#তিক্ত_ভালোবাসা
#Tafsia_Meghla
#পার্টঃ১২
সেদিন মেঘলা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে ওর ফুপির বাড়িতে উঠেছিলো সেখান থেকে পনেরো দিন পর বাবার কাছে UK চলে আসে ফুপাতো ভাই এর সাথে৷
বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে পাখিটাকে নিয়ে ছাদে আসে, এটা ওর নিত্য দিনের কাজ দেশ থেকে আসার সময় টিয়া পাখিটাকেও নিয়ে আসেনি৷
আসার পর পাখিটাকে খুব মিস করতো তাই ওর ফুপাতো ভাই হায়াত ওকে এই পাখিটা কিনে দেয়৷
আজ ২৮ তারিখ বিয়ের আজ পাঁচ মাস পূর্ন হলো৷
শোভন কি ভুলে গেছে মেঘলাকে? এই বিয়ে নামক সম্পর্ক টা কি এমনি থাকবে সারা জীবন?
শোভন আর মেঘলার কি মিলন হবে না?
— “কি ভাবছিস?”
হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে ভাবনার ছেদ পরে মেঘলার৷
পিছনে তাকিয়ে দেখে হায়াত দাঁড়িয়ে আছে৷
হায়াত কে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
— “ভাইয়া আজ এতো তারাতারি যে?”
হায়াত মুচকি হেসে বলে,
— “ভাবলাম আমার মিষ্টি বাচ্চা বোনটা হয়তো একা আছে তাই চলে এলাম৷ ”
মেঘলা ব্রু কুচকে বলে,
— “একা তো আমি প্রতিদিনি থাকি৷
আজ হঠাৎ? ”
— “মেঘু তোকে আমি কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি ফোন তুলছিস না কেন?”
পিছনে তাকিয়ে ঐশীকে দেখে হায়াতের দিকে তাকিয়ে ব্রু কুচকে বলে,
— “ও তাই বলি আজ আমার গুনোধর ভাইয়ের আজ ছোট বোনের কথা মনে পরলো কেন৷
তা ভাইয়া তুমি জানলে কি করে ঐশী আসছে৷ ”
মেঘলার কথা শুনে হায়াত মেঘলার কানে ফিস ফিস করে বলে,
— “চুপ যা না বোন কেন ফাসাচ্ছিস?
তাছারা তোকে না পেয়ে ও মামাকে ফোন করে আর ভুল বসত সেই ফোন আমি ধরি আমিও তোকে ফোন করি কিন্তু তুই ফোন তুলছিলি না তাই ভাবলাম এসেই বলি৷ ”
মেঘলা বাকা হেসে বলে,
— “হ্যাঁ এসে বলা তো বাহানা তুমিতো ওকেই দেখতে এসেছো আমি জানি৷ ”
ঐশী ওদের এমন ফিসফিস করতে দেখে কোমরে হাত দিয়ে বলে,
— “এই তোরা কি বলছিস আমার নামে?
তোর জন্য এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে এখন চল প্লিজ৷ ”
হায়াত বলে,
— “কোথায় যাবি তোরা?”
মেঘলা ভুলেই গিয়েছিলো,
— “আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোকে যে শপিং করতে যাওয়ার কথা বলে এসেছিলাম৷ ভালোই হলো ভাইয়া আছে ভাইয়াও আমাদের সাথে যাবে৷ ”
হায়াতের যাওয়ার কথা শুনে ঐশী চুপসে যায়, এই ছেলে যা ধমক দেয় ওর সাথে কোথাও যেতেই ভয় করে৷
ঐশী মেঘলার সামনে এসে বিরবির করে বলে,
— “হায়াত ভাইয়া যাবে? তাহলে আমার কি দরকার?”
হায়াত ধমক দিয়ে বলে,
— “এতো কথা বলিস কেন? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? যা গাড়িতে গিয়ে বস আমি আসছি৷ ”
ঐশী যাওয়ার আগে মেঘলা বাকা হেসে নেমে যায়, ঐশী যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখনই হায়াত হাত ধরে কিছু বলতে গিয়েও ঐশীর ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখ দেখে বাকা হেসে ছেড়ে দেয়৷
ছাড়া পেয়ে দৌড়ে নিচে এসে সস্থির নিশ্বাস ছারে৷
নিচে এসে মেঘলা ইচ্ছা করেই ব্যাক ছিটে বসে৷ হায়াত ড্রাইভিং সিটে বসে আছে ঐশী যখন ব্যাক ছিটে বসতে যাবে তখনই হায়াত ধমক দিয়ে বলে,
— “আমি কি তোদের ড্রাইভার নাকি? ”
মেঘলা বলে,
— “ঐশী প্লিজ ফ্রন্ট সিটে বস না আমার ওইখানে বসতে ভালো লাগে না৷ ”
ঐশী বিরবর করে মেঘলাকে কতগুলো বকে ফ্রন্ট ছিটে গিয়ে বসে৷
গাড়ি থেকে চলছে আপন গতিতে হায়াতের ভয়ে ঐশী চুপসে বসে আছে৷
হায়াত ঐশীকে বরাবরই পছন্দ করে কিন্তু ঐশী সব সময় হায়াত কে ভয় পায়, মেঘলা বসে হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনছে৷
বড় শপিংমলের সামনে গাড়ি থামতেই মেঘলা আর ঐশী গাড়ি থেকে বের হয় হায়াত গাড়ি পার্কিং করতে গেছে৷
মেঘলা ঐশীর সাথে দুষ্টামি করতে করতে শপিংমলের ভেতরে ঢুকবে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায়৷
সেই চিরোচেনা শরীরের ঘ্রান,
সেই স্পর্শ?
মেঘলা হকচকিয়ে উঠে পিছনে তাকাতেই কাউকে দেখতে পায় না৷
কতটা আশা নিয়ে পিছনে তাকিয়েছিলো হয়তো সে এসেছে কিন্তু ধারনা পুরোপুরি ভুল মেঘলার মামি হয়তো কিছু বুঝিয়ে ছেলেকে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছে৷
পুরোটা শপিংমল মেঘলা মন খারাপ করে রেখেছিলো, আর প্রতিটা সময়ই এদিক ওদিক তাকিয়ে ছিলো যদি সত্যি শোভন হয়৷
বাড়িতে এসেই দরজা বন্ধ করে বসে আছে অনেকবার হায়াত ডেকেছে কিন্তু কোনো সারা দেয় নি৷
সাওয়ারের ঝর্নার নিচে নিজের বেহায়া চোখের পানি আড়ালের জন্য ব্যাস্ত হয়ে আছে মেঘলা৷ আজ যেনো চোখের পানি বাধাই মানছে না এই তিন মাসের সব কষ্ট যেনো আজ প্রকাশ হচ্ছে৷
মেঘলা ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলে,
— ” ভালোবেসে ফেলেছি?
কেন এতো কষ্ট হয় তোমার জন্য?
কেন তোমার কথা মনে পরলে এতোটা কষ্ট অনুভব হয়?
কেন এমন অদ্ভুত অনুভূতি হয়? এ অনুভূতির নাম কি দিবো আমি? ভালোবাসা? নাকি মোহো? না এটা মোহো কি করে হতে পারে?
আজ যে তোমাকে পাওয়ার জন্য বেকুল আমি, তবে কি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়?
হ্যাঁ সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি নিজের থেকে অনেকটা বেশি, আজ তোমার স্পর্শ পেতে খুব ইচ্ছে করছে যে৷
তোমাকে জরিয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে, শোভন আমি তোমার #তিক্ত_ভালোবাসার মায়ায় ফেসে গেছি৷ খুব বাজে ভাবে ফেসে গেছি৷ আজ নিজের জন্যই নিজে তোমার থেকে এতোটা দূর আজ হারিয়ে খুজছি তোমায়৷
আমি যে চাই তোমায় শোভন, খুব করে চাই নিজের করে চাই৷
তোমার #তিক্ত_ভালোবাসার ভালোবাসা মেশানো শাস্তি গুলোকে আপন করতে চাই৷
কি করে আছো তুমি আমার থেকে দূরে?
আমি সত্যি আর পারছি না, কি করবো এটাও জানি না যে৷ ”
বলতে বলতে মেঘলা ডুকরে কেঁদে উঠে৷
মানুষ হয়তো এমনি যখন যে জিনিসটা নিজের কাছে থাকে তখন তার বা সে জিনিসটার মূল্য দেয় না৷
কিন্তু পরে ঠিকই সে জিনিসটা পাওয়ার জন্য বেকুল হয়ে উঠে৷ আজ মেঘলাও বেকুল হয়ে উঠেছে শোভন কে পাওয়ার জন্য, কিন্তু শোভন?
শোভন কি মেঘলা কে ভুলে গেলো?
প্রায় দুই ঘন্টা সাওয়ারের নিচে থেকে সব ঝাপসা হয়ে গেছে মেঘলার কোনো মতো ড্রেসটা পালটে দরজা খুলে বাইরে আসতেই শরীর আর সায় দিলো না নিচেই ঢুলে পরে গেলো৷
চলবে,