“তিমির” পর্ব ২

0
1811

“তিমির” পর্ব ২

আমার গায়ে আবারও লাল শাড়ি। শাড়িটা আমি ছিঁড়ে ফেলতে চাইলাম। তখন কে যেন আমার হাত শক্তভাবে ধরে। আমি তার দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠি। লোকটির চোখ জ্বলছে। তার মুখের একপাশে পোড়ার বীভৎস একটি দাগ। ভয়ংকর এই লোকটির কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে লাগলাম। আশেপাশে কেউই নেই। আমি ঘন এক জঙ্গলে আছি। আমি বুঝি বাড়ির সামনের রাস্তার ওপারের অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাটায় আছি। লোকটি সেই ভেটকি হাসি হেসে আমাকে টানছে। এমন সময় একটি ছেলে এসে খালার ওই বীভৎস দেবরের মুখোমুখি হয়। লোকটি ধ্রুবকে দেখে ভয় পেয়ে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে জঙ্গলের আরও গহীনে চলে যায়। আমি দেবদূত ধ্রুবের হাত ধরে বললাম, “প্লিজ যেও না। আমার পাশে থেকো। আমার ভয় করছে।”
ধ্রুব আমার গালের একপাশে হাত রেখে মিষ্টি স্বরে বলল, “আমি তোমার কিছুই হতে দেবো না।”
আমি যেন জীবন ফিরে পেলাম। ধ্রুব এখন আমার পাশে আছে। আর কিছুই চাই না। ধ্রুবের হাত আমি আরেকটু চেপে ধরলাম। তখন? মনে হলো আমি ওর হাতটা আর খুঁজে পাচ্ছি না। তড়িঘড়ি করে চোখ খুলি। আমি আমার কোমল বিছানায় শুয়ে আছি। ধ্রুবের হাতের পরিবর্তে আমি হাতে বেডশিটের একমুঠো কাপড় চেপে ধরেছি। সামনের দেয়ালের বড় ঘড়ির কাঁটার ছিকছিক আওয়াজ নিশুতি এই রাতে জোরালো হয়ে কানে এলো। আশেপাশে কোনো গাছ নেই। আমি বুঝি স্বপ্ন দেখছিলাম। অনাগত বিষয় নিয়ে স্বপ্ন কী দুঃস্বপ্ন দেখছি বিগত একমাস আগে থেকে, মায়ের যাওয়ার পর থেকে। ঠান্ডা মাথায় আমি এর কারণও ভেবেছি। আমার জীবনের সর্বপ্রধান এবং সর্বশেষ ভালোবাসার মানুষটি আমাকে ছেড়ে একেবারে চলে যাওয়ায় আমার এই কোমল মনে হয়তো ভয় ঢুকেছে। আমি কি কখনও এইসব ভয় থেকে পরিত্রাণ পাব? আমি আমার স্বপ্নে ধ্রুবকেই বা কেন দেখেছি? ওকে কাছে পেয়ে আমি এতো খুশি কেন হয়েছি? নাকি ওকে দেখতে আমার ভিন্ন আর ভালো লেগেছে বলেই ওর কথা মনে গেঁথে আছে? আমার যতটুকু মনে পড়ে, একমাত্র মায়ের কাছে থাকলেই আমি ওভাবে খুশি থাকতাম। আর ওই লোকটি ধ্রুবকেই বা কেন ভয় পেয়েছিল?
আমার গাল বেয়ে একফোঁটা ঘাম ঝরল। আমি বাহুতে বালিশ চেপে রেখে বসে রইলাম। আমার উত্তেজিত মন বলছে, আমি যে জঙ্গলের ভেতরে কখনও যাইনি, সেই জঙ্গল কী করে দেখলাম? জঙ্গলটা কি আদৌ এখানে? আমি বেলকনির গ্লাসের দরজা খুলে বাইরে আসি। জায়গাটা একদম আমার মনের মতো। মা সবসময় এমন একটা খোলা বেলকনিতে দাঁড়িয়েই বাতাসকে উপভোগ করার ইচ্ছে রাখতেন। তাঁর ইচ্ছেগুলো যেন আমারই। বাড়ির অন্য কোনো ঘরে এমন বেলকনি নেই। বাবা আমাকেই কেন এই ঘরটি দিলেন? তবে বাবা কি জানতেন মায়ের ইচ্ছার কথা?
আমার ঠান্ডা লাগলেও কাঁপছি না। এগিয়ে গিয়ে বাড়ির সামনের জঙ্গলটা দেখার চেষ্টা করি। রাস্তার ওধারে কেবল গাছ দেখা যাচ্ছে। বাবা বলেছিলেন ওদিকে আর কিছুই নেই। গাছের পর কেবল গাছ। ওখানের ভেতরে কি আমার স্বপ্নের মতোই আঁধার? কিন্তু এখান থেকে তো ওই জায়গাকে ঘন জঙ্গলের মতো মনে হচ্ছে না।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


আমি ভেতরে এসে শুয়ে পড়ি। সারারাত ঘুমাইনি। যতবারই কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছি, ততবার আমার পাশের ঘরে থাকা আসিয়ার ঘরে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছি। ও প্রথমে আপত্তি করলেও পরবর্তী দুই রাতে সে আমাকে আশ্বস্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে। আজকেরটা পুরোপুরি দুঃস্বপ্নও ছিল না। কারণ আমি দেখেছি সেই রহস্যময় ছেলেকে। নির্জন এই রাত্রিতে আমার বিবেকে প্রশ্নেরা পাহাড় বানিয়েছে। সবচেয়ে চূড়ায় আছে, আসলে ধ্রুবকে বাকি ছেলেদের চেয়ে এতো এতো ভিন্ন কেন মনে হয়েছে?
সকালে আসিয়া রেডি হয়ে আমাকে ডাকলো। আমি তাড়ায় বেরিয়ে পড়ি। আসিয়া একটু অবাক হয়েছে। ও জানে না, আমি ধ্রুবকে দেখার জন্য কতটা উদ্বিগ্ন। আমি কেবল ওকে পর্যবেক্ষণ করতে চাই। কী এমন আছে এই ছেলেতে যে, আমি সারারাত তার কথাই ভেবেছি? তার গায়ের স্বর্গীয় আকর্ষণীয় সাদা রং, পারফেক্ট কপাল, লম্বা নাক, চিকন লালচে ঠোঁট, মোটা সরু ভ্রূজোড়া, চোখের ঘন পাপড়ি, সন্দেহে ভরা সেই দুই চোখ, কেন এসবের তুলনা আর কোনো ছেলের সাথে হয় না? প্রশ্ন হলো, সে আমার চোখে কী খুঁজেছে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, সে কাল কীভাবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে দৃষ্টিসীমানার বাইরে চলে গিয়েছে।
আমার প্রথম ক্লাস ছিল পদার্থবিজ্ঞানের। ধ্রুবের পাশে একটি ছেলে বসায় আমি তার দিকে ভালোভাবে তাকাতে পারিনি। আজ মাত্র দুটো ক্লাসই ভালোভাবে হবে। তার মধ্যে সফলভাবে একটি ক্লাস অকৃতকার্য রইল। এরপর ইংরেজি। আমি সবসময় ধ্রুবের ওপর আমার চোখ রাখলাম। তার বসার সিট অনুযায়ী আমি মেয়েদের সারির পেছনের একটি বেঞ্চ নির্বাচন করি, যাতে তার দিকে বাধাহীনভাবে তাকাতে পারি। রীতিমতো ক্লাস শুরু হলো। ধ্রুব ফিজিক্সে যেভাবে বসেছিল, এখনও ঠিক সেভাবে বসেছে। তার গায়ের দিকটা সোজা। হাতদুটো হাই বেঞ্চের ওপর বইয়ের দুইপাশে রেখেছে। চোখগুলো সর্বদা সামনের দিকে। তার আশেপাশের সহপাঠীর সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। দশ মিনিট পেরুলো। ধ্রুব একইভাবে বসে আছে। কলেজের সাদা ইউনিফর্মটা তার গায়ের রঙের সাথে পারফেক্টলি মিলেছে। তার মাথায় একগাদা চুল। তার আকর্ষণীয় দিকে চুলেরও অবদান কম নয়। ক্রমে আরও দশ মিনিট পেরিয়েছে। সত্যিই, ধ্রুব ক্লাসে অনেক এটেনটিভ। আমার কপালে কী যেন পড়ায় আমি মুখ ফেরালাম। কে যেন মার্কারের ঢাকনা ছুঁড়েছে। সামনে ফিরে স্যারকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জিত হই। স্যার ভ্রূ উঁচু করলেন। আমি লজ্জায় হাবুডুবু খেয়ে মাথা নিচু করলাম। কমবয়সী স্যারটি বললেন, “এই যে মেয়ে, হ্যাঁ, তুমি। সামনে এসে বসো।”
আমি নিরুপায় হয়ে সামনের বেঞ্চে বসি। আমার পাশের মেয়েটি কানে হ্যাডফোন গুঁজে রেখেছে। চুল দিয়ে ওই হ্যাডফোন ঢেকে রেখেছে। আমি এবার ক্লাসে মনোযোগ দেই। স্যার এতো ভালোভাবে লেকচার দিচ্ছেন যে, আমি আর কোনোদিকে মনোযোগ দিলাম না। আমার পাশের মেয়েটি একসময় বলল, আহ্। একটু পর বলল, ইশ, এই হ্যান্ডসাম স্যারটা অধ্যাপক না হলে কী হতো? আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর চেহারা অনেক উজ্জ্বল। তিনি অনেক হ্যান্ডসাম। কথাবার্তায় যেন রস টইটুম্বুর। কী যেন নাম তাঁর? শুনেছি মাত্র দুই বছর আগে অধ্যাপনা শুরু করেছেন। তার পড়ানোর সিস্টেমটা আমার খুব ভালো লাগল। তাঁর কাছে প্রাইভেটলি পড়া উচিত। এখন ইংরেজির শেষের যে অংশগুলো পড়ানো হচ্ছে, তা আমি মোটেই পারি না। ক্লাস শেষে আমার পাশের মেয়েটির কাছে জিজ্ঞেস করলাম, “কী যেন নাম স্যারটির?”
“আবির মেহবুব। স্যারটা অনেক হ্যান্ডসাম। তাই না?”
বুঝলাম, মেয়েটির মুখে লাগাম নেই। ঠোঁট কামড়ে বললাম, “উমমম..হুম। তিনি কি হোম টিউটর হিসেবে কাউকে পড়ান?”
“যদি পড়াতেন, তবে কবেই না আমি..”
আমি কথা বাড়ালাম না, “ইশ। আমার অনেককিছুই পড়া হয়ে উঠছে না। ক্লাসের সময়গুলো তা বুঝার জন্য যথেষ্ট নয়।” আমি ঠোঁট কামড়ালাম। স্যারকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারি। এখনও তো ক্লাসের বাইরে যাননি।
আমি তড়িঘড়ি করে স্যারের পিছু ছুটি। তিনি আমাকে দেখে হাসতে গিয়ে মুখ চেপে রাখলেন। তখন ধ্রুবের দিকে চেয়ে থাকাটা স্যার বুঝি লক্ষ করেছেন।
“স্যার, আমি ইংলিশ নিয়ে আপনার কাছে পড়তে চাইছিলাম। সময় বের করতে পারবেন? যদি সম্ভব হয়?”
“সরি। আমার টাইম নেই। এর আগেও অনেকে বলেছে। আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি।”
“ওহ্, সমস্যা নেই।”
“আমি একটা কাজ করতে পারি। আমার ফ্রেন্ড সজীবের সাথে যোগাযোগ করো। ও যদিও প্রাইমারি স্কুলে টিচিং করে, তোমাকে গাইড করতে পারবে।”
“অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার।”
আমি সজীব ভাইয়ার ফোন নাম্বার টুকে নেই। আবির স্যার অফিসের দিকে চলে গেলেন। তাঁর যাওয়ার সময় তাঁকে অতিক্রম করে আসা বাতাসের মাধ্যমে তার সুগন্ধ আমার নাকে এসে আমাকে থমকে দিলো। সাথে সাথে আমার সকল ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠল। আমার কান সোজা হয়ে গেল। কী দারুণ সেই গন্ধটা! এককথায়, বর্ণনা করার ভাষাটাই খুঁজে পাচ্ছি না। আর তাঁর কী এমন ব্যস্ততা আছে যে, অবসরে এক ব্যাচ স্টুডেন্ট পড়াতে পারবেন না? এমন সময় দেখলাম, ধ্রুব ক্লাস থেকে বেরিয়েছে। তাকে গতবারের মতোই পারফেক্ট দেখাচ্ছে। সবধরনের কাপড়ই মনে হয় তার গায়ে স্পেশাল দেখায়। তার রূপ এতই তীব্র যে, তার ভেতরের দিকটা ঘেঁটে দেখার কথা মাথায় এলো না। ভেবে এসেছিলাম, তার সম্বন্ধে ভিন্ন কিছু একটা জানার চেষ্টা করব।
ধ্রুব যখন পাশে এসে দাঁড়াল, আমি তখনও ঘোরে ছিলাম। সে বলল, “উমম.. হাই।”
“হ-হ্যালো।”
“ইজ এনিথিং রং?”
ওহহো, সে কি ধরে ফেলেছে, ক্লাসে শাস্তিটা আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে পেয়েছি?
আমি ঠোঁট কামড়ালাম, “না। তুমি জানো, তুমি পুরাই একটা মেইল মডেলের মতো?”
ধ্রুব হাসলো। পূর্বের মতোই আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আমরা হাঁটতে লাগলাম।
“আমার ভাইয়া বলেছে,” সে খুব আস্তে আস্তে এবং ছোট করে কথা বলছে, যেন কেবল আমিই শুনি, “আমার মডেলিং-এর পথে যাওয়া উচিত।”
“হুম, পারবে তো। তোমার বয়স কত?”
“আঠারোতে পড়লাম।”
আমি থ হয়ে গেলাম, “তোমাকে দেখে বিশ-বাইশ প্লাস মনে করেছি।”
ছেলেটি আবারও হাসলো। অপূর্ব সেই হাসি।
“আমার পরিবারের লোকের শারীরিক বৃদ্ধিই এমন। তুমিও কিন্তু কম লম্বা নও।” ছেলেটি রহস্যময় হাসি হাসলো।
“তোমার সমবয়সী হওয়া সাপেক্ষে আমার আরেকটু লম্বা হওয়া উচিত ছিল।”
“হা হা হা।” তার গলা খুলে হাসা দেখে আমার রীতিমতো বাক রোধ হয়ে গেল। আশেপাশের মেয়েরা মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে। সে ওদিকে তাকায়নি। “মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই ছেলেদের চেয়ে খাটো হয়। এতে তোমার দোষ নেই।”
আমি আর কিছু বলতে পারছি না। ধ্রুব আমার পাশাপাশি থাকায় ওর সুগন্ধটা নাকে আসছে। গন্ধটা খুবই মিষ্টি, খুবই অনন্য এবং…. খুবই পরিচিত। আমার আবারও ইন্দ্রিয়গুলো সজাগ হয়ে উঠল। কান খাঁড়া হয়ে গেল। কি দারুণ এই সুগন্ধ! ঠিক আবির স্যারের মতোই। না, এমনটা হতে পারে না। মনে হয়, স্যারের গন্ধটা এখনও আমার নাকে লেগে আছে বিধায় মিল পাচ্ছি। আমি অস্বস্তি বোধ করতে লাগলাম। কলেজে প্রথম বর্ষের ভর্তির কাজ চলায় কলেজে রীতিমতো ভিড়, যার জন্য ক্লাসও কম হচ্ছে। শোকর, আমাদের দিকে তেমন কেউ তাকাচ্ছে না।
আমরা সিঁড়ি বেয়ে নীরবে নেমে এলাম। অনেক কিছু ছিল জিজ্ঞেস করার। কিন্তু কিছুই এখন মাথায় আসছে না। ছেলেটি সহজভাবে কথা বলবে তাও কল্পনার বাইরে। যখন আমরা বারান্দায় এলাম, তখন ধ্রুব আচমকা প্রশ্ন করল, “তোমার কি রক্তের প্রতি দুর্বলতা আছে? মানে তুমি কি রক্তকে ভয় পাও?”
আমি অবাক হয়ে আমতা আমতা করলাম, “না তো। কেন?”
ধ্রুবকে খানিকটা চিন্তিত দেখাল, “না কিছু না।”
আমি আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব, পেছন থেকে আসিয়ার ডাক শুনি। আসিয়া বলল, “কোথায় ছিলি? ক্লাসেও পাশে বসলি না। আচ্ছা শোন, একটি মেয়েকে দেখাতে চেয়েছিলাম..”
আমি পেছনে ফিরলাম। ততক্ষণে ধ্রুব অর্ধেক বারান্দা পেরিয়ে গেছে। বিদায়ও দেয়নি। সে কি কিছু ভাবছিল? আজ কিন্তু সে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে উধাও হয়ে যায়নি। তার হাঁটার গতি কিন্তু বাকি ছেলেদের মতোই স্বাভাবিক। সে একবারও পেছনে ফিরে তাকায়নি। আসিয়ার ডাকে আমি তার দিকে ফিরলাম, “আলিয়া, কী চলছে?”
“কিছু না তো।”
“আমি এর আগে কিন্তু ধ্রুবকে কোনো মেয়ে বা ছেলেকে এতটুকু সময় দিতে দেখিনি।”
সে কী বুঝাতে চাইছে? “আমি যাস্ট ফ্রেন্ডলি রসিকতা করে ওকে বলছিলাম, ওর মডেল হওয়া উচিত।”
“তবু.. ওর কাছে তোকে হয়তো ইন্টারেস্টিং লেগেছে। পড়াশোনা ব্যতীত অন্যকিছুতে ওর ইন্টারেস্ট কম দেখেছি।”
তাই নাকি? কেন? আর কেন সে অন্যকিছু জিজ্ঞেস না করে রক্তের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করল? আমি যতই ওকে দেখছি, ততই ওর সম্বন্ধে জানার আগ্রহ আরও বাড়ছে।
আসিয়া আমাকে ডিগ্রীর এক স্টুডেন্টকে দূর থেকে দেখাল, “ও কে জানিস? আমাদের ফুফির মেয়ে। ওর সাথে কখনও কথা বলতে যাবি না।”
ওর বলা ‘আমাদের’ শব্দটা আমার মাঝে এখন আর আগের মতো অদ্ভুত ভাবনার তৈরি করে না। ও অনেকটাই মিশুক হয়ে গিয়েছে, যতটা ভেবেছিলাম, তারচেয়ে বেশি। সম্ভবত সবসময় একা থাকায় ও গম্ভীর হয়ে গেছে, ঠিক আমার মতো। মায়ের মৃত্যু আমাকে যেভাবে একা করে দিয়েছে, ঠিক সেভাবেই হয়তো ‘আমার বোন’ আর আমার দশা মিলে গেছে।
“কেন কথা বলতে যেতে পারব না?”
“কারণ ওকে আমার ভালো লাগে না।”
“ওঁর নাম কী?”
“মুনতাহা। ও..” কথাটি শেষ না করে সে আরেকটি কথা বলল, “একটি ছেলেকে দেখাব?”
আমি আগ্রহ দেখালাম। কারণ ব্যাপারটা আগ্রহ দেখানোর মতোই। আসিয়া বারান্দা পেরিয়ে মুনতাহাদের ভবনের দিকে আমায় নিয়ে গেল। এখানেও ক্লাস হচ্ছে না। সবাই বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কথাবার্তা বলছে। আসিয়া একটি ছেলেকে দেখিয়ে দেয়। ছেলেটি জেল দিয়ে চুলকে খাঁড়া করে রেখেছে। চুলগুলো ধ্রুবের মতোই স্টাইলিশ। কিন্তু আমি যতদূর জানি, ধ্রুব চুলে জেল দেয় না। ওই ছেলেটিও ধ্রুবের মতো পারফেক্ট গড়নের। কিন্তু ওর চেয়ে বয়স একটু বেশি হবে। সে লেদারের দামি একটি জ্যাকেট পরেছে। তার জিপ খোলা। সেও মডেলের চেয়ে কম নয়। আই থিংক, কলেজে ফ্যাশন শো-এর সিজন শুরু হলে মন্দ হতো না।
আসিয়া যখন কথাটা বলল, তখন আমার ভেতরের রসিকতা উধাও হয়ে গেল, “ও ধ্রুবের ভাই, জিসান। Sun.. my sun।”
আসিয়ার গলার স্বর নম্র শোনালো। তাহলে আমার সন্দেহটা ভুল ছিল না। আসিয়া কাউকে ভালোবাসে, অনেক। আর তার কারণেই হয়তো রাতের বেলায় কাঁদে। আমি ওর বালিশ ভেজা দেখেছি। আর এই ছেলেটি ধ্রুবের ভাই? আসিয়া আমার সৎবোন হয়েও আমাদের চেহারায় কিছুটা মিল আছে। কিন্তু কোথায় ধ্রুব আর কোথায় এই জিসান ভাই। বিষয়টা কিছুটা এমন, ধ্রুবের চেহারায় চাঁদের আভা আর জিসানের চেহারায় সূর্যের।
“ও একটু বদমেজাজি তো, তাই সান বলি।” আমার মনে মনে বিড়বিড় করছি Sun.. Asiya’s sun। ও প্রসঙ্গ পাল্টালো, “কিন্তু অন্যের চাঁদ।” প্রেমে পড়লে কেউ কি এভাবেই কবির মতো কথা বলে? “আমি ওকে আগে ভালোবাসলেও কেউ একজন পরে ওকে নিজের করে ফেলেছে। মাই বেড লাক।’
আমি এতক্ষণে আন্দাজ করে ফেলেছি, “মুনতাহা?”
ও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ওর চোখে পানি। আমি সঠিকভাবে বলতে পেরেছি। ও কিছু না বলে চলে যেতে লাগল। ওর কষ্ট দেখে আমার কষ্ট লাগছে। আমি জিসান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। তার হাসিটা অমায়িক। মনে হয়, এরই প্রেমে ও পড়েছে। আমি তখন এককোণায় ধ্রুবকে দেখি, হয়তো ভাইয়ের অপেক্ষা করছে। সে আমার দিকে আগে থেকেই তাকিয়ে আছে। আমিও তাকে বুঝার চেষ্টা করলাম। আমার ভ্রূ হয়তো এতক্ষণে কুঞ্চিত হয়ে গেছে। আমার জিজ্ঞেস করেই ফেলা উচিত, কী তুমি?
আমার সাহস এতই বেশি যে, আমি কথাটা বলতে সত্যিই ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। ও আমার হাত নিজের হাতে নেয়। তার বাম হাতের ওপর আমার ডানহাতটা উল্টোভাবে রেখে সে চোখ বন্ধ করল। তার ভ্রূ কুঁচকাতে শুরু করেছে। কয়েক সেকেন্ড পেরুনোর পর সে চোখ খুলল। আমি ভয় পেয়ে বাকশক্তি হারালাম।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার
.
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share