#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_39
?
.
.
সকাল হতে না হতেই সুমু পুরো পরিবার হাজির। সুমু তখন ঘুমে। সাদিও এতোক্ষন ঘুমেই ছিলো কিন্তু কলিং বেল এর আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেছে তার। কিন্তু সুমুর ঘুম ভাঙে নি। রুম থেকে বের হতেই দেখে সুমুর বাবা মা, ভাই, ভাবী, রুমু, সায়মা আপু, এহসান ভাই, আহানা সব হাজির! ড্রইং রুম গিজগিজ করছে মানুষে। সাদিকে দেখে এক প্রকার ঝেঁকে ধরলো তারা। ফোনের উপর ফোন আসতেই আছে। সাদিকে হসপিটালে যেতে হবে। এদিকে বাসায় একগাদা মেহমান, ওদিকে সুমু এখনো ঘুম থেকে উঠে নি। মামুনিকে সাইডে ডেকে নিয়ে সুমুকে ডাকতে মানা করলো সাদি। কাল অনেক দেড়িতে ঘুমিয়েছে সুমু। সাদি রেডি হয়ে হসপিটাল চলে গেলো। সাদির ঢাকায় কাজ থাকায় সেখানে যেতে হবে৷ কিন্তু সুমুকে তো একা ছাড়া যাবে না তাই নিজেই কতৃপক্ষর সাথে কথা বলে, অনেক খাটুনি খেটে ব্যবস্থা করলো সে ও সুমু ঢাকায় ট্রান্সফার হচ্ছে। এখানের বাসাটা ভাড়া দিয়ে দিবে। আর এখন থেকে ঢাকায় থাকারই ব্যবস্থা হয়েছে। বিভিন্ন কাজ করতে করতে আজ বাসায় ফিরতে অনেকটা দেড়ি হয়ে গেছে।
.
বাসায় ফিরে সাদি সুমুকে রুমে দেখতে পেলো না। হয়তো রান্নাঘরে আছে! যেহেতু বাইরে থেকে এসেছে তাই আগে ফ্রেশ হয়ে নিতে চায় সে। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেও সুমুকে পেলো না। এবার ভ্রু কুঁচকে এলো সাদির। প্রায় এক ঘন্টা হতে চলল এখনো একবারও সুমুর দেখা পেলো না সে। গেলো কোথায় মেয়েটা। রুম থেকে বেরিয়ে সব জায়গায় খোঁজ করা হয়ে গেছে কিন্তু সুমুকে পাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আবার ড্রয়িং রুমে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে সুমুর কথা জানতে চাইলো। সবাই প্রথমে সাদিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো যে সে কি খুঁজছে কিন্তু কিছুনা বলে চলে গেলো। এখন আবার এসে যখন সুমুর কথা বলল তখন সবাই বুঝতে পারলো যে এতো খোঁজাখুঁজি তার বউয়ের জন্য! ভাবী বেশ দুষ্টু স্বরে বলল,
ভাবীঃ বউয়েরই খালি খোঁজ কেন নন্দাই? ভাবী কি ভেসে আসছে।
সাদি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে তাকে নিয়ে খিল্লি করা করা হচ্ছে তাই হালকা হেসে বলল,
সাদিঃ বউয়ের সাথে আগে মিট করলে মন মেজাজ ভালো থাকে তার পর ভাবীর সাথে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যায়। এখন বলুন তো আমার বউটা কোথায়?
উপস্থিত সবাই হেসে দিল। সাদিও মোটামুটি বোকা বনে গেছে। রাকিব হেসে বলল,
রাকিবঃ এই যে তোমার বউ!
সুমু রাকিবের একদম পাশে বসা বলতে গেলে রাকিবের কোলে। রাকিবের বুকে মাথা দিয়ে এক হাতে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে গেছে। তাই এতোক্ষন খুঁজেই পাচ্ছিলো না সুমুকে সাদি। ভেবেই খানিকটা হাসলো সে। তারপর ভাবলো যেই মেয়ে ঘুম কত পাতলা ছিলো আর তার প্রেগ্ন্যাসির প্রভাবে ঘুম কতটা গাঢ় হয়ে গেছে যে এখানে এতো শোরগোলের মাঝেও চুপটি মেরে ঘুমোচ্ছে। সাদি এগিয়ে গিয়ে বলল,
সাদিঃ দাও ওকে আমি বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আসি। ঘাড় ব্যাথা করবে নয়তো।
রাকিবও হেসে মাথা কাত করে সায় দিলো। সাদি সুমুকে কোলে নিয়ে তাদের রুমে চলে গেলো।
.
সুমুকে শুয়ে দিয়ে সাদি নিজেও বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছে আজ! সুমু জাগনা থাকলে নিশ্চিত এখন স্যালাইন পানি খাওয়াতো জোর করে। কত কেয়ার করে সে সাদির। ভেবেই সুমুর দিকে তাকালো, কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে। চেহারায় একটা নূরের ভাব এসেছে। লাবন্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এম্নিতেই এতো আদুরে আর এখন এত্তো আদুরে হয়েছে যে দেখলেই আদর আদর পায়। আচ্ছা সব মেয়েদেরই কি প্রেগ্ন্যাসিতে লাবন্যতা এতো বেড়ে যায়? হয়তো!
.
মাঝরাতে চিৎকার করে উঠলো সাদি! সুমু ধড়ফড় করে উঠে জিজ্ঞাসা করলো,
—কি হয়েছে? কি হয়েছে?(চিন্তিত গলায়)
সাদিঃ(হাত দিয়ে বুক ঢলতে ঢলতে) এতো জোরে আমার বুকের পশম ধরে টান দিলা কেন? আমি কি করছি?
—কি বলো আমি কখন তোমার বুকের পশম ধরে টান দিলাম? আমি তো চোরের চুল……..ইশ! মিস্টেক! ওইটা তোমার বুক ছিলো বুঝতে পারনি! সরি!(মেকি হেসে)
সাদিঃ ইশ! আমার জন্য তোমার ঘুম ভেঙে গেলো। আসলে অনেক ব্যাথা পেয়েছি।
সুমু সাদির কোলে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে সাদির কাধে মাথা রেখে বলল,
—তুমি কি হ্যাঁ? আমি তোমাকে ব্যাথা দিলাম আর তুমি আমার ঘুম নিয়ে পড়ে আছো? এমন কেন তুমি?
বলতে বলতেই সুমু কেঁদে দিলো। সাদি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। এইতো হাসছিলো আর এখনই কান্না করছে? সুমুর চোখের পানিতে সাদির কাধ পুরো ভিজে গেছে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সুমু কান্না করতে করতে দুই মিনিটেই ঘুমিয়ে গেছে। সুমুর কোন সাড়া না পেয়ে সাদি সুমুর পিঠে হাত দিয়ে তাকে সামনে এনে দেখে সুমু ঘুমে। সাদি হেসে সুমুকে ভালোভাবে শুইয়ে দিলো। প্রেগন্যান্সির সময় মেয়েদের এমন মুড সুইং একেবারে স্বাভাবিক একটা বিষয়। এই হাসি তো এই কান্না, নানান আবদার, আরো কত কি! এখন থেকে সবটাই সামলাতে হবে সাদির।
.
আজ প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে চলল সাদি আর সুমু ঢাকায় শিফট হয়ে গেছে। সুমুর পেটটাও খানিকটা ফুলেছে। সবার নাকি প্রেগন্যান্সির সময় খেতে অসুবিধা হয় কিন্তু সুমুর ক্ষেত্রে তেমন কিছু এখনো প্রকাশ পায় নি। সে দিব্বি খেয়ে যাচ্ছে। নিজের এমন গুলুমুলু চেহারা দেখে সেই কখন থেকে সাদিকে বকাবকি করে যাচ্ছে।
—শুধুমাত্র তোমার জন্য আমার এই অবস্থা! এই বেবীটা নিশ্চিত তোমার মতো খাদক হবে! হুহ! খাদক কোথাকার! রাগ উঠে যায় আমার!
সুমুর কথায় অবাক হয়ে সাদি বলল,
সাদিঃ এখানে আমার দোষ কই? আমাকে টানো কেন?
—তোমাকে টানবো না তো কাকে টানবো? দেখছো কেমন মোটা হয়ে গেছি! সামনে তো আরো হবো! এমনিতেই তো এখন আর আমারে পাত্তা দেও না তখন তো আরো দিবা না আমি জানি!
সাদিঃ তোমাকে কে বলল? আর কে বলছে তুমি মোটা হয়ে গেছো? মোটেই না। তুমি শুধু একটু গুলুমুলু দেখতে হয়েছো এর বেশি কিছুই না। আর তোমাকে দেখলে আমার এখনো আদর পায় কিন্তু আমি নিরুপায়! তাও তোমার সন্দেহ লাগে?
সুমু এতো রাগ দেখিয়ে হঠাৎই ভ্যা করে কেঁদে দিলো। সাদি অসহায়ের মতো সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে। এইটা প্রতিদিনের রুটিন। যেখানে সাদির কান্না করার কথা সেখানে সুমু কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এভাবেই সুমুর কান্ড দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো পাঁচটা মাস!
.
সুমুর এখন আট মাস ১২ দিন চলে। তার পেটটা নিয়ে চলতে বেশ কষ্ট হয়। অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। সাদি বলতে গেলে সর্বক্ষণই তার সাথে থাকে। রাকিব প্রতিদিন এসে সুমুকে দেখে যায়। সুমুর পরিবার চেয়েছিলো সুমুকে তাদের কাছে নিয়ে যাবে কিন্তু সাদি রাজি নয়। সে কিছুতেই বউ ছাড়া থাকবে না। সে তাদের বেবীর আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠা ফিল করতে চায়। হটাৎ করেই সুমুর লেবার পেইন উঠায় কাঁপছে আর কাঁদছে। তার মতে হ্যাঁ তার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তার জন্য চিৎকার করে দুনিয়াকে জানানোর প্রয়োজন নেই। এই জিনিসটায় বড্ড লজ্জা পায় সে। সাদি তাড়াতাড়ি সুমুকে নিয়ে হসপিটাল চলে গেলো। সবাই একে একে হসপিটালে উপস্থিত হয়েছে। সুমুর সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভিতরে নেওয়া হয়েছে। সাদি ডক্টর হয়েও ভিতরে যায় নি, তার অনেক বেশি টেনশন হচ্ছে, মনটা বারবার কু গাইছে। সব ঠিক হবে তো? সুমু তার কাছে ফিরে আসবে তো।
প্রায় তিন ঘন্টার মতো সময় লেগেছে৷ একজন সহকারী ডক্টর এসে বলে গেলেন সুমুর ছেলে হয়েছে। কিন্তু তার মুখে তেমন হাসি ছিলো না। এর মধ্যেই দেখতে পেলো ডাক্তার, নার্সরা দৌড়া দৌড়ি করছে। খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে এদিক সেদিক যাচ্ছে। এর মধ্যেই একজন ডক্টর এসে রাকিবকে সাইডে নিয়ে জানায় যে সুমুর হার্ট অ্যাটেক হয়েছে, এই অসুস্থতার জন্য বিষয়টা খুবই সিরিয়াস হয়ে উঠেছে। রাকিব সাথে সাথে ধপ করে বসে পড়ায় সাদি দৌড়ে সেদিকে গিয়ে বারবার জিজ্ঞাসা করার পর তারা সাদিকে সুমুর অবস্থার কথা জানায়! সাদির যেন সেখানেই সময় থেমে গেছে। হাঁত পা রীতিমতো কাঁপছে। সুমুর কথা ভাবতে ভাবতেই সাদির মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো। মনে হচ্ছে সবই তার জীবনের হয়তো অবসান ঘটতে যাচ্ছে!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)………..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।