দরকার নেই। আপনার নেওয়ার হলে নিন,নাহলে রেখে যান।
কথাটা বলে ফাইজা পাশ থেকে চলে যেতে নিলে পূর্ন নিজের স্থানে স্থির থেকে বলে,
_কারণ টা কি আমি?
কথাটা বলেই পিছনে ঘুরে তাকায় পূর্ন। ফাইজা সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
_আপনি আমার কাছে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নন, তাই এমনটা ভাবার কোনো মানেই হয়না।
ফাইজা বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে, আর পূর্ন একদৃষ্টিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। ফাইজার এমন কঠোর রূপের সাথে সে মোটেই পরিচিত নয়। এই ফাইজা কে বড্ড অপরিচিত মনে হচ্ছে তার। তাচ্ছিল্যের সূরে শব্দহীন হাসে পূর্ন। মনে মনে ভাবে,
_এমন টাই তো চেয়েছিলাম আমি, আমার উদ্দেশ্যে আমি সফল। তবুও কেন ওর এমন ব্যবহার আমার মনে কষ্টের সৃষ্টি করছে? হাহ, বাস্তবতা বড্ড কঠিন।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পূর্ণ। হাতে থাকা বইটা রাখতে গিয়েও রাখলোনা । ফাইজা যে এই বই এ জীবনে আর কিনবেনা সেটা ভালো করেই বোঝা হয়ায়ে গেছে তার, তাই বইটা নিজেই নিয়ে নিলো সে।
__
কলেজ থেকে বেড়িয়েই রিক্সায় উঠে পড়লো ইশা আর মোহনা। ইশা মুখে কিছুই বলছে না, কেবলই তার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। মোহনা তাকে শান্ত করার জন্য বলল,
_ইশা আমি তোকে আগেই বলেছিলাম, তেমনটাই হলো। আর তুই নিরব ভাইয়া জন্য কাঁদছিস? ও তো তোকে কখনো ভালোই বাসেনি।
_কিন্তু আমিতো বেসেছিলাম মেহু, তুই আমার দিকটা বুঝতেই পারছিস না।
_বুঝতে পারছি আমি, কিন্তু এখন একটা ছেলের জন্য কেঁদেকেটে অসুস্থ হওয়ার কোনো মানেই হয়না ইশা। আন্টি যদি বুঝতে পারে তখন কি বলবি তুই?
ইশা চুপ করে রইলো। মোহনা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_মামা এখানেই দাড়ান। ইশা আমার একটু ফুফির বাসায় যেতে হবে। আমি এখানেই নেমে যাই,তুই চলে যা বাসায়।
ইশা চোখের জলটুকু হাত দিয়ে মুছে বলল,
_আমি একা রিক্সায় যাবোনা। আমিও নেমে যাই এখানে, হেটে চলে যাবো।
মোহনা আর ইশা সেখানেই নেমে গেলো। মোহনা ইশাকে বুঝিয়ে ওর ফুফির বাসার দিকে চলে গেলো। একদম আশ্রমের সামনেই নেমেছে তারা। ইশা সেদিকে তাকিয়েই দেখতে পেলো আয়শা আশ্রমের উঠোনে একটা চেয়ারে বসে রয়েছেন। এই কদিনে আয়শার সঙ্গে বেশ ভালোই সখ্যতা গড়ে উঠেছে ইশার। ইশা অনেক সময়ই তার সঙ্গে এসে গল্প করে, আয়শার ও ইশার সঙ্গে কথা বলতে খুব ভালো লাগে।
ইশা মন খারাপ করেই আশ্রমের দিকে যেতে লাগলো। অন্যদিকে আদৃত ও ওদের ফলো করে এদিকেই আসছিল, সে এর আগেও দেখেছে ইশাকে এই আশ্রমের দিকে যেতে। আদৃতের জানতে ইচ্ছে করলো ইশা কি করতে যাচ্ছে এখানে,তাই সে বাইক নিয়ে কিছুটা আড়াল থেকে ইশার দিকে নজর রাখলো।
আয়শা আশ্রমের গেইটের পাশে একটা চেয়ারে বসে চোখে চশমা পরে কাথা সেলাই করছিলেন। ইশা তার পাশে এসে মুখ গোমড়া করে আরেকটা চেয়ারে বসে পরে।
ঘাড় ঘুরিয়ে ইশাকে দেখেই আয়শার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তবে পরক্ষণেই তার গোমড়া মুখ থেকে অবাক হয় আয়শা, ইশাকে সবসময় সে হাসিখুশি থাকতে দেখেছে কখনো এমন মন খারাপ করে থাকতে দেখেনি। আয়শা কাথাটা পাশে রেখে ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_কি হয়েছে ইশা? মন খারাপ করে আছিস কেন? পরীক্ষা ভালো হয়নি বুঝি?
ইশা টলমলে চোখে একবার আয়শার দিকে তাকায়। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ইশার কান্না দেখে আয়শা অবাক হয়ে যায়। ইশার মুখটা দুহাতে ধরে সামনে এনে বলে,
_কি হয়েছে মা,কাঁদছিস কেন? না বললে আমি বুঝবো কি করে? বাড়িতে মা বকেছে?
ইশা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। আয়শা ইশার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলেন,
_তাহলে?
ইশা নিজের কান্না নিয়ন্ত্রনে এনে সবটা খুলে বলে আয়শা কে। সবটা শোনার পর আয়শা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন মা। হয়তো ছেলেটা তোর জন্য ভালো ছিলোনা তাই তুই তাকে পাসনি, তুই ওর চেয়ে আরো অনেক ভালো ছেলে পাবে নিজের জীবনে।
_কিন্তু আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আন্টিমনি।
_এগুলো ক্ষনিকের কষ্ট মা, তুই বরং ওকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা কর। দেখবি তখন আর কষ্ট হবেনা ওর জন্য। দেখবি, তোর জীবনে একদম রাজপুত্রের মতো ছেলে আসবে।
আরো কিছুক্ষন আয়শার সঙ্গে কথা বলল ইশা। আদৃত তাদের সব কথাই আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছে। ইশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে তার মোটেই ভালো লাগছে না। ইশার মুড ঠিক করার কথা ভেবে আদৃত রাস্তার পাশে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইশা নিজের চোখ মুছে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই সামনে আদৃত কে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাতে দেখতে পেলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আপনি এখানে?
আদৃত ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকালো। তারপর নিজের ফোনটা পকেটে রেখে তার সামনে গিয়ে বলল,
_কেন? রাস্তাটা কি তোমার কেনা নাকি?
অন্য সময় হলে হয়তো ইশা রেগে গিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিতো,আদৃত ও তেমনটাই ভেবেছিল। কিন্তু বর্তমানে ঝগড়া করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ইশার নেই। তাই সে কিছু না বলেই চলে যেতে নেয়। আদৃর বেশ অবাক হয়, ইশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
_কি ব্যাপার,ঝগড়া করলে না যে? নাকি শোকে কাতর হয়ে ঝগড়া করতেই ভুলে গেছো?
আদৃতের কথা শুনে ইশা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আপনি এতক্ষন আমার কথা শুনছিলেন?
থতমত খেয়ে গেলো আদৃত। তবে সেটা প্রকাশ না করে ইশার সামনে গিয়ে বলল,
_তোমার কথা শোনার কোন ইচ্ছে নেই আমার। কিন্তু তোমার যা গলার স্বর,অনেক দূর থেকেও তা শোনা যায়।
ইশার ঠিক বিশ্বাস হলোনা আদৃতের কথা,কেননা সে মোটেই জোড়ে জোড়ে কথা বলেনি। তবে এ নিয়ে খুব বেশি ভাবলোনা ইশা, আদৃত কিছু শুনলে শুনুক তাতে তার কি।
ইশাকে চুপ থাকতে দেখে আদৃত বুকে হাত গুজে বলল,
_চোখে রঙিন চশমা পড়ে থাকলে এভাবেই কাঁদতে হয়।
এবার কিছুটা রাগ হলো ইশার। তবে সে গম্ভীর সুরে বলল,
_আমি চোখে রঙিন চশমা পরবো নাকি সাধারণ চশমা পরবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা।
কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেল ইশা। আদৃত তো ইশার মন ভালো করার জন্য এমনটা বলেছিল,কিন্তু সে এটা কি বলে গেল? আদৃত মনে মনে ভাবলো,
_ভুল কিছুতো বলেনি। আসলেই তো, ওর লাইফ ও যা খুশি করবে। আমি কেন তা নিয়ে ভাবতে যাচ্ছি?
নিজের কাধে কারোর স্পর্ষ টের পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো আদৃত। আয়শা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_ইশাকে চেনো বুঝি তুমি?
আদৃত কি বলবে বুঝতে পারলো না। আমতা আমতা করে বললো,
_হ্যা মানে কিছুটা..
আয়শা মুচকি হেসে বললেন,
_তুমি যে আমাদের কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলে সেটা কিন্তু আমি আগেই দেখেছি।
আদৃত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়শা হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_থাক,কিছু বলতে হবেনা। আর তুমি চিন্তা করোনা আমি ইশাকে কিছু বলবোনা।
চুপ করে রইলো আদৃত। আয়শা তার গায়ে হাত বুলিয়ে সামান্য হেসে বললেন,
_মেয়েটা বড্ড সহজ সরল। ওকে কিছু বলতে চাইলে ঠিক সময়ে বলে দিও…
কথাটা বলে আয়শা চলে গেলেন সেখান থেকে। আর আদৃত একই জায়গায় দাড়িয়ে মনে মনে তার কথার অর্থ খুজতে লাগলো।
#চলবে
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৭ (বোনাস পর্ব)
#মেহরিন_রিম
ফাইজা বুকশপ থেকে বেড়িয়েই রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে এলো। পূর্নর কথা ভেবে একদম ই কষ্ট পেতে চায়না সে।
কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে রুকসানা দরজা খুললেন। ফাইজা ভিতরে ঢুকতেই সে জিজ্ঞাসা করলেন,
_ইশার কি কিছু হয়েছে ফাইজা?
ফাইজা রুকসানার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
_কেন? ও ফেরেনি এখনো?
_সেতো অনেক আগেই ফিরেছে। কিন্তু ওর চোখমুখ থেকে স্বাভাবিক মনে হলোনা। আবার আমি জিজ্ঞেস করতে ঘরে গেলাম, কিন্তু সে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। যাওয়ার আগে তো সব ঠিক ই ছিল,হঠাৎ করে কি হলো বলতো?
ফাইজা কিছু বুঝতে পারলো না। তাই মুচকি হেসে রুকসানার সামনে গিয়ে বললো,
_আরে তুমি চিন্তা করোনা তো, ঐ বন্ধুদের সাথে একটু ঝগড়া হয়েছিল তো তাই হয়তো মন খারাপ করে আছে। আমি দেখছি গিয়ে, তুমি না কাচ্চি রান্না করবে? কাচ্চি দেখলে ইশার মন আপনা আপনিই ভালো হয়ে যাবে।
_ঠিক ই বলেছিস,আচ্ছা তুই ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
_হুম।
ফাইজা উপরে উপরে স্বাভাবিক থাকলেও রুকসানার কথা শুনে তারও কিছুটা চিন্তা হচ্ছে। তাই সে নিজের ঘরে না গিয়েই আগে ইশার ঘরের দিকে গেলো। ইশার ঘরের সামনে এসে দেখলো দরজা বন্ধ। ফাইজা কয়েকবার দরজায় নক করে বলল,
_ইশা আমি, দরজা আটকে রেখেছিস কেন? দরজা খোল।
ইশা বালিশে মুখ গুজে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল। ফাইজার গলার আওয়াজ পেয়ে ইশা বিছানা থেকে উঠে এসে দরজা খুলে দেয়। ফাইজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশা তাকে জড়িয়ে ধরে, ফাইজা ঠিক বুঝতে পারলো না ইশার কি হয়েছে। ইশাকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলল,
_এই মেয়ে কি হয়েছে তোর? চোখ মুখ এর কি হাল বানিয়েছিস।
ইশা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফাইজা কে সবকিছু বলতে লাগলো।
___
_ভালোবাসার মানে কি পূর্ণ?
ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে সিগারেট হাতে কথাটা বলল আদৃত। পূর্ণ রুমে সোফায় বসে কিছু কাজ করছিল। আদৃত এর এমন প্রশ্ন শুনে ল্যাপটপ টা রেখে ব্যালকনির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
_কি বললি?
আদৃত সিগারেট এর ধোয়া ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে,
_আই সেইড, হুয়াট ডু ইউ মিন বাই লাভ?
পূর্ণ আদৃতের পিছনে এসে তার কাধে হাত দিয়ে মজার সুরে বললো,
_আদৃত মেহরাজ কি প্রেমে পড়লো নাকি?
মাথা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে হাসলো আদৃত। পিছন ফিরে পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলল,
_যা জিজ্ঞেস করলাম সেটা তো বল।
_এমনভাবে জিজ্ঞেস করছিস যেন আমি কোন মস্তবড় প্রেম বিশেষজ্ঞ!
_ভালো তো বেসেছিস।
চুপ করে গেল পূর্ণ। আদৃত সামান্য হেসে বলল,
_অস্বিকার তো করতে পারবিনা। বলতে পারবি তুই কখনোই ফাইজাকে ভালো বাসিসনি?
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পূর্ণ। মুচকি হেসে বলে,
_ভালোবাসা বলে কয়ে হয়না, অপ্রত্যাশিত ভাবেই হয়তো কাউকে ভালোবেসে ফেলি আমরা। কখনো সেটা ভালো আবার কখনো দুজনের জন্যই ক্ষতিকর।
পূর্ন ব্যালকনি থেকে রুমে চলে আসে। ফাইজার জন্য তার মনে কোন অনুভূতি আছে কিনা এটা তার পক্ষে বলা মুশকিল। থাকলেও সেটা অব্যাক্ত রাখাই উচিৎ বলে পূর্নর ধারনা।
আদৃত আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট এ টান দিলো। আজকাল নিজেকেই ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনা সে। নিজের মনকে যা বোঝাচ্ছে আর তার মন যা বুঝছে তা সম্পূর্ণই ভিন্ন।
___
_আমি তোকে আগেই বুঝিয়েছিলাম ইশা, কাউকে এভাবে ভালোবাসিস না। এগুলো কেবলই বয়সের দোষ, দেখবি কয়েকদিন পড়ে ঠিকই ভুলে গেছিস নিরব কে।
মুখে এমনটা বললেও ফাইজা নিজেই বুঝতে পারে সত্যিকারের ভালোবাসা এত সহজে ভোলা যায়না, তা শুধুই তাড়া করে বেরায়। চাইলেও সেখান থেকে বেড়িয়ে আসা যায়না। তবুও ইশাকে শান্ত করার জন্য কথাগুলো বলছে ফাইজা, আর ফাইজার ধারণা ইশা যেটাকে ভালোবাসা বলে দাবি করছে সেটা কেবলই তার মোহ।
ইশা চুপ করে ফাইজার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, ফাইজা এত কিছু বললেও তার মুখে কোনো কথা নেই। ফাইজা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
_এই ইশা,কিছু তো বল। এই চুপ করে থাকাটা কিন্তু তোর সাথে মানাচ্ছে না। আর নিরব তো তোকে কখনো ভালোই বাসেনি।
ইশা চোখ তুলে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলে,
_কিন্তু কেন আপু? কেন ভালোবাসেনি আমায়? যেখানে সবাই বুঝতে পেরেছে আমি নিরব ভাইয়াকে পছন্দ করি সেখানে ও কেন বুঝতে পারলোনা?
উঠে বসলো ইশা। করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
_আমি কি দেখতে খুব খারাপ যে আমাকে ভালোবাসা যায়না? মুখে বলিনি বলে কি ও একটুও বুঝবে না?
ফাইজা মুচকি হেসে বলে,
_সবসময় সব কথা মুখে বলতে হয়না রে পাগলি। তোকে যে ভালোবাসবে, তোর না বলা কথাগুলোও সে বুঝতে পারবে। তুই আর একটু বড় হলেই বুঝতে পারবি সবটা, তখন নিজের এই কান্নার কথা চিন্তা করে নিজেই অবাক হবি। মিলিয়ে নিস আমার কথা।
রুকসানা নিচ থেকে ডাক দিয়ে বলেন,
_ফাইজা,ইশা খেতে আয় তোরা।
ফাইজা ইশার গালে হাত দিয়ে বলে,
_অনেক হয়েছে কান্নাকাটি। তোর ফেভারিট কাচ্চি রান্না করেছে ছোট আম্মু, বিকেলেও কিছু খাসনি নিশ্চই। চল খেতে যাবি এখন।
_আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা আপু। তুমি আম্মুকে একটু বলে দিও আমার গ্যাস্ট্রিক এ প্রবলেম হচ্ছে তাই খেতে পারবোনা।
_এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে ইশা। আমি কিন্তু ছোট আম্মুকে গিয়ে সবকিছু বলে দেবো,তখন ভালো হবে তো?
_আমার সত্যি ই খেতে ইচ্ছে করছেনা আপু।
_কোনদিন তুই রাতে না খেয়ে ঘুমিয়েছিস শুনি? এবার শরীর খারাপ করবে তো বোন, চল আমি খাইয়ে দেবো তোকে।
_কিন্তু আপু…
_কোনো কিন্তু নয়,চল আমার সঙ্গে।
জোড় করে ইশাকে খেতে নিয়ে গেল ফাইজা। তবে তাকে খুব বেশি খাওয়াতে পারলো না। রুকসানা বেশ অবাক হলেন, যেই মেয়ে কাচ্চি পেলে অন্যদিনের চেয়ে ডাবল খেয়ে নিতে পারে। সেই মেয়ের কিনা খাওয়ার প্রতি কোনো আগ্রহ ই নেই। ফাইজা কে জিজ্ঞেস করলে ও কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিলো তাকে।
___
এরই মাঝে আরো সাতদিন কেটে গেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কতকিছু করবে বলে ঠিক করে রেখেছিল ইশা,কিন্তু তার কিছুই করা হয়নি এই কদিনে। এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে ইশা, তবুও অধিকাংশ সময়ই মন খারাপ করে বসে থাকে। ফাইজা তাকে আরো তিনদিন আগে থেকে ঘুরতে যাবে বলতে বলতে আজকে রাজি করাতে পেরেছে। ইশাও ভাবছে একটু ঘুড়তে গেলে হয়তো মনটা ভালো হবে তার।
#চলবে