তবু আছি কাছাকাছি (Doctors love) Part-38

0
3060

#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)?
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_38
?
.
.
আজকাল সুমু বড্ড ঘুম কাতুরে হয়ে গেছে। কয়েক মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়তে পারে সে। আজ হসপিটাল যায় নি সে। সাদি আজ অনেক সকালেই হসপিটাল চলে এসেছে তখন সুমু ঘুম ছিলো। সারাদিনে সুমুকে একবারও দেখতে না পেয়ে ফোন করে সাদি। তখন সে জানতে পারে সুমু আজ আসবে না, তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। বিকেলে সাদি বাসায় এসে দেখে ঘর অন্ধকার করে সুমু ঘুমিয়ে আছে। সে ডাকতে ডাকতে সুমুর পাশে বসে কপালে হাত রাখে। নাহ! জ্বর নেই তবে গা টা একটু গরম। সুমু ঘুমে চোখ মেলতে পারছে না।

সাদিঃ এই সুমু! তুমি তো ঘুমের ওষুধ খাও না তাহলে এভাবে ঘুমাচ্ছো কেন? শরীর খারাপ নাকি?

—উম্ম? না! উঠছি। খুব ঘুম পায় আমার! কাল হসপিটাল গিয়ে কিছু টেস্ট করে আসবো। আর তুমি একটু কষ্ট করে ফার্মেসি থেকে গিয়ে প্রেগ্ন্যাসির কিট নিয়ে আসো না একটু! আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি প্রেগন্যান্ট! প্রথমবার তাই বুঝতে পারছি না।

সাদিঃ আচ্ছা তুমি একটু বসো। আমি নিয়ে আসছি!

.
সাদিকে দিয়ে চারবার কিট আনিয়ে টেস্ট করেছে। প্রতিবারই পজিটিভ আসছে। কাল হসপিটাল গিয়ে টেস্ট করে আসবে। সাদি সুমু দুজনেই বেশ খুশি। সুমু সবচেয়ে বেশি খুশি, তার কোল জুড়েও কেউ আসতে চলেছে। যে সুমুকে মাম্মা, সাদিকে পাপা বলে ডাকবে। এমনিতেও কাল মামুনি আসছে তাই আর কাউকে জানায় নি। কাল মামুনিকে সারপ্রাইজ দিবে সাদি আর সুমু। সাদি সেই থেকে সুমুকে খাটে বসিয়ে সে সুমুর কোলে মাথা দিয়ে পেটে চুমু দিয়ে যাচ্ছে বারবার। আজ নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে তার। হঠাৎ করেই জীবনটা যেন সুখে ভরে গেলো। কিন্তু সুখতো ক্ষনিকের জন্যই আসে। সুখ বজায় থাকবে তো তাদের জীবনে?

.
সকালে সাদি গিয়ে মামুনিকে নিয়ে আসলো। মামুনিকে সুমুর প্রেগ্ন্যাসির কথা বলতেই তিনি অনেক খুশি হয়েছেন। সাথে সাথে তিনি সাদির বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিলেন সুমুর প্রেগ্ন্যাসির কথা। সায়মাকে জানাতেই সে বলল কাল আসছে। এদিকে সুমুর পরিবারে সবাই এত্তো খুশি তারাও আসছে কাল। রাকিব তো সুমুর কথা শুনে পারলে উড়াল দিয়ে চলে আসে। সে মামা হতে চলেছে! তার খুশির সীমানা নেই। রুমু সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড! তার থেকেও ছোট কেউ আসবে বলে তার মাম্মা তাকে বলেছে, তার ছোট ভাই অথবা বোন। এদিকে আহানা আর ওদিকে রুমু! সাদি বাসার ফ্রিজে মিষ্টি এনে ভরে ফেলেছে। সুমু শুধু চেয়ে চেয়ে কাহিনী দেখছে৷ এক ঘন্টার মাঝে সুমুর শ্বশুর এসে হাজির। সুমু গেট খুলতেই একের পর এক লোক এসে বাচ্চাদের যত প্রকার জিনিস আছে এনে রাখছে। আর সুমুর শ্বশুর তার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। কোথায় কোনটা রাখবে।

—বাবাই? এগুলা কি? এতো জিনিস কেন? হায় হায়! আমার বাসা!

বাবাইঃ ওয়েট কর মা! আরো আসতেছে!

—হায় হায় বলো কি? বাচ্চা এখনো পৃথিবীতে আসলোই না তার মধ্যে এতো কিছু! এতো আশা করতেছো কেন তোমরা?

বাবাইঃ কি বলিস মা এগুলো? আমার একমাত্র ছেলের ঘরে নাতিপুতি আসতে চলেছে এতোটুকু করবো না?

—তবুও তাই বলে এতো?

বাবাইঃ হ্যাঁ! সহ্য করতে হবে কিচ্ছু করার নেই।

এর মধ্যে মামুনি এসে সুমুকে টেনে সোফায় বসিয়ে দিলো। হাতে এক প্লেট ফ্রুট স্যালাড! স্যালাডের ভিতরে আপেল দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। জীবনেও এই স্যালাড খাওয়া যাবে না।

—মামুনি কি করছো? আমি এই স্যালাড কিছুতেই খাবো না। এতে আপেল আছে! ইও!

মামুনিঃ দেবো না একটা মার! এটা খাবো না ওটা খাবো না! এখন কোন কথা শুনবো না। তোকে এগুলো খেতেই হবে, ব্যস! আর আপেল না খেলে না খা বাট বাকিগুলো শেষ কর।

মামুনির কথা শুনে বসে বসে ড্রাগন ফ্রুট চিবচ্ছি। এতো মজার একটা ফল। কিন্তু আমাকে দেখে মনে হবে সবচেয়ে জঘন্যতম খাবার আমাকে খাওয়ানো হচ্ছে। মামুনি সব রান্নার দায়িত্ব নিয়েছে। এখন আমার সব রকম কাজ করা বারণ। ফল খেতে খেতে সামনে তাকিয়ে দেখি সাদি দরজায় হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। পাজি লোক। আমার এই অবস্থা দেখে হাসে!হুহ! আমি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে আবার ফল খেতে লাগলাম। এর মধ্যেই ঝড়ের গতিতে নীল এসে আমার বাম পাশে ধুপ করে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। সে যে খুশিতে এক প্রকার পাগল তা তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এসেই ননস্টপ বকরবকর করেই যাচ্ছে।

নীলঃ সুমু দোস্ত! আমি এতো খুশি এতো খুশি যে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। আমি মামু হবো! আহ শান্তি! এই পিচ্চি পিচ্চি হাত দিয়ে আমাকে ছুঁবে। আমাকে মামু ডাকবে৷ আমি ওকে কাঁধে নিয়ে পুরো এলাকা ঘুরবো।

—একটু শ্বাস নে ভাই! বুঝছি! আগে আসতে দে।

নীলঃ তা তো অবশ্যই! দেখ আমার পিচ্চুর জন্য যা প্রয়োজন তা নিয়ে আসছি! কিছু বাদ গেলো নাকি দেখে বল!

এ কোন আলামত? নীলও বাসা ভরে ফেলেছে জিনিস দিয়ে। আমি এদের মানা করলে এরা আরো বেশি করে সেটা করে। তাই চুপ থেকে বললাম,

—তা তোর পিচ্চু কি তার মামীমনিকে দেখতে পাবে না?

নীলঃ কেন পাবে না? সুমু রে…..এবার মনে হচ্ছে নীল নামক পাঠাটাকে বিয়ে নামক বলিটা দিয়েই দেবে তার বাবা মা!

—(ভ্রু কুঁচকে) মানে?

নীলঃ মানে আম্মায় আমার বিয়া ঠিক করছে। মাইয়া অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। নাম নীলাদ্রিকা আহমেদ নদী। আমি নাকি তার ক্রাশ! তাই আমাকে বিয়ে করতে সে এক পায়ে খাড়া! আমিও ভাবছি বিয়েটা সেরেই ফেলি! মাইয়াডা জোস!

—যাক ভালো হলেই ভালো। তাড়াতাড়ি বিয়েটা সার তো!

নীলঃ দোস্ত কি খাস? আমাকে দিবি না?

—নে ভাই নে! তোর ফেভারিট আপেল আছে খা!

বলার আগেই নীলের খাওয়া শেষ। এও সাদির মতো ভোজনরসিক। সুমু শুধু ভাবছে কাল আবার কোন ঝড়ের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হবে আল্লাহই জানে। হায়!

,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে