#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 5+6
চারিদিকে সূর্য তার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ভরে গেছে চারিদিকে। রোদ মুখের উপর পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে হাত দিয়ে রোদ আটকানোর চেষ্টা করে আরসাল। আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে সে বারান্দায় ডিভানের উপর সোয়া। কাল রাতে ডিভানের উপর সুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায় নি আরসাল। আরসাল ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
এইদিকে,
সেহের আজ ঘুমিয়ে আছে। কারন আজ শুক্রবার ভার্সিটি বন্ধ। কিন্তু এই শান্তির ঘুম বেশিক্ষণ টিকলো নাহ তার। আহিয়া চৌধুরী এসে চেচিয়ে বলতে শুরু করে,
–” সেহের, সেহের ওঠ৷ কত বেলা হয়ে গেছে দেখ। এতো বেলা করে কেউ ঘুমায়।”
–” আহ, আম্মু আজ শুক্রবার। ভার্সিটি বন্ধ তোহ।”
–” ভার্সিটি বন্ধ জন্য এতো বেলা করে ঘুমাতে হবে। আজ সবাই বাসায় আছে। সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করবে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়।”
সেহের আর ঘুমাতে পারলো নাহ। কি আর করার ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে সেহের। এসে দেখে ডাইনিং টেবিলে সবাই আছে শুধু আরসাল ছাড়া। সেহের সবার সামনে গিয়ে বলতে শুরু করে,
–” একি, সবাই কে দেখছি। কিন্তু আরসাল ভাইয়াকে দেখছি নাহ কেনো।
সেহেরের কথা শুনে মায়া চৌধুরী সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল আসে নি। গিয়েছিলাম ডাকতে, কিন্তু আসলো নাহ। বললো খাবার পাঠিয়ে দিতে।”
–” কেনো, আজ ছুটির দিন, সবাই একসাথে খাবার খাবে। ওনি কেনো আলাদা খাবে। আচ্ছা তোমরা বসো আমি আসছি।”
সেহের আরসালের রুমের দিকে চলে যায়।
আরসালের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে সেহের। সবার সামনে সাহস করে বললেও এখন সেহেরের ভয় করছে। আরসালকে তোহ সেহের মারাত্মক ভয় পায়৷ তাও কেনো যে এমন সাহস করে চলে এলো বুঝতে পারছে নাহ সেহের। মনে সাহস জুগিয়ে আরসালের রুমে ঢুকে পড়ে সেহের। রুমে আসতেই দেখে আরসাল বারান্দা থেকে ভেতরে আসছে। আরসাল কে দেখে সেহেরের ভয়ে গলা শুকিয়ে যায় তাও নিজেকে শক্ত রাখে। আরসাল সেহেরকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ব্রেকফাস্ট করবা নাহ। নিচে সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে।”
–” আমি এখানে ব্রেকফাস্ট করবো।”
–” এখানে কেনো করবা নিচে চলো। সবাই মিলে একসাথে,”
কথা শেষ করতে পারে নাহ সেহের তার আগেই আরসাল সেহেরকে দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে চেপে ধরে। সেহের ভয়ে চোখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেলে। আরসাল সেহেরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলতে শুরু করে,
–” একদম আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করবি নাহ। আমি কি করবো নাহ করবো সেইটা আমার পারসোনাল ম্যাটার। আমার লাইফে কোনো প্রকার কথা বলার চেষ্টা করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আর যত পারবি আমার চোখের সামনে কম আসবি৷ মাইন্ড ইট।”
আরসাল কথা গুলো বলে সেহের কে ধাক্কা দিয়ে সরে আসে। সেহের এতো সময় ভয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। এখন আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে আরসাল অন্যদিকে ফিরে আছে। সেহেরের চোখে পানিতে ভরে যায়। আরসাল হাতের যেখানে চেপে ধরেছিলো, সেখানে জ্বালা করছে। সেই সাথে আরসালের বলা কথাগুলো যেনো আরও বেশি জ্বালা দিচ্ছে। সেহের বলে ওঠে,
–” কি করেছি আমি, যে আমার ওপর রাগছো। আমাকে তোহ কখনো তুমি এইটাও বলো নি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। তুমি তোহ,’
–” ভালোবাসি নাহ, ভালোবাসতাম। এখন শুধু ঘৃনা করি তোরে। I hate you. শুনেছিস কি বললাম তোরে। আমি ঘৃনা করি তোরে।”
–” ভালোবাসা এতো তাড়াতাড়ি কি শেষ হয়ে যায়। ঠিক আছে তাও মেনে নিলাম, এখন আর ভালোবাসাে নাহ, ঘৃনা করো আমাকে। তাহলে গতকাল রাতে চকলেট কেনো এনেছিলে? তুমি তোহ চকলেট খাও নাহ। তাহলে কেনো এনেছিলে?”
–” সাথীর জন্য এনেছিলাম।”
–” তাহলে আমাকে কেনো দিলে।”
–” তুই চেয়েছিলি তাই দিয়েছিলাম।”
–” আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার সব কথা মেনে নিলাম। আচ্ছা তুমি তোহ আমাকে ঘৃনা করো। তাহলে বড় আম্মু আব্বু কে কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছো। তুমি জানো তারা এতোদিন কত কষ্ট পেয়েছে। আর এখনও কষ্ট পেয়েই যাচ্ছে। বাড়ির প্রতিটি মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। নিজের খুশির জন্য নাহ হোক, অন্যদের খুশির জন্য তোহ একসাথে খেতেই পারো৷ বললাম, ইচ্ছে হলে এসো, অপেক্ষায় আছি সবাই।”
কথাগুলো বলে সেহের রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে আসে। সবাই সেহেরের দিকে আগ্রোহী চোখে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সেহের সবাইকে কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারে নাহ। সেহের কিছু বলতে যাবে, তার আগে সাথী আনন্দের সাথে বলে উঠে,
–” ঐতোহ আরসাল ভাইয়া এসেছে।”
সেহের চমকে পিছে তাকিয়ে দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেহেরের চোখ বেয়ে পানি পড়ে। সেহেরের চোখে পানি দেখে আরসালের বুকের ভেতর কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠে। শুধু পারছে নাহ এগিয়ে এসে সেহেরের চোখের পানি মুছিয়ে দিতে। সেহের নিজেই চোখের পানি মুছে উল্টো দিকে ফিরে যায়। মায়া চৌধুরী আরসালের সামনে এসে দাড়ায়, আরসালও মায়ের দিকে তাকায়। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আই বাবা, চল খেয়ে নিবি।”
মায়া চৌধুরী আরসালের হাত ধরে টেবিলে বসিয়ে দেয়। সেহেরও বসে পড়ে। সবাই খুশি মনে খাওয়া শুরু করে। আরসালের খেতে খুবই অস্বস্তি হচ্ছে, কিন্তু প্রকাশ করছে নাহ।
★★★
,,,,,,,,তোর মন খারাপের দেশে,,,,,,,
,,,,,যাবো প্রেমের খেয়াই ভেসে,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,তোর মনটাহ ভালো করে,,,,,,
,,,,,দেবো অনেক ভালোবেসে,,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,ডাকলে কাছে আসিস,,,,,,,,,
,,,,,,,পারলে একটু হাসিস,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,বুকটা রাখিস পেতে,
ভালোবাসা নিতে,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,সব অভিমান,,,,,,,,,
,,,,,,ভেঙে দেবো,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,তোর কাছে এসে,,,,,,,,
,,,,,,,,তোর মন খারাপের দেশে,,,,,,,
,,,,,যাবো প্রেমের খেয়াই ভেসে,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,তোর মনটাহ ভালো করে,,,,,,
,,,,,দেবো অনেক ভালোবেসে,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এতোক্ষণ গিটার বাজিয়ে গান করছিলো আরসাল। আর আরসাল এইটাও জানে যে দরজার ওপাশে দাড়িয়ে সেহের তার গান শুনেছিল এতক্ষণ। গান শেষ হতেই চলে গেছে সেহের। আরসাল সেইভাবেই গিটার হাতে বসে আছে।
এইদিকে,
সেহের রুমে এসে জানালার কাছে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো।আর সকালে আরসালের বলা কথাগুলে মনে করতে থাকে। সেহের মনে মনে বলতে থাকে,
–” আরসাল ভাইয়া আমাকে কেনো দোষারোপ করছে। এতে আমার দোষ টাহ কোথায়। আমি তোহ জানতামও নাহ আরসাল ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। আমাকে তোহ হঠাৎ করেই নানুর বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাহলে আমার দোষটাহ কোথায়। আমাকে কেনো এতো ঘৃনা করছে আরসাল ভাইয়া। বেশ, ভাইয়া যদি আমাকে ঘৃনা করে খুশি হয়, তাহলে তাই হবে।”
সেহের এইসব ভাবছে তখনই আশা সেহেরের রুমে আসে। এসে দেখে সেহের জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আশা সেহেরের পিছনে যেয়ে দাড়ায় আর বলে ওঠে,
–” কিরে, একা একা জানালার কাছে দাড়িয়ে কি করিস?”
কারো কথা বলার আওয়াজে সেহের পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে আশা দাড়িয়ে আছে। আশাকে দেখে সেহের মুচকি হেসে এগিয়ে এসে বলে,
–” কিছু নাহ।”
–” আচ্ছা, শোন রেডি হয়ে নে।”
–” কেনো?”
–” আরসাল ভাইয়া এতোদিন পর বাসায় এসেছে। তাই একটা পার্টি রাখা হয়েছে।”
–” ওহ, আরসাল ভাইয়া কোনো সমস্যা করে নি তোহ আবার।”
–” তাকে তোহ এখনো জানানোই হয় নি। বড় আম্মু, আমার আম্মু আর ছোট আম্মু যাচ্ছে তাকে বলার জন্য।”
–” ওহ, মেনে নিলে হয়।”
এইদিকে,
আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছে। আরসাল আমান কে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে আমানের। তাই আরসালের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে সেইদিকে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী ( আশফির আম্মু ), আহিয়া চৌধুরী দাড়িয়ে আছেন। ৩ জনকে একসাথে এই সময় নিজের রুমে দেখে অবাক হয়ে যায়। দাড়িয়ে যায় আরসাল তিনজনের দিকে তাকিয়ে। মায়া চৌধুরী আরসালের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছিস বাবা?”
–” সেরকম কিছু নাহ। অফিসের কিছু কাজ করছিলাম।”
তারপর আহিয়া চৌধুরী আরসালের সামনে দাড়িয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে,
–” অনেক কাজ হয়েছে। এইবার তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
–” রেডি হবো কিন্তু কেনো?”
আরসাল অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে। আরসালের কথা শুনে কেয়া চৌধুরী বলেন,
–” কারন, তুই এতোদিন পর বাংলাদেশে এসেছিস। আমাদের কাছে এসেছিস। তাই আমরা একটা পার্টি রেখেছি।”
–” মানে কি? তোমার আমার জন্য পার্টি রেখেছো কিন্তু আমাকেই বলো নি।”
আরসাল রাগী গলায় বলে ওঠে। আরসালের কথা শুনে মায়া চৌধুরী বলেন,
–” দেখ বাবা, জানি তোকে বলা উচিত ছিলো। কিন্তু বলা হয় নি। আসলে তুই এতোদিন পর এসেছিস, তোর বাবা তোর অনারেই পার্টিটাহ রেখেছে। অনেকে আসবে পার্টিতে, তুই নাহ গেলে যে বাড়ির অসম্মান হবে।”
–” যখন জানোই যে, আমি নাহ গেলে বাড়ির অসম্মান হবে। তাহলে আমাকে নাহ বলে পার্টি রেখেছো কেনো?”
–” হয়ে গেছে তোহ রাখা। এখন নাহ গেলে তোহ বাড়ির অসম্মান হবে। এখন তুই কি এইটায় চাস, যে বাড়ির নাম খারাপ হোক।”
–” তোমরা আমাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছো। এই কারনেই আমাকে আগে জানাওনি তাই নাহ। যাতে আমাকে পরে এই চাপ টাহ দিতে পারো।”
আরসালের কথা শুনে আহিয়া চৌধুরী বলে উঠেন,
–” দেখ, যা হওয়ার হয়ে গেছে। তোকে বলার দরকার ছিলো তাই বললাম। এখন তোর যদি মনে হয় বাড়ির অসম্মান হোক তাহলে আসিস নাহ। আর যদি চাস যে বাড়ির অসম্মান নাহ হোক তাহলে আসিস।”
আহিয়া চৌধুরী কথাটা বলে মায়া চৌধুরী এবং কেয়া চৌধুরী কে নিয়ে আরসালের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আরসাল তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর কি করবে তাই ভাবছে।
In evening…
পার্টির লোকজন আসতে শুরু করেছে। বাড়ির সবাই নিচে চিন্তিত মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সেহের এই মাত্র নিজের রুম থেকে ড্রয়িংরুমে আসলো। পার্টি টাহ ড্রইংরুমে রাখা হয়েছে। চারিপাশে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সেহের এসেই মায়া চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আম্মু, আরসাল ভাইয়া তোহ এখনো আসে নি। ভাইয়া কি আসবে নাহ?”
–” জানি নারে মা। বুঝিয়ে তোহ এলাম। ইমোশনালি কথাও বলে এলাম। ছেলেটা তাও যদি যেদ করে নাহ আসে। তো বাড়ির মানসম্মানে আঘাত লাগবে।”
মায়া চৌধুরীর কথা শুনে সেহেরের মন খারাপ হয়ে যায়। সেহের চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে,
–” আল্লাহ, আরসাল ভাইয়া যেনো পার্টিতে আসে। নাহলে যে বাড়ির অসম্মান হবে। আল্লাহ দয়া করো, আরসাল ভাইয়ার মনে পার্টিতে আসার ইচ্ছে জাগিয়ে দেও। দয়া করো, আরসাল ভাইয়া পার্টিতে যেনো আসে। নাহলে বড় আম্মু আব্বু, বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কষ্ট পাবে। প্লিজ আল্লাহ, দয়া করো।”
সেহের মনে মনে কথাগুলো বলে আস্তে আস্তে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখে কেউ একজন আসছে। ব্রাউন কালারের শার্ট এবং শার্টের উপরের ২টা বাটন খোলা, হোয়াইট ব্লেজার, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ, বাম কানে একটি ব্লাক টপ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি এন্ড কপালে কয়েকটা পড়েই আছে। হ্যা, এতোক্ষণে সবাই বুঝেই গেছো সেই কেউ টাহ হলো আরসাল। আরসাল কে দেখে সেহের আবার ক্রাশ খেলো। আরসাল নিচে নেমেই সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে ওর আম্মুর সামনে অর্থাৎ মায়া চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাড়ায়। মায়া চৌধুরী মুচকি হেসে আরসাল কে জড়িয়ে ধরে। আরসালও আজ আর কোনো বাধা নাহ রেখে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে।
সবাই আরসাল কে ঘিরে ধরেছে। হঠাৎ কেউ একজন ‘আরসাল’ বলে ডেকে উঠে। সবাই আওয়াজের দিকে তাকিয়ে দেখে আমান এবং সাথে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আমানের সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখে আশার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমান এবং সেই অচেনা মেয়েটির দিকে।
পার্টি চলছে তার নিজের মতো করে। এখনো অনেক মানুষই পার্টিতে উপস্থিত হতে পারে নি। তারা সবাই আসছে। সবাই সবার মতো মজা করছে। মজা করতে পারছে নাহ শুধু সেহের। আরসালের সাথে ঐ মেয়েটা একদম চিপকে রয়েছে। আরসালও মেয়েটার সাথে অনেক হাসি মুখে কথা বলছে। যাহ, কেনো জানি সেহেরের সহ্য হচ্ছে নাহ। তারউপর আবার একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা। যা সেহেরের মনে পড়লেই মেজাজ টাহ আরও গরম হয়ে যাচ্ছে।
একটু আগে,
আমান আর অচেনা মেয়েটির দিকে আরসাল এগিয়ে আসতেই মেয়েটি দৌড়ে এসে আরসাল কে জড়িয়ে ধরে। যাহ দেখে সেহেরের মেজাজ টাহ একদম টপে উঠে যায়। কত বড় খারাপ মেয়ে, এতোগুলো মানুষের সামনে অন্য একটা ছেলেকে কিভাবে জড়িয়ে ধরেছে। চৌধুরী বাড়ির সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরসাল এবং তাকে জড়িয়ে ধরা মেয়েটির দিকে। আরসাল মেয়েটিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে, মৃদু হেসে বলে ওঠে,
–” নেহা, তুমি?”
–” হুম, আমি। তুমি তোহ বাংলাদেশে এসে আমাকে ভুলেই গেছো। একটা নিউজ পর্যন্ত আমার নেও নি।”
–” আসলে, সেরকম নাহ। আমি তোহ এখানে কাজে এসেছি। তাই কাজ নিয়ে একটু বিজি ছিলাম। যাইহোক তুমি এখানে।”
–” আসলে, ফ্যামিলি সহ লন্ডন চলে যাওয়ার পর তোহ আর দেশে আসা হয় নি। তাছাড়া এখানে আসার পর তোমার কোনো নিউজ পাচ্ছিলাম নাহ। কোনোভাবে কনটাক্টও হচ্ছিল নাহ। তাই দেশে আসবো বলে ঠিক করলাম। তাই আমানকে বললাম আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে। ”
–” হুম, আচ্ছা এসো আমার ফ্যামিলি মেমবার দের সাথে ইন্ট্রোডাক করিয়ে দেয়।”
–” হুম, চলো।”
আরসাল নেহাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো শুধু সেহেরকে বাদ দিয়ে। নেহা সেহের কে খেয়াল করে আরসাল কে বলে ওঠে,
–” আরসাল এই মেয়েটা কে?”
আরসাল তাকিয়ে দেখে নেহা সেহেরের কথা বলছে। আরসাল একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে, আবার নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, আমার কাজিন। ছোট আব্বুর মেয়ে।”
–” ওহ, আচ্ছা। ”
তখনের থেকেই সেহেরের মাথা খারাপ হয়ে আছে। কেনো সে নিজেও জানে নাহ। কিন্তু আরসাল কে অন্য কোনো মেয়ের সাথে সেহের যেনো সহ্য করতে পারছে নাহ। তারউপর মেয়েটা আরসালের হাত জড়িয়ে রেখেছে।
জিহাদ চৌধুরী স্টেজে উঠে স্পিকার অন করতে সবাই সেইদিকে তাকায়, জিহাদ চৌধুরী স্পিকার ঠিক করে বলতে শুরু করে,
–” গুড ইভিনিং লেডিস এন্ড জেন্টেল ম্যান। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ এই পার্টির মেইন উদ্দেশ্য হলো আমার ছেলে আরসাল চৌধুরীর দেশে আসা।”
জিহাদ চৌধুরী আরসাল কে হাত দিয়ে ইশারা করে স্টেজে উঠে আসার জন্য। আরসালও সম্মানের কথা ভেবে স্টেজে বাবার পাশে এসে দাড়াতেই জিহাদ চৌধুরী আবার বলে ওঠে,
–” এই হলো আমার ছেলে আরসাল চৌধুরী। যে গত কয়েকবছর বিদেশে থেকে নিজের গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে আমাদের বিজনেস জয়েন্ট করেছে। যদিও আরসাল তার স্টাডি লাইফ থেকেই আমাদের বিজনেসের সাথে জড়িত আছে। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক প্রাউড ফিল করি। হি ইজ এ্যামেজিং। যাই হোক, সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন, যেনো ও আরও বড় হয়। এনজয় দি পার্টি।”
জিহাদ চৌধুরীর কথা শেষ হতেই সবাই হাতে তালি দিয়ে ওঠে। আরসাল জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকাতেই জিহাদ চৌধুরীও আরসালের দিকে তাকায়। আরসাল তাড়াতাড়ি নিজের চোখ সরিয়ে, স্টেজ থেকে নেমে আসে।
এইদিকে,
আমান ড্রিংকস সাইডে বসে হালকা ড্রিংকস করছে এবং ফোন চালাচ্ছে। হঠাৎ সামনে কেউ বসছে মনে হওয়ায় সামনে তাকিয়ে দেখে আশা। আমান কিছু বলার আগেই আশা বলে ওঠে,
–” কি খবর তোমার? ”
–” আমার আবার কি খবর থাকবে। আমি তোহ অলটাইম বিন্দাস থাকি।”
–” হুম, তাহ ড্রিংকস কি অলটাইম করা হয় নাকি?”
–” আরে নাহ, অল্প করি।”
–” তাহ, মেয়েটা কে তোমার গফ নাকি?”
–” কার কথা বলছিস, নেহা৷ আরে ধুর, গফ হতে যাবে কেনো। এমনি ফ্রেন্ড, আর তাছাড়া দেখে বুঝছিস নাহ কার গফ হতে পারে?”
আমানের কথা শুনে আশা নেহার দিকে তাকিয়ে দেখে, নেহা আরসালের সাথে কথা বলে হাসতে হাসতে আরসালের গায়ের উপর পড়ছে। তাই দেখে আমানের দিকে ফিরে বলে ওঠে,
–” ইউ মিন আরসাল ভাইয়ার গফ?”
–” জানি নাহ।”
–” জানি নাহ মানে কি হ্যা। তুমি সব জানো। কিন্তু আরসাল ভাইয়া তোহ সেহেরকে ভালোবাসে।”
–” তোর কি মনে হয়? আরসাল এখনো সেহেরকেই ভালোবাসে?”
–” মানে।”
–” মানে, তোর কি মনে হয়? আরসাল কি এখনো সেহেরকেই ভালোবাসে?”
–” আমার বিশ্বাস আরসাল ভাইয়া এখনো সেহেরকেই ভালোবাসে। কারন সত্যিকারের ভালোবাসা এতো ঠুনকো হয় নাহ। আর আমি আজও ভাইয়ার চোখে সেহেরে জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই। ভালোবাসা চোখে ধরা পড়ে। ভালোবাসার মানুষকে সারাজীবন কাছে নাহ পেলেও তার প্রতি ভালোবাসা কমেও যায় নাহ, আর ভোলাও যায় নাহ।”
–” এমন ভাবে ভালোবাসার বর্ননা দিচ্ছিস। মনে হচ্ছে কাউকে ভালোবাসিস?”
আমানের কথা শুনে আশা কিছু নাহ বলে মুচকি হাসি দেয়। আমান আবার নিজেই বলতে শুরু করে,
–” আরসাল আর আমি লন্ডনে যে ভার্সিটিতে স্টাডি করতাম, সেখানেই নেহার সাথে আমাদের পরিচয় হয়। আরসাল ওখানেও অনেক মেয়ের লক্ষ্য ছিলো। নেহাও ওরে পছন্দ করা শুরু করে। নিজেই আমাদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে। আস্তে আস্তে অনেক ভালো ফ্রেন্ড হয়ে যায় আমাদের। সেই সাথে আরসালকেও ভালোবেসে ফেলে। আরসালকে প্রপোজ করলে, আরসাল নাহ করে দেয়। কিন্তু নেহা বলে এতে যেনো বন্ধুত্বে আঘাত নাহ লাগে। তাই এখনো আমাদের অনেক ভালো ফ্রেন্ড।”
–” হুম, বুঝলাম।”
–” হুম, তাহ বললি নাহ তোহ। কাউকে ভালোবাসিস নাকি?”
–” ভালোবাসলেও বা তোমার কি?”
–” আমার আবার কি হবে? তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবো।”
আমানের কথা শুনে আশার রাগ উঠে যায়। আর রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” খুব শখ নাহ আমাকে বিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার। করবো নাহ বিয়ে।”
কথাটাহ বলেই রাগে গট গট করতে করতে চলে যায় আশা। আর আমান হাসতে হাসতে শেষ।
এইদিকে,
সেহের এখনো রাগেতে ফুলে বম হয়ে আছে। সাদে গিয়ে পায়চারি করছে আর নিজে নিজে বলছে,
–” অসভ্য ছেলে একটা, বাজে ছেলে একটা, কিভাবে মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। কই আমার সাথে তোহ বলে নাহ। আর ঐ নেহা নেকু একটা, লাজ লজ্জা বলতে তোহ দেখি কিছুই নাই। একটা ছেলেকে কিভাবে সবার সামনে জড়িয়ে ধরলো। আর এখনো কিভাবে চিপকে রয়েছে। অসহ্য।”
হঠাৎ কারো আসার আওয়াজ পেয়ে সেহের একপাশে লুকিয়ে পড়ে। লোকটা উপরে এলে তাকিয়ে দেখে আরসাল ফোনে কথা বলতেছে। নিচে হয়তো আওয়াজে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিলো তাই উপরে এসেছে কথা বলতে। আরসাল সাদের রেলিং এর কাছে দাড়িয়ে কথা বলছে। সেহের কি মনে করে, আরসালের পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। আরসাল কথা বলা শেষ করে পিছনে ফিরে সেহেরকে দেখতেই চমকে ওঠে। আরসাল ভালোভাবে খেয়াল করে দেখে সেহের রেগে লাল হয়ে আছে। অনেক কিউট দেখাচ্ছে সেহেরকে। মেয়েটাকে রাগলে সবসময় এমন কিউট দেখায়। কিন্তু সেহের এখন এই সাদে কি করে। আরসাল বুঝতে নাহ পেরে বলে ওঠে,
–” তুই এখানে?”
–” কেনো অন্যকারো থাকার কথা ছিলো নাকি?”
–” মানে।”
–” মানে এখানে তোমার ঐ বিদেশি গফ নেহার থাকার কথা ছিলো নাকি?”
–” গফ মানে?”
–” গফ নাহ তোহ কি? দেখতেই তোহ পাচ্ছি কি করছো? এতো কি ঐ মেয়ের সাথে?”
–” তাতে তোর কি?”
আরসালের বুকে ধাক্কা দিতে দিতে সেহের বলে ওঠে,
–” আমার কি মানে, এতো চিপকে থাকার কি দরকার? কি হয় ঐ মেয়ে তোমার? ওর সাথে এতো কি তোমার?”
সেহের আরসাল কে ধাক্কাতে বলছে কথাগুলো। আরসালের রাগ উঠে যাওয়াতে সেহের কোমোরে হাত দিয়ে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সেহের ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর এক হাত দিয়ে আরসালের কলার ধরে। আরসাল সেহেরের মুখের সামনে মুখ এনে বলতে শুরু করে,
–” নেহা আমার গফ নাকি অন্যকিছু তাতে তোর কি? তোকে বলেছি নাহ আমার পারসোনাল ম্যাটারে কোনো কথা বলবি নাহ। নেহার সাথে আমি কিভাবে মিশবো কি করবো এইটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার।”
সেহের আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলে দেখে আরসালের মুখ একদম কাছে। আরসালের নিঃশ্বাস সেহেরের মুখে আছড়ে পড়ছে। আরসালকে এতো কাছে দেখে সেহেরের পুরো শরীর কাপতে শুরু করে। আরসালের কথা শুনে সেহেরের চোখ পানিতে ভরে যায়। সেহেরের চোখে পানি দেখে আরসালের বুক কেমন যেনো করে উঠে। আরসাল সেহেরের চোখের পানি এখনো সহ্য করতে পারে নাহ। আরসাল সেহেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিচে নেমে যায়। সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছু সময় পর সেহেরও নিচে নেমে আসে। আরসাল সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। হঠাৎ আমান স্টেজে উঠে বলতে শুরু করে,
–” হ্যালো এভ্রিওয়ান। আমি আমান, আরসালের বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার কথা আর নাহ বলি। আজ এই সন্ধ্যা যার জন্য, সেই আরসাল কে এখন একটা গান শোনানোর জন্য রিকোয়েস্ট করা হচ্ছে। ”
আমানের কথা শুনে সবাই জোরে হাত তালি দিয়ে ওঠে। আমান স্টেজ থেকে নেমে আরসালের কাছে আসতেই, আরসাল বলে ওঠে,
–” আর ইউ ম্যাড? আমি এখন গান গাইবো?”
–” ইয়াপ, দেখ দোস্ত আশেপাশে কত কিউট কিউট মেয়ে আছে। সবাইকে পাগল বানাতে হবে তোহ।”
–” ওহ, শাট আপ। আরসাল কে দেখলেই মেয়েরা এমনিই পাগল হয়। তার জন্য আলাদা ভাবে গান গেয়ে এন্টারটেইন করার কোনো দরকার নাই।”
–” দেখ, আমি অলরেডি এ্যানাউন্সমেন্ট করে দিছি৷ এখন যদি তুই গান নাহ গাস তাহলে আমার ইজ্জতের চিনি ছাড়া ফালুদা হয়ে যাবে।”
–” আমি বলেছিলাম তোরে এ্যানাউন্সমেন্ট করতে?”
–” আচ্ছা, বন্ধুর জন্য একটা গান গেয়ে দে নাহ। এমোন করিস কেনো?”
–” ইডিয়ট।”
আরসাল কথাটা বলেই স্টেজের দিকে চলে যায়। আমান একটা জোরে নিশ্বাস ফেলে সবার দিকে তাকিয়ে একটা দাঁত বের করে হাসি দেয়।
চলবে…………..🌹