তবু আছি কাছাকাছি (Doctors love) Part:02

0
4407

#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love) ?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_2
?
.
.
সুমু কেবিনের দরজাটা খুলতে নিলেই চমকে উঠলো পিছন থেকে একজনের ডাকে! পিছন ফিরে এক নার্সকে দেখে জিজ্ঞাসা করলো কোন সমস্যা কিনা! নার্স সুমুকে কিছু ওষুধের কথা বলে। আর তাই কেবিনে না গিয়ে ওষুধ আনতে সুমু আবার উল্টো পথ ধরে।
.
এদিকে সাদি সুমুর মার সাথে অল্প কিছু কথা বলে বেরিয়ে পড়ে। দুইজন কাছাকাছি থেকেও সাদি বুঝতে পারলো না তার অনুভূতি জাগানো কন্যার নাম বা পরিচয়!
.
সুমু তার মায়ের পাশে বসে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে! আর মায়ের সাথে অল্প অল্প কথা বলছে। যদিও সুমু কমই বলছে, ও শুধু ওর মায়ের কথা শুনছে।

মাঃ জানিস সুমু! আজ একটা ডাক্তার এসেছিল। অনেক ভালো মনের! সে ও হয়তো একজন হার্ট সার্জন। আমি এক নার্সকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। অনেক সুন্দর দেখতে। ছেলেটার কথা শুনে মনে হয়ে হলো আমাকে চেনে!

—কি জানি মা! আমি জানি না। এমনকি আমি তো দেখিওনি কাউকে তোমার রুমে।

মাঃ হ্যাঁ। তখন তুই ছিলি না। নার্স ছিল।

—হুম। আম্মু একটু বসো। আমি তোমার একটা ওষুধ নিয়ে আসি। একটুপর আব্বুও চলে আসবে। ভাইয়া ভাবী আর আব্বুকে আনতে গেছে।

মাঃ আচ্ছা।
.
আজকের সব সিডিউল ফিনিস করে সাদি ৩০৪ নাম্বার কেবিনের উদ্দেশ্যে বের হলো। প্রায় পৌছেই গেছে এর মধ্যে সুমুও কেবিন থেকে বের হবে আর সাদি কেবিনে ঢুকবে! ব্যস! হয়ে গেলো এক ছোটখাটো সংঘর্ষ। যার দরুন সুমু পরলো সাদি উপরে। সুমু তৎক্ষনাত উঠে পরলো আর সাদিকে দুঃক্ষিত বলল, যদিও ওর চেনা নয়।
.
আর সাদি তো এখনো নিচে পরে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে। সুমু বিষয়টা লক্ষ্য করে হাত বাড়িয়ে দিল সাদির উদ্দেশ্যে। সাদিও সুমুর হাত ধরে উঠে পরলো।
.
এর মধ্যেই পাশে থেকে একজন নার্স বেশ উত্তেজনা নিয়ে বলে উঠলো,

নার্সঃ ধ্যাত! কই ভাবলাম অনেকক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকবে আর হাওয়া থেকে গান বাজবে! কি থেকে কি হলো।
.
নার্সের কথা সাদি আর সুমু দুইজনের কানেই স্পষ্ট গেল। সুমু বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

—এটা কে কি আপনার স্টার জলসার সিরিয়াল মনে হয়! যে আধা ঘন্টা ধরে তাকাইয়া থাকবে আর হাওয়া থেকে গান আসবে?

নার্স সুমুর কথা শুনে অতিদ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। সাদি বেশ মজা পেয়েছে সুমুর জবাবে। তাই তখন থেকে তার মুখে হাসি লেগেই আছে।
.
সুমু একটা হাফ ছেড়ে আবার সাদিকে সরি বলল। আর একটু সম্মান ও দিল। কেননা তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে এখানের একজন ডক্টর। সাদি মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিল। আর সুমু চলে গেল বাইরে!
.
সাদি একজন ডক্টর। তাই যতই সে একটা মেয়েকে পছন্দ করুক না কেন, তার জন্য নিজের কর্মস্থলে বেহায়া আচরণ করার কোন মানে হয় না। তাই আর বেশি কথা বাড়ায় নি।
.
.
.
রাতে বাসায় ফিরে কেবল ফ্রেশ হয়ে বেডে বসলো সাদি। ল্যাপটপটা অন করতেই ল্যাপটপ জানালো তার পাসওয়ার্ড চাই! সাদিও মুচকি হেসে পাসওয়ার্ড ইন করলো। ব্যাপারটা সাদির দারুন লাগে। কেউ যদি বিনা অনুমতিতে কারো ল্যাপটপ ইন করতে চায় তবে এই জিনিসটাই প্রথম তাকে বিব্রত করবে। তাই বলে যেনতেন পাসওয়ার্ড দিলে চলবে না। অবশ্যই শক্তপোক্ত দেখে পাসওয়ার্ড দিতে হবে! আবার এমন না হয় পাসওয়ার্ড দিতে গিয়ে নিজেই ভুলে গেলাম! হাহা!
.
সাদি বসে বসে কাজ করছিল, এমন সময় আবারও তার সেই লম্বা বেনুনিওয়ালী মেয়েটার কথা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। কি আজব! সাদি আজ নিজের প্রতিই বিরক্ত হচ্ছে। মনে হচ্ছে তার মাইন্ড অন্যকারো কন্ট্রোলে আছে, যা বেশ বিরক্ত করছে সাদিকে। ল্যাপটপটা সাইডে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে এক হাত কোমরে আর এক হাত মাথার পিছনে রেখে পায়চারি করতে লাগলো।
.
নাহ! কিছুতেই এঈ মেয়েটার কথা মাথা থেকে যাচ্ছে না। কি সুন্দর তার ভ্রু কুঁচকানো! কত সুন্দর তার ও-ই লম্বা বেনুনি! এক মিনিট! ভ্রু কুঁচকানো ও সুন্দর হতে পারে? সাদির এবার নিজেকে সত্যিই পাগল মনে হচ্ছে! এবার নিজে হার্টের ডাক্তার হয়ে না আবার তাকে পাগলের ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগে!
.
হঠাৎ দরজায় নক পরায় সাদির ঘোর কাটলো। আগন্তুক কে ভিতরে আসার অনুমতি দিয়ে সে ঘুরে দাড়ালো দরজার দিকে। সাদি নিজের মাকে দেখে একটু মুচকি হাসলো। তার মা ও একটু মুচকি হেসে ছেলের দিকে এগিয়ে এসে তার হাতে থাকা কফির মগটা এগিয়ে দিল।
.
সাদি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে! সে কি করে বুঝলো যে এখন সাদির একটা কড়া করে কফির প্রয়োজন ছিল? হয়তো একেই বলে মায়ের মন।

সাদিঃ আম্মু তুমি কি করে বুঝলে যে আমার এখন কফিটা প্রয়োজন?

মামুনিঃ প্রথমত আমি তোর মা! তাই হয়তো তোর অস্থিরতা বুঝতে পেরেছি। আর দ্বিতীয়ত নিচ থেকে দেখলাম তোর রুমের পর্দায় তোর পায়চারির দৃশ্য! তাই কফিটা নিয়ে এলাম। এবার আমাকে বলা যাবে কি কেন এই অস্থিরতা?
.
সাদি মায়ের পাশে বসে তার কাধ জড়িয়ে ধরলো। কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,

সাদিঃ আম্মু কেন যেন আজ নিজের মাইন্ডকে আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না।

মামুনিঃ মানে? কি হয়েছে সবটা খুলে বল!

সাদিঃ আসলে আজ রাউন্ডে গিয়ে এক লম্বা বেনুনিওয়ালীকে দেখে থমকে গিয়েছিলাম। আবার ভাগ্যবশত অন্য সময়ে তার সাথেই ধাক্কা খেয়েছি। মেয়েটা খুব ভদ্র বলে মনে হলো। ছোট ছোট বিষয় ধন্যবাদ আর দুঃক্ষিত বলায় তাকে আরো বেশি স্নিগ্ধ করে তোলে। আর তার ঝাঁঝালো কন্ঠের সেই ধ্বনি! আম্মু কি যে বলবো! এখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে!
.
সাদি তাকিয়ে দেখে তার মা মিটমিট করে হাসছে! তা দেখে সাদি একটু ভ্রু কুঁচকালো। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?

সাদির মা হেসে উত্তর দিল,

মামুনিঃ হইনি! হবে।

সাদিঃ(অবাক হয়ে) কি হবে?

মামুনিঃ আমার ছেলের প্রেম!

সাদি ধ্যাত বলে উঠে গেলো।

সাদিঃ তুমিও না! স্কুল লাইফ, কলেজ লাইফ, ইভেন ভার্সিটি লাইফ ও ফেলে এসেছি এখন পরবো প্রেমে! দ্যাটস নট পসিবল আম্মু!

মামুনিঃ পসিবল মাই ডিয়ার সান! প্রেম কাউকে ইনভাইটেশন দিয়ে আসে না। এটা একটা অনুভূতি যা সবাই ভোগ করতে পারে না। আর না ভালোবাসতে কাউকে পারমিশন দিতে হয়! জাস্ট হয়ে যায়।

বলেই সাদির মা রুম ত্যাগ করলেন আর সাদি বসলো ভাবতে।
.
সাদি বসে বসে তার মায়ের কথা ভাবছে। আসলেই কি এমন কিছু হয়? ও তো মেয়েটার নামও জানে না। যদি মেয়েটাকে আর খুঁজেই না পায়? তবে কি সাদির প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে?

,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে