তিনি এবং ও !
৮.
রশিদ সাহেব নিদ্রকে বললেন
– বাবা তুমি চুপ থাকো।
নিদ্র রশিদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো।
নিদ্র চুপচাপ লুঙী নিয়ে দোতলায় উঠে তার রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
চোখ বন্ধ করে অদ্রিকে নিয়ে ভাবছে। রশিদ সাহেব অদ্রিকে বলল
– মা, ছেলেটা একটু মন খোলা ধরণের।
অদ্রি বলল
– চাচা, আমি বুঝি কিন্তু কী করবো? পারিনা আমি।আমি চেষ্টা করি একজন মানুষ কে নিয়ে ভালো ভাবে থাকার।কিন্তু….
অদ্রি দুহাত দিয়ে মুখ আটকে কাঁদতে শুরু করলো।
রশিদ সাহেব বললেন
– দেখো দিখি মেয়ের কাণ্ড।আহ! অনেক হয়েছে।
রশিদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– আজ ভাবলাম তোর এখানে দুপুরে দুটো খাবো। তা না তুই কাঁদতে বসে গেলি।
অদ্রির কান্নার শব্দে লিলি তার রুম থেকে বের হলো। লিলি অদ্রির পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। অদ্রির কান্নাকাটি দেখতে সে অভ্যস্ত। দুইটা বছর যাবত সে এই বাড়িতে আছে। অদ্রির সাথে তার তেমন কথাবার্তাও হয়নি কিন্তু একসাথে থাকতে থাকতে ভালবাসার সৃষ্টি হয়েছে।অদৃশ্য এই ভালবাসাটাই তাকে এই নিঃসঙ্গ মেয়েটির কাছে আটকে রেখেছে। রশিদ সাহেব লিলিকে বললেন
– তুই আমাদের জন্যে রান্না কর। আজ এখানে খাবো।
লিলি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। রশিদ সাহেব লিলিকে জিজ্ঞেস করলেন
– নিদ্রের ঘর কোনটা রে?
লিলি বলল
– দোতলার উত্তরের ঘরটা।
রশিদ সাহেব নিদ্রের দয়জায় নক করলেন। নিদ্র দরজা খুলে দিলো।রশিদ সাহেব ঘরের মধ্যে ঢুকে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে রইলেন। তারপর নিদ্রকে বললেন
– তোমার মাথা খারাপ নাকি?
নিদ্র বলল
– না তো। কেনো?
দেয়ালের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন
– এগুলা কীরকম রঙ? আর কোনো রঙ নাই বাজারে?
– আমার ভালো লেগেছে তাই করেছি।
– অদ্রি জানে?
– হ্যা, সে বলেছেন, আমার যা ইচ্ছা তাই করতে পারি শুধু ভেঙে ফেলা বাদে।
– লাল, হলুদ আর বেগুনি রংধনুর মতো করে পুরো দেয়াল জুড়ে রঙ করেছো। আচ্ছা তুমি নিজে করেছো?
– জি চাচা।
রশিদ সাহেব অবাক হয়ে বললেন
– তুমি রংমিস্ত্রীর কাজ কোথা থেকে শিখলা?
– হাত খরচ জোগাতে গিয়ে শিখতে হয়েছে।
– নাজমুলের তো টাকার অভাব নেই। কীভাবে কী হা?
– আরে চাচা বাবা যা কিপটা। প্রতিদিন ১০ ডলার করে দেয়। ওতে আমার হয় নাকি?তাই একেক সময় একেক কাজ করে পকেট খরচ চালাই।
– ইংলিশও খাওয়া হয়??
– ইংলিশ খাওয়া হয়না চাচা। আমি ওই কোল্ড ড্রিঙ্ক টা খাই। আর একটু ঘোরাফেরার শখ আছে এই আরকি।
– তোমার দাদীও দিতে পারেন?
– হ্যা, কিন্তু দেননা।
– যাক ভালো অল্প বয়সে ইনকাম করতে শিখে গেছো।
– চাচা কী একটা বিশ্রী ব্যাপার। বিশাল বিলাসবহুল বাড়িতে বাস করেও আমাকে এসব কাজ করতে হয়।
– শুনো বাবা কিছু কথা বলার ছিলো।
– বলেন। এই ঘরে চেয়ার নেই চাচা। আপনি বিছানার উপরে বসেন।
রশিদ সাহেব বিছানার উপরে আসন পেতে বসলেন। পাশে নিদ্র বসলো। রশিদ সাহেব বলতে শুরু করলেন
– অদ্রির সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। খুবই অল্প জানি। যতটুকুই জানি ও মেয়েটার চরিত্রদোষ নেই। ওর বয়স তোমার মতো বা একটু বেশি হবে। আমি সঠিক জানি না। আজ ২ বছর যাবত ও এখানে লিলিকে নিয়ে থাকে। বাসায় দারোয়ান আছে , কাজের দুইজন মহিলা আছে। আপাতত ছুটিতে আছে। অদ্রি এতিমখানায় মানুষ হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগে একজন ভদ্রলোক ওকে ওখান থেকেই বিয়ে করেন। ভদ্রলোক অনেক ধনী ছিলেন। এইযে বাড়িটা দেখছো এটা ওনারই টাকা দিয়ে কেনা। বিয়ের ১ বছরের মাথায় অদ্রির স্বামী মারা যান বা সুইসাইড করেন। তারপর অদ্রি এখানে চলে আসে। আমার সাথে ওর পরিচয় লিলির মাধ্যমে। লিলি ভবঘুরে টাইপের মেয়ে।আগে সারাদিন পুরো এলাকা চষে বেড়াতো। ওর সাথে প্রথমে আমার দেখা হয়। পরে ওর মাধ্যমে এখানে আসা যাওয়া।
অদ্রির বয়সী আমার একটা মেয়ে আছে। মেয়েটার বিয়ে হয়েছে, একটা মেয়েও হয়েছে।
আমার খুব কষ্ট হয় বাবা, এই মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে। বাবা অনেক চেষ্টা করেছি বিয়ে দেয়ার কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বরংচ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় অবস্থা। পরে বউ বলল, যেভাবেই হোক সম্পর্ক টা যেন নষ্ট না হয়।
নিদ্র কথা গুলো শুনছে আর গভীর চিন্তায় পরে যাচ্ছে। যতোই গল্পটা সামনের দিকে এগোচ্ছে ততোই তার চিন্তার গভীরতা বাড়ছে। নিদ্র খুব আস্তে আস্তে বলল
– আমি এসব জানতাম না। ভেবেছি…
রশিদ সাহেব বললেন
– তোমাকে আরো কিছু জানতে হবে। ও আমাকে টাকাপয়সা দিয়েও সাহায্য করে। দানশীল মেয়ে। কোনো বাজে অভ্যেস নেই।
রশিদ সাহেব গভীর নিশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নেমে চলে গেলেন নিচ তলায়।
দেখতে হবে না , অদ্রি কী কী রান্না করছে??
চলবে……..!
©Maria Kabir