#তি_আমো❤
#পর্ব_১৮
Writer: Sidratul muntaz
🍂
আরিশা বলল,” চকলেট না পেলে আমি হেল্প করতে পারবো না। বা বায়!”
সামনের দিকে ঘুরে হাটতে লাগল আরিশা।আমি পুনরায় ডাকলাম,
“আরিশা! বেবি আমি তোমাকে চকলেট দিবো তো। প্রমিস। কিন্তু চকলেট টা খুব বড়। জানালা দিয়ে দেওয়া যাবে না। তুমি দরজাটা খুলো, তারপর আমি দিচ্ছি।”
আরিশা কিছু একটা ভেবে বলল,” এতোবড় চকলেট? সত্যি দিবে তো?”( আমার দিকে আঙুল তাক করে)
“হ্যা সত্যি দিবো।”
“ঠিকাছে আমি দরজা খুলছি।”
আরিশা দৌড়ে দরজার দিকে গেল। আমিও দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। দরজা খোলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আমি কান পেতে রইলাম। কয়েক মিনিট পর আরিশা বলল,
“তারি আপু! আমি খুলতে পারছি না।খুব শক্ত।”
“পারবে আপু। একটু চেষ্টা করো!”
আরো কয়েক মিনিট মোচড়ামোচড়ির পর অবশেষে খুলে গেল দরজা। আমি হালকা নিচু হয়ে আরিশা কপালে চুমু দিলাম। বললাম,
“থ্যাঙ্কিউ বেবি।”
“এবার আমার চকলেট দাও।”
“চকলেট? ওইটা আসলে ঈশানের কাছে আছে। তুমি ওর থেকে নিয়ে নিও কেমন?”
বলেই ডানদিকে ছুট লাগালাম আমি। আরিশা পেছন থেকে কিছু একটা বলছিল, আমি শুনলাম না। বাহিরে আসতেই দেখলাম স্টেজের দিকে গান বাজনা হচ্ছে। নিহা আর সাফিন ভাইয়ার একত্রে স্টেজে বসে আছে। সামনেই চলছে নাচ। আমারও ইচ্ছে করল নাচতে।” লায়লা ম্যায় লায়লা” গানের সাথে উরাধুরা ড্যান্স। ভাবতেই মজা লাগছে। আমি হুট করেই উঠে পড়লাম স্টেজে। আমাকে দেখে বাকিরা নাচ থামিয়ে দিল। ক্যামেরাম্যান ইশারা করল নেমে যেতে। কিন্তু আমি নামবো কেনো? নামার প্রশ্নই আসেনা। গান যেহেতু বাজছেই, আমি নাচ শুরু করলাম। যদিও নাচের অভিজ্ঞতা আমার অত্যন্ত বিপদজনক। তবুও মনের শান্তি বড় শান্তি। সবাই তব্দা লেগে আমার নাচ দেখছে। আমি আমার নাচের সঙ্গীদেরকে ধাক্কাচ্ছি। কারো হাত ধরে ঘুরান্টি মারছি। একজন তো আমার কোমরের ধাক্কায় স্টেজ থেকেই পড়ে গেল। কিন্তু আমি ইচ্ছে করে ফেলিনি। নিহা আসন থেকে উঠে এসে আমার হাত টেনে ধরল। আমি থেমে দাড়ালাম। মাথা ঘুরছে আমার। সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম, সব ছেলেরা হা করে তাকিয়ে আছে। আমার কিছুটা সংকোচ হল। পেছন থেকে একজন ছেলে জোরে শিষ বাজালো। বাজে শব্দ করে হাত তালিও দিচ্ছে কেউ কেউ। অকস্মাৎ আমার হাত ধরে কেউ হেচকা টান দিল। ক্ষণিক সময়ের ব্যবধানেই আমাকে জনসম্মুখ থেকে শান্ত পরিবেশে নিয়ে আসা হল। সামনের মানুষটি ছিল তারিফ ভাইয়া।আমাদের পেছন পেছন মা, বুড়ি, এমনি নিহা পর্যন্ত ছুটে আসলো। আচমকাই আমার গালে চড় বসিয়ে দিল ভাইয়া। আমি ঠাস করে নিচে পড়ে গেলাম। গালে হাত দিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম ভাইয়ার রক্তবর্ণ দৃষ্টি। ভাইয়ার এক হাত কাপছে। আমি গালে হাত রেখে কেদে দিলাম। পেছনে মা শাড়ির আচলে মুখ চেপে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন। মিউজিক থেমে গেছে অনেকক্ষণ আগেই। পিন পতন নিরবতায় ছেয়ে গেল বিয়ে বাড়ির পরিবেশ। এই নিরবতাকে ছিন্ন করে ভাইয়া বিকট শব্দে উচ্চারণ করলেন,
“ছিঃ! আমার বোন হয়ে তুই নেশা করেছিস? বাজে মেয়েদের মতো জন সমাগমে শরীর প্রদর্শন করে নেচে বেড়াচ্ছিস? আজ থেকে তুই আমার বোন না। তোকে পরিত্যাগ করলাম আমি।”
ক্ষিপ্তবৎ হয়ে চলে গেলেন ভাইয়া। আর আমি মুখ ভেঙে কাদতে বসলাম। মা আর বুড়ি আমাকে কিছু বলল না। বুড়ি মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পরল। মা শুধু নিহার দিকে তাকিয়ে বললেন আমাকে যেন ঘরে বন্দী করে রাখা হয়। বাইরে বের হতে দেওয়া না হয়। বাহিরে থেকে অনেকেই উঁকিঝুঁকি মেরে ভেতরটায় দেখছে। মা আর বুড়ি বেরিয়ে পড়তেই নিহা দরজা বন্ধ করে দিল। আর আমি শুরু করলাম এলোপাথারি ভাবে বমি করা। পুরো ঘর ভাসিয়ে ফেলেছি বমি করে।
.
.
পুরো রুম চমৎকারভাবে ফুল দিয়ে সাজানো। বিশেষ করে বিছানাটা। সাদা চাদরের উপর লাল গোলাপের ছড়াছড়ি। অত্যুত্তম সুন্দর লাগছে সবকিছু। নিজের দিকে মনোযোগ দিতেই আমি আবিষ্কার করলাম আমার পরনে খুব আপত্তিকর একটা জামা। জামাটা হাটু পর্যন্ত ছোট। চিকন সুতার মতো হাতা। আমি ঘাবড়ে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে নিহা বেরিয়ে আসল। নিহাও আমার অনুরূপ একটা জামা পড়ে আছে। তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে নিহা বলল,
“দেখ দেখ। দেখে নে। আমার মতো জিগড়ি দোস্ত আর কয়টা পাবি বল? নিজের বাশর রাত মাটি করে তোর সেবা যত্ন করছি। এমন ঘটনা ইতিহাসে এর আগে কোনোদিন ঘটেছে?”
আমি হাত উচু করলে ঠোট উল্টে বললাম,
“তুই কি ভালো রে নিহু! আয় তোকে একটা চুমু দেই।”
নিহা তোয়ালে টা ঢিল মেরে বিছানায় ফেলল। কোমরে এক হাত রেখে রাগান্বিত হয়ে বলল,
“এখনো নেশা কাটেনি তোর?”
আমি হাহা হিহি করে হাসলাম। বিছানার উপর উঠে লাফাতে শুরু করলাম। নিহা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে এলো। বলল,
“তারু একদম পাগলামি না। অনেক জ্বালিয়েছিস। এবার একটু শান্তি দে প্লিজ।”
আমি লাফাতে লাফাতে হঠাৎ থেমে গেলাম। হালকা নিচু হয়ে নিহার মুখের কাছে ঝুকে ফিসফিস করে বললাম,
“ঈশান কোথায় রে? এখনো কি সামিরার সাথে আছে?”
“না। ঈশান ভাইয়া ঘুমাচ্ছে। এখন তুইও ঘুমা।”
নিহা আমার হাত ধরতে এগিয়ে আসল। কিন্তু আমি ধরা দিলাম না। এক দৌড়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দরজা খুলে ফেললাম। নিহা অতিষ্ঠ হয়ে বলল,
“তারু একদম বের হবি না কিন্তু। খবরদার বলে দিচ্ছি। আর কোনো তামাশা না প্লিজ।”
আমি নিহার কথার তোয়াক্কা করলাম না। সহসা সবেগে দৌড়াতে দৌড়াতে ড্রয়িং রুমে চলে আসলাম। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে ছিল সুমনা আন্টি মানে নিহার মা, মোহনা আন্টি আর নাশফী আপু। আরেকজন ছিল। উনি আরিশার মা। উনারা আলাপ করছিলেন। আরিশার ব্যাপারে। আরিশা নাকি খুব কাদছে। তাই ঈশান ওকে কোলে করে ছাদে ঘুরাতে নিয়ে গেছে। কথাটা শুনে আমার রাগ উঠল। ঈশান আরিশাকে ছাদে নিয়ে যাবে কেনো? আর কোলে করেই বা কেনো নিয়ে যাবে? ওই মেয়ে কি হাটতে পারে না। বেশ তো ডেং ডেং করে হাটতে পারে। আমি উনাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। কোমরে দুইহাত গুজে আরিশার মাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
“আপনি ঈশানের সাথে আরিশাকে ছাড়লেন কেনো? আপনি কি জানেন আপনার ইঁচড়েপাকা মেয়ে আমার ঈশানকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে?”
সবাই অবাকচোখে আমার দিকে তাকাল। যেন কোনো ভুত দেখছে। মোহনা আন্টি কপালে ভাজ নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবে তাকাল। আমি সবার প্রশ্নবোধক দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ধাম করে সোফায় বসে পড়লাম। নাশফী আপুর পাশে। নাশফী আপুকে দেখে কালরাতের ঘটনা মনে পড়ে গেল। সাফনান ভাইয়ার সাথে বাগানের পিছন দিকটায় নিরিবিলি জায়গা বুঝে ইটিশ পিটিশ করছিল। আমি ভ্রু নাচিয়ে মুচকি হেসে নাশফী আপুকে দেখতে লাগলাম। আমার উদ্ভট চাহনি দেখে নাশফী আপু কিছুটা সরে বসল। আমিও কিছু কম যাইনা। আরো এগিয়ে গেলাম নাশফী আপুর কাছে। গা ঘেঁষে বসলাম। শয়তানি হাসি দিয়ে হালকা খোচা মেরে বললাম,
“হুম হুম!! কি!!”
নাশফী আপু বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি?”
আমি আগের মতোই মুখে হাসি রেখে বললাম,
“কি করছিলে কালরাতে? সাফনান ভাইয়ার সাথে? বাগানের পেছন দিকে? একদম খুল্লামখুল্লা!! ভেবেছো কেউ কিছু দেখবে না? আমি তো সব দেখে ফেলেছি।”
নাশফী আপু হা করে তাকিয়ে আছে। নিহা হাপাতে হাপাতে আমার সামনে এসে দাড়ালো। সুমনা আন্টি নিহাকে বলল,
“এই নিহা। এই মেয়ে কি বলে এসব? খুল্লাম খুল্লা মানে?”
নিহা বলল, “আরে মা! ওর হুশ আছে নাকি? ও কি করছে কি বলছে নিজেও তো জানেনা। বাদ দাও তো ওর কথা। এই তারু তুই চল আমার সাথে।”
আমি নিহা কে জিভ দেখিয়ে সোফার উপর উঠে দাড়ালাম। এক লাফে সোফা থেকে নেমে খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড়াতে লাগলাম। নিহা নাকেমুখে “তারু থাম, তারু থাম” উচ্চারণ করে আমার পেছন ছুটতে শুরু করল। আমি থামলাম না।আমার নির্দিষ্ট গন্তব্য এখন ছাদ। পূর্ণবেগে ছাদে পৌছাতেই ঈশান আর আরিশা আমার দৃষ্টিগোচর হল। ঈশান হাটু গেড়ে আরিশার সামনে বসে আছে। আরিশার কপালে চুমু দিল ঈশান। আরিশা ঠোট উল্টে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
“আমার চকলেট?”
ঈশান পেছনের পকেট থেকে বড় চকলেটের প্যাকেট বের করে আরিশার হাতে দিলেন। আরিশার গাল টিপে ঈশান বললেন,
“হ্যাপি?”
আমার ইচ্ছে করছে ঈশানের মাথা বরাবর ঢিল ছুড়তে। কি আদর! আরিশার জন্য চকলেট আনে। কই আমার জন্য তো জীবনে আনল না? আমি কি পানির জলে ভেসে এসেছি? আরিশা চকলেট পেয়ে উৎফুল্লকর হাসি দিল। ঈশানের গালে চুমু দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“লভ ইউ ঈশান!”
আর আমি? নাকমুখ একসাথে ফুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। কিন্তু ভেতরে ঢুকেই দ্বিতীয়বারের মতো অভিঘানিত হলাম। সামিরা নামক প্যারাটা এখানেও উপস্থিত। আমি চোখ সরু করে কোমরে হাত গুজলাম। আরিশা আমায় দেখে বলল,
“তারি আপু তুমি এখানে?”
আরিশার কথায় ঈশান আমার দিকে তাকালেন। আমায় দেখেই যেন পিলে চমকে উঠল উনার। সামিরাও আমার দিকে ঘুরে তাকাল। আর তাকিয়েই চোখ বড় করে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করল। ঈশান এতোক্ষণে উঠে দাড়িয়ে গেছে। আরিশা আবার বলল,
“তুমি খুব পচা তারি আপু! তোমার জন্য ঈশান তখন আমাকে খুব বকেছে। তোমাকে দরজা খুলে হেল্প করেছি বলে ঈশান আমার সাথে রুড বিহেভ করেছে। আরেকটু হলেই আমাদের ব্রেকআপ হয়ে যেতো। আর তুমি তখন আমাকে সত্যিটা বলো নি কেনো? আমি যদি আগে জানতাম, তুমি দুষ্টমি করছিলে বলেই ঈশান তোমাকে আটকে রেখেছিল। তাহলে কক্ষনো দরজা খুলে দিতাম না। ঈশান ট্রাস্ট মি! তারি আপু আমাকে কিচ্ছু বলেনি।”
আমি আরিশার কথার উত্তর দিলাম না। ক্ষিপ্রবেগে ঈশানের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আরিশাকে এক টানে সরিয়ে ঈশানের কাছে এসে হাত উচু করলাম। বললাম,
“আমাকে উঠান। ”
ঈশান ভ্রু কুচকে বলল, মানে?
“বুঝেন নি?উপরে তুলুন আমাকে।”
ঈশান নির্বোধের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার কোমর ধরে উপরে তুললেন। আমি মুচকি হেসে ঈশানের দুই কাধে হাত রেখে সামিরার দিকে তাকালাম। এই মেয়েকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়াই এখন আমার মুল উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যে বিস্ময়ের সর্বাধিক পর্যায়ে পৌছে গেছে সামিরা। সামিরাকে আরো একটু জ্বালানোর উদ্দেশ্যে আমি ঈশানের পেছনের চুলগুলো খামচে ধরে অকস্মাৎ ঈশানের ঠোটে কিস করলাম। সামিরা মুখে হাত দিয়ে বিকট শব্দ উচ্চারণ করল।
🍂
চলবে
#তি_আমো❤
#পর্ব_১৯
Writer: Sidratul muntaz
🍂
ঈশান আমাকে সরিয়ে দিয়ে রোষপূর্ণ কণ্ঠে বিড়বিড় করে বললেন,
“তারিন এসব কি হচ্ছে? আরিশার সামনে…”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আরিশার দিকে তাকালাম। মেয়েটা দুই হাত মুখে ঠেসে দাড়িয়ে আছে৷ আমি পরোয়া করলাম না। ঈশানের গলার পেছনে হাত বেধে বললাম,
‘আমার খুব ঘুম আসছে। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবেন?”
ঈশান আমার হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন,
“তারিন তুমি এখান থেকে যাও। নিহার রুমে গিয়ে ঘুমাও।”
“না আমি যাবো না। আমি আপনার সাথে ঘুমাবো। আপনার বুকে মাথা রেখে। ”
আমি ঈশানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে সামিরার দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। সামিরার আহত দৃষ্টি আমার মনে পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে। ঈশান আমাকে টেনে তুললেন। চরম অস্বস্তি নিয়ে বললেন,
“তারিন যাও এখান থেকে। আরিশা সব দেখছে। কি ভাববে ও?”
“যা ইচ্ছা ভাবুক। আমার কি? আমি যাবো না। আপনার কাছে থাকবো। আই লভ ইউ!”
প্রত্যুত্তরে আলিঙ্গন করলাম ঈশানকে। ঈশান খানিক সংকুচিত হয়ে সরে পড়লেন। আরিশা আমার এক হাত টেনে ধরে বলল,
“তারি আপু! কেনো বিরক্ত করছো ঈশানকে?চলে যাও এখান থেকে। আমার ঈশানকে বিরক্ত করবে না।”
আমি এক ঝাড়িতে হাত ছাড়িয়ে নিলাম। ঈশানের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আরিশাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
“আমার ঈশান।”
ঈশান দাত কিড়মিড়িয়ে উচ্চারণ করলেন,
“তারিন!কি হচ্ছে? তুমি জানো ও নিচে গিয়ে সবাইকে সব বলে দিবে।”
“বলে দিক।”
আমি ঈশানের বুকে মুখ গুজলাম। আর আরিশা? ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করল। তাই দেখে আমার ইচ্ছে হল মেয়েটার গালে থাপ্পড় লাগাতে। সামিরা দ্রুত আরিশাকে কোলে তুলল। কান্না থামানোর চেষ্টায় ছাদের অপর প্রান্তে নিয়ে গেল। আমি মিনমিন করে বললাম,
“বেশ হয়েছে।”
ঈশান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে কোলে তুললেন।আমি তো বেজায় খুশি। চোখমুখ উজ্জল করে সামিরার দিকে তাকালাম। মেয়েটা এদিকে দেখছে না। একবার দেখুক।আরো বেশি করে জ্বলুক। কিন্তু সামিরা দেখল না। আমার মনখারাপ হল। ঈশান আমাকে কোলে নিয়েই ছাদ থেকে বের হলেন। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললেন,
“কি শুরু করেছো এসব? জানো কত ঝামেলা হচ্ছে বাসায়? তারিফ, আন্টি, দাদী তোমার উপর খুব রেগে আছে। কি হবে এবার?”
আমি মুখ গোমরা করে গালে হাত রাখলাম। আহত কণ্ঠে বললাম,
“জানেন। ভাইয়া আমাকে চড় মেরেছে। খুব জোরে।”
ঈশান বললেন, “এবার বুঝতে পেরেছো কেনো তখন আটকে রেখেছিলাম তোমাকে?তারিফ তো শুধু চড় মেরেছে। ওই জায়গায় আমি থাকলে গলা টিপেই মেরে ফেলতাম।”
“আপনি আমাকে গলা টিপে মারতেন?”
“হ্যা মারতাম। স্টেজে উঠেছিলে কেনো ওইভাবে?”
“আমার তো শুধু একটু নাচতে ইচ্ছে করছিল।”
“নাচার এতো শখ? আমার সামনে নাচো। জন সম্মুখে গিয়ে নাচতে হবে?”
“আপনার সামনে নেচে কি মজা? আপনি হাত তালি দিবেন? শিষ বাজাবেন?”
” ও আচ্ছা! হাত তালি দিলে, শিষ বাজালে সেগুলো শুনতে খুব ভালো লাগে?”
“ভালো তো লাগেই। বেশ মজা লাগে।”
“সব ব্লেন্ডার করে দিয়েছো তারিন।তোমার জন্য নিহা-সাফিনের আজকের রাতটা নষ্ট হয়ে গেল। কত মেমোরেবল একটা রাত।”
“সাফিন ভাইয়া আর নিহার থেকে আপনারই মনে হয় বেশি আফসোস হচ্ছে।”
“আফসোস তো হচ্ছেই। আরিশাকেও কাদিয়ে দিলে। এবার ও কাউকে কিছু না বললেই হলো।”
“বললে কি হবে?”
“কি আর হবে? যা হওয়ার তাই হবে।তোমার ভাইয়ের হাতে আমি খুনও হতে পারি।”
“ভাইয়া আপনাকে খুন করবে? আমি থাকতে? কক্ষনো না। আমি হতেই দিবো না”
ঈশান মুচকি হাসলেন। উনার হাসি দেখে আমার খুব খুশি লাগল। ইচ্ছে করল বলতে, ” একটা কিসি দেই?” কিন্তু বলা হলো না। আশেপাশের পরিবেশ দেখে হালকা চমকে উঠলাম। বললাম,
“এই আপনি আমাকে এটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? নিহার ঘরের দিকে যাচ্ছি কেনো আমরা?”
“তাহলে কোথায় যাবো?”
“আমি নিহার ঘরে একদম যাবো না। আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন। ”
“পাগলামি করো না তারিন। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ো।”
“না”
আমি ঈশানকে আকড়ে ধরলাম, “নামাবেন না আমাকে। আমি কিন্তু পালিয়ে যাবো।”
ঈশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে উচ্চারণ করলেন, “উফফ!যা ইচ্ছে করো।”
ঈশান আমাকে নামিয়ে দিলেন। আমার পা জমিন স্পর্শ করতেই আমি বিপরীত দিকে ছুট লাগালাম। ঈশান বিস্ফোরিত চোখে “তারিন, তারিন” বলে আমাকে প্রবল বেগে ধাওয়া করতে শুরু করলেন। আমি নিহাদের বাসার বড় করিডোর দিয়ে দৌড়াচ্ছি। চারদিকে ঠান্ডা বাতাস। গায়ে কাটা দিয়ে ওঠার মতো শীত লাগার কথা। কিন্তু আমার লাগছে না। অবাধ্য বাতাসের ধাক্কায় স্টোর রুমের ধুলিময় জানালা খুলে গেল। কিছুটা ধুলা আমার চোখেমুখে ঢুকল। আমি চোখ পিটপিট করে স্টোর রুমের ভেতরে নজর দিতেই অদ্ভুত কিছু দেখলাম। বেশ লম্বাচওড়া একটা শরীর সাদা চাদর মুড়িয়ে পড়ে আছে। স্টোর রুমে ছোট্ট চৌকির উপরে খুব আটসাট ভাবে গুটিশুটি মেরে। আমার ভয় হল। শীতে শরীর কাটা না দিলেও ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে হ্রৎস্পন্দন থেমে আসার উপক্রম হল। ঈশান আমার কাছে আসতেই আমি উনার কলার চেপে ধরলাম। বুকে মুখ গুজে কম্পিত শরীর নিয়ে উচ্চারণ করলাম,
“ভ ভুত!”
ঈশান বিস্মিত হয়ে বললেন, “কি? ভুত? কোথায় ভুত?”
আমি আঙুল ইশারা করলাম। ঈশান আমার দিকনির্দেশনা বরাবর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,
“ওইটা তো সাফিন মনে হচ্ছে।”
আমি মাথা তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম। অবিশ্বাসের সাথে উচ্চারণ করলাম, “সাফিন ভাইয়া?”
“হ্যা সাফিনই তো।”
“উনি স্টোর রুমে কেনো ঘুমাচ্ছেন? উনার না আজ বাশর রাত?”
ঈশান আড়চোখে আমার দিকে তাকাতেই দাত কেলিয়ে হাসলাম আমি। বললাম,
“তাই বলে স্টোর রুমে ঘুমাতে হবে? পুরো বাড়িতে আর কোনো রুম নেই? ”
“সেটা ওকেই জিজ্ঞেস করো। আমি কিভাবে জানবো?”
“আচ্ছা চলেন না, আমরা উনাকে নিহার ঘরে দিয়ে আসি। তারপর ওই চৌকিটায় আপনি আর আমি ঘুমিয়ে থাকি। খুব মজা হবে!”
“হোয়াট? তোমার ওইখানে ঘুমানোর শখ হলো কেনো?”
আমি মাথা চুলকে অসহায় মুখ করে বললাম “জানিনা। ”
ঈশান ভ্রু কুচকে বিরক্তিভরা মুখে তাকিয়ে থেকে আবার কোলে তুললেন আমাকে। বললেন,
“তারিন তুমি একদমই নরমাল সেন্সে নেই। চলো ঘুমাবে।”
“হ্যা ঘুমাবো।কিন্তু নিহা আর আমি ঘুমাবো না। নিহা আর সাফিন ঘুমাবে। ঈশান আর তারিন ঘুমাবে।”
ঈশান উত্তর দিলেন না। আক্ষেপী নিঃশ্বাস ছেড়ে হাটতে লাগলেন। আর আমি ভাবলেশহীন ভাবে আওরাতে লাগলাম, “নিহা-সাফিন! ঈশান-তারিন!”
ঈশান আমাকে বিছানায় ফেলে দরজা বন্ধ করলেন। আমার মাথার কাছে বসে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললেন,
“ঘুমাও।”
আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম,”ঘুমাবো। আগে একটা গান শোনান?”
“এতোরাতে গান শোনানো যাবেনা।সবাই ঘুমাচ্ছে। ডিস্টার্ব হবে।”
আমি ঈশানের কলার ধরে নিজের কাছে আনলাম, “ফিসফিস করে শোনান। আমি ছাড়া কেউ শুনবে না।”
ঈশান আমার হাত ছাড়িয়ে অস্বস্তি নিয়ে বললেন, “প্লিজ ঘুমাও না তারিন। বিরক্ত করো না।”
“কি? আমি আপনাকে বিরক্ত করছি?আমার সবকিছুই আপনার বিরক্ত লাগে না?আরিশা আর সামিরাকে খুব ভাল্লাগে?”
“আচ্ছা তুমি আরিশাকে নিয়েও জেলাস?”
”হ্যা।খুব জেলাস। শুনেন আপনি আর কখনো আরিশাকে কোলে নিবেন না।”
“কেনো?”
“নিবেন না মানে নিবেন না। আবার কেনো কি?সামিরার সাথেও কথা বলবেন না। চোখ তুলে তাকাবেন পর্যন্ত না। যদি কখনো দেখেছি সামিরার দিকে তাকাতে, তাহলে চোখ উপড়ে ফেলে দিবো কিন্তু বলে দিলাম।”
“ওকে। তাকাবো না।”
“শুধু সামিরা কেনো? কোনো মেয়ের দিকেই তাকাবেন না।একদম নিষিদ্ধ।কথা বলাও নিষিদ্ধ। কোনো মেয়ে যদি আপনার গাল টিপে দেয়, তাহলে সেই মেয়ের হাত আর আপনার গাল দুটোই কেটে নিবো আমি। আপনার চুলে অন্য কোনো মেয়ে হাত দিলেও একই কাজ করবো।মাথাভর্তি এই ব্ল্যাক ফরেস্ট কেটে মরুভূমি বানিয়ে দিবো। তারপর বুঝবেন কেমন লাগে।”
“আচ্ছা বুঝেছি। এবার তুমি ঘুমাও।”
“আচ্ছা ঈশান একটা কথা বলবেন?”
”কি?”
“আপনি কি অন্যকোনো মেয়ের সাথে প্রেম করেছেন কখনো?আপনার কি কোনো এক্সগার্লফ্রেন্ড আছে?”
” না নেই।”
” আমি ছাড়া অন্যকোনো মেয়েকে কিস করেছেন কখনো?”
ঈশান মুখ কুচকে তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন, “এসব কেমন প্রশ্ন তারিন?”
“সোজাসোজি বলেন না। করেছেন?”
ঈশান বিরক্তি নিয়ে মুখে হাত ঠেকিয়ে উচ্চারণ করলেন, “না!”
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, “তাহলে ঠিকাছে।”
ঈশান মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন, “করলে কি হতো? ”
আমি উঠে বসে ঈশানের গলা জড়িয়ে ধরে বললাম, “আমি মরেই যেতাম।”
ঈশান আমার পিঠে হাত রেখে বললেন,
“কিন্তু আমি তো অন্য একটা মেয়েকে কিস করেছি।”
আমি মাথা তুলে ভ্রু কুচকে উৎকণ্ঠা নিয়ে বললাম, “কাকে?”
ঈশান হেসে দিলেন।আমার দুই গাল স্পর্শ করে বললেন, ” আরিশাকে। এবার ঘুমাও।”
আমি রাগান্বিত চোখে তাকালাম,”আরিশাকে কোথায় কিস করেছেন?”
“মানে?”
“ঠোটে নাকি গালে?”
ঈশান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে ধমক দিয়ে বললেন,”কপালে।।এবার শোও তুমি।”
“আপনি আরিশার কপালেও কিস করবেন না।”
ঈশান অবাক হয়ে বললেন,”তারিন ও একটা বাচ্চা।”
আমি হুংকার দিয়ে বললাম,”হোক বাচ্চা। ইঁচড়েপাকা বাচ্চা। আপনি আরিশাকে আর কখনো কিস করবেন না।”
ঈশান হতাশ কণ্ঠে বললেন,” আচ্ছা করবো না। এবার তুমি শোও। ঘুমাও। নাহলে কিন্তু নিহার ঘরে পাঠিয়ে দিবো।”
“আচ্ছা আচ্ছা। ঘুমাচ্ছি।”
আমি কাথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। ঈশান আগের মতোই সামনের দিকে ঘুরে দুই হাত একত্র করে মুখে ঠেকিয়ে বসে রইলেন। আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম৷ কিন্তু ঘুম আসছে না। ঈশানের পারফিউমের গন্ধে আমার নাকে সুড়সুড়ি অনুভুত হচ্ছে। হাচির মতো আসতে নিয়েও আসছে না। বিষয়টা খুব বিরক্তিকর। আমি ঈশানের দিকে আমার ডান হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,
“কিসি দেন।”
ঈশান ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তাকালেন। বললেন, “তুমি কি ঘুমাবে না?”
“ঘুমাবো। আগে কিসি দেন। তারপর।”
ঈশান শক্ত চোখে তাকিয়ে থেকে আমার হাতটা ধরলেন। জোরপূর্বক হাতে ঠোটের হালকা পরশ দিলেন। তারপর ঝারি মেরে ফেলে দিলেন হাত। আমি আবার হাত এগিয়ে দিলাম। বললাম,
“আরো।”
ঈশান চরম বিরক্তি নিয়ে তাকালেন। খুব কষ্টে মেজাজ দমন করে আমার হাত ধরলেন। দ্রুতগতিতে প্রত্যেকটা আঙুলের ডগায় চুমু দিয়ে বললেন,
“হ্যাপি? এবার ঘুমাও।”
আমি হাসলাম। কাঁথাটা গলা পর্যন্ত টেনে বললাম, “আমি ঘুমিয়ে গেলে আবার আমাকে নিহার ঘরে রেখে আসবেন না তো?”
ঈশান অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালেন। আমি তৎক্ষণাৎ কাথা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম। একটু পর আবার কাঁথা সরিয়ে ঈশানের দিকে উকি দিলাম। উনাকে খুব চিন্তিত লাগছে। আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি নিয়ে এতো চিন্তা করছেন?”
ঈশান আমার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত মুখেই বললেন,” সকালে কি হবে তারিন?”
আমি ভ্রু কুচকালাম।
🍂
চলবে