#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১৪
আনমনে হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে হাটছে মেঘলা৷
চার তালায় আসতেই হঠাৎ কেউ হেচকা টান দিয়ে অন্ধকার রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে মেঘলার হাত চেপে ধরে৷
ব্যক্তিটি এতোই কাছে যে মেঘলা ব্যক্তিটির শ্বাস প্রশ্বাস হার্ট বিট গুনতে পারবে৷
কিন্তু কে?
মেঘলা কাপা কাপা গলায় বলে,
— “ক কে আ আপনি? ”
পাশের ব্যাক্তি কোনো রেসপন্স না পেয়ে মেঘলা আবার বলে,
— “কে আপনি?”
হঠাৎ ব্যাক্তিটি মেঘলার হাতে সেই আগের মতো ধারালো কিছু চেপে ধরে আর মেঘলা “আহ” বলে শব্দ করে উঠে৷
পাশের ব্যাক্তি টি মেঘলার কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে এনে মেঘলার ঘারে আলতো করে বাইট করে৷
মেঘলা ফিরে কেঁদে উঠে বলে,
— “শোভন ভাইয়া?”
মেঘলা বলার সাথে সাথে ব্যাক্তিটি যেনো অন্ধকারে ডুবে যায়৷ মেঘলা ডুকরে কেঁদে উঠে সেইখানেই জ্ঞান হারায়৷
চোখ খুলেই মেঘলা নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করে৷
পাশে হায়াত বসে আছে হায়াত কে দেখে মেঘলা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
— “ভাইয়া আমার শোভন এসেছে৷ ”
হায়াত ব্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলে,
— “কি বলছিস মেঘু?
শোভন কি করে আসবে?”
— “হ্যাঁ ও এসেছে ওই তো অন্ধকার রুমে নিয়ে গিয়েছিলো৷ ”
হায়াত মুখ স্বাভাবিক করেই বলে,
— “কিসের অন্ধকার রুম?
কোন অন্ধকার রুম? ”
মেঘলা হায়াত কে সবটা বলার পরেও হায়াত স্বাভাবিক ভাবে বলে,
— “মেঘলা তোর কোথাও একটা ভুল হচ্ছে,
তুই আমার সাথেই ছিলি আর আমি বা কখন তোকে ইশারা করেছি ক্লাসে যাওয়ার জন্য?
আর বাকি রইলো এই কাটা দাগ?
ওই ছেলে গুলোকে যখন মারছিলাম তখন ছেলে গুলো আমার হাতে ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছিলো তখনই তুই জ্ঞান হারাস আর নিচে কাচের টুকরো পরে ছিলো তা তোর হাতে অনেকটা ঢুকে যায়৷ ”
মেঘলা অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “কি বলছো কি?
আমি জানি আমার শোভন এসেছিলো আর ওই এমন কেটেছে৷ ”
হায়াত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হায়াতের ব্যান্ডেজ করা হাতটা দেখিয়ে বলে,
— “দেখ এবার বিশ্বাস হচ্ছে তো?
ওইসব তোর ভুল ধারনা শোভন আসেনি তোর হ্যালুয়েশন ওটা৷ ”
বলেই হায়াত বেরিয়ে যায়৷
মেঘলা থম মেরে ভাবছে,
— “হ্যালুসিনেশন?
সত্যি কি হ্যালুসিনেশন? শোভন আসেনি?
ভাইয়াকি মিথ্যা বলবে? কিন্তু কেনই বা বলবে?”
মেঘলা হুরমুরিয়ে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়৷
ঘাড়ের সামনে কোনো বাইটের দাগ নেই, তারমানে সত্যি হ্যালুসিনেশন ছিলো?
এইসব ভাবতে ভাবতে মুখ চেপে জোরে কান্না করতে থাকে, হয়তো তখন শোভন কে একটু বুঝলে এই দিনটা আজ দেখতে হতো না৷
ভালোবাসার কষ্ট পৃথিবীর সব নিকৃষ্ট কষ্ট যা মনকে ক্ষনে ক্ষনে মন কে ক্ষত বিক্ষত করে৷
হৃদ স্ফন্দন যেমন থমকে যায়,শ্বাস প্রশ্বাস চললেও নিজেকে পাথর মনে হয় জীবিত থেকেও মৃত হয়ে বাঁচতে হয়৷
যা আজ মেঘলা পাচ্ছে একটা সময় শোভনও মেঘলার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এমন বেকুল ছিলো কিন্তু শোভন কে কখনো মেঘলা বুঝেনি, শোভনের ভালোবাসা মেঘলা বুঝেনি৷
বেঁচে থেকেও মৃত ছিলো৷
— “আমি চাই যে আজ!!
তোমায় খুব করে চাই যে, আমি তোমায় ছাড়া ভালো নেই৷
প্রতিক্ষন তোমাকে না পাওয়ার তৃষ্ণা আমায় কুরে কুরে খাচ্ছে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি৷ ”
হঠাৎ কেউ মেঘলার সামনে হাটু গেরে বসে মেঘলা কে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে৷
কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে শোভন৷
শোভন কে দেখে মেঘলা আতকে উঠে, মেঘলা এখনো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে চোখে যা দেখছে তা সত্যি কিনা মস্তিষ্ক দিয়ে বুঝার চেষ্টা কিরছে৷
হঠাৎ শোভন কে জড়িয়েই মেঘলা কেঁদে উঠে বলে,
— ” আমি জানি না তুমি হ্যালুসিনেশন নাকি সত্যি এসেছো৷
সত্যি যদি এসে থাকো প্লিজ যেয়ো না আমি পারছিনা তোমায় ছাড়া থাকতে আর ক্ষনে ক্ষনে শেষ হয়ে যাচ্ছি৷
আমার তৃষ্ণার্ত চোখ আমার বেকুল হয়ে আছে তোমাকে দেখার জন্য৷
আমার হাজারো ভাবনার ভিরে
তুমি আছো এই অবুঝ হৃদয় জুরে❤️”
বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে৷
— ” আমার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিয়ে
রং তুলি দিয়ে আকবো ছবি
যতন করে বুকের গভীরে লুকিয়ে রাখিবো আপন করি৷ ”
বলেই আবার কোথায় একটা চলে যায়৷
মেঘলা সামনে তাকিয়ে দেখে এবারো কেউ নেই বারান্দায় গিয়েও কাউকে দেখতে পেলো না৷
তাহলে কি এবারও হ্যালুসিনেশন?
কেন এমন হচ্ছে?
মেঘলা আর পারছে না এমন শোভন কে ছাড়া থাকতে৷
নির্ঘুম একটা রাত কাটায় মেঘলা এইসব ভাবতে ভাবতেই৷
এখন হয়তো চাইলেও কিছু ঠিক করা যাবে না, সত্যি হয়তো শোভন ওকে ভুলে গেছে৷ আচ্ছা সত্যি কি ভুলে গেছে?
যে একটা মানুষ কে এমন পাগলের মতো ভালোবাসতো এতো সহজে ভুলে যেতে পারে?
মেঘলা কে ছাড়া কি শোভন ভালো আছে?
হয়তো ভালোই আছে৷
এসব ভাবতে ভাবতেই উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নেয়৷
চোখ যেন বন্ধ হয়ে আসছে ঘুমে, ফোনে এলার্ম দিয়ে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেয়৷
আজকে কলেজে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে, কাল পরিক্ষাটা দিতে পারেনি৷
মেঘলা উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হয় আজ হায়াত ব্যস্ত তাই একাই যেতে হবে৷
।
।
কলেজে আসতেই ঐশীর সাথে দেখা হয়৷
মেঘলাকে দেখে মিষ্টি হেসে জড়িয়ে ধরে, মেঘলাও জোর পূর্বক হাসি টেনে জড়িয়ে ধরে
ঐশী মেয়েটা বরাবরই মিষ্টি একটা মেয়ে আর দেখতেও বাচ্চা বাচ্চা টাইপস সামনের চুল গুলো বাচ্চাদের মতো সবসময় কপালের চারপাশে, সবসময় রাউন্ড একটা হেয়ার ব্যান পরনে থাকে৷
মিনি ফ্রক আর জিন্স প্যান্ট পরনে আর চোখে চশমা৷
ঐশী মুখের হাসিটা গায়েব করে মুখটা অসহায়ের মতো করে বলে,
— “মেঘু জানিস কলেজের পাশে ওই জঙ্গলটায় ভ্যাম্পায়ার আছে৷ ”
ঐশীর কথা শুনে মেঘলা ব্রুটা কিঞ্চিত কুটি করে বলে,
— “ভ্যাম্পায়ার?
মানে?কেন কি হয়েছে?”
কালকে হৃদয় ভাইয়া (হায়াতের আরেক নাম হৃদয়) যে ছেলেদের মেরেছে আজ সেই ছেলেদের লাশ পরে আছে কলেজের ওই পারে জঙ্গলে৷
ঐশীর কথা শুনে মেঘলা কোনো উত্তর না দিয়েই সেইদিকে হাটা দেয়৷
মানুষের ভীরের জন্য দেখতে পারছে না৷
আস্তে আস্তে মানুষ ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখে সত্যি কি বিচ্ছিরিভাবে মারা হয়েছে৷
লাশ গুলোকে দেখেই আকাশের লাশের কথা মনে পরে যায় মেঘলার আকাশেরো এই অবস্থা করেছিলো৷
তাহলে কি শোভন?
সত্যি শোভন এসেছে?
এসব ভাবতে ভাবতেই ঐশী এসে ক্লাসে নিয়ে যায়৷
ক্লাসে এসে মেঘলাকে ভাবনায় মগ্ন হতে দেখে ঐশী বলে,
— “কি ভাবছিস এতো?
আর তখন এমন ছুটে গেলি কেনো?
ঠিকি হয়েছে ছেলেগুলো খুব পাজি ছিলো৷ ”
মেঘলা কাপা কাপা কন্ঠে বলে,
— ” সে এসেছে৷ ”
ঐশী কিছু বলবে এর আগেই প্রিন্সিপালের সাথে কেউ একজন ক্লাসে ঢুকে৷
লোকটি প্রিন্সিপালের পিছনে তাই ঠিক করে দেখতে পারছে না৷
প্রিন্সিপাল বলে,
— “guys let’s get acquainted with ur new teacher,
he is Mr,,,,,
প্রিন্সিপাল এইটুকু বলতেই লোকটি সামনে আসে মেঘলা লোকটির দিকে অবাক হয়ে তাকায়,,,,
চলবে,