তার_ইচ্ছে
পর্ব_১_২
#মাসুদ_রানা_তাসিন
ধবধবে সাদা পিঠ দেখিয়ে কি নিজেকে, পুরুষের আকর্ষণের কেন্দ্র করতে চাস। আর কতজন কে আকর্ষিত করবি। এর থেকে রাস্তায় নেমে যা। তাহলে খদ্দের পেয়ে যাবি। কোন কোন দিন একসাথে দুই, চার জন পেয়ে যেতে পারিস। এটা তো চাস তুই। (সাবিত)
আর কিছু বলার আছে আপনার। যদি না বলার থাকে তাহলে চলে যান। আমি কেমন করে থাকি তাতে আপনার কি। আরেকটা কথা সাবিত চৌধুরী আমার বিষয়ে নাক না গলিয়ে হবু বউয়ের কথা ভাবুন। (আলো)
চুলের মুঠি ধরে ফেললাম, কি বললি তোর তো সাহস কম না। আমার বাড়ি থেকে আমাকে যেতে বলছিস। তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস, আমাদের বাড়ির আশ্রিতা তুই। আমাদের বাড়িতে থাকতে কোন বিপদ হলে সব আমাদের ঘাড়ে আসবে। (সাবিত)
সত্যিই কি আমি আশ্রিতা সাবিত দা। হতে পারি না হলে কি আর হবে। চিন্তা করবেন না বেশিদিন আর এই আশ্রিতার দায়িত্ব পালন করতে হবে না। (আলো)
আহ কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে নাকি যে যাবি। (সাবিত)
না থাকলে রাস্তায় নেমে যাব তোমার ভাষায়। সমস্যা নেই, কাল আপনার বিয়ে যান ঘুমিয়ে পড়ুন। কাল হয়ত বেশি ঘুম নাও হতে পারে। (আলো)
বেশি কথা বলিস না। তুই কি সত্যিই চাস যে বিয়েটা আমি করি। (সাবিত)
আমার চাওয়া আর না চাওয়ায় কি এসে যায়। প্লীজ কোন অতীত মনে রাখবেন না। অতীত কাউকে সুখে থাকতে দেয় না। দেখুন না বাবা মা যদি বর্তমানে বেঁচে থাকত তাহলে আমাকে আশ্রিতা হয়ে থাকতে হত না।(আলো)
এই চুপ কর তোর এই ন্যাকামি ভাষন শোনার ইচ্ছে আমার নেই। থাক কাল আবার ঢেং ঢেং করে বিয়েতে যাস না। তোকে আমার একদম সহ্য হয় না। (সাবিত)
আচ্ছা যান ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি ঘুমাব। কাল সকালে অনেক কাজ আছে। সাবিত দার বিয়ে বলে কথা। (আলো)
কিছু না বলে চলে আসলাম। এই মেয়েটা কি বুঝতে পারে না। যে আমি তাকে ভালবাসি এটা কি ও বুঝতে পারে না। ওর কি সত্যিই আগের সব নাটক ছিল। ঘুমিয়ে পড়ি কাল নাহয় দেখা যাক কি হয়। (সাবিত)
বাবা,মা কেন আমাকে একা করে চলে গেলে। কেন আমাকে মামার ঘাড়ে দিয়ে গেলে কেন কেন। কোথায় যাব আমি, কোথাও যাওয়ার কি জায়গা আছে আমার। আর ভাবতে পারছি না। তবে এই জায়গা ছেড়ে চলে যাব। না হলে কেমন করে তার সংসার দেখব। (আলো)
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে, টেবিলে সার্ভ করেই রেডি হয়ে আসল আলো। ছোট ফুপি ছোট ফুপি কোথায় তুমি। তোমার দেরি করে খেলে সুগার বেড়ে যাবে। চাচা চাচী আজ যে তোমাদের বাড়িতে বিয়ে সে কি মনে আছে। আবির দা সাবিত দা রিয়া কোথায় সবাই খেয়ে নাও। তোমাদের খাবার টেবিলে দিয়ে দিলাম। বলেই চলে আসলাম। (আলো)
কিছুক্ষণ পর আবির দা আমার ঘরে আসলো। ওহ আবির ও সাবিত দু’জনেই টুইন।
আলো এটা কি করছিস। তুই কি ভাইকে ছেড়ে থাকতে পারবি। আর যা হয়েছে তা কি ভুলে যেতে পারবি। (আবির)
আবির খারাপ মেয়েরা সব কিছুই করতে পারে। পাশ থেকে সাবিত বলে উঠল।
আবির দা আমি এসব বিষয়ে কথা বলতে চাই না। আর বিয়ে শেষ হলে এই খারাপ মেয়েকে দেখতে হবে না। কারণ ওয়াদার বরখেলাপ করতে পছন্দ করে না আলো। আর যাই হোক কারো আশ্রিতা হয়ে থাকবে না। (আলো)
ওহ তাহলে কোথায় যাবি বোন। কিছু কি ভেবেছিস । (আলো)
দেখ আরো কাউকে জুটিয়ে ফেলেছে। এদের মত মেয়েরা সব করতে পারে। (সাবিত)
আপনারা এখন যান এখান থেকে। আমি পোশাক বদল করব। বলেই ঘর থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলাম। কারণ আজ এই বাড়িতে খুশির দিনে কাউকে আমার কান্না দেখাতে চাই না।
এই আলো ওয়াদা ভুলে যাস না। ওয়াদা ভঙ্গ করা মসজিদ ভাঙ্গার সমান। আর যেটুকু স্মৃতি আছে তা দিয়ে বাকি জীবনটা না হয় কাটিয়ে দিবি। (মনে মনে)
বিকেলে যথারীতি সবাই চলে গেল বিয়ে বাড়িতে। যেহেতু রাতে গুছিয়ে রেখেছিলাম। তাই বেরোতে সমস্যা হবে না। আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
কোথায় যাচ্ছিস আলো। এভাবে পালিয়ে যাচ্ছিস কেনো। (রাবেয়া খাতুন) সাবিতের মা।
তোমাদের কিছু নেই নি, ছোট মা। চলে যাচ্ছি এখানে থাকলে কষ্ট বাড়বে ছোট মা। তোমার ছেলেকে শান্তি তে যে সংসার করতে হবে ছোট মা। (আলো)
এটা উত্তর না। কোথায় যাবি, আর কেন বা যাবি। (রাবেয়া খাতুন)
জানিনা তবে ঠিক হয়ে যাবে। আপাতত ঢাকা যাব। বলেই বেরিয়ে আসলাম। (আলো)
গাজীপুর থেকে ঢাকামুখী হচ্ছি হয়ত নতুন করে বাঁচার জন্য।
চলবে,,,,,,
#তার_ইচ্ছে
#পর্ব_২
#মাসুদ_রানা_তাসিন
গাজীপুর থেকে ঢাকামুখী হচ্ছি হয়ত নতুন করে বাঁচার জন্য।
ঢাকায় তো নামলাম, কি করব এখন। কোথায় যাব, কি করব, কিছু ভাবতে পারছি না। আল্লাহ আমি কোন পাপ করেছিলাম, যে এমন বিপদের মুখে পরছি বারবার। সব হারিয়ে তো আজ নিঃস্ব।
আত্মহত্যা যদি পাপ না হত। তাহলে হত আজ এই ব্রীজ থেকে লাফিয়ে নদীতে ডুবে যেতাম। কিন্তু কি করব মৃত্যুও হয়ত আমাকে চায় না। সন্ধ্যা। হয়ে আসছে চারদিকে তো অন্ধকার হয়ে আসছে। কোথায় যাব আমি।
পাশেই একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। এক ভদ্রলোক মধ্যবয়সী বেরিয়ে আসল। এই যে।
আমাকে বলছেন কি।
> এখানে কি তুমি ছাড়া অন্য কেউ আছে। কত লাগবে। দেখে তো মনে হয় নতুন। কত লাগবে, দশ দেব বউ পাঁচ দিন বাড়িতে নেই।
কি বলছেন এসব। মাথা খারাপ নাকি আপনার। দেখতে তো বাবার বয়সী। লজ্জা করে না আপনার।
> চুপ ……. ডেমাক দেখে তো মনে হয়। চল বিছানায় আরো বেশি দেব। তোদের মত মেয়েদের চেনা আছে।
ভাষা সংযত করুন। একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকলেই যে প্রষ্টিটিউট হবে, এটা কেন ভাবেন। নিজের তো মেয়ে আছে সব মেয়েকে তো মেয়ের চোখে দেখেন।
> ঢং না করে বল কত লাগবে। চল , বেশি দেব সমস্যা নেই। বলেই হাত ধরে টানতে লাগলো।
সাহস দেখে অবাক হয়ে গেলাম। সাহস তো কম না আপনার। আপনি আমার হাত ধরার দুঃসাহস দেখালেন। দুইটা ঠাস ঠাস ঠাস ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম। বাবার বয়সী চাচা বললাম কানে যায়নি। না আরো কয়েকটা লাগবে। একটা মেয়ে এভাবে রাস্তায় হেঁটে গেলে। যে সে বেশ্যা বা পতিতা হবে সেটা ভাবেন কেন।
লোকটি কিছু না বলে চলে গেল। পেছনে থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলল কি হয়েছে বোন।
আমি খুলে বললাম। মেয়েটা অভয় দিয়ে বলল। তার সাথে যেতে। তার বড় ভাই, ভাবী আর সে থাকে। আমি শুধু রাত টা থাকার জন্য যাচ্ছি। না জানি এই বয়সে আর কত বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
মেয়েটার সাথে যাচ্ছি কোন বিপদ কি হবে। ভেবেই কুল পাচ্ছি না। আজ বড্ড মনে পড়ছে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সেই উক্তিটি
>>”যাকে কোনোদিন কেউ রাখেনি কোনো গৃহের আশ্রয়ে
ভালোবেসে বুকে নিয়ে চিরকাল তাকেই বলেছি প্রেম
প্রিয়তম তীর্থভূমি”।<<
*********
অন্যদিকে মাঝপথে সাবিত আবির কে বলছে।
আবির এই মুহুর্তে তুই একমাত্র আমাকে বাঁচাতে পারিস। ভাই তুই তো জানিস আমি আলো কে ছাড়া বাঁচব না। গাড়ি টা থামা আমি নেমে যাব। বিয়ের সমস্যা মিটে গেলে আমি চলে আসব।
>> কিন্তু দা, এখন আমি বাবাকে কি বলব জানিস তো, বাবাকে বাড়ির সবাই কেমন ভয় পায়। আমি কি করবো বল। আচ্ছা নেমে যা। যা হওয়ার হবে তার ইচ্ছে তেই।
আচ্ছা বাড়িতে সব সামলে নিস। আমি দিন পনের পরে ফিরে আসব। আর আমার নতুন নাম্বারে ফোন দিস। আচ্ছা তোরা যা।
****
রিয়া আবির কে ফোন দে, এত দেরী করছে কেন সাবিতের ফোন বন্ধ। আমার এবার খুব টেনশন হচ্ছে। (আসীম চৌধুরী)
রিয়া : আচ্ছা ঠিক আছে। ফোন করছি, বলেই ফোন বের করে ফোন করল।
হঠাৎ আবিরের ফোন বেজে উঠলো। আবিরের এতক্ষণে ঘোর ভাংল । কিন্তু কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আবিরের ও হয়েছে তাই। তবুও ফোন রিসিভ করে ফেলল।
>> হ্যালো, ভাইয়া তোরা কতদুরে আছিস। বাবা খুব টেনশন করছে।
>>} বোন সমস্যা হয়েছে, ভাইয়া পালিয়েছে। ভাইয়া ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে নেই, হাওয়া হয়ে গেছে। কি হবে এখন, আমি ভেবে পাচ্ছি না।
>>যা হওয়ার হবে তুই তাড়াতাড়ি আয়।
******
আলো সহ মেয়েটা একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কলিং বেল চাপ দিতে দরজা খুলে গেল।
একটা মহিলা এই বজ্জাতের হাড্ডি এক থাপ্পর দিয়ে দাঁত ভেঙে দেব। তোকে তো বলা হয়েছে মাগরিবের আগে বাড়িতে চলে আসবি। দেখ রিশা তোর জন্য তোর ভাই আমাকে কতটা বকা দিয়েছে।
রিশা : উফ মিসেস আজাদ আপনি একেবারেই ড্রামাকুইন। দেখেন এক মেয়ে বিপদে পড়েছে তাই দেরি হয়েছে।
তোমার সাথে তো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই মেয়ে তোমার নাম কি?
আমি আমার নাম বললাম “আহিয়া জান্নাত আলো”।
নাম টা ভারি মিষ্টি। তোমার কিসের বিপদ শুনি একটু।
রিশা : ভাবী সামনের রাস্তায় ব্রীজ আছে সেইখানে দাঁড়িয়ে ছিল। একজন কুপ্রস্তাব দিচ্ছিল। মধ্যবয়সী সেই জানোয়ার টাকে কঠিন শিক্ষা দিয়েছে। যাওয়ার জায়গা নেই তাই নিয়ে এসেছি।
ভালো কাজ করেছ আমার ননদীনি। যাও আলোকে নিয়ে তোমার রুমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করো। তোমার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর তোমার ভাইয়া সহ এই মেয়েটার কথা রাতে শুনব।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,