#তুমিময়_প্রাপ্তি
#পর্ব_১ (সূচনা পর্ব)
#মেহরিন_রিম
_মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের গায়ে হাত তোলার সাহস কি করে হয় আপনার? আপনি জানেন,আমি চাইলে এক্ষুনি এখানে পুলিশ ডাকতে পারি।
পিঠে গিটার ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বললো সদ্য সতেরো তে পা দেওয়া ইশা।
আদৃত সরু চোখে তাকিয়ে তার কথাগুলো শুনছিল। একবার ইশার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করে তার দিকে কিছুটা এগোতে লাগলো।
ইশার সামনে এসে স্বাভাবিকভাবে বললো,
_ডাকো।
ইশা এতক্ষন উপরে উপরে নিজের সাহসিকতা বজায় রাখলেও এবার যেন কিছুটা ভয় পেলো। একটা শুকনো ঢোক গিললো সে, তবে এই ভয়টা প্রকাশ করলে চলবে না। ইশাকে চুপ থাকতে দেখে আদৃত আবারো বললো,
_কি হলো,ডাকো কাকে ডাকবে। আমিও দেখি তোমার কত ক্ষমতা।
ইশা এবার আদৃত এর সামনে আঙুল নাচিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ছেলে ‘জা…ন’ বলে চিৎকার করে দৌড়ে আসে সেখানে। ইশার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার সামনে গিয়ে কাঁদোকাঁদো ভাব নিয়ে বলে,
_জান তুমি ঠিক আছো তো! জানো আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। একটু ঝগড়াই নাহয় করেছি, কিন্তু তার জন্য তুমি এমন একটা কাজ করতে যাবে!
ওদের দুজনের কথা যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ইশার। আদৃত এর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সে বুকে হাত গুজে গম্ভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশা এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
_এই মেয়ে,এসব কি বলছো তোমরা?
মেয়েটা মাথা নিচু করে পাশে থাকা ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল,
_আসলে ও আমার বয়ফ্রেন্ড। ওর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল বলেই আমি রাগ করে আশেপাশের না দেখেই রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটছিলাম। আরেকটু হলে তো গাড়িটা আমার উপর দিয়েই চলে যেতো। এই ভাইয়াই (আদৃত এর দিকে দেখিয়ে) তো আমাকে বাঁচালো। তাইতো রেগে গিয়ে একটা চ*ড় মে*রে*ছিলো। কিন্তু তুমিতো আমার কথা না শুনিয়ে ভাইয়াকে এতকিছু বলতে লাগলে।
ছেলেটা এবার আদৃত এর দিকে গিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানালো,অত:পর মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। এদিকে ইশার তো মন চাচ্ছে ছুটে পালিয়ে যেতে, কেন যে নিজের সাহসিকতার পরিচয় দিতে এসেছিল। মনেমনে নিজেকেই কয়েকশত গা*লি দিচ্ছে সে। আদৃত একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
_কী? ডাকবে না পুলিশ?
ইশা একটা মেকি হাসি দিয়ে আদৃত এর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
_আসলে আমি না বুঝতে পারিনি, কিছু মনে করবেন না হ্যা।
ইশা কথাটা বলতেই তার পাশে মোহনা উপস্থিত হয়। ইশার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
_কিরে,তুই এখানে কি করছিস? আমিতো তোকে ওদিকে…
আদৃত এর দিকে চোখ পড়তেই থেমে যায় মোহনা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে,
_আদৃত মেহরাজ!
আদৃত অনিচ্ছাকৃত মুচকি হাসি দেয়। মোহনা এবার ভীষণ খুশি হয়ে আদৃত এর সাথে হাত মেলাতে মেলাতে বলে,
_আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান ভাইয়া, আপনার গান যে আমার এত্ত ভালোলাগে। একটা সেলফি,প্লিজ ভাইয়া..
কথাটা বলেই আদৃত এর সাথে সেলফি তুলতে লাগল মোহনা। অন্যদিকে তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ইশা। মনে মনে বলল,
_ইনি সেই আদৃত! তুই এনাকে চিনতে পারলি না ইশা? না না, যে করেই হোক এনার সাথে একটা সেলফি তুলতেই হবে। একটু ভাব, এই ছবি পোস্ট দিতে পারলে কত্তগুলো লাইক পড়বে…
মোহনার সেলফি তোলা শেষ হতেই ইশা আদৃত এর কাছে গিয়ে হালকা হেসে বলে,
_সো সরি, আসলে আমি না প্রচুর গান শুনি কিন্তু সিঙ্গার দের দেখা হয়না। এখন আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে একটা সেলফি তুলতে পারি।
আদৃত ইশার কথা শুনে বোকা বোনে চলে গেলো। ভ্রু কুচকে বলল,
_হোয়াট?
ইশা এবার জিভে কামড় দিয়ে বলল,
_সরি সরি, মানে আপনার আপত্তি না থাকলে আমি কি আপনার সাথে একটা সেলফি তুলতে পারি?
কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই আদৃত এর চোখ যায় সামনের দিকে। সেখান থেকে একদল মেয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কপালে হাত চলে যায় আদৃত এর। মুখ থেকে “শিট” উচ্চারণ করে দ্রুত নিজের হেলমেট পড়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় আদৃত।
ইশা পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো মেয়েগুলো হতাশ হয়ে আবারো ফিরে যাচ্ছে। মোহনা নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো,
_যাহ,চলে গেলো! ফোন নম্বরটাও তো নিতে পারলাম না।
_তুই ওনার ফোন নম্বর দিয়ে কি করবি!
_আরে ধুর,তুই কি কিছুই বুঝিস না নাকি? ফোন করে একটু পটাতাম ওনাকে।
_হ্যা,তোর জন্য তো উনি অঢেল সময় নিয়ে বসে আছে।
মোহনা ভেংচি কেটে বলল,
_সে নাহয় বাদ দিলাম। কিন্তু তোর ওনার সঙ্গে কি করে দেখা হলো?
ইশা নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
_এইরে, ভীষণ দেড়ি হয়ে গেলো। চল যেতে যেতে বলছি।
কথাটা বলে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো দুজন। মোহনার বাসা ইশার বাসার কাছে হওয়ায় তারা একসাথেই যায়।
____
সবেমাত্র প্রোগ্রাম এর ভেনু তে এসে পৌঁছেছে আদৃত। তাকে দূর থেকে দেখতে পেয়েই সায়ান তার সামনে এসে বলে,
_কটা বাজে দেখেছিস? তোর মতো পাংচুয়াল মানুষের তো এত দেড়ি হওয়ার কথা নয়। কিছু হয়েছে নাকি?
আদৃত নিজের হেলমেট টা খুলতে খুলতে মুখে বিরক্তির আভা ফুটিয়ে বলল,
_আর বলিস না, একটা ইডিয়ট..
থেমে গেলো আদৃত, এখন ঐ মেয়ের কথা বললে যে বন্ধুরা তাকে ঘিরে ধরবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
_কি হলো বল।
আদৃত সায়ান এর দিকে তাকিয়ে তাড়া দিয়ে বলল,
_পড়ে বলব,এমনিতেই অনেক লেইট হয়ে গেছে।
কথাটা বলেই আদৃত ভিতরে যেতে লাগল,সায়ান ও তার পিছন পিছন স্টেজ এর দিকে গেলো।
___
বাড়ির সদর দরজা সামান্য খুলে ভিতরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছে ইশা। দেখতে পেলো তার মা রুকসানা পারভিন রান্নাঘরে কাজ করছেন। ইশা বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোরের মতো ভিতরে প্রবেশ করলো যেন তার মা টের না পায়।
কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। রুকসানা পারভিন ইশাকে ঢুকতে দেখেই রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে বলতে লাগলেন,
_মহারাণীর এখন আসার সময় হলো? আর একটু দেড়ি করতেন। এই মেয়ের নাকি কদিন বাদে এসএসসি পরীক্ষা।
ইশা এবার রুকসানার কাছে এসে পিছন থেকে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
_আরে আম্মু, এত রাগ করোনা তো। বেশি রাগলে তোমার চুলগুলো এই কম বয়সেই পেকে যাবে বুঝেছো?
_আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করতে হবেনা তোর। এমনিতেও দুদিন পর তোর বিয়ে দিলে শাশুড়ি হয়ে যাবো আমি।
ইশা ফিক করে হেসে বলল,
_আমাকে তুমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতেই পারবে না।
তাদের কথার মাঝেই বাড়িতে প্রবেশ করলো ফাইজা। ইশার চাচাতো বোন সে, নিজের বাড়ি থেকে ভার্সিটি অনেক দূড়ে হওয়ায় সে এখানেই থাকে।
ফাইজা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
_কি ব্যাপার,কার বিয়ের কথা হচ্ছে শুনি।
রুকসানা কিছু বলার আগেই ইশা গিয়ে ফাইজার হাত ধরে বলে,
_আপু ঘরে চলো তো। জানো আজকে অনেক কিছু হয়েছে।
_আরে যাবো তো..একটু দাড়া।
কোনো কথাই শুনলো না ইশা। হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গেলো ফাইজা কে। তারপর সব ঘটনা তাকে বলতে লাগলো। সবটা শুনে ফাইজা বলল,
_হুম বুঝলাম। কিন্তু তুই ওনাকে সরি বলিস নি?
_না তো। আচ্ছা ওনার কথা বাদ দাও,এবার অন্য কথা শোনো।
_জি বলেন আম্মা..
ইশা কিছুটা সাহসিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে বলল,
_আমি ভেবেছি,কালকে নিরব ভাইয়াকে প্রপোজটা করেই দেবো।
ফাইজা কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
_সে তো তুই আরো কতদিন আগে থেকেই করছিস।
_হেসোনা তো আপু,আমি এবার সিরিয়াস।
_তুই মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে প্রপোজ করবি?
_হ্যা অবশ্যই। তুমি শুধু দেখতে থাকো,এই ইশা কি করে..
#চলবে