Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তাহার উম্মাদনায় মত্ততাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-৮+৯

তাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-৮+৯

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৮.
কাক ডাকা ভোর। বাহিরে কেবল আলো ফুটতে শুরু করেছে। সূর্যি মামার দেখা পেতে ঢের বাকি। গ্রামের দিকে সকাল নামে খুব আয়োজন করে। চারপাশ কোকিলের ডাকে মুখরিত হয়। লাল ঝুঁটি মোরগেরাও নামে প্রভাতের বার্তা ছড়াতে। গলা ছেড়ে ডাক ছাড়ে। এই একটা ডাকই যথেষ্ট সকাল হওয়ার খবর জানতে। অন্তি এবার গ্রামে এসে এই ব্যাপারটা খুব বেশিই উপভোগ করেছে। আজ ও সে বারান্দায় বসে সকাল হওয়া দেখেছে। কালো আকাশ ফুঁড়ে সাদা ঝলমলে আকাশকে বেড়িয়ে আসতে দেখেছে সে। কি দারুন সে দৃশ্য!
এই মুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে করতেই অন্তির মনে হলো তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। ঘুমের প্রকোপ এতটাই বেশি যে তার এই বারান্দাতেই হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়তে মন চাইছে।
রাতে দিহানের জন্য অপেক্ষার শেষে তার দু’চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে গিয়েছিল। শত তপস্যা করেও তা ফিরিয়ে আনতে পারেনি অন্তি। বরং পুরোরাত বারান্দায় বসে দারোয়ান রহমত চাচার বদলে সে বাড়ি পাহারা দিয়েছে। এই তো ভোর হওয়ার ঘন্টা আগের কথা। রহমত চাচা চেয়ারে বসে দিব্যি ঘুমোচ্ছিলো। অন্তি দিব্যি তার ভুষ ভুষ করে নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেয়েছে। সেই সুযোগ নিয়েই বাড়ির ভেতরে কেউ প্রবেশ করে। কুঠুরি ঘরের লাল টিমটিমে আলোতে অন্তি স্পষ্ট একটা ছায়া মানব দেখতে পেয়েছিল। অন্তি ফোনের ফ্লাস ফেলতেই তা বড় আম গাছটার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। এরপর ঘন্টাখানেকেও আর কিছু টের পায়নি সে। হয়তো কোনো এক ফাঁকে কেটে পড়েছে।

অন্তি সে ব্যাপারে একদম ভাবছে না। তার ভাবনা জুড়ে বিচরণ করছে দিহান। দিহান মির্জা। লোকটা মোনের সাথে সাথে মস্তিষ্কেও দারুন ভাবে আটকে আছে। দখলদারিতে ইংরেজদের হার মানাবে লোকটা। ইংরেজরাতো সম্পত্তি, ক্ষমতা দখলে নিতো কিন্তু এই ভয়ংকর মানব সরাসরি মোন ও মস্তিষ্কে দখলদারি চালায়।

রাতে দিহানের কল আসায় অন্তি আশ্চর্য বনে যায়। মানে সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। দিহান মির্জা তার ইগো রাগকে সাইডে ফেলে কল করেছে! এটা নিশ্চই যেন তেন ব্যাপার না। অন্তির অবাকের পর্ব শেষ হতে না হতেই কল কেটে গেল। অন্তি দু মিনিট বসে রইলো। এই কল আসে এই কল আসে করে পাক্কা এক ঘন্টায় ও কল আসলো না। অন্তি তখন বিছানায় গোল হয়ে বসে চাতক পাখির ন্যায় ফোনের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু পাষান মানবটা দ্বিতীয় বার কল দিলো না। অন্তি রাগে দুঃখে কেঁদে ফেলে। এমন হবে জানলে সে কল রিসিভ করতে একদমই দেরি করতো না। পরপর ফোন উঠিয়ে কল দেয় কাঙ্খিত মানবটিকে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ফোন সুইচড অফ। এরপর থেকেই থম মেরে বারান্দায় বসে সে। তার মতে দিহান হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে নিষ্ঠুর একজন পুরুষ। যার হৃৎপিণ্ডে চার প্রকোষ্ঠের বদলে রয়ছে একটি মাত্র প্রকোষ্ঠ। এজন্য তার মনে ভালোবাসা কম। দিহানের হৃৎপিণ্ডের সার্জারি করা দরকার। এই রোগ নিরাময় অতি শিঘ্রই হওয়া দরকার।

______________

সকালে দিহান যখন জানতে পেরেছে তার দলের ছেলেকে মারা হয়েছে; শুনতেই সে তৎক্ষণাৎ পরশকে কল করে। মাথায় তার রক্ত উঠে গেছে যেন। কপালের পাশের রগ ফুলে উঠেছে। ফর্সা কপালে দৃশ্যমান নীল রগ একটু বেশিই ভয়ংকর ঠেকছে যেন।
পরশের সাথে ঝামেলাটা দিহানের ব্যক্তিগত। ব্যক্তিগত ঝামেলা বাহিরে এলে সেটা সে একদম সহ্য করবে না।

‘দিহান মির্জা? শহরের বাঘ হঠাৎ আমায় কল করলো কি মনে করে?’

পরশের সূক্ষ্ম খোঁচা আঁচ করতে পেরেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো দিহানের। দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করে শুধালো,

‘আমার সাথের ঝামেলা পার্সোনালি হ্যান্ডেল করার জন্য বলেছিলাম! আমার ছেলেদের আঘাত করে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছিস?’

‘এটাই যে বাঘ রূপে থাকা দিহান আসলে একটা হুলো বিলাই। আসল বাঘ তো এখানে!’

দিহান চুপ করে শুনলো। তার সাদা মুখ খানা রাগের কারণে লাল হয়ে এসেছে। নাকের পাটাতন ফুলে উঠছে। শক্ত চোয়ালটা আরো কঠিন হয়ে এলো। রাগ দমিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

‘এতোই যখন ক্ষমতা তাহলে পেছন থেকে চাবুক কেন ছুঁড়ছিস? সামনাসামনি আয়। আসল নকলের ফারাকটা না হয় তখন বুঝিয়ে দিব।’

জবাবে পরশ হাসলো। দিহানের সাথে সকল দেনা পাওনা পরিশোধের সময় এসেছে।
.
.
অন্তিরা আজ ঢাকায় ফিরবে। তাদের পার্সোনাল গাড়িতে করেই ফিরবে। বারোটার দিকে নাহার মেয়েকে টেনে তুললেন। অন্তি তখনো ঘুমে ঢুলছে। মেয়ের উপর যথেষ্ট বিরক্ত নাহার। বিছানায় এলোমেলো হয়ে বসে থাকা অন্তিকে একবার দেখে নিয়ে বললেন,

‘ঝটপট ফ্রেশ হয়ে সব গুছিয়ে নে। নয়তো এভাবেই ফেলে রেখে চলে যাব।’

‘কোথায় যাবে?’

‘তোর বাপের বাড়ি।’

মায়ের কথায় অন্তি বড় করে হামি দিলো। চোখ ঢলতে ঢলতে ঘুম জড়ানো গলায় বললো,

‘আমার বাপের বাড়ি তুমি কেন যাবে? তোমার বাপের বাড়িতে তুমি থাকো। আমি আমার বাপের বাড়িতে যাচ্ছি।’

সকাল থেকে নাহারের মন মেজাজ বেজায় খারাপ। এতদিন বাদে বাবার বাড়িতে এসে আবার দুদিনের মাথায় ফিরে যাচ্ছে। আবার কত বছর পর আসা হবে জানা নেই। এতদিন পর বাপের ভিটায় পা রেখে যতটা শান্তি লেগেছিল এখন বিদায়ের সময় ততটাই বিতৃষ্ণা লাগছে। তাছাড়া বাবা মায়ের বয়স হয়েছে কখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যান বলা যায় না। এসব ভাবতেই তার চোখে জল জমে। তার উপর মেয়ের এমন কথায় যেন গায়ে আগুন লেগে গেল। মুহূর্তেই চেঁচিয়ে উঠলেন মেয়ের উপর।

‘খোটা দিচ্ছিস? তোর বাপের বাড়িতে কি আমি তোদের হাত পা ধরে ঝুলে থাকি? নাকি ওখানে না গেলে মরে যাবো আমি? যাবো না তোর বাপের বাড়ি। দেখি কিভাবে থাকিস। যত বড় মুখ না তত বড় কথা!…’

অন্তির ঘুম মায়ের চিৎকারের সাথে সাথেই এ পাড়া থেকে পালিয়েছে। অন্তিও দ্রুত বেড থেকে‌ নেমে ওয়াশরুমে ছুটেছে। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে দারুন ভাবে ফেঁসে গেছে সে। মায়ের স্বভাব তার খুব জানা আছে। দেখা গেলো সত্যিই ঢাকায় ফিরলো না। তখন কি হবে? অন্তির মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে এলো। মন চাইলো নিজের চুলের মুঠি ধরে টানতে আর সবার কাছে বলতে ,’আমি হলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গাধা।’

অন্তির ভাবনাকে ভুল করে নাহার গোছগাছ করে নিচে নামলেন। গাড়িতে ওঠার আগে আধ ঘন্টার মতো বিদায়ের কান্নার পর্ব চললো। অন্তি খুব মনোযোগ দিয়ে সবটা দেখলো। তার মামা পর্যন্ত বোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তার ও কি দিহানের বাড়িতে যাওয়ার সময় কান্না পাবে? বাবা মা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলবে! তৎক্ষণাৎ অন্তির ভেতর সত্তা বলে উঠলো,’আর ইউ কিডিং মি! কান্না? দিহানের কাছে যাওয়ার কথা‌ শুনলেতো তুমি ধেই ধেই করে নাচ শুরু করবে। কান্নার সময় পাবে কই?’
অন্তি সম্মতি দিতে পারলো না। এতটাও নির্দয় সে না হুহ!

গাড়ি চলতে শুরু করেছে। গ্রামের ইটের রাস্তা ছেড়ে গাড়ি পিচঢালা রাস্তায় উঠেছে। নাহার গাড়িতে ওঠার দশ মিনিটের মাথায় ঘুমিয়ে পড়েছে। এটা তার অন্যতম স্বভাব। গাড়ি চলতে শুরু করলে সে কিছুতেই ঘুম ধরে রাখতে পারে না। অন্তির এই অভ্যাস নেই। গাড়িতে থাকা কালিন পুরোটা সময় সে জেগে জেগে আশপাশ দেখতে থাকে। ঐ যে ছুটতে থাকা গাছে সারি, দালান এগুলো ভিষণ ভালো লাগে তার।
এত কিছুর মাঝে অন্তি দিহানের কথা একদম ভোলেনি। লোকটা যে গত রাতে ওমন কান্ড করলো তার জন্য অন্তি কিছুটা ক্ষেপে আছে। সেই রাগ থেকেই অন্তি দিহানকে ম্যাসেজ করলো।

‘আপনি কি জানেন আপনি ভিষণ রকম একটা অসহ্য ক্যারেক্টর?’

ম্যাসেজটা সেন্ড করে দুদন্ড সময় নিলো। পরপর আবারো টাইপ করলো,

‘আমি নেহাৎ ভালোবাসার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছি নয়তো আপনার মতো পাথুরে মানবকে ইঁদুর ছুঁচো ও পাত্তা দিত না।’

‘অসহ্য লোক!’

অন্তি ভেবে নিয়েছিল এসব ম্যাসেজ দেখার মতো সময় বা সূযোগ কোনোটাই দিহানের হবে না‌। ব্যস্ত মানুষ কিনা!
কিন্তু দিহান দেখলো। রিপ্লাই ও করলো তৎক্ষণাৎ।

‘দ্যাটস্ মিন ইঁদুর ছুঁচোর মাথায় ও তোমার থেকে বেশি ঘিলু আছে!’

লোকটা তার বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে! এটা ভিষণ অপমান জনক কথা হলেও অন্তি রাগ করলো না। দিহান রিপ্লাই করেছে এতেই খুশি সে। লাজুক হেসে রিপ্লাই দিলো,

‘এত্তগুলা ভালোবাসা ভিলেন সাহেবকে। আর কাল রাতের ভুলের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করা হলো।’

দিহানের চোখ কুঁচকে এলো। কাল রাতে সে কি করেছে যার জন্য ক্ষমা করবে মেয়েটা তাকে? ব্রেইনে কিঞ্চিত চাপ প্রয়োগ করলেও কিছু মনে করতে পারলো না। বেশি ঘাটলো না সে। কি জানি কোন ব্যাপারে নিজে রাগ করে আবার নিজেই ক্ষমা করেছে পাগলটা!

চলবে………

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৯.
কলেজে যাওয়ার পথেই আজ‌ ঝুপ করে বৃষ্টি নেমেছে। হঠাৎ করে নামা বৃষ্টিতে হঠাৎ করেই কেমন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে আকাশ। যেন কালো চাদরের আবরণে ঢেকে দেওয়া হয়েছে আকাশকে। অন্তি ছাউনির নিচে দাঁড়ালো। তন্নিটা এখনো আসেনি। ফোন বের করে কল দিতেই রিসিভ করলো।

‘কোথায় তুই?’

তন্নি মন খারাপ করে জানালো,

‘বাড়িতে। আজ আর বের হতে পারব না। মা বলে দিয়েছে এই বৃষ্টিতে কোথাও না যেতে।’

অন্তি ছোট করে শ্বাস ফেলল।‌ তন্নি মায়ের বাধ্য মেয়ে। মায়ের কথার বাহিরে একটা বর্ণ বলতে পারে না। সেখানে বাহিরে বের হওয়া তো দূরের কথা। তন্নির মন খারাপ বুঝে অন্তি হেসে উড়িয়ে দিলো।

‘কোনো ব্যাপার না। আজ যদি ভিলেন সাহেবের সাথে আমার প্রেমটা হয়ে যেত তাহলে ক্লাস বাঙ্ক দিয়ে চুটিয়ে প্রেম করা যেত! কিন্তু আফসোস!’

অন্তির মুখে দিহানের কথা শুনতেই তন্নির নুহাশের কথা স্মরণ হলো। মুহূর্তেই তার চোখে মুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। অন্তিকে বললো,

‘দোস্ত তুই শিউর তুই দিহান ভাইয়াকে হ্যান্ডেল করতে পারবি?’

অন্তি কপাল কুঁচকালো।

‘পারবো না কেন? আলবাত পারবো।’

তন্নি কিছু বললো না। তার চিন্তা এখন আকাশ ছুঁয়েছে। এই যে নুহাশ নামক গুন্ডা মানবটা অকারণেই তাকে আসামির ন্যায় ট্রিট করছে এটার কি সমাধান করবে সে? অন্তি দিহানকে নাহয় ভালোবাসা দিয়ে সামলাবে কিন্তু সে কিভাবে ঐ দানবীয় মানুষটার থাবা থেকে নিজেকে বাঁচাবে?

বৃষ্টি থামার নাম নেই। আশপাশে আজ কোনো রিকশা বা ট্যাক্সিও নেই। অন্তি কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। এমন হাঁটু জল ভেঙে কলেজে যাওয়ার কোনো মানে নেই। দিহান নিশ্চই এই বৃষ্টির মধ্যে মোড়ে বসে থাকবে না। সো যাওয়া ক্যান্সেল। এর থেকে বৃষ্টি উপভোগ করতে করতে বাড়িতে ফেরা ঢেড় ভালো। এতসব ভেবেই অন্তি পা বাড়িয়েছে সবে ছাউনি থেকে বের হবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার আগেই একটা শক্ত হাত তাকে এক টানে পূর্বের জায়গায় এনে দাঁড় করালো। গমগমে কন্ঠে বললো,

‘স্টে স্টিল!’

অন্তি ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো। আধভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দিহানকে দেখতেই তার চোখ জ্বলে উঠলো। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার দরুন গায়ের কালো রঙের শার্টটা শরীরের সাথে এটে আছে। মাথার চুলগুলো ও লেপ্টে পড়েছে। অন্তি গভীর চোখে তাকালো। তার চোখ জোড়া যে তাদের লজ্জা হারিয়েছে! দিহান অন্যদিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,

‘চোখ সরাও। এভাবে তাকাবে না।’

এবার অন্তি লজ্জা পেলো। চোখ সরিয়ে নিল। মুখে এসে পড়া চুলগুলো হাত দিয়ে কানের পেছনে গুজে নিলো। দ্বিতীয়বার দিহানের দিকে তাকানোর মতো সাহস হলো না তার। আর না পারলো মুখ ফুটে কিছু বলতে। তবে তার ভাবনারা খান্ত হলো না। দিহানকে নিয়ে মনের কোণে এতশত প্রশ্ন জমতে শুরু করেছে। অন্যদিনের থেকে লোকটাকে কিছুটা ব্যতিক্রম লাগছে যেন।

দিহান আড় চোখে একবার অন্তিকে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে নিরবে হাসলো যেমন।

বৃষ্টির প্রকোপ বেড়েছে। হঠাৎ আগমনের বৃষ্টির এমন দীর্ঘ সময় স্থায়িত্ব কাম্য ছিলো না কারো। ঠান্ডা বাতাসে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে শীতল বাতাস বইছে। অন্তি তার হাত দ্বারা দু বাহু শক্ত করে চেপে রেখেছে। দিহান সেদিকে একবার দেখেই পকেট থেকে সেলফোন বের করে কাউকে কর করলো।

‘পাঁচ মিনিটের মাঝে গাড়ি নিয়ে মসজিদের অপজিটে ছাউনির ওখানে চলে আয়। ফাস্ট!’

দিহানকে ফোনে কথা বলতে দেখলেও কথা শুনতে পায়নি অন্তি। তার মুখটা এতটুকুন হয়ে আছে। এত কাছে থেকেও লজ্জার জন্য সে মানুষটার সাথে কথা বলতে পারছে না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়? এই লজ্জা নামক ইমোশন টা যথাসম্ভব দূর করতে হবে। এই ইমোশন তার চাই না।

কেটে গেল দু মিনিট। অন্তি হাঁসফাঁস করছে কথা বলার জন্য। বারবার এদিক ওদিক তাকিয়ে কথা বলার একটা কিছু খুঁজে চলছে। কিন্তু সে কোনো টপিক পাচ্ছে না। অবশেষে টপিক বাদে হুদাই আলাপ করার সিদ্ধান্ত নিলো।

‘শুনছেন?’

দিহান শুনলো না। ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। অন্তি জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে আবারো বললো,

‘এই যে শুনছেন?’

দিহান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। কপালে ভাঁজ ফেলে ভ্রু নাচিয়ে কি হয়েছে জানতে চাইলো। অন্তি খুব আগ্রহ নিয়ে বললো,

‘আপনি কখনোই আমার নাম জানতে চাননি। এর কি কারণ?’

দিহান পূর্বের ন্যায় ফোনে তাকিয়ে অকপটে উত্তর দিলো,

‘ বিকজ আ’ম নট ইনট্রেস্টেড!’

অন্তির হাসি হাসি মুখটাতে আবারো আঁধার নেমে এলো। চোখ গুলোতে কোনো বার্তা ছাড়া আগমন নেওয়া বৃষ্টির মতো করেই জলে ভরে উঠলো। লোকটা অকপটে তাকে অপমান করে। আবার কেয়ার ও দেখায়। পাইছে টা কি? তার কি কোনো মর্জাদা নেই? এতই ফেলনা নাকি! তিক্ত অনুভূতিতে ধরে এলো মন। পাশেই কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা মানবটার জন্য তৈরি হলো পাহাড় সমান অভিমান। অন্তির চোখ মুখ কঠোর হলো। তৎক্ষণাৎ তার ফোনে ছাকা দিহানের নম্বরটা ব্লক লিস্টে যুক্ত করলো। একদিন মানুটাকেও এভাবে তার মনের ব্লক লিস্টে আবদ্ধ করে নিবে। তারপর গালা দিয়ে মনের দরজায় সিল করে দিবে।

বৃষ্টি পুরোপুরি ভাবে না থামলেও তান্ডব কমে এসেছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। সাথে মৃদু বাতাস। অন্তির আর দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হলো না। ওভাবেই নেমে পড়লো ছাউনি থেকে। দিহানের কপালে ভাঁজ দৃঢ় হলো। কঠোর গলায় বললো,

‘মেয়ে ভেতরে দাঁড়াও। ভুলেও ভিজে যাওয়ার মতো সাহস করবে না। পা ভেঙে রেখে দিব।’

অন্তি কথাগুলো শুনলো। কিন্তু কোনো অনুভূতি আজ আর তাকে ছুঁতে পারলো না। না সামান্য ভয় তাকে কাবু করতে পারলো। তার মন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। দিহানকে উপেক্ষা করে বাড়ির পথে পা বাড়ালো। বৃষ্টির জলের সাথে চোখের জল মিশে একাকার হলো। দিহান অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা তাকে উপেক্ষা করলো! কই আগে তো করেনি! তবে আজ কেন? চোখ দুটো জ্বলে উঠলো যেমন। হাতের মুঠো শক্ত হয়। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে অন্তি চলে যাচ্ছে। ঐ তো একটু বাদেই চোখের আড়াল হলো বলে!

____________

বিকেল হতেই এক দারুণ ঘটনা ঘটে। সকালের ঘটনার জন্য দিহান তখনো প্রচন্ড ডিস্টার্বড্। মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। নুহাশ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে দিহানের কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘দোস্ত তোর জন্মের সময় হয়তো মৌয়ালরা মধুর চাক কাঁটা থেকে বিরতি নিছিলো। এজন্য আন্টি তোর মুখে মধু দিতে পারে নায়। তাই আমি ভাবছি প্রতিদিন তোকে একটা করে মিষ্টি খাওয়াবো।’

দিহান বিরক্ত চোখে তাকালো। সিগারেট ধরাতে নিলে নুহাশ তা ছো মেরে নিয়ে নেয়।

‘আগে মিষ্টি! তারপর সিগারেট।’

নুহাশের জোর জবরদস্তির শিকার হয়ে দিহান হাল ছেড়ে দিলো। তাদের মহল্লার বেষ্ট মিষ্টির দোকান হচ্ছে জমজম মিষ্টা মহল। দোকানের মালিক একজন মহিলা। পঞ্চাশ প্রায় বয়সে এসেও চটপটে ভাবে কাজ করে। মিষ্টির স্বাদ ও মুখে লেগে থাকার মতো। তারা দোকানে ঢুকতেই মহিলা চওড়া হাসলো।

‘কত্তদিন পর দেকলাম তোমাদের। কেমন আছো বাবারা?’

শুদ্ধ আর চলিতর মিশ্র ভাষাটা নুহাশের দারুণ লাগে। সেও চওড়া হেসে বলে,

‘এই তো ভালো চাচি। গরম গরম গলাপজাম হবে?’

‘দিতাছি বসো।’

খাওয়া শেষে বিলের সময় ঘটনাটা ঘটলো। দিহান বিল দিতে গেলে মহিলাটা বললো,

‘তা বাবা বউমা কেমন আছে?’

দিহান মুচকি হাসে। বলে,

‘এখনোতো বিয়ে করলাম না চাচি।’

মহিলা হাসে।

‘যাই বলো তোমার ফেন্সি কিন্তু দেখতে মাশআল্লাহ। আমার দোকানের মিষ্টির থেইকেও মিষ্টি।’

দিহান ভ্রু বাঁকায়।

‘ফেন্সি?’

মহিলা অবাক হয়ে বলে,

‘আরে ফেন্সি! হবু বউ! ওইটা ইংরেজি কতা।’

দিহান মুচকি হাসে। দোকানি কার কথা বলছে বুঝতে বাকি নেই তার। এই মহল্লায় এমন সাহস কেবল একজনেরই আছে। সেই একজনটা হচ্ছে তার শ্যামকন্যা।

দোকানি আবারো বলে,

‘বউমা জিলাপি নিয়া গেছিলো। বলছে তুমি দাম দিবা। তোমাকে বলে নাই?’

দোকানির কথায় দিহানের চোখ ছোট হয়ে আসে। মেয়েটা আজকাল তার নাম করে মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি ও নিয়ে যাচ্ছে! ইমপ্রেসিভ!
দিহান ঠোঁট কামড়ে হাসে। বিয়ে না করা বউ তার বেশ ভালো লেগেছে। তার বউয়ের উপর তার তো কিছু দায়িত্ব আছে! এখন থেকে দায়িত্ব গুলো খুব সুন্দর ভাবে পালন করবে সে। কোনো কৃপনতা চলবে না। দিহান মির্জা তার দায়িত্ব পালনে কখনো কৃপনতা করে না।

‘চাচি আপনার বউমা আবার এলে তার যা দরকার হয় দিবেন। টাকা আমি দিয়ে দিব। কেমন?’

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ