তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-২১

0
1819

#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ২১

হাজারো রঙের মাঝে রঙিন তুমি,
তাইতো,,,,,
সাত রাঙা ফুলের ভিরেও
শত শত বার তোমাতেই মুগ্ধ আমি❤️

_তাফসিয়া মেঘলা

উষ্ঠ জুগল কিঞ্চিত সরু করে মিষ্টি মাখা মুচকি হেসে মেঘলা বলে,
— “বাহহ বেশ তো, তা কবি হলে কবে থেকে?

ধুসর রাঙা আকাশ পানে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— ” আমি কবি নই,
তবে তোমার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কবি হতে ক্ষতি কি?
আমি যদি কবি হই তবে তুমি হবে কি আমার পরন্ত বিকেলের কাব্যের হৃদ মহিনী?
হবে কি আমার নীল আকাশের অনীল নীলাঞ্জনা? হবে কি আমার অন্ধকার আকাশের হাজার তারাত এক চিলতে চাঁদ?”

হাজারো মুগ্ধতা নিয়ে মুগ্ধ নয়নে শোভনের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা৷
মনের সুপ্ত অনুভূতিরা বলছে,
— “এটাই কি #তিক্ত_ভালোবাসার #তিক্ত_প্রেমিক?
এতোটা পরিবর্তন? ”

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু কাছে এসে কোমরে হাত দিয়ে আরেক হাতে মেঘলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রশান্তিময় হাসি টেনে বলে,
— “এভাবে তাকিয়োনা হুর পরি,,,,,,
এমন চাওনিতে আমি ব্যাধিগ্রস্ত হই৷ মনে হয় বুকের পিঞ্জিরায় ঢুকিয়ে রাখি,
মনে অদ্ভুত ইচ্ছে জাগ্রত হয়৷
কিন্তু সে ইচ্ছে যে আপাদত চাপা দিয়ে রাখতে হয়৷ ”
শোভনের এমন কথায় মেঘলা লজ্জায় নুয়ে যায়৷

— “রোমান্স হচ্ছে বুঝি?”
হঠাৎ মেয়েলী কন্ঠ পেয়ে দুজনে দুদিকে সরে সামনে তাকিয়ে দেখে ঐশী আর সারা দাঁড়িয়ে আছে৷

শোভন ওদের দেখে মাথা নিচু করে বিরবির করে বলে,
— “হায় আল্লাহ কি বোন দিয়েছো, বোন আর শালির জন্য বউ এর সাথে ঠিক মতো রোমান্স ও করা যায় না৷ ”
বলেই বিস্ফোরিত চোখে ঐশী আর সারার দিকে একবার তাকিয়ে সাইড কেটে নিচে চলে যায়৷

মুখ কালো করে গুটি শুটি মেরে বসে আছে ঐশী, কখনো বিরবির করে হায়াত কে বকছে কখনো নিজেকে বকছে কখনো মেঘলাকে বকছে একা একাই৷
ওর এমন বাচ্চামো পাশে বসে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে হায়াত৷ এমন করার কারন সবার সাথে আড্ডার মাঝখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসে ছাদে বসিয়ে রেখেছে হায়াত৷ আর নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে মেঘলা৷
বেচারা হায়াত শোভনের সাথে বোনের বিয়ের কাজ কর্ম করতে করতে একটুও কাছে পায় না সারাদিন ঐশীকে তাই এখন এখানে নিয়ে এসেছে৷
হায়াত কিছুক্ষন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে ঐশীকে দেখে এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় কারন এবার ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে৷
হায়াত দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ঐশীর হাত ধরে উঠিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রক্ত চক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— “এমন করছো কেন?আমার কাছে আসলেই তোমার যত বিরক্ত আছে এসে ভর করে?
কেন এমন করো?

হায়াতের এমন রেগে যাওয়া দেখে ঐশীর বিরক্ত আভাটা কেটে চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠে৷ শুকনো ঢোক গিলে বলে,
— ” আসলে তা নয় আপনি ভুল বুঝছেন৷

হায়াত ঐশীর এমন ভয় পাওয়া দেখে কিছুটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
— “তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য কতটা বেকুল বুঝো না?
ভালোবাসি তোমায়, কাছে পেতে চাই সবসময় তোমায়৷ ”

বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷
ঐশীর কি হলো সে নিজেও জানেনা সে ও আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে, কিছুক্ষন পর ছেড়ে এক হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে ঘারের চুল গুলো সরিয়ে আলতো ঠোঁট ছোয়ার৷
আরেকটু নিজের কাছে টেনে কপালে গভির ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷

বারান্দার চেয়ারে বসে টুং টাং করে গিটারে শব্দ তুলছে শোভন৷
টিয়া পাখিটাকে খাবার দিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মেঘলা শোভনের দিকে৷
এ শোভনকে যেন UK যাওয়ার পর থেকে অচেনা লাগছে আগের মতো হুট হাট রেগে যায় না নিজের হিংস্রতা দেখায় না৷
মেঘলাকে এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্রু কিঞ্চিত উচু করে বলে,
— “কি দেখছেন হুর পরি?”

মেঘলা হকচকিয়ে বলে,
— “কই কিছু না তো৷ ”

এইটুকু উত্তর দিয়েই আবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে৷
আবার দু জনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা, নিরবতা ভেঙে শোভন এসে মেঘলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে,
— “ভালোবাসি৷ ”
উত্তরে মেঘলা মুচকি হাসে৷

________________________

দুই হাতে ভরে মেহেন্দি পরে উসখুস করছে মেঘলা৷ না পারছে উঠতে না পারছে ঠিক মতো বসতে লেহেঙ্গার আচলটা খুলে গেছে যার কারনে পেটটা দৃশ্যমান৷ নিলয় কু-দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷
ঐশী টা কেউ সময় মতো পাওয়া যায় না সবার সাথে নাচতে নেমে গেছে৷ আর শোভনকে তো সেই সকাল থেকে একবার চোখের দেখা ও দেখতে পারেনি, হঠাৎ হায়াতকে দেখতে পেয়ে ইশারা দিয়ে ডাকে৷
হায়াত কাছে এসে বলে,
— “কিছু লাগবে বোন?”

মেঘলা অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে,
— “ভাইয়া তোমার বউটা কে একটু ডেকে দাও না কাজ আছে৷ ”

মেঘলার কথা শুনে হায়াত ঐশীর দিকে এগিয়ে যায়৷
হায়াত কে এতো কাছে আসতে দেখে ঐশী ব্রু কুটি করে বলে,
— “দেখুন এখন যদি একা কোথাও নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয় তাহলে আপনার ইচ্ছে টা কে মাটি চাপা দিন আমি কিছুতেই এখন কোথাও যাবো না৷ ”

এই মেয়ে সব সময় এক লাইন বেশি বুঝে৷
হায়াত রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— “সব সময় এতো বেশি বুঝো কেন?
মেঘলা তোমাকে ডাকছে তাই এসেছি, সব সময় কি তোমার মাথায় ওই সব চিন্তাই ঘুরে?”

হায়াতের কথা শুনে ঐশী জীব কেটে বলে,
— “সরি,
আমি ভেবে ছিলাম,,,৷ ”

ঐশীকে থামিয়ে হায়াত বলে,
— “যা ভেবেছো বুঝেছি,
এখন আমার বোনের কাছে যাও৷ ”

ঐশী যেতেই মেঘলা অসহায় ভাবে তাকিয়ে লেহেঙ্গা টা দেখিয়ে বলে,
— “এটা ঠিক করে দে না৷ ”

এক দৃষ্টি তে তাকিয়েই বাকা হাসছে নিলয়৷ নিলয় কে দেখে বিরক্ত নিয়ে ঐশী মেঘলাকে রুমে নিয়ে আসে৷
কিন্তু মেঘলার রুমে একটাও সেফটি পিন নেই লেহেঙ্গার টা কোথায় যেন পরে গেছে তাই ঐশী গেছে এখানে মেঘলাকে রেখে সেফটি পিন আনতে৷
তখনই রুমে নিলয় প্রবেশ করে নিলয় কে দেখে বিরক্ত নিয়ে মেঘলা বলে,
— “এখামে কেন এসেছো? যাও এখান থেকে”

বলে মেহেন্দির হাত দিয়েই উরনাটা ঠিক করে৷ কিন্তু নিলয় শুনছেই না, বেশ অসস্তি হচ্ছে এ ছেলে যে এমন খারাপ মেঘলা জানতো৷
নিলয় মুখে বাজা হাসির রেখা ঝুলিয়ে মেঘলার দিকে এগোচ্ছে

মেঘলা বলে,
— “ভাইয়া এখান থেকে যাও৷ ”

নিলয়ের কানে কথাই ঢুুকছে না যেন৷ নিলয় মেঘলার একেবারে কাছে এসে মেঘলার কোমরে হাত দেয়৷
রাগে কষ্টে বিরক্ত অসস্তি তে মেঘলার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে,
তখনই দরজা জোরে ধাক্কা দিয়ে কেউ প্রবেশ করে শোভন দাঁড়িয়ে আছে পিছনে ঐশী, শোভন কে দেখে নিলয় কে ধাক্কা দিয়ে ওর বুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে৷
শোভন কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক রেগে আছে, আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে৷
শোভন গম্ভীর কন্ঠে নিলয় কে বলে,
— “এখান থেকে যা৷ ”

নিলয় কিছু না বলে এখান থেকে বেরিয়ে যায়৷
মেঘলাকে মাথায় হাত দিয়ে শান্ত করে নিজের কাছে বসায়৷ শোভনকে শান্ত দেখে মেঘলা নিজেও অবাক, নিলয় ওর কোমরে হাত দিয়েছে শোভন কি করে এতোটা শান্ত আছে? শোভন কি সত্যি আর আগের মতো নেই পালটে গেছে?
এতোটা বদল? সত্যি কি বদল হয়েছে?
নাকি এমন নিস্থব্দতা কোনো ঝরের পূর্বাভাস?

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে