#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 19+20
সঙ্গীত……….
আরসাল গার্ডেনে একটা চেয়ারে বসে আছে। আমান এসে আরসালের পাশে বসে। আরসালকে কিছু ভাবতে দেখে আমান জিজ্ঞাসা করে ওঠে,
–” কি ভাবছিস এতো?”
–” ভাবছি, একটু আগে মেহেদি আর্টিস্টরা আমাকে কর্নফর্ম করেছে, যে সেহরের মেহেদীতে নাকি কোনো মেডিসিন এড করা হয়েছে এন্ড মেডিসিনটাহ কোনো মেহেদিতে দেওয়া হয় নাহ। কারন এইটা এমন একটা মেডিসিন যাহ কোনো ক্ষতি করে নাহ বাট হাতে প্রচন্ড জ্বালার সৃষ্টি করে। হাত লাল হয়ে যায়, যেমন টাহ সেহেরের হয়েছে। কিন্তু কথাটা হচ্ছে এরকম মেডিসিন কে মিশালো? কে আছে এখানে যে সেহেরের চোখে পানি দেখতে চায়? কে সে?”
–” কি বলছিস এইসব?”
–” হুম। আরও কিছু প্রশ্ন আছে। যার উত্তর সেহের আমাকে দিবে। বাট কথা বলার পজিসন টাহ হচ্ছে নাহ। সঙ্গীত অনুষ্ঠান টাহ শেষ হলেই সেহেরের সাথে আমার কথা বলতে হবে।”
–” হুম।”
আরসাল আর আমান কথা বলছে। চারপাশে যার যার মতো সবাই রয়েছে। হঠাৎ আরসালের হার্ট জোরে বিট হতে থাকে। আরসাল কি মনে করে যেনো পিছনে তাকায় আর তাকিয়ে দেখে সেহের। আরসাল এইটায় বুঝে উঠতে পারে নাহ সেহেরকে সবসময় পরির মতো কেনো লাগে? এইটাকি ওর মনের জন্য সেহেরকে পরির মতো লাগে নাকি সেহের সত্যি এতো সুন্দর, সবার কাছেই কি সেহের কে এতো সুন্দর লাগে। আরসালের যেনো পলকই পড়ছে নাহ। তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহের লেহেঙ্গা পরেছে, যার ঘাগরা কমলা কালারের, গাঢ় গোলাপি কালারের টপ, লেমন কালারের দোপাট্টা, চুল গুলো সামনে পাফ করে ব্যান্ট বেনি করে পেছনে ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক, কমলা কালারের চুড়ি, কানে কমলা কালারের ঝুমকা, সেহেরকে লাগছে পরি। সেহের আস্তে আস্তে হেটে হেঁটে আসছে। সেহের এগিয়ে এসে আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে আশার কাছে চলে যায়। হঠাৎ করে পুরো লাইট অফ হয়ে যায়। সবাই অবাক হয়ে যায়। এর মাঝেই স্টেজের মাঝে একটা লাইট জ্বলে উঠে। সবাই সেদিকে তাকিয়ে দেখে নেহা। নেহা আরসালের দিকে তাকিয়ে হেসে নাচতে শুরু করে। আর স্পিকারের বেজে ওঠে গান–
,,,,,মেরা ঝুমকা উঠা কে লায়া রে ইয়ার ভে,,,,,,
,,,,,,,,,জো গিরা ধা বেরেলি কে বাজার মে,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,মে তোহ ঠুমকা লাগাকে সারমা গায়ি,,,,,,,,,,
,,,,,,,বোলি ঘোংগার বানধা দেনগে মেইন আ গায়ি,,,,
,,,,,,,,মুঝকো নাচেকা নাচলে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজা,,,,নাচলে,,,নাচলে,,,,মেরি ইয়ার,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,তু নাচলে,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,ঝানাকে ঝানাকে ঝানকার,,,,,,,
[ বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন😊 ]
নেহার নাচ শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়া উঠে। আশফি এতোক্ষণ মুগ্ধ হয়ে নেহার নাচ দেখছিলো, সবার হাত তালির আওয়াজে আশফির ঘোর কাটে। মুচকি হাসি দিয়ে নিজের মাথা চুলকাতে থাকে আশফি। আশফিও কি মনে করে স্টেজে চলে যায়। আর মিউজিসিয়ান দের হাত নাড়িয়ে গান ছাড়তে বলে নাচা শুরু করে। স্পিকারে বেজে ওঠে গান–
,,,,,মেরে হোতোন ছে,,,
,,,,,,,,ঢু আন্ধাকার,,,,,,,নিকালতি,,,,,
,,,,,হ্যায় জো বলি,,,,জ্যাইসে,,,জ্যাইসে,,,,
,,,,,,,,,,,বানদুক কি গলি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,মেরে তেভার মেইন হ্যায়,,,,,,
,,,,,তেহজিব কি,,,,,
,,,,,,,,রাংগেন রাংগোলি,,,,,
,,,,,,,,জ্যায়সে,,,,,জ্যায়সে,,,,,
,,,,,,,,,,,হো ঈদ মেইন হোলি,,,,,,2x
,,,,মেরি জি ভান কে দশা,,,
,,,,,,,থোডা রাসতোন কে নেশা,,,,,
,,,,,,থোডি মানজিল কি পেয়াস হে,,,,,,
,,,,,,বাকি সব ফাস্ট ক্লাস হে,,,,,
,,,,,,,,,,,বাকি সব ফাস্ট ক্লাস হে,,,,,3x
[ বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন😊 ]
আশফির নাচ শেষ হতেই আবার সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আশফি স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসতেই সেহের স্টেজে উঠে যায়। সেহের মিউজিসিয়ান দের গান ছাড়তে বলে। তারা এমন একটা গান ছেড়ে দেয় যে সেহের কি নাচবে বুঝেই উঠতে পারছে নাহ। সেহের করুন ভাবে দাড়িয়ে থাকে। হঠাৎ কেউ একজন সেহের পাশে দাড়িয়ে সেহেরের হাত ধরে কাছে টেনে নিতেই সেহের তাকিয়ে দেখে আরসাল। আরসাল সেহেরের চোখে চোখ রেখে সেহেরকে নিয়ে নাচা শুরু করে। বাজতে থাকে গান–
,,,,,,,তুমকো পায়া হে তোহ জায়সা খোয়া হুন,,,,,
,,,,,,,,,,কেহনা চাহোন বিহি তোহ তুমছে কেয়া কাহুন,,,,
,,,,,,,,,,তুমকো পায়া হে তোহ জায়সা খোয়া হুন,,,,,
,,,,,,,,,,কেহনা চাহোন বিহি তোহ তুমছে কেয়া কাহুন,,,,
,,,,,কিসি যাবান মেইন বিহি,,,,,
,,,,,,,,,,হো লাভজে হি নেহি,,,,,,,,,
,,,,,,কি জিনমিন তুম হো,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,কেয়া তুমহেন বাতা সাকুন,,,,,,,,
,,,,,,,,মেইন আগার কাহুন,,,,,
,,,,,,,,,,তুমছা আহাছিন,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,কায়ানাত মেইন,,,,,,,,
,,,,,,,নেহি হ্যায় কাহিন,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তারিফ ইয়ে বিহি তোহ,,,,,
,,,,,ছাস এহ কুছ বি নেহি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,তুমকো পায়া হে তোহ জায়সা খোয়া হুন,,,,,
[ বাকি টাহ নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন😊 ]
আরসাল আর সেহেরের নাচ শেষ হতেই সবাই অবাক হয়ে হাত তালি দিয়ে উঠে। এতো সময় আরসাল আর সেহের একে অপরের চোখে ডুবে ছিলো। সবার হাত তালির আওয়াজে ধ্যান ভাঙে দুইজনের। সেহেরের ঘোর কাটতেই সরে আসে আরসালের থেকে। আরসাল আর সেহেরের নাচ দেখে সবাই অবাক হলেও সবাই খুশি হয় শুধু দুইজন মানুষ ছাড়া। নেহা আর রাহুল। নেহার রাগ উঠতে থাকে সেহের আর আরসালকে একসাথে নাচতে দেখে। কিন্তু রাহুলের কেমন যেনো খারাপ লেগে উঠে, কারন যতই হোক ভালোবাসার মানুষ তোহ।
সেহের স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসলেও আরসাল এগিয়ে যায় স্পিকারের কাছে। মাউথ স্পিকার টাহ ঠিক করে নিয়ে বলতে শুরু করে,
–” hello everyone…. Welcome to shangit function…..আজ এই শুভ অনুষ্ঠানে নাচ হলো এতো সময় ধরে। কিন্তু সঙ্গীত অনুষ্ঠানে গান হবে নাহ এইটা কি হয়। আজও গান হবে। কিন্তু আজ গান আমি বাহ অন্য কোনো ছেলে নয়। আজ গান গাইবে মেয়েরা। একটু অন্যরকম, তাই আমি ব্রাইডকে সহ বলছি। প্লিজ একটা গান।”
আরসালের কথা শুনে সবাই হাত তালি দিয়া উঠে। আরসাল স্টেজ থেকে নেমে আসে। আশা নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে সেহেরকে কি যেনো ইশারা করতেই সেহের মুচকি হেসে পিয়ানোর সামনে গিয়ে বসে পড়ে। বাজানো শুরু করে পিয়ানো। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারন এইটায় ছিলো আরসালের উদ্দেশ্য। সেহেরকে নিজের হাতে পিয়ানো বাজানো শিখিয়েছিল আরসাল৷ অনেক দিন শোনা হয় নাহ সেই পিয়ানোর আওয়াজ। তাই আরসাল ইচ্ছা করেই এই এনাউন্সমেন্ট টাহ করলো। বেজে উঠে সেহেরের পিয়ানোর আওয়াজ,
সেহের ঃ ( আরসালের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,
আশা ঃ ( আমান দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে )
,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,,,
,,,,,,,,,,কেনো এমোন হাত বাড়ায়,,,,,,,,
,,,,,আবারও হারিয়ে সে যায়,,,,,
,,,,,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,,,
সেহের ঃ ( পিয়ানোর দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,,,তুমি জানতে পারো নি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,কতো গল্প পুড়ে যায়,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তুমি চিনতে পারো নি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,আমাকে হায়,,,,,,,
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,
আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। আরসাল এইপ্রথম সেহেরের মুখে এমন গান শুনছে। আর গানের প্রতিটা লাইন সেহের এমোন ভাবে গাইছে যেনো মনে হচ্ছে কাউকে মনে করেই গায়ছে। আমান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। এই প্রথম আশার গান শুনছে আমান। আমান জানে প্রতিটা লাইন আশা তাকে স্বরন করেই গাইছে। রাহুলের সেহেরের প্রতি ভালোবাসা যেনো আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। এই প্রথম সেহেরের গান শুনছে রাহুল। আর শুনে যেনো অবাক এর উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে।
আশা ঃ ( সামনে সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে )
,,,,,,,,,,পথ ভুলে গেছি চলে,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,দূরের কুয়াশায়,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তবু আমার ফিরে আসার,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,সত্যি নেই উপায়,,,,,,,
,,,,,,,তুমি আমার জিতের বাজি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তুমিই আমার হার,,,,,,
আশা + সেহের ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,
আরসালের কেনো জানি মনে হচ্ছে কথাগুলো তাকেই বলছে সেহের। কিন্তু কেনো বলবে সেহের এইসব কথা। কারন ভালো তোহ সে সেহের কে বেসেছে, সেহের তোহ নয়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, পড়তে চাচ্ছে সেহেরের মন। আমান জানে আশা তাকেই বলছে। কারন আশাকে যে সে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এতে তোহ আমান কখনো খুশি হয় নি। কিন্তু আজ আশার জল ভরা চোখের গান শুনে আমানের মনে হচ্ছে এর থেকে মরে যাওয়া ভালো ছিলো।
সেহের ঃ ( একবার আরসালের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে )
,,,,,,,যদি বলি চোরাগলি,,,,,
,,,,,,,,,,মনের যায় কোথায়,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,আসবে কি,,,,,,,,,,
,,,,,,রাখবে কি,,,,,
,,,,,,,,,,তোমার ওঠা পড়ায়,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,তুমি আমার জ্বালিয়ে নেওয়া,,,,,,,,,
,,,,,,,,কোনো শুকতারা,,,,,,
সেহের + আশা ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,
আশা ঃ ( মুচকি হাসি দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,তুমি জানতে পারো নি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,কত গল্প পুড়ে যায়,,,,,,,,,,,,
সেহের ঃ ( আরসালের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,তুমি চিনতে পারো নি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,আমাকে হায়,,,,,,,,,,,
সেহের + আশা ঃ ( নিচের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,
গান শেষে সবাই হাত তালি দিয়ে ওঠে। সেহের সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে আসতেই রাহুল এগিয়ে এসে সামনে দাড়ায়। সেহের রাহুলের দিকে তাকাতেই রাহুল বলে ওঠে,
–” Wow. Amazing. তুমি এতো সুন্দর গান করো। আর পিয়ানোটাও কত সুন্দর বাজাও। এত সুন্দর পিয়ানো বাজানো কোথা থেকে শিখছো?”
কথাটাহ শুনে সেহেরের চোখ আরসালের দিকে চলে যায়। সেহের তাকাতেই আরসাল চোখ সরিয়ে নেয়। তারমানে আরসাল সেহেরের দিকেই তাকিয়ে ছিলো এতোসময়, সেহের জিনিসটাহ বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দিয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল ভাইয়া শিখিয়েছে।”
–” Wow, brilliant. অনেক সুন্দর হয়ছে।”
সেহের রাহুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
★★★
সেহের নিজের রুমে বসে একটা গল্পের বই পড়ছে। সঙ্গীত অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। সবাই ক্লান্ত। সেহেরের ঘুম আসছে নাহ। তাই গল্পের বই পড়ে সময় কাটাচ্ছে। হঠাৎ দরজায় কারো নক পড়তেই সেহের উঠে দরজা খুলে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসালকে দেখে সেহের অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তুমি এখন এইসময়!”
–” হুম! তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
–” ওহ, ভেতরে এসে বলো।”
আরসাল ভেতরে এসে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, তুই ঐ মেহেদির বাটি টাহ কোথা থেকে নিয়েছিলি?”
–” ঐটাহ তোহ একটা সার্ভেন্ট আমাকে এনে দিয়েছিল।”
–” সার্ভেন্ট, দেখলে চিনতে পারবি?”
–” আসলে ঐসময় অতোটাহ খেয়াল করে দেখা হয় নি।”
–” শিট! আচ্ছা ঠিক আছে। তুই ঘুমিয়ে পড়। অনেক রাত হয়ে গেছে। গুড নাইট।”
কথাটা বলেই আরসাল বেরিয়ে যায় রুম থেকে। সেহেরও দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। কিন্তু কেউ একজন লুকিয়ে থাকা থেকে বেরিয়ে আসে। সে আর কেউ নাহ, সে হলো নেহা। হুম, নেহাই লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের কথা শুনছিলো। নেহাই হলো সেই কেউ একজন। যে কিনাহ সেহেরের মেহেদীর বাটিতে মেডিসিন মিশিয়েছিলো। আরসালকে সেহেরের রুমের দিকে আসতে দেখে নেহা লুকিয়ে পিছু নিয়ে আসে আর ওদের দুইজনের সব কথা শুনে ফেলে। নেহা মনে মনে বলে ওঠে,
–” এতো সহজ আরসাল আমাকে ধরা। নেহা এতো কাচা কাজ করে নাহ। পারবা নাহ আমাকে ধরতে। আমি খুব ভালো করেই বুঝে গেছি সেহের থাকতে তোমাকে আমি সোজা ভাবে পাবো নাহ। তাই আমাকেও বাকা ভাবে চলতে হবে।”
কথাগুলো ভাবতেই নেহার মুখে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে।
গায়ে হলুদ……………
সবাই ব্যাস্ত। গায়ের হলুূদের দিন কাজ বেশি। সবাই সবার মতো কাজ করে যাচ্ছে। সেহের আশাকে রেডি করে নিজে রেডি হতে চলে যায়। আশা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আশা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” তোমার থেকে দুরে যাওয়ার দিন অনেক নিকটে আমান। আর একটা দিন মাত্র তারপরই তোমার জীবন থেকে একেবারে চলে যাবো আমি। তোমার খুশির জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমান। ভালো থেকো তুমি।”
আশা এইসব ভাবছিলো। হঠাৎ দরজায় খোলার আওয়াজে বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখে আমান এসেছে। আমান রুমে এসে আশাকে দেখেই যেনো থমকে যায়। বিয়ের সময় নাকি মেয়েদের অতিরিক্ত সুন্দর লাগে। তার প্রমান এই কয়েকদিন আশাকে দেখেই আমান পেয়েছে। আর আজ যেনো আশাকে একটা হলুদ পরির মতো লাগছে। গাঢ় হলুদ কালারের শাড়ি, চুলগুলো সামনে পাফ করে পেছনে খোপা, কাচা ফুলের গহনা, মুখে হালকা ভারি মেকাপ, সব মিলিয়ে হলুদ পরি। আমান একভাবে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। আশা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” তুমি এখানে।”
–” হুম। তোকে একটা কথা বলার জন্য এসেছিলাম।”
–” বলো।”
–” আশা, আসলে আমি আসলে।”
আশা আমানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” বলো আমান। তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও। এখনো সময় আছে আমান। প্লিজ, কিছু নাহ হোক তোমার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনলেও আমার শান্তি। প্লিজ বলো আমান।”
আমান বলে ওঠে,
–” তোর বিয়েতে আমার কাছে একটা উপহার চেয়েছিলি তুই। আমি তোর কথা রাখছি। পাশাপাশি এই গিফ্ট টাহও তোকে দিলাম। নে।”
আমানের কথা শুনে আশার শেষ ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। আমান একটা ছোট বক্স আশার দিকে এগিয়ে দেয়। আশা হাত বাড়িয়ে বক্সটাহ নিয়ে আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” Thank you so much.”
–” হুম। আসি।”
বলেই আমান বেরিয়ে যায়। আর আশার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।
আরসাল রেডি হয়ে গার্ডেনে এসে স্টেজে তাকাতেই যেনো চোখ দুটো সেখানেই স্থির হয়ে যায়। আশার পাশে সেহের বসে আছে আর আশার সাথে কথা বলছে। সেহের আজ একটা কাচা হলুদ কালারের শাড়ি বাংলা স্টাইলে পরেছে, চুলগুলো সামনে পাফ করে পেছনে বেনি করে সামনে এনে রেখেছে সাথে লাগিয়েছে রজনীগন্ধা ফুল, চোখে মোটা কাজল, হালকা মেকাপ, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, কানে কাচা ফুলের কানের দুল, হাতে কাচা ফুলের ব্রেসলেট পুরো গ্রামের মেয়ের মতো সাজে সেহেরকে যেনো অপ্সরীর মতো লাগছে। আরসালের চোখের পলক পড়তেও মনে হয় ভুলে গেছে। হঠাৎ কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে আরসালের ধ্যান ভাঙে। পেছন ফিরে দেখে আমান। আমান বলে ওঠে,
–” কিরে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”
–” নাহ। কিছু নাহ, চল।”
আরসাল আর আমান এগিয়ে আসে অনুষ্ঠানের দিকে। শুরু হয়ে যায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। সবাই আশাকে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে। আরসাল এগিয়ে এসে আশাকে হলুদ মাখিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” তোকে এখন আমি কোনো গিফট দিবো নাহ। বাট আমি তোকে তোর বিয়ের আগেই তোর গিফট দিবো। আর আমি জানি আমার দেওয়া গিফট টাহ তোর কাছে তোর লাইফের বেস্ট গিফট হবে।”
–” মানে কি দিবা তুমি আমাকে?”
–” সারপ্রাইজ!”
কথাটা বলেই আরসাল নেমে আসে স্টেজ থেকে। সেহের স্টেজে এসে আশাকে হলুদ মাখাতেই আশাও একটু গলুদ মাখিয়ে দেয় সেহেরের মুখে। হেসে দেয় দুইজন একসাথে। হঠাৎ দুইজনের চোখে পানি এসে ভিড় করে। জড়িয়ে ধরে দুইজন দুইজনকে। সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সেহের সরে আসতেই আশা সেহেরের চোখ মুছে দেয়। সেহের মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ভুলে যাবি নাহ তোহ তুই আমাকে?”
–” তোকে ভোলা কি সম্ভব?”
আবার জড়িয়ে ধরে আশা সেহের একে অপরকে। তারপর সেহের সরে এসে মুচকি হাসি দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসে। আরসাল তাকিয়ে দেখে সেহের কই যেনো যাচ্ছে। আরসাল জানে সেহেরের মন ভালো নেই। কারন আশা আর সেহেরের বন্ডিং টাহ অন্যরকম। দুইজন একই বয়সী হলেও আশা সবসময় সেহেরকে আগলে রেখেছে। দুইজন একে অপরে হাসি খুশি ভালোবাসার সঙ্গী। আরসালও সেহেরের পিছন পিছন আসে। সেহের রুফটপে একপাশে রেলিং এর কাছে দাড়িয়ে আছে। আরসাল সেহেরের পিছনে এসে দাড়ায়। আরসাল হালকা ভাবে বলে ওঠে,
–” সেহের!”
সেহের কারো আওয়াজে পিছন ফিরে দেখে আরসাল। আরসালকে দেখে কিছু নাহ ভেবেই জড়িয়ে ধরে সেহের। আরসাল অবাক হয়ে গেলেও বিষয় টাহ বুঝতে পারে, যে সেহের কষ্ট পাচ্ছে। তাই আরসাল সেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কান্না করে দেয় সেহের। আরসাল সেহেরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে পাশে থাকা একটা চেয়ারের উপর বসিয়ে দেয় আর নিজে সেহেরের সামনে হাটু ভাজ করে বসে পড়ে। আরসাল সেহেরের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” খারাপ লাগছে।”
–” আমি আশাকে অনেক মিস করবো।”
–” হুম। আশা কি আমাদের ছেড়ে একেবারে চলে যাচ্ছে নাকি? শুধু শুধু তুই এতো কষ্ট পাচ্ছিস।”
–” কিন্তু তাও, আশা তোহ এখন অন্য এক জায়গায় থাকবে। আমার যখন মন চাইবে তখন তোহ আর আমি ওর কাছে যেতে পারবো নাহ। মন খারাপ হলে ঐতোহ আমাকে আদর বেশি করে।”
–” হুম! আচ্ছা তোর যখন ইচ্ছে হবে আমি তোকে আশার কাছে নিয়ে যাবো। ওকে।”
–” সত্যি?”
–” হুম, বাট আমার একটা কন্ডিশন আছে।”
–” কি কন্ডিশন?”
–” সবাই হলুদ মাখিয়েছে শুধু আমি ছাড়া। এখন আমাকে তোর হলুদ মাখাতে হবে।”
–” কিন্তু আমি তোহ হলুদ আনি নি। আচ্ছা তুমি বসো আমি হলুদ নিয়ে আসি।”
–” নাহ! আনতে যেতে হবে নাহ। হলুদ তোর কাছেই আছে।”
–” আমার কাছে? কোথায়?”
–” কোথায়! আমি দেখাচ্ছি।”
কথাটা বলেই আরসাল সেহেরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসে। আরসালকে হঠাৎ এতো কাছে দেখে ঘাবড়ে যায় সেহের। চোখ কুচকে বন্ধ করে ফেলে সেহের। আরসাল সেহেরে মুখে লাগানো হলুদ নিজের মুখ দিয়ে ঘসে লাগিয়ে নেয়। আরসালের মুখে হালকা চাপ দাড়ি সেহেরের মুখে ঘসা লাগতেই সেহের কেঁপে উঠে। আরসাল সেহেরের মুখের সামনে এসে বলে ওঠে,
–” দেখলি কেমনে হলুদ লাগালাম। হলুদের খরচ বাচিয়ে দিলাম, আবার হলুদও লাগালাম।”
আরসালের কথা শুনে সেহের হেসে দেয়। সেহেরের হাসি দেখে আরসালও হেসে দেয়। সেহেরের হঠাৎ চোখ টাহ ছল ছল করে উঠে। আরসাল হাসতে হাসতে সেহেরে দিকে তাকিয়ে দেখে সেহেরের চোখে পানি। এতে আরসালের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” তুমি সত্যি সত্যি আমাকে হেট করো?”
সেহেরের কথা শুনে আরসাল উঠে দাড়ায়। সেহেরও উঠে দাড়িয়ে আরসালের সামনে এসে দাড়ায়। আর বলে ওঠে,
–” বলো নাহ ভাইয়া! আমাকে সত্যি সত্যিই তুমি হেট করো? প্লিজ বলো।”
–” হ্যা আমি তোকে হেট করি। আর এইটায় সত্যি।”
–” কিন্তু ভাইয়া কেনো? সেদিন যাহ হয়েছিল তার জন্য তোহ আর আমি দোষী নাহ। তাহলে আমাকে কেনো হেট করো তুমি।”
আরসাল রেগে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই দোষী। সেদিন যাহ হয়েছে সব তোর জন্য হয়েছে। আমি ভালো তোকে বেসেছিলাম। আমাকে আম্মু তোর জন্য মেরেছে। আমাকে জোর করে বিদেশে পাঠানো হয়েছিলো তোর জন্য। তুই দায়ী এইসবের জন্য।”
–” কিন্তু এতে আমার দোষটাহ কোথায়? আমি কি করেছি? তুমি আমাকে কেনো দোষ দিচ্ছো?”
–” কারন তোর জায়গা অন্য কেউ হলে এগুলো হতো নাহ। আর আমার দোষ এইটায় আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম।”
আরসাল কথাগুলো বলে রুফটপ থেকে চলে যায়। সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি থেকে কি বুঝছো জানি নাহ। কেনো আমাকে দোষী বানাচ্ছো তাও জানি নাহ। কিন্তু তোমার এই ঘৃনা আমি মেনে নিতে পারছি নাহ। কেনো পারছি নাহ তাও বুঝছি নাহ।”
সবার মোটামুটি হলুদ দেওয়া শেষ আশাকে। আমানকে আরসাল জোর করে পাঠালো আশাকে হলুদ দেওয়ার জন্য। আমান আশার সামনে আসতেই আশার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি পড়ে। আমান হাতে একটু হলুদ নিয়ে কাঁপা হাতে আশার মুখে মাখিয়ে দেয়। আশা চোখ বুজে আমানের ছোয়া অনুভব করে।
বিয়ের দিন……………
আশা রুমে বসে আছে। দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। দরজা খোলার আওয়াজে চোখ মুছে নেয় আশা। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের। সেহের এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আশা পার্লার থেকে লোক এসে গেছে। তুই একটু ফ্রেশ হয়ে নে, ওরা আসছে।”
–” হুম।”
সেহের চলে যায়। আশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
সেহেরের রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই ব্যাক্তিটিহ ধরে ফেলে সেহেরকে। সেহের প্রথমে চোখ বন্ধ করে ফেললেও পরে চোখ খুলে দেখে আরসাল। আরসাল সেহেরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। সেহের আজও লেহেঙ্গা পরেছে, যার ঘাগরা গাঢ় গোলাপি কালারের, টপ রুপালি কালারের, দোপাট্টাও গাঢ় গোলাপি কালারের, চুলগুলো মাঝে সিথি করে টিকলি লাগিয়ে ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক, কানে রুপালি কালারের ঝুমকা, গলায় একটা লকেট সহ চেইন, হাত ভর্তি রুপালি কালারের চুড়ি, চুলে একপাশে সাদা কালারের জারবেলা ফুল লাগানো, সেহেরকে পরির মতো লাগছে। হঠাৎ পাশে কারো আওয়াজ পেয়ে আরসালের ধ্যান ভাঙে আর সেহেরকে ছেড়ে দেয়। সেহের আরসাল একসাথে পাশে তাকিয়ে দেখে আশফি মুচকি মুচকি হাসছে। আরসাল আশফির দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই আশফি তাড়াতাড়ি সরে যায় ওখান থেকে। সেহের একবার আরসালের দিকে তাকিয়ে আবার চলে যেতে নিলে আরসাল সেহেরের হাত ধরে কোথাও টেনে নিয়ে যেতে থাকে। সেহের যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করতে থাকে,
–” ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? কই যাও?”
আরসাল সেহেরের কোনো কথার উত্তর নাহ দিয়ে, রুফটপে নিয়ে এসে দেওয়ালের সাথে দাড় করিয়ে নিজের দুই হাত সেহেরের দুইপাশ দিয়ে দেওয়ালের উপর রাখে। সেহের আরসালের দিকে তাকাতেই মনে হয় আরসাল নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরসাল সেহেরের আরও কাছে এগিয়ে আসে, আরসালের নিশ্বাস সেহেরের মুখে আছড়ে পড়ছে। আরসাল সেহেরে কপালে একটা চুমু একে দেয়। সেহের কেঁপে উঠে আরসালের ভালোবাসার পরশ পেয়ে। চোখ বন্ধ করে ফেলে সেহের। সেহেরের চোখ বন্ধ দেখে আরসাল সেহেরের চোখের উপর চুমু দেয়। সেহের নিজের ঘাগরা হাত দিয়ে চেপে ধরে। সেহের আরসালকে বাঁধা দেওয়ার ইচ্ছা বা শক্তি কোনোটাই যেনো হচ্ছে নাহ। আরসাল সেহেরের মুখে চুমু দিয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। রুফটপের নানান রকম লাইটের জন্য সেহেরকে খুব রঙিন দেখাচ্ছে। আরসাল সেহেরের গলার দিকে তিলটার দিকে চোখ যায়। আরসাল মুখ এগিয়ে এনে গলার তিলে ঠোঁট ছোয়াতেই সেহের আরসালকে সরিয়ে চলে যেতে নেয়, কিন্তু আরসাল হাত ধরে ফেলে। সেহের জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে, আরসাল এগিয়ে এসে সেহেরের পেছনে দাড়ায়। হাত দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে একপাশে সরিয়ে দেয়। সেহেরকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আরসাল। এক হাত দিয়ে সেহেরের কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আরসাল। আরসাল সেহেরের দিকে মুখ এগিয়ে আনতেই সেহের বলে ওঠে,
–” যাকে ঘৃনা করো, তার কাছে আসতে খারাপ লাগছে নাহ?”
সেহেরের কথায় আরসাল থেমে যায়। আরসাল এতো সময় যেনো একটা ঘোরের মাঝে ছিলো। আরসালের সেই ঘোর কেটে যায় সেহেরে কথায়। সেহেরকে হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আরসাল। সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আরসালের দিকে। আরসাল আর কিছু নাহ বলে রুফটপ থেকে নিচে নেমে আসে। সেহের চোখ বন্ধ করে আরসালের সাথে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করছে। আরসাল একপাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করছে। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি করতে যাচ্ছিলাম আমি এইসব। কি করছিলাম এইগুলো। এমোন মনে হচ্ছিল যে নেশা করেছি। সেহেরকে দেখলে কেমন যেনো নিজেকে মাতাল মাতাল মনে হয়। আজ সেহেরকে দেখে যেনো আর কিছুই মাথায় আসছিল নাহ। শুধু মনে হচ্ছিল সেহেরকে আমার চাই। এমোন মনে হচ্ছিল, #তুই_শুধু_আমার কিন্ত, আমি তোহ সেহেরকে ঘৃনা করি। হ্যা, হেট করি আমি ওকে। কিন্তু!”
কেটে গেলো আরও কিছু সময়। আশাকে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে স্টেজে। আশাকে একটা মিষ্টি পুতুলের মতো লাগছে দেখতে। আমান একভাবে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। আশা মাঝে মাঝে আমানের দিকে তাকাচ্ছে। আর নিজের মনে নিজেকেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় কেটে যায়। রাত ৮ টাহ বেজে গেছে অথচ বর পক্ষের আসার কোনো খোজ খবর নাই। সবার মাঝেই একটা চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। মায়া চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি গো! সিরাজ ভাইয়েরা কোথায়?”
–” জানি নাহ। ফোন টাও তোহ তুলছে নাহ।”
–” ফোন তুলছে নাহ মানে কি?”
আহিয়া চৌধুরী, কবির চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী, মিসেস আখি ও মি. আশরাফও এগিয়ে আসেন তাদের দিকে। তারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিহাদ চৌধুরীর ফোন বেজে উঠে। জিহাদ চৌধুরি দেখেন সিরাজ রহমানের কল এসেছে। জিহাদ চৌধুরী ফোন কানে নিয়ে কথা বলার মাঝেই চেচিয়ে উঠেন। হঠাৎ করেই পুরো শরীর ঘেমে যায়, অস্থির অস্থির করতে থাকেন জিহাদ চৌধুরীর। সবাই ভয় পেয়ে যায়। মায়া চৌধুরী কান্না করে বলে উঠে,
–” কি হলো তোমার। কি হলো বলছো নাহ কেনো? কি হইছে তোমার?”
আরসাল আর আমান দুরে দাড়িয়ে কথা বলছিলো, হঠাৎ চেচামেচির আওয়াজ শুনে আরসাল আর আমান এগিয়ে আসে সেইদিকে। আরসাল নিজের বাবাকে দেখে তাড়াতাড়ি কাছে এসে বলে ওঠে,
–” বাবা, কি হয়েছে তোমার?”
জিহাদ চৌধুরী হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ওঠে,
–” আরসাল বাবা, আমার মেয়ে আশার কি হবে এখন?”
–” মানে!”
–” মানে সাইফ নাকি বলেছে, আশাকে বিয়ে করতে পারবে নাহ। আশাকে বিয়ে করা তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নাহ।”
চলবে………………🌹