তুই শুধু আমার পর্ব-১৭+১৮

0
1944

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 17+18

রংখেলা………

গার্ডেন টাহ খুব সুন্দর করে বাঁশের সাথে সাদা কাপড় আর লাল সাদা বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। ছোট, বড় প্লেটে করে সাজিয়ে রং রাখা হয়েছে।
আরসাল নিজের রুমে রেডি হচ্ছে। আজ আরসাল কে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে। আরসাল আজ একটা সাদা কালারের পাঞ্জামি, লাল চুড়িদার, লাল পান্জামি ওড়না, পান্জামির হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে রাখা, হাতে ব্রাউন বেলটেড ওয়াচ, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি আর কপালে কয়েকটি পড়েই আছে, আরসাল আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছিল। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে আরসাল ফিরে দেখে আমান এসেছে। আমানকে দেখে আরসাল বলে ওঠে,
–” রেডি?”

–” আমার যেতে ইচ্ছা করছে নাহ ওখানে।”

–” কেনো যাবি নাহ? সাইফ তোহ আর নাই প্রব্লেম নাই।”
বলেই আরসাল হেসে দেয়। আরসালের হাসি দেখে আমানের রাগ উঠে আর বলে ওঠে,
–” তুই হাসছিস?”

–” আচ্ছা সরি বাবা! চল।”
বলেই আমানকে নিয়ে গার্ডেনে চলে আসে। আরসাল আর আমান এসে দেখে গার্ডেনে আশা, আশিকা, সাথী, নেহা, আশফি, আরও অনেক বন্ধু বান্ধব রয়েছে। কিন্তু সেহের নেই। আরসালকে দেখতেই নেহা এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” wow, Arsal. পাঞ্জাবি পরে তোমাকে দারুণ লাগছে।”

–” Thanks, Neha!”
আরসাল চারপাশে তাকিয়ে দেখে সেহেরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে নাহ। আরসাল আশার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আশা বাকি সবাই কোথায়?”

–” বড়রা বলেছে এই রং খেলা ছোটদের অনুষ্ঠান। এখানে বড়রা কেউ আসবে নাহ।”

–” ওহ।”
আরসাল কিছুতেই সেহেরের কথা জিজ্ঞাসা করতে পারছে নাহ। কিছুক্ষণ পর সেহেরের গলার আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকাতেই, সেহেরকে দেখে যেনো একবার তার হার্ট মিস হয়ে গেলো মনে হয়। সেহের একটা সাদা শর্ট কামিজ, সাদা ধুতি সালোয়ার আর লাল ওড়না পরেছে, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, চোখ ভর্তি কাজল, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, হাতে লাল চুড়ি, কানে লাল ঝুমকা, সেই সাথে সেহেরের মন হরন করা হাসি, সব মিলিয়ে পরি লাগছে। সেহের আশফির সাথে হাত নাড়িয়ে কথা বলছে, আর আরসাল সেহেরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। বিষয় টাহ আবার নেহার চোখে পড়ে। নেহা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের সামনে থাকলে আরসাল সব সময় এমোন করে তাকিয়ে থাকে কেনো ওর দিকে? কিছু তোহ কারন আছে। কিন্তু কারন টাহ কি হতে পারে? সেহের তোহ আরসালের কাজিন। বাট আরসাল সেহেরকে নিজের বোন কখনই ভাবে নাহ এইটা তোহ প্রথম দিনই মনে হয়েছিল। আরসালের কাছে সেহের অন্য কিছু। তাহলে কি আরসাল সেহেরকে, নাহ। আর যদি আমি যাহ ভাবছি তাই হয় তাহলেও আমি তোমাকে ছাড়ছি নাহ আরসাল। তোমাকে ছেড়ে থাকতে নাহ পেরে বিডি পর্যন্ত চলে এসেছি, তোমাকে হারিয়ে ফেলার জন্য নয়। তুমি শুধু আমার আরসাল। তার জন্য আমাকে যা যা করা লাগে আমি তাই করবো। তাতে যদি কাউকে মারতেও হয়, তাহলেও আমি ভাববো নাহ। কিন্তু তোমাকে আমার হতেই হবে আরসাল।”

নেহা কথা গুলো ভেবে আরসালের দিকে এগিয়ে এসে, আরসালের হাত ধরে। কারো স্পর্শে আরসালের ধ্যান ভাঙে, সেহেরের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে নেহা। নেহা আরসাল কে বলে ওঠে,
–” রং খেলাকে আরও রঙিন করা উচিত আরসাল।”

আরসাল নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায় রং এর প্লেট সাজানো টেবিলের দিকে। আরসাল প্লেট থেকে কিছু রং মুঠ করে নেই।

আরসাল ঃ ( হাতে ভর্তি রং নিয়ে উপরের দিকে ছুুড়ে দেয় )
,,,,,,,,,,,,,,বালাম পিচকারি,,,,,,
,,,,,,জো তুনে মুঝে মারি,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,তোহ বলে রেজামানা,,,,,,,,,
,,,,,,খারাবি হো গায়ি,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,মেরে আং রাজা,,,,,,,,,
,,,,,,,,জো তেরা রাং লাগা,,,,,,,
,,,,,তোহ ছিধি ছাধি চোরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,সারাবি হো গায়ি,,,,,,,,

সেহের এইদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়। কিন্তু তারপরেই নেহাকে আরসালের সাথে নাচতে দেখে রাগে আর সেদিকে যায় নাহ। একপাশে মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে।

নেহা ঃ ( আরসালের চারপাশে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,,,,ইতনা মাজা,,,,,,,,
,,,,,,কিউয়া রাহ হায়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,,তুনে হাওয়া মে ভাং মেলাইয়া,,,,,

আশা আমানের দিকে তাকিয়ে আছে। আশাকে আশিকা টেনে নিয়ে যায় তাদের মাঝে।

আশিকা ঃ ( আশাকে রং মাখিয়ে দিয়ে )
,,,,,,,,,,,,,ইতনা মাজা,,,,,,,,
,,,,,,কিউয়া রাহ হায়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,,তুনে হাওয়া মে ভাং মেলাইয়া,,,,,

নেহা ঃ ( আশিকা এবং আশার দিকে এসে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,দুগনা নেশা,,,,,,,
,,,,,,,,কিউ হো রাহ হাইয়ে,,,,,,
,,,,,আখোসে মিঠা তুনে খিলায়া,,,,,,,

আরসাল ঃ ( নেহা, আশিকা, আশার দিকে এগিয়ে এসে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,হো তেরি মাল মাল কি কুরতি,,,,,,
,,,,,,,,,,,গুলাবি হো গায়ি,,,,,,
,,,,,মানচালি চাল ক্যাইসে নায়াবি হো গায়ি,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,তোহ,,,,,,,,,,,

সবাই ঃ ( সেহের, আমান বাদ দিয়া সবাই আশাকে মাঝে রেখে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,,,,,বালাম পিচকারি,,,,,,
,,,,,,জো তুনে মুঝে মারি,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তোহ ছিধি ছাধি চোরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,সারাবি হো গায়ি,,,,,,,,
,,,,,,হ্যা জিন্স পেহেং কে যো,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তুনে মারা থুৃমকা,,,,,,,
,,,,,,,তোহ লাট্টু পাদোনসান কি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,বাবি হো গায়ি,,,,,, 2x

সবাই সবাইকে রং মাখাচ্ছে। আমান এগিয়ে এসে হাতে কিছু রং নিয়ে আশার সামনে দাড়ায়। আশা আমানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমান আশার মুখে রং মেখে দেয়। আমানের ছোয়া পেতেই আশা চোখ বন্ধ করে নেয়। এই দৃশ্য দেখে আরসাল মুচকি হাসি দেয়। আমান আশার থেকে একটু পিছিয়ে আসে। আশা আমানের দিকে চোখ খুলে তাকিয়ে থাকে।

আমান ঃ ( আশার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে )
,,,,,,,,,তেরি কা লাইয়ি হে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,হাতোহ মে হাইয়ি হে,,,,,,,,,
,,,,,,,,,মেইনে মারোডা তোহ,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,লাগতি মালাই হ্যায়,,,,,,

আশা ঃ ( আমানের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,,মেহেংগা পেডাগা য়ে,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,চাসকা মালায়া কা,,,,,,,,,
,,,,,,,উপভাস কারনে মেইন,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,তেরি ভালাইয়ি হে,,,,,,,,,,,,,,

আশফি ঃ ( নেহার পাশে গিয়ে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,হো বিনদিয়া তেরি মেহতাবি হোগাইয়ি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,দিলকে আরমানো,,,,,
,,,,,,মে বেহিসাবি হো গাইয়ি,,,,,,
,,,,,,,,,,তোহ,,,,,,,,,

সবাই ঃ ( সেহের বাদে সবাই আশাকে মাঝে রেখে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,,,,,,,বালাম পিচকারি,,,,,,
,,,,,,জো তুনে মুঝে মারি,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তোহ ছিধি ছাধি চোরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,সারাবি হো গায়ি,,,,,,,,
,,,,,,হ্যা জিন্স পেহেং কে যো,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তুনে মারা থুৃমকা,,,,,,,
,,,,,,,তোহ লাট্টু পাদোনসান কি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,বাবি হো গায়ি,,,,,, 2x

সবাই সবাইকে রং মাখাচ্ছে আর নাচছে। সেহের রাগে তেহ যাচ্ছেই নাহ ওখানে। একপাশে দাড়িয়ে আছে। সবাই নচে ব্যাস্ত থাকায় খেয়াল করছে নাহ। কিন্তু আরসাল ঠিকই খেয়াল করছে কিন্তু এমোন ভাব করছে যেনো সেহেরকে দেখছেই নাহ। আরসাল বুঝতে পারছে সেহের নেহার সাথে ওরে দেখে রেগে গেছে। আরসালেরও কেনো জানি ভালো লাগছে সেহেরকে এইভাবে রাগাতে। তাই আরসাল নেহার সাথে আরও বেশি করে নাচতে থাকে।

আরসাল ঃ ( নেহার কাছে গিয়ে নেহার সাথে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,কাইউন নো ভাচানচি কি,,,,,,,
,,,,,হোতোং পে গালি হায়,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,জাবকে তেরে দিলকা,,,,,,
,,,,,,,কামরা তোহ খালি হেয়,,,,,,,,,,,

নেহা ঃ ( আরসালের সাথে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,মুঝকো পাতা হায় রে,,,,,,
,,,,,,,,,,,,কায়া চেহাহাতা হায় তু,,,,,,,
,,,,বলি বাহাযান তেরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,নিইয়াত কুয়ালি হ্যায়,,,,,,,

কেউ একজন ঃ ( সেহেরকে টেনে নিয়ে, সেহের তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেও তার সাথে তাল মিলিয়ে নেয় )
,,,,,,,,,,,,,,জুলমিয়ে হাজির,,,,,
,,,,,,,,,,,,জাওয়াবি হো গায়ি,,,,,,
,,,,,,,তু হার তালে কি আজ ছাবি হো গায়ি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,তোহ,,,,,,,,,

সবাই ঃ ( লোকটিকে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলেও লোকটিকে দেখে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে, কিন্তু আরসাল রেগে যায় এবং নাচের থেকে সরে যায়, আরসাল বাদে বাকি সবাই নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,,,,বালাম পিচকারি,,,,,,
,,,,,,জো তুনে মুঝে মারি,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তোহ ছিধি ছাধি চোরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,সারাবি হো গায়ি,,,,,,,,
,,,,,,হ্যা জিন্স পেহেং কে যো,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তুনে মারা থুৃমকা,,,,,,,
,,,,,,,তোহ লাট্টু পাদোনসান কি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,বাবি হো গায়ি,,,,,, 2x

নাচ শেষে সবাই এক মুঠো রং নিয়ে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়ে!”

সবাই লোকটির দিকে খুশি ভরা মুখ নিয়ে তাকায়। আর লোকটাহ সেহেরের দিকে হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সেহেরও হাসি + অবাক মুখ নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। সেহের লোকটার দিকে হেসে বলে ওঠে,
–” রাহুল ভাইয়া তুমি? এখানে কিভাবে? তুমি তো আবার কোন একটা কাজে বিদেশে চলে যাবে বলেছিলে?”

(( আগে এই মানুষ টার পরিচয় দেয়। রাহুল হার্শ, সেহেরের বাবা আজিজ চৌধুরীর বেস্ট ফ্রেন্ড মুবিন হার্শের ছেলে। আরসাল বিদেশে যাওয়ার কয়েকদিন পরই রাহুল বিদেশ থেকে দেশে আসে। তারপর আর বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে নি। আরসালের থেকে ২…..৩ মাসের বড় রাহুল। আরসাল আর রাহুল একে অপরকে চিনলেও রাহুল বিদেশে থাকায়, আবার রাহুল দেশে আসলে আরসাল বিদেশ থাকায় সেরকম বন্ধুত্ব কখনো গড়ে উঠেনি। রাহুল এইবার দেশে ব্যাক করে সেহেরকে দেখেই ভালো লেগে যায়। আস্তে আস্তে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় পরিনত হয়। কিন্তু কখনো সেহেরকে বলে নি। কিন্তু এই ৩ বছরে রাহুল আর সেহেরের ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গেছে। সাথে আশা, আশফি, সাথী এক কথায় চৌধুরী বাড়ির সবার সাথে মিশে গেছে রাহুল। ))

–” হুম বলেছিলাম, বাট যাওয়া হয় নি। এর মাঝেই আশার বিয়ের কথা শুনে ভাবলাম সারপ্রাইজ দেই। তাই আর তোমাদের বলি নি।”

–” ওয়াও।”
আশা এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” তাহলে আমার বিয়ের কথা শোনার আগেও তোহ অনেক দিন আসো নি কেনো?”

–” তার জন্য সরি। বিদেশে যাতে যেতে নাহ হয়, তার জন্য দেশে থেকে বিদেশের কাজ গুলো এখান থেকে কমপ্লিট করার জন্য একটু বিজি ছিলাম।”

–” আচ্ছা, ঠিক আছে।”

–” সে যাই হোক! তোমরা সবাই নাচছিলে বাট আমার জান টাহ কেনো নাছিলো নাহ? মজা করছিলো নাহ?হুম?”

রাহুল কথাটা বলেই সেহের কে এক হাত দিয়ে কাছে টেনে একাপাশে জড়িয়ে ধরে রাখে। এতো সময় আরসাল শুধু দেখছিলো আর শুনছিলাে, কিন্তু রাহুলের সেহের কে জান ডাকা আর একহাত দিয়ে কাছে টেনে জড়িয়ে নেওয়া দেখে আরসালের মাথায় যেনো রক্ত উঠে যায়। আরসাল অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেহের আর রাহুলের দিকে। রাহুল কথা বলতে বলতে হঠাৎ আরসালের দিকে চোখ যেতেই আরসালের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আরসাল রাইট?”

আরসালের রাগ হলেও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
–” হুম।”

–” আমাকে চিনতে পারছো?”

–” রাহুল!”

–” ইয়াহ। তারপর কেমন আছো?”

–” হুম। গুড!”

–” ওকে। সেহের!”
সেহের বলে ওঠে,
–” হুম, বলো।”

–” তোমার হাতের কফি খাওয়াবা নাহ?”

–” সিওর।”

–” ওকে, তুমি কফি বানিয়ে নিয়ে আসো। আমি সবার সাথে কথা বলে আসি।”

–” ওকে।”
বলেই সেহের চলে যেতে গেলেই আরসালের দিকে চোখ যায়। আরসালের দিকে তাকাতেই সেহের যেনো ভয় পেয়ে যায়। মনে হচ্ছে আরসালের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আরসাল কে এমন মনে হওয়ায় সেহের আর দাড়ায় নাহ চলে যায় কফি বানাতে। রাহুলও বাকি সবার সাথে কথা বলতে চলে যায়।আরসালও রাগেতে নিজের রুমে চলে যায়। আমান এগিয়ে এসে আশফির কাছে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” ছেলেটা কে রে?”

–” রাহুল ভাইয়া! তোমাদের বয়সের। ছোট আব্বুর বেস্ট ফ্রেন্ডের ছেলে। অনেক ফ্রেন্ডলি।”

–” ওহ।”
আমান মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আরসাল কে দেখে মনে হলো নাহ স্বাভাবিক আছে। যে আরসাল সেহেরের দিকে কাউকে তাকাতে দিতো নাহ। সেই সেহের কে কেউ জান বলে ডাকলো, আবার কাছেও টেনে নিলো, এইটা আরসাল সহজে মেনে নিবে এইটা ভাবাও যায় নাহ। আরসাল কই গেলো? দেখে আসি।”

আমান আরসাল কই গেছে দেখতে চলে যায়। ব্যাপার টাহ শুধু আমান নাহ আরও একজন খেয়াল করেছে। আর সে হলো নেহা। নেহাও মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” রাহুল ছেলেটা যখন সেহের কে কাছে টেনে নিলো, তখন তোমার মুখের রাগ আমি দেখেছি আরসাল। এই সেহেরকে নিয়ে তোমার ধারনা ঠিক কি? আমি যাহ ভাবছি তাই? আমাকে জানতে হবে। সব জানতে হবে আমাকে।”

★★★
আজ মেঘলা মেঘলা আবহাওয়া। রোদ নেই, মেঘ হলেও বৃষ্টি পড়ার সম্ভবনা কম। ওয়েদারটাহ বেশ সুন্দর। আরসাল আর আমান গার্ডেনে বসে আছে। আরসাল যে রেগে আছে আমান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু আরসাল নিজের রাগ কন্ট্রোল করে চুপ করে আছে। কিন্তু ভয় হলো কতক্ষণ কন্ট্রোল থাকবে আরসালের এই রাগ। আরসাল হঠাৎ দেখে সাথী একটা রং এর প্লেট নিয়ে যাচ্ছে। আরসাল উঠে সাথীর কাছে গিয়ে বলে ওঠে,
–” সাথী, রং খেলা তোহ শেষ। এই রং নিয়ে কই যাও?”

–” আসলে, রাহুল ভাইয়া বললো যে সেহের আপুকে রং মাখাবে। সবাই রং মেখেছে, সেহের আপু মাখে নি। তাই রাহুল ভাইয়া প্রথম রং মাখিয়ে দিবে। তাই আমাকে বললো রং নিয়ে যেতে।”
সাথীর কথা শুনেই আরসালের মেজাজ আরও গরম হয়ে গেলো। কোনো ভাবে নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
–” কই ওরা?”

–” সেকেন্ড রুফটপে।”

–” আচ্ছা শুনো, তোমার রাহুল ভাইয়া কে গিয়ে বলবা যে ওর আম্মু ওকে ডাকছে। আর এক্ষুনি। ওকে!”

–” ওকে।”
সাথী চলে যায়। আমান দুর থেকে দেখছিলো কিন্তু কিছু শুনতে পেলো নাহ। আমান এগিয়ে আসতেই আরসাল বলে ওঠে,
–” তুই রুমে যাহ আমি একটু আাসছি।”

–” আরে আরসাল কই যাস তুই?”
কিন্তু আরসাল কিছু নাহ শুনেই চলে যায়। আমান এরও আর কি করার নিজের রুমে চলে যায়।

সেহের রুফটপে রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে বাইরে টাহ দেখছে। এতো সময় রাহুলের সাথে কথা বলছিলো সেহের। সাথী এসে বললো রাহুলের আম্মু নাকি রাহুল কে ডাকছে। তাই রাহুল তার আম্মু ডাকছে শুনে কিছু সময়ের চলে যায়। তাই সেহের একা একা দাড়িয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছে। হঠাৎ রুফটপের দরজায় একটু আওয়াজ পেয়ে পিছন ঘুরে দাড়িয়ে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসাল কে দেখে সেহেরের কেমন যেনো ভয় লাগতে থাকে। কারন আরসালের চোখ লাল হয়ে আছে। সেহের আস্তে আস্তে আরসালের পাশ দিয়ে যেতে গেলে আরসাল সেহের এক হাত ধরে ফেলে। আরসাল সেহের হাত ধরতেই সেহের আরসালের দিকে ভিতু চোখে তাকিয়ে থাকে। আরসাল সেহেরের হাত ছেড়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” কিরে, আমি আসলাম আর তুই চলে যাচ্ছিস? আমার সাথে থাকতে মনে হয় তোর ভালো লাগে নাহ তাই নাহ? শুধু রাহুলের সাথে থাকতে ভালো লাগে তোর।”

আরসালের কথা শুনে সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তাও সেহের কি মনে করে বলে ওঠে,
–” তোমার সাথে কি, কথা বলা যায়?”

সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহের কে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে দিয়ে, একহাত সেহেরের পাশে দেওয়ালের উপর রেখে, সেহেরের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” ওহ, আমার সাথে কথা বলা যায় নাহ, তাই নাহ? তাহলে কার সাথে কথা বলা যায়? ঐ রাহুলের সাথে?”

–” কি বলছো তুমি এইসব?”

–” কেনো, ভুল বললাম নাকি? হাজার হলেও রাহুলের জান বলে কথা।”

–” কি বলছো এইসব?”

–” আমি কি বলছি তাই নাহ? তাহলে এতো সময় তোহ ঠিকই ছিলি যত সময় রাহুল ছিলো। আমি আসতেই চলে যাচ্ছিলি কেনো?”

–” কারন তুমি তোহ ঘৃনা করো আমাকে। তুমিই তোহ বলেছো তাই নাহ তুমি আমাকে ঘৃনা করো। তাহলে আমি রাহুল ভাইয়ার সাথে বা আর যার সাথেই কথা বলি নাহ কেনো তাতে তোমার কি?”
সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেহেরের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আরসাল সেহেরের চোখের পানি এক হাত দিয়ে মুছে দেয়। অন্য হাতে মুঠো করা রং রয়েছে আরসালের হাতে। আরসাল সেহেরের মুখে সেই মুঠো ভর্তি রং এর হাত রাখতেই সেহের চোখ বন্ধ করে নেয়। সেহেরের গলা দিয়ে হাত দিয়ে আরসালের হাত নেমে এসে সেহেরে হাতে মুঠি বেধে ধরে। সেহেরের মুখ, গলা, হাত দিয়ে লাল রংএ ভরে যায়। সেহেরের এই রূপ যেনো আরসালের কাছে বড্ড আবেদনময়ী লাগছে। তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহেরের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে আরসাল। সেহেরের আরসালকে এগিয়ে আসতে দেখে পিছিয়ে যেতে যেয়ে বাধা পায় দেওয়ালে। আরসাল সেহেরের অনেক কাছে চলে আসে। আরসালের নিশ্বাস সেহেরের মুখে আছড়ে পড়ে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আমাকে এতো ঘৃনা কেনো করো ভাইয়া? এখন নাহ বাসো, একটা সময় তোহ আমাকে ভালোবাসতে। তাহলে আজ এতো ঘৃনা কেনো করো?”

সেহেরের কথা শুনে আরসাল আবার পিছিয়ে আসে সেহেরের থেকে আর উল্টো দিকে ঘুরে দাড়ায়। সেহের এবার আরসালের সামনে এসে বলে,
–” আচ্ছা আগেও যদি আমি কারো সাথে মিশতাম তাহলেও তুমি এমোন করতে। কারন তখন আমাকে ভালোবাসতে। কিন্তু এখন তোহ আমাকে ভালোবাসো নাহ। তাহলে এখন আমি রাহুল ভাইয়ার সাথে কথা বললে এমোন কেনো করছো?”

আরসাল আবার উল্টো দিকে ঘুরে দাড়ায়। সেহের আবার আরসালের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” চুপ করে কেনো আছো? বলো! তোমাকে আজ বলতেই হবে। বলো ভাইয়া।”

আরসাল কিছুই নাহ বলে রুফটপ থেকে নিচে চলে যায়। সেহেরের চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি বেরিয়ে আসে। সেহেরও নিচে চলে যায় চোখ মুছতে মুছতে। কিন্তু রুফটপে আরও একজন আছে যে এইসব কিছু দেখেছে। আর সে হলে নেহা৷ আরসাল কে রং নিয়ে রুফটপের দিকে আসতে দেখে নেহার কেমন সন্দেহ হয়। তাই আরসালের পিছু নেয়, আর যাহ দেখার দেখে নেয়। নেহা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” যাহ সন্দেহ করেছিলাম তাই সত্যি হলো। তার মানে আরসাল সেহেরকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন কোনো একটা কারনে সেহের ঘৃনাও করে। কিন্তু ঘৃনা করার কারন টাহ কি হতে পারে? এই কারন টাহ আমাকে জানতে হবে। কিন্তু কার কাছে জানবো? কে বলবে আমাকে এই কাহিনি? একজন আছে, যে আমাকে এই কারনটাহ বলে দিবে।”

★★★
আশফি গার্ডেনে ঘুরে ঘুরে কাজ দেখছে। আসলে সন্ধ্যায় সঙ্গীত মেহেনদির জন্য গার্ডেনকে আবার সাজানো হচ্ছে। আশফি ঘুরে ঘুরে সেই সাজনো দেখছে। হঠাৎ চোখ পড়ে নেহা এগিয়ে আসছে তার দিকে। নেহাকে দেখতেই আশফির মুখে হাসি ফুটে উঠে। নেহা আশফির দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” হাই! কি করো?”

–” সঙ্গীত, মেহেন্দির জন্য সাজানো হচ্ছে তাই দেখছি।”

–” ওয়াও! অনেক সুন্দর হচ্ছে সাজনো।”

–” হুম।”

–” আচ্ছা আশফি। একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?”

–” কেনো নয়? বলো!”

–” আচ্ছা আশফি। আমি এইটা জানি যে আরসাল সেহেরকে ভালোবাসতো। কিন্তু কোনো একটা কারনে আরসাল সেহেরকে এখন আর ভালোবাসে নাহ। কেনো?”

–” কে বলেছে, ভাইয়া এখন সেহেরকে ভালোবাসে নাহ? ভাইয়া এখনো সেহেরকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে ভাইয়া। কিন্তু ভাইয়া তোহ অনেক যেদী, তাই সেদিনের ঘটনার জন্য ভাইয়া সেহেরকেই দায়ী করে। তাই হয়তো এমোন বলে। কিন্তু ভাইয়া এখনো সেহেরকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।”

আশফির কথা শুনে নেহার মারাত্মক রাগ উঠে। তাও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছিল সেইদিন।”
আশফি সেইদিনের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে দেয়। আরসাল সেহেরকে কতটা ভালোবাসতো, সেহেরকে হঠাৎ করেই তার নানা বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া, আরসালকে মায়া চৌধুরীর থাপ্পড় মারা, জোর করে বিদেশে পাঠানো সব বলে দেয়। নেহা সব শুনে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” তাহলে ঘটনা টাহ এই। সেহের কে আরসাল এতোটা ভালোবাসতো। কিন্তু এখন তোমার পরিবার এই ভালোবাসা মেনে নিলেও আমি যে মেনে নিবো নাহ আরসাল। চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে আরসাল চৌধুরীর বউ নেহা হবে। আর এইটায় ফাইনাল। তুমি যদি আমার নাহ হও, তাহলে সব শেষ করে দিবো আমি।”

নেহাকে কিছু ভাবতে দেখে আশফি বলে ওঠে,
–” নেহা কিছু কি ভাবছো?”

–” নাহ।”

–” আচ্ছা চলো, ঐদিকে যায়।”

–” ওকে! চলো।”
আশফি আর নেহা হেটে কথা বলতে থাকে।

সঙ্গীত + মেহেন্দি অনুষ্ঠান………

আরসাল রেডি হয়ে গার্ডেনে আসে। এসে দেখে এক অন্যরকম দৃশ্য। মেয়েরা বড় টুলের উপর বসে আছে আর মেহেন্দি আর্টিস্টরা মেহেন্দি পরাচ্ছে। আজ সব মেয়েরা একইরকম ড্রেস সহ সেজেছে। আরসালের হঠাৎ চোখ যায় সেহেরের উপর, আর সেহেরের উপর চোখ যেতেই যেনো চোখটাহ স্থির হয়ে যায়। বাকি সবার মতো সেহেরও একটা লাল কালারের ফুলানো ঘাগরা, সবুজ টপ, চুলগুলো সামনে পাফ করে পেছনে ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল, লাল লিপস্টিক, আর্টিফিশিয়াল ফুলের টিকলি, ফুলের কানের দুল, ফুলের গলায় সিম্পিল নেকলেস, লাল কাচের চুড়ি, সব মিলিয়ে পরি, আরসালের স্বপ্নের পরি। আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহের এখনো মেহেদি লাগানো শুরু করে নি, আশার হাতে মেহেদি পরানো হচ্ছে তাই দেখছে, কথা বলছে আর হাসছে।

*এইদিকে কেউ একজন একটা বাটি নিয়ে তার ভেতর থাকা মেহেদিতে একটা মেডিসিন মিশিয়ে দেয়। আর মনে মনে বলে ওঠে,
–” সেহের সোনা। এখন এই মেহেদি লাগালেই তোমার হাত এমন জ্বালা করবে, যে তুমি সইতেও পারবে নাহ। কান্না করবে তুমি। চিন্তা করো নাহ সেহের সোনা, এতে তোমার হাতের ক্ষতি হবে নাহ। জাস্ট একটু লাল হয়ে যাবে, কিন্তু প্রচন্ড জ্বালা করবে। তোমার আর আমার সম্পর্কটাহ তোমার চোখের পানি দিয়ে শুরু হোক।”

কথাগুলো মনে মনে বলেই অচেনা মানুষটি হেসে দেয়। তারপর মেহেদির বাটিটাহ একজন সার্ভেন্ট কে দিয়ে বলে সেহেরকে এইটা দিয়ে আসতে।
একজন সার্ভেন্ট এসে সেহেরের হাতে মেহেদীর বাটি টাহ এগিয়ে দিয়ে বলে,
–” ম্যাম, আপনার মেহেদি।”

–” দাও।”
সেহের মেহেদির বাটি টাহ হাতে নিয়ে একজন মেহেদি আর্টিস্ট এর হাতে দিয়ে নিজে টুলে বসে পড়ে। আরসাল দুরে একটা চেয়ারে বসে আমানের সাথে গল্প করছে আর সেহেরকে দেখে যাচ্ছে। মেয়েদের মেহেদি দেওয়া শেষ হলে, সঙ্গীতের অনুষ্ঠান শুরু করা হবে। মেহেদি আর্টিস্ট টিউবে মেহেদি ভরে নেয়। সেহের হাত বাড়িয়ে দেয়, মেহেদি দিতে থাকে হাতে।
কিছুক্ষণ মেহেদি দেওয়ার পর সেহেরের হাতে কেমন জ্বালা জ্বালা করছে। কিন্তু সেহের প্রথম এতো খেয়াল দেয় নাহ, ভাবে যে হয়তো হালকা জ্বালা হচ্ছে, পরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আর একটু সময় যেতেই সেহেরের হাতে প্রচুর জ্বালা শুরু হয়। সেহের মেহেদি আর্টিস্ট এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার হাত টাহ বেশ জ্বালা জ্বালা করছে।”

–” কি বলছেন ম্যাম? আমরা পুরােনমেহেদি চেক করে এনেছি। কোনো সাইড ইফেক্ট হওয়ার কথা নাহ।”

–” নাহ অনেক জ্বালা করছে তোহ। আহ!”

–” কিন্তু ম্যাম।”
সেহের নিজেই নিজের হাত ধরে রাখে, আর সেহেরের চোখ দিয়ে পানি বের হতে থাকে। আরসালের হঠাৎ মনে হয় সেহের একটু অস্বাভাবিক হয়ে আছে, আর মেহেন্দি আর্টিস্ট মেহেদি লাগানো অফ করে কি যেনো বলছে। আরসাল উঠে দাড়ায়, আরসালের মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। হঠাৎ দেখে সেহের কান্না করে দিয়েছে। আরসাল আর এক সেকেন্ডও নাহ দাড়িয়ে সেহেরের কাছে চলে আসে আর উদগ্রীব হয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কি হয়েছে? আপনি চুপ করে আছেন কেনো? সেহেরের কি হয়েছে।”

মেহেন্দি আর্টিস্ট মেয়েটাহ আরসালের কথায় ভয় পেয়ে যায়, আর বলে ওঠে,
–” আসলে স্যার ম্যাম বলছেন ওনার হাতে নাকি জ্বালা করছে।”

–” জ্বালা করছে মানে কি? আপনাদের তোহ বলা হয়েছিল মেহেদি চেক করে আনার কথা।”

–” জ্বি স্যার আমরা তোহ চেক করেই এনেছি।”

–” তাহলে জ্বালা করে কিভাবে?”
আরসাল চিৎকার করে বলে উঠে। মেহেদি আর্টিস্টও মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়। সবাই আরসালের চিৎকারের আওয়াজ শুনে এগিয়ে আসে। সবাই জিজ্ঞাসা করতে থাকে কি হয়েছে। কিন্তু আরসাল আর কিছু নাহ বলে সেহেরের দিকে তাকায়। আমান মেহেদি আর্টিস্ট এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? আর সেহের কাদছে কেনো?”

মেহেদি আর্টিস্ট বলে দেয় সেহেরের হাত জ্বালা করছে। এইদিকে সেহের কান্না করতেই আছে। প্রচন্ড জ্বালা করছে সেহেরের হাত। সেহের যেনো আর সহ্য করতে পারছে নাহ। আরসাল যেনো সেহেরের কান্না আর সহ্য করতে পারছে নাহ। আরসাল আশফির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আশফি দ্রুত পানি নিয়ে আই, যাহ।”

আশফি তাড়াতাড়ি পানি আনতে চলে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে সেহেরের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কিছু হবে নাহ কলিজা। সব ঠিক হয়ে যাবে জান। একটু ধের্য ধর।”

–” খুব জ্বালা করছে আর সহ্য করতে পারছি নাহ।”

–” সব ঠিক হয়ে যাবে জান। আরে পানি কই। পানি আনতে এতো টাইম লাগে নাকি।”
আশফি পানি নিয়ে আসলে আরসাল দ্রুত পানি নিয়ে সেহেরের হাত ধুয়ে দেয়। সেহেরের হাত ধুতেই দেখে সেহেরের হাত পুরো লাল হয়ে গেছে। আরসালের চোখেও পানি জমা হয়ে যায়, সেহেরের কষ্ট দেখে। আরসাল তাড়াতাড়ি পলক ফেলে নিজেকে সামলে নেয়। আর কোনো কথা নাহ বলে সেহেরকে কোলে তুলে নেয়। সেহেরের হাতে জ্বালার জন্য যেনো কিছুই খেয়াল নাই। সবাই ওদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নেহা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরসালের এইসব খেয়াল করার সময় নাই। আরসাল সেহেরকে কোলে করে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসে। এসে সেহেরকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে, একটা মলম নিয়ে আসে। আরসাল সেহেরের হাত এগিয়ে নিয়ে মলম টাহ লাগিয়ে দেয়। এতে সেহেরের হাতে একটু আরাম লাগে। এতোক্ষণে সেহের আরসালের দিকে খেয়াল দেয়। আর দেখে আরসাল খুব আস্তে আস্তে মলম টাহ লাগাচ্ছে, মনে হচ্ছে ব্যাথাটা সেহের নাহ আরসালই পেয়েছে। আরসালের চোখে পানি জমে আছে, আর তাহ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। আরসাল মলম টাহ লাগিয়ে দিয়ে সেহেরের দিকে তাকাতে দেখে সেহের ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আরসালের সেইদিকে খেয়াল নাই, আরসালের মনে হচ্ছে কোনো পরির থেকেও সুন্দরী কেউ তার সামনে বসা। কাউকে কান্না করলেও যে এতো সুন্দর লাগতে পারে এই প্রথম আরসাল বুঝতে পারলো। এই সাজের সাথে কান্না করার জন্য সেহেরের চোখের পাপড়িতে ফোঁটা ফোঁটা পানি আর নাক টাহ লাল হয়ে আছে, এ যেনো অন্যরকম সুন্দরের উধাহরন।
আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে ওঠে,
–” জ্বালা কমেছে।”

–” হুম। হালকা।”

–” ঠিক হয়ে যাবে।”
কথাটাহ বলেই সেহেরের মুখ এগিয়ে নিয়ে এসে সেহেরের কপালে চুমু দেয় আরসাল। সেহেরও চোখ বন্ধ করে নেয় আরসালের স্পর্শে। আরসাল আবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এখানে রেস্ট নে। কোথাও যাবি নাহ। আমি একটু গার্ডেনে যাচ্ছি।”

কথাটাহ বলেই আরসাল বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

★★★
রাহুল একটা কাজে বাইরে গেছিলো। এসেই সেহেরের কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়ে আর জানতে পারে সেহের আরসালের রুমে আছে। আর কিছু নাহ ভেবেই আরসালের রুমে এসে দেখে সেহের বিছানার উপর বসে আছে। রাহুল রুমে ঢুকতেই সেহের দাড়িয়ে পড়ে। রাহুল সেহেরের কাছে এগিয়ে এসে বলে,
–” হাতে জ্বালা কমেছে।”

–” হুম।”
রাহুল আরও কিছু কথা বলার পর সেহের জোর করে রাহুল কে পাঠিয়ে দেয় ফ্রেশ + খাওয়া + রেস্টের জন্য।

★★★
কেউ একজন একা একা বলতে থাকে,
–” এতো কষ্ট করে মেহেদীর বাটিতে মেডিসিন দিলাম যেনো সেহেরের কষ্ট দেখে শান্তি পায়। আর সেখানে এখন রাগ উঠতেছে। আরসাল ওর কোলে করে নিয়ে চলে গেলো। আরসাল তুমি শুধু আমার, শুধু আমার। সেহের এখন আমার লাইফের সবচেয়ে বড় শত্রু। কারন ঐ একমাত্র মেয়ে যে তোমাকে আমার কাছে থেকে নিয়ে যেতে পারে। তাই ওকে আমি আমার লাইফে ঢোকার আগেই সরিয়ে দিবো।”

কথাগুলো বলেই মানুষটাহ শয়তানি হাসি দেয়।

চলবে……………..🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে