#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 30+31
সবাই যার যার মতো পার্টি এনজয় করছে। আশা সেহের কে নিয়ে কেকের সামনে দাড়ায়। সেহের কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দেয়। কেক কাটা শেষে সবাই নিজের মতো করে একজয় করছে। হঠাৎ পুরা লাইট অফ হয়ে যাওয়ায় সবাই চমকে উঠে। সবাই কিছু বুঝে উঠার আগেই স্টেজে একটা লাইট জ্বলে উঠে এবং কেউ একজন গিটার নিয়ে বসে আছে এবং বাজানো শুরু করে। এরপর পুরো রুমের লাইট জ্বলে উঠতেই দেখে মানুষ টাহ আরসাল। আরসাল গিটার বাজাতে থাকে।
আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে৷)
,,,,,,,তোর মন পাড়ায়,,,,,,
,,,,,,,,,,,থাকতে দে আমায়,,,,,,,,
,,,,,আমি চুপটি করে দেখবো,,,,,,,
,,,,,,,আর ডাকবো ইশারায়,,,,,,,,
,,,,,,,,তুই চাইলে বল,,,,,,
,,,,,,,,,,আমার সঙ্গে চল,,,,,,,,
,,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,
‘,,,,,,,,অভিমানি মন আমার,,,,,
,,,,,,,,,,,চাই তোকে বারে বার,,,,,,( 2x )
,,,,তাই বলি আয়রে ছুটে আয়,,,,,,
,,,,,,,তোর মন পাড়ায়,,,,,,
,,,,,,,,,,,থাকতে দে আমায়,,,,,,,,
,,,,,আমি চুপটি করে দেখবো,,,,,,,
,,,,,,,আর ডাকবো ইশারায়,,,,,,,,
,,,,,,,,তুই চাইলে বল,,,,,,
,,,,,,,,,,আমার সঙ্গে চল,,,,,,,,
,,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,
সেহের মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসালও মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। আশফি নেহার দিকে তাকিয়ে মনে হলো, নেহার মন টাহ মনে হয় খুব একটা ভালো নাই। আশফির মাঝে মাঝে মনে চায় নেহা কে বলে দিতে, যে সে কতটাহ ভালোবাসে নেহাকে। কিন্তু পারে নাহ। রাহুল একটু এগিয়ে এসে আর একটা গিটার নিয়ে আরসালের সাথে তাল মিলিয়ে বাজানো শুরু করে।
রাহুল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,,,তোর হৃদয় আঙিনায়,,,,,
,,,,,,,,থাকতে আমি চায়,,,,,,,
,,,,,,,,,,,তুই ছাড়া বাঁচার নেই রে উপায়,,,,,
,,,,,,কিভাবে ওরে তোকে ছেড়ে,,,,,,
,,,,,,,,,একাকী আমি জীবন কাটাই,,,,,,,
‘,,,,,,,,অভিমানি মন আমার,,,,,
,,,,,,,,,,,চাই তোকে বারে বার,,,,,,( 2x )
,,,,তাই বলি আয়রে ছুটে আয়,,,,,,
,,,,,,,তোর মন পাড়ায়,,,,,,
,,,,,,,,,,,থাকতে দে আমায়,,,,,,,,
,,,,,আমি চুপটি করে দেখবো,,,,,,,
,,,,,,,আর ডাকবো ইশারায়,,,,,,,,
,,,,,,,,তুই চাইলে বল,,,,,,
,,,,,,,,,,আমার সঙ্গে চল,,,,,,,,
,,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,
সেহের রাহুলকে গান করতে দেখে অবাক হয়ে তাকায় রাহুলের দিকে। রাহুলের দিকে তাকাতেই সেহেরের মনে হলো, রাহুলের চোখ কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু সেহের বুঝছে নাহ। কিন্তু আরসালের চোখের দিকে তাকাতেই সেহেরের বুঝতে একটুও কষ্ট হয় নাহ, যে এই মানুষটাহ তাকে কত করে চায়।
আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,শুধু তোকে ঘিরে,,,,,
,,,,,,,,,,,,শত স্বপ্নের ভিড়ে,,,,,,,,
,,,,,,এখন আমার বসবাস,,,,,,,
,,,,,,,,,তুই এলে জীবনে,,,,
,,,,,পাবো বাঁচার মানে,,,,,,,
,,,,,,,,,,পাবো সুখেরি আভাস,,,,,,
,,,,,,,,অভিমানি মন আমার,,,,,
,,,,,,,,,,,চাই তোকে বারে বার,,,,,,( 2x )
,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,
আরসাল + রাহুল ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,তোর মন পাড়ায়,,,,,,
,,,,,,,,,,,থাকতে দে আমায়,,,,,,,,
,,,,,আমি চুপটি করে দেখবো,,,,,,,
,,,,,,,আর ডাকবো ইশারায়,,,,,,,,
,,,,,,,,তুই চাইলে বল,,,,,,
,,,,,,,,,,আমার সঙ্গে চল,,,,,,,,
,,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,
গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আরসাল আর রাহুল একবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুইজন একসাথে সেহেরের দিকে তাকায়।
★★★
রাহুল নিজের রুমে রকিং চেয়ারে বসে আছে। সেহেরের বার্থডে পার্টি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন রাহুল নিজের রুমে রকিং চেয়ারে বসে বসে কফি খাচ্ছে। সামনে সেহেরের একটা বড় ফটো ঝুলানো আছে। রাহুল এই ফটো টাহ অনেক আগেই নিজের রুমে লাগিয়েছে। রাহুল রকিং চেয়ার থেকে উঠে এসে সেহেরের ফটোর সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” কবে পাবো তোমাকে নিজের করে? আমার স্বপ্নের রানি বানিয়ে। আমার সব চাওয়া তোহ তুমি সেহের। বিদেশে থাকতে কখনো ভাবিই নি যে, কাউকে এতো টাহ ভালোবাসবো। কিন্তু বেসে ফেললাম। আর এখন সেই ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়া বাকি। যেইটা খুব তাড়াতাড়ি করবো।”
কয়েকদিন পর……….
নেহা রেডি হচ্ছে বাইরে যাওয়ার জন্য। নিচে নেমে আসতেই দেখে মায়া চৌধুরী, জিহাদ চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, কবির চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী সবাই মিলে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে। নেহা তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই তারা সবাই নেহার দিকে তাকায়। নেহা তাদের সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিছু কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?”
মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে নেহার সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আসলে, রাহুলের বাসা থেকে রাহুলের সাথে সেহেরের বিয়ের সমন্ধ এসেছে৷ এখন আরসালকে নাহ জানিয়ে কিছু বলতেও পারছি নাহ। ভাবছি আরসাল কে জিজ্ঞাসা করি। এখন তোহ সেহের আর আরসাল এর ভিতর বন্ডিংটাহ বেশ ভালো। আরসাল বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে। তারপর রাহুলদের বুঝিয়ে, আরসাল আর সেহেরের বিয়ে টাহ দিয়ে দিবো। কি বলো?
নেহা মুখে চাপা হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম! আচ্ছা আন্টি আমার একটু কাজ আছে। আসছি।”
–” হুম! সাবধানে।”
নেহা বাসা থেকে বেরিয়ে এসে গাড়ির সামনে দাড়িয়ে মনে মনে বলে ওঠে,
–” নেহা এই কয়েকদিন সব কিছু মেনে নিয়ে এসেছিস। এখন ফাইনাল রাউন্ড চলে এসেছে, আরসালকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার জন্য।”
★★★
দরজায় বেল বাজতেই সেহের দরজা খুলে দেখে আরসাল। আরসাল সেহেরের দিকে নাহ তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। সেহের ব্যাপার টাহ দেখে একটু অবাক হয়। আরসাল ওকে দেখলো নাহ, ব্যাপারটাহ কেমন হলো?
সেহেরও আরসালের পিছনে পিছনে আরসালের রুমে আসে। আরসাল ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দেখে রুমে সেহের। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। কিন্তু এতে যেনো আরসালের কোনো রিয়াকশন নাই। সেহের আরসালের এমন ব্যাবহারে অনেকটাহ অবাক হয়ে যায়। সেহের আরসালের সামনে এসে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া!”
–” হুম বল।”
–” কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেনো?”
–” কেমন করছি।”
–” আমার দিকে তাকাচ্ছোই নাহ?”
–” তোর দিকে তাকানোর কি আছে?”
–” মানে?”
–” সেহের আমার ভালো লাগছে নাহ, তুই যা।”
আরসাল কথাটাহ বলেই বারান্দায় গিয়ে দরজা আটকে দেয়। সেহের অনেক অবাক হয়ে যায় আরসালের এমন ব্যাবহারে। সেহের বুঝেই উঠতে পারছে নাহ, আরসালের এমন ব্যাবহারের কারন কি?
আরসাল হয়তো ক্লান্ত এই ভেবে নিজের রুমে চলে যায় সেহের।
★★★
আশা সব কাজ কমপ্লিট করে নিজের রুমে এসে দেখে আমান রুম অন্ধকার করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে। আশা রুমের লাইট জালাতেই আমান চোখ মুখ কুচকে আশার দিকে তাকাতেই আশা বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? এতো তাড়াতাড়ি, রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছো।”
–” কিছু নাহ।”
–” কিছু তোহ হয়েছে।”
–” এমনি কিছু হয় নি। আসলে একটা জিনিস মনে পড়লো। তাই!”
–” কি মনে পড়ছে?”
–” কিছু নাহ। তুই কষ্ট পাবি শুনলে।”
–” নাহ পাবো নাহ। প্লিজ বলো কি হয়েছে?”
–” আজ জেরিনের বার্থডে ছিলো।”
আমানের কথা শুনে আশার খারাপ লেগে উঠলেও, আমান কে বুঝতে নাহ দেওয়ার জন্য মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” ওহ!”
–” হুম।”
–” আমান?”
–” হুম কিছু বলবি?”
–” তুমি তোহ এখনে জেরিন কে ভালোবাসো তাই নাহ?”
–” জানি নাহ। সত্যি জানি নাহ। আসলে মনে পড়লো আজ ওর বার্থডে৷ তাই আগের ওর সাথে কাটানো সময় গুলো মনে পড়তেই মন টাহ কেমন করে উঠলো। হ্যা, এইটা সত্যি আমি আজও ওকে ভুলতে পারি নি। কারন যদি ভুলে যেতাম, তাহলে আজ ওর কথা মনে পড়তো নাহ৷ কিন্তু আশা আমি যে তোকে ভালোবাসি, এতে কোনো খাদ নাই৷ আমি সত্যিই তোকে ভালোবাসি। তুই কষ্ট পাচ্ছিস তাই নাহ?”
–” নাহ! বিশ্বাস করো, আমি কষ্ট পাচ্ছি নাহ। প্রথম শোনা মাত্রই একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। কিন্তু এখন পাচ্ছি নাহ। কারন তুমি যদি এখন এইটা বলতে তুমি জেরিন কে একটুও মনে করো নাহ, তাহলে আমি ভাবতাম তোমার কোনো প্রব্লেম আছে। কারন ভালোবাসা তোহ আর এতো সহজে ভোলা যায় নাহ। তাই এই কথা শুনে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, বিশ্বাস সব যেনো বেড়ে গেলো।”
আশার কথা শুনে আমান মুচকি হাসি দিয়ে আশার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আশাও আমানকে জড়িয়ে ধরে।
★★★
আরসাল বাদে সবাই ডিনার করার জন্য চলে এসেছে। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” সাথী, রাহুল ভাইয়া কে গিয়ে বলো ডিনারে আসার জন্য।”
–” ওকে! বড় আম্মু।”
সাথী যেয়ে আরসাল কে ডেকে নিয়ে আসলে সবাই ডিনার করতে বসে পড়ে। জিহাদ চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
–” হুম বলো।”
–” দেখো আরসাল কথা গুলো সরাসরি আলোচনা করা দরকার। তাই বলছি, আগে তুমি সেহেরকে চেয়েছিলে, কিন্তু সেই সময় টাহ উপযুক্ত ছিলো নাহ তোমাদের জন্য। কিন্তু এখন উপযুক্ত সময়। তাই আমি সরাসরি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি সেহেরকে বিয়ে করতে চাও?”
সবাই আরসালের দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। সেহের মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি সেহেরকে বিয়ে করতে চাই নাহ।”
সেহের নিজের রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় আগে ডাইনিং এ ঘটে যাওয়া ঘটনা যেনো সেহেরের মাথায় ঘুরছে। কিছুই মিলাতে পারছে না সেহের। চোখ বন্ধ করে কিছু সময় আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করছে সেহের।
কিছু সময় আগে………..
জিহাদ চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
–” হুম বলো।”
–” দেখো আরসাল কথা গুলো সরাসরি আলোচনা করা দরকার। তাই বলছি, আগে তুমি সেহেরকে চেয়েছিলে, কিন্তু সেই সময় টাহ উপযুক্ত ছিলো নাহ তোমাদের জন্য। কিন্তু এখন উপযুক্ত সময়। তাই আমি সরাসরি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি সেহেরকে বিয়ে করতে চাও?”
সবাই আরসালের দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। সেহের মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি সেহেরকে বিয়ে করতে চাই নাহ।”
কথাটা শোনা মাত্রই সেহের চমকে আরসালের দিকে তাকায়, মুখের হাসি মিলিয়ে যায়, অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়। শুধু সেহের নাহ প্রত্যেকেই অবাক হয়ে যায়। কারন এই কয়েকদিন সেহের আর আরসালের আচরন সবাই খেয়াল করছে। সবাই অনেক আশাবাদী ছিলো৷ মায়া চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল তুই যাহ বলছিস, মানে!”
–” কি মানে আম্মু? তোমরা ভাবলে কি করে আমি সেহেরকে বিয়ে করবো? এই কয়েকদিন সেহেরের সাথে কথা বলেছি এইজন্য? হাউ ফানি! হ্যা! এই কয়েকদিন ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলেছি, কারন ও আমার কাজিন, আমার লাইফে ওকে পরিচয় দিতে হয়। তাই একটু কথা বলেছি, যাতে মানুষের সামনে কথা বলতে কোনো অসুবিধা নাহ হয়। আর তোমরা সেইটা বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে গেছো, হাউ পসিবল?”
সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসালের কথা শুনে নিজেকে যেনো পাথরের মতো লাগছে। সেহের বুঝতেই পারছে নাহ আরসালের বলা কথাগুলো। কি বলছে আরসাল এইসব? সেহের শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” সেহেরকে আমি বিয়ে করতে চাই নাহ। বিকজ আই হেট সেহের।”
কথাটা বলেই আরসাল নিজের রুমে চলে যায়। সবাই সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের সবার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
বর্তমান…………
সেহের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সেহের মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ভাইয়া আমাকে ঘৃনা করে, তাহলে এতোদিন যাহ ছিলো সেইসব কি? ভাইয়া যদি আমাকে ঘৃনাই করবে তাহলে এতো সুন্দর ভাবে প্রপোজ কেনো করেছিলো? বার্থডে উইশ কেনো করেছিলো? কেনো? ভাইয়াকে এর উত্তর দিতেই হবে।”
সেহের নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে আরসালের রুমের দিকে যায়।
★★★
কবির চৌধুরী রুমে বিছানায় কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছেন। আহিয়া চৌধুরী কবির চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলে ওঠে,
–” শুনছো?”
–” হুম বলো!”
–” আরসাল?”
–” আরসালের সাথে সেহেরের বিয়ে মনে হয় আর হবে নাহ। দাভাই এর সাথে কথা বলে রাহুলের সাথে সেহেরের বিয়ে ফাইনাল করবো।”
–” আমার কাছে আর শোনার দরকার নেই। সেহেরের কাছে শুনে বিয়ে ফাইনাল কর।”
জিহাদ চৌধুরী কথা গুলো বলতে বলতে রুমে আসে। জিহাদ চৌধুরী কে দেখে কবির চৌধুরী উঠে বসে। কবির চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” দাভাই, বলছি যে আরসাল কে কি আর একবার!”
–” কোনো দরকার নাই। এরপরও আরসাল কে বোঝানো বা এই বিষয়ে কোনো রকম কথা বলা মানেই হলো সেহের মা কে অপমান করা। আরসাল নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করছে। এতে কি সেহের মায়ের সম্মানে লাগছে নাহ? আমি ধুমধাম করে সেহের মায়ের বিয়ে দিবো। এবং সেইটা আরসালের সামনে, রাহুলের সাথে।”
–” হুম!”
★★★
আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাৎ দরজা বন্ধ করার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে সেহের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। আরসাল ল্যাপটপ টাহ পাশে রেখে দাড়িয়ে পড়ে। সেহেরের মুখ লাল হয়ে গেছে, মুখ টাও একটু ফোলা ফোলা লাগছে। সেহেরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ কিছু সময় কান্না করেছে। সেহের আরসালের সামনে দাড়িয়ে কাঁদো গলায় বলে ওঠে,
–” এইসব কি ভাইয়া?”
–” কোন সব?”
–” তুমি আমাকে ভালোবাসাে নাহ?”
–” নাহ।”
–” তাহলে এতোদিন যা ছিলো? সেইসব কি?”
–” নাটক।”
–” নাটক? কিন্তু নাটক করার কারন কি?”
–” প্রতিশোধ।”
–” প্রতিশোধ? কিসের প্রতিশোধ?”
সেহের যেনো অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার অতীতের। তোর জন্য এই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল, নিজের মায়ের হাতে থাপ্পড় খেতে হয়েছিল। সব কিছুর প্রতিশোধ নিলাম। আর তোকে আমি লাভ করি নাহ, শুধু হেট করি। আর এইটায় সত্যি।”
সেহের অবাক হয়ে আরসালের কথা আরসালের কথা শুনছে। কি বলবে কিছুই যেনো মাথায় আসছে নাহ সেহেরের। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” এইবার তুই যেতে পারিস।”
সেহের এখনো আরসালের দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। আরসাল সেহেরের হাত ধরে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দেয়।
সেহের আস্তে আস্তে নিজের রুমে চলে এসে বিছানায় বসে পড়ে। সেহেরের মাথায় যেনো এখনো কিছুই আসছে নাহ। বিছানায় শুয়ে পড়ে সেহের। এখন কান্না করছে নাহ সেহের। আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে সেহের।
★★★
সেহের বাদে সবাই ডাইনিং এ বসে আছে ব্রেকফাস্ট করার জন্য। হঠাৎ কেয়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” ঐতোহ সেহের আসছে।”
কেয়া চৌধুরীর কথা শুনে সবাই সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের আসছে। সেহেরের মুখটাহ কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। সেহের এসে টেবিলে বসে, খাবার খাওয়া শুরু করে। জিহাদ চৌধুরী সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের মামনি!”
–” হুম! বড় আব্বু বলো।”
–” তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো মামনি।”
–” হুম বলো!”
–” আসলে বলছিলাম যে, আমি তোমার সাথে রাহুলের বিয়ে দিতে চাই। এই ব্যাপারে তোমার মতামত কি?”
জিহাদ চৌধুরীর কথা শুনে আরসাল চমকে তাকায় সেহেরের দিকে। সেহের আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে, আবার জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি রাজি বড় আব্বু।”
সেহেরের কথা শুনে সবাই সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের আবার বলে ওঠে,
–” তোমরা সবাই এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? তোমরা আমার মতামত চেয়েছিলে আমি হ্যা বলেছি। আমার এই বিয়েতে কোনো সমস্যা নাই। বাকি টাহ তোমাদের ইচ্ছা।”
সেহের কথাটাহ বলতেই আরসাল খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। সেহের একবার আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার খেতে শুরু করে। বাকি সবাই কিছুই যেনো বুঝছে নাহ।
কিন্তু এইসব দেখে একজনের ঠোঁটের হাসি যেনো সরছে নাহ। আর সে হলো নেহা। নেহা সেহেরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” খুব শখ তাই নাহ, আরসালের বউ হওয়ার। কিন্তু ভাগ্যে সইলো নাহ। খুব কষ্ট হচ্ছে সেহের তোমার জন্য৷ আফসোস, কিছুই করার নেই।”
★★★
আরসাল নিজের রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে আছে আর আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ দরজার আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে নেহা বাঁকা হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। নেহা কে দেখেই যেনো আরসালের রাগ হাজার গুন বেড়ে গেছে। নেহা আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” তুমি ব্রেকফাস্ট নাহ করে চলে এলে কেনো?”
–” লিসেন নেহা, তুমি যাহ করছো তার জন্য কিন্তু তোমাকে পস্তাতে হবে। মাইন্ড ইট!”
–” আরসাল! আমি জানি আমি কি করছি আর এর ফলাফল কি হতে পারে। আরসাল আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
–” কিন্তু আমি বাসি নাহ। কেনো বুঝতেছো নাহ?”
–” বুঝতে চাই নাহ। শুধু যাহ বলেছি তাই করো। নাহলে, জানোই তোহ কি হবে।”
আরসাল আর কিছু বলে নাহ। চোখ, মুখ শক্ত করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। নেহা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চলে যায়। আরসাল বারান্দায় গিয়ে রেলিং এ হাত রেখে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সেদিন অফিসের ঘটনা মনে করতে থাকে।
Flashback……….
আরসাল অফিসে নিজের কেবিনে কাজ করছে। হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজের শব্দ পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসছে। ম্যাসেজ টাহ ওপেন করে দেখে কিছু ফটো পাঠানো হয়েছে, তাও সেহেরের। ফটো গুলো খুবই বাজে ভাবে তোলা হয়েছে। ফটোগুলো দেখে আরসাল অবাক হয়ে যায়, সাথে রাগে যেনো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আরসালের। আরসাল বুঝতেই পারছে নাহ সেহেরের এমন বাজে ফটো কিভাবে তোলা হয়েছে, আর কেই বাহ তুলছে? সেইসময় কেবিনের দরজার আওয়াজে সেইদিকে তাকিয়ে দেখে নেহা এসেছে। নেহা আসতেই আরসাল ফোন টাহ অফ করে দিয়ে, নিজেকে সামলে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা তুমি এখন, এইসময় এখানে?”
–” হুম! আসলে জানতে আসলাম ফটো গুলো কেমন হয়েছে?”
নেহার কথা শুনে আরসাল চমকে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মানে?”
–” সেহের ফটো গুলো কেমন হয়েছে?”
–” তারমানে তুমি?”
–” হুম! আমি, আমিই এই ফটো গুলো তোমাকে পাঠিয়েছি।”
–” এরকম ফটো তুমি কোথায় পেলে? আর সেহের এরকম ভাবে ফটো গুলো তুলবেই বাহ কেনো?”
–” সেহের তোহ তুলে নি।”
–” তাহলে এই ফটো গুলো?”
–” এডিট করা।”
–” এডিট?”
–” হুম! এডিট করা।”
–” কিন্তু, কেনো করেছো এইসব?”
–” কারন টাহ তুমি।”
নেহার কথা শুনে আরসাল যেনো অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে। আরসাল নেহার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নেহা আরসালের সামনে দাড়িয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” দেখো আরসাল, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছেড়ে বিদেশে থাকতে পারছিলাম নাহ জন্য, বিডি তে আসলাম। আর তুমি আমারই চোখের সামনে সেহেরকে বিয়ে করবা এইটা তোহ হতে দিবো নাহ। এই কয়েকদিন আমি সব মেনে নিচ্ছিলাম, চুপচাপ ছিলাম, কারন, আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। আর এর থেকে বড় সঠিক সময় আর কিছুই হতে পারে নাহ। এখন তুমি যদি আমার কথা মতো কাজ নাহ করো, তাহলে আমি এই ফটো গুলো ভাইরাল করে দিবো। পারবে তোহ সেহের এইটা মেনে নিতে?”
–” কি করতে হবে আমাকে?”
–” সমস্যা নেই আমাকে বিয়ে করার কথা বলছি নাহ। নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।”
–” আমি বলেছি, কি করতে হবে আমাকে?”
–” আজ সকালে শুনলাম, রাহুল নাকি সেহেরকে বিয়ে করার জন্য প্রপোজাল পাঠিয়েছে। তোমার কাছে শোনা হবে তুমি সেহেরকে বিয়ে করবে কি নাহ? কিন্তু তুমি বলবে তুমি সেহেরকে বিয়ে করতে চাও নাহ। করবে নাহ তুমি এই বিয়ে, শুধু তাই নয়, তুমি সেহেরের সাথে খারাপ ব্যাবহার করবে। এক কথায় সেহেরকে কষ্ট দিতে হবে তেমায়।”
আরসাল নেহার কথা শুনে নেহার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” Are you mad, Neha? কি বলছো তুমি এইসব?”
–” আমি যাহ বলছি ঠিকই বলছি। আর তুমি যদি এইগুলো নাহ করো, ফটো ভাইরাল করতে আমার দুই মিনিটও লাগবে নাহ।”
–” নেহা তুৃমি যাহ করছো তার জন্য কিন্তু তোমাকে অনেক মূল্য দিতে হবে।”
–” I don’t care. যাহ বললাম তাই করো। নাহলে জানোই তোহ।”
–” ঠিক আছে। কিন্তু ফটো গুলো আগে ডিলিট করো।”
–” আমাকে কি এতোই বোকা মনে হয় আরসাল? ফটো গুলো একদম ভ্যানিশ করে দিবো। চিন্তা নেই, কিন্তু সেহেরের সাথে রাহুলের বিয়ের পর।”
Present………….
আরসালের ঘটনা গুলো ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আরসাল ডিভানের উপর বসে, হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে মনে মনে বলে ওঠে,
–” I am sorry Seher. আমি তোকে হার্ট করেছি। কিন্তু কি করবো? তোর সম্মান বাঁচানোর জন্য যে আমি বাধ্য হয়ে গেছি। ফটো গুলো ভাইরাল হয়ে গেলে যে সুইসাইট করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে নাহ তোর। তাই বাধ্য, আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ। I love you, Seher. I love you very much.”
চলবে…………….🌹